#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৩১||
নিশাত এগিয়ে গিয়ে ঈশা কে জড়িয়ে ধরে বলে
_”ইসু ঠান্ডা হো।এই দেখ আমি তোর আপি
ঈশা কিছুতেই থামছে না বার বার বলছে আমাকে মেরো না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
ঈশার কাজে নিশাত,আরহান, জয় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।নিশাত ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে জয়
আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে
_”আমি ঘুমিয়ে ছিলাম হটাৎ ঈশার চিৎকারে এসে দেখি ঈশা কান্না করছে আর ওই কথা বলছে
আরহান রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে বলে
_”এই সব ওই জানোয়ারদের জন্য হয়েছে ওরা ঈশা কে মারত সেইজন্য ঈশা এখনো সেই ঘটনা ভুলতে পারেনি।আমাদের ওকে সব সময় হাসি খুশি রাখতে হবে ।
জয় নির্বাক হয়ে বলে
_”এই টুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে ছাড়লো না।এত রাগ কেনো ?শুধু তোকে শেষ করার জন্য এত কিছু কেউ করতে পারে ছি
আরহান বাকা হেসে বলে
_”আরহান আবরার সাথে পাঙ্গা নিয়েছে এর পরিণাম খুব ভয়াবহ হবে। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ
নিশাত ঈশা কে শান্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখে।ঈশা নিশাতের বুকে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। নিশাত ঐভাবে ঈশা কে বুকে নিয়ে আধসোয়া হয়ে শুয়ে থাকে।জয় আর আরহান সোফায় গিয়ে বসে।
মাঝরাতের দিকে নিশাত ঘুমিয়ে পড়ে।জয় আর আরহান রুমের মধ্যে পাইচারি করছে।দুইজনের কারোর চোখে ঘুম নিয়ে পরবর্তীতে কি হবে তাই নিয়ে ভাবছে ।
সকাল হলে আরহান কফি করে জয়কে দেয়।ঈশা পিটপিট করে চোখ খুলে বুঝতে পারে কেউ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে।ঈশা উঠতে গেলে নিশাতের ঘুম ভেংগে যায়।ঘুম ঘুম কণ্ঠে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে
_”কিহলো উঠলো কেনো?শরীর খারাপ লাগছে?আমাকে বল কি হয়েছে ?
ঈশার উঠার চেষ্টা করে বলে
_”আমি ঠিক আছি আপু।ওয়াশরুমে যাবো
নিশাত উঠে ঈশা কে উঠতে সাহায্য করে ।কাল রাতে ঐভাবে শুয়ে থাকায় মাজায় ব্যাথা হয়েছে তবু ও ঈশা কে বুঝতে না দিয়ে আস্তে ধীরে ঈশা কে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।ঘরের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে আরহান কে খুঁজতে থাকে।
ঈশা ওয়াশরুম থেকে বের হলে ঈশা কে খাটে বসিয়ে নিশাত ফ্রেশ হতে যায়।
নিশাত বের হয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে
_”খুদা লাগছে?
ঈশা মাথা নাড়ায়।নিশাত ঈশা কে নিয়ে নিচে নেমে দেখে জয় আর আরহান রান্না ঘরের অবস্থা নাজেহাল করেছে ।
নিশাত কিঞ্চিৎ রেগে বলে
_”এটা কি করছো ?রান্না করছি নাকি সব কিছু নিয়ে খেলা করছো হুম?
নিশাতের কথায় জয় হাসার চেষ্টা করে।আরহান টমেটো জয়ের দিকে ছুঁড়ে বলে
_”সেটা এই গাধা কে বলো। একটু হেল্প করতে বলছি মশায় তো আমার কাজ বাড়িয়ে দিলো। আটা নামাতে গিয়ে আটার সাথে হলি খেলে আসছে।
নিশাত জয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই ঈশা হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে ।ঈশার হাসি দেখে আরহান আবার বলে
_”শুধু কি তাই মাছ ভাজতে দিয়েছি মাছ কয়লা বানিয়ে ফেলেছে ।এখন এটা নিয়ে আমি কি করবো।
জয় হাসার চেষ্টা করে বলে
_”ভাবী আমি কিছু করিনি।আটার বয়িম মেলা উপরে ছিল তাও আবার ঢাকনা ভালো করে না আটকিয়ে রাখছে আর মাছ তো ভুল করে হইছে
মাথা চুলকিয়ে কথাটা বলে জয়।আরহান মাথায় গাট্টা মেরে বলে
_”খুব কাজ করেছো আমার।এখনো সবজি কেটে উদ্ধার কর।
ঈশা হাসতে হাসতে বলে
_”ভাইয়া তোমরা দুইজনে রান্নায় লবডঙ্কা।
হাসতে হাসতে কথাটা বলে ঈশা।ঈশার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে নিশাত বলে
_”ঠিক বলেছিস এদের ভরসায় থাকলে আজ কপালে খারাপ জুটবে না তার থেকে শিরীন কে ডাকি
নিশাত ডাকতে গেলে আরহান বলে
_”শিরীন আজ নেই।ওর আজ ছুটি।
নিশাত মাথায় হাত দিয়ে বলে
_”হয়ে গেলো আজ আর খাওয়া হবে না।এখন তোমরা সং এর মত দাড়িয়ে না থেকে সরো আমাকে রান্না করতে দাও।
আরহান সামনে দাড়িয়ে বলে
_”নো ম্যাডাম আজ আমি রান্না করে খাওয়াব।এতক্ষণে বুঝছি এই সালার দিয়ে কিছু হবে না নিজেকেই সব করতে হবে
জয় মাথা চুলকিয়ে বলে
_”আমি পারি তো।আসলে কখনো করিনি
ঈশা রান্না করে গিয়ে বলে
_”ভাইয়া আগে নিজের চেহারা ঠিক করে আসুন।এভাবে কোনো মানুষ দেখলে ভুত ভেবে খাঁচায় বন্দী করবে।
ঈশার সাথে তাল মিলিয়ে আরহান বলে
_”ঠিক বলেছো শালীকা এমনি তো ভূতের মতো।আজ তো পাক্কা ভূতের রাজ্যের রাজা মনে হচ্ছে।
জয় নাক ফুলিয়ে বলে
_”শাট আপ গাইজ আমাকে এভাবে অপমান করিস না আজকে আমি নিজে তোদের রান্না করে খাওয়াবো।
ঈশা ভেংচি কেটে বলে
_”কাজের বেলায় নেই।কথার বেলায় ষোলআনা আছে
জয় এবার ছুরি নিয়ে সবজি কাটতে থাকে।নিশাত আর ঈশা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা দেখছে।
আরহান আর জয়কে দেখে হাসি পাচ্ছে।দুইজনে ঘেমে একাকার অবস্থা।
হাসি তামাশায় রান্না পালা শেষ হলে সবাই খেতে বসে।আরহান রান্না করেই সোফায় চিত পটাং হয়ে শুয়ে আছে।জয় গোসল করতে গেছে।
নিশাত ভেংচি কেটে বলে
_”একদিন রান্না করে এই অবস্থা।রোজ রোজ করলে কি হতো?
আরহান শুয়ে থেকে জবাব দেয়
_”ওরে আমার বউ রে কোথায় বাতাস করবে টা না খোটা দিচ্ছে।বুঝছি আরেকটা বিয়ে করতে হবে
ঈশা মুখ টিপে হাসছে।নিশাত গাল ফুলিয়ে বলে
_”করো বিয়ে।কে বারণ করেছে?আমিও হ্যান্ডসাম জামাই বিয়ে
বাকিটা বলতে পারে না আরহানের দিকে চোখ যেতেই চুপ হয়ে যায়। আরহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিশাতের দিকে। নিশাত আমতা আমতা করে বলে
_”আমরা খেলাম।
ঈশা কে বসিয়ে নিশাত খাইয়ে দেয় আর নিজে খায় জয় এসে বলে
_”এটা কি হলো কষ্ট করে রান্না করলাম আমরা আর একা একা খেয়ে নিচ্ছে এরা।বাহ জনগন বাহ
আরহান যোগ দিয়ে বলে
_”রাক্ষসী একটা।দেখ কিভাবে খাচ্ছে।ওরে আস্তে খাও খাবার পালিয়ে যাচ্ছে না
নিশাত ভেংচি কেটে বলে
_”এটা কোনো খাবার হলো।just খেতে হয় বলে খাচ্ছি নাহলে পাগলে ও খেত না।বেশি কথা বললে আজকে তোমাদের খাওয়া বন্ধ।
আরহান জয়কে ধরে বলে
_”ভাই এই রাক্ষসীর হাত থেকে আমাকে বাচা।কোন দিন না আমাকে খেয়ে ফেলে।
জয় আরহানের পিঠে চাপড় মেরে বলে
_”তোর কপালে এটাই হওয়া ভালো।সেইসময় আমার নামে কি সব বলছিলি এখন আমি ভাবী কে বলবো
_”তুই আমার বন্ধু হতে পারিস না।আমি জানতাম তুই বাটপার আর প্রমাণ পেলাম
নিশাত জয় কে বলে
_”তুমি ওর কথা শুন না।খেতে আসো।ওর মাথার তার ছিড়া
জয় হাসতে হাসতে খেতে বসে।আরহান বেকুবের মত দাড়িয়ে থাকে
ঈশা হাত ধরে বলে
_”ভাইয়া তুমি আসো আমি খেতে দিচ্ছি।কত কষ্ট করেছো।
আরহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_”তুমি আমার কষ্টটা বুঝলে আর সবাই আমার শত্রু
জয় নিশাত হেসে দেয়।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে সালেহা বেগম গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে।হটাৎ রাস্তায় কিছু লোক কালো পোশাক পড়া।সালেহা বেগম কিছু না ভেবে গাড়ি দাঁড় করায়
কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকগুলো সাহেলা বেগমের মুখে রুমাল দিয়ে সেন্সলেস করে ফেলে।
লোকগুলোর মধ্যে একজন কাউকে ফোন করে বলে
_”স্যার উনাকে আমি কি গোডাউনে নিয়ে যাবো?
ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে লোকটা ফোন কেটে দেয়।
সালেহা বেগম কে উঠিয়ে গাড়িতে নিয়ে কোথায় একটা চলে যায়।
নিশাতের মাজার ব্যাথা বেড়েছে। হট ওয়াটার ব্যাগ মাজায় দিয়ে উবর হয়ে শুয়ে আছে আর ঈশা নিশাতকে গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে।
আরহান আর জয় বাইরে গিয়েছে।যাওয়ার আগে কড়া করে বলে গিয়েছে যেনো নিশাত খাটের থেকে না নামে।নিশাত মন খারাপ করে বসে ছিল দেখে ঈশা গল্পের বই পড়ে শুনাচ্ছে ।নিশাত ও কিছু বলে না এতে ঈশার মন ব্যাস্ত থাকবে।
ঈশা গল্পটা শেষ করে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে
_”আপু তোর ব্যাথা কি কমছে ?
নিশাত মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে
_”হা একটু কমছে।তুই চিন্তা করিস না এখন একটু ব্যাথা হবেই।
_”আপু তোর দুইটা বেবি হলে বেশি ভালো হবে।আমি সারাদিন দুইটা কে নিয়ে খেলবো।একটা ঘুমালে আরেকটা নিয়ে খেলবো।
নিশাত চোখ বন্ধ করে ঈশার কথা শুনছে।ঈশা এটা সেটা বলে যাচ্ছে আর নিশাত চুপচাপ শুনছে।
অন্ধকার কক্ষে সালেহা বেগম বেধে রাখা হইছে।এখনো সেন্স ফিরেনি।সামনে চেয়ারে একজন বসে সালেহা বেগম কে পর্যবেক্ষণ করছে ।
কাউকে ইশারা করতে একজন ব্যাক্তি সালেহা বেগম এর মুখে এক বালতি পানি ঢেলে দেয়। ধরপরিয়ে উঠে সালেহা বেগম ঝাপসা চোখে সামনের থাকা ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে ।
সেন্স হারানোর আগের কথা মনে উঠতেই চিল্লিয়ে বলে
_”এই তোরা কে রে ?আমাকে এখানে এনেছিস কেনো?তোরা জানিস আমি তোদের কি হাল করতে পারি?ভালো ভাবে বলছি আমাকে ছেড়ে দে আমার স্বামী জানলে তোদের খবর আছে। ছার বলছি
বাঁধন খুলে চেষ্টা করতে করতে বলে বলে সালেহা বেগম।সামনে থাকা ব্যাক্তিটি উচ্চস্বরে হেসে উঠে।তার হাসির শব্দ রুমটায় প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।
সালেহা বেগম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে।সামনে থাকা ব্যাক্তিটি নিজের হাসি থামিয়ে হুংকার দিয়ে বলে
_”কার পাওয়ার এত বড় বড় কথা বলছেন মিসেস সালেহা বেগম?আমজাদ হাবিব কি সত্যি আপনার স্বামী?নাকি আপনি তার
বাকিটা শেষ করার আগে সালেহা বেগম বলে
_”তোকে কে বলেছে এইসব কথা?সাহস থাকলে সামনে আয়।আমি ও দেখতে চাই তোকে
সামনের ব্যাক্তিটি বাকা হেসে বলে
_”খুব তাড়াতাড়ি আসবো।যেদিন আপনার পাপের কলসি পূর্ণ হবে সেইদিন।
কথাটা বলে ব্যাক্তিটি চলে যায়।সালেহা বেগম চিৎকার দিয়ে বলছে আমাকে ছেড়ে ছেড়ে দে।
কিছুক্ষণ পর কিছু লোক এসে সালেহা বেগম কে মুখে রুমাল দিয়ে সেন্সলেস করে।
সালেহা বেগম যখন চোখ খুলে নিজেকে বিছনায় আবিষ্কার করে পাশে আমজাদ হাবিব কে বসে থাকতে দেখে চিৎকার করে বলে
_”আমি এখানে কি করে আসলাম ?
আমজাদ হাবিব অবাক হয়ে বলে
_”কি আবোল তাবোল বলছো তুমি তো এখানে ছিলে
সালেহা বেগম বিছনা থেকে নেমে বলে
_”না আমি এখানে ছিলাম না।আমাকে তো কিডন্যাপ করা হইছিলো তাহলে আমি এখানে কি করে আসলাম?
আমজাদ হাবিব নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত দিয়ে বলে
_”তোমার শরীর ভালো নেই তাই হয়তো খারাপ স্বপ্ন দেখেছ।শুয়ে পরো
সালেহা বেগম নিজের মাথায় হাত দিয়ে সবটা মনে করার চেষ্টা করে।
নিশাত ঘরে বসে বসে ক্লান্ত হয়ে গেছে।আরহান কে বার বার বলছে বাইরে নিয়ে যেতে কিন্ত সে ল্যাপটপ নিয়ে ব্যাস্ত।
ঈশা ঘুমিয়ে গেছে ওষুধের জন্য ঘুম আসছে।নিশাত কিছুক্ষণ বসে থেকে নিচে গিয়ে টিভি দেখতে থাকে।
এই চ্যানেল থেকে ওই চান্নেলস ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ এই নিশাতের চোখ আটকে যায় একটা নিউজের দিকে।
টিভির জোর দিয়ে খবরটা শুনতেই চোখ কপালে উঠে যায়।চিৎকার দিয়ে আরহান কে ডাকে।
আরহান ঈশা দুইজনে ছুটে আসতেই নিশাত ইশারা করে টিভির দিকে তাকাতে বলে।
নিউজে বলা হচ্ছে
আজকের চাঞ্চল্যকর খবর হচ্ছে প্রফেসর আমজাদ হাবিবের স্ত্রী সালেহা বেগম জানিয়েছেন যে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তিনি এ ও বলেন যে তার ছেলেকে ও নাকি খুন করা হয়েছে।এক মাসে আগে তার ছেলে মারা যায় এটা মিডিয়ায় না আসলে ও সালেহা বেগম এর কিডন্যাপের খবর ছড়িয়ে পড়ে।তিনি পুলিশের কাছে নিজের আর নিজের স্বামীর নিরাপত্তার জন্য অনুরোধ জানান।কিন্ত সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো তার স্বামী আমজাদ হাবিব বলেন এরকম কোন কিছু হয়নি সবটা তার স্ত্রী ভ্রম মাত্র। পারিস তিনি নিজেকে একমাত্র ছেলের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেনি বলে এরকম পাগলামি করছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের চ্যানেলের সাথে থাকুন।
নিশাত আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে
_”আম্মু এই সব কি বলছে ? কি হয়েছে উনার
আরহান টিভির দিকে চোখ রেখে বলে
_”আই ডোন্ট হ্যাভ এনি আইডিয়া।
নিশাত তাড়াতাড়ি আমজাদ হাবিব কে ফোন করে।দুই বার ফোন করতেই ওপাশ থেকে ব্যাস্ত কণ্ঠে আমজাদ হাবিব বলে
_”হ্যালো প্রফেসর আমজাদ হাবিব স্পিকিং
নিশাত কিছু বলার আগেই সালেহা বেগমের চিৎকার কানে আসে।
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৩২||
সালেহা বেগম চিৎকার করে বলছে
_”আমাকে মেরে ফেলবে।তোমরা আমার কথা কেনো বিশ্বাস করছো না।এই যে দেখো আমাকে মেরেছে।দেখো দেখো
নিশাত হতবম্ব হয়ে যায় কি বলবে বুঝতে পারছেনা।ওপাশ থেকে আমজাদ হাবিব বলে
_”সরি আমি পরে কথা বলছি।
কথাটা বলে আমজাদ হাবিব কেটে দেয়।নিশাত আরো কয়েকবার কল করে কোনো লাভ পায় না। ছোট ছোট চোখ করে আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে
_”আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিৎ।আম্মু কেমন পাগলামি করছিলো।আমি তো কিছু বুঝছি না।হটাৎ আম্মুর কি হলো সেদিন তো দেখলাম খুব ভালো আছে তাহলে?
নিশাত চোখের কোণে পানি চলে আসছে। কোন ছোট বেলায় মা মারা গেছে।সালেহা বেগমের মধ্যে নিজের মা কে খুজে পেয়েছিল আজ তার এই অবস্থা কিছুতেই মানতে পারছে না নিশাত।
আরহান এগিয়ে এসে নিশাতের গালে হাত রেখে বলে
_” মূল্যহীন সম্পর্কে মূল্যায়ন খুঁজতে যাওয়া বোকামি।আর আমার নিশা কে কেউ বোকা ভাববে সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না।
নিশাত কি বুঝলো কে জানে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আরহানের দিকে।আরহান চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বলে
_”এই ছোট মাথায় ওতো কিছু ঢুকানোর দরকার নেই।তুমি শুধু নিজের কথা ভাবো আর এই টিভি
নিশাত কে রেখে টিভির দিকে গিয়ে ডিসের লাইনের তার কেটে দেয়। নিশাত অবাক হয়ে বলে
_”এই তুমি কি পাগল হলে কি করছো?
আরহান মুচকি হেসে বলে
_”আমার বউয়ের টেনশন কেটে দিলাম।তোমার টেনশন মানে আমার টেনশন।বউ মানে আমি।আমি মানে বউ।তাহলে বউয়ের টেনশন আমার হলো।ব্যাপারটা এক না।
নিশাত নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলে
_”উফফ আমার মাথা ধরে যাচ্ছে তোমার কথায়।এত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কথা বলো বাবা গো।
কথাটা বলে নিশাত রান্না ঘরের দিকে যায়।আরহান মুচকি হেসে জয়কে ফোন দেয়।
দুইবার রিং হতেই জয় ফোন ধরে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে
_”হ্যালো কে বলছেন?
আরহান ধমক দিয়ে বলে
_”এখন তোর ঘুমানোর সময়?রাতে কি করেছিস ?
আরহানের ধমকে জয়ের ঘুম হাওয়া।বিছানা থেকে উঠে বলে
_”হা বল।কি খবর?
আরহান বাকা হেসে বলে
_”খেলা তো জমে গেছে।যেমন টা চাইছিলাম তেমনি হচ্ছে।এখন দেখার পালা কত দিন নিজের কুকীর্তি লুকিয়ে রাখে।
_”নেক্সট প্ল্যান কি?
_”আজকে রাতে কাজটা করতে হবে।তাহলে অর্ধেক কাজ শেষ। অনেক উড়া উড়েছে এখন পাখা কাটার পালা। বাই হুক বাই ক্রুক সবাই কে সবার অপরাধের শাস্তি দেবই।
_”ওকে।তাহলে আমি আসছি তোকে নিতে।
_”হুম আসিস নাহলে এই মহারানী বাইরে যেতে দেবে না।
জয় হাসতে হাসতে ফোন কেটে দেয়।আরহান ফোন কেটে ঈশার কাছে গিয়ে গল্প করতে থাকে।
নিশাত রান্না করছে।ঈশার ফেভরেট লুচি আলুর দম রান্না করছে সাথে আরহানের পছন্দের গাজরের হালুয়া।
নিশাত রান্নার মাঝে চুল এসে সামনে পড়ছে।নিশাত চুলের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে ।
আরহান নিশাত কে এদিক সেদিন তাকিয়ে খুঁজছে।নিচে নেমে রান্না ঘরের দিকে চোখ যেতেই দেখে নিশাত চুলের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে ।
আরহান হেসে নিশাতের কাছে যেতেই নিশাত চিল্লিয়ে বলে
_”তুমি এখানে কি করছ?ঈশা একা আছে না? যাও ওর কাছে যাও
আরহান নিশাতের কোমর জড়িয়ে বলে
_”ঈশা অনলাইনে ড্রেস দেখছে।তো এই মহারাজ কি তার রানীর কোনো সাহায্য করতে পারে?
নিশাত কেনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে বলে
_”মহারাজ কি আটা মাখতে পারবে ?
নিমিষেই আরহানের মুখ চুপসে যায়। আড় চোখে তাকিয়ে বলে
_” এমনি মহারাজ না রাজকুমার এর মহারাজ।
আরহান চলে যেতে গেলে নিশাত হাত ধরে আটকে দেয়।আরহান তাকাতেই নিশাত চোখ দিয়ে আটা মাখতে বলে।
আরহান মুখটা ছোট করে বলে
_”করতেই হবে?
নিশাত মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়।আরহান আটা মাখতে শুরু করে ।নিশাত রান্না করছে আর আড় চোখে আরহানকে দেখে নিচ্ছে ।
ঈশা ড্রেস দেখতে দেখতে নিচে নেমে ওদের দেখে সোফায় বসে।দরজায় বেল পড়তে ঈশা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
জয় এসেছে।ঈশা কে দেখে জয় মুচকি হাসে বলে
_”কেমন আছো?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে বুঝায় তাই দেখে জয় ভ্রু কুচকে বলে
_”কথা বলতে পারো না?
ঈশা বেকুব হয়ে তাকিয়ে থাকে।জয় আবার বলে
_”কিহলো?কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে ?
_”পারি তো
_”তাহলে মুখে না বলে ইশারা করছো কেনো?
_”এমনি।
জয় ভিতরে আসতে আসতে বলে
_” আরহান কোথায়?
ঈশা দেখিয়ে বলে
_”ভাইয়া রান্না ঘরে।
জয় আরহানকে দেখে বলে
_”বাহ বাহ! পার্মানেন্ট রান্না শুরু করে দিলে নাকি?
আরহান অসহায় মুখ করে বলে
_”ভাই বাঁচা আমাকে।এই রাক্ষসী দেখ আমার অবস্থা নাজেহাল করে দিয়েছে।
জয় হাসতে হাসতে বলে
_”ঠিক হইছে ।
_”তোকে আমি পরে দেখছি।
নিশাত পাশ থেকে বলে
_”এত দিন দেখে ও হয়নি?যা দেখার পরে দেখো এখন আমার হেল্প করো
আরহান দাতে দাত চেপে বলে
_”এবার বুঝছি সবাই কেনো বারণ করে বিয়ে করতে।
নিশাত আড় চোখে তাকাতেই আরহান হাসার চেষ্টা করে বলে
_”ঈশা তোমার ড্রেস পছন্দ হইছে ?জয় সব গুলো অর্ডার করে দে তো
জয় ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে
_”দেখি কোন ড্রেস পছন্দ করেছ?
ঈশা ফোন এগিয়ে দিতেই জয় মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে ।
_”এর থেকে এইটা বেশি ভালো।
_”না আমি যেইগুলো বলেছি ওইগুলো ভালো।
_”বাচ্চা মানুষ ওতো জেদ করতে নেই।
ঈশা নাক ফুলিয়ে বলে
_”আমি বাচ্চা না।
জয় মাথাটা ঈশার মুখের কাছে নিয়ে বলে
_”তাহলে কি বাচ্চার মা?
ঈশা রেগে তাকায়।নিশাত লুচি ভাজতে ভাজতে বলে
_”তোমরা বসো আমি নিয়ে আসছি।
ঈশা রেগে গিয়ে সোফায় বসে।জয় হাসতে হাসতে সামনের সোফায় বসে।
১সপ্তাহ পর
আরহান ল্যাপটপে কাজ করছে জয় পাশে বসে দেখছে ।জয় নিশাত দের সাথে থাকে।ঈশা আর নিশাত এক সাথে আর জয় আরহান এক সাথে।ঈশা আবার কলেজে যাচ্ছে।নিশাত আর আরহান ঈসাকে আবার আগের মত করেছে।
আরহান ল্যাপটপ রেখে নিশাত কে ডাক দেয়।নিশাত দৌড়ে এসে বলে
_”হা কি হইছে এভাবে চিল্লাচ্ছ কেনো?
আরহান ভ্রু কুচকে বলে
_”তোমাকে দৌড় দৌড়ি করতে বারণ করছি না? যাই হোক চলো নিউজ দেখবে
নিশাত কিছু বলার আগেই আরহান নিশাতকে নিজে সোফায় বসায়। জয় আর ঈশা ও আছে।
আরহান টিভি অন করতেই নিউজ আসে।সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।
_”এই মুহুর্তের ব্রেকিং নিউজ প্রফেসর আমজাদ হাবিব এর স্ত্রী সালেহা বেগম।যিনি নিজে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার তিনি আমজাদ হাবিবের একমাত্র সন্তান আরহান আবরার কে খুন করেছেন।তার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ পুলিশের কাছে আছে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করার আগেই মিসেস সালেহা বেগম সব স্বীকার করেন।ঘটনা সূত্রে জানা গেছে আমজাদ হাবিবের একমাত্র সন্তান আরহান আবরার সালেহা বেগম এর সতীনের সন্তান।জি আমজাদ হাবিবের প্রথম স্ত্রীর ছেলে আরহান আবরার।মূলত নিজের সতীনের সন্তান কে সহ্য করতে না পেরে মারার চেষ্টা করে।আরো বিস্তারিত জানানো হবে ভিডিও ক্লিপে যেখান মিসেস সালেহা বেগম সকল কথা স্বীকার করেছেন।ভিডিও চালু করা হলো
নিশাত সহ সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে টিভির স্ক্রিনে।আরহানের মুখে বাকা হাসি যেনো সে আগে থেকে জানতো এমন কিছু হবে।
জয়ের দিকে তাকাতেই আরহান চোখ মারে।জয় মুচকি হেসে টিভির দিকে মনোযোগ দেয়।
সালেহা বেগম মাথায় হাত দিয়ে আছে সামনে প্রেস পিডিয়া আছে।এই কয়দিনে সালেহা বেগমের চেহারার নাজেহাল অবস্থা হয়েছে।আগের মত উজ্জলতা নেই।চোখের নিচে কালো দাগ চুল গুলো উস্কোখুস্কো হয়ে আছে। নিজেকে পরিপাটি রাখা মানুষটার এই অবস্থা দেখে নিশাতের খারাপ লাগলো।
সব অনুভূতি সাইডে রেখে টিভির দিকে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকে নিশাত।
সালেহা বেগম কে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে ।নিজেকে যথাযত ঠিক রেখে তিনি বলেন
_”হা আমি আরহান কে মারার চেষ্টা করেছি।
সালেহা বেগমের কথায় একজন সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেন
_”মারার চেষ্টা করেছেন মানে? আমরা ঠিক বুঝলাম না ।আরহান আবরার তো বেচে নেই।
সালেহা বেগম সোজা হয়ে বলে
_” হা মারার চেষ্টা করেছি ।আরহান বেচে আছে।আমাকে মারার জন্য ফিরে আসছে।আমাকে মেরে ফেলবে ।
সালেহা বেগম এর মুখে আতঙ্কের ছাপ। মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে খুব ভয় পেয়ে আছে ।নিজের চোখে পানি মুছে বলে
_”আমার স্বামী আমজাদ হাবিব এর প্রথম স্ত্রী ক্যান্সারে মারা যায়।আমি ছিলাম আমার স্বামীর অফিসের পি এ। আমার একটা ছিল হবার পর আমার প্রথম স্বামী আমার সন্তান আর আমাকে ছেড়ে চলে যায়।নিজের একমাত্র সন্তান কে নিয়ে চাকরি করে ভালোই চলছিল।আমজাদ হাবিব প্রায়
আরহান কে অফিসে নিয়ে আসতেন।আরহান আর ইমন (সালেহা বেগম এর সন্তান) তখন ছোট ছিল।দুইজন খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়।সেই কারণে আমজাদ হাবিব আমাকে প্রায় উনার বাসায় ইমন কে নিয়ে যেতে বলতেন এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়।একদিন হটাত আমজাদ হাবিব আমাকে বিয়ে পস্তাব দেয় আর বলে আমার ছেলের সব দায়িত্ব নেবে বিনিময়ে আরহান কে মায়ের ভালোবাসায় বড়ো করতে হবে।
আমি নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যাই।ইমন আর আরহান কে আমি আলাদা করে দেখতাম না।দুইজনকে খুব ভালোবাসতাম কিন্ত বিপত্তি ঘটলো আরহানের জেদ।
এইটুকু বলে সালেহা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠেন।
চলবে
(