প্রণয়ের রং,পর্ব:১০+১১

0
273

প্রণয়ের রং
পর্ব – ১০

নিমিতার মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। পায়ের তলার নিচের মাটি যেন নাই হয়ে গেল নিমিষেই। কি বললো আবির! ওকে ভালোবাসে? নিমিতার চোখের সামনে শুধু নিতুর চেহারা ভেসে উঠছে। নিতু আবিরকে ভালোবাসে। আর আবির কি না….

___ ” নিমিতা.. উত্তর দিবি না?”

আবিরের কথায় বাস্তবে ফিরে এলো নিমিতা। অস্ফুট স্বরে বললো__

___ ” আবির.. তুই আগে উঠে দাড়া প্লীজ।”

___ ” উঠলাম। এবার বল। ”

___ ” তুই কি বলছিস এসব? কেন বলছিস?”

___ ” কেন আমায় ভালোবাসিস না তুই? ”

___ ” আবির নিতু তোকে ভালোবাসে। ”

___ ” কিহ? মিথ্যে বলছিস না?”

___ ” সত্যি আবির। ও তোকে অনেক ভালোবাসে।”

___ ” বাসলে বাসবে। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। তুই আমায় ভালোবাসিস কি না সেটা বল। ”

___ ” না। ভালোবাসি না। ”

আবির এবার প্রচন্ড রেগে গেল।
___ ” তো কাকে ভালোবাসিস? ঐ শুভ্রকে?”

নিমিতা অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে নিজেও জানে না শুভ্রকে ভালোবাসে কি না। কোনোমতে বললো..

___ ” কি আজে বাজে কথা বলছিস? শুধু এটাই জানি যে তুই আমার বন্ধু। এর বেশি কিছু না আমার কাছে।”

___ ” এটাই তোর উত্তর?”

___ ” শোন আমার কথা। নিতু তোকে ভালোবাসে। ওকে একটাবার সুযোগ দে।”

___ ” ভালো তো আমিও বাসি তোকে। তুই দিতে পারবি আমায় একটা সুযোগ?”

নিমিতা মুখ নিচু করে চুপ করে থাকে। কি উত্তর দিবে সে। কি করে বুঝাবে আবিরকে।

আবির একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় নিমিতার দিকে তাকিয়ে। তারপর কিছু না বলেই চলে গেল।

নিমিতা ওখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে। নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে সে। সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে ওর। নিতু যদি জানে এই কথা! কি হবে তখন? কি বলবো ওকে আমি? ”

এমন সময় পেছন থেকে শুভ্র ডাকলো ওকে।
___ ” নিমপাতা?”
নিমিতা পেছন ফিরে তাকালো ওর দিকে।

শুভ্র নিমিতাকে ভার্সিটিতে দেখে অনেক খুশি হয়েছিল। দূর থেকে আবির আর ওকে দেখেছে একটু আগে। আবির চলে যেতেই কথা বলতে এসেছে।

কিন্তু নিমিতা ওর দিকে ফিরতেই অবাক হয় সে। নিমিতা কাঁদছে! ওর চোখে পানি দেখে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছে শুভ্রের। অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে__

___ ” কি হয়েছে নিমপাতা? কাঁদছো কেন? বলো আমায়। কেউ কিছু বলেছে? আবির কিছু বলেছে?”

শুভ্রের কথায় নিমিতার আটকে থাকা কান্নাগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে। শুভ্রের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই চলেছে সে। উত্তর না পেয়ে শুভ্র আবার বললো__

___ ” আমার জন্যে কাঁদছো? সরি নিমপাতা.. কে কি বলেছে আমায় বলো। প্লীজ বলো। ”

নিমিতা আর ধরে রাখতে পারলো না নিজেকে। শুভ্রকে জাপটে ধরলো খুব শক্ত করে। বুক ভেয়ে কান্না আসছে ওর। পাগলের মতো কেঁদে চলেছে শুভ্রকে আকড়ে ধরে।

নিমিতা ওকে জরিয়ে ধরায় হকচকিয়ে যায় শুভ্র। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে সে। নিমিতা কাঁদছে অথচ সে কিছুই করতে পারছে না। নিজেকে বড্ড অসহায় লাছে ওর। আলতো হাতে নিমিতাকে ধরলো সে। আস্তে আস্তে ডাকলো ওকে__

___ ” নিমপাতা। কি হয়েছে বলো আমায়। একবার বলো প্লীজ। আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারছি না।

নিমিতার হুশ ফিরলো এতক্ষণে। এক ঝটকায় শুভ্রকে ছেড়ে দিলো। তারপর চোখমুখ মুছে নিলো।

___ ” রিল্যাক্স। চল ওদিকটায় বসি গিয়ে।আমি শুনতে চাই সবকিছু।”

নিমিতার হাত ধরে নিয়ে দুজনে গিয়ে বসলো লেকের ধারে।

নিমিতা সব বলতে শুরু করলো শুভ্রকে। নিতুর মনের কথা, আবিরের আজকের বিষয় সবটা।

আবির প্রোপজ করেছে শুনে প্রথমে শুভ্র ভয় পেয়ে যায়। নিমিতাকে হারানোর ভয়। কিন্তু নিমিতার উত্তর শুনে দেহে প্রাণ ফিরে আসে। এখন নিতুর জন্যে চিন্তা হচ্ছে। নিতু এসব জানলে কি করবে। আর এখন নিমিতাকেই বা কি বলে শান্ত করবে?

শুভ্রকে সব বলে নিমিতার নিজেকে বড্ড হালকা লাগছে। আসলেই কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ার করলে একটু হলেও কষ্ট কমে।

কিন্তু পরক্ষণেই সেদিনের সব ঘটনা মনে হতে লাগলো নিমিতার। কপাল কুচকে বললো__

___ ” আমি আপনাকে কেন বলছি এসব? আপনার সাথে কোনো কথা নাই আমার।”

বলেই আর এক মুহুর্তও দেরি করলো না নিমিতা। উঠে হনহন করে চলে গেল সে। শুভ্র মুখ হা করে ওর চলে যাওয়া দেখছে।

___ ” কি হলো এটা? ”
শুভ্র নিমিতার এমন করাতে হাসবে নাকি কষ্ট পাবে বুঝতেই পারছে না…

চলবে…
নিমিতা আনাম

প্রণয়ের রং
পর্ব – ১১

রাতে বেলকনিতে বসে রবীন্দ্র সংগীত শুনছে নিমিতা। ওর যখন খুব চিন্তা হয় তখন এভাবে গান শোনে। মাথায় এখনও সকালের ঘটনা ঘুরপাক খাচ্ছে।

___ ” নিতুর থেকে লুকোতে পারবো না। ও যদি পরে অন্যকারোর থেকে শুনতে পায়, তখন আরও বেশি কষ্ট পাবে। কিন্তু কি করে বলবো ওকে…”

আনমনে এসব ভাবছিল নিমিতা। হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে শুভ্র ফোন দিয়েছে। ওভাবেই ফোনটা রেখে দেয় আবার। রাগটা এখনও যায়নি উনার উপর থেকে।

ওদিকে শুভ্র বারবার ফোন করেই যাচ্ছে। পরপর ৬ বার রিং যাওয়ার পর ৭ম বারে ফোন উঠায় নিমিতা।

ফোন কানে নিতেই গান শুনতে পায়। নবীন বরণে যে গানটি ও গেয়েছিল সেই গান। কে যেন গাইছে। গানের গলা শুনে মনে হচ্ছে শুভ্র গাইছে। চোখ বন্ধ করে গানের প্রতিটি লাইন অনুভব করতে লাগলো সে। পুরো গানই চোখ বুজে মন দিয়ে শুনে গেল।

___ ” আপনি এত ভালো গাইতে পারেন বলেন নি তো।”

___ ” তুমি জানতে চেয়েছো কখনও?”

___ ” নিজের থেকেই বলতেন।”

___ ” তুমিতো রাগ করেছো। আমার সাথে কথা বলতে চাও না।বলবো কিভাবে?”

___ “এখনও রেগে আছি।”

___ ” রাগ ভাঙাবো কি করে?”

___ ” আমায় সাহায্য করে। নিতুকে বলতে চাই সব। একা পারবো না। সাথে থাকতে পারবেন আমার?”

___ ” সবসময় তোমার সাথে, তোমার পাশে থাকবো। থাকতে দিবে আমায়?”

নিমিতা লজ্জা পেয়ে যায়।
___ ” এখন রাখছি। কাল সকাল ১০ টায় আপনার অপেক্ষা করবো লেক সাইডে।
বলেই জলদি জলদি ফোন কেটে দেয় নিমিতা।

নিতুকেও ফোন দেয় সে। কাল সকালে দেখা করতে বলে। দেখা করার কারণ বলার সাহস পায় না।”

পরেরদিন সকালে সাড়ে ন’টায় নিমিতা চলে আসে লেক সাইডে। মিনিট দশেক পরে শুভ্রও চলে আসে। নিমিতার পাশে এসে বসে।

___ ” নিতু আসছে?”
___ ” হুম।”
___ ” কিছু বলেছো ওকে?”
___ ” উহু। শুধু আসতে বলেছি।”

___ ” চিন্তা করো না। দুজনে মিলে ঠিক বুঝাতে পারবো ওকে। আমি আছি তো।”

একটু পরে নিতুও চলে আসে। ওদের দুজনকে একসাথে দেখে খুব খুশি হয় নিতু। নিতু কাছে আসতেই নিমিতা জরিয়ে ধরে ওকে। আচমকা কাঁদতে শুরু করে। নিতু ভয় পেয়ে যায়__

___ ” নিম্মি। এভাবে কাঁদছিস কেন? তাকা আমার দিকে।”

নিমিতা ওকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ায়। কিন্তু কান্নার দমকে একটু রা ও করতে পারছে না। উপায় না পেয়ে শুভ্র নিজেই গতকালকের ঘটনা বলা শুরু করে।

সবশুনে নিতু কেমন থমকে আছে। পাথরের মূর্তির মতো। সে কি বলবে, কি রিয়্যাক্ট করবে জানে না।

___ ” নিতু আমায় মাফ করে দে। আমার জন্যই আবির তোকে ভালোবাসে না। আমি আগে জানলে অনেক আগেই তোদের থেকে দূরে চলে যেতাম। ”

নিতু আচমকা দুহাতে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে। নিমিতা ও শুভ্র আটকায় না ওকে। ওর মনের কষ্ট গুলো ঝরে যাওয়ার সুযোগ দেয়।

মিনিট দশেক পরে নিতু স্বাভাবিক হয়। নিমিতা ওর চোখ মুখ মুছে দেয়।

বিকেল অব্দি ওরা তিনজন একসাথেই ছিলো। শুভ্র একমুহূর্তের জন্যেও ওদের একা রেখে যায় নি। নিতুকে ওই সামলিয়েছে। নয়তো নিমতা একা ওকে সামলাতে পারতো না।

রাতে খাওয়ার পর ছাদে বসে কফি খাচ্ছে শুভ্র। আজকে সত্যিই অনেক কঠিন দিন ছিলো। একজন নয়, দুটো মানুষ তাদের ভালোবাসা হারালো। আবিরেরও দোষ নেই। সেও তো ভালোবেসেছে। নিয়তি কখন কোনদিকে জীবনের পথ পাল্টে দিবে কেউ জানে না।

নিতু আবিরকে হারালো। গল্পটা এমন না হলেও পারতো। সবকিছু কত সুন্দর হতো যদি আবিরও নিতুকে চাই তো। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতো।

সবকিছু ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শুভ্র। আনমনেই একটা খেয়াল আসলো _ ” ওর ভালোবাসাকে পাবে তো? নিয়তি ওর ভালোবাসাকে কেড়ে নিবে না তো?”

চলবে….
নিমিতা আনাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here