কর্নেল_সাহেব পর্ব ৩১+৩২

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৩১

ইমান কি মনে করে মিমকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি ক’দিনের জন্যে বেড়িয়ে আসবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে? মিম দুষ্টু হাসি দিয়ে ইমানকে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– আপনার মনে বুঝি অন্য কেউ ইতিমধ্যে আমার জায়গা টা কেড়ে নিয়েছে?
– তুমি ও না? তুমি ছাড়া আর কে আছে?
– বলা তো যায় না? হয়তো সেই সুন্দরী আমাদের বেড রুমে লুকিয়ে আছে? ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– আরে বাবা তুমি তো সেই সুন্দরী? তুমি ছাড়া আর কে আছে?
– ঢপবাজ,যেন কোথাকার? ষড়যন্ত্র করে আমাকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে আমার সাম্রাজ্য থেকে।ইমান মনেমনে বলে,”ধুরর,কোন দুঃখ্যে যে বাবার বাসায় যাওয়ার কথা বলেছিলাম বউ টাকে? আমি জানি ও আমাকে ছাড়া বাড়ির বাহিরে পা দেবে না।তবুও বলতে গেলাম কেন মেয়ে টা কে?” ইমান কৌতুহল বশত মিমকে ঘুম পারিয়ে রেখে রুমের দরজা দিতে গিয়ে দেখে,
দু’জন লোক অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে।ও সোজা ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই দু’জন লোক শর্তক হয়ে চলে যায় সেখান থেকে।ইমান একটু হলে ও বুঝে পেরেছে আপাতত মিম কে এই বাড়িতে রাখা নিরাপদ নয় কোনো দিক থেকে।এতটুকু ও নিশ্চিত যে এই দু’জন লোক যেই হয়ে থাকুক না কেন? তারা সম্মিলিত ভাবে মিমের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে এই বাড়িতে এসে।

ভোররাতে,ইমান নামাজ পরে রায়হান সাহেবের ডাকো দরজা খোলা রেখে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় নিচে।মিম বাথরুম থেকে বের হয়ে ওদের ঘরের সামনে পায়চারী করছিল তখন শুনতে পায় জোহা কাওকে বলছে,
– এটাই সঠিক সময়।তুই চলে আয় এই বাড়িতে।ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে,
– মেয়ে টা প্রচুর বুদ্ধিমতী তার ওপরে সন্তান সম্ভবা।যদি যদি ধরা পরে যাই তার কাছে?
– এতো সোজা? তুই আগে আয় তো এই বাড়িতে? মিম মিসেস জোহা কে পাত্তা না দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসার সময় একটা ফুলদানি ভেঙে যায় ওর গায়ে বেজে।মিসেস জোহা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখে মিম দাঁড়িয়ে আছে কিছু দূরে রেলিং ধরে সিঁড়ির কাছে।তাড়াতাড়ি সে তার মেঝো ছেলে তুর্জ কে ফোন করে বলেন,
– তাড়াতাড়ি চলে আয় বাবা,হয়তো এই মেয়ে টা আমাদের সব কথা আড়াল থেকে শুনে ফেলেছে? মিম মিসেস জোহা কে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
– আপনি এতো ঘামছেন কেন ফুফুআম্মা? কি হয়েছে? উনি ভয়ে ভয়ে মিম কে বলে,
– এই অবস্থায় হাঁটাচলা করো না মা।যাও গিয়ে রেস্ট করো।
– ঠিক আছে।

বেলা বারো টা,
মিম ঘুমিয়ে আছে।ঘুমের মধ্যে ওর অস্বস্তি শুরু হচ্ছে।মনে হচ্ছে যেন কেউ একজন ওর দিকে ঝুঁকে আছে? কৌতুহল বশত ও চোখ খুলে চিৎকার করার আগেই ভদ্রলোক ওর মুখ টা চেপে ধরে বুকের ওপর থেকে আঁচল টা সরিয়ে দেয় সাথেসাথে।মিসেস জোহা পাশ থেকে হাসতে হাসতে বলেন,
– বাবা সহবাস করতে হয়,মরার পরে করিস এখন আর কষ্টদিস না মেয়ে টাকে।মিম কোনো মতে কাঁপা কাঁপা হাতে বিছানার পাশে টেবিলে রাখা জুসের গ্লাস টা তুলে ছুড়ে মারে তুর্জ’র মুখে।ঘটনার আকস্মিকতায় মিসেস জোহা মিমের কাছে বালিশ নিয়ে তেড়ে আসলে,ও কোনো মতে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে পেপার স্প্রে ছুড়ে মারে তার চোখে।তারপর ও বাথরুমে ঢুকে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বাবা বাবা বলে চিৎকার করতে শুরু করে সাথেসাথে।মিমের গলা পেয়ে খাবার টেবিল থেকে সবাই ছুটে আসে।তুর্জ পালানোর চেষ্টা করলে ও ব্যার্থ হয় কারণ রিক্ত মেঝেতে মার্বেল ছড়িয়ে রেখে মেঝেতে ফেলে দেয় তাকে।মিসেস জোহা নিজেকে স্বাভাবিক করে মিমের চিৎকার শুনে এ ঘরে এসেছে বললেই নয়ন তাঁরা এগিয়ে এসে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে তাকে।আহমেদ সাহেব ও রায়হান সাহেব বেশ অবাক তারা কিছুতেই মানে পারছেনা যে তাদের বোন এতো নিচে নেমে গেছে? ইমান মিমকে বাথরুম থেকে বের ওকে বসিয়ে দেয় নরম গদির সোফাতে।তুর্জ রাদ ও ইরাদের কাছে মার খেয়ে স্বীকার করে যে ও মিসেস জোহার কথায় মিমকে মারতে এসেছিল এ বাড়িতে।ইমান নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ওর মাথা ধরে সজোড়ে বাড়ি মারে দেওয়ালের সাথে।তারপর হাসতে হাসতে বলে,
– তোদের মা ছেলের মনে হয় কি? এই ইমান খানের বুদ্ধি নেই ঘটে? আমি গতকাল রাতে সব জেনে গিয়েছিলাম যে আমাদের বাড়িতে সব অশান্তির মূলে তোর মা অর্থাৎ আমার ফুপু জড়িয়ে আছে।আমার মা (এনা) পাগল ছিলেননা,নিজের স্বার্থে ঘা লাগায় তোর মা ঔষধ খাইয়ে পাগল করে রেখেছিল আমার মা কে।আর সবচেয়ে আশ্চর্য কি জানিস? ফুলখালা কে আমরা এতো বিশ্বাস করি আর সে ঠকিয়েছে আমাকে? তোর ভাবি (মিম) যখন বললো,
মা পাগল নয়।কেউ কলকাঠি নাড়ছে বাহিরে বসে? তখন আমার মনে হলো এটা যদি হয়ে থাকে? তাহলে তার বিশ্বস্ত লোক এখনো আছে এই বাড়িতে।আমি যতদূর ছোটোবেলা থেকে দেখে এসেছি।ফুলখালা ছাড়া আর কারো যাওয়ার অনুমতি ছিল না মায়ের কাছে আর আমার বাবা? সে তো কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্য যাবে না মায়ের কাছে।ব্যাস দুইয়ে দুইয়ে চার করে ফেললাম,
এখন রেজাল্ট আমার হাতে।ও হ্যাঁ,আর একটা কথা বলে রাখি কালরাতে আমার বিচ্ছু বাহিনী ফুপু কে দেখেছিল খারাপ ঘরে অন্ধকারে কাঁঠালের কাছে।মিম ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি অতি সাবধানে উঠে গিয়ে প্রমান খুঁজে আনার চেষ্টা করি সেখান থেকে।অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর আমি কয়েক টুকরো কাঠবাদামের ছোলা খুঁজে পাই সেখান থেকে।তখন আমি নিশ্চিত হই যে এই কাজ টা ফুপুর কারন এই বাড়িতে কেউ সারাদিন কাঠবাদাম চিবায় না ঠিক আছে? আর গতকাল রাতেই আমি কায়দা করে সাভিন ও জোভান কে দিয়ে হিডেন ক্যামেরা রাখিয়ে ছিলাম ফুফুর ঘরে ড্রেসিং টেবিলের কাছে।তারপর থেকে আজ সকালে যা যা হয়েছে সব আমার প্ল্যান ছিলো মিম কিছু জানতো না ঠিক আছে? ওর জাস্ট সকাল বেলা উঠে হাঁটার অভ্যাস।কোনো কারণ ছাড়াই মেয়ে টা পায়চারী করছিল বারান্দাতে।তবে তোমরা মা ছেলে তো অতিবুদ্ধিমান? ভেবেছিলে বুদ্ধি শুধু তোমাদের কাছে আছে? মিম ঘুম টুম কিছু ছিলনা।আমি শুধু চোখ বুঝে থাকতে বলেছিলাম ওকে।এবার ফুপু আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।তুমি কেন এতো নোংরা খেলা খেলছিলে আমাদের সাথে? মিসেস জোহা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন,
– আমার মনে হয়েছে যে আমার বাবা পক্ষপাতিত্ব করেছেন আমার সাথে।ভালো করে খোঁজ খবর না নিয়ে আমাকে বিয়ে দিয়ে ছিলেন একটা দুশ্চরিত্র,মদখোর ও মাতাল লোকের সাথে।তাই এ বাড়ি তে আমার কারো সুখ সহ্য হয়নি লেগে পরেছি সবার পিছে।হৃদিকার তো সংসার ভাঙতে বসেছিল,এনা এসে বাঁচিয়ে দিলো ওকে।আমি এনার কোনো ক্ষতি করতে চাইনি।তবে ও নিজের বউমায়ের (মিম) মতো সবাইকে আগলে রাখছিল নিজের কাছে।আর তাই তো আমার পথের কাঁটা বনে গিয়েছিল।এর জন্যে এভাবে ওকে সরিয়ে দিলাম নিজের রাস্তা থেকে।তখন বড় ভাবি (নয়ন) আমাকে প্রচুর বাঁধা দিচ্ছিল তার জন্যে তো দু-দুবার মরা কন্যা সন্তান জন্ম দিতে হয়েছিল তাকে আর এনার প্রথম মেয়ে টাকে ওর পেটেই মেরে ছিলাম আর তোমরা ভেবেছিলে বাথরুমে পরে মিসক্যারেজ হয়ে গেছে? সেসব বাদদেও,
মদখোর মাতাল স্বামী,কূটনী শাশুড়ির অত্যাচার আর শেষে জমি নিয়ে ভাগবাটোয়ারা? এখানেও বাবা ঠকালো আমাকে? সমান ভাগে জমি ভাগ হলেও আমি টুকুর আবদার করেছিলাম,সে টুকু দেওয়া হয়নি আমাকে।আমার ভাইয়ের আমাকে দিতে চাইলেও বাবা রাজি হয়নি তাতে।এখনো এই বয়সে এসে আমাকে মার খেতে হয় আমার ওর মদখোর মাতাল স্বামীর কাছে।একটু আমার পছন্দের ছেলের সাথে আমার বিয়ে টা দিয়ে দিলে কি ক্ষতি হয়ে যেতো? আমার বাবা নিজের জেদ বজায় রেখেছে সব জায়গাতে আর হ্যাঁ,
শুনে রাখো পাঁচ বছর আগে তার ঘুমের ঘোরে হার্ট অ্যাটাক হায়নি।আমি খুব কায়দা করে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ছিলাম ওই বাজে লোকটা কে।তোদের দাদি ও এমনি এমনি প্যারালাইজড হয়নি।আমি তার কার এক্সিডেন্ট করিয়েছিলাম ঠিক আছে? আসলে ধরা পরে গিয়ে ছিলাম তার কাছে।আর তখন সে আমাকে বোঝাতে এসেছিল,নিজের দোষ গুলোর জন্য ক্ষমা চায়নি আমার কাছে।বাবা মা কখনো ফেরেশতা হয় না।ভুল তারা ও করে ঠিক আছে? তারা ভাবত,তারা জন্ম দিয়ে উদ্ধার করেছে আমাকে।আমি যখন বিয়ের পরে বাবাকে বললাম,
এই মদখোর লোকটার সাথে আমার পক্ষে কোনো ভাবে সংসার করা সম্ভব নয়।তখন তিনি তেজ্য করার ভয় দেখালেন আমাকে? আমার এই দুই ভাই ছাড়া তখন কেউ আমার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছি বাবার সাথে।ওদের হাত ছিল বাঁধা তাই চেষ্টা করেও পেরে ওঠেনি বাবার সাথে।কিন্তু আমি ওদের ভালোবাসি ওরা অন্তত কেউ কখনো কষ্ট দেয়নি আমাকে।মিম বসা থেকে তখন উঠে দাঁড়ায় নিজের জায়গা থেকে।তখন মিসেস জোহা হাসতে হাসতে বলেন,
– তবুও কেন যেন এ বাড়ির সুখ সহ্য হয় না আমার কাছে।উনি হঠাৎ তেড়ে এসে মিমকে খুব জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় মেঝেতে।মিম পরে গিয়ে ব্যাথা সহতে না পেরে গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠে সাথেসাথে।ইমান ওকে কোলে তুলে নিয়ে দেখে রক্তে ফ্লোর ভিজে গেছে আর ও সেন্স হারিয়ে ফেলেছে সাথেসাথে।বাসায় কাছেই স্কয়ার হাসপাতাল হওয়ার খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ওকে।ডক্টর ইমাদ মিমকে দেখে বলেন,
– ইমিডিয়েটলি অপারেশন থিয়েটার নিয়ে যেতে হবে।নাহলে বাচানো যাবে না বাচ্চা সহ মা কে।ইমান পাগলের মতো আল্লাহ তাআ’লা কে ডাকছে আর থরথর করে কাঁপছে নিজের সারা গায়ে মিমের রক্ত দেখে।মিসেস মাহি জ্ঞান হারিয়েছেন মেয়ে কে ওই অবস্থায় দেখে।মিহা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
– আল্লাহ বাচ্চা টা কে বাঁচিয়ে দিও আর কিছু হতে দিয়ো না মেয়ে টাকে।আদিব সাহেব কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।হার্টের রুগী তিনি,যদি মেয়ের অবস্থা শুনে অসুস্থ হয়ে পরে অফিসে।তবু বাবার মন ডক্টর আসাদুজ্জামান’র রহমানের ক্যাভিন থেকে বের হয়ে তার চোখ যায় অপারেশন থিয়েটারের দিকে।ইমানের গায়ে অনেক রক্ত দেখে কিছু একটা দেখে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন ওর কাছে।ও কিছু বলছে না পাগলের মতো কান্নাকাটি করছে আর ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে দেখে উনি অসুস্থ হয়ে পরেছে ওই জায়গাতে।এনা খান বারবার করে ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন,”বাবা তুমি শান্ত হও।”

ও পারছেনা কিছুতেই শান্ত হতে।এর মধ্যে ইফরাজ,খুশি,বিহান এবং রেহান কোনো ভাবে হাসপাতালে চলে আসে।নার্স মারিয়া অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে বলেন,
– এক্ষুনি কিছু বলা যাচ্ছে না,পেসেন্ট কে দুই ব্যাগ এ.বি পজিটিভ রক্ত দিতে হবে।আসলে মেঝেতে পরে গিয়ে তার এক্সেসিভ ব্লাড লস হয়ে গেছে।আনান ও সায়ান নিজেদের সামলে নিয়ে যায় বোন কে ব্লাড দিতে।

তিনঘণ্টা পর,
ডক্টর মুজাদিদূর রহমান এসে একটা ফুটফুটে পুএ সন্তান তুলে দেয় ইমানের হাতে।ইমানের গলা থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না ওর শুধু জানতে ইচ্ছে করছে মিম কেমন আছে? ডক্টর নীলিমা ইব্রাহীম এসে হঠাৎ করে হেসে বলেন,
– আপনার স্ত্রী এবং সন্তান দু’জনেই যোদ্ধা।আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনার স্ত্রী কে দেখে।তিনি এখন একদম বিপদ মুক্ত ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।দুশ্চিন্তা করবেননা ঠিক আছে? আর আপনার ছেলে সে তো মাশাআল্লাহ,একদম সুস্থ আছে আপনার স্ত্রী হয়তো মেঝেতে পরে যাওয়ার সময় নিজের পেটটা কে দু’হাত দিয়ে সেইভ করার চেষ্টা করেছিলেন তাই ও বড়সড় আঘাত পাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছে।বেবি একটু প্রি-ম্যাচুয়র,
তবে কোনো সমস্যা নেই তাতে।এক মাস ভালোভাবে যত্ন নিলে এবং মায়ের দুধ খাওয়ালে সে একদম সুস্থ হয়ে যাবে।
ইমান ডক্টরদের কথা শুনে চুপ করে তাকিয়ে আছে ছেলের মায়া ভর মুখের দিকে।মৃদু হেসে ওর হাতে চুমু খেয়ে বলে,”ও ওর মায়ের কথা রেখেছে।মায়ের মতো হয়ে এসেছে এই পৃথিবীতে।তুমি কি জনো বাবাই তোমার মা কত খুশি হবে তোমাকে দেখে?” বাবুর ঠোঁটের কোণে হঠাৎ করে হাসি ফুটে উঠলো,যেন সে সব জেনে এসেছে আগে থেকে?#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৩২

মিমের যখন জ্ঞান ফেরে,তখন ও খেয়াল করে দেখে দু’টো লোক চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।তখন ডক্টর নীলিমা এসে মিমকে বলে,
– আপনার ছেলের খাবার সময় হয়েছে।ইমান এগিয়ে এসে মিমকে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।মিম মৃদু হেসে বলে,
– কি অবস্থা করেছ নিজের চেহারার? কি হয়েছে? ইমান চেষ্টা করে ও নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি মিমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছে।মিম ছেলে কে কোলে নিয়ে ওর দু’গালে চুমু খেয়ে বলে,
– কি আশ্চর্য?
যার দু’মাস পরে আমার কোল আলো করে আসার কথা,সে এখন আমার কোল জুড়ে আছে।কিন্তু এটা কি হলো? বাপ ছেলে মিলে কি কম্পিটিশন শুরু করেছে? না মানে যে কান্নায় ফাস্ট হবে? তাকে কি রিওয়ার্ড দেওয়া হবে আমার পক্ষ থেকে? ডক্টর নীলিমা ইব্রাহীম হাসতে হাসতে বলেন,
– এটা তো খুশির কান্না,যাই হোক মিস্টার খান আপনাকে একটু বাহিরে যেতে হবে।ইমান ব্রু কুঁচকে বলে,
– বউ আমার,বাচ্চা আমার।আমি কেন বাহিরে যাবো এখান থেকে? মিম কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলে,
– প্লিজ যাও না,
তোমার সামনে বসে খাওয়াবো বাবুকে? ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– রাতে তো আমার সাথে শোয়ার আগে লজ্জা করেনি? এখন খুব লজ্জা করছে ওনার (মিম) ছেলেকে খাওয়াতে? অধরা এগিয়ে এসে হাসতে হাসতে ইমানকে বলে,
– ছোটো ভাই,এটা শুধু আপনি না।আপনার ভাইদের সাথে ও হয়েছে ঠিক আছে? প্রথম প্রথম স্বামীর সামনে বসে বাচ্চাকে খাওয়াতে একটু লজ্জা লাগে বটে।বিহান এগিয়ে এসে ইমানকে বলে,
– কংগ্রাচুলেশনস,বন্ধু আপনাকে।ইমান মৃদু হেসে বলে,
– ভাবছি আজকে সূর্য উঠেছে কোন দিক থেকে? না মানে তুই আমাকে “কংগ্রাচুলেট” করছিস? তোর মাথা টা ঠিক আছে? বিহান হাসতে হাসতে মিহা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– কোনো ফালতু মেয়ের (মিহা) জন্য আমাদের বন্ধুত্ব টা আমি আর খারাপ করতে চাই না প্রিয় বন্ধু।
– ঠিক আছে,যাই একটু দেখা দিয়ে আসি তোদের লজ্জাবতী ভাবির সাথে? ইমান ভেতরে ঢুকে দেখে মিসেস এনা মিমকে জড়িয়ে ধরে আছে নিজের বুকে।হৃদিকা এহসান শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন,
– তুই তো মা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি আমাদের সবাই কে? মিম কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করে,
– বাবা কোথায় দেখতে পাচ্ছি না তাকে?
– কি জানি লোক টা কোথায় গেছে? তোরা ঠিক আছিস শুনে,সেই কখন হন্তদন্ত হয়ে বাহিরে ছুটে গেছে।নয়ন তাঁরা এসে মিমের গলায় সোনার চেইন পরিয়ে দিয়ে বলেন,
– এটা কিন্তু তোর দাদি শাশুড়ির পক্ষ থেকে,সে খুব সখ করে তার ছোটো নাত বউয়ের জন্য বানিয়ে ছিল ঠিক আছে? তখন মিসেস মাহির জ্ঞান ফিরতেই, সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটে আসে মিমের কাছে।মেয়েকে সুস্থ দেখে সে যেন প্রাণে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।মর্তুজা সাহেব মেয়ের জন্যে সোনার বালা বানিয়ে রেখেছিলেন।সে গুলো ইমানকে ওর হাতে পরিয়ে দিতে বলেছে।এই ফাঁকে ইমান ওকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– বাবু খেয়েছে? মিম মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতেই আহমেদ ও রায়হান সাহেব এসে ওর ক্যাভিনে ঢুকেছে।মিমকে গহনার বক্স খুলে দেখিয়ে রায়হান সাহেব জিজ্ঞেস করেন,
– মা পছন্দ হয়েছে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– বাবা আমার তো গহনাগাঁটির অভাব নেই।তোমাদের এতো কষ্ট করতে কে বলেছে? আহমেদ সাহেব মিমের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেন,
– ছেলেদের স্বর্ন অলংকার পরা জায়েজ থাকলে আমাদের নাতি কেই দিতাম মা ঠিক আছে? তবে খালি হাতে আসিনি।তার জন্যে অনেক জামাকাপড় কিনে নিয়ে এসেছি আজকে।নয়ন তাঁরা মুখ ভেংচে বলেন,
– পরতে পারলে হয়? তোমাদের গুন আমার জানা আছে।আদিব সাহেব এসে মেয়ের হাত ধরে পাশে বসে আছে।নূর জাহান বাহিরে দাঁড়িয়ে ভাবছেন কি করে সে মিসেস মাহির মুখোমুখি হবেন? মিসেস মাহি বাহিরে এসে নূর জাহান কে উদ্দেশ্য বলে বলেন,
– বড় আপা আপনি কেন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছন? দেখুন আমার আপনার প্রতি কোনো রাগ নেই।আপনি এতো কি ভাবছেন?
– বাদদেও মাহি,মা নিজে এতো সব করে এখন সাধু সাজছেন।আমরা ডিভোর্স নিয়ে নিয়েছি,উনি হয়তো সেটা তোমাকে বলেছেন?
– বলে লাভ কি বলেন? আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী।তাই ওনাকে নিয়ে ভাবাও আমার জন্য পাপ বড় আপা (নূর)।আপনারা এটা কবে বুঝবেন? রিক্ত দৌড়ে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– প্লিজ সাইড দেন,সাইড দেন।জোভান মিমের কাছে গাল পেতে দিয়ে বলে,
– ছোটো আম্মা একটা হামি দেন? মিম ওদের সবার গালে চুমু খেয়ে বলে,
– সেটাই ভাবছি,আপনারা সবাই কোথায় ছিলেন? আদিব সাহেব নাতি কে কোলে নিয়ে অনেক আদর করলেন।ডক্টর আসাদুজ্জামান এসে বললেন,
– রাতে ফ্যামিলি মেম্বার থেকে যে কোনো দু’জন পেসেন্টের কাছে থাকতে পারবেন।আদিব সাহেব রাতে থাকার ইচ্ছে পোষন করলে রায়হান সাহেব তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে গেলেন।ইমান কে যেতে বললে সে যায়নি।মিমের কাছে থেকে গেছে।ডক্টর নীলিমা বললো,
– মিসেস খান আজকে কিছু খেতে পারবেনা,ইমান ও খাওয়া বন্ধ করা দিয়েছে।তবে মিমের সাথে পেরে ওঠেনি,
ওর জোরাজুরিতে কে একটা ডিম সেদ্ধ আর আলুভাজি দিয়ে রুটি খেয়েছে।

মাঝরাতে,মিম ঘুম থেকে উঠে দেখে বাবু নেই ওর পাশে।কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে ভালো করে খেয়াল করে দেখে,
ইমান তাকে কোলে নিয়ে পায়চারী করছে বারান্দাতে।অতঃপর বাবু কেঁদে উঠতেই।ইমান ওকে নিয়ে আসে মিমের কাছে।মিম বাবুকে বুকের দুধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দেয় সাথেসাথে এবং ইমান ওর চুলে বিলি কেটে কেটে ঘুম পারিয়ে দেয় ওকে।সকালে নার্স মারিয়া এসে অধরা কে একটা বক্স দিয়ে বলে,
– এটার মধ্যে আপনাদের বাড়ির বউয়ের পরোনের সব গহনা আছে।আচ্ছা একটা কথা বলুন তো? উনি (মিম) কি খুব আদুরে আপনাদের কাছে? না মানে কালকে থেকে সবাই ওনাকে নিয়ে যেমন করছে? মনে হলো যেন খুব আদুরে সবার কাছে? নিপা পাশ থেকে হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
– ওর পেটে বাচ্চা আসার পর থেকে আমরা কুটো টা নাড়তে দেইনি ওকে।হ্যাঁ অনেক আদরের ও।আমরা ওর জা কম ও ছোটো বোনের মতো আমাদের কাছে।মিম ভর্তা,ভাত,ডাল ও ডিম ভাজা পেয়ে বেশ খুশি হয়ে গেছে।ইমান মিমকে মুরগির লেগ পিসে দেখিয়ে বলে,
– বউ খাবে?
– না,গো তুমি খাও।আমার তো ডিম,ডাল,ভর্তাতে চলে যাবে।ইমান মানতে নারাজ খাবার জন্য মুরগি খাওয়ার জন্যে জোরাজুরি করছে তাকে।এদিকে সায়েরা বানু,
আমতা আমতা করে ছেলেকে এসে বলেন,
– আমার নাতনির ঘরে প্রথম পুঁতি হয়েছে।আমাকে একটু দেখতে নিয়ে যাবি না তাকে?
– হ্যাঁ তারপর তুমি আমার মেয়ে ও নাতির ক্ষতি করে দাও? আমার তোমাকে বোঝা হয়ে গেছে।নূর জাহান এগিয়ে এসে বলেন,
– মা কে নিয়ে চলেন মেঝো ভাই আপনি।জানেন সে আজকে মিমের জন্য নিজের হাতে রান্না করেছে।আদিব সাহেবর কাঠকাঠ উওর,
– ভাবি মা যেতে পারবেননা আমাদের সাথে।ইশান এসে চুপচাপ তাকিয়ে আছে দু’জনের দিকে।ইমান মিমের সাথে পেরে না উঠে বলে,
– তুমি তো গরিব,তুমি মাংস কেনো খাবে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– আপনি খান মাংস ভাত,আমার ডিম,ডাল,ভর্তা ও ভাত ঠিক আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here