#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -১৫
আমি রক্তের দাগগুলো অনুসরণ করতে করতে আবার ওই পুরোণ বিল্ডিংটার সামনে এসে হাজির হলাম।রক্তের চিহ্নগুলো বাড়ির বন্ধ মেইন দরজা থেকে দেখা যাচ্ছে।হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বিকাল ৪:২০ বাজে।ভিতরে ঢুকে একটু দেখার জন্য মনটা আসফাস করছে।কি এমন আছে ভিতরে?এখান থেকে রক্ত কেন দেখা যাচ্ছে?আজকে হয়তো কেউ খুন হয়েছে।একটু দেখলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?
মনের সাথে দীর্ঘসময় লড়াই করে শেষমেষ ডিসিশন নিলাম যে আজকে ঢুকবোই।ধীরেধীরে পা ফেলে কাপাকাপি হাতে মেইন দরজাটা আলতো করে ধাক্কা দিলাম।ওমনি বাদামি রংয়ের শেওলা পড়া দরজাটি কড়কড় শব্দ তুলে খুলে গেলো।ভিতরে ধুলোমাখা সোজা সিড়ির ধারে কয়েকটি চেয়ার টেবিল আছে।চারপাশে অসংখ্য মাকড়শার জালে বাস বানানো।জালের উপর দিয়ে বিভিন্ন হিংস্র মাকড়শাদের আনাগোনা।দেখেই গায়ের পশম দাড়িঁয়ে যায়।সবকিছু মিলিয়ে ভুতুড়ে একটা গুমোট পরিবেশ।কিছু একটা ভেবে ভিতরে প্রবেশ করলাম।দরজা থেকে হাত সরে যেতেই আবার প্রচন্ড শব্দে দরজাটা ঠাস করে লেগে গেলো।এতে পায়েরগিরা কিছুটা ছিলে গেছে।নিজের সামনে সোজা সিঁড়িটা দৃশ্যগত।সিঁড়ির প্রত্যেকটা ধাপে মানুষের অগনিত পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে।ঠিক ওই পায়ের ছাপের কাছেই রক্তের মাখামাখি।আমি আস্তেধীরে সিঁড়িতে এক পা ফেললাম।কিন্তু ভয় জিনিসটা এখনো আমাকে গ্রাস করতে পারে নি।উল্টো নিজেকে এই মুহুর্তে একজন ডিটেক্টিভ লাগছে।অনুভূতিটা একদম অন্যরকম।মনে হচ্ছে এতোদিনের জটলা পাকিয়ে যাওয়া রহস্যেভেদ করতে যাচ্ছি।সিঁড়ির পাশের হ্যান্ডেলে হাত পড়তেই বাদামি রংয়ের দূর্গন্ধযুক্ত পচে যাওয়া রক্ত হাতে লেগে উঠলো।ছি!দেখে মনে হচ্ছে এক কি দুই সপ্তাহ আগের রক্ত।গা গুলিয়ে উঠলো।আমি রক্তের চিহ্নগুলো অনুসরণ করতে করতে দুই তলায় চলে গেলাম।চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলাম আমার সামনে কিছুটা দূরত্বে চারটা বড় বড় বন্ধ দরজা।কিন্তু রক্তের দাগগুলো বামসাইডের দরজা থেকে আসছে।আমি সামনে পা বাড়াতে নিলেই পায়ের কাছে ধারালো কিছু বিধলো।নিচে তাকিয়ে দেখি রক্তেমাখা একটা ছুড়ি।এর পাশে নজর দিতেই আতঁকে উঠলাম।সারা শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।চিৎকার করে উঠতেই নিজেকে সামলে নিলাম।কারণ পাশেই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কাটা একটি আঙ্গুল।তাকাতে পর্যন্ত পারছি না।বিষয়টার দিকে আর মনোযোগ না দিয়ে যেখানে যাচ্ছিলাম সেখানে গিয়ে ঢুকলাম।ফ্লোরে রক্তের ছাপগুলো অনুসরণ করে দেখলাম সেটা একটা গোপন দরজার দিক থেকে এসেছে।খোলার জন্য চাবি দরকার।চুলের একটা ক্লিপ নিয়ে চেষ্টা করার সময় কারো হাটার শব্দ পেলাম শব্দটি ধীরেধীরে এদিকেই আসছে।আমি এক দৌড়ে গিয়ে একটা টেবিলের নিচে লুকিয়ে গেলাম।তখনই দরজা খুলে গেলো।
#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -১৬
দরজা খুলে গেলো।টকরটকর শব্দ তুলে কিছু কালো রংয়ের জুতো পড়া লোক ঢুকলো।বাইরে থেকে দমকা বাতাসে ভিতরের সব ধুলোবালিগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছে।এতে আমার হাঁচি আসতে নিলেই ফটাফট মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।তারপর টেবিলের নিচ থেকে মাথা হালকা বের করে নিলাম বাইরে কি হচ্ছে সেটা পরখ করার জন্য।প্রায় আট নয়জন কালো পোশাক পরিহিত লোক হাতে বড় বড় অস্ত্রবল নিয়ে ঢুকে এক সাইডে দাড়িঁয়ে রইলো।অস্ত্রগুলো দেখে কিছুটা ভয় লাগছে।এরা যে প্রচন্ড ভয়ংকর তা ঢের বুঝতে পারছি।এদিকে চশমার উপর বার বার ধুলো পড়ায় প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।শান্তিতে একটু গোয়েন্দাগিরিও করতে পারছি না।এদেঁর হাতে একবার পড়লে আমার মৃত্যু নিশ্চিত।তখনই পুনারায় দরজা খুলে দুটো লোক একজনকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসছে কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে।এতে কিছুটা ভড়কে গেলাম।কি হচ্ছে এখানে?এরা এভাবে লোকটাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে কেনো এসেছে।বেধে রাখা লোকটা অনবরত ছটফট করেই যাচ্ছে।এই মুহুর্তে আমার মস্তিষ্ক বলছে এখানে কিছু ভয়ংকর হতে চলেছে তাই ফটাফট মোবাইল নিয়ে ভিডিও করলে খারাপ হয় না।পরবর্তীতে কাজে লাগতেও পারে।যেই না ফোন বের করতে যাবো তখনই বিকট শব্দে কেউ গুলি চালালো।থমকে গেলো সবকিছু,পরক্ষনেই পরিবেশটা একদম নিস্তেজ আর নিঃশব্দে পরিনত হলো।এদিকে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি আমি।শ্রবণ শক্তি থেমে গেছে মনে হচ্ছে।কিচ্ছু শুনতে পারছি না।হার্টবিট প্রচন্ড জোরে বিট করছে। পরিচিত কারো ঘ্রাণ নাকে বিঁধছে।গা ছেড়ে আসতে নিলেই চোখ বন্ধ করে নিজের মুখ এক দিয়ে চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লাম।এতো শব্দে মাথা ঘুড়ে উঠলো।চোখ থেকে চশমা খু্লে পিটপিট করে তাকালাম।সারাটা ফ্লোর রক্তে ভেসে যাচ্ছে।সামনে কালো পোশাকে লম্বাটে একজন মানুষ হাতে বন্দুক ধরে ফোঁসফোঁস করছে।পিশ্তল ধরে থাকা হাতটা কাঁপছে।লোকটার শরীর একদম ঢাকা কোথাও শরীরের চমড়ার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।এটাই হয়তো এদের লিডার।হাবভাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।তার ঠিক সামনে বেধে রাখা লোকটা পা ধরে তীব্র আর্তনাদ করছে।সবার চোখে হিংস্রতা দৃশ্যমান।আমি ভিডিও করতে নিলেই মোবাইলটাকে হাতে না পেয়ে হাতড়ে হাতড়ে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি ফোনটা ওই লোকটার পায়ের কাছে।ওইটা ওইখানে গেলো কোন সময়?এখন ওইটা আনবো কিভাবে?আনতে গেলে যদি তাদের চোখে ধরা পড়ে যাই?এছাড়া আমার ফোনটা এদের কাছে গেলে তো চিনে ফেলবে আমাকে।না!এটা হতে দেবো না।তার আগেই ফোনটাকে যেভাবে হোক নিতে হবে। তখনই কারো গম্ভীর কন্ঠে থমকে গেলাম।কান আরো একটু উঁচু করে শুনতে লাগলাম।
-“”বিশ্বাসঘাতক!কি ভেবেছিলি?আমাদের সাথে থেকে অভিনয় করবি।তারপর আমাদেরই নামে প্রমাণ জোগাড় করে পুলিশে দিবি?এতো সোজা?ভেবেছিলি কেউ টেরও পাবে না?আমার!আমার চোখে ফাঁকি দিয়ে পুলিশের সাথে কন্ট্রাক্ট করতি আর আমি বুঝতে পারতাম না এটাই ভাবতি তাই না?তোকে বিশ্বাসযোগ্য ভেবে দলে কাজের জন্য রেখেছিলাম।কিন্তু তুই বিশ্বাসঘাতকতা করলি!আর আমার কাছে বিশ্বাসঘাতকদের এই পৃথিবীতে বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই।””
তখনই একটা লোক ধারালো অনেকগুলো ছুড়ি,আর একটা বড় মোটা রড নিয়ে এলো।পাশে কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলো।এসব দেখেই আতঁকে উঠলাম।কি করতে যাচ্ছে এখন এরা?যা ভাবছি তাই হলে তো আমার পক্ষে দেখা ঠিক হবে না।পরে এখানে অজ্ঞান হয়ে গেলে মহাবিপদ হয়ে যাবে।তখনই সবার মাঝের লম্বাটে লোকটা হাতে ছুড়ি নিয়ে সবাইকে কিছু একটা করার ইশারা করলো।ওইখানে অস্ত্র হাতে লোকগুলো নিচে বেধে রাখা মানুষটাকে চেপে ধরলো।তখনই তাদের মাঝখানে দাড়ানো লোকটা মানে এদের লিডার ওই লোকটার এক চোখ বরাবর ছুড়ি ঢুকিয়ে দিলো।ঢোকানোর আগেই আমি চোখ,কান বন্ধ করে নিলাম।এসব দেখবো না,ভয়ও পাবো না।চোখ খোলা রাখার প্রশ্নই আসে না।
ঠিক পাঁচ মিনিট পর নাকে পচা দূর্গন্ধ আসতেই নাক কুঁচকে ফেললাম।কোনো জীবন্ত প্রাণীকে আগুনে পুড়লে যেরকম গন্ধ বের হয় ঠিক সেরকম।চোখ খুলতে নিয়েও সাহস নিয়ে পারছি না।কারণ হয়তো আমি কল্পনাও করতে পারছি না যে পরবর্তীতে কি দেখতে চলেছি।
টানা আরো দশমিনিট পর,
আর চোখ বন্ধ রাখতে পারছি না।তীব্র বাথ্যা করছে এখন।চারপাশে অন্ধকারে খা খা করছে শুধু।নিজেকে অন্ধ মনে হচ্ছে।এখন চোখ না খুললেই নয়!যা দেখার দেখবো।গোয়েন্দাগিরি করতে এসে ভীতুর মতো চোখ বন্ধ করে রয়েছি,বাহ কতো সাহসী আমি।ধীরেধীরে পিটপিট খুলে চোখ খুলে চোখে চশমাটাকে পড়লাম।ধীর গলায় হালকা গলা ঝেড়ে আড়চোখে একটু করে তাকালাম।দেখেই অন্তরাত্মা ছ্যাত করে উঠলো।এক বিদঘুদে,বিশ্রী মুখ মন্ডলের খুবলে যাওয়া মাংস থেকে গলগল করে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।সারা ঘড়ে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে।একটুকু রক্ত গড়িয়ে আমার পায়ের কাছে আসতেই মুখ চেপে ধরে ছিটকে টেবিলের অন্যসাইডে যেতে নিয়ে মাথায় খট করে বারি খেলাম।ভয়ে রীতিমত ঘামতে শুরু করেছি।ধীরেধীরে হাটু ভাজ করে টেবিলের এক সাইডে লুকিয়ে পড়লাম।লোকগুলো হঠাৎ কোনো শব্দ পেয়ে সারা ঘড় তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো।দম বন্ধ হয়ে আসছে।শ্বাস নিতে গিয়েও মুখ চেপে ধরে আছি!যদি শব্দ হয়ে সেই জন্য!!প্রাণের ভয়ে চোখ থেকে এক ফোটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।আর ধৈর্য ধরতে পারছি না।কতবড় যে ভুল করে ফেলেছি তা হারে হারে বুঝতে পারছি এখন। কেনো এতো সাহস দেখিয়ে এখানে ঢুকতে গেলাম।নিজের উপর তীব্র রাগের জন্য গলা খামচে ধরলাম।হঠাৎই টেবিলের কাছে একটা কালো জুতা অল্প অল্প পা ফেলে এগিয়ে আসতে লাগলো।এতে যেনো পাথর হয়ে গেলাম।না!না এখানে যেনো না আসে।লোকগুলো কি আমার ফোন পেয়ে গেছে?আর পারছি না।শ্বাসকষ্টে মরে যাবার উপক্রম।লোকটা একদম টেবিলের সন্নিকটে এসে দাড়িঁয়ে পড়লো।তীব্রতর আতংক গ্রাস করলো আমাকে।লোকটা নিচু হতেই চোখ বন্ধ করে নিলাম।
কিছুক্ষণ পর কোনো সারাশব্দ না পেয়ে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই এই ঘড়ে।মানে টা কি?গেলো কোথায় সব?খুন করা লাশটাকেও নিয়ে গেছে?আমাকে দেখেনি তো?দেখলে হয়তো এভাবে আমাকেও মেরে ফেলতো।আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম।ফোনটার উপর নজর পড়লো।না সেটা জায়গা মতোই আছে।কেউ খেয়াল করেনি বোধ হয়।আরো কিছুটা সময় যাওয়ার পরও যখন দেখলাম কেউ আসে নি।তখন নিশ্চিত হলাম যে এখন নিরাপদ আমি।আস্তেধীরে বের হয়ে এলাম।দাড়িঁয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলাম।এতোক্ষন কি করলাম আমি?কি দেখলাম এসব?একটা ভিডিও করলে হয়তো পুলিশের কাছে গিয়ে এদের ধরিয়ে দিতে পারতাম।আমি নিশ্চিত এরা খারাপ লোক,কোনো অসৎ উদ্যেশ্য আছে এদের।রক্তেমাখা ফ্লোরের দিকে একবার নজর দিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিলাম।পা জামার নিচে অংশে আর উপরের জামার অংশে কিুছটা রক্ত লেগে আছে।দ্রুত বের হয়ে এলাম সেই পুরোন বিল্ডিং থেকে।একপ্রকার দৌড়ে নিজের বাসায় চলে এলাম।বেডরুমে প্রবেশ করতেই খেয়াল হলো আমার ওরনাটা গায়েব।কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম।ওরনা কোথায় আমার?গেলো কই।সারাঘড় তন্ন করে খুজে এমন কি সিঁড়ির আশেপাশে খুঁজেও পেলাম না।এখন কি করি?তাহলে কি ওরনাটা ওইখানেই ফেলে এসেছি?না এটা সম্ভব না।কি করে ফেললাম এটা আমি?দুই হাতে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লাম।কি হচ্ছে এসব?কি থেকে কি হয়ে গেলো জাস্ট কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে?নাকে রক্তের পচা গন্ধ আসতেই ধীরে ধীরে উঠে গেলাম।তারপর বাথরুমে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
Word no.-1051
_____চলবে______
______চলবে_____