ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ১১

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-১১

তিনঘন্টা পার হয়।কালো ক্যাফ পড়া সেই লোকটি আবার আসে।

“কি ডিসিশন নিয়েছিস?”
“আগেও যেই ডিসিশন ছিল এখনো তাই!”
“তারমানে তুই রাজি না!প্রতিটা প্রাণীরই তার জীবনের প্রতি অনেক মায়া থাকে।অনেক মূল্য আছে।তাই তোকে আমি তিন ঘন্টা সময় দিয়েছি পজেটিভ কিছু ভাবতে।কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তুই তোর নিজের জীবনের প্রতি মায়াই করিস নি। তোর যেহেতু জীবনের প্রতি মায়া নেই তাহলে তোকে বাঁচিয়ে লাভ কী বল!”
কথাগুলো বলতে বলতে লোকটি পৃথীর একদম কাছে চলে আসে।পৃথীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে এবার কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“সত্যিই তোর মরার ইচ্ছে আছে ?”
“মরবো কিনা বাঁচবো তা নিয়ে আমি ভাবি না।তবে ওই কাজটি আমি কিছুতেই করবো না!”

কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই লোকটি পৃথীর গালে খুব জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়!ওমনি পৃথী ছিটকে নিচে পড়ে যেয়ে দেয়ালের কোণার সাথে আঘাত পায়।সাথে সাথে মাথা কেঁটে রক্ত বেরিয়ে আসে।কিন্তু নির্দয় লোকটির তাতে মায়া হয় নি।সে আরো হিংস্র হয়ে পৃথীর দিকে তেড়ে এসে পৃথীর চুলের মুঠি খুব শক্ত করে ধরে পৃথীকে নিচের থেকে উঠিয়ে তারপর আবার বলে,
“এখনো সময় আছে রাজি হয়ে যা!”
“রাজি আমি মরে গেলেও হব না!”
“হবি না,না?”
“না না না!”
আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।তারপর আবার আরেকটা দেয়।তারপর আবারও আরেকটা দেয়।এভাবে চলতে চলতে পৃথী টুপ করে নিচে পড়ে যায়।আর রক্তে ভেসে যেতে থাকে তার সারা শরীর।রক্তগুলো মাথা থেকেই বের হয়।

১৭.
দুই হাত ভাঁজ করে সরু হয়ে হাসপাতালের করিডোরের মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে আছে অয়ন!রহিমা আর পিয়ারা বেগম পাবলিক সিটে বসে আছে।সবারই চোখমুখে বিষন্নতা।একঘন্টা হলো পৃথীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।খুব তীব্রভাবেই পৃথীকে মেরেছে জানোয়ারটা ।অয়ন যদি সেখানে আর একটু দেরী করে পৌঁছাতো তাহলে পৃথীকে আর জ্যান্ত পেত না।তবে আফসোস অয়ন ওই জানোয়ারটাকে ধরতে পারে নি।রুমে অয়নের ছায়া পড়ামাত্রই জানোয়ারটা অয়নকে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।জানোয়ারটা পালিয়ে গেলেও কি হবে জানোয়ারটার পালিত কুকুরগুলোকে মাটির সাথে পিষিয়ে তারপর অয়ন পৃথীকে নিয়ে ফিরেছে!এমন সময় ডাঃ ফাহাদ পৃথীর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।অয়ন অচেতনে সেদিকে তাঁকায়।ফাহাদ অয়নের কাছে এসে বলে,

“দোস,মাথায় প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।সে কারণে সেন্সলেস হয়ে গেছে। এখন রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে তাড়াতাড়ি।”
“কী পজিটিভ রক্ত লাগবে?”
“বি+।”
“আমার বি+।আমি দিব।”
” ক’দিন আগেই ত রক্ত ডোনেট করেছিলি।এখন আবার রক্ত ডোনেট করতে গেলে তোর শরীরে ইনফেকশন হবে।”
“কিছু হবে না। তুই তাড়াতাড়ি ব্লাড নেওয়ার ব্যবস্থা কর।দেরী হয়ে যাচ্ছে!”
“কিন্তু? ”
“কোনো কিন্তু না।চল!”

অয়ন ফাহাদের সাথে পৃথীর কেবিনে ঢোকে।পৃথী বিছানায় অসাড় হয়ে শুয়ে আছে।চোখজোড়া বন্ধ।হাত-পা,মুখে, গালে,ঠোঁটে,কপালে,মাথায় কেমন ক্ষত ক্ষত দাগ।সেই দাগগুলো আবার গাঢ় লাল হয়ে স্পষ্ট ফুঁটে আছে।পৃথীকে এমন বিভৎস অবস্থায় দেখতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না।একদমই না।সে তাড়াতাড়ি পৃথীর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফাহাদকে বলে,
“ফাহাদ তাড়াতাড়ি ব্লাড নে।আমার ফিরতে হবে।”
“এখানে সোঁজা হয়ে শ।একদম নড়াচড়া করবি না।”

অয়ন পৃথীর পাশের বিছানায় সোঁজা হয়ে শুয়ে পড়ে।তারপর ফাহাদ দুজনের ব্লাড আদান-প্রদানের প্রসেসটি জয়েন্ট করে নেয়।অয়নের রক্ত ছুটে চলে পৃথীর সারা শরীরের প্রতিটি রগ রগে,প্রতিটি শিরায়-উপশিরায়।তারসাথে অনুভূতি, ভালোবাসা,আবেগ, মায়া মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়!রক্ত দেওয়ার পরপরই অয়নের অফিস থেকে কল আসে।স্ক্রিনে তাকিয়ে তার পিএ রিফাত।
“হু রিফাত,বলো?”
“ভাই একটু তাড়াতাড়ি অফিসে আসতে পারবেন?”
“কিছু হয়েছে ?”
“ভাই একজন লোক এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। খুবই নাকি আর্জেন্ট।”
“ওকে।আসতেছি।উনাকে বলো অপেক্ষা করতে।”

কল রেখেই ফাহাদের দিকে ফিরে,
“ফাহাদ আমি একটু অফিসে যাচ্ছি। রোগীর জ্ঞান ফিরলে আমাকে কল করে জানাইস।”
“ওকে,দোস।”
অয়ন ফাহাদকে পাশ কেঁটে দরজা বরাবর যেতেই হঠাৎ থেমে যায়। তারপর কি একটা ভেবে পেছনে ঘুরে পৃথীর দিকে তাকায়।পৃথীর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ফস একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে। তারপর আবার সামনের দিকে ঘুরে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

১৮.
প্রায় পাঁচঘন্টা পর পৃথীর জ্ঞান ফেরে।রহিমা মেয়েকে জ্ঞান ফিরতে দেখে একদম কেঁদেই ফেলেন।তা দেখে পৃথীর রাগ উঠে যায়।সে জানে তার মার এ কান্নাটা এখন শুরু হলে আর শেষ হবে না।এটাসেটা বলে শুধু নাক টেনে টেনে কাঁদতেই থাকবেন।এটা উনার একটা অভ্যেস।উনি যেকোনো সময়উ কেঁদে ফেলেন।খারাপ সময়েও কাঁদেন আবার ভালো সময়েও কাঁদেন।তবে ভালো সময়ে একটু বেশিই কাঁদেন।উনার মতে-“যে মানুষ সুখের সময়ে বেশি কাঁদে সে মানুষকে মহান আল্লাহ সবসময় সুখে রাখেন”।অথচ তার মা এই ভেবে কত কেঁদেছেন কোনো লাভ হয় নি।উল্টো বিপদ আর বিপদ।

” এভাবে ছিঁচকাঁদুনীর মতো কাঁদবে না মা ।আমার অসহ্য লাগে।”
“লাগুক !আমি যে কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছি তা জানিস তুই ?”
“জানি।”
“তো কেন বলছিস কাঁদবো না!”
“এখন ত আমি সুস্থ্য মা।আর সুস্থ্য না হলে কাঁদতে তখন কিছু বলতাম না।”
“এটা আমি আনন্দে কাঁদি রে পৃথী খুব আনন্দে।!তুই সুস্থ হয়েছিস কত খুশি আমি বলে বুঝাতে পারবো না।”

ডাক্তার ফাহাদ তখন পাশে কেবিনেই ছিলেন।তিনি কেবিন থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফাইলে কিছু ওষুধের নাম লিখতেছেন।তিনি এতক্ষণে মা-মেয়ের সব কান্ডই দেখলেন। এক পশলা কথা আর না তুলে পারেননি,

“একটা প্রবাদ আছে-অতি শোকে পাথর,অতি সুখে কাতর!যদি পড়ালেখা করে থাকেন তাহলে মিস পৃথী আপনি নিশ্চয়ই এই প্রবাদটি দেখেছেন?”
“নাহ।আমি কখনো পড়ালেখা করি নি।তাই প্রবাদটি কখনো দেখিও নি।”
“মিথ্যে বলছিস কেন?তোকে না আমি পড়াচ্ছি?ডাক্তার আমার মেয়ে এখন ভার্সিটি তে পড়তেছে।”

ডাঃ ফাহাদ এ’কথার বিনিময়ে একটা মৃদু হাসি দেন।আর কিছু বলেননি।তারপর ফাইল থেকে একটা স্লিপ কেঁটে তা রহিমার দিকে এগিয়ে বলেন,
“উনার যা যা ওষুধ লাগবে সব আমি লিখে দিয়েছি।সবগুলো ওষুধ কিনে নিবেন।”
“আচ্ছা।ধন্যবাদ ডাক্তার।

চলবে…
(আইডিতে প্রবলেম হয়েছিল।দীর্ঘ সাতঘন্টা আইডি ভালোমতো লগইন করতে পারলাম।আমিতো ভাবলাম আইডি আর ব্যাকই হবে না।ধন্যবাদ সুহানকে আইডিটা ঠিক করে দিছে।আর আপনাদের বলতেছি আমি আপুর ফোন থেকে গল্প লিখতেছি।আমি বর্তমানে ফোন ছাড়া।লকডাউনে ফোনটাও ঠিক করতে পারছি বা।দেরী কেন হচ্ছে আশা করি বুঝবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here