#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৭
মিম লজ্জা পেয়ে উল্টো দিকে দৌড় এদিকে রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে নিচে চলে এলো।ইশান ও রাদ হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে ইমানের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
– কি রে ভাই? তোর বউ তোকে হামি খেলো? ইমান নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে,
– তোদের কি নিজের বউ নাই? সারাদিন আমাদের খবর নিতে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে থাকো? ছোঁচা কোথাকার? পর্ন সাটে ভিজিট কর সারাদিন কেন আমাদের দু’জনের পিছে লেগে থাকো? ইশান মিটিমিটি হেসে বলে,
– কি আর বলি ভাই? বলতো? তুই ও শেষমেশ ওই শাঁকচুন্নিটার প্রেমের ফাঁদে পরে গেছে?
– মুখ সামলে কথা বল ইশান।আমার বিয়ে করা বউ ও আর নিজে কোন মহাপুরুষের মতো কাজ করেছ? বড় বোন (মিহা) কে দেখতে গিয়ে তার ছোটো বোন (মিম) কে নিজের জন্য পছন্দ করে এসেছ? মোট কথা হলো,যে নিজে না খেতে পেলে আঙুর ফল টক লাগে বুঝেছ? তারপর মিম ইমানকে ঘরে আসতে দেখে রেগে গিয়ে বলে,
– কর্নেল সাহেব,তুমি তো আজকে বাবার সামনে আমার নাক কেটে দিয়েছ? ইমান দু’পা এগিয়ে এসে ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে,
– আরে বাবা ফাজলামি করে কথাটা বলেছে।তুমি সিরিয়াসলি নিয়ো না বুঝেছ? কামওন কামওন এবার একটা বাই বাই কিস তাড়াতাড়ি দাও তো? সেনানিবাসে সবাই আমার জন্যে অপেক্ষা করছে আর আমি এখানে তোমার পিছনে আদর খাওয়ার জন্যে ঘুরঘুর করছি দেখেছ? জেনারেল আহসান স্যার ঠিক বলেছিলেন,”তুমি পেশায় যত বড় একজন মানুষ হও না কেন? বউয়ের কাছে তুমি একজন সাধারণ মানুষ ব্যাতীত কিছুই না বুঝেছ?” মিম হঠাৎ এগিয়ে এসে ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলে,
– হয়েছে আর ঢং করতে হবে না এবার কাজে জান তো? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– গিয়ে ফোন করবো।রিসিভ কোরো কিন্তু? জোভান আচমকা এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে আবদার করে বলে,
– ছোটো মা,আমি চাওমিন খাবো?
– আচ্ছা বাবা একটু ওয়েট করো আমি এখনি বানিয়ে দিচ্ছি বুঝেছ?
– আম্মুকে (অধরা) আবার বোলো না প্লিজ ছোটো মা? তখন অধরা এসে বলে,
– বাব বাহ!
আমাকে দিয়ে কাজ হয়নি? এখন আবার এসে ছোটো মায়ের পেছনে লেগেছ? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– বাদদেও না ভাবি,খাবার জিনিস তো? তুই বাবা আমার সাথে চল? রিক্ত এসে হঠাৎ মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– রাঙা মা তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছ?
– কোই না সোনা পাখি এ কথা তোমাকে কে বলেছে বলো তো?
দুপুরে, রায়হান সাহেব মিমকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন,
– মা তুই কি মাছ খেতে পছন্দ করো? কি অনবো? মিম একটু ভেবে বলে,
– বেশি করে চিংড়ি মাছ নিয়ে এসো আর এক বক্স জিরোক্যাল সুগার সাবস্টিটিউট বুঝেছ?
– হুমম,আচ্ছা মা তুই কি সকালের জন্য রাগ করেছ?
– নাহ!
বাবা।আমি জানি,তুমি এই কথা গুলো তোমার ওই লাজহীন ছেলে টাকে বলেছ।এতো বোঝাই কিছু তেই বুঝতে চায় না বুঝেছ? পারলে দরজা খুলে রাখে ও।লম্বা মানুষের বুদ্ধি আসলেই হাঁটুতে থাকে অসহ্য।রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে বলেন,
– তুই আবার ওর সাথে রাগ করে থাকিস না মা।তাহলে পেট ফুলে অসুস্থ হয়ে যাবে ও।মিম হাসতে হাসতে বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।সাবধানে থেকো।এদিকে মিহা হৃদিকা এহসানের ঘরে এসে বলে,
– মা আমি কিছুতেই আপনার ছেলের সাথে গুছিয়ে সংসার টা করে উঠতে পারছিনা।প্লিজ বাবাকে বুঝিয়ে বলো?
– কি বোঝাবো বউ মা? ইমানকে নিজের পেটে না ধরলেও আমার সন্তান বুঝেছ? আমি চাই না আমার এক ছেলের জন্য অন্য ছেলে কষ্ট পাক বুঝেছ? তুমি যদি ভেবে থাকো ইমান ও মিম কে বাড়ি ছাড়া না করতে পারলে ইশান কে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে।তা কখনো হবো না বুঝেছ? প্রয়োজনে আমি তোমাকে এই বাড়ি থেকে এবং আমার ছেলের জীবন থেকে দূর করে দেবো।তবু্ও আমার দুই সন্তানকে নিজের কোল ছাড়া করবো না বুঝেছ?
কিছুক্ষণ পর,
মিম ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে,মা তোমার মন খারাপ কেন? আপু কেন তোমার ঘর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেলো বলো তো? হৃদিকা এহসান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ওর হাত ধরে বলে,
– মা তোর মতো কেউ এই সংসার টাকে ধরে রাখতে চায়না বুঝেছ? তারপর আনমনে বলে ফেলে,
– বুঝতে পারিনি নিজের কৃতকর্মের ফল এতো তাড়াতাড়ি পাবো?
– কি হলো মা? এসব কি বলছ?
– কিছুনা মা,শুনলাম নাকি তুই আমার ছেলের কাছে মা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছ? মিম কাপালে হাত ঠেকিয়ে বলে,
– হায় খোদা কপাল আমার,এটা ও কি মাকে এসে বলার মতো কথা বলো তো? কোন দিন দেখবে আমি তোমরা ওই অতি বুদ্ধিমান ছেলের মাথা ফাটিয়ে ফেলবো।
– তবুও স্বীকার তো করবি? আমার ছেলে তোকে চোখে হারায় প্রতি সেকেন্ড প্রতি মুহুর্ত? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– ক’দিন যাক তারপর আর তাও থাকবে না মা।সব আদর আহ্লাদ একেবারে ফুঁসসস হয়ে যাবে বুঝেছ? মিসেস হৃদিকা আলমারি থেকে তার একটা শাড়ি আর কিছু গহনা বের করে ওকে দিয়ে বলে,
– মা এই গুলো আজ বিকেলে পরিস তো।তোর মুখ দেখানো অনুষ্ঠানের জন্য তোর বাবা নিজেই এই শাড়ি আর গহনা গুলো পছন্দ করেছে।
– ওয়াও মা,শাড়ি টা বেশ সুন্দর তো? কিন্তু ব্লাউজ?
– তোর ব্লাউজের সাথে সাথে এটাও ঠিক করে এনেছি।এবার গিয়ে ঝটপট রেডি হয়ে আয় তো? মাহি আলম চৌধুরী মেয়েকে ফোন করে বলেন,
– বিয়ের পরে মা কে তো একবারে ভুলে গিয়েছ?
– মোটে ও না মা।আজ বিকেলে আমার মুখ দেখানো অনুষ্ঠানে আসছো তো?
– কেন আসবো না মা? রায়হান ভাই ও আহমেদ ভাই একটু আগে এসেছিল।আচ্ছা সোনা মা এবার রাখি? একটু ব্যস্ত আছি।
– আচ্ছা মা নিজের খেয়াল রেখো?
– হ্যাঁ সোনা বুঝে গিয়েছি। বিকেলে মিম আয়নার সামনে বসে তৈরি হচ্ছিল তখন হঠাৎ ইশান এসে ওর পিঠে চুমু খেয়ে বলে,
– আমার যে কি অবস্থা? না চাইতেও বারবার তোমার কাছে ছুটে আসি।মিম প্রচন্ড রকমের রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
– অসভ্য লোক একটা।আপনি কি চান আমি এখন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মা বাবা কে ডাকি?
– কামওন বেবি,তুমি কেন বুঝতে পারছনা? আমি আজো তোমাকে ভালোবাসি? মিম বসা থেকে উঠে এসে ইশানের শার্টের কলার ধরে বলে,
– দরজা টা ওই দিকে আপনি দয়া করে যাবেন না কি?
– আমি তোমরা সাহস দেখে দিন কে দিন অবাক হয়ে যাচ্ছি।
– আরে ভাই আপনি কেন বুঝতে পারছেনা? আমি আপনার ছোটো ভাইয়ের বিয়ে করা বউ মাথায় সমস্যা আছে কি?
– না তবে অনেকে তো বড় ভাসুরের সাথে প্রেম করে প্রেগন্যান্ট ও হয় সমস্যা কি? হঠাৎ রাদ ও ইরাদ এসে ইশানকে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে এসে বলে,
– সেই কখন থেকে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে তোর অসভ্যতামো গুলো দেখছি।কখনো ভেবেছিস? এগুলো ইমান দেখলে আমাদের সম্পর্কে ভাববে কি?
– আরে ভাই,আমি তো বড় ভাই হিসেবে নিজের ছোটো ভাইকে ওই ডাইনির হাত থেকে প্রটেক্ট করার চেষ্টা করছি? হঠাৎ কেউ বলে ওঠে,
– তোকে কি আমি আমাকে প্রটেক্ট করতে বলেছি? শোন ইশান আমি কিন্তু সবটাই বাহিরে দাঁড়িয়ে দেখেছি।কাজ টা তুই মোটেও ঠিক করিসনি।আমি কিন্তু আমার বউকে প্রথম দিন থেকে ভালোবাসি আর কখনো এমন কিছু করলে তোর অবস্থা খারাপ করে দেবো।তার আগে একটু ভাববো ও না আমি।
– আরে ভালো মানুষির কোনো দাম নেই।আমি ওই শাঁকচুন্নির হাত থেকে তোকে বাঁচাতে চাইছি? রাদ একটু এগিয়ে এসে নিজের মুখ টা ইশানের গালের কাছে এনে বলে,
– আরে ভাই তুই খেয়ে টেয়ে এসেছিস নাকি? ইশান ঢুলতে ঢুলতে বলে,
– ওই ডাইনিকে আমার ভাইয়ের মাথা কিছুতেই খেতে দেবে না আমি।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– যা শয়তান ছিঃ।
– এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি।মিম ওকে দেখে ছুটে এসে ওর বুকে ঝাপিয়ে পরে জিজ্ঞেস করে,
– এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– রাগ কোরো না সোনা।এতক্ষণ যাবত গালাগাল করার পর খেয়াল করে দেখি খেয়ে এসেছেন তিনি।মিম হাসতে হাসতে বলে,
– নাউজুবিল্লাহ ছিঃ? আর আমি এতক্ষণ ধরে বুঝতে পারিনি? যাই হোক আপনার বাবার খেয়ে টেয়ে আসার অভ্যাস আছে নাকি? ইমান ওর নাকের ওপরে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,
– অস্তাগফিরুল্লাহ্,বউ তাহলে চাকরি থাকবে নাকি? অধরা এসে হঠাৎ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বলে,
– জামাই বউ তে মিলে প্রেম করা হচ্ছে? বলি নিচে যেতে হবে না নাকি? ইমান মিমের শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিতে দিতে বলে,
– হ্যাঁ ভাবি তুমি যাও।আমি এক্ষুনি ওকে নিয়ে নিচে আসছি।