#কোনো_এক_বসন্তে
#Khadija_Akter
#পর্ব_০৩
আমি আম্মুকে সরাসরি জানিয়ে দিলাম,
–“এই বিয়ে আমি মানি না।করবো না বিয়ে আহিল ভাইকে।”
আম্মু আর খালামনি আবারও রাতের মতো দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হাসলেন আমার কথা শুনে।আম্মু হাসতে হাসতে খালামনিকে বললেন,
–আরেহ্ বাচ্চা তো তাই এমনটা বলছে।
যাই বলিস না কেনো সোহেলী,দুটোতে পাশাপাশি কিন্তু বেশ মানায়।
–আম্মু, আমি বাচ্চা?আমাকে বাচ্চা মনে হয় তোমার?
–ওলে লে,আমার সোনা মেয়েটাকে বাচ্চা বললি কেনো রে তুই রাহেলা!কত্ত বড় হয়ে গেছে আমাদের ছোট্ট মেয়েটা!তাইতো এবার বিয়ে দিয়ে আমার ঘরে আনতে চাইছি।
সোহেলী খালামনি আমার মাথাটা টেনে নিয়ে কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন।তারপর দুই বান্ধুবী মিলে হাসতে হাসতে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন।
আর এদিকে আমি ঝিম মেরে বসেই আছি চুপচাপ।আম্মু আর খালামনি তো দেখি আমার মতামতের কোনো তোয়াক্কাই করছে না।
যদি সবাই মিলে আমাকে জোর করে সত্যি সত্যি বিয়েটা দিয়েই দেয় আহিল রোবটের সাথে!
চোখ বুঝে একবার আহিল ভাইকে নিজের স্বামী হিসেবে কল্পনা করতে চেষ্টা করলাম।
“একটা গুরুগম্ভীর ছেলে,যিনি কথা বলবেন খুব মেপে মেপে।বেশির ভাগ সময়েই চোখের ইশারায় মুখের ভাষা প্রকাশ করে ফেলবেন!হাসবেন পরিমিত,বেশি হাসলে আবার দাঁত পড়ে যাবার ভয় আছে কিনা তাই!
কাজের খাতিরে এই লোকটি সারাদিন বাহিরে বাহিরে থাকবেন,যেটুকু সময় বাসায় থাকবেন ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পড়ে থাকবেন।
কেউ ভালো কথা বলতে নিলেও তিনি ভ্রু কুঁচকে বক্তার দিকে চেয়ে থাকবে।কখনো কখনো তো আবার তাকাবার প্রয়োজন ও মনে করবেন না।
মানুষটিকে পাঁচটা কথা বললে একটা কথার জবাব দিবেন,যদি পারেন তো জবাব টা ” হুম” বা “না” এর মাধ্যমে দিয়ে বেঁচে যেতে চাইবেন।
কথায় কথায় অর্ডার দিবেন,এই তনু এটা কর,ঐটা কর,এখানে যাওয়া যাবে না,ওখানে যাওয়া নিষেধ!
বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না,জ্বর আসবে।শীতকালে আইস্ক্রীম খাওয়া যাবে না,সর্দি লাগবে।
গভীর রাতে ঘুম নষ্ট করে জ্যোৎস্না দেখলে কি পেট ভরে নাকি!
মেলায় যাওয়া আবার কারো শখ হয় নাকি রে;ধুর ঐ ভীড়ের মধ্যে যেতে হবে না।মেলায় কি মানুষ যায়!
রাস্তার পাশের ফুচকা!নাহ্ নাহ্ অস্বাস্থ্যকর জিনিস এগুলো!
গাড়ি থাকতে রিকশায় চড়বি কেন রে?আ্যঁ!রিকশায় চড়ার মাঝে আবার আলাদা আনন্দ! কই রে আনন্দ তো দেখি না,রিকশা দিয়ে যেখানে যাবি,গাড়ি দিয়ে তো সেখানেই যাবি!
আবার দিনশেষে এই রসকষহীন আনরোমান্টিক বুইড়া ব্যাটাটা আমার পাশেই ঘুমাবে!
না,না,না এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
তাড়াতাড়ি চোখ খুলে কল্পনার রাজ্য থেকে ফিরে আসলাম।যে করেই হোক আহিল ভাইয়ার সাথে বিয়েটাআমাকে আটকাতেই হবে।
উঠে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করতে চলে আসলাম।আমার আগেই সবাই চলে এসেছে নাস্তা করতে।
আহিল ভাইয়াকে মাথা নিচু করে খাচ্ছিল।আমাকে আসতে দেখে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবারও নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন তিনি।ভাবসাভ দেখে এমন ভদ্র ছেলে মনে হয় যেনো ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানেন না!এদিকে আমাকে বিয়ে করার প্ল্যান করে বসে আছে!
রোবট হয়ে তনয়াকে বিয়ের শখ আমি মিটাবো মিঃআহিল,শুধু অপেক্ষা করেন।
খাবার টেবিলে সাইকা আমাকে বেশ কয়েকবার চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতে চাইলো,কিন্তু আমি একবারও বুঝলাম ও কি বুঝাতে চাইছে।তবে এটা বুঝলাম য, কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে ও খুব এক্সাইটেড।
খাওয়া শেষ হতেই সাইকা আমাকে টেনে নিয়ে গেল ওর রুমে।তারপর খুশিতে পাজাকোলা করে জড়িয়ে ধরে টগবগ করে বললো,
–তনয়া রে…..কংগ্রেচুলেশনস!আহিল ভাইয়ার মতো ওয়াও লেভেলের হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোর হাসবেন্ড!আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না!উফফ,তোর কি ভাগ্য রে!
কিন্তু তোর প্রতি আমার খুব রাগ কিন্তু তনয়া,তুই আমার ভালো বন্ধু হয়েও আগে কেনো বলিসনি তুই আর আহিল ভাইয়া যে হাসবেন্ড-ওয়াইফ!এত্তো বড় একটা খবর তুই আমার কাছে লুকাতে পারলি!
কথা বলতে বলতে সাইকা কপট অভিমানে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।
আর এবার আমি বুঝলাম,খাবার টেবিলে বসে সাইকার এতো উত্তেজনার কারণ।
তারমানে খালামনি আর আম্মু অলরেডি বাসার সবাইকে এটা বলে দিয়েছে!আমি যে বললাম,”আমি রাজী না এই বিয়েতে” সেটা কিছু না!
আমি সাইকাকে জোর করেই আমার থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
–দেখ,আমি আহিল ভাইয়ের প্রতি মোটেও ইন্টারেস্টেড নই।আর তোরও এতো খুশি হওয়ার কারণ নাই,কারণ আমি আহিল ভাইকে বিয়ে করছি না।
–ইশ বিয়ে করছি না মানে কি রে!করেই তো বসে আছিস।আর এতো ন্যাকামি করবি না তো।মুখে মুখে তো ঠিকই বলিস আহিল ভাইকে তোর সহ্য হয় না। আবার এদিকে তো ঠিকই ডুবে ডুবে জল খাচ্ছ।
সাইকা আর আমি দুইবোন সমবয়সী হওয়ায়,দুজন দুজনার খুব ভালো বন্ধুও।সব কথা শেয়ার করি একে অপরকে।অনেক মজাও করি।কখনো কোনো ব্যাপার সিরিয়াসলি নেইনি।কিন্তু আহিল ভাইয়ের সাথে আমাকে জড়িয়ে কথা বলায় এখন খুব সিরিয়াসলি রাগ উঠে গেল আমার।
–শাট-আপ সাইকা।মুখ সামলে কথা বল।
আহিল ভাই শুধুই আমাদের কাজিন,এর বেশি কিছু না।
আমি কখনো উনাকে উন্য নজরে দেখিনি।আর বিয়ের ব্যাপারটাও আজকেই জানতে পারলাম।
ছোট বেলায় ভালোমন্দ কিছু বুঝি না যখন,তখন যদি আমাকে বিয়ে দিয়েও থাকে, মানি না এখন আমি ঐ বিয়ে।
ভালো হয়,এই ব্যাপার নিয়ে আমাকে আর ঘাটাইস না।
আমার হঠাৎ রেগে যাওয়ায় সাইকা ফাটা বেলুনের মতো একদম চুপসে গেল।আমি আর কিছু না বলেই ওর রুম থেকে মেজাজ দেখিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
আজকাল আমার সাথে সবকিছু এমন উল্টাপাল্টা হচ্ছে কেন বুঝলাম না।যা কিছু হচ্ছে সবই খারাপ হচ্ছে।আমিও অল্পতেই রেগে যাচ্ছি!
ভাবলাম ছাদে গিয়ে ঠান্ডা হাওয়া খেয়ে মনটা একটু ফ্রেশ করে আসি।সিঁড়িতে পা রাখতেই “ভাবী,ভাবী” ডাক শুনে আমি থমকে দাঁড়ালাম।পিছনে তাকাতেই দেখলাম “ভাবী,ভাবী”
করে ডাকতে ডাকতে আয়রা আমার দিকে ছুটে আসছে।
আয়রাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি।দেখতে ও একদম পুতুলের মতো মিষ্টি একটা মেয়ে।
কিন্তু ও ভাবী ডাকছে কেন!আয়রা তো আমাকে সবসময় আপ্পি ডাকে।
আয়রা কাছে আসতেই আমি ওর গাল টেনে দিয়ে বললাম,
–কি ব্যাপার আয়রা!আপ্পিকে ডাকছো কেন?ছাদে যাবে আমার সাথে?
–ভাবী, তোমাকে আমার ভাইয়া ডাকে।
–আয়রা,ভাবী কেন ডাকছো আমায়!আমি তো তোমার তনয়া আপ্পি।
–“আমি জানি,তুমি এখন আর তনয়া আপ্পি না।
তুমি আমার ভাইয়ার বউ।ভাইয়া বলেছে,এখন থেকে তোমাকে ভাবী বলে ডাকতে।”
।
কথাটা বলেই ছোট্ট আয়রা মুখ খুশিতে ঝলমল করে উঠে।সে আমার হাতটি তার ছোট্ট দুহাতের মধ্যে নিয়ে ঝাঁকাতে থাকে আর ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো,
–তুমি তো খুউউব ভালো আপ্পি,আমার ভাইয়াও খুউউব ভালো।তুমি ভাইয়ার বউ হলে,আমি খুব খুশি।
তুমিও আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যাবে তো ভাবী?আমরা দুজন একসাথে থাকতে পারবো।অন্নেক মজা হবে তাইনা ভাবী?
আয়রার মুখে “ভাবী” ডাকটা শুনতে আমার অস্বস্তি লাগলেও আয়রাকে আমি কিছুই বলতে পারলাম না।এই ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটিকে কিছু বলাও যায় না।আমার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো আহিল ভাইয়ের উপর।
উনার সাহস হয় কি করে আমাকে ‘ভাবী’ ডাকতে বলে আয়রাকে!
আয়রাকে ড্রয়িং রুমে রেখে আমি হনহন করে আহিল ভাইয়ার রুমের দিকে গেলাম।আম্মু বা খালামনিকে কিছু বলে কাজ হবে না জানি,যা বলার আহিল ভাইকেই বলতে হবে।তবেই যদি উনি বিয়েটা ভাঙেন।
রুমে কোথাও দেখতে পেলাম না আহিল ভাইকে,গেল কই!
ব্যালকনিতেও চেক করে দেখতে না পেয়ে চলে আসতে যাব,তখনি বাথরুম থেকে আহিল ভাই ডেকে বললো,
–তনু এদিকে আয় তো!
–এদিকে কোনদিকে?বাথরুমে?
–হু,আয়।
–আমি বাথরুমে যাব?
–তবে আর বলছি কি?
–না,না।আপনি কি বলবেন বলেন,আমি এইখান থেকেই শুনছি।
আর আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে,আপনি বেরিয়ে আসেন তাড়াতাড়ি।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও বাথরুম কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না।
কি ব্যাপার রোবটটা আবার বাথরুমেই ঘুমিয়ে পড়লো নাকি!
আমি কান পাতার জন্য বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে গা টা দরজার সাথে যেই না এলিয়ে দিলাম অমনি ধাম করে বাথরুমের ফ্লোরে গিয়ে পড়লাম।
আসলে বাথরুমের দরজার ছিটকিনি লাগানো ছিল না।আর আমি সেটা খেয়াল না করেই শরীরে সমস্ত ভার দরজার উপর রেখে কান পাততে গেছিলাম।ফলশ্রুতিতে এখন ভেজা ফ্লোরে জামাকাপড় লেপ্টে পড়ে আছি।
”হা হা” অট্টহাসি কানে আসতেই আমি নিচে পড়ে থেকেই মাথাটা তুলে উপড়ের দিকে তাকালাম।
আহিল ভাই দাঁত বের করে হাসছেন,আমার দিকে চেয়ে।হাসির দমকে উনার মুখ আর কান ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে।
আহিল ভাইয়ের হাসি দেখে প্রথমে তো আমি অবাক হলাম,আহিল ভাই হাসতেও জানে!
কিন্তু সাথে সাথেই নিজের পরিস্থিতিটা মনে হতেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।
আমি যাচ্ছেতাই ভাবে পড়ে গেছি আর এটা দেখে তিনি হাসছেন।একদিকে লজ্জাও লাগলো আবার অন্যদিকে আমার মেজাজটাও বিগড়ে গেলো।
–এখানে হাসার কি হলো! আশ্চর্য তো…হুহ।
মুখটা কালো করে যেই না উঠতে যাব,অমনি আবারও কাপড় কাঁচা সাবানের ফ্যানায় হাতটা পিছলে গিয়ে চার হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে শরীরটা আরও বেশি প্রসারিত করে পড়ে গেলাম।
আহিল ভাইয়ের সামনে দুই দুইবার এভাবে বিচ্ছিরিভাবে পড়ে গিয়ে লজ্জায় এবার আমার কান্নাই চলে আসলো।
মাথাটা এবার ডানকাত করে ফ্লোরের সাথে মিলিয়ে দিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলাম।
এদিকে আহিল এতোক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে।সচারাচর সে এতো হাসে না,কিন্তু আজ কেনো জানি নিজের অজান্তেই হাসি চলে আসলো।তবে এভাবে হাসাটা যে তার মোটেও উচিত হয়নি তা সে বেশ বুঝতে পারলো।
নিজেই ধরে তনুকে উঠালো সে।তারপর আমতা আমতা করে বললো,
–তনু,আই’ম স্যরি।আসলে আমি হাসতে চাইনি কিন্তু…
এইটুকু বলেই আহিল আবারও “হা হা” করে হেসে উঠে। আর হাসি আটকাতেই সে অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয় সাথেসাথেই।
আমি কড়াচোখে আহিল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ কালো করে বাথরুম থেকে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম।
আসতে আসতে পিছনে আহিল ভাইয়ার গলা শুনতে পেলাম,
–তনু,যে জন্য তোকে ডেকেছিলাম… শার্টের এই দাগটা উঠাতে পারছি না।তুই একটু চেষ্টা করে দেখ না।আর হাসবো না,আয় প্লিজ….।
আহিল ভাইয়ার রুম থেকে আমার রুমে যেতে হলে মাঝখানে ড্রয়িংরুমটা পড়ে।
ড্রয়িংরুমে বসে আম্মা,খালামনি,চাচী,ফুফু,সাইকারা খোশগল্পে মেতেছিল,এই সুযোগে আমি তাড়াতাড়ি করে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেজা কাপড়ে আমার রুমের দিকে যেতে লাগলাম।
কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না….
ছোট চাচী দেখে ফেললেন,
–কি রে তনয়া!তোর জামাকাপড় এমন ভেজা কেন?কি হইছে?কোথায় ভিজেছিস এভাবে?কোথায় ছিলি তুই?
চাচীর উত্তেজিত প্রশ্ন শুনে উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে ড্রয়িং রুমের প্রত্যেকটা প্রাণী এখন কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার উত্তরের অপেক্ষায় আমার দিকে চেয়ে আছে।
আমি আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাব,তার আগেই আয়রা হুট করেই কোথা থেকে ছুটে এসে বললো,
– ভাবী তো ভাইয়ার রুম থেকে এসেছে!
আয়রার কথা শুনে,বড়রা সবাই একটু থতমত খেয়ে গেল।
আমার দিক থেকে সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও নিজেদের মধ্যে গল্প শুরু করার চেষ্টা করে দিল।তাদের চোখেমুখে একদিকে চাপা হাসি ফুটে উঠছে, অন্যদিকে একটু একটু লজ্জা।
সাইকা তো আমার দিকে আড়চোখে চেয়ে একটা চোখ টিপও দিয়ে দিল।
এদিকে লজ্জায় আমার মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।না জানি,সবাই কি ভাবছে!বিশেষ করে আম্মু আর খালামনি তো এবার আমায় আরও পেয়ে বসবে!এদিকে সাইকাও ভাবছে আমি বুঝি আহিল ভাইয়াকে…..
—————————-
দুপুরে খাওয়ার পর সবাই যখন যার যার রুমে ভাতঘুম দিতে গেল, সেই সময় আমি চুপিচুপি আহিল ভাইয়ের রুমে এসে দরজাটা আটকে দিলাম।
আমাকে দরজা আটকাতে দেখে আহিল ভাই ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালেন।
আমি কোনোরকম ভূমিকা ছাড়াই বলতে শুরু করলাম,
–আপনার সাথে আমার ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছিল,জানতেন এটা আপনি?
আহিল ভাইয়ের চোখ সরু সরু হয়ে এলো।একটু নড়েচড়ে বসলেন উনি।
–কি বলতে আসছিস সেটা বল।
–নিজেকে কি মনে করেন আপনি হা?আপনি বা আপনারা যা বলবেন তাই?আমার মতামতের কোনো মূল্যা নেই?আমি কি চাই সেটার কিছু না?
–কি চাও তুমি?
–আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।কেন,বলেনি আপনাকে খালামনি?আমি তো তাদের আগেই বলেই দিয়েছি এই কথা।
–বিয়ে করতে চাস না আমায়?
–কখনো না।
–কিন্তু কেন?
–সেটার উত্তর আমি আপনাকে দিতে বাধ্য না।তবুও বলতে চাই,আমি কোনো রোবটকে বিয়ে করতে পারবো না।
আমার শেষ কথাটা শুনে,যারপরনাই বিস্মিত হয়ে আহিল ভাই বললেন,
–রোবট!আমি রোবট?
আচ্ছা রোবট কেন মনে হচ্ছে আমাকে শুনি তো?
আহিল ভাই শেষ প্রশ্নটা করতে গিয়ে সকৌতুক ফুটে উঠেছে উনার চোখে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে আমার সিরিয়াস কথাগুলোকে উনি মজার ছলেই নিচ্ছেন।
কি আশ্চর্য!আমার কথা কেউই সিরিয়াসলি নিচ্ছে না কেন!বুঝলাম এখানেও কিছু বলে লাভ নাই!মনে মনে জিদ নিয়ে অসহায়ের মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আহিল ভাই আমার উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে আবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন।
তারপর শান্ত গলায় বলেন,
–তুই যে বিয়ে করবি না বলছিস, সেটা মা আমাকে বলেছে।আর এটাও বলেছে তোর এই পাগলামী ঠিক হয়ে যাবে,একবার বিয়েটে হতে দে।
তিন্নির বিয়ের কিছুদিন পরপরেই আমার সাথে তোর বিয়ে, বুঝছিস?
যা এবার গিয়ে ঘুমা,আমাকে কাজ করতে দে।
আর হ্যাঁ কাল জিজ্ঞেস করছিলা না,কেনো এতো অধিকার খাটাই তোমার উপর?এই জন্যই খাটাই!
এবার পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে আহিল ভাই ল্যাপটপের কীবোর্ড চাপতে লাগলেন।আমি যে এখনো এখানেই দাঁড়িয়ে উনার দিকে চোখ কটমট করে চেয়ে আছি,সেটা উনি ক্ষুণাক্ষরেও টের পেলেন বলে মনে হলো না।
পরের দুইদিন অনবরত সবাইকে আমি নানান ভাবে বুঝাতে লাগলাম,আমি এই বিয়েতে রাজী না।
কিন্তু কেউই আমার কথায় পাত্তা দিচ্ছিল না।
সবার প্রতি প্রচুর অভিমান জমতে জমতে শেষমেষ অনেক চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পনামাফিক একটা একটা কান্ড ঘটিয়ে বসলাম।
আর তাতে সফলতাও পেলাম।ক্যান্সেল হয়ে গেল আহিল রোবটের সাথে আমার বিয়ে!
#চলবে