#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ২৪ (A Special moment 💙)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
–” তু্ই যদি আরেকটা কথা বলিস কাজল, তাহলে তোর মুখ বন্ধ করতে আমাকে রোমান্টিক টর্চার করতে হবে। রুদ্রিকের রোমান্টিক টর্চার নিশ্চই তুই আপতত চাচ্ছিস না ? ” কথাটি বলে-ই’ উনি বাঁকাদাঁতের হাঁসি দিলেন। আমি বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাঁকালাম। উনি চাইছেন টা কী?কিসব কথা বলছেন।বাবাগো মাথা ঘুড়বে মনে হয়। আমি বাইরের দিকে তাঁকালাম। রুদ্রিক ড্রাইভ করতে করতে নিজের হাত কাজলের হাতে রাখলো। কাজল অবাক পানে তার দিকে তাঁকিয়ে রইলো। রুদ্রিক সামনের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
—-“হয়তো তোকে এইভাবে নিয়ে আসায় তুই বিরক্ত হয়েছিস। আজকে তোর তনয়ের সাথে মিট করার কথা। বাট মিট করার আগে তোকে কিছু জানানো প্রয়োজন। আমাকে কিছু মুহুর্ত দিবি কাজল? শুধুমাত্র কিছু মুহূর্ত তোর কাছে চাই। ”
উনার কন্ঠে ছিলো কিছু পাওয়ার আকুলতা।
আমি উনার হাত নিজের থেকে সরলাম নাহ বরং মিষ্টি হেঁসে বাইরে তাঁকালাম।
রুদ্রিক তার উত্তর পেয়ে গেছে। সেও হাঁসলো।
রুদ্রিক গাড়িটি একটি ছোট্ট কুড়িঘরের সামনে রাখলো। চারদিকে কেমন যেনো নির্জন। রুদ্রিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে কাজলের দিকে হাত বাড়ালো।
কাজল ও রুদ্রিকের হাতে হাত রেখে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। জায়গাটা বেশ গাছ-পালা তে পরিপূর্ন। আমি এগিয়ে গিয়ে, কুটিঘরের চারপাশ টা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলাম। চারপাশে এত্তো গাছপালা থাকা-ই’ সূর্যের রশ্নি কুড়িঘরে পড়ছে নাহ।
বাইরে থেকে কতটা সুন্দর। বিকালের সময়ে এখন। গাছের ফাঁক থেকে গোধূলীর এক টুকরো রং কুড়িঘরের চালে এসে পড়েছে।
জায়গাটা বেশ জনমানবহীন হওয়ায় পাখিরা নিজেদের মতো গাছের ডালে বসে গান গেঁয়ে যাচ্ছে।
ছোট্ট ছোট্ট ফুলগুলো যেনো ঝড়ে পড়ছে কুড়েঘরের ছোট্ট চাল থেকে। ছোট্ট ছোট্ট বেলীফুলো দিয়ে ছোট্ট একটি রাস্তা হয়ে গেছে। পাশে বড় একটি বট গাছে। চারদিকের সতেজ বাতাসে আমার মনটা যেনো জুড়িয়ে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে এত্তো সুন্দর জায়গা হয়?
আমার ভাবনার মাঝে-ই’ উনি বলে উঠলেন,
–“জায়গাটা কেমন লাগলো?”
আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“এইরকম জায়গা ঢাকা শহরে একেবারে না-ই’ বললে-ই’ চলে। এই জায়গার সন্ধান আপনি পেলেন কী করে? ”
—-“সে-ই উত্তর নাহয় পরে দিচ্ছি। ”
_____________
তনয় অনেক্ষন ধরে কাজলের জন্যে অপেক্ষা করছে,কিন্তু কাজলের আসার কোনো নাম নেই। এখন ও কেনো আসছে নাহ? তনয় ফোন বের করে
কাজলের নাম্বারে ফোন দিলো কিন্তু কাজল ফোন ধরছে নাহ। খানিক্টা অবাক হলো তনয়।
অন্যদিকে,
উনি আমার দিকে তাঁকিয়ে মুগ্ধগলায় বলল,
—-“কাজল মনে হচ্ছে প্রকৃতিতে সৌন্দর্য এবং ‘শুভ্ররাঙাপরীর ‘ সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। আমার চোখ যেনো ধাধিয়ে গেলো। ”
আমার কেমন যেনো লজ্জা পাচ্ছে উনার কথা শুনে। আমি অন্যদিকে ঘুড়ে তাঁকালাম। রুদ্রিক হেঁসে
কুড়িঘরের ভিতরে চলে গেলো।
আমি পাশে তাঁকিয়ে দেখি উনি নেই। কোথায় গেলো? উনি আমার কাঁধে হাত রাখতে-ই’ আমি পিছনে ঘুড়ে গেলাম। মূহুর্তে-ই যেনো আরেকদফা চমকে উঠলাম। উনার গাঁয়েও শুভ্র রংয়ের পাঞ্জাবি। ঠোটে ঝুলছে সেই মন-মাতানো বাঁকা দাঁতের হাঁসি।
আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“শুভ্র রং সুন্দর। খুব সুন্দর আপনার সাথে যেনো আরো ভালোভাবায় মানায় এই রংটি। ”
উনি ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
—“তাই? ”
—-“হুম তাই। ”
উনি এইবার খানিক্টা দুষ্টুমি করে বললেন,
—“ফাইনালি তাহলে তুই ও আমার প্রেমে পড়ে গেলি বাহ। ”
আমি আমতা আমতা করে কিছু বলবো তার আগে-ই’ উনি বলে উঠলেন,
—–“আচ্ছা কাজল তুই তো আজকে তনয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলি তাহলে আমার পছন্দের এই শুভ্র রংয়ের শাড়িটা পড়েছিস কেন? ”
আমি আনমনে বলে উঠলাম,
—-” আমার পছন্দ আমার কাছে সব। কেননা আমি আপনার কাছে স্পেশাল। ”
—–“কতটুকু স্পেশাল? ”
উনার প্রশ্নে আমি মুঁচকি হেঁসে বললাম,
—–” আপনার কাছে আমি ঠিক যতটুকু স্পেশাল। ঠিক ততটা-ই’ আপনি আমার কাছে স্পেশাল। ”
উনি আমার প্রশ্নে দমে গিয়ে বললেন,
—“কাজল শুভ্র রংটা আমার খুব পছন্দের।
আমার মনে করি শুভ্র রং ভালোবাসার সৌন্দর্যকে বহন করে। কেননা
শুভ্র রংয়ে কোনো প্রকার ভেজালের প্রলেপ নেই। আছে শুধু একরাশ মুগ্ধতা। ”
আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে কথাগুলো শুনলাম
উনি আবারোও বলে উঠলেন,
—-“পায়ের জুতোটা খুলে, খালি পায়ে মাটিতে হেঁটে সামনে চল। ধারুন একটা অভিজ্ঞতা হবে তোর। সকাল বেলা বৃষ্টি হওয়ার জন্যে মাটিগুলো নরম হয়ে গেছে। ”
—–“হুম মাটির খুব সুন্দর একটা ঘ্রান বের হয়েছে। ”
কথাটি বলে আমি নিজের পায়ের জুতো খুলে দিলাম। উনি নিজের জুতোজোড় খুলে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
_________
এদিকে,
সিথি মুখ ফুলিয়ে সাদির কাছে এসে, নিজের নোটসগুলো জমা দেয়। সাদি নোটসগুলো চেক করতে করতে বলে,
—“নোটসগুলো নিজে করেছো নাকি জুনিয়ারদের দিয়ে সব করিয়েছো? ”
সিথি শুকনো ঢুক গিলে বলে,
—“নাহ নাহ আমি নিজে-ই’ করেছি হুহ সত্যি।
সাদি একপলক সিথির দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—-“মিথ্যা কথা কম বলো। এইগুলে তুমি জুনিয়ারদের দিয়ে-ই’ করেছো তা আমি খুব ভালো করে-ই’ জানি ওকে? এন্ড সবথেকে বড় কথা এতো ফাঁকিবাজি কীভাবে করো? ”
সিথি মুখটা বেকিয়ে বললো,
—“বেশ করি ফাঁকিবাজি করি। তোমার মতো তো আর নিরামিষ হয়ে যাইনি। এইটাই ভালো। ”
—–“আমি আবার নিরামিষ? ”
সাদির প্রশ্নে সিথি বলে উঠলো,
—“তা নয়তো কী? সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে-ই’ থাকো এবং মাস্টারমশাইয়ের মতো আমার উপর হুকুম দাও। ভালোবাসার কিছু জানো তুমি?
তোমার নাম ‘নিরামিষ মাস্টারমশাই ‘ রাখা উচিৎ।”
সিথির এমন উদ্ভুট নাম শুনে সাদি খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। সাদির খিলখিলানো হাঁসির শব্দে সিথির মনে ভালোলাগার ঢেউ বয়ে গেলো।
______________________
নরম মাটির মধ্যে বেলীফুলের রাস্তা দিয়ে আমিও উনার পিছন পিছন যাচ্ছি। সবকিছু-ই’ যেনো আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে।
আমি আরেকটু এগিয়ে যেতে-ই’, আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো।
সামনে ছোট্ট একটি নদী। এখন ‘গোধূলীর সময়’।
(লেখিকা -জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
গোধূলির আবিরে রাঙা অস্তায়মান লাল সূর্য। দিনের শেষে থেমে আসে চারপাশের কর্মকোলাহল। প্রকৃতিতে নেমে আসে অন্যরকম এক প্রশান্তি।
স্বর্গীয় আভায় রাঙ্গনো আকাশ। এই শোভা, এই অপরূপ রূপের মাধুরী দেখে দু চোখের তৃষ্ণা যেন মেটে না। আকাশের রক্তিম রঙে নদীর জল রঙিন হয়ে ওঠে।
নদীর জলে ভাসমান ছোট্ট ছোট্ট নৌকা।
আমি চারপাশ তাঁকালাম।
তখনি কেউ গেঁয়ে উঠলো,
আজ এক নাম না জানা কোনো পাখি
ডাক দিলো ঠোঁটে নিয়ে খড়কুটো,
আজ এলো কোন অজানা বিকেল
গান দিলো গোধূলী এক দু মুঠো
তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি ?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ,
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ..
গানটি গাইতে ছোট্ট নৌকা থেকে ছোটসাহেব বেড়িয়ে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
আমার চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। আমি উনার হাতে হাত রেখে নিজেও গেঁয়ে উঠলাম,
ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যা।
মাঝি নৌকা ছেড়ে দিলো। চারদিকে সুন্দর একটি মূহুর্ত তৈরি হয়ে আছে।
উনি আমার দিকে তাঁকিয়ে জড়ানো কন্ঠে বললেন,
—-“শহরের ধুলা আর ধোঁয়ায় বিরক্ত হওয়া মনটাকে,
সহজে-ই’ ভালো করে দিতে পারে এই প্রকৃতি।
আমি জানি গোধূলীর তোর খুব পছন্দ কাজল।
তোর মনে আছে কাজল?একদিন তুই বলেছিলি
নিজের কোনো আপন মানুষের সাথে গোধূলীবেলা উপভোগ করার ইচ্ছে।তাই ভেবেছি এই গোধূলীর মুহুর্তে -ই’
তোকে আমি নিজের মনের কথা বলে দিবো। ”
আমি উনার চোখে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,
—“আমি তো সেই কবে থেকে-ই’ আপনার মনের কথা শুনার জন্যে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি ছোটসাহেব। ”
নৌকাটা মাঝপথে এসে থামলো। উনি খানিক্ষন চুপ থেকে বলে,
—“রাফসিন শেখ রুদ্রিক। বড়লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া ছেলে যাকে বলে। সারাদিন গার্লফ্রেন্ড নাইট ক্লাব নিয়ে-ই’ থাকে সে। কিন্তু এমনটা আমি ছিলাম নাহ কাজল বিশ্বাস কর।
ছোটবেলার এমন কিছু আঘাত পেয়েছি। এমনকিছু ঘটনার সাক্ষ্যি হয়েছি। যা খুব-ই’ ভয়ংকর ছিলো আমার কাছে। তাই নিজের অস্তিত্ব সকলের কাছে বিলিন করার জন্যে, নিজেকে এইসব রঙিন জগতের সাথে মিশিয়ে ফেলেছিলাম। ”
উনি আমার হাত ধরে চুমু খেয়ে বললেন,
—“কিন্তু তুই আমার ঠিক সেই ক্ষত জায়গাগুলো খুব ভালো করে বুঝিস। তোর কাছে গেলে একপ্রকার শান্তি পাই আমি। তোকে হারানোর ভয় আমার একপ্রকার গ্রাস করে ফেলেছিলো। তোর জন্যে আমি দিনের পর দিন পসেসিভ হয়ে উঠছিলাম কাজল।
এমনকি সাদিকে নিয়েও জেলাস হয়ে উঠেছিলাম।
এখন তো তোর আগের ভালোবাসা ‘তনয় ‘ ফিরে আসায় আমার ভয়টা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি তুই তার কাছে ফিরে যাস। তার সাথে এই বিয়েটাতে রাজি হয়ে যাস? তাহলে আমার কী হবে কাজল? তোকে আমার অনুভুতিগুলো ঠিক বুঝিয়ে উঠতে পারবো নাহ।
ভালোবাসার সঠিক ব্যাখ্যা কী আমি জানিনা, কিন্তু আমি তোকে..
কথাটি বলে রুদ্রিক থেমে যায়। রুদ্রিক বলতে যেয়েও বলতে পারছে নাহ। কোথাও তার যেনো জড়তা কাজ করছে। কুল কুল করে ঘামছে রুদ্রিক অনেককিছু-ই’ সে বলতে চাচ্ছে তবুও কেনো কথা বের হচ্ছে নাহ রুদ্রিকের মুখ থেকে।
তখনি কাজল তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে চিৎকার বলে উঠলো,
—–“ভালোবাসি ছোট সাহেব। অনেক অনেক ভালোবাসি আপনাকে। ”
রুদ্রিক স্তব্ধ হয়ে যায়। তার হাত-পা মৃদ্যু কাঁপছে তার। সে ঠিক শুনলো তো? আমি উনাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে বলে উঠলাম,
—–“তয়ন ভাই আমার প্রথম ভালোবাসা। তাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার জায়গা আলাদা,কিন্তু আপনি আমার ভালোবাসা। যাকে ভুলে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নাহ। আপনার জায়গা কেউ নিতে পারবে নাহ। আমার মনে এই জায়গাটি আপনি নিজে তৈরি করেছেন ছোটসাহেব। আপনি সত্যি অসাধারণ। ”
এইবার রুদ্রিক আর চুপ থাকতে পারলো নাহ। সেও
পিছনে ঘুড়ে কাজলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
—-“ভালোবাসিরে তোকে খুব ভালোবাসি কাজল। তুই শুধু আমার। হুম তুই রুদ্রের কাজল। ”
কথাটি বলে- ই’ রুদ্রিক কাজলের কপালে গভীরভাবে চুমু খেলো। কাজল আবেশে চোখ-জোড়া বন্ধ করে নিলো। রুদ্রিক কাজলের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো। কাজল রুদ্রিকের বুকে লেপ্টে রইলো।
তাদের সুন্দর ভালোবাসাময় মুহুর্ত যেনো গোধূলীর বেলার সাথে নির্বিশেষে মিশ্রিত হয়ে গেলো।
#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব -২৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা
—“কাজল তুই যদি আমার এতো কাছে থাকিস। তাহলে আমি কিন্তু রোমান্টিক মুডে চলে আসবো।পরম ভালোবাসা নিয়ে, রুদ্রিকের বুকে লেপ্টে রয়েছে কাজল। কাজলের দুষ্টুমির কথা আন্দাজ করতে পেরে রুদ্রিকের বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে,
—-“তাহলে আপনার মনে সারাদিন এইসব চলে? চলবে-ই’ তো এত্তো গুলো গার্লফ্রেন্ড থাকলে তো হবে-ই’।
রুদ্রিক কাজলের কোমড় চেপে ধরে বলল,
—“নাহ রে কাজল। শুধু তুই কাছে থাকলে-ই’ আমার মুড টা রোমান্টিক হয়ে উঠে। ”
কাজল কিছু একটা ভেবে রুদ্রিকের থেকে দূরে সরে এসে বলে,
—“বাট এখন থেকে সবগুলো গার্ল্ফ্রেন্ড এর সাথে আপনার ব্রেকাপ হুহ। ”
রুদ্রিক ভ্রু কুচকে বলে,
—-“কেনো করবো? ওরাও তো আমার গার্লফ্রেন্ড তাইনা? আমি যদি ব্রেকাপ করে ফেলি ওদের ও তো খারাপ লাগবে তাইনা? মনটা ভেঙে যাবে। আমি কারো মন ভেঙে দিতে পারিনা৷ রাফসিন শেখ রুদ্রিকের মনটা আবার বিশাল বড়। ”
ছোটসাহেবের কথা শুনে আমার কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠলাম,
—-“ঠিক আছে তাহলে আপনার সেই গার্লফ্রেন্ডের নিয়ে-ই’ থাকেন আমি গেলাম ”
কথাটি বলে আমি চলে যেতে নিলে-ই’ উনি পিছন থেকে আমার জড়িয়ে আমার কাঁধে নিজের থুত্নি রেখে বললেন,
—“সত্যি কাজল তুই ও বাচ্ছা-ই’ রয়ে গেলি।
তোর রুদ্রিকের মনে শুধু তুই ছাড়া আর কে আছে বল?
আমি উনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,
—-“হুম আমি আপনার মনে নিজের উপস্হিতি ছাড়া আর কাউকে সহ্য করবো নাহ হুহ বলে দিলাম। ”
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
আমার কথা শুনে উনি কিছুটা সিরিয়াস ভঙিতে বলে উঠলেন,
—-“কিন্তু আমার মনে আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। যাকে আমি তোর থেকেও বোধহয় বেশি ভালোবাসি। ”
ছোটসাহেবের কথা শুনে আমার মনে অজানা ভয় ঢুকে গেলো। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,
—“কে সে? ”
ছোট সাহেব বললেন,
—“কে আবার? আমার ছোট্ট গার্লফ্রেন্ড মুসকান। ”
কথাটি বলে-ই’ উনি হেঁসে উঠলেন। যাকে বলে খিলখিলানো হাঁসি। আমিও হেঁসে উঠলাম সত্যি উনিও পারেন।
_________
তনয় কিছুটা রাগ নিয়ে-ই’ বেড়িয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। আজ কাজল তাকে যথেষ্ট অপমান করেছে বটে। তার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বলে লাপাত্তা। তার মধ্যে ফোনটাও ধরছে নাহ। তনয় ভেবে নিয়েছে কাজলের কাছে এর জবাব চাইছে।
কথাটি ভেবে তনয় পা বাড়ালে, সে খেয়াল করে ছুটকি (কাজলের বোন) রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ছুটকি হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে কেন? নাহ ব্যাপারটা দেখতে হবে।
কথাটি ভেবে তনয় ছুটকির কাছে গেলো।
এদিকে,
ইকবাল শিকদার তার মেয়ে মিশুকে নিয়ে আজ শেখ বাড়িতে এসেছেন। ইকবাল শিকদারকে দেখে আফজাল শেখ এবং ইশানিশেখ এগিয়ে আসেন।
আফজাল শেখ বলে উঠেন,
—“আসুন ইকাবাল সাহেব। ”
ইকবাল শিকদার তার মেয়েকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে পড়ে। ইশানি শেখ মিশুর থুত্নি উচু করে বললেন,
—“ভারি মিষ্টি মেয়ে তুমি। নাম কী তোমার? ”
মিশি হেঁসে বলে,
–“জ্বী মিশু। ”
ইশানি শেখ ইকবাল শিকদারের দিকে তাঁকিয়ে বললেন,
—“ভারি মিষ্টি মেয়ে আপনার। আমার রুদ্রিকের জন্যে একেবারে উপযুক্ত। ”
মিশু খানিক্টা লজ্জা পায়।
তখনি জেসমিন শেখ এসে ইকবাল শিকদারকে সালাম দেয়।
ইকাবাল শিকদার এইবার আফজাল শেখের দিকে তাঁকিয়ে বললেন,
—“সবাইকে-ই’ তো দেখছি,কিন্তু রুদ্রিক কোথায়। ”
ইকবাল শিকদারের প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় ইশানি। সে তো রুদ্রিককে ফোনে-ই’ পাচ্ছে নাহ । ইশানি শেখ কোনোরকম হেঁসে বললেন,
–“রুদ্রিক একটা কাজে আটকে গেছে এখুনি চলে আসবে। ততক্ষনে নাহয় কিছু নাস্তা সেরে নিন। ”
ইকবাল শিকদার বললেন,
—“হুম তা মন্দ বলেননি। তাহলে আমরা না হয় রুদ্রিকের জন্যে-ই’ অপেক্ষা করি। ”
ইশানি শেখ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
________অন্যদিকে,
——“নিশ্চই মুসকান এবং ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির সম্পর্কে তুই সবকিছু-ই’ জানিস তাইনা? আমাকে দিদুন সব কিছু-ই’ বলে দিয়েছে। কীভাবে তোরা আমার পিছন পিছন ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়িতে চলে গিয়েছিলি। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে বললাম,
—“আমি জানি কাজটা আমার ঠিক হয়নি। আমি সত্যি দুঃখিত। ”
—-“হয়তো ঠিক হয়নি, কিন্তু কাজল তুই যদি আমার
‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির সম্পর্কে না জানতি, তাহলে তোর মনে একটা সংষয় থাকতো। তার থেকে সবকিছু ক্লিয়ার হওয়া-ই’ ভালো তাইনা? ”
আমি মাথা নাড়িয়ে উনার বুকে মাথা রেখে বললাম,
—“আমাকে এত্তো সুন্দর মূহুর্ত উপহার দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ ছোটসাহেব। ”
উনি বলে উঠলেন,
—“ধন্যবাদ তো আমার তোকে দেওয়ার উচিৎ কাজল। আমার জীবনে আসার জন্যে। জানিস কাজল? লাইফ টা তখনি সুন্দর যখন নিজের জীবনে সঠিক কোনো মানুষের প্রবেশ হয়। ”
উনার কথা শুনে আমিও মাথা নাড়িয়ে বললাম,
—“হুম জীবনে তো কত মানুষের-ই’ আগমন হয়,কিন্তু সঠিক মানুষ একবার-ই’ আসে। তনয় ভাই আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা হলেও আমার জীবনের সঠিক ভালোবাসা হলো আপনি ছোটসাহেব। ”
ছোটসাহেব মিষ্টি হেঁসে বললেন,
—“ভালোবাসি। ”
আমি লাজুক হাঁসলাম।
ছোট সাহেব কিছু একটা ভেবে ‘এক সেকেন্ড ‘ বলে একটু সাইডে চলে গেলেন।
আমিও নৌকার এক পাশ দাঁড়ালাম।
সামনে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে জলরাশি,ওপরে রক্তিম উদার আকাশ,গোধূলি লগ্নে উন্মুক্ত নদীতীরে দাঁড়ালে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আকাশের রক্তিম রঙে নদীর জল রঙিন হয়ে ওঠে।
ছোটসাহেব ও এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।
উনার কাঁধে মাথা রেখে বললাম,
—“আজকের দিনটা আমার জীবনের সবথেকে বেশি বিশেষ মূহুর্ত। যা আমার গোধূলী_বেলার_স্মৃতিতে
লিপিবদ্ধ থাকবে। ”
উনি অবাক হয়ে বললেন,
—“গোধূলী বেলার স্মৃতি? ”
—“হুম ‘গোধূলী_বেলার_স্মৃতি ‘। গোধূলী আমার বড্ড
পছন্দ বলে-ই’ আমার সাথে গোধূলীতে ঘটে যাওয়া সবকিছু আমি আমার প্রিয় ডাইরিতে আবদ্ধ করে রেখেছি । যার নাম ‘গোধূলী_বেলার_স্মৃতি ‘।
—–“বাহ ভালো-ই’ তো। আচ্ছা কাজল তুই তোর চোখ বন্ধ কর। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি বলে উঠলাম,
–“কেনো? ”
উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,
—-“তুই বন্ধ করবি না নাকি? বেশি কথা বলিস। ”
—-“ওকে আমি এখুনি বন্ধ করছি। ”
আমি চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে-ই’ আমার পায়ে কারো আলতো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে দেখি, ছোট সাহেব আমি পরম যত্নে এক জোড়া সোনার নুপুর পড়িয়ে দিচ্ছেন।
—“আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন ছোটসাহেব? ছাড়ুন….
কথাটি বলার সাথে সাথে-ই’ উনি ধমকে বলে উঠলেন,
—-“কাজল একদম নরাচড়া করবি নাহ। ”
কথাটি বলে-ই’ উনি নুপুরটি পড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—“নুপুরটা তোর পায়ে বড্ড মানিয়েছে কাজল। আজকের দিনে আমার দেওয়া ছোট্ট উপহার। কখনো এই নুপুর নিজের কাছ থেকে দূরে রাখবি নাহ।”
আমি উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“কিসের ছোট্ট উপহার? আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা উপহার আমার কাছে খুব খুব স্পেশাল।”
উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,
—“হুম এই উপহারগুলো-ই’ প্রত্যেক মূহুর্তে তোকে মনে করিয়ে দিবে, আমি তোর অস্তিত্বে সবটুকু অংশ জুড়ে রয়েছি। ”
কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে আচমকা কোলে তুলে নেন। আমি কিছু বলবো তার আগে-ই উনি আমাকে থামিয়ে বলেন,
—“তোকে কুড়েঘরটা ঘুড়িয়ে দেখাবো চল। ”
—-” আমি হাটতে পারি। তাই যেতে পারবো। ”
—-“তুই বড্ড আনরোমান্টিক কাজল। দেখছিস আমি একটু রোমান্টিক হওয়ার ট্রাই করছি,কিন্তু তুই আমার রোমান্টিকের মুডের বারোটা বাজাচ্ছিস। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি হেঁসে উঠি। ছোটসাহেব ও আমাকে নিয়ে হাটতে থাকেন সেই বেলিফুলের রাস্তা দিয়ে। উনি আমাকে কোলে করে কুড়েঘরের সামনে নিয়ে নামিয়ে দেন। আমিও নেমে পড়ি। ভিতরটা যেনো আরো সুন্দর। চারপাশে ছোট্ট ফুলের তোরা। পাশে ছোট্ট একটি দোলনা তাও বেলীফুল দিয়ে সাজানো। দোলনার পাশে ছোট্ট একটি টি টেবিল। ছোটসাহেব আমাকে ইশারা করে টি টেবিলে পাশের চেয়ারে বসতে বললেন। আমিও বসে পড়লাম। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বললেন,
—“এই কুড়েঘরের সম্পর্কে কখনো তো কিছু শুনেনি। তাছাড়াও ঢাকা শহরেও এইরকম জায়গা সত্যি দেখতে পাওয়া মুশকিল। ”
ছোটসাহেব ও বসে বলে উঠলেন,
—“এই কুড়েঘরটা নাম ‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘।”
আমি আনমনে বলে উঠলাম,
—-‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘।
—-“হুম। আমার ফুপি আম্মুর বড্ড শখের একটি জায়গা ছিলো এই ‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘ জায়গাটি। আমার ফুপি আম্মু নিজে এইরকম নির্জন জায়গা খুঁজে নিজের হাতে এখানে এই কুড়েঘরটা সাজিয়েছিলো। আমাকেও এখানে সবসময় নিয়ে আসতো ফুপি আম্মু। ফুপি আম্মুর যখন মন খারাপ থাকতো তখন আমাকে নিয়ে এখানে আসতো। আমাকে বড্ড ভালোবাসতো ফুপি আম্মু। ”
কথাটি বলতে বলতে উনার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। আমি ছোটসাহেবের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“কে এই ফুপি আম্মু ছোটসাহেব? আমি তো যতটুকু জানি আপনার দুজন পিপি। ”
—“নাহ। আমার তিনজন পিপি। তার মধ্যে আমার মেঝ পিপিকে আমি ভালোবেসে ‘ফুপি আম্মু ‘ বলে ডাকতাম। সে আমার মায়ের থেকে কোনো অংশে কম আমাকে ভালোবাসেনি বরং আমাকে বেশি ভালোবাসি। ”
ছোট সাহেবের কথায় আমি বলে উঠলাম,
—“তার কথা তো কখনো শুনেনি। ”
—“শুনবে কী করে? তার অস্তিত্ব যে সকলের থেকে আড়াল করেছে আফজাল শেখ। আমার ফুপি আম্মুকে
আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছিলো আফজাল শেখ এবং জেসমিন শেখ। বলতে গেলে একপ্রকার মেরে-ই’ ফেলেছিলো তারা আমার ফুপু আম্মুকে। ”
ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। কী বলছেন উনি? বড় সাহেব এবং বড় ম্যামসাহেব মিলে ছোটসাহেবের ‘ছোট পিপিকে ‘ মেরে ফেলেছে?
আমার ভাবনার মাঝে-ই’ উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
—“সত্যি বড় কঠিন রে কাজল। কি ভয়ংকর ঘটনা আমি নিজের ছোটবেলায় দেখেছি তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। শুধুমাত্র ওদের জন্যে আমার সবথেকে কাছের মানুষকে আমি হারিয়েছি। ”
আমি বলে উঠলাম
—“কী এমন হয়েছিলো অতীতে? ”
ছোট সাহেব অশ্রুমাখা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললেন,
—“জানতে চাস কী হয়েছিলো অতীতে? শুনতে পারবি তো সেই ভয়ংকর অতীত? ”
—-“পারবো। ”
ছোটসাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—“তাহলে শুন। ”
চলবে….