অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম পর্ব ৬+৭

#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০৬
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

আমি ভাবছি কি বজ্জাত লোক একটু লজ্জা ও নেই কিভাবে অকপটে বলে দিল বিয়ের কথা…..

বাবাই এ তো ভালো কথা, তবে মেয়ে কিন্তু আমাদের পছন্দ করা আছে।
হোয়াট!!কে সে??

আন্টি বললেন বাবাই মরিয়ম তো ওর ননদ ফারজানা কে তোর বউ করবে ঠিক করে রেখেছে। মেয়েটাকে আমাদের ও বেশ পছন্দ।

“মা” ও ঠিক করলেই হবে? ফারজানা খুব ভালো মেয়ে ঠিক আছে, কিন্তু আমি ওকে সবসময় বোন হিসেবে দেখে আসছি, তাই স্ত্রী হিসেবে কখনো মানতে পারবো না । আমার অন্য কাউকে পছন্দ ব্যাস।আর আমি আবার ছুটিতে এসে তাকেই বিয়ে করবো,এ ব্যাপারে আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।

এই বলে শরীফ ভাইয়া খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেলেন।সব কিছু যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,কি থেকে কি হয়ে গেল।

আমি ভাবছি_শরীফ ভাইয়া নিশ্চ‌ই আমার কথা বলছেন। কিন্তু এটা তো হতে পারে না। আন্টি আংকেল তারা ফারজানা নামে মেয়ে টাকে পছন্দ করেছেন শরীফ ভাইয়ার জন্য। এখন শরীফ ভাইয়া যদি আমার কথা বলেন_আন্টি আংকেল খুব কষ্ট পাবেন। আমি এটা হতে দিতে পারি না,যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, এতো এতো ভালোবাসা দিচ্ছেন আমার জন্য তারা কষ্ট পাবেন এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমাকেই কিছু একটা করতে হবে…

বাসায় এখন পিন পিন নিরোবতা বিরাজ করছে। সবার মন খারাপ, আমার একটু ও ভালো লাগছে।হাসি খুশি পরিবার টা আমার জন্য আজকে এই অবস্থা। আমি ভাবছি কি করে সব ঠিক করা যায়… শরীফ ভাইয়ার ছুটিও মাত্র আর দু’দিন আছে, এতো কম সময়ে কি করি??

অনেক ভেবে আন্টির কাছে গেলাম, আন্টি আসবো? শরীফা আমার রুমে আসতে তোর পারমিশন লাগবে?আয় ভিতরে আয়। আমি আন্টির কাছে গেলাম। কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।

মিন মিন করে বললাম আন্টি ঐ যে ফারজানা নামে মেয়ে টা ওকে যদি শরীফ ভাইয়ার সাথে মিট করা যেত তাহলে ভালো হতো। না মানে কবে না কবে শরীফ ভাইয়া ওনাকে দেখেছিলো। এখন যদি ওকে সুন্দর করে সাজিয়ে শরীফ ভাইয়ার সাথে মিট করানো যায়, তাহলে হয়তো শরীফ ভাইয়ার ভালো লাগতে পারে।

আন্টি বলল শরীফা তুই ঠিক বলেছিস, চেষ্টা তো করে দেখতেই পারি তাইনা।তাতে তো আর ক্ষতি নেই। আমি এখনি বলছি মরিয়ম কে ও যেন ফারজানা কে নিয়ে আজকেই আসে।

আন্টি সাথে সাথে কল করলেন মরিয়ম আপু কে। কয়েক বার রিং হওয়ার পর ও ওপাস থেকে কেউ রিসিভ করলো না।

আমি আন্টি দু’জনেই হতাশ হয়ে বসে রইলাম। আমাদের ভাবনার মাঝেই,বিকট শব্দে ফোন বেজে উঠে। আন্টি কাজে বিজি থাকলে কল আসলে যেন শুনতে পায় তার জন্য‌ই এরকম রিংটোন সেট করা।তো যাই হোক মরিয়ম আপু কল করেছেন।

আন্টি কথা বলছেন। আমি যা যা আন্টি কে বলেছি, আন্টি তাই বলছে,মরিয়ম আপু কে।
ওপাশের কথা কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।

অতঃপর তাদের কথা শেষ হলো। আন্টি কে খুশি খুশি ই লাগছে, তারমানে ওনারা আসছে। তাই, হলো আন্টি বললেন শরীফা মরিয়ম আজকে বিকালে আসবে ফারজানা কে নিয়ে।
আচ্ছা আন্টি তাহলে তো খুব ভালো। আচ্ছা আন্টি এখন আমি যাই একটু ঘুমাবো, তারা আসলে আমায় ডেকে নিও। আচ্ছা শরীফা তুই যা।

আমি খুবই ঘুম কাতুরে।সব কিছুর উর্ধ্বে হচ্ছে আমার ঘুম, কোন কিছুর বিনিময়ে আমি আমার ঘুম কে ত্যাগ করতে পারিনা। এবং কি এক্সামের সময় ছাত্র-ছাত্রীরা রাত জেগে পড়াশোনা করে। কিন্তু আমি কখনোই পারিনা। আমার কাছে আমার ঘুম সব কিছু থেকে বেশি মূল্যবান।এর জন্য অবশ্য আম্মু অনেক বকা দিতো। কিন্তু তাও ছাড়তে পারিনি।এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম।

সাইফের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল, সাইফ বলে ভাবীমনি দেখে যাও কে এসেছে। আমি উঠে বসলাম, কিছু সময়ের জন্য মস্তিষ্ক কাজ করেনি। ঘুম থেকে উঠার পর যা হয় আর কি.. তাই সাইফের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ভাবীমনি তুমি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? সাইফের কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো। কি যেন বলছিলি?আরে দেখে যাও বড় আপ্পি আর ফারজানা আপ্পি আসছে।ওহহ আচ্ছা, তারা এসে গেছে? হুম, তাইতো বলছি সেই কখন থেকে।

আচ্ছা তুই যা আমি আসছি, আর শুন তাদের সামনে আমাকে ভাবীমনি ডাকবি না কেমন? কেন ডাকবো না? কিছুদিন পর তোর ফারজানা আপ্পি তোর ভাবীমনি হবে বুঝলি। না এটা হবে না তুমিই আমার ভাবীমনি। আমি ভাইয়াকে বলছি ধারাও।

এটা বলেই সাইফ দৌড়ে চলে গেল। আমি এতো করে ডাকলাম তাও শুনলো না।

ঘড়িতে সময় দেখে বুঝলাম আসরের আযান হয়ে গেছে। তাই ফ্রেস হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে, তারপর রুম থেকে বের হলাম।
আন্টির কাছে গেলাম, আন্টি বললো শরীফা ও হচ্ছে মরিয়ম তুই আপু বলে ডাকিস।আর মরিয়ম তোকে ওর কথাই বলেছিলাম।

আচ্ছা তাহলে তুমিই শরীফা,মা তোমার কথা অনেক বলতো। কেমন আছো তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপু। আপনি কেমন আছেন? আমিও ভালো আছি।
মায়ের কথা আসলেই ঠিক, তুমি সত্যিই অনেক সুন্দর শরীফা। ধন্যবাদ আপু।

আমি মনে মনে ফারজানা আপু কে খুঁজছি, ওনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কোথায় ওনি?
আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। তখন মরিয়ম আপু বললো শরীফা তুমি কি কাউকে খুজছো? আমি আমতা আমতা করে বললাম আসলে আপু আপনার সাথে তো মেহমান আসার কথা ছিল?ওহহ আচ্ছা, তুমি ফারজানা কে খোচ্ছ?জ্বি,আপু ওনাকে দেখার খুব ইচ্ছে।

আচ্ছা তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।ও মনে হয় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছে।
ওহহ আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে আমি পরে দেখা করে নিবো।

আন্টি আর মরিয়ম আপু কথা বলছে, এই ফাঁকে আমি ওখান থেকে চলে আসি।আর এসে শরীফ ভাইয়ার রুমে উকি দিয়ে দেখি, কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না। কোথায় ওনারা?
তারপর প্রত্যেকটা রুমে খুঁজে ও পেলাম না।

মনে পরলো আমি তো, ছোট ছাদে দেখিনি। বিকাল বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে চারপাশের পরিবেশ এবং আকাশ দেখার মজাই আলাদা। হয়তো ওখানেই থাকবে।

শরীফ ভাইয়াদের বিল্ডিং টা তিন তলা। তৃতীয় তলার পুরো এপার্টমেন টায় শরীফ ভাইয়ারা থাকেন‌।আর বাকি দুই তলা ভাড়া দেওয়া।
তিন তলাতে শরীফ ভাইয়া দের বাসাটা হ‌ওয়ায় খুব ভালো হয়েছে, আমি ছোট ছাদ,বড় ছাদ উভয় টাতেই ঘুরে বেড়াতে পারি‌। অবশ্য তারা তো নিজেদের থাকার জন্য প্লান করেই করেছে, এতো সুন্দর করে।

এসব ভাবতে ভাবতেই ছোট ছাদের কাছে গেলাম, গিয়ে দেখি আমি ঠিকই ভেবেছি। শরীফ ভাইয়া আর ঐ আপুটা অল্প কিছু দূরত্বে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। শরীফ ভাইয়া দেখছি হেসে হেসেই কথা বলছেন।আর আপুটাকে পুরো পুরি দেখা যাচ্ছে না,লেফ্ট সাইট শুধু দেখা যাচ্ছে।

শরীফ ভাইয়া যেহেতু এভাবে হেসে হেসে কথা বলছে তাহলে নিশ্চয়ই, এবার বিয়েতে অমত করবে না। আমার দুশ্চিন্তা তাহলে ঘুচবে।উফ কি শান্তি, বাঁদর আর্মি টা আমাকে আর জ্বালাবে না।যাই আন্টি কে সুখবর টা দিয়ে আসি।

আন্টির রুমে ডুকবো তখনি শুনতে পেলাম, মরিয়ম আপু বলছে_ “মা” শরীফা আর কতদিন এভাবে আমাদের বাসায় থাকবে? আত্মীয় স্বজনরা জানলেই বা কি মনে করবে।আর তাছাড়া তোমার কাছে যা শুনলাম, এভাবে কতোদিন তোমরা ওকে লুকিয়ে রাখবে? একদিন না একদিন তো ঐ লোক গুলো ওর খুঁজ পাবেই তখন কিন্তু আমাদের কে ও ছাড়বে না। তুমি দেখে নিও।

আন্টি বললেন_ কি করবো বল মেয়ে টাকে দেখলেই মায়া লাগে। কিভাবে ওকে ছেড়ে দেই, অনিশ্চিত জীবনে। জানি না আল্লাহ পাক মেয়েটার ভাগ্যে কি রেখেছেন ‌।

আমি আর এখানে দারালাম না, রুমে এসে অঝোরে কাঁদতে থাকি। মরিয়ম আপু তো ঠিক কথাই বলেছেন। আমি তো জানি রাশেদ ভাই কতটা ভয়ংকর। রাশেদ ভাই যদি জানতে পারেন আমাকে তারা আশ্রয় দিয়েছেন, তাহলে তাদের ক্ষতি করতে দ্বিতীয় বার ওনি ভাববেন না।

আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি এখানে থাকলে,এই ভালো মানুষ গুলোর বিপদ আর এখান থেকে চলে গেলে আমার যে রক্ষা নেই।তা আমি খুব ভালো করে জানি।

আচ্ছা আপুদের কাছে কল করলেই তো হয়,হ্যা তাই করবো। বড় আপুর সাথে যোগাযোগ করে আপুর বাসায় চলে যাবো। এটা তো কুমিল্লা, বড় আপুদের বাসা হচ্ছে চৌদ্দ গ্রাম।এখান থেকে নিশ্চ‌ই বেশি দূর হবে না।

এসব ভাবছি তখন শুনতে পেলাম আন্টি ডাকছে। চোখে মুখে পানি দিয়ে মুছে নিলাম এবং গলা ঝেরে স্বাভাবিক হয়ে রুম ছেড়ে বের হলাম, না হয় এখন সবাই প্রশ্ন করবে কেন আমি কেঁদেছি। শুধু শুধু বাজে একটা সিনক্রিয়েট হবে তাই কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।

আন্টি আমাকে ডেকেছো?
হুম,আয় আমাদের সাথে নাস্তা করবি। আমি আন্টি, আংকেল, মরিয়ম আপু এবং সাইফ নাস্তা করতে বসলাম। কিন্তু কোথাও শরীফ ভাইয়া বা ফারজানা আপু নেই। খুব জানতে ইচ্ছে করছে তারা কি নাস্তা করবে না?

খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে আন্টি বললেন শরীফা তোর বুদ্ধি টা কিন্তু দারুন ছিল। আমি অবাক হয়ে বললাম কি বুদ্ধি আন্টি? এই যে ফারজানা কে এখানে আনার ব্যাপার টা।
ওহহ আচ্ছা। হুম তোর জন্য‌ই সব ঠিক হতে চলেছে।

শরীফ আর ফারজানা তো খুব সুন্দর একে অপরের সাথে কথা বলছে। নাস্তা খেতে আসতে বললাম বলে এখানে দিয়ে যাও। তাই তো ওদের কে আলাদা করে মিনি ছাদে নাস্তা পাঠিয়ে দিয়েছি। আন্টির আনন্দ দেখে আমার খুব ভালো লাগলো, এই ভেবে আন্টির জন্য কিছু তো একটা করতে পারলাম…..
#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০৭
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

আন্টির আনন্দ দেখে আমার খুব ভালো লাগলো, এই ভেবে আন্টির জন্য কিছু তো একটা করতে পারলাম…..

তারপর আন্টি আর মরিয়ম আপু বিভিন্ন কথা বলেন বিয়েতে কিভাবে কি করবেন।
আমি ভাবছি তারা দু’জন কি এমন কথা বলছেন?কে জানে। একটু দেখতে ও পারছিনা ফারজানা আপু কে।

মাগরিবের আজান হতেই, রুমে এসে নামাজ পড়ে নিলাম। খাটের বসে ভাবছি, শরীফ ভাইয়া কে কি বলবো? ওনার ফোন টা দিতে বড় আপুর কাছে কল করবো বলে। তখনি একটা মিষ্টি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম এটা ফারজানা আপু।
ফারজানা আপু বললেন_হাই শরীফা।
আসসালামু আলাইকুম আপু।
ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?
এইতো আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন? আমি ভালো আছি। শরীফা তুমি নাকি আমাকে দেখার জন্য বার বার বলছিলে? আমিও শরীফ ভাইয়ার কাছে তোমার কথা শুনে, কখন তোমাকে দেখবো সেই অপেক্ষায় ছিলাম।

“ফারজানা আপুর কথায় বুঝত পারলাম,
আপুটা খুবই মিশুক।আর খুব ভালো”।

শরীফা তুমি কিন্তু খুব কিউট। ধন্যবাদ আপু। আপু আপনিও অনেক সুন্দর। তাই?জ্বি তাই।
আচ্ছা তো একা একা কি করছিলে?
এইতো বসে ছিলাম। আচ্ছা চলো সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছে,চলো আমরাও যাই। আচ্ছা আপু চলেন।

সবার সাথে আমরাও জয়েন করলাম। আমি গিয়ে আন্টির পাশে বসলাম, বসার পরেই আন্টি আমার কানে ফিসফিস করে বলল শরীফা কি বুঝলি? ওদের একে অপরকে পছন্দ হয়েছে? আমিও নিচু স্বরে বললাম, আন্টি কিছুই তো বুঝতে পারছি না। তবে ওনাদের ভাব ভঙ্গি দেখে তো মনে হচ্ছে রেজাল্ট পজেটিভ ই আসবে। আমার ও তাই মনে হচ্ছে শরীফা।

আমি ভাবছি কল করার কথা বলবো কিনা? তাই ওদের কথা আমার কানে পৌঁছালেও মস্তিষ্কে পৌঁছাচ্ছে না।এক পর্যায়ে আন্টি কে বললাম আন্টি আমি আমার আপুর সাথে কথা বলবো।

আমার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। আসলে এতো দিন পর আমি আমার আপনজন দের সাথে কথা বলব শুনে সবার এরকম অবস্থা।

আংকেল বললেন_আমাদের মাথায় এটা এক বার ও আসলো না, মেয়েটা এভাবে পরিবারের থেকে আলাদা আছে। ওর তো জানতে ইচ্ছে করে,ওর পরিবার কেমন আছে? তাছাড়া ওর জন্যও তো হয়তো অনেক টেনশান করছে তারা। শরীফ তুই এখনি ওকে তোর ফোন টা দে।

শরীফ ভাইয়া বললেন হ্যা বাবা দিচ্ছি।এই বলে ওনি আমার দিকে ওনার ফোন বাড়িয়ে দিলেন।
আমি আপুর নাম্বার টা একটু মনে করে নিয়ে ডায়াল করলাম। কয়েক বার রিং হতেই রিসিভ করে। রিসিভ হতেই আমি আপু বলে কেঁদে দেই।

এতো দিন পর আপু ও আমার কন্ঠ শুনে কেদে দেয়। আমি কান্নার জন্য কিছু বলতেই পারছিলাম না। তাই আন্টি আমার থেকে ফোন নিয়ে কথা বললেন।

আন্টি বললেন আমি তাদের কাছে ভালো আছি। আমার জন্য যেন টেনশান না করে।আপু আন্টির কথা শুনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।

আমার কান্না কমে আসতেই আন্টির থেকে ফোন নিয়ে বললাম আপু আমি তোমার কাছে চলে আসি? আমি তো কুমিল্লা তেই আছি।
আপু বলল না শরীফা এমন কাজ ভুলেও করিস না। রাশেদ তোকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। আমার বাসার আসে পাশে ওর লোক ঘুরতে দেখা যায়।
তাই বোন আমার কষ্ট হলেও তুই তাদের কাছে থাক।আপু আম্মু আর ভাই ঠিক আছে তো? হুম, ওরা মেজোর বাড়িতে আছে। আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।মেজ আপু আর আপুর বেবি সবাই কেমন আছে?হ্যা ওরা ভালো আছে।আপু আব্বু তো আর নেই আপু এই বলে আবার কেঁদে দিলাম।আপু ও খুব কান্নাকাটি করছে।

আমার অবস্থা দেখে আন্টি ফোন নিয়ে আপুকে বিদায় দিয়ে ফোন রেখে দেয়। আমি কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা। আন্টি পরম আবেশে আমাকে জরিয়ে রাখে আর সান্তনা দিতে থাকে।

এরপরের দিন,
সকাল বেলা সবাই নাস্তা করার পর, ফারজানা আপু বাসায় যাবেন বলে তৈরি হলেন। আমরা তো সবাই অবাক। মরিয়ম আপু বললেন_ফারজানা গতকাল আসলে আর আজকেই কেন চলে যাবে? কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?আরে না ভাবী কি বলছো?কে কি বলবে? আমার না আজকে খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ক্লাস আছে আমাকে যেতেই হবে।প্লিজ কিছু মনে করো না। আমি আবার তোমাদের বাসায় আসবো প্রমিজ করলাম। কিন্তু তোমার সাথে ভাই কে নিয়ে কোন কথাই বলতে পারলাম না।আর ভাইয়ের সাথেই বা তোমার কি কথা হয়েছে?

“ভাবী আমার না লেইট হয়ে যাচ্ছে। তোমার সাথে পরে কথা হবে”।

আন্টি আংকেল সবাই ফারজানা আপু কে থাকার জন্য বললেন, কিন্তু শেষ মেষ হার মানতে হলো কারণ ফারজানা আপু বলছে ওনার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে ভার্সিটিতে। পড়াশোনার ব্যাপার তাই, আন্টি আংকেল যেতে দিতে রাজি হলেন।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে,আপু আমার কাছে আসলেন।আর এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন শরীফা ভালো থেকো। আমি বললাম আপু না গেলে হয় না। না আপু আমাকে যেতেই হবে। আমি মন খারাপ করে ফেললাম। আমার অবস্থা দেখে ফারজানা আপু আমার গাল টিপে দিয়ে বললেন ওলে বাবা রে বোন টা আমার রাগ করেছে।

আপু যেও না প্লিজ। আবার আসবো শরীফা।মন খারাপ করে না।

আর কি করা আপুকে অনেক বলেও রাখতে পারলাম না। দরজার কাছে এগিয়ে দিতে আসলাম আমি, তখন ফারজানা আপু বললেন নতুন জিবনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল শরীফা। এটা বলেই আপু লিফটে উঠে পরলো। আমি আপুর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না।

আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, তখন শরীফ ভাইয়া গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে আমার পাশ দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে গেলেন। মনে হচ্ছে যেন ওনি খুব চিল মুডেই আছেন।

আমি আর অতো না ভেবে রুমে চলে এলাম। আন্টি আর মরিয়ম আপু হতাশ হয়ে বসে রইলেন।

“আমি ও তাদের সাথে যোগ দিলাম হতাশ দিবস পালন করতে”।

“দুপুর ঘরিয়ে বিকাল, বিকাল ঘরিয়ে সন্ধ্যা,,, সময় তার নিয়মেই ছুটে চলেছে”।

আজকে আমার তারাতাড়ি ঘুম পেয়ে গেল, ঘুম কাতুরে আমি কিনা… তাই খাবার খেয়ে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।

মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি। অনেক সময় ঘুমের মধ্যে মধ্যে মনে হয় পাহাড় থেকে পরে যাচ্ছি, ঠিক তেমনি এখন মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি। এসব ভাবতে ভাবতে যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন মনে হলো কেউ আমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি অনেক ছুটাছুটি করছি কিন্তু মানুষ টা আমাকে কিছুতেই নামাচ্ছে না। আবার আমার মুখে ও কাপড় বেঁধে দেওয়া তাই কথাও বলতে পারছি না। এমনিতে উহুম উহুম শব্দ করে যাচ্ছি কিন্তু তার কানে কি আমার শব্দ পৌঁছাচ্ছে না??

আমার এবার খুব ভয় করছে, আমাকে রাশেদ ভাই তুলে নিয়ে যাচ্ছে না তো?এটা ভেবেই আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।

অতঃপর আমাকে নামানো হলো। চারপাশে তাকিয়ে, বুঝতে পারলাম এটা শরীফ ভাইয়া দের ছোট ছাদ যেটা রুমের পাশে। জোছনার আলো তে পুরো পুরি স্পষ্ট না দেখা গেলেও অনেক টাই দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল কে নিয়ে আসলো আমাকে। পিছনে তাকিয়ে ভুত দেখার মত চমকে গেলাম।

শরীফ ভাইয়া_ আপনি আমাকে এখানে এনেছেন? কিন্তু কেন?আর এভাবে এনেছেন কেন? আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলেন।আর কেউ দেখতে পেলে কি মনে করবে?

এবার একটু দম নাও। এভাবে এতো গুলো কথা কেউ একসাথে বলে।

বলুন কেন এনেছেন?
কেন এনেছি? জানতে চাও। এটা বলতে বলতে শরীফ ভাইয়া এগুচ্ছেন আর আমি পিচুচ্ছি।ভা.. ভাইয়া
বলতে বলতেই আমি ছাদের রেলিংয়ের সাথে মিশে গেলাম।

তুমি সাইফ কে কি বলেছো?ক.ক‌ই কি বলেছি? তুমি ওকে বলোনি,ও যেন তোমাকে ভাবীমনি না ডাকে। কয়েক দিন পর ফারজানা ওর ভাবীমনি হবে।স্টুপিড ওকে কেন বলেছো এগুলো?

আমি তো ঠিকই বলেছি। ভয়ে ভয়ে কথা গুলো বলছি, কারণ শরীফ ভাইয়া যে রেগে আছেন তা বেশ বুঝতে পারছি।

শরীফ ভাইয়া আবারও বললেন_আর কি যেন মাকে হেল্প করছো! মায়ের সাথে প্লান করে ফারজানা কে এখানে আনিয়েছো। তাই না?

শরীফ ভাইয়া আর আমার মাঝে স্বল্প পরিমাণ ফারাক, ওনার প্রত্যেক টা নিঃশ্বাস আমার উপর এসে পড়ছে। তাই আমি সরে আসতে নিলেই শরীফ ভাইয়া রেলিং এ হাত দিয়ে আমাকে আরো আটকে দিলেন। বুঝতে পারলাম বাঁদর আর্মি টা সারদিনের রাগ গুলো জমিয়ে এখন এগুলো সব আমার উপর ঝাড়ছে।

কি হলো এখন কথা বলছো না কেন? সবার সাথে তুমি এতো এতো কথা বলতে পার আর আমার কাছে আসলেই তোমার সব কথা ফুরিয়ে যায়।

আনসার মি.. এবার আমি ড্রামা করে কেঁদেই দিলাম। কারণ এ ছাড়া আমার উপায় নেই।
শরীফ ভাইয়া আমার কান্না দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন,আর বলেন এই কান্না করছো কেন? আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর বকবো না কিন্তু কান্না থামাও বলছি।

আমার এদিকে খুব হাসি পাচ্ছে। ওনার এই অবস্থা দেখে।

তারপর শরীফ ভাইয়া আমার থেকে কিছু টা দূরে দারালেন। আবার বলতে শুরু করলেন, শরীফা আমি কি তোমার যোগ্য না? আমি দেখতে এতো টাই খারাপ?

“ওনি এসব কি বলছেন? ওনি আমার যোগ্য না”?

আমি বললাম ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন? আমি আপনার যোগ্য না।আর কখনো হতেও পারবো না।আসলে আমি চাই না আমার জন্য আন্টি আংকেল কষ্ট পাক। তাদের খুব ইচ্ছে ফারজানা আপু আপনার ব‌উ করবে বলে।

যদি ফারজানা আমাকে বিয়ে করতে না চায়, তখন? তখন তো তোমার আর কোন প্রবলেম থাকবে না,রাইট?

ফারজানা আপু কেন চাইবে না? যেখানে ওনার পরিবার ও চাইছে। সেটা তুমি জানতে পারবে, এখন আমার কথার আনসার দাও?

“আমার হঠাৎ রুমের দিকে নজর গেল এবং মনে হলো একটা ছায়া আমি তাকাতেই সরে গেল”।

শরীফ ভাইয়া বললেন কি হলো বলো?
ভাইয়া আমার এই অনিশ্চিত জীবনে আপনাকে আমি জড়াতে চাই না।এটাই কি তোমার শেষ ইচ্ছা? আমি চুপ করে রইলাম।

“শরীফ ভাইয়া আর কিছু না বলে চলে গেলেন”।

সকাল হতেই জানতে পারলাম শরীফ ভাইয়া, সকালের আলো ফুটতেই, বেরিয়ে পরেছেন সিলেট সেনানিবাস এর উদ্দেশ্যে….

#চলবে…

(আসসালামু আলাইকুম।
কারো থেকেই ভালো মন্তব্য পাই না, তাই গল্প লিখতে ইচ্ছে করে না 😔)
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here