#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#দশম_পর্ব
পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে দুপুর পেরিয়ে বিকেল নেমে এসেছে। চারপাশে রোদের প্রখরতা নেমে গিয়ে চারপাশে স্বচ্ছ সাদা মেঘেদের দল ছোটাছুটি করছে। সাজেক ভ্যালির ট্রিপ টা বেশ ভালো লেগেছে মিশরাতের। এখন শুধু আর একটা জিনিস ই দেখার বাকি। সেটা হলো হ্যালিপ্যাড থেকে সরাসরি সূর্যোদয়। রাত নেমে যাওয়ার আগেই পূর্বের রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে মিশরাত আর স্নিগ্ধ। রাতের অন্ধকার একবার নেমে গেলে আরো একটা রাত এখানে কাটাতে হবে। তাই দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে তারা।
সন্ধ্যের আকাশে তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। নীলচে আকাশের বিশালতার মাঝে এক ফালি চাঁদ দৃশ্যমান। গুটি গুটি পায়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে রিসোর্টে পৌঁছায় মিশরাত আর স্নিগ্ধ। কোনোমতে রুমের চাবিটা নিয়ে রুমের দরজা খুলতেই মিশরাত গিয়ে সোফার উপর ব্যাগটা রেখে বসে পড়ে।
মিনিট পাঁচেক পর উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় মিশরাত নাহলে সে জানে স্নিগ্ধ এসে দেখলেই বকবক শুরু করে দিবে। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই স্নিগ্ধর সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তার। স্নিগ্ধ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে উঠে,
– ” তুমি কিছুক্ষণ রেস্ট নাও। আমি ফ্রেশ হয়ে খাবারের ব্যবস্থা করছি।”
মিশরাতও বাধ্য মেয়ের মতো বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে আর পাশের টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকে। প্রায় দশ পনেরো মিনিট পর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে স্নিগ্ধ। খাটের উপর মিশরাতের দিকে একপলক তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে সে।
মিনিট বিশেক পর হাতে খাবারের ব্যাগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে স্নিগ্ধ। খাটের দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে। ফোন হাত থেকে পড়ে রয়েছে নিচে, এলোমেলো ভাবে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে মিশরাত। মিশরাতকে এভাবে ঘুমোতে দেখে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে স্নিগ্ধ।
– ” এ মেয়ে কোনোদিনই শোধরাবার নয়। এই অল্প সময়ের মধ্যেই না খেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে। কেয়ারলেস একটা!!”
বিড়বিড় করে বলে উঠে স্নিগ্ধ। তারপর কিছু একটা ভেবে মিশরাতের পাশে গিয়ে আলতো স্বরে ডেকে উঠে,
– ” মিশরাত, এই মিশরাত! উঠো, অল্প করে কিছু খেয়ে নাও!”
কিন্তু বেশি কিছু লাভ হলো না। মিশরাত কিছুটা নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে গেল। স্নিগ্ধ কয়েক পলক তাকিয়ে মিশরাতের গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেল। সোফায় শরীর এলিয়ে দিতেই শরীরে জমে থাকা ক্লান্তিটুকু ঘুমে পরিনত হলো।
সকালের আলো ফোটার পূর্বেই যথাসময়ে এলার্ম বেজে উঠল। পরপর কয়েকবার বাজার পর চোখ মুখ কুঁচকে নড়েচড়ে উঠলো মিশরাত। হাতরে হাতরে এলার্ম বন্ধ করে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সে। চোখ খুলে সামনে তাকাতেই স্নিগ্ধর ঘুমন্ত চেহারাটা চোখে পড়ে মিশরাতের। ভোরের আলো ভালো ভাবে না ফুটলেও আবছা আলোয় স্নিগ্ধর চেহারাটা স্পষ্ট। এতদিন ভালোভাবে স্নিগ্ধর দিকে না তাকালেও আজকে হঠাৎ কেন যেন তাকে খুব করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হলো মিশরাতের। কপালে ছোট ছোট চুলগুলো এলোমেলো ভাবে লেপ্টে রয়েছে। গালের খোঁচা খোঁচা হালকা চাপদাড়ি গুলো দেখে সেগুলো একবার ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হলো মিশরাতের। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলো সে।
– ” কি হয়েছে তোর মিশরাত? কি সব হাবিজাবি ভাবছিস তুই!
না আসলেই তোর মাথাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে!
আরে তুই তো জানিস এই সম্পর্ক বাকিদের কাছে রিয়েল মনে হলেও তোর আর স্নিগ্ধের কাছে এটা জাস্ট একটা ডিল। তারপরও তুই বারবার উল্টোপাল্টা চিন্তা করিস কি করে!”
মনে মনে নিজেকেই বলতে থাকে মিশরাত। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা গুছিয়ে নেয় সে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই খেয়াল করে অলরেডি ৫:০০ টা বেজে গিয়েছে। এখান থেকে হ্যালিপ্যাডে যেতে মোটামুটি সময় লেগে যাবে। তাই দ্রুত ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায় সে।
কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই খেয়াল করে স্নিগ্ধ ও ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে স্নিগ্ধ বলে উঠে,
– ” তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আমাদের হ্যালিপ্যাডে যেতে,,,”
পেছনে ফিরে পুরোটা বাক্য শেষ করতে পারলো না স্নিগ্ধ। কেননা তার আগেই চোখ আটকে গিয়েছে তার মিশরাতে।
জর্জেটের কালো শাড়ি পড়নে, লম্বা চুলগুলো কোমর অবধি ছড়ানো, ফর্সা শরীরে কালোর আবরণ যেন ফুটে উঠেছে।
এদিকে স্নিগ্ধর এমন ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায় মিশরাত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে সে। মুহুর্তে আবার বাস্তবে ফিরে আসে স্নিগ্ধ।
মনে মনে নিজেকে হাজার টা গাল দিতে থাকে। মিশরাত কি ভাববে তাকে এখন। ভাবতে ভাবতেই মাথা নিচু করে কোনো কথা না আস্তে করে ওয়াশরুমে চলে যায় স্নিগ্ধ।
হ্যালিপ্যাড হলো সাজেক ভ্যালির এমন একটা জায়গা যেখান থেকে সরাসরি সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারা যায়। শাড়ির কুচি গুলো এক হাতে আঁকড়ে ধরে অন্য হাতে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে চলেছে স্নিগ্ধর পিছুপিছু মিশরাত। তারা ছাড়াও অনেকেই এসেছে সূর্যোদয়ের সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। হ্যালিপ্যাডে পৌঁছাতেই মিশরাত আলতো হাসে। আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি ভোরের সেই আলো ফুটতে। পাঁচ মিনিটের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূর্যের আলো সরাসরি আছড়ে পড়ে মিশরাতের মুখে। সূর্যের স্বর্ণালী রশ্মি মিশরাতের উপর পড়তেই স্নিগ্ধ একবার আড়চোখে তাকালো মিশরাতের দিকে। কিছুদূর পিছিয়ে গিয়ে ফোনটা বের করে মিশরাতের অজান্তেই তার কয়েকটা ছবি ঝটপট করে তুলে নিল স্নিগ্ধ। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার মনে মনে ভাবলো,
– ” আমি মিশরাতের ছবি তুললাম কেন? ওর কাছ থেকে পারমিশন না নিয়ে ওর অজান্তেই ছবি তুলে নিলাম! এটা কি আদৌ ঠিক?
ভাবতে ভাবতেই ছবির ডিলিট বাটনে ক্লিক করতে গিয়েও কোনো এক অজানা কারণে থেমে গেল স্নিগ্ধ।
এদিকে মিশরাত কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে পিটপিট করে তাকাতেই পাশে স্নিগ্ধ কে না দেখে হালকা ঘাবড়ে গেল। এই লোকটা হুটহাট কোথায় হারিয়ে যায়? আবার তাকে এখানে একা ছেড়ে চলে যায় নি তো! ভাবতে ভাবতেই পেছন ফিরে স্নিগ্ধ কে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। সামনে দিকে পা বাড়াতেই হঠাৎ শাড়িতে পা বেঁধে গিয়ে পড়ে যেতে নিলেই ভয়ে চোখ মুখ কুঁচকে নেয় মিশরাত। এই বুঝি কোমর শেষ তার!
কিন্তু কিছুক্ষণ পর শরীরে কোনো ব্যাথা অনুভূত না হওয়ায় চোখ দুটো খুলে তাকায় মিশরাত। কোনো মেয়েলী হাত তার হাতকে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতেই জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে মিশরাত। পেছনে তাকাতেই তার চেহারা পূর্বের তুলনায় আরো কয়েক গুণ ভয়ার্ত হয়ে যায়। গাছের ভাঙা সরু অংশ সোজা হয়ে এখনো সেখানেই রয়েছে। যদি এই ভাঙা অংশের উপর কোনোভাবে পড়ে যেত তাহলে এখন সাজেক না হসপিটালে থাকতে হতো মিশরাতের। ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে তার।
কিন্তু যে তাকে এই অঘটনের শিকার হতে বাঁচিয়েছে তাকে তো অন্তত একটা ধন্যবাদ দেয়া দরকার।
সামনে তাকাতেই খেয়াল করে মিশরাতেরই সমবয়সী একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিন্স আর হুডি পরনে, মাথায় একটা ক্যাপ। ততক্ষণে স্নিগ্ধ ও চলে আসে সেখানে।
– ” দেখেশুনে চলতে পারো না? এখনি তো পড়ে গিয়ে কোনো একটা অঘটন ঘটে যেত তাহলে?
কে বলেছিলো শাড়ি পরে আসতে?”
স্নিগ্ধর ধমক খেয়ে ভয়ে চুপসে যায় মিশরাত। কিছু বলবে তার আগেই পাশে দাঁড়ানো মেয়েটি বলে উঠে,
– ” ইটস ইউর গুড লাক!
এন্ড মিস্টার, টাইম থাকতে সাবধানে থাকবেন। নাহলে অচিরেই আপনার কাছ থেকে আপনার প্রিয় জিনিস গুলো কিভাবে হারিয়ে যাবে সেটা টেরও পাবেন না!
সো বি কেয়ারফুল!!”
কোনো মেয়েলি কন্ঠস্বর কানে আসতেই পাশ ফিরে তাকায় স্নিগ্ধ। মেয়েটার চোখে চোখ পড়তেই বিস্মিত হয়ে উঠে সে। অবাক হয়ে কম্পনরত কন্ঠে বলে উঠে,
– ” শুভ্রতা!!”
মিশরাত ও অবাক হয়। কে এই শুভ্রতা? এতদিন ধরে ইগনোর করলেও এবার ব্যাপারটা বেশ ভাবাচ্ছে তাকে। স্নিগ্ধর এভাবে যাকে তাকে শুভ্রতা সম্বোধন করছে!
পাশে থাকা মেয়েটা স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বলে উঠে,
– ” এক্সকিউজ মি, মিস্টার!
আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আ’ম নট শুভ্রতা। আ’ম অরিন। অরিন সারাহ্।”
স্নিগ্ধ বেশ খানিকটা অবাক হয়। এ কি করে সম্ভব? এই মেয়েটার চোখ দুটো তো বলে দিচ্ছে যে এ শুভ্রতা। কিন্তু মেয়েটা নিজেকে অরিন বলে দাবী করছে কেন?……………
#চলবে 🍂
( আসসালামুয়ালাইকুম। আমি দুঃখিত। ছোট এবং দেরিতে দেয়ার জন্য।
ব্যস্ততার কারণে আজকে পারিনি। ইনশাআল্লাহ কালকে বড় করে দেয়ার চেষ্টা করবো।
কেমন হয়েছে জানাবেন।
ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)