#প্রণয়ের_পরিণতি
#সাদিয়া_আফরিন_নিশি
#পর্ব_৬
রাতে রিশি গিটার হাতে বেলকনিতে বসে আছে। আজকে কেন জানি তার মনটা ভালো লাগছে না
তৃপ্তির কান্নামাখা মুখটা বারবার তার চোখের সামনে ভাসছে। কিছুতেই কিছু ভালো লাগছে না তার।এজন্য গিটার নিয়ে গান করতে বসেছে। রিশির যখন মন খারাপ থাকে সে গান করে তাহলে মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু আজকে কিছুতেই মন ভালো হচ্ছে না।
ওই অজানা মেয়ের জন্য তার এমন কেন লাগছে সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।মেয়েটা অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। অন্যসব মেয়েরা রিশির জন্য পাগল তার ওপর তাদের ড্রেসও বাজে।কিন্তু তৃপ্তি সবদিক দিয়ে ভিন্ন। তাই রিশির তাকে ভালোই লেগেছে।
রিশি প্লে বয় হলেও কখনো মেয়েদের দিকে খারাপ নজর দেয় না। টাইমপাস করার জন্য মেয়েদের সাথে ঘুরে এমনিতেও তার মেয়েদের হিরো হয়ে চলতে ভালো লাগে। কিন্তু আজ তৃপ্তি রিশিকে চরিত্রহীন বলায় সে তৃপ্তিকে শাস্তি দিয়েছে।কেনই বা দিবে না সে তো চরিত্রহীন নয় একদিন দেখেই কী সব বোঝা যায় একটা মানুষের। তৃপ্তিকে প্রথম দিন সে হট বলেছিল কারণ সে দেখতে চেয়েছিল তৃপ্তি অন্যসব মেয়েদের মতো কিনা। তৃপ্তি রিয়েক্ট করায় সে বুঝে যায় তৃপ্তি অন্যরকম মেয়ে।
এসব চিন্তা করতে করতে রিশি গিটার রেখে ঘরে গিয়ে ঘুমতে চেষ্টা করলো।
অন্যদিকে তৃপ্তিও সারারাত ঘুমতে পারলো না আজ তার সাথে হওয়া অপমানের জন্য। তার মনে রিশির জন্য আরও ঘৃণার জন্ম নিল।সে মনে করে তার এই অপমানের জন্য রিশিই দায়ী।
_____________
কাব্য:মিস তনিমা, আমার জন্য এক মগ কফি করে নিয়ে আসুন।
তনিমা :😳😳কফি মানে। স্যার আমি আপনার পিএ হতে পারি কিন্তু এসব কাজ আমার কাজের মধ্যে পরে না।
কাব্য :সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনাকে কফি করে আনতেই হবে। নয়তো যেটা হবে এখন আপনার জন্য সেটা মোটেও ভালো হবে না।
তনিমা :ব্ল্যাক মেইল করা বন্ধ করুন।
কাব্য:তাহলে যা বলছি তাই করুন।
তনিমা রাগে ফুৃঁসতে ফুঁসতে চলে যায় কফি করতে। কফিতে ইচ্ছে মতো লবণ মিশিয়ে নিয়ে আসে।আর মনে মনে একটা বিশ্ব জয় করা হাসি দেয়।
তনিমা :স্যার এই যে আপনার কফি
কাব্য :হুমম টেবিলে রাখুন।
তনিমা :জ্বী, স্যার।স্যার আমি কী এখন আমার কেবিনে যেতে পারি।না মানে ফাইলগুলো তো রেডি করতে হবে তাই আরকি।
কাব্য:হ্যাঁ যেতে পারেন।
তনিমা নাচতে নাচতে কেবিনে চলে যায়। কেবিনে গিয়ে সে মনের আনন্দে কাজ করতে থাকে।
একটু পরেই কাব্য বেল বাজিয়ে তনিমাকে ডাকে।
তনিমা মুখটা শুকনো করে কাব্যের কেবিনে যায়।
কাব্য : হোয়াট ইজ দিস? এটা কী কফি হয়েছে। এটা এতো লবণ কেন।
তনিমা :আসলে স্যার সল্টকে সুগার ভেবে দিয়ে ফেলেছি হয় তো।
কাব্য :শাট আপ, আপনি কী বাচ্চা নাকি যে সল্ট আর সুগারের পার্থক্য বুঝেন না। লিসেন মিস তনিমা আমি জানি আপনি এটা ইচ্ছে করে করছেন এন্ড এর শাস্তিও আপনাকে পেতে হবে।
তনিমা :শাস্তি😳😳স্যার আমি ইচ্ছে করে করিনি।
কাব্য :আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই করছেন। এবার শাস্তিটাও নিন।
এই বলে কাব্য তনিমাকে দশটা ফাইল ধরিয়ে দেয়।আর বলে এগুলো সব রেডি করে তারপর অফিস থেকে যেতে।
তনিমা তো পারলে কেঁদেই দেয়। দশটা ফাইল একসাথে সে কী করে রেডি করবে।
_____________
রিশান :তনয়া আজকের মিটিং সিডিউলটা তুমিই করে ফেলো ওহ সরি আপনাকে তুমি বলে ফেলেছি প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
তনয়া:ইটস ওকে স্যার আমি আপনার থেকে ছোটোই হবো আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন। তাহলেই আমি বেশি খুশি হবো।
রিশান :ওকে তাই হবে। তুমি পিএ হওয়ার পর থেকে তো আমার কাজ অনেকটাই কমে গেছে। সবকিছু তো তুমিই সামলাও।আই ইমপ্রেসড ইওর ওয়ার্ক
তনয়া:আপনি যে আমার কাজে খুশি হয়েছেন এটাই আমার জন্য অনেক। আমি সবসময় চেষ্টা করি বেস্ট টা দিতে।
রিশান :কালকে ফার্স্ট মিটিং কাদের সাথে?
তনয়া:আহমেদ গ্রুপ আর হাসান গ্রুপের সাথে।
রিশান :ওকে
________
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রিশি কলেজে চলে এলো। এর আগে সে কখনো এতো তাড়াতাড়ি কলেজে যায়নি। আজকে মন মানছে না কিছুতেই। মনে হচ্ছে তৃপ্তিকে সরি বলা উচিত তাই সকাল সকাল এসে পরেছে।
আসার সাথে সাথেই নিত্যদিনের মতো সবমেয়েরা তাকে মৌমাছির মতো ঘিরে ধরেছে।কিন্তু তার চোখ আজকে কেবল একজনকেই খুজতে।
তৃপ্তির আজ কলেজ যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিল না।তবুও যেতে হলো কারণ নিউ স্টুডেন্টদের জন্য এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। নীতি, নীল, ইতু
আর তৃপ্তি একসাথে কলেজে ঢুকলো।
তৃপ্তি তো লজ্জায় পা ই দিতে পারছে না কলেজে তবুও মাথা নিচু করে ঢুকছিল
কোথা থেকে যেন রিশি ঝড়ের বেগে উড়ে এসে তার সামনে দাড়ালো।
তৃপ্তি সামনের মানুষটিকে দেখে তো পুরো রেগে গেল।
তৃপ্তি :আপনি। আবার কেন এসেছেন আমার সামনে। আরও কিছু করানোর বাকি আছে আমাকে দিয়ে। এতো অপমান করানোর পরও শান্তি হয়নি আপনার
রিশি:তোতাপাখি, I’am sorry
তৃপ্তি:এটা আবার কোন নতুন নাটক আপনার।
জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছেন। নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে।
রিশি:প্লিজ এভাবে বলনা। আমি সত্যিই লজ্জিত। আমার তোমার সাথে এমনটা করা উচিত হয়নি।আসলে রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি।প্লিজ ক্ষমা করে দেও।
তৃপ্তি :চুপ করুন তো।আপনাদের মতো বড় লোকদের আমার জানা আছে। আর আমার মতো মিডেল ক্লাস মেয়ের রাগে আপনার কী এসে যায় আপনি গিয়ে আপনার বড় লোক গার্ল ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটান।
সবাই চল ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
সবাই চলে গেল। রিশির খুব খারাপ লাগল।সে সত্যিই খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছে। তৃপ্তির রাগ সে ভাঙাবেই ভাঙাবে তা যে করেই হোক।
নীশা এসে এসব শুনে রিশিকে অনেক বকতে লাগল। সে কন তৃপ্তির কাছে ক্ষমা চাইল এজন্য। কিন্তু রিশির সেদিকে কোনো হেলদোল নেই সে চিন্তা করে চলেছে। কিভাবে তৃপ্তির রাগ ভাঙাবে।
ক্লাস শেষে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রহনা দিলো।রিশি অনেক বার তৃপ্তির সাথে কথা বলতে চাইল কিন্তু তৃপ্তি দাড়ায় নি। তাড়াতাড়ি রিকশা নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
সে এই ছেলের সাথে আর কিছুতেই কথা বলবে না।
_________
তনিমার কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।সে ফাইলগুলো ম্যানেজারকে জমা দিয়ে বাড়ি চলে গেল। কাব্য অনেক আগেই চলে গিয়েছে।
বাড়ি গিয়ে তনিমা শাওয়ার নিয়ে খাবার খেয়ে সোজা ঘুমতে চলে গেল। বাড়ির সবাইকে সে এসেই বলেছে যে কেন দেড়ি হলো।
_________
পরদিন সকালে তনয়া অফিসে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে রিশানের সাথে চলে গেল হোটেল সিটি ইন -এতে। সেখানে আহমেদ গ্রুপ আর হাসান গ্রুপের এমডিও থাকবে। তিন কোম্পানি মিলে একটা ডিল করবে।
সবাই উপস্থিত হওয়ার পর হাসান কোম্পানি উপস্থিত হলো।হাসান কোম্পানির এমডিকে দেখে রিশান এন্ড কাব্য হ্যান্ডশেক করে মিটিংয়ে বসলো।
এদিকে হাসান কোম্পানির এমডিকে দেখে তনয়া তো পুরো পাথর হয়ে গেছে। তার চোখ বা চাইতেও ভিজে উঠছে।কেন এসেছে এই লোকটা এখানে। এতো বছর পর কেন আবার দেখা হলো তাদের। এই লোকটাকে তনয়া সব থেকে বেশি ঘৃণা করে।
কিন্তু তনিমার কোনো ভাবান্তর হলো না। সে তো চেনেই না এই লোকটাকে। সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছ।হঠাৎ বোনের দিকে চোখ পরতে সে আতকে উঠল।কী হয়েছে তার বোনের চোখ দুটো কেন ছলছল করছে।এই তো এখুনি ঠিক ছিল হঠাৎ কী হলো
চলবে,