কর্নেল_সাহেব পর্ব ১৫

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৫

– “উফফ,এই লোকটার জ্ঞান বুদ্ধি কবে হবে? যাক বাবা বাচ্চা টা তো শান্তি তো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে?” সকালে,মাহি আলম চৌধুরী এসে মেয়ের চুল বেঁধে দিতে দিতে বলেন,
– আমি রাজি তোমার প্রস্তাবে।তবে আমি যেটা চাই সেটাও খুব তাড়াতাড়ি দিতে হবে তোমাকে।মিম লজ্জা পেয়ে মুখ লুকোয় মায়ের বুকে।মাহি আলম চৌধুরী মেয়েকে আর একটু লজ্জ দিতে বলেন,
– তোর খালা শাশুড়ি এবং ফুঁপি শাশুড়িরা আলোচনা করছিল, যে তোরা নাকি তাড়াতাড়ি চাও বাচ্চা নিতে? দেখ মা এটা কিন্তু খুব একটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ।আমি একদম সাপোর্ট করছি তোকে।আচ্ছা মা আমাকে নতুন করে বিয়ে দিবি অথচ পাএের সাথে দেখা করাবি না আমাকে? মিম মৃদু হেসে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
– আমি বুঝি জানি,না মা।তুমি নিজেই ভাঙচি দেবে নিজের বিয়েতে? তার চেয়ে এক কাজ করো বিয়ের দিন একে বারে নিজের বরের মুখ দেখো ঠিক আছে? মাহি আলম চৌধুরী মেয়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলেন,
– তার মানে তুই কি প্রতিশোধ নিতে চাইছিস আমার কাছ থেকে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– জানো মা? আমার মামা শশুড় (মর্তুজা) বিয়ে করবেন।তুমি চাইলে বিয়ের শপিং করতে হেলপ করতে পারো তাকে।মাহি আলম চৌধুরী মুখ ফসকে বলে ফেলেন,
– যখন সময় ছিল,তখন বিয়ে করেনি এখন কি বুড়ো বয়সে মনে রং লেগেছে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– হয়তো তার স্কুল লাইফের,কলেজ লাইফের পুরোনো প্রেমিকা কে খুঁজে পেয়েছে? জানো মা? আমার মামা শশুড়ের (মর্তুজা) খুব দুঃখ্য, যে তার প্রেমিকার বাবা শত্রুতার জেদ ধরে তার প্রেমিকা কে বিয়ে দেয়নি তার সাথে।সে ভেবেছিল হয়তো মেয়ের খুশির কথা ভেবে হয়তো রাজি হয়ে যাবেন।কিন্তু না,সে তার ঠাট বজায় রাখতে মেয়ে কে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় এক পয়সা ওয়ালা অবৈধ সন্তানের বাবার সাথে।বিয়ের পরে সেই সন্তানের সম্পর্কে সবটা জানাজানি হওয়ার পর ভদ্র মহিলা সংসার করতে রাজি হয়নি তার সাথে।সেখানে ও ভদ্র মহিলার বাবা নিজের সম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যা করার ভয় দেখিয়ে মেয়েকে সংসার করতে রাজি করিয়ে নেয় লোকটা সাথে এবং তার ফল স্বরূপ তার একমাত্র মেয়ে আর কখনো যোগাযোগ করেনি তার সাথে।এমন কি শুনেছি ভদ্রলোক মৃত্যুর সময় ও তার মেয়েকে দেখার জন্যে ছটফট করেছিলেন।কিন্তু মেয়ে দেখা দিতে যায়নি তার সাথে।মাহি আলম চৌধুরী বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলে,
– আমি এখন আসি মা।আমার কিছু কাজ আছে।নিপা এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কালকে কাজে ব্যস্ত ছিলাম, তাই বলা হয়নি তোকে।ছোটো ছোটো মেরুন কালারের শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লেগেছিল তোকে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– তুমি কি জানো ভাবি আমার আম্মুর কালকে বিয়ে?
– হ্যাঁ সবটা শুনেছি ছোটো ভাইয়ের (ইমান) কাছে।যাক বএিশ বছর পরে হলে ও দুটো’ মানুষ এক হয়ে যাবে।আনান মাহি আলম চৌধুরী কে নিজের পাশে বসিয়ে বলে,
– জানো মা আমি এবং সায়ান খুব খুশি বোনের সিদ্ধান্তে।
– এমন টা নয়তো তোমরা ও মিলে আছো ছোটো বোনের (মিম) সাথে?
– থাকলে ও বাকি মা? বাবা কাজ টা ঠিক করেনি তোমার সাথে।তখন হঠাৎ মর্তুজা সাহেব এসে দরজায় নক করে বলেন,
– মাহি কি ভেতরে আছো? আমি কি একটু কথা বলতে পারি তোমার সাথে? সায়ান এগিয়ে এসে বলে,
– হ্যাঁ আঙ্কেল ভেতরে আসুন।আনান চল এখান থেকে।দু’জনেই চুপ করে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে।মাহি আলম চৌধুরী মৌনতা ভেঙে বলেন,
– কংগ্রাচুলেশনস,আপনার বিয়ের কথা শুনলাম মেয়ের কাছে।মর্তুজা সাহেব মৃদু হেসে বলেন,
– তুমি ও অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছ মাহি।শুধু এটুকুই বলবো তুমি তিন তিন তিনটে রত্ন ধরেছ নিজের পেটে।মাহি আলম চৌধুরী মৃদু হেসে বলেন,
– আমার ছেলেদের এতো সাহস নেই।তাই আমার বিচ্ছু মেয়ে টাকে লেলিয়ে দিয়েছে আমার পিছে।তারা ভালো করে জানে আমি কত ভালোবাসি আমার মেয়ে টা কে।

সকালে,
কাজি অফিসে এসে মাহি আলম চৌধুরী এবং মর্তুজা ইয়াসির খান সাহেব তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে।মাহি আলম চৌধুরী মেয়ে উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বলে,
– মা আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।তুই প্লিজ এর থেকে মুক্তি দে আমাকে।মিম,আনান ও সায়ান কারো হেলদোল নেই তিন ভাই বোন ব্যস্ত আছে যে যার কাজে।বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর মর্তুজা সাহেব মিসেস মাহি আলম চৌধুরীর কাঁধে হাত রাখতেই সে কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,
– একটু সময় দিন আমাকে।মর্তুজা সাহেব মৃদু হেসে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে,
– এখন কিন্তু বাচ্চাদের বাবা আমি।স্বামী মনে করতে কষ্ট হলেও অন্তত্য বাচ্চাদের বাবা মনে করো আমাক? আনান এগিয়ে এসে মর্তুজা সাহেবের হাত চেপে ধরে বলে,
– আঙ্কেল আমাদের একমাত্র আম্মুকে কিন্তু তুলে দিচ্ছি আপনার হাতে।মর্তুজা সাহেব একটু রাশভারী কন্ঠে বলেন,
– আঙ্কেল বলে ডাকলে কিন্তু বাবা খুব খারাপ লাগবে আমার কাছে।মিম এগিয়ে এসে বলে,
– বাবা বলেই ডাকবো,তবে প্রতিদিন চকলেট কিনে দিতে হবে আমাকে।মর্তুজা মিমকে বুকে জড়িয়ে আলতো করে চুমু খায় ওর হাতে।প্রথম প্রথম মাহি আলম চৌধুরীর একটু অস্বস্তি হলেও আস্তে আস্তে সে এক মাসের মধ্যেই জড়তা কাটিয়ে ওঠে মর্তুজা সাহেবের সাথে।সায়েরা বানু সে খবর পেয়ে গিয়ে কান ভাঙানি দেওয়ার চেষ্টা করেন ছেলের সাথে।আদিব সাহেবের তখন তার মাকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল,
– সব আপনার জন্য হয়েছে মা।আপনি কেন কোরআন শরিফ ছুঁয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার কসম দিলেন আমাকে? যাই হয়ে যাক না কেন আমি নূর জাহান কে কখনো মেনে নিতে পারবো না আমার স্ত্রী হিসেবে।তারপর সে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে যায় সেখান থেকে।ডক্টর জয়দেব সেন তার চেক-আপ করে বলেন,
– পেসেন্ট মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক করেছে।যত সম্ভব আনন্দ ফুর্তিতে রাখতে হবে তাকে।কিন্তু আবিদ সাহেব নিজেকে যত সম্ভব ব্যস্ত রাখেন বিভিন্ন কাজে।তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেননা তার স্ত্রী এবং তার সন্তানের মা এখন অন্য কারো স্ত্রী হয়ে গেছে আর এই পুরো বিষয় টা জলের মতো পরিষ্কার নূর জাহানের কাছে।তবুও তিনি কোনো কিছু জন্য চাপ দেননা তাকে।মিহার জন্মদিন উপলক্ষে খান ম্যানসনে আদিব সাহেব ও ইশান বিশাল বড় বার্থডে পার্টির আয়োজন করেছে।পুরো জন্মদিনে মিহা মিমকে বোঝাতে চেয়েছে,যে ইশান শুধু আমার এখন কিছু করার নেই তোর কাছে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– আমি তে বললাম,সব ছেড়ে দিয়েছি আল্লাহ তাআ’লা হাতে।যদি ও তুমি কি করলে না করলে আমার তাতে কিছু যায় আসে না তাতে।আমি এখন ব্যাস্ত মা এবং বাবার (মর্তুজা) সাথে।আদিব সাহেব অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইনভাইটেট গেস্টদের কাছে নূর জাহান কে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

অনুষ্ঠান শেষ,মিম সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় ওঠার সময়।হঠাৎ মাথা ঘুরে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পরে গিয়েছে।যদিও কপাল ভালো ওর।রাদ কাছে থাকায় ওকে ধরে ফেলেছে।ইমান ভয় পেয়ে মিমকে কোলে নিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।ইমানের বন্ধু অনিক মিমের চেক-আপ করে রিপোর্ট দেখে ইমানের হাত ধরে বলে,
– কংগ্রাচুলেশনস ভাই,খুব তাড়াতাড়ি তোদের সন্তান আসতে চলেছে।কথা টা শোনা মাএই ইমানের খুশি দেখে কে? মিমকে কোলে তুলে নিয়ে সে কয়েক দফা অলরেডি নেচে ফেলেছে।মিমের জ্ঞান ফিরে আসতেই চিন্তিত মুখে ইমানের কাছে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে? হৃদিকা এহসান ও মাহি আলম চৌধুরী ওর পাশে বসে বলে,
– এবার কাজ করার জন্যে ছটফট করলে হয়? হাত পা ভেঙে ঘরের মধ্যে ফেলে রাখবো তোকে।মিম কিছু বুঝতে না পেরে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইমানের মুখের দিকে।ও এগিয়ে এসে মিমের গালে চুমু খেয়ে বলে,
– বেশি কিছু হয়নি সোনা,শুধু তুমি মা হবে আর আমি বাবা হবো ঠিক আছে? মিম লজ্জা পেয়ে মৃদু হেসে মুখ লুকোয় ইমানের বুকে।রায়হান সাহেব বুঝতে পারছেনা সে কি থেকে কি করবে? আদিব সাহেব মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারলে ও মনেমনে ঠিক খুশি হয়েছে।মুহূর্তে মিহার আনন্দ যেন মাটিতে পরিনত হয়েছে।সায়েরা বানু তাকে আস্বস্ত করে বলে,
– চিন্তা করছ কেন দিদি ভাই? আমি তো আছি তোমার সাথে।এমন তাবিজ করবো না ওর সুখ শান্তি সব ধুলোর মিশে যাবে।নূর জাহান সবটা শুনে মনেমনে বলেন,”সে গুড়ে বালি,আপনার মা।আমি কিছু হতে দেবো না আমার মেয়ে কে।এমন টা না হয় যে সারাজীবনের জন্যে বিছানায় পরে যেতে হয় আপনাকে।” ইশান মাথায় হাত দিয়ে স্টাডি রুমে বসে আছে,ড্রিংক করতে করতে ইরাদ কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ভাই আমার তো ওর সন্তানের বাবা হওয়ার কথা ছিল? ও কেন চাচা বানিয়ে দিলো আমাকে? ইরাদ ওকে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে বলে,
– তুই ভুল করছিস ভাই।যাই হোক এখন রেষ্ট কর ঠিক আছে? ইমান মিমকে খাইয়ে দিতে দিতে নিজের কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে বলে,
– আমি আর কোনো বাহানা শুনবো না লক্ষীটি।এখন থেকে রোজ আমি নিজের হাতে কয়েকবার করে খাইয়ে দেবো তোমাকে।তারপর হঠাৎ মিমের পেটে হাত রেখে বলে,
– আমার সোনা টা এখানে আছে? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– ধুরর,কি করছ তুমি? দরজা খোলা আছে যে কেউ ঢুকে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here