“আকাশী”
পর্ব ৫…
আকাশী অপূর্বের সাথে এক মধ্যবয়স্ক লোকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর চাহনিতে নির্লিপ্ততা যেন ভরে আছে। ঠোঁটের ওপর একগাদা গোঁফ। চুল এখনও পাকেনি। আকাশী তাঁকে সালাম দিলো। পরক্ষণে মনে পড়ে, লোকটি হিন্দু। সে ইতস্তত করলো। অপূর্ব তার অবস্থা বুঝে আকাশীকে নিজেই লোকটির সামনে নিয়ে যায়। বলল, ‘ইনিই মৃত্যুঞ্জয় স্যার। তোমাদের স্কুলের নতুন সহকারী শিক্ষক। তোমাদের ক্লাস হয়তো এখনও নেননি। তবে শীঘ্রই সবার সাথে পরিচিত হয়ে ক্লাস শুরু করবেন।’
মৃত্যুঞ্জয় বললেন, ‘মা, কী নাম তোমার?’
‘রুবাইয়া জিন্নাত আকাশী।’
‘বেশ সুন্দর নাম।’ অপূর্বকে প্রশ্ন করলেন, ‘ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়েছে বলেছিলেন?’
‘হ্যাঁ, অতিরিক্ত ভালো করেনি। তবে চতুর্থ স্থানে উত্তীর্ণ হয়েছে। সমাপনীতেও টপ করায় ক্লাস এইট পর্যন্ত বৃত্তি পাবে। অলরেডি গত ডিসেম্বর মাসে দশ হাজার টাকা পেয়েছে।’
‘সাবাস!’ তিনি বললেন, ‘লাগছে তুমি ভালোই গাইড করেছ।’
অপূর্ব কিছুটা সঙ্কুচিত হলো, ‘আরে না স্যার, আসলে আমি কমই গাইড করেছি। বাকিটা ওর মাঝে যে স্পিরিটটা আছে, তার ফলেই পরীক্ষায় ভালো করে দেখায়। আপনি আমার চেয়েও শতগুণ বেশি গাইড করবেন বলে আশা করছি। আফটার অল, আমি কোথায় এইচএসসি ক্যান্ডিডেট আর আপনি…’
মৃত্যুঞ্জয় তাকে থামালেন, ‘নো নো, গুরু গুরুই হয়। ছোট বড় তুলনা হয় না। আচ্ছা, ওসব থাক, আকাশী এখন থেকে আমার কাছে আসতে পারে। আকাশী, তুমি পরে এসে আমার সাথে দেখা করবা।’
আকাশীকে নিয়ে অপূর্ব অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। আকাশীর থমথমে মুখ দেখে সে জিজ্ঞেস করল, ‘টিউটর তো খুঁজে দিয়েছি। এখন আবার কী সমস্যা?’
‘আপনাকে পরিচিত ভেবে সবধরনেরই প্রশ্ন করতে পারতাম। উনি তো অনেক বড় আর গম্ভীর। যদি উনার কাছে না পারি?’
‘ওই চিন্তা তুমি করো না। তোমার সম্বন্ধে যা কিছু বলার প্রয়োজন সবই আমি তাঁকে জানিয়েছি।’
‘মানে?’
‘আকাশী, তোমার জগৎ লেখাপড়ার জগৎ থেকে আলাদা। তোমাকে লেখাপড়ার জগতে ঢোকাতে হলে তোমার জগৎ ডিঙিয়ে ঢোকাতে হবে তাঁকে এটাই বুঝিয়েছি। এরপর মনে হয় না, তুমি উনার কাছে অসন্তুষ্টিতে থাকবে।’
‘বুঝিনি।’
‘তুমি বুঝবে না। আচ্ছা হ্যাঁ, বিভার কথা আমি উনাকে বলিনি। এই কয়দিন যাবৎ তুমিই টিউটর খুঁজছ দেখে ওর কথা মাথায় আসেনি।’
‘সমস্যা নেই। ও পড়বে না।’
‘কেন?’
‘ও কমার্স নেওয়ার আগেই টিউটর খুঁজে ফেলেছে।’
‘বলো কি! তুমি তো ওর সাথে পড়তে পারতে। মৃত্যুঞ্জয় স্যারের কাছে এলে কেন?’
আকাশী একবার তার দিকে তাকায়, ‘ও আমাকে জানায়নি টিউটরের কথা। এমনকি ও হয়তো চায় না ওর সাথে আমি পড়ি।’
অপূর্ব দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘তোমাদের পিঠাপিঠি বোনদের মাঝে এতো দূরত্ব কেন?’
‘কেউ আমাকে পছন্দ করে না। তাই আমিও এখন কারো সঙ্গ পছন্দ করা বন্ধ করে দিয়েছি।’
অপূর্ব থ হয়ে আকাশীর দিকে তাকালো। সে জানত, আকাশী একদিন বুঝেই ফেলবে ওরা কেউ তাকে পছন্দ করে না। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি? আর সে আশানুরূপ প্রতিক্রিয়াও দিচ্ছে না। হাউ স্ট্রং শী ইজ!
‘আকাশী, ধর কোনো এক সময় দেখলে, পানিতে দুটো নৌকা ডুবে যাচ্ছে এমন অবস্থায় আছে। তন্মধ্যে এক নৌকায় তিনটা যাত্রী, আরেক নৌকায় কেবল এক যাত্রী। তোমার তৎক্ষণাৎ যেকোনো একটাকে বাঁচাতে হলে তুমি কোনটাকে বাঁচাবে?’
‘নিশ্চয় তিন যাত্রী বহনকারী নৌকাটাকে। একজনের জন্য তিনজনকে তো হারানো শোভনীয় নয়।’
‘সেটাই। ওই তিন যাত্রী হচ্ছে তোমার বোনেরা। সবারই রূপে কমতি আছে। আর তুমি হচ্ছ একা, অনন্য। তোমাকে অতিরিক্ত আদর করলে তোমার অন্য বোনেরা মন খারাপ করবে, এজন্যই তুমি একটু অবহেলিত। তা কোনো ব্যাপার না। তুমি বড় হও, নিজের ওপর ডিপেন্ডেন্ট হও। দেখবে কারোর দরকার হবে না। বুঝলে?’
আকাশী মাথা নেড়ে সায় দিলো।
অপূর্ব বলল, ‘আর কয়েকটা মাস। আমি পরীক্ষা দিয়ে চলে যাব। বাবার কাজ সামলে এসেছে। আর হয়তো দেখা হবে না। তাই ভালো থাকবে। আর হ্যাঁ, আমাকে ফ্রিলি যা বলতে মৃত্যুঞ্জয় স্যারকেও বলতে পারবে। আমি অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেই উনাকে তোমার টিউটর হিসেবে দেখেছি। দেখতে গম্ভীর হলেও তোমাকে ভালো পথে রাখার চেষ্টা করবে।’
আকাশী মাথা নাড়ালো। এরপর অপূর্ব স্কুলের প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে গেল। আকাশী তার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ক্লাসের দিকে যেতে উদ্যত হয়। দুইমাস সে লেখাপড়ার ধারে কাছে ছিল না। অপূর্ব আকাশীর কথা ভুলে যাওয়ায় শিক্ষক খোঁজার কথা মনে রাখেনি। আকাশী সুযোগ পেয়ে লেখাপড়া করেনি।
বিভাও তাকে ডাকত না। সেজ আপা চাইতই সে যেন কম লেখাপড়া করে। ইতোমধ্যে আকাশীর অবদানে বাসায় আসা দশ হাজার টাকা দেখে বিভা ফুঁসেছে। যাইহোক, এরকম কোনো বড় প্রাপ্তি আকাশীর কাছে সে আশা করতে চায় না। মা যতটুকু তাকে ভালোবাসে, তা আবার আকাশীর তরফে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাছাড়া বাবা তো এক কথায় আকাশীকেই ভালোবাসে। তাই মায়ের স্নেহ কমলে আর কেউ থাকবে না স্নেহমমতা করার। এজন্য বিভা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে টিউটর খুঁজে ফেললেও আকাশীকে কিছুই জানায়নি।
এরপর আকাশীকে একদিন রাতে খেলতে অপূর্ব দেখে ফেলায় সে ধরা পড়ে যায়। তিনদিন পর আজকে হঠাৎ অপূর্ব ভাইয়া স্কুলে এসে তাকে মৃত্যুঞ্জয় স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন। এ নিয়ে আকাশী আফসোস তেমন করছে না। পরীক্ষার দেরি আর বেশি নেই। পড়তে তো হবে এখন থেকে।
আকাশী অফিস থেকে কিছু দূরত্বে থাকা টয়লেট পার করতেই হঠাৎ একটা ছেলে এসে দাঁড়ায়। ছেলেটর চুলগুলো এলোমেলো। শার্টের নিচের দিকের এক অংশ বাইরে, এক অংশ পেন্টের ভেতর। আকাশী তার পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে ছেলেটি সেপাশ দিয়ে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াল। আকাশী দাঁড়িয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে, ছেলেটি তার সাথে কথা বলতে চাইছে।
আকাশী বলল, ‘কিছু বলবেন?’
সতেরো আঠারো বছর বয়সী ছেলেটি রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বয়ফ্রেন্ড?’
‘মেয়েদের জীবনে বয়ফ্রেন্ড ছাড়াও অনেক ছেলে থাকে। উনি কে তা আপনাকে বলা প্রয়োজন মনে করি না। আমার ক্লাসে যেতে হবে।’
আকাশী যেতে উদ্যত হলে ছেলেটি এক হাত প্রসারিত করে তার পথরোধ করল।
আকাশী বলল, ‘সরুন।’
‘ওইল ইউ বি মাই গার্লফ্রেন্ড?’
‘আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্য?’
‘হোয়াই নট?’
‘আপনার নিজের আর আমার বয়স দেখুন।’ আকাশী ছেলেটির হাতের নিচ দিয়েই বেরিয়ে গিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ল। সে জানত না, এরপর থেকে তাকে শিকার হতে হবে এমন অনেক বদ নজরের। আচ্ছা, রূপ কি এতই তেজের যে, বয়সও ফিকে পড়ে যায়? রূপের আগে কি ছেলেটা তার বয়স আন্দাজ করতে পারেনি? এটা কি বয়স কারো প্রেমিকা হওয়ার? আকাশী ভেবে পেল না।
পরদিন থেকে সে যথারীতিতে মৃত্যুঞ্জয় স্যারের কাছে পড়তে শুরু করল। স্যার তাকে বিকেলে ছুটির পর স্কুলেই পড়ান। এই সময় তার একজন ব্যতীত কোনো সহপাঠী থাকে না। মৃত্যুঞ্জয় স্যার নতুন শিক্ষক হওয়ায় তেমন কেউ তাঁর কাছে পড়তে শুরু করেনি। আকাশীর সহপাঠিনীর সাথে তার কোনো ভাব জমে না। সেলিনা প্রায়ই এককোণে চুপচাপ বসে থাকে। সে একটু ভোলা স্বভাবের। মৃত্যুঞ্জয় স্যার কিছু জিজ্ঞেস করলে, শুধু তারই সায় দেয়।
আকাশী মৃত্যুঞ্জয় স্যারের কাছে আসার দুইদিন পর থেকে লক্ষ করল ঐ ছেলেটি তার পিছু নিচ্ছে। সে যখন সেলিনার পাশাপাশি বসে পড়া পড়ে তখন ছেলেটি উঁকি দিয়ে আকাশীর সাথে চোখাচোখি হওয়ার চেষ্টা করে। তৃতীয়দিন আকাশী সেলিনার জায়গায় বসল। সেলিনা বিরূপ মন্তব্য করেনি, আকাশীর জায়গায় বসে পড়ল। ক্লাসের কারো কাছেই ছেলেটির বৃত্তান্ত জানার সাহস আকাশীর হয়নি। কেননা ছেলেটির চেহারা চেনা ছাড়া সে কিছুই জানে না। তাকে কী বলে সম্বোধন করবে?
আকাশীরা পড়ছিল। আধঘণ্টা পর মৃত্যুঞ্জয় স্যার অল্পক্ষণের জন্য বাইরে গেলেন। আকাশীর চোখ বাইরের দিকে যেতেই ছেলেটির ওপর আটকে গেল। তার বুকের ভেতরটা শুকিয়ে এলো। ছেলেটির নজর তার মোটেই ভালো ঠেকছে না। তার চোখগুলো দেখে মনে হয় সবসময় নেশা করে। অথচ দিনের ছয়টা ঘণ্টা ছেলেটিকে স্কুলে এবং স্কুলের আশেপাশে দেখা যায়। তার অস্বস্তি লাগছে। না, আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। একবার ছেলেটির নাম জেনে গেলে হেডমাস্টারের কাছে তাকে উত্যক্ত করার অভিযোগ করা যাবে। কিন্তু নাম… আকাশীর মাথায় ঝট করে একটা বুদ্ধি এলো। সেলিনা বড়ই বিরস একটি মেয়ে। তাকে দিয়ে করালে হয়তো সমস্যা হবে না।
আকাশী তাকে বলল, ‘সেলিনা, একটা কথা বলব?’
সে উত্তর দিলো না। তবে ফিরে তাকাল।
চোখের ইশারায় আকাশী বলল, ‘ছেলেটি কয়েকদিন যাবৎ দেখছি তোমাকেই দেখে। আই থিংক…’
আকাশী কথা শেষ না করতেই দেখল, তার পাশে বসা সেলিনার ফরসা মুখে অদ্ভুত এক আভা খেলে গেছে। কোনো মেয়ে যখন শুনে একটি ছেলে তাকে নিয়ে কিঞ্চিতও ভাবছে, তখন তার ভঙ্গিমা হয়তো কিছুটা এমনই হয়।
‘আচ্ছা, ছেলেটির নাম কী?’
‘রাসেল। ক্লাস টেনের ছাত্র।’
‘বাহ্! তুমি দেখি এক মুহূর্তেই চিনে ফেললে!’
‘আমি ছেলে..’ ইতস্তত করে সেলিনা শুধরিয়ে বলল, ‘আমি সবাইকেই চিনি।’
আকাশী রাসেলের সম্বন্ধে জেনে আশ্বস্ত হলো। আজকে তো স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। কাল হেডমাস্টারের কাছে অভিযোগ করবে। আকাশী শেষবারের মতো রাসেলের দিকে তাকালো। সে জানালার পাশে এমনভাবে দাঁড়িয়েছে, যেন কেউ বুঝবে না সে মেয়ে দেখতে এসেছে।
আকাশী তাকাতেই রাসেলও এদিকে তাকালো। চোয়ালের ইঞ্চিখানেক দাড়িতে হাত ঘষে ঠোঁটে চুমুর রেখা এঁকে সে একটা মোচড়ানো কাগজ আকাশীর দিকে ছুঁড়ে মারে। তার আর সেলিনার মাঝ বরাবর এসে কাগজটা পড়ল। আকাশী রাগে গিজগিজ করছে।
রাসেল হেসে চোখ টিপল। এই বদ ছেলের ভঙ্গী দেখে আকাশীর দম বন্ধ হয়ে আসার আগেই রাসেল চলে গেল। নইলে সে জানালার পাশে গিয়ে বয়সের পরোয়া না করেই রাসেলের গালে কষে একটা চড় লাগিয়ে দিত। স্যারও আসতে দেরি করছেন। এমন সময় আকাশী দেখছে, সেলিনা মোবাইল টিপছে, মোবাইলে সে নাম্বার টাইপ করছে। তার কাছে মোবাইল দেখে বিস্মিত হওয়া ছাড়া আকাশীর উপায় রইল না। সেও প্রায় তার সমবয়সী। অথচ বাসায় মায়ের মোবাইলও সে ধরতে পারে না। স্বয়ংয়ের কাছে মোবাইল থাকা তো দূরেরই কথা।
আকাশী নাক গলাচ্ছে না। তবে মন বলছে, তেরো বছর বয়সে মোবাইল ব্যবহার করা মোটেও ভালো নয়। কিছু কিছু শিক্ষার্থী মোবাইল আনে। অথচ আকাশী এতদিন জানতই না। তাহলে তারা লুকিয়ে রাখে। তাইতো। নইলে শিক্ষকেরা কি তাদের বকাঝকা করত না? যারা মোবাইল এনেও লুকিয়ে রাখে নিশ্চয় তারা অন্য কোনো মতলবে আনে। এভাবে লুকিয়ে মোবাইল ব্যবহার তো বৈধ না। স্কুলে সবাই কিছু শিখতে আসে। মোবাইল তো বাড়িতে ব্যবহার করা যায়। এই কয়েকজন যারা লুকিয়ে মোবাইল ব্যবহার করে তারা হয়তো অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আনে। এর একটা বিহিত করতেই হবে। আকাশী গালের একপাশে আসা একফালি চুল আঙুলের ডগা দিয়ে ঘোরাতে লাগল। ভ্রূ তার কুঁচকে রয়েছে।
পরদিন আকাশী স্কুলের টয়লেটে ঢোকার পর দেখে, সেলিনা লুকিয়ে কার সাথে যেন নিচুস্বরে কথা বলছে। আকাশী নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে যা শুনল, তাতেই আঁতকে উঠল।
সেলিনা বলছে, ‘ভালোবাসো? সত্যিই এতো ভালোবাসো? আচ্ছা, ঠিক আছে যাব। টিফিনের সময় বাড়িতে না গিয়ে যাব। বলছি তো যাব। আচ্ছা, প্রমিজ। স্কুলের পেছনের মাসির বাড়ির দিকে, তাইতো?’
আকাশী আর কিছু শোনার ক্ষমতা রাখল না। এই মেয়েটির সাথে সে তিনদিন যাবৎ প্রাইভেটে পড়ছে। অথচ কখনও মনে হয়নি তার কোনো প্রেমিক আছে। আজ হঠাৎ…
সেলিনা ফোন রেখে আকাশীকে দেখতেই থমকে দাঁড়ায়।
‘তুমি আমার কথা শুনছিলে?’
‘শুনব না কেন? স্কুলের যাবতীয় শিক্ষার্থীরা এই টয়লেটেই আসে। তুমি কথা বললে কানে তো আসবেই।’
সেলিনা ইতস্তত করল।
‘সেলিনা, ওই ছেলেটি কে?’
‘ওটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
‘সেলিনা, একটি মেয়ের যখন সর্বনাশ হয়, তখন তা আর ব্যক্তিগত থাকে না। পারিবারিক হয়। তারপর হয় সামাজিক। তুমি যেভাবে কথা বলছিলে, আমি তোমার সর্বনাশটা দেখছি।’
সেলিনার চোখে আগুন জ্বলছে। ফোঁস করে ওঠে বলল, ‘আমার প্রেমিক আজেবাজে কোনো ছেলে নয়। ও যাস্ট আমাকে দেখতে চাইছে। এটাতে সর্বনাশের কিছু নেই। কিছুই সে করবে না আমার পারমিশন ছাড়া।’
আকাশী একটু আশ্বস্ত হয়ে বলল, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’ সে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই কী ভেবে যেন প্রশ্ন করে উঠল, ‘সেলিনা, ছেলেটি কে?’
‘কেন? জেলাস ফিল করলে আমি দায়ী নই। ওটা রাসেল।’
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার