কর্নেল_সাহেব পর্ব ১৬

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৬

– ধুরর,কি করছ তুমি? দরজা খোলা আছে যে কেউ ঢুকে যাবে।ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– তাতে কি? ঢুকলে ঢুকুক,দেখলে দেখুক লোকে।আমি তো আর পরকীয়া করছি না,প্রেম করছি না তাও আমার বিয়ে করা বউয়ের সাথে।নিপা ও অধরা এসে ইমানকে বলে,
– ছোটো ভাইয়া আপনি একটু স্টাডিতে জান।আপনার ভাইদের কাছে।তারা হয়তো কোনো কাজে ডেকেছে আপনাকে।ইমান যেতেই অধরা ও নিপা মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কি রে ছোটো? আদর খাচ্ছিলি ছোটো ভাইয়ের কাছে? নিপা মিমকে খোঁচা মেরে বলে,
– টুকি,আড়াল থেকে কিন্তু আমরা সব দেখে নিয়েছি।ঠিক আছে? তখন মিম অনেক টা লজ্জা পেয়ে ওদের বলে,
– আপু একটা আর্জেন্ট কল এসেছে।আমি ফোন টা দিয়ে আসি তোমাদের ছোটো ভাইয়ের কাছে।অধরা হাসতে হাসতে নিপাকে বলে,
– থাক নিপা ওকে যেতে দাও আর লজ্জা দিয়ো না মেয়ে টাকে।

এদিকে,মিহা কিছুতেই মনে নিতে পারছেনা যে মিম ওর আগে সন্তানের মা হবে।বিষয় টা একদম অবিশ্বাস্য ওর কাছে।তাহলে কি এর জন্যে দাদি (সায়েরা) বলেছিল বিয়ের পরে বাচ্চা নিয়ে নিতে? তখন নেই তো কি হয়েছে? এবার হবে।আমি কিছুতেই মিমের সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখতে দেবো না আমার সন্তানের আগে।

মাঝরাতে,
হঠাৎ চেঁচামেচির শব্দ আসে হল ঘর থেকে।ইমান মিমকে নিয়ে নিচে যেতেই ইশান তেড়ে এসে ওকে বলে,
– তোর বউয়ের (মিম) পিঠে চুমু খেয়েছি বলে।তুই এতো নোংরা ভাবে প্রতিশোধ নিবি আমার কাছ থেকে? আদিব সাহেব ছুটে এসে ইমানের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
– এখনি আমি পুলিশ কে ফোন করবো।কাজ টা তুমি ঠিক করলে না আমার মেয়ের সাথে।ইমান একবার আড়চোখে চেয়ে মিহা কে দেখে আদিব সাহেব কে বলে,
– আমার শার্টের কলার ছাড়ুন,নয়তো বাজে ভাবে পস্তাতে হবে আপনাকে।ইশান আবারো ওর কাছে তেড়ে এসে বলে,
– লজ্জা করে না তোর? তুই কি এবার মারবি বাবাকে? মিম প্রচন্ড রেগে গিয়ে ইশান ও আদিব সাহেব কে ধাক্কা মেরে দূর সরিয়ে দিয়ে বলে,
– ভদ্রভাবে এবং সম্মান দিয়ে কথা বলুন আমার স্বামীর সাথে।মিহা কাঁদতে কাঁদতে এসে মিমকে বলে,
– তোর স্বামী যে,তোর বোন কে রান্নাঘরে একা পেয়ে তাকে মলেস্ট করার চেষ্টা করলো এর পর ও তুই সাপোর্ট করবি তাকে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– নষ্টা মেয়ে মানুষ কোথাকার।প্রমাণ কি যে আমার স্বামী রান্নাঘরে এসে নোংরামো করেছে তোমার সাথে? আদিব সাহেব তেড়ে এসে ছোটো মেয়ে কে বলেন,
– এই ঘড়ি টা আমরা পেয়েছি রান্নাঘর থেকে।মিম হাসতে হাসতে বলে,
– ঘড়ি টা রান্নাঘর থেকে পাওয়া গেলেই এর মানে এই হয় না যে আমার স্বামী নোংরামো করেছে আপনার মেয়ের সাথে।বেশ বুঝতে পারছি,নিজে তো মা হতে পারছেনা।তাই আমার শান্তি নষ্ট করতে চাইছে এভাবে।হৃদিকা এহসান এগিয়ে এসে বলেন,
– আমি ও মা একমত তোমার সাথে।ইশান এগিয়ে এসে মিহাকে দেখিয়ে বলে,
– তোমার কি মনে হয় মা? একটা মেয়ে নিজের দুরবস্থা সম্পর্কে এভাবে বানিয়ে বলতে যাবে? দেখো ওর শাড়ি ব্লাউজ কিছু ঠিক নেই ও কেন মিথ্যে বলতে যাবে আমাকে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– আপনার বউ নাটক করছে।সে নাটক আপনার বোঝার ক্ষমতা নেই ইশান ঠিক আছে? রাদার আমি বলবো আপনি আপনার ভাইকে চেনেন না।শুধুই ভাই ভাই বলে বুলি আউড়াতে থাকেন নিজের মুখে।আদিব সাহেব নিজের মাথা ঠাণ্ডা রেখে ছোটো মেয়ে কে জিজ্ঞেস করে,
– তুমি এতো কনফিডেন্সের সাথে কি করে বলছ? যে ইমান এই নোংরামি গুলো করেনি তোমার আপুর সাথে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– আমি আগে জানতে চাই যে এসব করার পেছনে আমার স্বামী কি উদ্দেশ্য আছে? ইশান এগিয়ে এসে দু’হাত দিয়ে মিমের গাল চেপে ধরে বলে,
– বাচ্চা তুমি? বুঝতে পারছনা যে তোমার বাচ্চা হবে? এখন ও কাকে দিয়ে নিজের শরীরের চাহিদা মেটাবে? তাই একা পেয়ে এমন করেছে আমার বউয়ের সাথে।মিম হাসতে হাসতে বলে,
– কি বোকা আপনি? বালাই ষাট,সওর,আশি আমি তবুও আপনাকে বিশ্বাস করিনি ঠিক আছে? সাহেরা বানু এগিয়ে এসে মিমকে বলেন,
– তাহলে দেখি তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– অবশ্যই আছে,বাবা (রায়হান) তোমার মনে আছে? দুপুরে তোমার ছোটো ছেলে তার হাত ঘড়ি টা খুলে ডাইনিং টেবিলের ওপরে রেখে গেছে? তুমিই তো আমাকে ডেকে বলে ছিলে ঘড়ি টা ঘরে নিয়ে যেতে?
– হ্যাঁ মা,আমি ও তো সেটাই ভাবছি।সেই কখন থেকে।
– তাহলে একটু ভেবে দেখো,তোমার ছোটো ছেলেকে ফাঁসানো কঠিন কিছু না এই মেয়েটির কাছে।মিহা কাঁদতে কাঁদতে এসে রায়হান সাহেবের পা ধরে বলে,
– বাবা আমি কেন মিথ্যে বলতে যাবো সবার কাছে? আদিব সাহেব রেগে গিয়ে ছোটো মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন,
– বাদদে মা,মেয়ে টা দু’চোখে মিথ্যে ভালোবাসার পট্টি পরে আছে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– কে যে পট্টি পরে আছে মিস্টার আদিব চৌধুরী।সে সময় এলে জানা যাবে।প্লিজ অধরা ভাবি ও নিপা ভাবি রাগ কোরো না আমার ছেলেদের নিচে ডাকতে হবে।নিপা মৃদু হেসে বলে,
– তোর যা ইচ্ছে কর,আজ এর একটা বিহিত করার প্রয়োজন আছে।গত ষোলো বছর ধরে এ বাড়িতে সংসার করছি ছোটো ভাইয়ের কোনো খারাপ জিনিস বা বাজে অভ্যাস পরেনি আমাদের চোখে।মিম হাঁক পারতেই সাভিন ও জোভান ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে ওকে।তারপর বেশ চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– তুমি ঠিক আছো ছোটো মা? ছোটো বাবু ঠিক আছে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– হ্যাঁ বাবা,তোমাদের ল্যাপটপ দু’টো বের করে আনতো আমাদের সিক্রেট জায়গা থেকে? সাভিন ফুল গাছের মধ্যে থেকে ল্যাপটপ বের এনে জোভান কে বলে,
– দেখেছিস ভাই কি আছে এতে? জোভান হাসতে হাসতে বলে,
– হ্যাঁ ভাম বেড়াল,যেটা ছোটো মা সন্দেহ করেছে? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বউ যখন,তখন তো ডিটেকটিভ হতেই হবে তাকে।ইমান বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।মিম মৃদু হেসে ল্যাপটপ দু’টোর রোর্কড হওয়া ভিডিও প্লে করে দেয় সাথেসাথে।যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মিহা ঘন্টাখানেক আগে ইমানের ঘড়ি টা সরিয়ে রেখেছে খাবার টেবিলের ওপরে থেকে।তারপর মিটিন দশেক আগে রান্নাঘরে এসে ঘড়ি টা মেঝেতে ফেলে রেখে নিজেই নিজের শাড়ির আচঁল এবং ব্লাউজ ছিড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচামেচি করছে করিডরের অন্ধকারে বসে।আদিব সাহেব ও ইশান দু’জনেই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিহার মুখের দিকে।ও এগিয়ে এসে মিমকে বলে,
– বোন হয়তো তোর কোথাও ভুল হচ্ছে? মিম ওকে ঠাসঠাস করে দু’টো চড় মেরে বলে,
– আমার আর ইশানের সাথে যা করার তুই করে ফেলেছিস।আমি ক্ষমা করে দিয়ে ছিলাম তোকে।মায়ের সাথে এতকিছু হওয়ার পরে ও ধৈর্য্য ধরে ছিলাম কারণ আল্লাহ তাআ’লা ওপরে আছেন।কিন্তু আজ তো তুমি তোমার সমস্ত লিমিট ক্রস করে ফেললে।তুমি হাত বাড়ালে শেষমেশ আমার স্বামী এবং আমার অনাগত সন্তানের বাবার দিকে? মিহা আদিব সাহেবের কাছে ছুটে যেতেই উনি ওকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলেন,
– তোমার জন্যে আজকে আমার ঘেন্না হচ্ছে নিজেকে দেখে।আহমেদ সাহেবের কাছে ও ছুটে যেতেই তিনি বিরক্ত বোধ করে বলেন,
– আমি কোনো কথা বলতে চাই না তোমার সাথে।রায়হান সাহেবের কাছে ছুটে যেতেই সে ওকে ঝাড়ি মেরে বলেন,
– দয়া করে তোমার এই মুখ টা আর কখনো দেখিয়ো না আমাকে।সায়েরা বানু নাতনির পক্ষ নিয়ে হৃদিকা এহসান কে বলেন,
– অন্তত আপনি তো শুনবেন ও কি বলতে চাইছে? নয়ন তাঁরা মৃদু হেসে বলেন,
– আপনাদের মেয়ে কে ক’দিনের জন্যে বাপের বাড়ি নিয়ে জান।খুব সুন্দর রাতবেরাতে ড্রামা দেখিয়েছে।হৃদিকা এহসান এবার হুংকার দিয়ে বলেন,
– আমি কি আমার ছেলেকে চিনি না? ক’মাসের জন্যে বাড়িতে নিয়ে জান আপনাদের এই মেয়ে কে।রাদ ও ইরাদ মিমের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
– আপু তুমি কি করে জানলে এমন কিছু হবে? মিম ইমানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
– আমি মিহাকে দেখে ফেলেছিলাম ঘড়ি টা লুকতে।যখন আপনার ভাইয়ের ফোন নিয়ে গিয়েছিলাম আপনাদের কাছে।কিছু একটা আশংকা করে আমি আমি জোভান ও সাভিন কে বলেছিলাম ওদের ল্যাপটপ দু’টো হলে কোথাও লুকিয়ে দিতে আর এখন বাদবাকি টা একদম জলের মতো পরিষ্কার আপনাদের কাছে।ইমান মিমকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমি খুব ভাগ্যবান যে নিজের স্ত্রী হিসেবে পেয়েছি তোমাকে।আজ একমাত্র তুমি ছাড়া নিজের জন্যে আমি অবিশ্বাস দেখেছি সবার চোখে।একমাত্র তুমি ছিলে যে আমার হয়ে লড়াই করছিলে সবার সাথে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– বারে আমি আপনি যে আমার স্বামী,আমি ভালোবাসি আপনাকে।গত ছয় সপ্তাহ ধরে আমি আপনার সাথে সংসার করছি।আমি কি একটু চিনতে পারিনি আপনাকে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here