কর্নেল_সাহেব পর্ব ৩০

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৩০

– তুমি কি যে করো না? ধরে দু’ঘা দিতে মন চাইছে তোমাকে।ইমান মন খারাপ করে বলে,
– তোমার একটু ও কষ্ট হবে না মারতে আমাকে?
– নিজে কেন রাতে দরজা খুলে রেখে শুতে চলে এলেন? সবাই কে দেখাতে?
– আসলে ঘুম ঘুম চোখে ছিলাম, তাই বুঝতে পারিনি সেভাবে।
– মিথ্যে বাদি যেন কোথাকার,মেরে মুখের নকশা বদলে দেব।তারপর আয়না দেখলে ও ভয় পাবেন নিজেকে।হৃদিকা এহসান এসে হাসতে হাসতে বলেন,
– বেরোনোর মুখে ঝগড়া করতে হয় না মা।সাবধানে যাস ঠিক আছে? মিম মৃদু হেসে গিয়ে গাড়িতে বসে ইমানের পাশে।ইমান মুচকি হেসে মিমের হাত চেপে ধরে বলে,
– আসলে এতো টাই তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম যে,আশেপাশে তাকানোর সময় পাইনি সেভাবে।
– হ্যাঁ তার জন্য,
সকাল সকাল রাজ্যের যতসব আজেবাজে কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে সবার কাছে।এত বছর বউ ছাড়া কিভাবে ছিলে? একটু ও ইচ্ছে করেনি তোমার অন্য কোনো মেয়ের ঘনিষ্ঠ হতে?
– আমার শুধু একজনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছে হয়েছিল আর তুমি সেই মেয়ে ঠিক আছে? মিম রেগে গিয়ে বলে,
– বাজে লোক একটা সকাল সকাল আমার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ফেলেছে।ইমান হাসতে হাসতে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– আর কখনো এমন হবে না সোনা প্রমিজ করছি তোমাকে।
– শুনুন সাহেব,অন্তত এই ব্যাপারে আমি ভরসা করতে পারছিনা তোমাকে।আপনার এই দরজা খুলে রেখে দেওয়ার জন্য একদিন দেখবেন কেউ আমার সাথে বাজে কিছু করে দিয়েছে।ইমান হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করে থামিয়ে দিয়ে মিমের মুখ চেপে ধরে বলে,
– খবরদার আর কখনো এমন বাজে কথা বলবে না ঠিক আছে? ইমানে চোখের কোণে একটু একটু করে জল জমতে দেখে মিম মৃদু হেসে সিট বেল্ট টা খুলে এগিয়ে এসে মাথা রাখে ওর বুকে।

দুপুরে,হাসপাতাল থেকে ফেরার পর নয়ন তাঁরা এসে ওদের দু’জন কে জিজ্ঞেস করে,
– মা আমাদের দাদুভাই কেমন আছে? ইমান স্মিথ হেসে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো বড় আম্মু,বাবুর গ্রোথ অনেক ভালো হয়েছে।মিম বসা থেকে উঠে এসে নয়ন তাঁরা কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তোমরা আমার এতো যত্ন করো যে বাবুর শরীর স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার ছিল বড় আম্মু।তোমরা তো কোনো কাজ করতে দিতে চাও না আমাকে।হৃদিকা এহসান রান্নাঘর থেকে এসে বলেন,
– কাজ করতে দেই না বলে কি মা তোর হাত ও পা সুস্থ আছে? সারাদিন এটা-সেটা করে কত ব্যাস্ত রাখিস নিজেকে?
– তবুও মা,কতদিন আমি রান্না করি না হিসেব আছে? মিমের কথা শুনে মিহা বিরক্ত হয়ে ঘরে এসে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে সায়েরা বানুর কাছে।সায়েরা বানু নাতনির কান্নাকাটি তে বিরক্ত হয়ে বলেন,
– দেখ দিদি ভাই আমার তো মনে হচ্ছে তোর কোনো সমস্যা আছে? সাত মাস রানিং তুই কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ করোনি তাহলে বাচ্চা কন্সিভ হচ্ছে না কিভাবে? মিহা সায়েরা বানু কে ঝাড়ি মেরে বলে,
– দাদি তুমি এই কথা গুলো কি করে বলতে পারলে আমাকে? নাতনির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সায়েরা বানু চেঁচিয়ে বলে ওঠেন,
– আমার সাথে উঁচু গলায় তুমি কথা বলো কোন সাহসে? নিজের সমস্যার সমাধান নিজে করো।আমাকে আর বিরক্ত করো না ঠিক আছে? মিহা নিজের জেদ বজায় রেখে বলে,
– আমি একাই একশো দাদি।আমার তোমার কোনো সাজেশনের প্রয়োজন নেই দোয়া করি তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।
– ঠিক আছে,দয়া করে শুধুশুধু আর কখনো ফোন করে বিরক্ত করো না আমাকে।সন্ধায় মিম লাড্ডু খেতে খেতে হলে এসে দেখে রায়হান সাহেব স্টার জলসায় “শ্রীময়ি” দেখে খুব খুশি হয়েছে।মিম তার পাশে গিয়ে বসতেই না খেয়াল করে রায়হান সাহেব বলে ফেলেন,
– আজকের পর্ব টা সেই,একশো তে দু’শ দেব আমি “শ্রীময়ি” কে।মিম আচমকা টিভি অফ করে দিয়ে হাসতে হাসতে রায়হান সাহেব কে বলে,
– বাবা আমি জানতাম না তোমাকে আজকাল এই ভূতে পেয়েছে? পাশ থেকে হৃদিকা এহসান মুখ ভেংচে বলে ওঠেন,
– ঢং যতসব,বুড়ো কালে ভীমরতি হয়েছে? মিম রায়হান সাহেব কে টানতে টানতে এনা খান’র কাছে নিয়ে এসে বলে,
– নাও ধরো তোমার “শ্রীময়ি”।পছন্দ হয়েছে? এনা খান স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– বাচ্চাকাচ্চার সামনে মান সম্মান রাখলো না আর? রাত হতে না হতেই কোন বাড়ির মহিলার মতো সিরিয়াল দেখতে বসে গেছে? রায়হান সাহেব মিসেস এনা কে পাশে বসিয়ে বলেন,
– বিশ্বাস করো,সিরিয়াল টা দেখার মতো একটা সিরিয়াল।
– ঠিক আছে,তাহলে আমার কাছে কি করছ? সারাদিন ওই সিরিয়ালের ভেতর ডুবে থাকো।যাও এখান থেকে।মিম হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দরজা লক করে পিছনে ফিরে ধাক্কা খায় কারো বুকে।বিরক্ত হয়ে ইশান কে বলে,
– কি সমস্যা আপনার? চোখ কোথায় থাকে? ইশান হঠাৎ ওর পেঁটের ওপর নিজের দু’হাত রেখে বলে,
– যদিও বাচ্চা টা আমার না,
তবু্ও আমি চাই যেন তোমাদের সন্তান সুস্থ ভাবে তোমার কোল আলো করে আমাদের বাড়িতে আসে।মিম মৃদু হেসে ইশানের হাত দু’টো নিজের পেটের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
– তাহলে আপনি কেন জেনেশুনে আমার আপুকে বঞ্চিত করতে চাইছেন তার মাতৃত্ব থেকে? মা হওয়া একটা মেয়ের কাছে স্বপ্নের মতো যেটা হয়তো কেউ কখনো বুঝিয়ে বলতে পারবেনা আপনাকে।ভাগ্যিস আমার বিয়ে টা আপনার সাথে হয়নি।আমি মন থেকে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি আল্লাহ তাআ’লার কাছে।মিম বা ইশান কেউ খেয়াল করে দেখেনি যে মিহা দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।মুখ ফুটে মিহা কাওকে কিছু বলতে না পারলে ও মনেমনে খুব খুশি যে আজ ওর বোন,ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে ইশানের সাথে।তারপর হঠাৎ ও কি মনে করে? ছুটে এসে মিমের হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় লাড্ডুর বাটি টাকে এবং মুখে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে বলে,
– তাড়াতাড়ি বমি কর,কোনো লাড্ডু আবার খেয়ে ফেলেছিস নাকি বাটি থেকে? ইমান এসে মিহার আঙুল টা মিমের মুখ থেকে বের করে বলে,
– না মেঝো ভাবি খায়নি।আপনি কেন এতো বিচলিত হচ্ছেন ওকে দেখে?
– লাড্ডু গুলো ওকে আর খেতে দিয়ো না,ওর শরীরের জন্য ঠিক না।
– ঠিক আছে,মিহা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইমান খেয়াল করে দেখে লাড্ডু পরে থাকা জায়গায় একটা ইঁদুরের বাচ্চা মরে পরে আছে।এই কাজ টা যে মিহার নয় কেন যেন বারবার এটা মনে হচ্ছে ইমানের কাছে? তবে ও হয়তো জানে কে এই কাজ টা করার চেষ্টা করেছে মিমের সাথে? আচ্ছা মিহা তো নিজেই চায় না ওদের সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখুক,তাহলে আজ কেন এসে বাঁচালো মেয়ে টাকে? মিমকে ঘুম পারিয়ে রেখে ইমানের মনে হলো যেন কেউ একজন নজর রাখছে ওদের দু’জনের দিকে? তারপর হঠাৎ মিমকে বিছানায় শুইয়ে রেখে চোর ধরতে গিয়ে দেখে সাভিন চোখের মতো রুমের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ও কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,
– ছোটো আব্বু তুমি আসার আর টাইম পেলে না? আমার চোর যে পালিয়ে গেছে?
– মানে?
– আমি দেখলাম যে সে ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা অন্ধকারে কিছু একটা ইঞ্জেক্ট করে ঢুকানোর চেষ্টা করছে কাঁঠালে আর এটা সেই কাঁঠাল যেটা দাদুভাই (আহমেদ) ছোটো মায়ের জন্যে কিনে এনেছে বাজার থেকে।হয়তো এবার ইমান কিছু টা হলে ও দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পেরেছে ব্যাপার টা কে।মিম ইমান কে পাশে না দেখে বিছানা ছেড়ে উঠে এসে জিজ্ঞেস করে,
– আশ্চর্য!
এতো রাতে কি নিয়ে আলাপচারিতা হচ্ছে বাপ ছেলের মাঝে? সাভিন মৃদু হেসে বলে,
– কিছুনা মা তুমি ঘুমতে যাও ঠিক আছে? আর বাবা তুমি যা বলেছ আমি জোভান আর জায়ান কে বলে দেব ঠিক আছে? শুভরাত্রি।ইমান হাসতে হাসতে মিমকে নিয়ে পা বাড়ায় নিজের ঘরের দিকে।তারপর কি মনে করে বলে আজ কালকার বাচ্চারা এতো আপডেট না? “ক” বললে কলিকাতা বোঝার ক্ষমতা রাখে।মিম ইমানের গালে চুমু খেয়ে বলে,
– আপনার হঠাৎ কি হয়েছে কর্নেল সাহেব? এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন আপনাকে? ইমান মনেমনে বলে,”আমার বাচ্চা কে গুলো কাজ টা ঠিক মতো করতে পারলে হয়।তারপর পালের গোদা সমেত চোর ধরা যাবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here