#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২১||
নিশাত এইসব আকাশ পাতাল ভাবছে তখনই আরহানের কল আসে মুহুর্তেই নিশাতের মুখে হাসির রেখা দেখা দেয়। নিশাত একটু দূরে গিয়ে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আরহান বলে
_” আমার নিশা পাখি কি করে ?
_” কি করে মানে? অফিসে গেছেন কখন একবার ও কি ফোন দিয়ে বলা যেত না যে নিশা পাখি আমি পৌঁছে গিয়েছি তুমি টেনশন করো না
নিশাত একনাগাড়ে কথাগুলো বলে নিশ্বাস নেয়। আরহান মিটমিট করে হাসছে
_” বাবা রে কত কথা বলো তুমি নিশা পাখি। তবে একটা বিষয় ভালো লাগলো যে তুমি আমাকে মিস করছো
নিশাত হকচকিয়ে যায় । কাপা কাপা কণ্ঠে বলে
_” আপনি সবসময় উল্টা বুঝেন কেনো ? আমি কি সেটা বলছি
_” ওহ তাহলে তুমি আমাকে মিস করনি তাই তো ?
_” সেটা বা কখন বললাম (জিভে কামড় দিয়ে )
নিজের কথায় নিজে ফেঁসে গেলো। আরহান তো জোড়ে হেসে উঠে ।
_” আচ্ছা বাদ দিন অফিসে কেমন লাগছে ?
_” ভালো তবে তোমাকে খুব মিস করছি
নিশাত আস্তে করে বলে আমিও ।
_” ঠিক মত কাজ করেন আর কখন আসবেন ?
_” বিকালে চলে আসবো । তুমি সাবধানে বাসায় যাবে আর কাল থেকে আমি দিয়ে আসবো
_” হম সাবধানে আসবেন রাখছি এখন
_” কথা বলতে ভালো লাগছে না ?
_” টা না আপনি কাজ করছেন তাই আর কি
_” বাড়ি থাকলে ত জ্বালায় খাও এখন কতো ভালো ।
_” কি আমি
নিশাত কে বলতে না দিয়ে আরহান ফোনের ওপাশ থেকে কিস দেয়। নিশাত ওখানেই জমে যায় ।কথা বলার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে
আরহান তো বকবক করেই যাচ্ছে নিশাত চোখ বন্ধ করে আছে । নিশাত এর কানে বার বার ওই মুহুর্ত বাজছে ।
_” কিহলো ? কোনো উত্তর দিছো না কেনো ?
_” আমি পরে কথা বলছি
কথাটা বলে নিশাত তাড়াতাড়ি কল কেটে দিয়ে নেহার কাছে যায় ।
_” কি রে কথা হলো ? তোকে এমন লাল লাগছে কেনো ? জিজু কিছু দিলো নাকি
_” চুপ কর বেশি বকবক করিস না তো
_” আমি কিছু বললেই দোষ হ্ন
নিশাত আর কিছু বলেনা
সন্ধায় নিশাত নামাজ পড়ে বসে আছে আরহানের জন্য ।অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কলিং বেল বেজে উঠলো ।
নিশাত ছুটে দরজা খুলে আরহান কে নিয়ে আসে।
_” প্রথম দিন কেমন কাটলো ?
শার্ট খুলতে খুলতে বলে
_” ভালোই কিন্ত অনেক চাপ
নিশাত আরহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
_” প্রথম প্রথম কষ্ট হবেই আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
আরহান বিছনায় শুয়ে নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে
_” এখন একটু শান্তি লাগছে
নিশাত বুকে একটা ঘুষি মারে।
এভাবে ওদের দিন চলতে থাকে আরহানের অফিস নিশাতের ভার্সিটি। রাতে এক সাথে বসে তারা দেখা । সব মিলিয়ে আনন্দে হাসিতে অভিমানে এক বছর চলে যায়।এই এক বছরে আরহান সম্পূর্ণ বদলে । নিশাত কে দেওয়া সব কথা আরহান রেখেছে । এখন ভালো মানুষের পরিণত হয়ে গেছে।
আজ নিশাত নীল রঙের শাড়ি পরেছে। আজকের দিনটা নিশাতের কাছে অনেক প্রিয় আজকে নিশাত
আরহান কে নিজের মনের কথা বলে আপন করে দিবে । আরহান নিশাতের মধ্যে যত বাধা আছে সব আজ দূর করবে । ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়েছে
ঘরের লাইট অফ করে নিশাত একবার দেখে নিলো ।সব ঠিক আছে কি না । আজকে বাসায় কেউ নেই ।নিশাতের শশুর নিশাতের শাশুড়ি কে আনতে গেছে । আরহানের আম্মু বিয়েটা প্রথমে মেনে না নিলেও পরে মেনে নেয় আর মাঝে মাঝে এসে থেকে যায় সবার সাথে । এবার নাকি একবারে জব ছেড়ে চলে আসবে। ঈশা ওর বন্ধুবির বাসায় গেছে । বাড়ি ফাঁকা দেখে নিশাত ঠিক করলো আরহান কে সারপ্রাইজ দেবে ।
কলিং বেল বাজাতেই নিশাত আয়নায় নিজেকে দেখে দরজা খুলতে যায় । প্রতিদিনের মত আজও আরহান ফুল আনতে ভুল করেনি ।
নিশাত মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিতেই আরহান ফুলের তোড়া নিশাতের হাতে দেয়।
_” ঈশার ঘরে আপনার ড্রেস আছে ।ফ্রেশ হয়ে নিন
_” কেনো ? আমাদের ঘরে কি হলো ?
_” বেশি কথা বলেন কেনো যান
আরহান যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলে
_” তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে । এভাবে সেজে এসে কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও
_” ধরে নেন তাই (গলা জড়িয়ে ধরে )
_” ম্যাডাম তো দেখি অন্য মুডে
_” যেই মুডে থাকি আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেন যান
আরহান কে ধাক্কা দিতে দিতে নিশাত পাঠিয়ে দেয় ।নিশাত একবার ঘরে উকি দিয়ে নিচে খারার সাজাতে থাকে ।
আরহান রেডী হয়ে সোজা নিচে যায় ।
_” আব্বু আসবে কখন ?
_” বললো তো কাল বিকালে চলে আসবে । আপনার তো কাল ছুটি
_” হুম খুব খুদা লাগছে
নিশাত একটা বড়ো প্লেটে খাবার বেড়ে আরহানের সামনে ধরল। আরহান মুচকি হেসে নিশাতের সামনে এক লোকমা ধরল নিশাত খুশিমনে খেয়ে নিল।
খাবার পালা শেষ হতেই নিশত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে
_” আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই
_” হুম বলো শুনছি
_” এখানে না চলুন
_” কোথায়?
নিশাত আরহানের হাত ধরে উপরে নিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই আরহান অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে । ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো একদম আরহানের মনের মত ।
আরহান ভিতরে গিয়ে চারিদিক ভালো করে দেখে বলে
_” আজ কি কিছু আছে নিশা পাখি ? এত সুন্দর করে সাজিয়েছো কেন?
_” আপনার পছন্দ হয়েছে ?
_” খুব
_” আসলে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই
আরহান নিশাতের সামনে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে
_” হুম বলো আমি শুনছি
_” আ আ আ মি আসলে লে (কাপা কাপা গলায় )
_” নিশা পাখি তুমি এভাবে ঘামছো কেনো ? এভরিথিং ইজ ওকে নিশা পাখি ?
_” আমি ঠিক আছি গরম লাগছে
নিশাত এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে দেয় ।
_” আরহান
_” ইয়েস ?
_” আমি আপনাকে
_” তুমি আমাকে কি ?
_” আপনি ঐভাবে তাকালে আমি বলবো কি করে ?
_” আমি আবার কি করলাম ?(অবাক হয়ে)
_” চুপ আমি বলছি
নিশাত চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোরে নিশাত নেয়। আরহান মিটমিট করে হাসছে নিশাতের অগোচরে সেই সময় আরহান রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় একবার রুমে উঁকি দেয় উঁকি দিয়ে বুঝতে পারে যে নিশাত কি করতে চাইছে।
_” আমার নিশা পাখি যে এত ভীতু সেটা তো আগে জানতাম না ।তবে ভালোই লাগছে তোমার মজা নিতে । ওয়েট করছি নিশা পাখি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শোনার জন্য (মনে মনে )
নিশাত চোখ খুলে আরহান কে দেখে ঘাবড়িয়ে যায় ।
_” আপনি ওভাবে তাকাবেন না তো আমার বলতে ভয় করে আর হাসবেন না
আরহানের এখন ঘর কাপিয়ে হাসতে ইচ্ছা করছে কিন্ত নিশাতের সামনে সিরিয়াস মুখ করে বসে বলে
_” ওকে তুমি বলো
নিশাত উসখুস করে বলতে পারছে না তাই দেখে আরহান বলে
_” নিশা পাখি তুমি কি বলবে ?আমি খুব টায়াড অফিসে অনেক কাজ ছিল।
_” ধুর বাবা এত ভয় কিসের ? উনি তো আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমি বললে কি হবে (মনে মনে )
_” আমি ঘুমালাম
নিশাত চিল্লিয়ে বলে
_” এই না না আমি বলছি
আরহান নিশাতের উত্তরের আসায় তাকিয়ে আছে
_” উফফ নিশা পাখি তুমি কি আমার থেকে মুক্তি চাও?
আরহান নিশাত কে বাজিয়ে দেখতে চায় তাই এই কথা বললো । নিশাত এমনি বলতে কেমন লাগছে তার উপর আরহানের এমন কথায় নিশাতের মাথায় রাগ চেপে বসে
নিজের রাগকে দমিয়ে রাখতে না পেরে আরহানের কাছে গিয়ে কলার ধরে টেনে তুলে চিল্লিয়ে বলে
_” কেন রে ? আমি ছেড়ে দিলে কি অন্য কাউকে নিয়ে আসবি ? খুব সখ তাই না তাহলে জেনে রাখ মরে গেলে ও মুক্তি পাবি না তো পাবি না । জোড় করে বিয়ে করবি যখন খুশি লুচ্চামি করবি এখন আবার মুক্তি দিবি সেটা ত হবে না । তোকে আমার সাথেই থাকতে হবে তুই চাইলে ও কি না চাইলে ও কি বুঝেছিস
নিশাত কলার ছেড়ে বারান্দায় চলে যায়। রাগের বসে মাথায় যা আসছে সব বলে দিছে । আরহানের থেকে দূরে যাবার কথা মনে হতেই নিশাতের দুনিয়া পাল্টে যায় । এত দিনে আরহান নিশাতের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে যা নিশাত ছাড়তে পারবে না ।
আরহান নিশাতের এই রূপ মেনে নিতে সময় লাগছে । আরহান ভাবতে পারেনি নিশাত এমন কিছু করবে ভাবতে পারেনি ।
আরহান পিছনে থেকে নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে
_” কি হলো ?
নিশাত মাথা নিচু করে আছে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।
_” ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি
আরহান চলে যেতে গেলে নিশাত আরহানকে জড়িয়ে ধরে বলে
_” কেনো বুঝেন না ? ভালোবাসি আপনাকে কারোর সাথে সহ্য করতে পারবো না কারোর সাথে না । আমাকে ছেড়ে কখনো যাবেন না । ভালোবাসি আপনাকে সকল বাধা পেরিয়ে আপন করে নিন আমায় । থাকতে পারবো না আপনাকে ছাড়া এর থেকে মৃত্যু
আর কিছু বলার আগেই আরহান নিশাতের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে
_” হুস কোনো কথা না । তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে ছেড়ে যাবো । মরলেও তোমাকে আগে মেরে তারপর নিজে মরবো। শুধু এই কথা শুনার জন্য কত দিন অপেক্ষা করেছি ।
আরহান নিশাতের চোখের পাতায় চুমু খায় । ঠোঁট দিয়ে চোখের পানি চুষে নেয়।
_” জানো আজ নিজেকে পরিপূরক লাগছে ।এত দিন সব থেকেও কিছু ছিল না কিন্ত আজ নিজেকে সব থেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে কারণ আমার সাথে আমার ভালোবাসা আছে
নিশাতের কপালে ভালোবাসা দিয়ে নিশাত কে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়।
নিশাত আরহানের গলা জড়িয়ে ধরে । আরহান নিশাতের কপালে, গালে ভালোবাসা দেয়। নিশাত ও সযত্নে ভালোবাসা উপভোগ করতে থাকে
মাঝ রাতে দুটি দেহ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। আরহান নিশাতের কপালে চুমু দিচ্ছে আর নিশাত চোখ বন্ধ করে আছে ।
_” ঈসাকে ফোন করলে না কেনো ?
নিশাত চোখ বন্ধ রেখেই বলে
_” খেয়াল ছিলো না ।
_” টা থাকবে কেনো ?একটু ও ঘুমাতে দিলে না
নিশাত লজ্জায় লাল হয়ে গেছে । চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করছে যাতে আরহান আর কিছু বলতে না পারে ।
আরহান অনেকক্ষণ ডাকলেও নিশাত কোনো সাড়া দেয় না । আরহান নিশাত কে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমের দেশে চলে যায় ।
সকালে নিশাত গোসল করে আয়নায় নিজেকে দেখছে । আরহান এখনো ঘুমাচ্ছে । নিশাত নিজেকে দেখছে আর লজ্জায় লাল হচ্ছে । কাল রাতের ভালোবাসার দাগ নিশাতের শরীরে ফুটে উঠছে ।
_” এত দেখে লাভ নেই এইগুলোকে বলে লাভ বাইট। আরো চাই নাকি
হটাৎ আরহানের কথায় নিশাত চমকে যায় । ঘুড়ে দেখে আরহান হাতের উপর মাথা রেখে নিশাতের দিকে বাকা হেসে তাকিয়ে আছে । নিশাত চোখ বড় বড় করে দেখছে
আরহান আবার বলে
_” কি হলো ? আরো চাই
নিশাত বডি লোশনের বোতল ফেলে মারে ।
_” আমি খাবার বানাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো
নিশাত বেরিয়ে যায়। আরহান হাসতে হাসতে সে ও যায় ।
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২২||
নিশাত রান্না করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। হটাৎ ঘাড়ে কারোর ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে নিশাত চমকে যায় । পরক্ষনেই বুঝতে পারে এটা আর কেউ না তার #আড়ালে_ভালোবাসা । নিশাত কেপে কেপে উঠছে ।
আরহান নিশাতের পেটের কাছে হাত দিয়ে ঘুরাচ্ছে আর ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়াচে। নিশাত আরহানের পেটে কনুই দিয়ে ধাক্কা মারে। আরহান বিরক্ত হয়ে বলে
_” কি এই সব ? মুড নষ্ট করে দিলে
_” আরে আরে একটু তেই রাগ আমার শর্তে কিন্ত এটা লিখা ছিলো
_” তাই না
_” তবে আর একটা শর্ত অ্যাড করতে চাই
_” কি সেটা ?
_” এই যে আমার হাসব্যান্ড আমাকে নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াবে
_” ওকে মাই লাভ
নিশাত কে কোলে তুলে টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়। নিশাত আপেল খেতে খেতে বলে
_” দেখা যাক কেমন রান্না করতে পারে আমার মিস্টার হাসব্যান্ড
_” যদি আমি জিতে যাই তাহলে তুমি প্রতিদিন আমাকে নিজে থেকে কিস দেবে রাজি ?
নিশাত একটু ভেবে বলে
_” ওকে ডান । দেখা যাক কিসের জন্য মিস্টার হাসব্যান্ড কি কি করতে পারে
_” নিশা পাখি কি জানে ? তার প্রেমের শহরে ডুবে গেছি পাগল প্রেমিক হয়ে। তাকে পাওয়ার জন্য মরতেও পারি
_” বাহ মেরি হাসব্যান্ড what a dailouge কিন্ত আপনার যে খাবার পুড়ে যাচ্ছে সেটা দেখছেন
আরহান খেয়াল করে দেখে সত্যি নিশাত যে তরকারি করেছিল সেটা পুড়ে গেছে । আরহান তাড়াতাড়ি করে নামিয়ে নেয়
_” না হেসে বল কি খাবে ?
_” যেটা আমার হাসব্যান্ড খাওয়াবে
_” তোমার তো বিরিয়ানি খুব পছন্দ । ওটাই করবো
আরহান ইউটিউব দেখে সব করছে আর নিশাত আরহান কে দেখতে ব্যাস্ত । এই দেখার যেনো কোনো শেষ নেই । মনে হয় সব সময় এভাবে দেখতে পারতো
আরহানের রান্না শেষ হলে আরহান নিশাত কে বসিয়ে খাইয়ে দেয় । আরহান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন হইছে ?
নিশাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে গালে একটা ভালোবাসা দিয়ে বলে
_” বাহ আপনার হাতে তো জাদু আছে । প্রথম দিনে এত ভালো রান্না বাহ
_” প্রথম দিন না। ছোট থাকতে আমি আব্বু আর ও রান্না করতাম
_” ও টা কে ? (ভ্রু কুচকে )
_” তুমি তো খেলে এখন আমি খাবো খুব খুদা লাগছে । খাইয়ে দিবে নাকি
_” ওরে বাবা দিচ্ছি
নিশাত আরহান কে খাইয়ে দেয়।
বিকালে
নিশাতের শাশুড়ি আসে। আমজাদ হাবিব কে সালাম মিসেস সালেহা বেগম কে সালাম করে ।
সালেহা বেগম নিশাত কে উনার রুমে ডাকে । নিশাত যেয়ে ডাক দেয়
_” আম্মু আসবো ?
সালেহা বেগম ভিতরে আসতে বললো। নিশাত ভিতরে এসে দেখছে । সালেহা বেগম নিশাতের হাত ধরে বল
_” কোনটা পছন্দ ?
নিশাত কিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকে । নিশাত কে চুপ থাকতে দেখে সালেহা বেগম বলে
_” বলো কোনটা পছন্দ ? দেখ তোমাকে আমি প্রথমে মেনে নিতে পারিনি কারণ আমি আমার ছেলেকে জানি সে কাউকে বিয়ে করে সংসার করবে সেটা আমার মনে হয়নি কিন্ত এত দিন এক সাথে আছো আমার ছেলেটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে তাই শাশুড়ি হিসেবে আমার কিছু দায়িত্ব আছে।
নিশাত মাথা নিচু করে বলে
_” এই গুলোর কোনো দরকার নেই আম্মু । আপনাদের ভালোবাসা থাকলে আমরা খুশি আর আরহান আমাকে এই এক বছরে অনেক কিছু দিয়েছে
_” টা বললে ত হয় না । তুমি আমার বাড়ির বউ তোমাকে ত কিছু দিতেই হয়
নিশাত আর কিছু বললো না । আরহানের আম্মু নিশাতের হাতে কিছু গহনা দেয় । নিশাত সেইগুলো মাথা নিচু করে নিয়ে ঘরে যায় ।
আরহান বসে গেম খেলছে। নিশাত কে আসতে দেখে মুচকি হাসে । ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে
_” হাতে ওইগুলো কি ??
_” আম্মু কিছু গহনা দিয়েছে সেইগুলো
আরহান ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে বলে।
_” তোমার গহনা পড়তে ভালো লাগে ?
_” তেমন একটা না ।
আরহান বিছনায় বসে মাথা নিচু করে বলে
_” মিথ্যা কেনো বলছো ? সব মেয়েরা সাজতে ভালোবাসে সেটা আমি জানি কিন্ত আমি এমন এক স্বামী যে আজ পযর্ন্ত তোমাকে কোনো সোনার কিছু দিতে পারলাম না ।
নিশাত গহনা গুলো রেখে আরহানের পাশে বসে কাধে মাথা রেখে বলে
_” তুমি আমাকে যা দিয়েছ কয়জন স্বামী দেয়। এই যে রোজ ফুল নিয়ে আসো এত এত সম্মান দিয়েছ । আমি বারণ করার পরও ইস্যুর খরচ দিচ্ছাও। আর সব থেকে ইম্পর্ট্যান্ট এত এত ভালোবাসা দাও
আরহান সোজা হয়ে নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
_” দামী দামী গিফ্ট তো দিতে পারি না
_” যা দিয়েছেন এটাই অনেক ।আমার ওইসব গহনা ভালো লাগে না । লাগল তো তোমাকে বলতাম । তুমি আল্লাহ দেওয়া বেস্ট গিফট আর কি চাই
নিশাত চট করে আরহানের গালে চুমু দিয়ে বসে ।আরহান বাকা হেসে বলে
_” আমি কিন্ত কারোর ঋণ রাখি না
নিশাত বুঝে যায় আরহান কি বলছে । আরহান নিশাতের পিঠে হাত দিয়ে নিজের আরো কিছু নিয়ে আসে । দুইজনের মধ্যে ২ইঞ্চি ফাঁক ।
নিশাত আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। অনেকক্ষণ পর যখন আরহানের কোনো রেসপন্স পায় না তখন
নিশাত চোখ খুলে দেখে । আরহান মিটমিট করে হাসছে
_” কি হলো ?
_” আমার ছোঁয়া যে তোমার এত ভালো লাগে সেটা আগে বললে হতো ।তাহলে এত দিন দূরে রাখতাম না
নিশাত লজ্জা পেয়ে চলে যেতে গেলে আরহান হাত ধরে ফেলে
_” ছাড়ো বাইরে যাবো
_” টা তো হচ্ছে না নিজে থেকে যখন আমার কাছে আসছো এখন তো ছাড়াছাড়ি হবে না ।
নিশাত কিছু বলতে পারছে না ওর নিশাত ঘনঘন হয়ে আসছে । আরহান নিশাতের হাতে চুমু খেতে থাকে । নিশাত চোখ বন্ধ করে সবটা অনুভব করছে । আরহান নিশাতের কানে কানে বলে
_” ভালোবাসি নিশা খুব ভালোবাসি তোমায়
নিশাত কে শেষ করার জন্য এই টুকুই যথেষ্ট।নিশাত কিছু বলার আগেই হটাৎ কাশির আওয়াজ আসে
নিশাত চোখ খুলে দেখে ঈশা দাড়িয়ে আছে। আরহান নিশাত দুইজনের দূরে সরে যায় ।
ঈশা হেসে বলে
_” সরি ডিস্টার্ব করার জন্য কিন্ত আপু আমার খুব খুদা লাগছে কিছু খেতে দে
নিশাত নিজেকে ঠিক করে বলে
_” এই তো দিচ্ছি দাড়া
নিশাত একবার আরহান এর দিকে তাকিয়ে ঈশা নিয়ে বাইরে যায় ।
বেশ কিছু দিন পর নিশাত নেহার সাথে একটা শপিংমলে আসছে । নিশাত আসছে না কিন্ত নেহা ও নাছোড়বান্দা ছাড়বে না । বাধ্য হয়ে নিশাত কে আসতে হয়। নেহা আর নিশাত শপিং শেষে বের হতেই নিশাতের চোখ সামনে গিয়ে আটকে যায় ।
রাস্তার ওই পাশে আরহান আর ঈশা একটা হোটেল থেকে বের হচ্ছে । নিশাত খুশি হয়ে ডাকতে গেলে খেয়াল করে দেখে ওরা একটা আবাসিক হোটেল থেকে বের হচ্ছে ।
ওদের দুইজনকে এই হোটেলে নিশাত আশা করেনি। নেহা কে বুঝতে না দিয়ে নিশাত নেহার সাথে চলে যায় ।
বাসায় গিয়ে দেখে ঈশা,আরহান দুইজনে আছে । নিশাত অবাক হবার ভান করে বলে
_” তুমি এই সময়ে ?
নিশাত এর কথায় যেনো আরহান আর ঈশা আকাশ থেকে পড়লো । আরহান মেকি হাসি দিয়ে বলে
_” আজ ভাবলাম ফ্যামিলির সাথে বসে খাবার খাবো তাই ছুটি নিয়ে চলে আসলাম
_” আর তুই কোথায় গিয়েছিলি ? (ঈশার দিকে তাকিয়ে )
ঈশা আরহানের দিকে তাকাও । ঈশা কাপাকাপা কণ্ঠে বলে
_” আপু তোকে ত বলেছিলাম যে আমি নোটস নিতে যাচ্ছি আর
ঈশা কে বাকিটা বলতে না দিয়ে আরহান বলে
_” তুমি কি আমাদের জেরা করবে? কখন এসেছি খুব খুদা লাগছে
নিশাত দুইজনের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। আরহান ও পিছন পিছন গেলো।
রাতে
আরহান কাজ করছে আর নিশাত আরহানকে দেখছে
_” আচ্ছা আরহান আমার কাছে মিথ্যে বললো কেনো ? নাকি আমি বুঝতে ভুল করছি । না না এই সব কি ভাবছি আরহান এমন না আর ও ঈশা কে নিজের বোনের মতো দেখে । আমি একটু বেশি ভাবছি (মনে মনে )
নিশাত এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ।
মাঝ রাতে হটাৎ একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে নিশাত লাফ দিয়ে উঠে পড়ে । সাড়া শরীর কপিয়ে উঠছে
_” আমি এমন স্বপ্ন কেনো দেখলাম ? পানি পানি
নিশাত পাশে পানির জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নেয় । এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পর নিশাতের খেয়াল হয় আরহানের কথা । পাশে তাকিয়ে দেখে নেই । বারান্দায় ও নেই
_” এত রাতে কোথায় গেলো ?
নিশাত দরজা খুলে বাইরে আসে। ঈশার রুমের দিকে চোখ পড়তে দেখে আলো জ্বলছে ।
নিশাত এর মনে খটকা হয় ।কোনো কিছু না ভেবে ঈশার রুমে ঢুকতে গেলে বুঝতে পারে দরজা বন্ধ।
নিশাত ওখানেই দাড়িয়ে থাকে হটাৎ ঈশার কান্নার আওয়াজ পায় । নিশাত ডাকতে গেলে একটা কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় ।
আরহান বলছে
_” ইসু প্লীজ ঠান্ডা হও। কিছু হবে না কেউ জানতে পারবে না আমি তোমাকে প্রমিজ করছি কিছু হবে না ।
ঈশা কান্না করছে আর আরহান ঈশা কে সামলাচ্ছে । নিশাত আর শুনতে পারে না দৌড়ে নিজের ঘরে চলে আসে ।
বালিশের মুখ গুঁজে কান্না করছে। কিছুক্ষণ পর নিশাত বুঝতে পারে আরহান আসছে । নিশাত ঘুমের ভান ধরে থাকে ।
আরহান ঘরে এসে বাথরুমে যায় । ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে । নিশাত কোনো টু শব্দ করে না
পরের দিন সকালে
সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে । নিশাত ঈশার দিকে খেয়াল করে দেখে ঈশার চোখ ফুলা। নিশাত কিছু বলতে গিয়েও বললো না
আরহান অফিসে যেতেই নিশাত ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে ।
রাস্তায় আনমনে হাটছে কালকের রাতের ব্যাপারটা নিশাত কিছুতে মেনে নিতে পারছে না। এক মনে হচ্ছে নিশাতের ভুল। আরেক মনে হচ্ছে আরহান ভুল । দটনায় পড়ে গেছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না কাউকে বলতেও পারছে না ।
হটাৎ নিজের নাম ধরে ডাকায় পিছনে ফিরে তাকায় নিশাত । সামনে ব্যাক্তিটি নিশাতের দিকে এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বলে
_” কেমন আছো নিশাত ? আরহান কেমন আছে ?
নিশাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।
চলবে
(