অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম পর্ব ৪+৫

#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০৪
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

বুঝতে পারলাম শরীফ ভাইয়া আর্মি অফিসার হ‌ওয়াতে তারা আর গাড়ি চেক করলেন না,,,,,,

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে উঠে ঠিক হয়ে বসলাম। তখন আন্টি বললেন মানুষ কতোটা খারাপ হলে এরকম হয়।

আংকেল বললেন_এভাবে আর কতো চুপ করে থাকবো? আমাদের এবার কিছু করা উচিৎ।

শরীফ ভাইয়া বললেন_বাবা দেখলেই তো যে পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবে,অথচ তারাই শন্ত্রাসদের সাথে যুক্ত। তাহলে কারা করবে ন্যায় বিচার?

তাছাড়া আমি চাইলে উপরের মহলে জানাতে পরি। কিন্তু কেইস করলে ওদের কাছে আমার ঠিকানা যাবে আর ওরা এটাও বুঝে যাবে যে আমাদের কাছে শরীফা আছে।
দেখ আমার ছুটি বেশি দিন নেই। কিছুদিন পরেই চলে যেতে হবে। তখন ওরা নিশ্চিত শরীফার উপর হামলা করবে। তোমরা একা কিছুই করতে পারবে না।সে জন্যই আমি কোন স্টেপ নিচ্ছি না।

আংকেল বললেন_সত্যি এগুলো তো আমরা ভেবে দেখিনি। তাহলে এখন কি কোন উপায় নেই? বাবা আমাদের কাছে তো উপযুক্ত প্রমান ও নেই যে শরীফার বাবা কে ওরা খুন করেছে। উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করলে সহজে সল্ভড করা যেত। কিন্তু তা তো নেই। তবে বাবা মা তোমাদের খুব সাবধানে শরীফাকে নিয়ে থাকতে হবে। হুম আমরা ওকে সাবধানে রাখবো, বাকিটা আল্লাহ তা’আলার হাতে।

আমি তাদের সব কথা শুনছি আর ভাবছি আমার সাথেই এরকম হতে হলো। সেদিন এইস.এস.সি.এক্সাম শেষ করে বাসায় অবসর সময় পার করছিলাম তখন আমাদের গ্রামের এক চাচাতো ভাই রাশেদ আব্বুর কাছে আমার সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব দিল।

আব্বু সাথে সাথে নাকুচ করে দেয়। কারণ রাশেদ ভাই মাত্র সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন,এমনিতে তারা অঢেল সম্পদের মালিক। কিন্তু তাতে কি আব্বুর কাছে শিক্ষার মূল্য সবথেকে বেশি। আব্বুর কথা অশিক্ষিত লোক পশুর সমান।যার প্রমাণ রাশেদ ভাই দিয়েও দিল।যাই হোক তার পর আব্বুর না করাতে তারা টাকার লোভ দেখায় তাতেও যখন আব্বু কে রাজি করাতে পারলো না তখন হুমকি দিয়ে গেল আমার ক্ষতি করবে।

আব্বু-আম্মু খুব টেনশানে পরে যায় আমাকে নিয়ে সত্যিই যদি ভালো মন্দ কিছু করে ফেলে।তাই আমাকে বড় আপুর বাসায় পাঠিয়ে দিবে ঠিক করা হল। কিন্তু তা আর হলো না, ঐদিন‌ই রাশেদ ভাই এসে বলে যায় কালকেই আমি শরীফা কে বিয়ে করবো।আর বিকাল বেলা আমার বোনেরা এসে শরীফা কে গায়ের হলুদের জন্য তৈরি করবে।

আব্বু রাশেদ ভাইয়ার বাবাকে অনেক বুঝিয়ে ছিল যাতে ওনি ওনার ছেলে কে বুঝায়। কিন্তু চাচা উল্টো বলেন তার ছেলে যদি শরীফা কে বিয়ে করে সুখী হয় তাহলে সে এখানে কিছুই করবে না।

আব্বু বুঝে গেল চাচাও রাশেদ ভাই কে সাপোর্ট করে তাই তাকে বলে কোন লাভ নেই। গ্রামের প্রভাবশালী লোক হ‌ওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রামের অন্য কেউ কোন কথা বলবে না তাও জানা আছে। একদিনের মধ্যে আব্বু কি করবে বুঝতে পারছিলো না।

তাই গায়ের হলুদের দিন রাতে আব্বু আমাকে নিয়ে কুমিল্লা বড় আপুদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। কিন্তু তাতে ও সফল হলাম না, কিভাবে যেন রাশেদ ভাই খবর পেয়ে গেল আর তার দলবল নিয়ে আমাদের পিছু ধাওয়া করলো।
আমরা ওদের থেকে অনেক টা দূরে ছিলাম আর গাড়িতে ও ওঠে যেতে পারতাম কিন্তু তার আগেই ওরা আব্বুর মাথায় লোহার মত কিছু একটা দিয়ে আঘাত করলো যার ফলে আব্বুর মাথা ফেটে রক্তে ভিজে গেছে রাস্তা।

আমি কোন দিন ও ভুলতে পারবো না আব্বুর সেই আর্তনাদ। তবুও আব্বু আমাকে বার বার বলছিল শরীফা মা আমার বেশি সময় নেই। তাই আমাকে নিয়ে ভাবিস না। তুই পালিয়ে যা মা তুই পালিয়ে যা। আমি কিছুতেই আব্বু কে ছেড়ে যেতে চাইছিলাম না।

কিন্তু তারপর দেখলাম আব্বু আর কোন কথা বলছে না। মনে হলো আব্বু আর নেই, তাই সেদিন স্বার্থপর হয়ে চলেই এলাম আব্বু কে রেখে।

তারপর কিভাবে মাথা ফেটে গেল এবং শরীফ ভাইয়ার মা বাবা আমাকে হসপিটালে নিল।এসব কিছুই আমার মনে নেই।
এখন এগুলো মনে হলে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার।

সাইফের ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। সাইফ বলছে ভাবীমনি আমরা চলে এসেছি। নেমে আসো, তুমি কি গাড়িতেই বসে থাকবে নাকি? আমি তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তো কখন চলে এলাম খেয়ালই করিনি।

গাড়ি থেকে নেমে আমি চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম। দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক স্বপ্নের রাজ্যে পৌঁছে গেছি আমি। চারিদিকে প্রকৃতির সুন্দর্যো। অবশ্য প্রকৃতিকে যে ভালোবাসে সে সব জায়গায় প্রকৃতির সুন্দর্যো দেখতে পায়।

আমি দেখেই চলেছি এতো সুন্দর কি বলবো। আমার মনে হচ্ছে আমি যদি বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করতাম তাহলে ঠিক একটা কবিতা লিখে ফেলতাম।

শরীফ ভাইয়া বলে চলো সবাই আগে খাওয়া দাওয়া করে নেই তারপর ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখবো। খাওয়ার কথা বলতেই আমার অনুভব হলো খিদে পেয়েছে। এতোক্ষণ তা খেয়াল ই ছিল না। তারপর সবাই খাবার খেয়ে নিলাম।

অতঃপর সবাই ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম, আমার একটা ফোন থাকলে অনেক ভালো হতো। ফোনে এতো সুন্দর দৃশ্য গুলো ক্যামেরা বন্দি করে রাখা যেত। ফোন টা বাড়িতেই রয়ে গেছে।ঐ মূহুর্তে ফোন সাথে আনার কথা মাথায় ছিল না।

আমি সবার থেকে কিছু টা দূরে ছিলাম তাই সাইফ আমাকে ডাক দেয় ভাবীমনি বলে। আমি তাদের কাছে গেলাম, আন্টি বললো শরীফা আমাদের সাথে দারা তো সবাই মিলে ছবি তুলি। এদিকে আমি শরীফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম শরীফ ভাইয়ার ফেইসের অবস্থা দেখার জন্য কারণ সাইফ যেভাবে ভাবীমনি বলে আমায় ডাক দিল। এবার তো ওনার শুনতে কোন ভুল হ‌ওয়ার কথা না।

কিন্তু শরীফ ভাইয়াকে স্বাভাবিক ই মনে হলো। আমার ভাবনাতেই শরীফ ভাইয়া বলে উঠেন, শরীফা ঠিক করে ধারাও। আমি ঠিক হয়ে ধারালাম ঠিকই কিন্তু শরীফ ভাইয়ার ফোনের ক্যামেরার দিকে তাকাতে পারছি না।

আন্টি বলে শরীফা ক্যামেরার দিকে তাকা। আন্টির কথায় একটু তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। আবার শরীফ ভাইয়া ওনাকে সহ সেলফি নেয়ার সময়, শরীফ ভাইয়া বলে বসে লজ্জাবতী এখানে তাকান। আমি তখন একটা রাগি লুক নিয়ে তাকাই আর তখনি শরীফ ভাইয়া ছবি ক্যামেরা বন্দি করে নিলেন।

আমি এখানে আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলাম, যেখানে পানির স্রোত বয়ে চলেছে।পা ভিজিয়ে কিছু সময় দারিয়ে র‌ইলাম। সাথে সবুজ ঘাস গুলো অতিমাত্রায় সুন্দর। উঁচু উঁচু টিলার মতো জায়গা টা তার উপর ঘাস। খুবই ভালো লাগছে। তারপর চলে গেলাম ঝর্নার কাছে, অনেকেই ঝর্নার পানিতে ভিজতেছে। আমার ও খুব ইচ্ছে হলো কিন্তু ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখলাম।

সবচেয়ে অবাক হলাম আগুন পাহাড় নিয়ে। যেখানে পানি থেকে আগুন বের হচ্ছে। খুবই অবিশ্বাস্য।আসলে আল্লাহ তা’আলা চাইলে সব কিছুই সম্ভব, আল্লাহ তাআলার কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। “সুবহান আল্লাহ্”

পাহাড়ে উঠে ইচ্ছে হলো খুব জোরে চেঁচিয়ে নিজের কষ্ট গুলো জানান দেই, কিন্তু পারলাম না। আন্টি আংকেল তারা আমার কথা ভেবে আনন্দের সময়টাতে কষ্ট পাবে ভেবে করলাম না।সব কিছু দেখা শেষে আমরা আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে র‌ওনা হলাম। আসার পথে সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পার করলাম।

আমাদের চিটাগাং থেকে কুমিল্লা পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেল। আমি কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম। অবশ্য গাড়িতে হাল্কা নাস্তা করেছিলাম।
আমার ঘুম ভাঙ্গলো একদম সকালে। চারিদিকে আলো ছড়িয়ে পড়েছে। সূর্য কিছু সময়ের মধ্যেই উঠে যাবে। তাই তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম।

শরীফ ভাইয়া প্রতিদিনের মতো আজকেও এক্সারসাইজ করতে বেরিয়ে গেছেন। ওনার কথা কিছু দিন যদি সকাল বেলা ঘুমিয়ে থাকেন তাহলে তার এটা বদ অভ্যাস হয়ে যাবে। তখন তিনি কর্ম ক্ষেত্রে ফিরে গেলে, খুব প্রবলেম হবে। সকাল ছয়টায় তাদের পি.টি করতে বেরিয়ে যেতে হয়। তাই প্রতিদিন নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে বেরিয়ে যান।

আমার একটা বিষয় খুব খারাপ লাগলো চাকরির জন্য এতো কিছু অথচ নামাজ পড়তে ওনার অনিহা। তাই ঠিক করলাম ওনি আসলেই ওনাকে নামাজের কথা বলবো।

সারে সাতটার দিকে শরীফ ভাইয়া আসে বাসায়।আর সারে আটটার দিকে সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসলাম। আমি ভাবছি ওনি একা হলে বলবো কথাটা।

সবাই খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়। আমিও রুমে এসে ভাবছি কিভাবে বলা যায়… রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে পানির অজুহাতে শরীফ ভাইয়ার রুমের দিকে তাকালাম, মনে হলো ওনি রুমে নেই। তাহলে কোথায়? তারপর ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি ওনি সোফায় বসে ফোন ইউজ করছেন।

আমার উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য একটু শব্দ করে আবার চলে আসছিলাম তখনি পিছন থেকে শরীফ ভাইয়া বলে উঠে শরীফা চলে যাচ্ছ যে? রুমে আসো। আমিও সুযোগ পেয়ে গেলাম।আর সাইফের সাথে একটু কার্টুন দেখতে লাগলাম কিন্তু মনে মনে ঠিকই ভাবছি কিভাবে বলি, হুটহাট তো বলা যায় না।

শরীফ ভাইয়া বললেন শরীফা তুমি কার্টুন দেখ?জ্বি, মাঝে মাঝে দেখি। কিছু কিছু কার্টুন খুব ভালো লাগে।

পিচ্চিদের কাছে এটাই স্বাভাবিক।
বুঝলাম ওনি আমাকে রাগানোর জন্য এগুলা বলছেন। কিন্তু আমি না রেগে বললাম আপনি নামাজ পড়েন না কেন?আসলে বাড়িতে আসলে পড়া হয়না। কিন্তু ঐখানে পড়ি। তাহলে এখন যে পড়েন না এগুলোর যবাব কি দিবেন?আসলে কি বলোতো আমার সব ড্রেস গুলো না অপরিষ্কার এগুলো ওয়াশ করে তারপর পড়বো।
এই বলে শরীফ ভাইয়া বাহিরে কোথাও চলে গেলেন।

এদিকে আমি সাইফকে নিয়ে কাজে নেমে পড়লাম। শরীফ ভাইয়ার রুমে গিয়ে ওনার আলমারি থেকে সমস্ত ড্রেস বের করে আনলাম। দেখলাম কিছু নতুনের মতো ড্রেস,ঐ গুলো সহ বের করে আনলাম ওয়াশ করার জন্য কারণ শরীফ ভাইয়া তো বলেছেন ওনার সব ড্রেস অপরিষ্কার…….
#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০৫
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

দেখলাম কিছু নতুনের মতো ড্রেস,ঐ গুলো সহ বের করে আনলাম ওয়াশ করার জন্য কারণ শরীফ ভাইয়া তো বলেছেন ওনার সব ড্রেস অপরিষ্কার…….

সব গুলো কাপড় একসাথে করলাম,বলা যায় ছোট খাটো একটা পাহাড় হয়ে গিয়েছে।এ বাসার হেল্পিং হেন্ড সেফালি আপা কে,ডেকে আনলাম ওয়াশ করে দেওয়ার জন্য।সেফালি আপা দেখেই বলে ওমাগো একদিনে এত্ত জামা-কাফড় আমি দুইতে ফাত্তাম না।

আমি আপা কে আশ্বস্ত করে বললাম আপা আমি তোমাকে হেল্প করবো।
আফামনি আন্নে হেফ করলে আমার কি হ‌ইবো?হে তো এগুলান সব আমার‌ই করতে হ‌ইবো।ত‌য় ঘরের বাকি কাম কহন করমু আমি?

আরে সেফালি আপা আমি তোমাকে কাপড় গুলো ওয়াশ করতে সাহায্য করবো বলছি। এবার কথা না বলে চলো কাজ শুরু করি।
ও আন্নে এইনি ক‌ইছেন। আমি কিনা কি মনো করছিলাম। হুম, এবার চলো।

অবশেষে দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে কাপড় গুলো ওয়াশ করা শেষ করলাম। ছেলেদের পেন্ট গুলো মনে হয় যেন একেকটা বস্তা।কি ভাড়ি ভাড়ি আমার জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।এই প্রথম ছেলেদের কাপড় ওয়াশ করলাম। আমি বাবা আর জীবনেও ছেলেদের কাপড় ওয়াশ করবো না।

সেফালি আপা না থাকলে অবশ্য আমি কখনোই একা পারতাম না।ঘর পরিষ্কার, কাপড় ওয়াশ এগুলোর জন্য‌ই সেফালি আপাকে রাখা হয়েছে। কিন্তু একদিনে এতো কাজ করেনা।যাই হোক এবার আমি শান্তি, শরীফ ভাইয়া নামাজ পড়তে পারবেন।

আন্টি রান্না করছে, আমি একটু সাহায্য করতে গেলাম আন্টির কাছে। তখন শরীফ ভাইয়ার চেঁচামেচি শুনা গেল।
আন্টি বলল শরীফা দেখ তো গিয়ে বাবাই এভাবে ডাকছে কেন, আমি গেলেই এখন মাছ টা পুরে যাবে।জ্বি,আন্টি আমি দেখছি।

শরীফ ভাইয়ার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে বললাম ভাইয়া আন্টি বিজি আছে। কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলুন। দেখলাম শরীফ ভাইয়া ওনার আলমারি তে কিছু খুজাখুজি করছেন।

শরীফা আমি শাওয়ার নিবো কিন্তু কোন ড্রেস খুঁজে পাচ্ছি না। এবং কি ট্রাউজার গুলো ও না।
ভাইয়া আপনার সমস্ত ড্রেস ওয়াশ করে
ঐগুলো ছাদে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে।

কি??
তাহলে আমার ঐ দিন কিনে আনা ড্রেস গুলো কোথায়? ভাইয়া সব ড্রেস-ই ওয়াশ করা হয়েছে।
তুমি কি বলছো এসব? পাগল হলে। আমার নতুন ড্রেস যেগুলো এখনো পারিনি পর্যন্ত।ঐ গুলো ও ওয়াশ করেছে?কে করেছে এগুলো?

আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই তাই আমতা আমতা করে বলি,আ…. আমি সেফালি আপা কে নিয়ে ওয়াশ করেছি।
কেন? আমি কি তোমাকে এগুলো করতে বলেছি। ভাইয়া আপনি তো বলেছেন আপনার সব ড্রেস অপরিষ্কার তাই আপনি নামাজ পড়তে পারছেন না তাই তো আমি…
তাই বলে আমার সমস্ত কাপড় ওয়াশ করবে?

শরীফ আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে গেল রাগ সংবরণ করার জন্য।

আমি ভয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর ঘন্টা খানেক পর বের হলাম,পা টিপে টিপে হাঁটছি আর দেখছি শরীফ ভাইয়া আশে পাশে কোথাও আছে কিনা।এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছি ঠিক তখনি কারো সাথে লাগলো এক ধাক্কা।

লোক টা সাথে সাথে ঘুরে গেল ব্যাক সাইড দেখে এবং ড্রেস আপ দেখে মনে হলো আংকেল, তাই বললাম স্যরি স্যরি আংকেল আমি খেয়াল করিনি। সামনে গিয়ে বললাম আংকেল আপনার কোথাও লাগেনি তো?

অতঃপর সামনে থাকা ব্যাক্তি কে দেখে, আমি হাসতে হাসতে শেষ। আমি কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিনা। আমার সাথে সাইফ কে জয়েন করার জন্য, সাইফ কে ডাকতে থাকি। সাইফ দেখে যা,,,,, তারপর সাইফ ও এসে দেখে হাসতে থাকে।

আমাদের হাসির কারণ হলো_শরীফ ভাইয়া আংকেলের লুংঙ্গি আর ফতুয়া পরেছে। ফতুয়া টা অনেক ডিলে-ঢালা যা শরীফ ভাইয়া কে প্রায় খেয়েই ফেলেছে। বেচারা লুংঙ্গি ধরে ধরে হাঁটছে, সবসময় তো প্যান্ট আর ট্রাউজার পরে থাকে তাই লুঙ্গিতে অব্যস্ত না,যার দরুন এই।

এমনিতে শরীফ ভাইয়া খুবই সুদর্শন পুরুষ অন্যান্য পোশাকে বেশ সুন্দর দেখায়। তাই এই পোশাকে খুবই হাস্যকর লাগছে।

আমার খেয়াল ছিলনা যে শরীফ ভাইয়া শাওয়ার নিয়ে কি পরবে, আমি তো সমস্ত ড্রেস ওয়াশ করে ফেলছি।যার জন্য শরীফ ভাইয়ার এই করুন অবস্থা।

আমাদের হাসি দেখে শরীফ ভাইয়া আমাকে আর সাইফ কে দিলো দৌড়ানি। আমি দৌড়ে রুমে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম শাওয়ার নেওয়ারর জন্য।

আর এদিকে আন্টি এসে বলে বাবাই এরপর থেকে শরীফার সাথে মিথ্যা বলার আগে আজকের দিনটা মনে করে নিস‌। “মা” তা আর বলতে, আমার খুব ভালো করে মনে থাকবে।কি ডেনঞ্জারেস মেয়েরে বাবা।

প্রায় এক ঘন্টা সময় শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। আমার সবসময় এরকম-ই সময় লাগে শাওয়ার নিতে। আজকে বেশ ভালো লাগছে, নতুন ড্রেস পরেছি তাই।এ বাসায় আসার পর আন্টি আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার জন্য কি ড্রেস আনবে। তখন আমি প্রথমে বলতে চাইনি পরে আন্টির জোড়াজোড়ি তে বলি আমার জন্য টিসার্ট আর প্লাজু আনার জন্য। অন্যান্য ড্রেস এর থেকে এগুলো পরেই আমি বেশি কমফোর্টেবল ফিল করি‌। তাই আমার এগুলোই ভালো লাগে। আমাদের বাসায় ও আমি এগুলো পরতাম।পরে আন্টি নিজে গিয়ে আমার জন্য চার সেট ড্রেস এনে দেয়।সব গুলোই খুব সুন্দর।

“আজকে যেগুলো পরেছি, এতো দিন এই গুলো পারিনি”।

টিসার্ট টা সাদা কালারের মধ্যে ছোট ছোট কালো বেগুনি লাভ প্রিন্ট আর প্লাজু ওরনা বেগুনি কালারের। কালার গুলো একটার সাথে আরেকটার খুব সুন্দর মেচিং হয়েছে। আন্টির পছন্দ আছে বলতে হয়।

আমার একটা অভ্যাস আমি কোন নতুন ড্রেস পরলে, আয়নায় নিজেকে বিভিন্ন এঙ্গেলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকি। আজকে ও তাই করছি। চুল গুলো কে বিভিন্ন রকম স্ট্যাইল করে দেখছি। হঠাৎ দরজার দিকে নজর গেল,দেখি দরজার সাথে হেলান দিয়ে শরীফ ভাইয়া আমাকে পর্যবেক্ষন করছেন। আমি তো লজ্জায় পারিনা খাটের নিচে ডুকে যাই।

এক প্রকার জোর করে হাসি হাসি ভাব মুখে ফুটে তুলে বললাম ভাইয়া আপনি কখন এসেছেন? আমি তো দেখতেই পাইনি।
দেখবে কিভাবে বলো? তুমি তো স্ট্যাইল করতে বিজি।আর তুমি আমাকে আবার ভাইয়া বলছো তাই না? আচ্ছা ব্যাপার না ঐ টা তুমি নিজেই ডাকা বন্ধ করে দিবে।
মানে আপনার কথা কিছুই বুঝলাম না।
আমি একটা জিনিস ভেবে দেখেছি,কি বলোতো? আমি ভাবছি….
কি ভাবছেন আপনি?
আমি ভাবছি, আমি….. এটা বলতে বলতে শরীফ ভাইয়া আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, আমি ভাবছি তোমাকে সত্যি সত্যি সাইফের ভাবীমনি করে দিব। এটা বলেই শরীফ ভাইয়া এখান থেকে চলে গেলেন।

আমি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম,কি বললেন ওনি? তারমানে ওনি শুনে ফেলেছেন সাইফের ভাবীমনি বলাটা।এই সাইফের বাচ্চা টাকে এখন পানিতে চুবাইতে ইচ্ছে করছে। আমার মাথা ভনভন করছে,কি বললেন বাঁদর আর্মি টা। এটার নাম তো বাঁদর আর্মি-ই পারফেক্ট আছে। মাঝখান দিয়ে কেন যে ভুলে গেলাম যে এটা বাঁদর আর্মি। কেন যে দূরত্ব বজায় রেখে চললাম না।

আমি কিনা হবো এর ব‌উ?ওমাগো… কখনোই না।যে কিনা কথায় কথায় বলবে আই ক্যিল ইউ, আই সুট ইউ। না না এ জীবন থাকতে আমি কখনোই আর্মি পুলিশ এগুলো বিয়ে করবো না।

হাজারো জল্পনা কল্পনা করতে লাগলাম।আমি সব কিছু নিয়ে অনেক বেশি ভাবি, একটা বিষয় আমার মাথায় আসলে সেটা নিয়েই সারাদিন জল্পনা কল্পনা করতে থাকি। এই যে এখন বাঁদর আর্মি টা কি পরিমান আমার মস্তিষ্ক দখল করে নিয়েছে,তা নিজেও জানি না।

আন্টি খাবার খেতে ডাকছে। এখন গেলেই বাঁদর টার মুখোমুখি হতে হবে কেমন লাগে। না গিয়ে তো উপায় নেই তাই গেলাম। ঠিক করেছি অল্প খেয়েই চলে আসবো। কিন্তু তা আর হলো না, সাইফ ফাজিল টা কত্ত গুলো খাবার আমার প্লেটে দিয়ে দিল।
সাইফ এগুলো কি করলি?ভাবীমনি তুমি তো কিছুই নিচ্ছেলে না, তাই তো দিলাম। তাই বলে এতো গুলো?

সাথে আন্টিও বললেন শরীফা এতো কম খেলে চলে? তোকে দেখে কেউ বলবে? দুদিন পর তুই ভার্সিটি তে পড়বি। আন্টি সাথে তাল মিলিয়ে শরীফ ভাইয়া ও বলে মা ঠিক বলেছ। আমি কি আর এমনি এমনি মানুষ কে পিচ্চি বলি।

আমার যে কি পরিমান রাগ হচ্ছে এই শরীফ ভাইয়ার উপর।রাগি লুক নিয়ে তাকাই ওনার দিকে আর ওনি কিনা মুসকি মুসকি হাসছেন সাথে সাইফ টাও যোগ হয়েছে। বুঝলাম দু’জনে যুক্তি করে আমাকে এভাবে এতো গুলো খাবার দিয়ে বসিয়ে রেখেছে।এই সাইফের বাচ্চা টাকে একা আমি পাই তারপর বুঝাবো মজা। বারবার বুঝিয়ে দেওয়ার পরও ঐ বাঁদর আর্মির সামনে আমাকে ভাবীমনি ডেকেছে।ওরে পাই একবার….

“এক পর্যায়ে শরীফ ভাইয়া বলে বসে মা আমি বিয়ে করবো”।
এদিকে শরীফ ভাইয়ার কথা শুনে বিষম উঠে যায় আমার,কাসতে কাসতে আমার অবস্থা খারাপ, আন্টি খাবার ছেড়ে উঠে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমি ভাবছি কি বজ্জাত লোক একটু লজ্জা ও নেই কিভাবে অকপটে বলে দিল বিয়ের কথা…..

#চলবে…..
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here