প্রণয়ের রং,পর্ব:১২

প্রণয়ের রং
শেষ পর্ব

ভালোবাসা হলো নদীর মতো। নদীতে যেমন পানি জমতে জমতে একসময় বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসার পরেই বোঝা যায় কতটা পানি ছিল…
ভালোবাসাও তেমনি। শুরুতেই বোঝা দায়। যখন হৃদয়ের বাঁধ ভেঙে অনুভূতিগুলো বেরিয়ে আসে, তখনই জানান দেয় কতটা ভালোবাসা জমে আছে…

নিমিতারও এখন এমনই মনে হচ্ছে। নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে শুভ্রকে। এখন বুঝতে পারছে সে।

___ ” শুভ্র কি ভালোবাসে আমায়?”
এখন শুভ্রের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে ওর। ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো। স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই মিষ্টি একটা হাসি ফুটে উঠলো ওর ঠোঁটে।

___ ” আমি আপনার কথাই ভাবছিলাম এতক্ষণ। ”
___ ” তাই? কি ভাবছিলে?”

___ ” ধন্যবাদ দেবার ছিল আজকের জন্যে। ধন্যবাদ।”
___ ” ওহ.. এটা। আমি ভেবেছিলাম…”

___ ” কি ভেবেছিলেন?”
___ ” কিছু না।”

তারপর দুজন অনেকটা সময় চুপ ছিলো।

___ ” নিমপাতা। ”
___ ” হুম।”
___ ” কিছু বলতে চাই তোমায়।”
___ ” আমি শুনছি। বলুন।”
___ ” এখন না। দেখা করতে পারবে আমার সাথে?”
___ ” কখন?”
___ ” কালই। আর অপেক্ষা করতে পারবো না। ”
___ ” আচ্ছা।”
___ ” ভার্সিটিতে এসো। এখন ঘুমোও। শুভ রাত্রি।”

পরেরদিন বিকেলে নিমিতা ভার্সিটিতে এসেছে। কিছু সময় পরেই শুভ্র এলো।

___ ” তোমায় কোথাও নিয়ে যেতে চাই। যাবে আমার সঙ্গে?”
___ ” কোথায়?”
___ ” বিশ্বাস করো আমায়?”
___ ” নিজের থেকেও বেশি।”

নিমিতা শুভ্রের বাইকে উঠে পরলো। নদীর তীরে এসে থামলো ওরা। চারিদিকে স্নিগ্ধ বাতাস, প্রকৃতির মায়াবী সৌন্দর্য্য। কিছু সময় হেঁটে নদীর পানির একদম কাছে এসে থামলো ওরা।

শুভ্র মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে নিমিতার দিকে। যেন হাজার বছর ধরে তৃষ্ণার্ত ছিল ওর চোখ দুটো। আজ নিমিতাকে দেখে তেষ্টা মেটাচ্ছে।

নিমিতা শুভ্রের চোখে চোখ রাখতে পারছে না। ঐ চোখ জোড়ায় কিছু একটা আছে যা ওকে অন্যজগতে নেবার জন্যে টানছে। নিমিতা বারংবার লজ্জায় মূর্ছা যাচ্ছে।

শুভ্র হঠাৎই নিমিতার সামনে দু হাঁটু মাটিতে গেড়ে বসে পরলো।

___ ” নিমপাতা.. আমার হৃদয়ে একটু একটু করে জমা সকল অনুভূতি আজ ব্যক্ত করতে চাই। শুনবে আমায়?”

নিমিতার মুখে একটা শব্দও আসছে না। সে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

___ ” সেই প্রথম দিন। যেদিন আমার গায়ে পানি দিয়েছিলে। কতটা ঘাবড়ে গিয়েছিলে মনে আছে? ভয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে। সেদিন তোমার চাহনি দাগ কেটে গিয়েছিলো আমার মনে।

তারপর আরও ছোট ছোট মুহূর্ত। কিছু খারাপ, কিছু ভালো, সবমিলে অন্যরকম একটা পৃথিবী তৈরি হচ্ছিলো আমার মনে। যেই পৃথিবী জুড়ে শুধু তোমার আনাগোনা।

যেদিন তুমি সাতরঙা শাড়ি পরে, খোপায় ফুল গুজে আমার সামনে এসেছিলে, সেদিন মনে মনে হাজারবার বিষম খেয়েছিলাম। আমার মন বারবার জানান দিচ্ছিলো আমার মনে প্রণয়ের রং লেগেছে। তুমিতে হারিয়ে গেছি আমি।

অন্য ছেলেরা তোমায় দেখছিলো। আমার সহ্য হচ্ছিলো না। কাঁটার মতো বিধছিলো প্রত্যেকের চাহনি। তাই তো স্টেজ থেকে ওভাবে নামিয়ে আনি। সবার থেকে আড়ালে রাখতে চেয়েছি। কিন্তু অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলাম তোমায়।

তারপর থেকে আরও ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। রোজ ভার্সিটিতে যাই তোমায় একটা বার দেখার জন্যে। জানো, আগে তো এক্সাম আর প্রয়োজন ছাড়া ভার্সিটিতে পা ও দিতাম না। কিন্তু এখন রোজ যাই শুধুই তোমার জন্যে।

তোমার হাসি প্রতি মুহূর্ত ঘায়েল করে আমায়। তোমার চোখের গহীনে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। যেদিন তুমি আমার জন্য সাদা শাড়ি, চুড়ি পরে সেজেছিলে, সেদিন আবারও তোমার প্রেমে পরেছি। সাদায় তোমায় কতটা স্নিগ্ধ, কতটা পবিত্র লাগছিলো বলে বোঝাতে পারবো না নিমপাতা। সেদিন তোমার চোখে আমার সর্বনাশ দেখেছি।

ভালোবাসি নিমপাতা। ভালোবাসি তোমায়। তোমাতে বিলীন হতে চাই। তোমার মায়া, স্নিগ্ধতা, পবিত্রতা আমার করে নিতে চাই। অনন্তকালের জন্যে তোমার পাশে থাকতে চাই।

রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমার মায়াবী মুখটি দেখতে চাই। রাতে ঘুমোবার আগে তোমায় বুকে আগলে ঘুমোতে চাই। তোমার হাসির কারণ হতে চাই। তোমার জীবনের অংশ হতে চাই।

একবার হাতটি ধরো। ওয়াদা করছি অনন্তকাল অব্দি তোমার হাত নিজের হাতে ধরে রাখবো। তোমার উপর রাগ করলে আমায় বকে দিও। কিচ্ছু বলবো না। শুধু তোমায় চাই। বিয়ে করবে আমায়?”

কথাগুলো বলে নিমিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।

___ ” আমি অন্য সবার মতো হতে চাই নি। তাই ফুল নয়, হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আমি তোমায় জীবনসঙ্গিনী করতে চাই…”

নিমিতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে যাচ্ছিলো এতক্ষণ। চোখে পানি ছলছল করছে, কিন্তু ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। কিছু না বলেই শুভ্রের হাতে হাত রাখলো। তারপর সে ও বসে পরলো ওর সামনে।

___ ” আমি আপনার মতো এতো গুছিয়ে কখনই বলতে পারবো না। সব কথা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। শুধু বলবো, আমিও ভালোবাসি। আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। এই যে হাত ধরলাম। কখনো আমায় নিজের থেকে আলাদা করবেন না তো?

___ ” কখখনো না।”

গোধূলি লগ্নে দুজন মানুষ নদীর তীরে বসে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছে। আজ নিয়তি তাদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিয়েছে। শুভ্রের কাঁধে মাথা রেখে ওর বাহু আকড়ে আছে। সে জানে এই কাঁধটি একান্ত ভরসার। এই মানুষটি তাকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাকে আগলে রাখবে। যে তার জীবনে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রণয়ের রং…

সমাপ্ত
নিমিতা আনাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here