কর্নেল_সাহেব পর্ব ১৭

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৭

– বারে আপনি যে আমার স্বামী,আমি ভালোবাসি আপনাকে।গত ছয় সপ্তাহ ধরে আমি আপনার সাথে সংসার করছি।আমি কি একটু ও চিনতে পারিনি আপনাকে? না মানে, যে কেউ এসে আমার স্বামীর চরিত্র সম্পর্কে প্যারাগ্রাফ এবং কম্পোজিশন বানিয়ে বলবে সেটা কেন বিশ্বাস করতে হবে আমাকে? আর এমনি তেও বৈবাহিক সম্পর্কে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস,ভরসা ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকা প্রয়োজন।যেটা আমাদের আছে আর এখন যতই বিপদ আসুক না কেন? আমার স্বামী নামক মানুষটির কোনো ক্ষতি করার আগে তাকে লড়াই করতে হবে আমার সাথে।তার কর্মক্ষেএে আমি তার সাথে নাই থাকতে পারি।বাড়িতে তো থাকবো আমি তার সাথে? শুনুন,বাবা (রায়হান)।বলতে খারাপ লাগলে ও আমি বলছি,আমি চাইনা এমন অসুস্থ পরিবেশে আমার সন্তান জন্ম দিতে।তাই আপনি অনুমতি দিলে।আমি আপনার ছেলেকে নিয়ে আগামী এক বছরের জন্যে চলে যেতে চাই তার সাভারের ফ্লাটে।যেহেতু,আপনার মেঝো ছেলের বউ (মিহা) বারংবার দাবি করছে আমাদের জন্যে স্বামীর সাথে মন দিয়ে সংসার টা করতে পারছেনা সে।হৃদিকা এহসান এগিয়ে এসে বলে,
– মা তুমি কোথাও যাচ্ছ না এই বাড়ি থেকে।কাওকে যদি যেতেই হয় তাহলে মিহা যাবে কারণ ও আজ বড্ড বেশি বারাবাড়ি করে ফেলেছে।মিহা এগিয়ে এসে বলে,
– মা আমার কথা শুনুন?
– আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না।ঠিক আছে? বুঝতে পারিনি যে তোমাকে ছেলের বউ করে এনে এই খেসারত দিকে হবে আমাকে।ইশানের কাছে এগিয়ে আসতেই ও রেগে গিয়ে বলে,
– নোংরা মেয়ে মানুষ যেন কোথাকার? আমার বাবা মায়ের কথাই শেষ কথা আমার কাছে।আহমেদ সাহেব মিমের উদ্দেশ্য বলেন,
– তোর শরীর ভালো নেই মা।গিয়ে রেস্ট কর অনেক রাত হয়েছে আর হ্যাঁ, বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা আমি শুনতে চাই না তোর মুখে।ইমান বাবা পারলে আমাদের ক্ষমা করিস আর মা (মিম) কে ঘরে নিয়ে যা নিজের সাথে।ইমান এগিয়ে এসে তার হাত চেপে ধরে বলে,
– আশ্চর্য!
বড় বাবা? তুমি কেন ক্ষমা চাইছ আমার কাছে? আর এমনি তেও একটা জিনিস আজ প্রমাণ হয়ে গেলো যে তোমাদের বউ মা অনেক ভালোবাসে আমাকে।ও পুরোটা সময় যে সাহস যুগিয়েছে আমাকে এবং তার থেকেও বড় কথা যে নিজের স্বপক্ষে কিছু যুক্তি এবং প্রমাণ আমার কাছে ও আছে কিন্তু তোমাদের বউ মায়ের যুক্তি এবং বিচক্ষণতা দেখে আমাকে আর কিছু করতে হয়নি।সেই তো আমার হয়ে লড়াই করলো সবার সাথে। তখন হঠাৎ মিম দৌড়ে ছুটে যায় ওয়াস বেসিনের কাছে।নয়ন তারা গিয়ে ওর মাথা টা চেপে ধরে ইমানকে বলে,
– ভয় নেই বাবা এবার থেকে সাত-আট মাস এ রকম বমি,গা গুলনো,খাবারে অনিহা ও অস্বস্তি হবে।
– কিন্তু বড় আম্মু? আমার যে খুব ভয় করছে? একবার ফোন করবো ডাক্তারের কাছে? কিছুক্ষণ পর,
অনিক এসে মিমের চেক-আপ করে বলে,
– আরে বন্ধু ভয়ের কিছু নেই।এটা প্রেগন্যান্সিতে নরমাল।
– ঠিক আছে।
– তবে হ্যাঁ,ভালো করে নজর দিবি ভাবির খাওয়া দাওয়ার দিকে।কারণ, এই মুহূর্তে ভাবির হিমোগ্লোবিন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত।আমি রিপোর্টে দেখলাম,ভাবির শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অনেক কমে গেছে।ইমান মৃদু হেসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– আমি তো আছি? সবসময় যত্ন করবো আমার যাদু পাখি টাকে।রিক্ত হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে গিয়ে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমার রাঙা মায়ের বাবু হবে? মিম ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এখন ঘুমাও মা,অনেক রাত হয়েছে।জোভান হাসতে হাসতে বলে,
– বিজ্ঞান বইতে পরেছি এই সময় অনেক যত্নের প্রয়োজন।তাই আমরা সবাই মিলে খুব যত্ন করবো আমাদের ছেটো মা কে? অধরা তার ক্লাস এইটে পড়ুয়া ছেলের পাকাপাকা কথা শুনে বলে,
– তুই এ ঘর থেকে যাবি? না কান মলা খাবি আমার হাতে?

এদিকে,সায়েরা বানু নাতনি কে বুঝিয়ে বলেন,
– যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।মিমকে আমরা যত বোকা ভেবেছি ও আসলে ততটা বোকা নয়।সবসময় এক পা এগিয়ে থাকে আমাদের থেকে এবং এর থেকেও বড় কথা দিদি ভাই তোকে এ বাড়ির লোকেদের ভরসা আবার জিতে নিতে হবে।না হলে মিমকে আমরা হারাতে পারবোনা কোনো ভাবে।তুই কষ্ট করে হলেও ক’দিনের জন্যে শশুর শাশুড়ির পা ধরে কান্নাকাটি করে মানিয়েনে তাদের দু’জন কে।তার মধ্যে আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়? ওকে আর ওর বাচ্চাকে।

একদিন দুপুরে,মিম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের সাথে গল্প করছিল।তখন হঠাৎ অনুভব করলো অসম্ভব ব্যাথা করছে ওর পেটে এবং খেয়াল করে দেখে ক্ষীণ রক্তের স্রোত বেয়ে যাচ্ছে ওর পা থেকে।তখন হঠাৎ অধরা এসে বুঝলো,”হয়তো মিম তার সন্তান হারিয়েছে?” ও কিছু বলে ওঠার আগেই মিম ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলেছে।মিহার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মিটিমিটি হাসি জানান দিচ্ছে কাজ টা ওই করেছে।অনিক এবার এসে মিমের চেক-আপ করে ইমানকে আলাদা ঘরে নিয়ে জানায়,
– ভয়ের কোনো কারণ নেই,মা ও বাচ্চা দু’জনেই সুস্থ আছে।তবে আমি একশো শতাংশ শিওর কেউ ভাবিকে খাবারে মিলিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু খাইয়েছে? ইমানের কাছে বিষয় টা বেশ পরিষ্কার যে এই কাজ টা কোনো ভাবে মিহা করেছে।তখন হাঠৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে ইমানের কাছে।ও ফোন টা রিসিভ করার সাথেসাথে ওপাশ থেকে নূর জাহান বলে ওঠে,
– বাবা আমার মেয়ে টা কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ,ভালো আন্টি আপনার অন্য কিছু জানার আছে? সে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
– বুড়ি (সায়েরা) টা কে বেশ হাসিখুশি দেখছি সকাল থেকে।আমার বিশ্বাস এই দাদি ও নাতনি মিলে কিছু ঘটিয়েছে আমার মেয়ে টার সাথে।ইমান নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আন্টি আপনি এতো টা কি করে শিওর যে ওরাই এই কাজ টা করেছে মিমের সাথে?
– তুমি একটু লাইনে থাকো বাবা।আমি এখনি কথা বের করছি আমার শাশুড়ির মুখ থেকে।তারপর নূর জাহান শাশুড়ির জন্যে থালায় পান সাজিয়ে নিয়ে এসে তার হাত ও পা টিপে দিতে দিতে বলে,
– মা আজকে খুব খুশি লাগছে আপনাকে? সায়েরা বানু পানের পিক ফেলে বলেন,
– আরে নূর বলা হয়নি তোকে।আজ এমন একটা ঔষধ খাইয়েছি না, যে এতক্ষণে মা ও বাচ্চা দু’জনেই বোধহয় পরো পারে চলে গেছে? নূর জাহান মন খারাপ করে বলেন,
– কি যে বলেননা মা? আপনার ছেলে এই মাএ ফোন করে বললো যে তার মেয়ে ও নাতি দু’জনেই সুস্থ আছে? সায়েরা বানু মুখ চুন করে বলেন,
– কি কস তুই? ওই ওঝা তাহলে ঠকিয়েছে আমাকে?
– সে তো মা আপনি জানেন মা? আমি কি করে বলবো আপনাকে? সায়েরা বানু ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতেই নূর জাহান ইমানকে বলে,
– শুনলে তো বাবা? এরা ঠিক থাকতে দেবে না আমার বাচ্চা মেয়ে টা কে? ইমান কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করে,
– তাহলে আপনি কেন সাহায্য করতে চাইছেন আমাকে?
– কিছু সম্পর্ক বাবা রক্তের বন্ধনের থেকে ও গভীর হয় ঠিক আছে? এখন মিম আমাকে “আম্মাজান” না বলে ডাকলে ও।আগে তো কোনো এক সময় মা বলে ডেকেছে আমাকে।ধরে নাও আমি বিপদ আপদ থেকে রাক্ষা করতে চাইছি আমার মেয়ে টাকে? ইমান কোনো কথা না বলে মৃদু হেসে ফোন কাটে।তারপর ঘরে এসে দেখে মিহা মিমের হাত ধরে বলছে,
– আমি কিছু তেই মেনে নিতে পারছিনা বোন যে তোর বাচ্চা টা নষ্ট হয়ে গেছে?
– আমাদের বাচ্চা টা যে নষ্ট হয়ে গেছে? এটা কে বলেছে আপনাকে? আপনি কি ডক্টর যে এতো শিওর হয়ে কথাটা বলছেন ওকে? শুনুন,যার সাথে আল্লাহ তাআ’লা আছেন,তার শত চেষ্টা করলে ও ক্ষতি করা যায় না ঠিক আছে? আপনার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি আমার স্ত্রী এবং সন্তান দু’জনেই সুস্থ আছে।কথাটা শুনে মিহার মনে হলো যেন বাংলা সিনেমায় যেমন বিদ্যুৎ চমকায়? ঠিক তেমন টা হয়েছে ওর সাথে মুহূর্তে যেন ঠোঁটে হাসি মনের শান্তি গায়েব হয়ে গেছে? খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখে,
ইশান হাত ধরে বসে আছে ঘুমন্ত মিমের কাছে।তারপর হঠাৎ ইশান মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,”আমি জানি,ইমান কিছু হতে দেবে না তোমাকে।” মিহা মনেমনে বলে,”তুমি কি বুঝতে পারো না ইশান? কেনো অসম্মান করছ আমাকে?” তখন ইমান বাথরুম থেকে বের হয় ইশান কে জিজ্ঞেস করে,
– তুই কি কোনো কাজে এসেছিস আমার কাছে?
– হ্যাঁ মিমকে দেখতে এসেছিলাম,ডক্টর কি বলেছে?
– মা ও বাচ্চা দু’জনেই সুস্থ আছে।তবে হয়তো খাবারে কোনো সুবিধে হয়েছে? মিমের তখন ঘুম ভেঙে গেছে ইমান ওকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ভয় নেই সোনা বাবু ঠিক আছে।এখন আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো।তারপর তো ঔষধ গুলো খেতে হবে? মিম ওর বুকে মাথা রেখে বলে,
– আমার এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমার সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।ইমান শক্ত করে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে মিহাকে চোখে রাঙিয়ে বলে,
– কারো সাধ্য নেই যে আমার অগোচরে এসে তোমার এবং আমাদের সন্তানের কোনো ক্ষতি করে দেবে।এতো সাবধানে থাকার পরেও যে এতকিছু হয়ে গেলো না? এবার আমি দেখি সে কি করে কষ্ট দেয় তোমাকে? আমি যেমন ভালো মানুষ,তেমন খারাপ মানুষ এটা বোধহয় দেখানোর সময় হয়েছে তাকে।সে বোধহয় জানে না আমি কতোটা ভালোবসি তোমাকে? খুব ভালোবাসি সোনা,কিছু হতে দেবো না তোমাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here