#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৮
খুব ভালোবাসি সোনা,কিছু হতে দেবো না তোমাকে।মিমকে ইমানের বুকে দেখে খুব অসহ্য লেগেছিল ইশানের কাছে আর তাই ও ধড়ফড় করে সেখান থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।মিহা ওকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
– তোমার মনে হয় না ইশান? আমাদের ও একটা সন্তানের প্রয়োজন আছে।ইশান বিরক্ত হয়ে তার উওরে বলে,
– দেখো মিহা আমি এখন চাই না সন্তানের বাবা হতে আর এই মুহূর্তে আমি তৈরি নই।তাই প্লিজ এখন সব নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করো না কানের কাছে।মিহা তেড়ে এসে ওকে বলে,
– তুমি যে এই মাএ চুমু খেয়ে এলে মেয়েটিকে (মিম)?
– দেখো সব কিছুর ব্যাখা আমার কাছে নেই আর আমি কৈফিয়ৎ দিতে বাধ্য নই তোমাকে?
– তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে কেন করেছিলে ইশান? মিমকে দেখাতে? ইশান অনিচ্ছা সত্ত্বেও তখন সহবাসের জন্যে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দেয় মিহাকে।এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি? আজ প্রথম ইশান সহবাসের সময় মিমের কোনো কথা তোলেনি মিহার কাছে।দু’জনেই যেন অন্ধকারে কোথাও হারিয়ে গেলো আজ? কিছু শারিরিক চাহিদার মাঝে।সকালে মিহা ঘুম থেকে উঠে দেখে ইশান নেই বিছানাতে।ও মনেমনে যখন ভাবলো,”হয়তো ইশান চাইছে সন্তানের বাবা হতে?”,তখন ওর চোখ গিয়ে আটকায় টেবিলের ওপরে এক গ্লাস পানির সাথে রাখা এক পাতা গর্ভ নিরোধক পিলের দিকে।তখন অনেক প্রশ্নের জটলা বেঁধে যায় মিহার মাঝে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,”আদৌও লোকটা কি ভালোবাসে আমাকে?” উঠে এসে টেবিলের ওপরে রাখা চিরকুট টা খুলে দেখে ইশান স্পষ্ট ভাষায় লিখে রেখেছে,” আমি এখন চাই না বাবা হতে।” ও তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও গর্ভ নিরোধক পিল খেয়ে ফোন করে কান্নাকাটি করে সায়েরা বানুর কাছে।সে নাতনির কথা শুনে উল্টো তাকে ঝাড়ি মেরে বলে,
– ওরে বোকা মেয়ে, গর্ভ নিরোধক পিল কে খেতে বলেছে তোমাকে? এরপর হতে জামাই বললে খাবি না।”খেয়েছি” বলে চালিয়ে দিবি তার কাছে।তারপর পেটে বাচ্চা এলে দেখবি আমার নাত জামাই কতো ভালোবাসে তোকে।মিমের জামাই কে দেখো না? কি রকম বউ পাগল? বউয়ের কথাই শেষ কথা তার কাছে?
ঠিক সে রকম আমার নাত জামাই ইশান ও তোর পেটে বাচ্চা এলে সারাক্ষণ চোখে হারাবে তোকে।
সকালে,
ইমান ঘুম থেকে উঠে মিমের জন্য কাচ্চিবিরিয়ানি রান্না করেছে নিজের হাতে।অধরা মন খারাপ করে ইরাদ কে খোঁচা মেরে বলে,
– কেমন মানুষ তুমি? বউ কে কিভাবে ভালোবাসতে হয়? ব্যস্ত রাখতে হয়? শেখো ছোটো ভাইয়ের (ইমান) কাছ থেকে।ইরাদ হাসতে হাসতে বলে,
– হ্যাঁ সারাজীবন তোমার জন্য কিছু করলাম না।শুধু বিয়ের পরে দু’টো বাচ্চা দিলাম তোমাকে।তুমি চাইলে আবারো সন্তানের মা হতে পারো।আমার কোনো আপত্তি নেই তাতে।অধরা রেগে গিয়ে বলে,
– আশ্চর্য!
আমি কি বাচ্চা চেয়েছি নাকি তোমার কাছ থেকে? বলি একটু মাঝেসাঝে রান্না করে ও খাওয়াতে পারো আমাকে?
– হ্যাঁ তারপর হুদাই বাপের বাড়ি গিয়ে বসে থাকো।আমি বুঝি চিনি না তোমাকে? মিম দুপুরে বিরিয়ানির গন্ধ শুকতে শুকতে নিচে এসে বলে,
– কি খাবার আছে? আমাকে খেতে দাও প্লিজ পেটে ইঁদুর নাচানাচি করছে সেই কখন থেকে।ইমান রান্নাঘর থেকে বের হতেই মিম এগিয়ে এসে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে,
– কি তুমি? ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেলে কেন এভাবে? ইমান ওকে বাম হাত দিয়ে জাপ্টে ধরে বলে,
– আজ আমার লক্ষীটি এবং লক্ষী ছানা টা কাচ্চিবিরিয়ানি খাবে।মিম আচারের গন্ধ পেয়ে ইমানকে বলে,
– আমাকে একটু তেঁতুল এনে দেবে? নয়ন তাঁরা এগিয়ে এসে ওকে বলেন,
– তুই আগে কাচ্চিবিরিয়ানি খেয়েনে না মা? ছেলেটা (ইমান) তাপে পুড়ে অনেক কষ্ট করেছে সকালে উঠে।মিম ও শাড়ির আঁচল দিয়ে ইমানের কপালের ঘাম মুছে দিয়ে বলে,
– আশ্চর্য!
হঠাৎ এতো কষ্ট করতে বলেছে তোমাকে?
– জানতাম,জানলে তুমি বকবে এর জন্যে আমি কিছু বলিনি তোমাকে।মিম কাচ্চিবিরিয়ানি মুখে দিয়ে বলে,
– ওয়াও,কি টেস্ট? খেতেও দারুণ লাগছে আমার কাছে।ইমান তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবারের থালাটা মিমের হাত থেকে কেরে নিয়ে বলে,
– হোল্ড অন বেবি,আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি নিজের হাতে।মিমের এতো যত্ন দেখে মিহা নির্লিপ্ত ভাবে চেয়ে আছে ইমানের মুখের দিকে।ও কিছুতেই ভাবতে পারছেনা এমন ও মানুষ হয়? যারা বউ কে এতো ভালোবাসে? খেতে খেতে মিম ইমানকে বলে,
– দেখো না বাবুর আব্বু,আর পারছিনা প্লিজ ঠাসাঠাসি করো না এভাবে।ইমান মুখ টা কেমন করে আহ্লাদী কণ্ঠে বলে ওঠে,
– আর একটু খাও না বাবু? আর একটু খাও গুলুগুলু? এরপর আমি জোর করবো না তোমাকে।তখন হৃদিকা এহসান এসে মিমকে বলেন,
– এই নে মা, টক ও ঝালের আমসত্ত্ব খেতে বেশ লাগবে তোর কাছে।তখন হঠাৎ খাবারে আষ্টে গন্ধ পেতেই মিম বমি করে ইমানকে ভিজিয়ে দেয় সাথেসাথে।ইমান পরম যত্নে মিমের মাথা টা আগলে রেখেছে নিজের বুকে।বারবার ওকে আস্বস্ত করে বলে,
– ভয় নেই সোনা,ভয় নেই আমি আছি তো তোমার সাথে? কিছু হবে না বাবু একটু শান্ত হও? মা এক গ্লাস পানি দাও এদিকে।মিম কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– “সরি” আমার জন্য তোমাদের খাওয়া নষ্ট হয়ে গেছে।আহমেদ সাহেব এবং রায়হান সাহেব উঠে এসে ওর মাথায় হাত রেখে বলে,
– কি যে বলো না মা? কি হয়েছে? কিছু হয়নি তো? তুই একদম কাঁদবি না ঠিক আছে? মিহা এগিয়ে এসে বলে,
– আপনি যতই বলুন না কেন বাবা? আপনাদের খাওয়া তো নষ্ট হয়ে গেছে?
– মেঝো বউ মা, তুমি কি সবসময় অশান্তি করতে তৈরি হয়ে থাকো বাড়িতে? তাহলে শুনে রাখো,আমাদের একটু ও অসুবিধে হচ্ছে না ঠিক আছে? ইশান টেবিল থেকে উঠে এসে বলে,
– সেটাই,ইমান তুই ঘরে নিয়ে যা ওকে।ইমান ঘরে এসে মিমের জামাকাপড় বদলে নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে বুকের মধ্যে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কাঁদছ কেন তুমি? কেউ কিছু মনে করেনি তাতে।নিপা এসে বলে,
– সেটাই ছোটো,ছোটো ভাই ভালো করে খাইয়ে দাও ওকে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– না আগে উনি খাবে।তারপর আমি খাবো ওনার হাতে।কি অবস্থা তোমার? ইচ্ছে করে কেন আমার হাতের আঙুল কামড়াচ্ছ? তোমার মাথা ঠিক আছে? ইমান দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,
– সি ইউ নট ফর মাইন্ড বেবে।না মানে হলকা পাতলা করে ছোট্টো একটু লাভ বাইট দিলাম তোমাকে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– আপনার ওই চান্দী ফাটিয়ে দেখি তার মধ্যে কি আছে? ইমান ওকে নিজের কোলের ওপরে শুইয়ে দিয়ে উপুর হয়ে চুমু খেতে খেতে বলে,
– ব্রেইন আমার শুধু বউ বউ করছে ঠিক আছে? মিহা মিমের ঘরের সামনে থেকে যাওয়ার সময়ে খেয়াল করে দেখে,ইমান কত আদর আহ্লাদ করছে মেয়ে টাকে।ওর মনে হলো যেন যখন ও মা হবে তখন ইশান ও ঠিক এভাবে আদর আহ্লাদ করবে ওকে।গল্প করতে করতে মিম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যায় ইমানের বুকে।ইমান টুপ করে হঠাৎ সরে এসে মিমের পেট জড়িয়ে ধরে বলে,
– তাড়াতাড়ি সুস্থ শরীরে চলে এসো বাবা,আমি কিছুতেই এভাবে দেখতে পারছিনা তোমার মা কে।খুব ভালোবাসি তো? তাই তার কষ্ট একটু ও সহ্য হচ্ছে না আমার কাছে।