#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
১৭
মেয়েটার কিছু হয়নি তবে আহফিনের কপাল অনেকটা ফেটে গেছে। হাতেও বেশ খানিক টা আঘাত পেয়েছে সে। বাচ্চা মেয়েটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কান্না করছে। তখনি দৌড়ে তার মা এলো। কোলে তুলে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। আহফিন কে অনেক ডাকার পর চোখ খুলে তাকাল। বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মন টা কোমল হয়ে উঠল। মুখে এক বিন্দু হাসি ফুটে উঠল। ভদ্র মহিলা বলল,
“আপনি ঠিক আছেন ভাইয়া?”
“জ্বি। আপনার বেবির কিছু হয়নি তো?”
“না ওর কিছু হয়নি। হঠাৎ দৌড় দেওয়া তে এমন টা হয়ে গেছে। আপনার তো মাথা থেকে রক্ত ঝরছে চলুন আপনাকে হসপিটাল নিয়ে যাই।”
“না না তার দরকার নেই।”
“দরকার নেই বললেই হবে? দেখুন তো কতটা কেটে গেছে।”
আহফিন কপালে হাত দিয়ে বুঝল বেশ খানিক রক্ত পড়ছে। হাতে রক্ত লেগে চিপচিপ হয়ে আছে।
“কি হলো? চলুন আপনাকে হসপিটাল নিয়ে যাই।”
“নো থ্যাংকস। কিন্তু আপনার বেবি কে সাবধানে রাখবেন। এমন বাচ্চা নিয়ে একা বের হওয়া ঠিক নয় সাথে তার বাবা কে নিয়ে বের হবেন। নয়তো আরো অনেক কিছুই হতে পারে।”
আহফিন খেয়াল করল ভদ্র মহিলার মুখ কালো হয়ে গেছে।
“এনি থিংক রং?”
“আই এম সিঙ্গেল মাদার।”
আহফিন থমকে গেল। কিছু বলার মতো কথা খুঁজে পাচ্ছে না সে। মানুষ কতটা নিকৃষ্টও হতে পারে। সামান্য সুখের জন্যে একটা মেয়ের সারাটাজীবন নষ্ট করে দিতে পারে কি করে। অপমান দুঃখে কষ্টে জর্জরিত করে দেয়। আহফিন যেন মেয়েটার জীবনের সকল কষ্ট মুখে দেখতে পাচ্ছিল। আর কথা না বাড়িয়ে সে তখনি গাড়ি নিয়ে ছুটল। ভদ্র মহিলা বোকার মতো তাকিয়ে রইল।
তূবা চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি তবে দুপুরবেলা পর্যন্ত চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। তুসি এসে অনেক বার ডেকে গেছে তূবা তাকে বড় গলায় না করে দিয়েছে আর আসতে। অন্ধকার রুমে চোখ বুজে আছে। মাথাটা এত ব্যথা করছে বলার বাহিরে। মাইগ্রেন টা আল্লাহ কেন তাকে দিল সে কিছুই বুঝতে পারে না। তার বিপদের তো আর শেষ নেই। ঘাড় থেকে ব্যথাটা মাথায় ধরছে। মাথার মস্তিষ্কের সব রগ যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। ভেতর থেকে গুলাচ্ছে। তার উপর চিন্তা মাথার উপর শান্তিতে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আর সহ্য হচ্ছে না তূবার। হঠাৎ করে উঠে গেল। বিছানার পাশ থেকে ফোন নিয়ে আহফিন কে কল দিল কিন্তু বন্ধ। তূবা ফোন টা রেখে চুল গুলি ঠিক করল। মাথা উপরে তুলে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
১ টা ঘন্টা শাওয়ারের নিচে বসে ছিল তূবা। শূন্যে তাকিয়ে আকাশপাতাল ভাবতে লাগল সে। পানি উপর থেকে পড়ে চোখ ঝাপসা করে দিচ্ছে বারবার তবুও চোখ বন্ধ আর করছে না। লাল টকটকে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। শরীরের লোম যখন কাটা দিয়ে উঠছে তখন তূবা উঠে দাঁড়াল।
বাথরুম থেকে এসে তূবা আবার আহফিন কে কল দিল তখন ফোন টা বন্ধ পেয়ে তূবা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চুল ঝাড়তে লাগল। তুসি তখন তাকে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকল।
“আপা তুই কি এখনো খাবি না?”
“না তুসি তোর ভাইয়ার এখানে যেতে হবে। ওখানে খেয়ে নিব চিন্তা করিস না।”
তুসি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল “আপা মাত্র ৩ টা ৪২ বাজে সকাল থেকে কিছু খাস নি অল্প খেয়ে যা?”
তূবার আর তুসি কে এভাবে মানা করতে ভালো লাগছিল না বলে সে তুসির কাছে গিয়ে বসল। গালে হাত দিয়ে কোমল স্বরে বলল “আমার সোনা টা এত চিন্তা করিস আমায় নিয়ে? আমার পাগলি টা এত চিন্তা করতে হবে না তোকে।”
“আপা।”
“বল।”
“আপা আজ রাতে বাসায় চলে আসবি?”
“….
“তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই এই কয়টা রাত।”
তূবার বুকটা কেঁপে উঠল তুসির কথা শুনে। তুসি যে ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে তূবার বুঝতে আর দেরি হলো না। সে তুসি কে নিজের বুকে শক্ত করে চেঁপে ধরল। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগল
“তুসি লক্ষ্মী টা আমার তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? কিছু হবে না। কিছু হবে না তোর। লক্ষ্মী সোনা আমার দেখবি সব ভালো মতো হয়ে গেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তূবার মন টা অশান্ত হয়ে আছে। ভেতরের স্বস্তি টা পাচ্ছে না সে। রিকশায় বসে থেকে বন্ধ ফোনেও হাজারটা কল দিয়েছে আহফিন কে। একটা চাঁপা কষ্ট ভেতরটা কে দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে।
তূবা বাড়ি গিয়ে কলিংবেল চেঁপে দাঁড়িয়ে আছে। আহফিন তখনো দরজা না খুলে চুপচাপ নীরবতা পালন করছে। তূবা এখন দরজা ধাক্কাতে শুরু করেছে। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা খোলার নাম নেই। তূবা এবার গলা ছেড়ে চিৎকার করা শুরু করেছে।
“আহফিন, আহফিন দরজা খুলুন। আহফিন প্লিজ দরজা খুলুন। দরজা খুলুন আহফিন।”
এভাবে তূবা ডাকছেই। যখন তূবার কান্নার আওয়াজ আর নিতে পারছিল না আহফিন তখন সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। দরজা খুলে দিয়ে আবার ফিরে গেল সোফার কাছে। পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রইল খাম্বার মতো। তূবা দৌড়ে গেল আহফিনের কাছে। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে আৎকে উঠল তূবা। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে। কিন্তু আহফিন স্টিল বডি নিয়ে দাঁড়িয়েই রইল। তূবা কান্না করতে করতে বলল “কি হয়েছে কি আপনার? আমায় নিয়ে কি সমস্যা আপনার?”
আহফিন এবার সিংহের মতো গর্জে উঠল “সমস্যা আমার না সমস্যা তোমার। আর তোমার আমার মাঝে সমস্যা হলো রনি। রনির প্রতি তোমার এত মায়া উপচে পড়ছে কেন বুঝতে পারছি না। কি দেখলে রনির মাঝে? বলো তূবা বলো।”
আহফিনের এমন ব্যবহারে তূবা একদম ভয় পেয়ে গেল। দুই পা পিছনে নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আহফিনের দিকে। এবার আহফিন সিংহের মতো থাবা বসাল তূবার দুই বাহুতে। নখ খামছে জিজ্ঞেস করতে লাগল “বলছো না কেন? রনির প্রতি এত মায়া হলো কি করে তোমার? তুমি জানো না রনি তোমার সাথে কি কি করতে পারে? তবুও কেন তার সাথে এত কথা? কিসের কথা?”
“….
“কি হলো বলো।”
আহফিনের চিৎকারে কেঁপে উঠেছে তূবা। কাঁপা গলায় বলল
“রনি আগের মতো নেই। ও পরিবর্তন হয়ে গেছে। ও আর আমাদের ক্ষ ক্ষতি করবে না।”
এই কথা শুনে আহফিন তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল অনেকটা দূরে। চোখ মুখে তার প্রচন্ড বিরক্তির ছাপ। হঠাৎ সে মিনি টেবিলে প্রচন্ড বেগে লাথি দিয়ে আবার উপরে চলে গেল। তূবা নির্বোধের মতো দাঁড়িয়ে শুধু দেখল। শরীর টা অসাড় লাগছে। মাথায় এখন কিছুই আসছে না। রক্তহীন দৃষ্টিহীন চোখ নিয়ে তূবা ধপ করে সোফার ধারে ফ্লোরে বসে পড়ল। তাকে একদম নির্জীব দেখাচ্ছে।
চলবে♥