প্রেম_পায়রা পর্ব ১১+১২

#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#একাদশ_পর্ব

রিসোর্টে ফেরত আসার পর থেকেই স্নিগ্ধ মুখ দিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি। এখনো যেন বড় কোনো শকের ভেতর রয়েছে। একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা তাকে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
মিশরাত আড়চোখে স্নিগ্ধ কে একবার দেখে নিল। হঠাৎ করে ঐ মেয়েটাকে দেখে এভাবে চুপ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা মোটেও তার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ঘাপলা আছে! এই শুভ্রতা আসলে কে? যাকে ঘিরে এত রহস্য!
– ” স্নিগ্ধ কে কি একবার এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবো?
না থাক! ঐ দিন একটা ছোট বিষয় নিয়েই কত ঝাড়ি খেতে হয়েছিল আমায়। এখন যদি পুরো কাহিনী জিজ্ঞেস করি তাহলে নিশ্চিত আজকে কোনো বড় ঝড় বয়ে যাবে। এর চেয়ে চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়।
পরে না হয় কোনো এক সময় জিজ্ঞেস করা যাবে।”
মনে মনে বিড়বিড় করে বললো মিশরাত‌। স্নিগ্ধের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও তার মাঝে কোনো পরিবর্তন এলো না। সে পূর্বের মতোই ধ্যানে মগ্ন।

ফ্ল্যাশব্যাক,,

– ” এক্সকিউজ মি, মিস্টার! আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আ’ম নট শুভ্রতা। আ’ম অরিন। অরিন সারাহ্!”

বলেই মুখ থেকে মাস্কটা সরিয়ে ফেলে অরিন। চেহারায় নজর পড়তেই থমকে যায় স্নিগ্ধ। এ কি দেখছে সে?
চোখ দুটো শুভ্রতার সাথে হুবহু মিললেও চেহারায় কোনো মিল নেই। এটা কিভাবে সম্ভব? একটা মানুষের চোখের মাঝে এতোটা মিল কি করে হতে পারে? মেয়েটাকে দেখে স্নিগ্ধর মাঝে অস্বস্তি বেড়েই চলেছে। কেন জানি মন বারবার বলে চলেছে এই অরিন মেয়েটাই শুভ্রতা। কিন্তু মনের সাথে মস্তিষ্ক সায় দিয়ে উঠছে না।

– ” এক্সকিউজ মি গাইজ! আমার যেতে হবে!
আর হ্যাঁ আপনি একটু বেশিই সাবধানে থাকবেন! গুড বাই!”
মিশরাতকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল অরিন। আর স্নিগ্ধ ও কিছু না বলে হাঁটা শুরু করে। সেটা দেখে মিশরাতও পিছু নেয়।

বর্তমানে,,
কারো তুড়ি বাজানোর শব্দ কানে যেতেই ভাবনার সুতো কেটে যায় স্নিগ্ধর। মাথা তুলে তাকাতেই খেয়াল করে মিশরাত চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

– ” কি ব্যাপার? এভাবে আনমনে কি ভেবে চলেছেন? ঘুমোতে যাবেন না নাকি?”

মিশরাতের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– ” কই কিছু না তো, তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো!
আমি আসছি!”
মিশরাত ছোট্ট করে আচ্ছা বলে চলে যায়।
বিছানায় দুজন দুপাশে ফিরে শুয়ে রয়েছে। কারো চোখে ঘুম নেই। পিনপতন নিরবতা ভেঙ্গে মিশরাত বলে ওঠে,
– ” আমি জানি আপনি এখন কাকে নিয়ে চিন্তা করছেন। আমি আপনাকে জোর করবনা যে আপনি আমাকে শুভ্রতার ব্যাপারে কিছু বলুন। কিন্তু আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে নিজ থেকে একাই সবটা বলবেন!”

নড়েচড়ে উঠলো স্নিগ্ধ। হ্যাঁ ঠিক এটারই তো আশংকা করেছিল সে। তার নিজের দোষের কারণে আজ তার অতীত আবারো তার সামনে চলে এসেছে। আর তার অতীত এমনভাবে তাকে আকড়ে ধরেছে যে চাইলেও তার থেকে ছুটে পালানোর কোনো পথ নেই। কিন্তু সেটা এখন সে প্রকাশ করলো না। তাই সবটা শুনেও না শোনার ভান করলো যাতে করে মিশরাত‌ ভাবে সে ঘুমিয়ে গিয়েছে। অপর পাশ থেকে কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো মিশরাত‌। সে জানে স্নিগ্ধ তার কথা শুনেছে। তাই আস্তে করে চোখ দুটো বুজে নিলো আর ধীরে ধীরে ঘুমের অতলে হারিয়ে যেতে থাকলো।

পুরো সাতদিনের সাজেক ভ্যালি ট্রিপ শেষে আজ ঢাকায় ফিরে যেতে হবে মিশরাত আর স্নিগ্ধ কে। সকালে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে প্যাকিং এর কাজে লেগে পড়লো মিশরাত‌। তার এই ট্রিপটা সবসময় মনে থাকবে। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও কেমন যেন একটা শূন্যতা অনুভব হয় মিশরাতের কাছে। কিন্তু এটার সঠিক কারণ সে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।

রিসোর্ট থেকে লাগেজ হাতে নিয়ে বের হয়ে পড়ে স্নিগ্ধ আর মিশরাত‌।
– ” আচ্ছা মা’কে কি বলেছেন ফোন করে যে আমরা আজ ঢাকায় ব্যাক করছি?”
হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করে উঠে মিশরাত‌। স্নিগ্ধ পাশ ফিরে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,
– ” হ্যাঁ, আমি ফোন করে অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছি!”
এভাবে কিছুক্ষণ টুকটাক কথাবার্তার মাধ্যমে সামনে এগোতে থাকে তারা।
আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায় স্নিগ্ধ।

– ” আ’ম রিয়েলি সরি! আমি আসলে খেয়াল করি নি!”
কোনো মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেয়ে সামনে তাকায় স্নিগ্ধ। সাথে মিশরাত ও।
অরিন অনুনয়ের চোখে বলে উঠলো কথাটি।
– ” আরে অরিন আপু!!
আপনি এখানে?”
অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে মিশরাত‌। স্নিগ্ধ একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে।

– ” হ্যাঁ আসলে আমি এই রিসোর্টেই করে উঠেছি।
তোমাদের হাতে লাগেজ? আবার ব্যাক করছো নাকি?”

অরিনের প্রশ্ন শুনে মিশরাত আলতো হেসে বলে,
– ” হ্যাঁ আপু!
আমরা আজ ঢাকায় ব্যাক করছি!”

– ” আচ্ছা ঠিক আছে!
হ‌্যাভ এ গুড জার্নি!
আর হ্যাঁ বি কেয়ারফুল!
কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না, তাইনা!”

বলেই একটা মেকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে মিশরাতের পাশ ঘেঁষে চলে যায় অরিন। এদিকে মিশরাত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এ মেয়ের কথাগুলো এমন জট পাকানো কেন? যেন কথার মাঝে হাজারটা অর্থ লুকানো। মনে মনে ভাবলেও বেশ একটা পাত্তা দেয় না মিশরাত‌।
শো শো বাতাস গাড়ির জানালা ভেদ করে মিশরাতের শরীরকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সূর্যের তীর্যক রশ্মি ও তার মুখ বরাবর আছড়ে পড়ছে। হালকা তাপ আর হালকা ঠান্ডার সংমিশ্রণ বেশ ভালোই লাগছে তার।
গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দিতেই কানে গানের সুর ভেসে আসলো।

” অ্যায় মেরে হামসাফার,,
ইক জারা ইন্তেজার,,,,

সুন সাদায়ে দে রেহি হ্যায়,
মান্জিল পেয়ার কি!

অ্যায় মেরে হামসাফার,,
ইক জারা ইন্তেজার,,

সুন সাদায়ে দে রেহি হ্যায় মান্জিল পেয়ার কি!!..

জিসকো দুয়ামো মে মানগা,,,
তু হে ওয়াহি রেহনুমা,,

তেরে বিনা মুশকিল হ্যায়
এক ভি কাদাম চালনা,,,(২)

বিন তেরে কাহা হ্যায় মান্জিল পেয়ার কি!!

অ্যায় মেরে হামসাফার,,
ইক জারা ইন্তেজার,,
সুন সাদায়ে দে রেহি হ্যায়
মান্জিল পেয়ার কি!..

( বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

কলিং বেলের আওয়াজ কানে আসতেই সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ান মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী। এখন এই সময়ে কে আসবে? ভাবতে ভাবতে দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলতেই অপর পাশ থেকে কেউ এসে তার গলা জড়িয়ে ধরে।
– ” কেমন আছো মা? আই মিস ইউ‌।”

মিসেস ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে স্নিগ্ধ। আর মিশরাত পেছনে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
– ” আরে স্নিগ্ধ তুই? এভাবে চলে আসলি অথচ আমাকে একবার ফোন করে জানালিও না!”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর কথা শুনে অবাক হয় কিঞ্চিৎ মিশরাত‌। একটু আগেই না স্নিগ্ধ তাকে বলেছিল যে মিসেস ইয়ামিন তাদের ঢাকায় ফিরে আসার ব্যাপারে জানতো! তাহলে মিসেস ইয়ামিন কি বলছে এসব?
মিশরাতের ভাবনার মাঝেই মিসেস ইয়ামিন এসে মিশরাতকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলেন। কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী স্নিগ্ধ আর মিশরাতকে রুমে পাঠিয়ে দিলেন। রাতের বেলা ডিনার শেষ করে রুমে এসে বসতেই ফোন ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠে মিশরাতের‌।
ফোনে মেহের নামটা জ্বলজ্বল করছে। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে মেহেরের কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
– ” কি ব্যাপার ননদিনী‌? বিয়ের পর দেখি আমাকে আর মনেই থাকে না আপনার!!
ব্যাপার কি?
আর হানিমুন কেমন কাটলো আপনার?”

মিশরাত জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।
– ” বিয়েটাই দুজনের মাঝে কেউ মানে না। কিসের আবার হানিমুন? ”
বিড়বিড় করে বলে উঠে মিশরাত‌।
– ” কিরে ওভাবে কি বিড়বিড় করছিস? আমি তো কিছু জিজ্ঞেস করেছি!!”

– ” আহা বউমনি, তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয়!
আসলে কয়েকদিনের ট্রিপে গিয়ে ফোন করা হয়ে ওঠে নি। আর ওখানকার নেটওয়ার্ক ও তেমন খুব সুবিধার না!
তাই আর কি!!”

আরো কিছুক্ষণ টুকটাক কথাবার্তার করতে করতে আধঘন্টা সময় কেটে যায়। ফোন কেটে দিয়ে সামনে তাকাতেই খেয়াল করে স্নিগ্ধ তার দিকে একদৃষ্টে সরু চোখে তাকিয়ে রয়েছে। হালকা ঘাবড়ে যায় সে? এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণ কি?

– ” বিয়ে হয়েছে তার মানে এটা নয় যে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এভাবে বাসায় বসে থাকবে!
আগামী সপ্তাহ থেকে তুমি রীতিমতো আবারো ক্লাস জয়েন করবে! আমি তোমার ভার্সিটির ভিপির সাথে কথা বলে নেব!”

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মিশরাত‌। সাথে খুশিও লাগে। কেননা ‌আর মাত্র একটা ইয়ার আছে অনার্স কোর্স শেষ হতে।
খুশিতে একপ্রকার দাঁড়িয়ে যায় সে। স্নিগ্ধ কে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই স্নিগ্ধ বলে উঠে,

– ” হয়েছে আমাকে থ্যাঙ্কস দিতে হবে না। আর না এতো লাফালাফি করতে হবে। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো!

কাল সকাল থেকে আমি অফিস জয়েন করবো।”

স্নিগ্ধর কথা শুনে মুখে লেগে থাকা হাসিটুকু উবে যায় মিশরাতের‌। মুখ ফুলিয়ে খাটের উপর গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়ে।
আর সেটা খেয়াল করতেই স্নিগ্ধ এক পলক মিশরাতের তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠলো!………..
#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান
#দ্বাদশ_পর্ব

পরদিন সকালে যথারীতি এলার্মের শব্দ কানে পৌঁছাতেই চোখ পিটপিট করে তাকায় স্নিগ্ধ। সকালের সোনালী রোদ্দুরের বেশ খানিকটা অংশ মেঝেতে এসে পড়েছে। পাশ ফিরে তাকাতেই খেয়াল করে মিশরাত বিছানায় নেই।
আড়মোড়া দিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে পড়ে স্নিগ্ধ। পরনে টিশার্ট টা ঠিক করতে করতে হ্যাংগার থেকে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে স্নিগ্ধ। রুমের কোথাও মিশরাতকে না দেখতে পেয়ে বেশ খটকা লাগে তার। এই মেয়ে এত সকালে কোথায় যাবে আবার? অফিসের জন্য রেডি হয়ে একবারে নিচে নেমে আসে সে।
ডাইনিং টেবিলে নজর যেতেই চোখ আটকে যায় তার। মিশরাত কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে একদম বাড়ির বউদের মতো কাজে লেগে পড়েছে। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামের কারণে ছোট ছোট চুলগুলো কপালের সাথে লেপ্টে রয়েছে। আর সেটাই একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে স্নিগ্ধ। এই মেয়েটার মাঝে অদ্ভুত কোনো আকর্ষণ আছে নাকি? নাহলে এভাবে তাকে হুটহাট ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় কেন!
স্নিগ্ধর ভাবনার সুতো কাটে মিসেস ইয়ামিনের কথায়।
– ” যাক ভালোই করেছিস এসে! আমি তো ভেবেছিলাম আজকে তুই রেস্ট নিবি! কিন্তু আজকেই অফিসে যাচ্ছিস!”

স্নিগ্ধ রুটি চিবোনো শেষ করে বলে উঠে,
– ” হ্যাঁ মা আজকেই যেতে হবে! অনেকদিন গ্যাপ পড়ে গিয়েছে!
আর আগামী সপ্তাহে আমার চট্টগ্রামে ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে!
আর সেগুলোর জন্য কয়েকটা ফাইল রেডি করতে হবে!”
মিশরাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাবার সার্ভ করায় ব্যস্ত।
– ” আরে মিশরাত তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?
তুমিও আমাদের সাথে বসে পড়ো!”
মিসেস ইয়ামিনের কথায় মিশরাত হালকা মাথা নাড়িয়ে বসে পড়ে চেয়ারে। খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে স্নিগ্ধ মিসেস ইয়ামিন কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– ” মা আমি ভাবছিলাম মিশরাত আগামী সপ্তাহ থেকে আবার ভার্সিটিতে জয়েন করুক।
আর সামনেই তো থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম!”

– ” হ্যাঁ এটা তো খুব ভালো কথা।
সারাদিন এভাবে বাসায় বসে থাকলে তো মিশরাতেরও বোর লাগবে। এর চেয়ে ভালো ও আবার ভার্সিটিতে জয়েন করুক!”

মিসেস ইয়ামিন এর কথা শুনে মিশরাতের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
স্নিগ্ধ ও এর মধ্যে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় অফিসের উদ্দেশ্যে।
মিশরাত ও টেবিল ছেড়ে উঠে উপরের দিকে চলে যায়। বিকেলের আকাশের রক্তিম আভা চারপাশ লাল বর্ণে রূপান্তরিত করেছে। সূর্য পশ্চিম আকাশে অনেকটাই ঢলে পড়েছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দের ‌রেশ ও কমে এসেছে। ছাদের চিলেকোঠার ঘরের পাশে ঝুলন্ত দোলনায় বসে আনমনে পা নাড়িয়ে চলেছে মিশরাত‌। সন্ধ্যার লালচে আকাশটা বেশ ভালোই লাগছে তার কাছে। আশেপাশে বেশ সুন্দর কয়েকটা গাছ লাগানো রয়েছে। অপরাজিতা, রক্ত জবা, কাঠ গোলাপ ফুলগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে তার। রেলিংয়ের ওপর হঠাৎ কোনো পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় মিশরাত‌।
সাদা ধবধবে রঙের ছড়ানো পাখা যুক্ত কবুতর যাকে অনেকেই পায়রা বলে থাকে গুটি গুটি পায়ে রেলিং এর উপর দিয়ে হাঁটছে।

ছোটবেলা থেকেই পায়রা জিনিসটা বেশ ভালো লাগে তার। তার ভাবনার মাঝেই আরেকটা পায়রা উড়ে এসে ঠিক আগেরটার পাশে বসলো। দুজন একসাথে হতেই মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাদের ভাব বিনিময় করতে থাকে। আর এদিকে মিশরাত মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে পায়রা দুটোর দিকে। দুটোকে একসাথে দেখে তার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠে। আনমনে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, #প্রেম_পায়রা ।

গ্লাসের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। দিনের আলো পেরিয়ে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। বাইরের জনজীবনের ব্যস্ততা তার চোখ এড়াচ্ছে না। সাজেক থেকে আসার পরই অফিসের কাজে তেমন একটা মন বসাতে পারছে না স্নিগ্ধ। কোনো একটা কাজে খুব কষ্ট করে মন বসালেও বারবার ঐ চোখ দুটো ভেসে আসছে তার মস্তিষ্কে।

— ” কুল ডাউন স্নিগ্ধ, কুল ডাউন!
ঐ মেয়েটা শুভ্রতা হতে পারে না। শুভ্রতা আর ঐ মেয়েটার চেহারায় কোনো মিল নেই। তুই শুধু শুধুই মেয়েটাকে নিয়ে এত ডেস্পারেট হচ্ছিস!”

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকায় স্নিগ্ধ।
– ” মে আই কাম ইন স্যার?”
ম্যানেজার জাকিরের কথা শুনে স্নিগ্ধ বলে উঠে,
– ” ইয়েস কাম ইন!”
জাকির সাহেব ভেতরে প্রবেশ করে একগাদা ফাইল নিয়ে।
– ” স্যার সামনে মাসের এক তারিখ থেকে আপনার এসিস্ট্যান্ট নিয়োগের জন্য আগামী পরশু দিন থেকে ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করা হবে!
আর স্যার এইযে চট্টগ্রামের প্রজেক্টের ফাইল।”

স্নিগ্ধ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই টেবিলের উপর ফাইল গুলো রেখে চলে যায় জাকির সাহেব। এদিকে স্নিগ্ধ ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়াল করতেই দেখে রাত আটটা বেজে গিয়েছে প্রায়।
চেয়ার থেকে কোট টা হাতে ঝুলিয়ে হাঁটা শুরু করলো বাইরের দিকে।

রাতে ডিনার শেষ করে রুমে প্রবেশ করতেই খেয়াল করে মিশরাত‌ একপ্রকার খুশিতে লাফাচ্ছে। হঠাৎ এমন পরিবর্তন দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে স্নিগ্ধ। মেয়েটা হুটহাট এমন অদ্ভুত আচরণ করে কেন?
রুমে কারো উপস্থিতি টের পেতেই পেছন ফিরে তাকায় মিশরাত‌। স্নিগ্ধ কে চোখে পড়তেই হাতে থাকা মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে আসে সে।
স্নিগ্ধ কে কোনো‌ কিছু না বলেই ‌হুট করে তাকে জড়িয়ে ধরে মিশরাত‌। হঠাৎ করে মিশরাতের এমন জড়িয়ে ধরাতে ভড়কে যায় স্নিগ্ধ। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে। হার্টবিট ও আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
মিনিট পাঁচেক পর মিশরাতের ধ্যান ভাঙতেই তার চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। এতক্ষণে তার টনক নড়ে।
নিঃশব্দে মাথা নিচু করে স্নিগ্ধ কে ছেড়ে দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে আসে সে। লজ্জায় মাথা তুলে তাকানো যাচ্ছে না। ধীর কন্ঠে বলে উঠে,
– আসলে আমি বুঝতে পারি নি, সরি!
অতি এক্সাইটেড হয়ে ভুলে আপনাকে জড়িয়ে ধরে ফেলেছি।”

মিশরাতের ওমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে খুব কষ্ট করে হাসি দমিয়ে রাখে স্নিগ্ধ। চেহারায় যথেষ্ট গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে উঠে,
– ” কি এমন নিয়ে এতো এক্সাইটেড ছিলে যে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরা লাগলো!
টেল মি!”
এমন‌ গম্ভীর কন্ঠ শুনে গলা শুকিয়ে আসে মিশরাতের‌। আসলেই তো! স্নিগ্ধ কে এভাবে হঠাৎ জড়িয়ে ধরা বোধ হয় ঠিক হয় নি।
জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,
– ” আসলে আমি একটু বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তো, তাই!”

স্নিগ্ধ চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে উঠল,
– ” আমি মেইন পয়েন্টে আসতে বলেছি।
কি এমন শুনে এত লাফালাফি করছিলে?”
মাথা তুলে তাকায় মিশরাত‌। দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠে,

– ” বউমনি প্রেগন্যান্ট!!”

– ” বাহ্, কংগ্রেচুলেশন!”
রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে স্নিগ্ধ।

– ” ইশ্ আর কয়েক মাস পর ছোট ছোট হাত পা গুলো আমাকে ছুঁবে! আধো আধো কন্ঠে বউমনি কে মা বলে ডাকবে! আমাকে ফুপি বলে ডাকবে!”
বিড়বিড় করে বলে মিশরাত।
স্নিগ্ধ সোফার উপর বসে বলে উঠে,
– ” এতো এক্সাইটেড হচ্ছো, মনে হচ্ছে বেবি তোমার বউমনির না তোমার হবে!”
আড়চোখে তাকায় মিশরাত‌।
– ” হুহ‌!
আপনি কি বুঝবেন এসবের! বেবি নিয়ে সবাই অনেক এক্সাইটেড থাকে। কেউ আবার আপনার মতো এতো নিরামিষ না!”

ফোন থেকে চোখ তুলে তাকায় স্নিগ্ধ। কথাটা ঠিক তার হজম হলো না। নিরামিষ? লাইক সিরিয়াসলি!
– ” কোন দিক দিয়ে আমাকে নিরামিষ মনে হয় তোমার?
আর এতো বোঝানোর দরকার নেই। আমি জানি সবাই এক্সাইটেড থাকে। তাই বলে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমার অলরেডি দশ বারোটা বাচ্চা হয়ে গিয়েছে!”

চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায় মিশরাতের‌। লোকটা কি কোনোদিন কোনো কথার সোজা উত্তর দিতে পারবে না? সবসময় কথার ডাবল মিনিং খুঁজে বেড়ায়। বিরক্তিকর!!
মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে বিছানায় চলে যায় সে। আর স্নিগ্ধ মিটমিট করে হাসতে থাকে!
– ” যাক মেয়েটা ভালোই ক্ষেপেছে!”

টানা দু ঘন্টা ধরে একের পর এক ইন্টারভিউ নিয়ে চলেছে স্নিগ্ধ আর কয়েকজন মেম্বার। লাস্ট আর একটা ফাইল বাকি!

– ” মে আই কাম ইন স্যার?”

-” ইয়েস কাম ইন!”

অনুমতি পেয়ে কেবিনে প্রবেশ করে মেয়েটি। চেয়ার টেনে বসতেই চোখ তুলে তাকায় স্নিগ্ধ। আবারও একই চেহারা দেখে অনেকটা অবাক হয়ে বলে উঠে,

– ” আপনি?”…………

#চলবে 🍂
(আসসালামুয়ালাইকুম। সবাই কেমন আছেন।
অরিন আর শুভ্রতা এক কি না তা সামনের পর্ব গুলোতে জানতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।

ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)
#চলবে 🍂

( আসসালামুয়ালাইকুম। আমি আগেই বলেছি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে গল্প দিতে পারি নি। আজকেও ছোট হয়েছে।
তবে ইনশাআল্লাহ আগামীকাল বড় করে দেয়ার চেষ্টা করবো।

ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here