প্রণয়ের রং,পর্ব:১

মাথার উপর ব্যাগ রেখে ২০ মিনিট যাবৎ কড়া রোদে দাড়িয়ে আছে নিমিতা। সাথে তার ফ্রেন্ড নিতু, মেধা আর আবির। মনে মনে ভার্সিটির সিনিয়রদের গুষ্টি উদ্ধার করছে সে।

নিমিতা ও তার ফ্রেন্ডরা আজ প্রথম এসেছে ভার্সিটিতে। এ যাবৎ গার্লস স্কুল, গার্লস কলেজে পরেই লেখা-পরার পাঠ চুকিয়ে আসছিলো। তাই ভার্সিটিতে এসে হালকা নার্ভাস সে।

সদ্য জন্মানো মুরগির ছানা ডিম ফুটে বেরিয়ে যেমন অনুভব করে, নিমিতারও তেমন মনে হচ্ছে। নিতু ও মেধা ওর বেস্টফ্রেন্ড। আবির মেধার কাজিন। সেই সুবাদে ওর সাথে বন্ধুত্ব।

ভার্সিটির চারপাশটা মুখ হা করে দেখছিলো সে। অমনি এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো।
পানি এই অব্দি গড়ালেও ঠিক ছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো অন্যখানে।

___” এই মেয়ে চোখে দেখো না?” বলেই চিৎকার দিলো মেয়েটি।

___” সরি আপু ভুল করে ধাক্কা লেগেছে” কোনোমতে বলতেই দেখে মেয়েটির চিৎকারে তার বন্ধুমহল সব দল ধরে আসছে।

___” ফ্রেশারস্ তোমরা? ফার্স্ট ইয়ার?”
___” জ্বী। ”
___” এসেই সিনিয়রদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া? দেমাগ দেখাও? ”
___” না। আসলে….”

___” চুপ। তর্ক করো বড়দের সাথে?” বলেই ধমকে উঠলো তাদের একজন।

তারপর আর কি। এই যে শাস্তিস্বরুপ দাড়িয়ে আছে কড়া রোদে। রাগে, লজ্জায়, অপমানে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরছে তার।

এমন কিছু হবে ভাবতেও পারেনি তারা। মনে মনে সবগুলোকে সাড়ে আটবার করে পচাঁ ডোবায় চুবাচ্ছে নিমিতা।
সবাই তাদের ঘুরে ঘুরে দেখছে যেন চিড়িয়াখানার প্রাণি তারা। কেউ সমবেদনার দৃষ্টিতে, কেউ দাঁত কেলাচ্ছে।

পাক্কা ৩০ মিনিট পর ছাড়লো তাদের। চারজনেরই চোখমুখ লাল হয়ে আছে। ক্যাম্পাস থেকে হনহনিয়ে বেড়িয়ে এলো তারা।

___” প্রথমদিন যে এমনভাবে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনাই দোস্ত। এই ছিলো কপালে!!” বলেই লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো নিতু।

___” লাইফে এমন টর্নেডো টাইপ স্মৃতি থাকা ভালো.. বুঝলি। ” বলেই ৩২ টা দাঁত বের করলো আবির।

ওর হাসি দেখে মাথায় আগুন ধরে গেলো মেধার..
___” এই বেটা.. লজ্জা শরম বেইচা খাইছোস? এত অপমানের পরেও ক্যামনে বলোস এইডা।” খেকিয়ে বললো সে।

___” থামবি তোরা! মাথা এমনিই বিগড়ে আছে। তার মধ্যে কি শুরু করলি তোরা?” চোখমুখ খিচে বললো নিমিতা।

___” দোস্ত ঠান্ডা হ। ফুচকা খাবো চল।” বলেই নিমিতাকে টানতে লাগল নিতু।

একটা ফুচকার স্টলের সামনে থামলো তারা। খাওয়া শেষে যখন নিমিতা পানি খেতে নিবে তখনই __

___”উরিব্বাস!! ” বলেই এক ব্যাঙ লাফ দিলো আবির।

অমনি নিমিতার মুখের পানি ফুড়ুৎ করে বেড়িয়ে পরলো।
পরবি রাস্তায় পর। নাহ… পাশ দিয়ে একটা ছেলে যাচ্ছিলো। পানি গিয়ে সোজা তার গায়ে পড়লো।

ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই মিনিট দুয়েকের জন্যে জমে গেলো। বড় একটা ঢোক গিললো নিমিতা। মনে মনে বিশাল একটা দম নিলো সে। কিছু বলতে যাবে অমনি….

চলবে…

পর্ব – ০১
প্রণয়ের রং
নিমিতা আনাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here