#মনের_পিঞ্জর
#Ariyana_Nur
#Part_37
সান ইশফার হাত ধরে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।ইশফা সান এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই সে সান এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না।
কিছুক্ষন আগেঃ
ইশফা,তুশি রিধির বাসা থেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।রিধি, নিরব অনেক করে ওদের কে থাকতে বলা শর্তেও তারা থাকবে না।ইশফা,তুশি ওদের জন্য রিধিকে কোন ঝামেলা করাতে চাচ্ছে না।তাই তারা ভার্সিটির ছুতো দিয়ে কেটে পরতে চাচ্ছে।কলিংবেলের শব্দ পেয়ে রিধি দরজা খুলতেই দরজার অপর পাশে সিনথিয়াকে দেখতে পেয়ে রিধির মুখে হাসি ফুটে উঠল।সিনথিয়া রিধিকে দেখেই চেচিয়ে বলল…..
—সারপ্রাইজ।
রিধি অবাক হয়ে বলল……
—সিনথু তুই!
—কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?
—সারপ্রাইজ তো ভালোই লেগেছে।(ভিতরের দিকে তাকিয়ে)তোর জন্যও একটা সারপ্রাইজ আছে।
সিনথিয়া সন্দেহর চোখে রিধির দিকে তাকাতেই রিধি মুচকি হেসে দরজা থেকে সরে দাড়াতেই সিনথিয়া ইশফাকে দেখে ভাবি বলে চেচিয়ে দৌড়ে গিয়ে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে গরগর করে বলতে লাগল…….
—ভাবিইইই!কেমন আছো তুমি?জানো আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি?
ইশফাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তুমি কেমন আছো?
সিনথিয়া ইশফাকে ছেড়ে দিয়ে বলল……
—ভালো।তোমাকে পেয়ে আরো ভালো হয়ে গেছি।
তুশিঃএই যে বিয়াইন সাহেবা আমি যে এখানে জলয্যান্ত মানুষ দাড়িয়ে রয়েছি সেদিকে কি আপনার খেয়ার আছে?
সিনথিয়া মুচকি হেসে তুশিকে জড়িয়ে ধরে বলল……
—কেমন আছো বিয়াইন সাহেবা আপু….?
তুশি গাল ফুলিয়ে বলল……
—বলবো না ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
সিনথিয়া তুশির কথা শুনে হেসে বলল…..
—আমিও বলবো না ভালো আছি।
কথাটা বলেই তুশির দিকে তাকাতেই দুজন ফিক করে হেসে দিল।
রিধিঃসিনথু তুই কার সাথে এসেছিস?
সিনথিয়া ভাব নিয়ে বলল…..
—কেন একা আসতে পারিনা?আপু আমি বড় হয়ে গেছি একা চলাফেরা করতে পারি ওকে।
রিধিঃচাপা কম মার।তোকে যে খালামনি একা ছাড়েনি সেটা আমি ভালো করেই জানি।
সিনথিয়াঃতোমার খালামনির একা কেন এমনিতেও আমাকে ছাড়তে চায়নি।আমি যত ভাইয়াকে পটিয়ে এখানে এসেছি।
রিধিঃভাইয়া কোথায়?
সিনথিয়াঃনিচে গাড়ি পার্ক করে আসছে।
সান এর আসার কথা শুনে ইশফা সান এর মুখোমুখি না পরার জন্য তাড়া দিয়ে বলল…….
—তুশ হয়েছে তোর?আমাদের তো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
সিনথিয়া ইশফার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…..
—দেড়ি হয়ে যাচ্ছে মানে?কোথায় যাচ্ছ তুমি?
ইশফা কিছু বলার আগেই রিধি ফট করে বলল……
—আর বলিস না এদের কত করে বলছি আজ থেকে যেতে সমস্যা হলে বিকেলে চলে যেতে কিন্তু এরা শুনছেই না।এরা এক কথাই বলে যাচ্ছে,ভার্সিটিতে যেতে হবে ক্লাশ আছে।
সিনথিয়াঃকোথাও যেতে পারবে না এখন।
অনেক দিন পর তোমাদেকে পেয়েছি এখন আমি কিছুতেই তোমাদের কে ছাড়ছিনা।
ইশফাঃআজ যেতে হবে আপু।অন্য সময় এসে জমিয়ে তোমার সাথে আড্ডা দিব।
আজ একটু দরকার আছে।বোঝার চেষ্টা কর।
—রিধু তোর গেস্টরুমটা ঠিক আছে তো?প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।আই ওয়ান্ট এ রেস্ট।
সান এর অসুস্থ কন্ঠ শুনে ইশফা চটজলদি দরজার দিকে তাকাতেই সান কে কপালে হাত রেখে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।
সিনথিয়া সানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল…..
—ভাইয়া তুই রেস্ট নিয়ে পরে আছিস?ভাবি যে চলে যেতে চাচ্ছে সেদিকে তোর খেয়াল আছে?
সানঃকি রে রিধু কি জিগ্যেস করলাম কিছু বলছিস না কেন?
নিরব মিটমিট করে হেসে বলল…..
—তোর জন্য আমাদের গেস্টরুম সব সময়ই রেডি থাকে।
সান নিরবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে কোন কথা না বলে ইশফার হাত ধরে টানতে টানতে রুমের দিকে যেতে লাগলো।সানের কাজে সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো। ইশফা চেচিয়ে বলল……
—আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় হাত ছাড়ুন।
সান কোন কথা না বলে ইশফার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
ইশফা জোরাজুরি করেও সান এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে পারলো না।সান রুমে গিয়ে ইশফার হাত ছাড়তেই ইশফা রাগি গলায় বলল……
—সমস্যা কি আপনার?সবার সামনে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?কি ভাবছে সবাই?
—হাত ধরেই তো নিয়ে এসেছি কোলে করে তো আর আনিনি।তাছাড়া কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার।
ইশফা সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে কিছু না বলে রুম থেকে বের হতে নিলেই সান ইশফার হাত ধরে নরম গলায় বলল……
—মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও না।
ইশফা সানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাতে দাত চেপে বলল……
—আবদারটা একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
সান কপালে হাত রেখে অধর্য্য গলায় বলল…..
—আমি যে কেন ভুলে যাই তুমি ভালো কথার মানুষ না।জোর ছাড়া কিছুই তোমাকে দিয়ে করানো যায় না।সমস্যা নেই বউকে দিয়ে যদি ত্যাড়া ভাবেই সব কাজ করাতে হয় তাহলে সেটাই করতে হবে।
ইশফা কিছু বলার আগেই সান ইশফাকে টেনে বেডে বসিয়ে ইশফার কোলে মাথা রেখে টানটান হয়ে শুয়ে পরল।সান এর কাজে ইশফা পুরো স্টেচু হয়ে বসে রইল।
—মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেও না।
সান এর আদুরে গলার কথা শুনে ইশফা নিজেকে সাভাবিক করে কোন কথা না বলে সানকে ঠেলে সরাতে চাইল।কিন্তু সানকে একটুও নড়াতে পারলো না।সান আবারো আদুরে গলায় বলল…..
—সত্যি বলছি প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
কথাটা বলে নিজেই ইশফার হাত নিজের মাথায় রাখলো।
ইশফা তেজি গলায় বলল……
—আপনি উঠবেন নাকি ধাক্কা মাইরা নিচে ফালামু।
সান ভ্রু কুচকে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—কালকের থেকে দেখছি আমার সাথে কথা বলার সময় তোমার ভাষাটা একটু অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে।কাহিনী কি?
—কাহিনী কিছুই না এখন উঠেন নাইলে আপনার খবর আছে।
—আগে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তারপরে সরছি তার আগে না।
ইশফা কোন ভাবেই সানকে সরাতে পারলো না।তার এক কথাই মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে সরবে না।সান তার কথায়ই অটুল হয়ে থাকলো।শেষে ইশফা উপায় না পেয়ে সান এর উপর রাগ দেখিয়ে সান এর চুল জোরে জোরে টানতে লাগলো।ইশফা এতো জোরে সান এর চুল টানছে যে সান ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে রয়েছে তার পরেও একটা কথা বলছে না।
কিছুক্ষন পর সান এর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সান ঘুমিয়ে গেছে ভেবে ইশফার হাতের জোর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেলো।ইশফা সান এর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো……..
—এ কোন পাগলের পাল্লায় পরেছি আমি?এতো জোরে চুল টানলাম কোন টু শব্দও করলো না?এমনকি এই অবস্থাই ঘুমিয়ে পরল?
ইশফা সান এর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সানকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো সাথে এটা সেটা ভাবতে লাগলো।ইশফার ভাবনার মাঝেই সান চোখ খুলে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল……
—এভাবে ঘুমন্ত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে নেই বউ।নজর লেগে যাবে তো।(চোখ মেরে)
ইশফা থতমত খেয়ে বলল……
—আপনি ঘুমান নাই?
—মাথার মধ্যে যদি কেউ হাল চাষ করে তাহলে কি ঘুমানো যায়?
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল……
—দেখুন বহুত সহ্য করেছি আপনার পাগলামি এবার সরেন নয়তো মাথায় কিন্তু একটা চুলও রাখবো না।সব টেনে ছিড়ে ফেলবো।
—চুল ছিড়তে হবে না আগে বল যাবে না তাহলেই সরে যাচ্ছি।
—আমার ক্লাশ আছে।
সান ফট করে চোখ বন্ধ করে বলল…..
—তাহলে আমিও উঠছি না।
—আমার পা ব্যাথা করছে।
—আমার মাথা ব্যাথা করছে।
—আপনার মাথা ব্যাথা করছে চুপ চাপ শুয়ে থাকুন না।না করলো কে?
—তোমার পা ব্যাথা করছে চুপ চাপ বসে থাকো তাহলেই তো হয়।আমি তো মানা করিনি।
—কি ছেলে মানুষি শুরু করেছেন?রিধি অসুস্থ এই অবস্থায় এখানে থেকে শুধু শুধু ঝামেলা বাড়ানোর কোন মানে আছে?
—এতো বেশি কেন বোঝ তুমি।কোন ঝামেলা হবে না।আমি সবটা দেখে নিব।
ইশফা সান এর ত্যাড়ামির কাছে হাড় মেনে বলল……
—ঠিক আছে যাব না।এবার উঠুন।
সান ইশফার দিকে ভ্রু কুচকে বলল…..
—সত্যি তো?
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল…..
—তিন সত্যি।এবার উঠুন।
সান মুচকি হেসে ইশফার কোল থেকে মাথা উঠাতেই ইশফা সানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পাশের থেকে বালিশ নিয়ে সানের দিকে ছুড়ে মেরে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।সান ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
💦💦💦💦💦💦
কি ভাবছেন সান আর রিধির সাথে কিসের সম্পর্ক,নিরব আর রিধির বিয়ে কবে হয়েছে তাই তো?তাহলে চলুন জেনে নেই।
রিধি সান এর খালাতো বোন।সান এর কাছে সিনথিয়া আর রিধি দুজনই সমান।
দুজনকেই সে সমান চোখে দেখে।
রিধি পরিবারের একমাত্র মেয়ে হবার কারনে বাবা মায়েরও খুব আদরের ছিলো।রিধি যখন ক্লাস টেইনে পরে তখন তার মা মারা যায়।কথায় আছে না মা মরলে বাপ হয়ে যায় তালই।রিধি বেলায় ঠিক তেমনটাই হয়েছে।তা মা মারা যাবার কিছুদিন পরে তার বাবা আরেকটা বিয়ে করে।বিয়ের পর আস্তে আস্তে তা বাবা পরিবর্তন হতে লাগলো।
দ্বিতীয় বিয়ের পর সে রিধি কোন খোজ খবরই নিতো না।রিধি সারাদিন খেয়েছে কি না খেয়েছে, সুস্থ আছে নাকি অসুস্থ সেদিকে তার কোন খবর নেই।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো তার যে একটা মেয়ে আছে।সৎ মা রিধির সাথে কোনরুপ খারাপ ব্যবহার না করলেও সে রিধিকে দেখতে পারতো না।
রিধি মনে মনে প্রচুর ভেঙে পরলেও সান এর পরিবারের সাপোর্ট পেয়ে নিজেকে সব পরিস্থিতি সাথে খাপ খাইয়ে মানিয়ে নেয়।সবার কথামত ফাইনাল পরিক্ষাটা দেয়।টেনেটুনে পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হতে চাইলেই তার সৎ মা কলেজে ভর্তি হতে বাধা দিয়ে সে রিধির বিয়ের জন্য উঠে পরে লাগে।তার কথা শুনে রিধির বাবাও মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য রাজি হয়ে যায়।
রিধির বাবাকে সান এর বাবা,মা রিধিকে ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে নিষেধ করে।নানান ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে যাতে সে রিধিকে এই ছোট বয়সে বিয়ে না দেয়।এমনকি তাদের সুবিধার জন্য তারা রিধিকে তাদের কাছে রাখতে চায়।কিন্তু কোন ভাবেই রিধির বাবা তা মানেনি।সে না তাদের সাথে রিধিকে দিবে আর না নিজের বাড়িতে সে রিধিকে রাখবে।তা নিয়েই দুই পরিবারের মাঝে দন্ড বেঝে যায়।
রিধি বয়স আর কত?সবে মাত্র কলেজে পা দিবে।নিজেকে নিয়ে এমন টানা হেচরা দেখে সে ডিপ্রেশনে চলে যায়।নিজেকেই নিজের কাছে অপরাধী মনে হয়।সবাইকে সব ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতেই সে সুইসাইড করার চেষ্টা করে।আল্লাহ্ সহায় থাকায় সেদিন রিধি বেচে যায়।বাড়ির এক সার্ভেন্ট রিধির রুমে পানি রাখতে গিয়ে রিধিকে রক্তাক্ত হাতে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করে।
হাসপাতাল থেকে রিধিকে সান জোর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।রিধি একটু সুস্থ হতেই রিধির সৎ মা আবার বিয়ের জন্য উঠে পরে লাগে।নিরব রিধিকে আগে থেকেই পছন্দ করতো।নিরব তার ফ্যামিলিকে রিধির কথা বললে তারা আর আপত্তি করেনা।এদিকে রিধির সৎ মায়ের চিন্তা হল রিধিকে বাড়ি থেকে বের করা।নিরব বেকার ছেলে পড়াশুনা করছে যানা সর্তেও বড় ঘড়ের ছেলে দেখে রিধির বাবাকে পট্টি দিয়ে বিয়েতে রাজি করায়।দু ফ্যামিলির সম্মতিতেই ওদের বিয়েটা হয়।
রিধি প্রথম প্রথম নিরবকে সহ্য করতে না পারলেও আস্তে আস্তে নিরব এর কেয়ার, ভালোবাসা দেখে সে ও নিরব এর উপর দূর্বল হয়ে পরে।
রিধি ইশফা থেকে নিজের পরিচয় লুকানোর কারন হল সান।রিধিই সে ব্যক্তি যে ইশফার সকল খবরা-খবর সানকে দিত।রিধি সান এর বোন+নিরব এর ওয়াইফ জানার পর ইশফা,তুশি যদি রিধির সাথে বন্ধুত্ব না করে তাই তার পরিচয় গোপন করা।
আর এসব কিছু সান নিজেই কাল রাতে ইশফাকে সব বলেছে।সানই ইশফাকে সব বুঝিয়ে বলে রিধির এখানে আশার জন্য রিকুয়েস্ট করেছে।
(আমার মতে রিধির ব্যাপারে সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে।যদি কিছু বাকি থেকে থাকে জানাবেন প্লিজ)
💦💦💦💦💦💦
ড্রয়িং রুমে বসে সবাই গল্প করছে।হাসিঠাট্টায় মেতে উঠেছে সবাই।হাসিঠাট্টার মাঝেই রিধি ইশফা,তুশির দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলল…..
—আমার বিয়ের কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিস তোরা?
ইশফা,তুশি কোন কথা না বলে চুপ করে রইল।ওদের চুপ থাকতে দেখে রিধি হতাস হয়ে বলল……
—তোরা এখনো আমার উপর রাগ করে আছিস?
ইশফা একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…..
—সত্যি কথা বলতে প্রথমে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।পরে ঠান্ডা মাথায় ভাবলাম তোর মত বকবক মহিলা যখন আমাদের থেকে বিয়ের কথা লুকিয়ে এতোদিন থাকতে পেরেছে তাহলে নিশ্চই এর পিছনে কোন কারন আছে।বিয়ের কথা শুনে রাগ করেছি গুড নিউজ শুনে খুশি হয়েছি।খুশিতে রাগে কাটাকাটি এখন আবার আগের মত হয়ে গেছি।
ইশফার কথা শুনে খুশিতে রিধির চোখ চকচক করে উঠল।মুহূর্তের মধ্যে আবারো চেহারার মধ্যে খুশির ঝিলিক, চঞ্চলতা ফুটে উঠল।
💦💦💦💦💦💦
ইশফার বাসার থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি থামাতেই ইশফা গাড়ি থেকে নেমে পরলো।সান তুশিকে তার বাসায় পৌচ্ছে দিয়ে ইশফাকে বাসায় পৌচ্ছে দিতে এসেছে।সান চেয়েছি ইশফার বাসায় সামনে গিয়ে তাকে নামিয়ে দিতে কিন্তু ইশফার জন্য তা আর হয়নি।সান গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলল……
—কি দরকার ছিলো এখানে নামার?তুমি কি অন্য কারো সাথে ঘুরাঘুরি করছো?নিজের বর এর সাথে আছো সো লোকের কথাকে ভয় পাবার কিছু নেই।
—আপনাকে কে বলল আমি লোকের কথার ভয়ে এখানে নেমেছি?লোকের কথাকে আমি কখনোই ভয় পাই না।
—তাহলে এখানে নামলে কেন?গাড়িতে উঠ আমি তোমাকে তোমার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসছি।
—এখানে নেমছি ঐ বিচ্চুর জন্য।আপনার সাথে আমারে দেখলে আমারে জ্বালাইয়া ভাজা ভাজা করবো।
ইশফার কথা শুনে সান মুচকি হেসে বলল…..
—তুমি ইরুর ভয়ে এখানে নেমেছো।
—তেমনটাই মনে করেন।আচ্ছা আশি।সাবধানে যাবেন আল্লাহ্ হাফেজ।
কথাটা বলে ইশফা সামনের দিকে দু কদম আগানোর পর সান মোলায়েম কন্ঠে বলল…..
—শোন…..
ইশফা ঘুড়ে সান এর দিকে তাকাতেই সান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—বন্ধু হবে আমার?আমি চাই বন্ধুত্বের দিয়ে নতুন করে আমাদের সম্পর্কটা শুরু করতে।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_38
কারো সাথে খুব সহজে মিশতে হলে তাকে ভালোভাবে জানতে হলে প্রথমে তার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দাও।কেননা বন্ধুত্বের মাধ্যমেই তুমি খুব সহজে তার সাথে মিশতে পারবে তাকে জানতে পারবে।
মুয়াজ্জিন এর কন্ঠে ফজরের সুমধুর আযান কানে ভেসে আসতেই ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল……
— ইন্নালিল্লাহ!আযান পরে গেছে!আমার তো আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।কালকে আপনার জন্য যেতে পারিনি।ঘুমে চোখ জ্বালাপোড়া করছে। ঘুমবোই কখন আর উঠে ভার্সিটিতে যাব কখন?সব আপনার দোষ আপনার।আপনার আবদার রাখতেই আপনার সাথে মাঝরাত থেকে ঘুম হারাম করে কথা বলাই আমার ঠিক হয়নি।
—আরে আমাকে দোষারোপ করছো কেন আমি কি করেছি?নতুন নতুন বন্ধুত্ব করলে আর বন্ধুর কথা রাখতে না হয় রাত জেগে একটু কথাই বলেছ।কি এমন হয়েছে?
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল…..
—কি হয়নি সেটা বলুন।ঘুমোতে হবে।ভার্সিটিতে যেতে হবে কত কাজ।আর এটা একটু কথা!সেই একটার থেকে বকবক করে যাচ্ছি আপনার সাথে।জানেন আমি জীবনেও ফোনে কারো সাথে এতো কথা বলি নি।আল্লাহ্ এখন আমার মুখ ব্যাথা করছে।সব দোষ আপনার।
সান মুচকি হেসে বলল……
—হয়েছে ম্যাডাম এখন আর আমাকে দোষারোপ করতে হবে না।দোষী দুজনই।কথা বলার সময় কারোরই টাইমের খবর ছিলো না।এখন আমাকে দোষারোপ করা বাদ দিয়ে ঘুমাও।ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একটু লেট করে বের হও তাহলেই হবে। আমি তোমাকে নিতে আসবো।
—আপনার আসতে হবে না আমি চলে যেতে পারবো।
—তোমার কাছে জানতে চাইনি আমি।যা বলেছি তাই করবে।আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে একেবারে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসবো।
—পারেনই তো শুধু থ্রেড দিতে।
—আরো বহুত কিছু পারি।আপাতত থ্রেড দিচ্ছি।আচ্ছা রাখি ঘুমোও আমিও ঘুম দেই।
ইশফা মিনমিন করে বলল…..
—এখন ঘুমিয়ে পরবেন?
—কেন আরো কথা বলবে?
—জ্বি না কথা বলবো না।
—তাহলে?
—বলছি কি আপনি নামাজ পরবেন না?না মানে আযান পরেছে নামাজ পরে ঘুমালে হতো না।
—আসলে নামাজ টা ঠিকমত আদায় করা করা হয় না।আজ পরি কাল পরি করতে করতে বেশির ভাগ ছুটেই যায়।মাঝে মাঝে পরা হয় তাও নিয়মিত না।
—আজ কাল না করে নিয়ত করুন এই ওয়াক্ত থেকে নিয়মত নামাজ আদায় করবেন।যত ব্যস্ততাই থাক না কেন নামাজ ছাড়বেন না।তাহলেই তো হয়।
সান মুচকি হেসে বলল……
—ইনশাআল্লাহ।ভুলে গেলে একটু স্বরন করিয়ে দিও।
— ভুলবেন কেন।একবার নামাজের প্রতি মহব্বত হয়ে গেলে দেখবেন এক ওয়াক্ত নামাজ না পরলে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে।
—যো হুকুম বেগম সাহেবা। ইনশাআল্লাহ আজকের থেকে পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবো।যত ব্যস্থতাই আসুক না কেন নামাজ ছাড়বো না।আর যদি শয়তানের ধোকায় পরে একটু ভুলে যাই তুমি মনে করিয়ে দিও।
ইশফা মুচকি হেসে বলল….
—হয়েছে এবার নামাজ পরে ঘুম দিন।আল্লাহ্ হাফেজ।
সান মুচকি হেসে বলল…..
—আল্লাহ্ হাফেজ।
ইশফা নামাজ শেষ করে বিছানায় গিয়ে গা বিছিয়ে দিতে না দিতেই ইশরা খোচা মেরে বলল……..
—আমার সাথে রাতের বেলা দু’মিনিট কথা বলতে গেলে তোমার ঘুম নষ্ট হয়ে যায়।এখন সারা রাত ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মশার কামড় খেয়ে কথা বলার সময় তোমার ঘুমের কিছু হয়নি?নাকি ঘুম,মশা তারা সবাই শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলো?
ইশফা ইশরার হাতে চাপর মেরে বলল……
—ফালতু কথা না বলে ঘুমা আর আমাকে ঘুমাতে দে।
—আমার কথা এখন ফালতুই লাগবো।আল্লহ্ মাটি ফাক করো ঢুকে যাই এই জালেম দুনিয়ায় কেউ আমাকে ভালুবাসে না।
ইশফা আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে শুয়ে রইল।কেননা এখন ইশরার সাথে কথা বাড়ানোই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা আর ঘুম নষ্ট।
💦💦💦💦💦💦
জিদান এর সামনে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রয়েছে ইশরা।অনেকক্ষন ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না।জিদান ইশরাকে কাচুমাচু করতে দেখে নিজের চেয়ার থেকে উঠে ইশরার সামনে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে বলল…..
—কিছু বলবি?
ইশরা এক পলক জিদানকে দেখে পুনরায় মাথা নিচু করে মিনমিনে গলায় বলল…..
—বলার জন্যই তো এখানে এসেছি।
—তাহলে কিছু না বলে দাড়িয়ে রয়েছিস কেন?
ইশরা আদুরে গলায় বলল…..
—যদি তুমি বকা দেও।
ইশরার কথায় জিদান মুচকি হেসে কথার মধ্যে একটু গম্ভীয্য এনে বলল…….
—মিস ইশরা।এটা কলেজ আর আমি আপনার টিচার।টিচারদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা আপনি জানেন না?
জিদানের কথা শুনে ইশরা ফট করে জিদানের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে রাখি গলায় বলল…….
—আমাকে না রাগালে কি তোমার হয় না?
জিদান হেসে বলল…..
—জানিস তাহলে রাগছিস কেন?
ইশরা কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইল।জিদান ইশরার মাথায় গাট্টা মেরে বলল……
—এখন গাল না ফুলিয়ে তাড়াতাড়ি বল কি বলবি আমার ক্লাশ আছে।
—ছুটির পর আজ আমাদের কে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাবে?
জিদান সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…..
—আমাদের মানে?
—আমাদের মানে আমাকে আর লিপিকে।তোমার থেকে ট্রিট নেওয়ার জন্য লিপি আমাকে পাগল করে ফেলছে।আমি নিজে ওকে ফুচকা ট্রিট দিতে চেয়েছি কিন্তু সে যেতে নারাজ।তার কথা তুমি তাকে ট্রিট দিবে।সে নাকি ভদ্র মেয়ে জিজু থাকতে বেস্টুর টাকা খরচ করবে না।আর এই সব হয়েছে তোমার জন্য।তুমি যদি সেদিন লিপির সামনে বড় মা এর ফোন আমায় ধরিয়ে না দিতে তাহলে আর এসব কিছুই হতো না।পরে এক সময় আমি ওকে মানিয়ে বললে ঠিকই বুঝতো।জানো ও কত রাগ করেছিলো আমার উপর।বহুত কষ্টে ওর রাগ ভাঙিয়েছি।
ইশরা কথা শেষ করে জিদানের দিকে তাকাতেই দেখলো জিদান তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে।ইশরা ভ্রু কুচকে বলল……
—এই যে,এভাবে তাকিয়ে রয়েছো কেন?
জিদান মুচকি হেসে বলল……
— আমার বকবক রানি যে এখনো আগের মত আছে তাই দেখছিলাম।
—খবরদার আমার কথা বলা নিয়ে কিছু বলবে না।এই কয়দিন বাসায় চুপ করে বসে থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে গেছিলো।
—তুই ছিলি চুপ করে বললি আর আমি বিশ্বাস করবো।
ইশরা ভেঙচি কেটে বলল……
—তোমার বিশ্বাস করানোর জন্য আমার ঠেকা পরে নি।এখন বল কখন নিয়ে যাবে।
—ক্লাশ শেষে পাশের রেস্টুরেন্টে তোরা গিয়ে আমাকে একটা কল করে জানিয়ে দিস আমি চলে যাব।
জিদানের কথা শুনে ইশরা খুশি হয়ে নাচতে নাচতে লিপিকে খবরটা দিতে চলে গেলো।
💦💦💦💦💦💦
ক্লাশ শেষে ইশফা,তুশি কথা বলতে বলতে গেডের দিকে যাওয়ার সময় কোথা থেকে এলি তার দলবল নিয়ে ইশফাদের সামনে এসে দাড়ালো।এলি একবার তীক্ষ্ণ চোখে ইশফাকে ভালো মত দেখে তাসিল্য হেসে বলল…….
—এই সব ভালো মানুষদের পোষাক না পরে নিজে যেই লেভেলের তেমন পোষাক পরলেই তো পারো।তোমার মত মেয়েদের কিন্তু এই পোষাকে মানায় না।তুমি এই বোরকা,হিজাব পরাতে বোরকা,হিজাব ও লজ্জা বোধ করছে।
ইশফা হাত ভাজ করে সাভাবিক গলায় বলল…….
—মতলব কি আপনার?পথ আটকিয়েছেন কেন?আর আমি কি পরবো না পরবো তার দিকে নজর না দিয়ে নিজের চরকায় তেল দিন না।তাহলেই তো হয়।
পিছন থেকে একটি ছেলে সামনে এসে বলল……
—আমি তো ভেবেছিলাম আমার সুইটহার্ট এর শুধু হাত চলে এখন তো দেখছি জবান ও খুব চলে।
(ছেলেটি আর কেউ না যে ভার্সিটির প্রথম দিন ইশফার হাতে থাপ্পড় খেয়েছিলো সে)
ইশফা ছেলেটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল……
—কথা ঠিক ভাবে বলুন।
—কেনো আমরা সুইটহার্ট বললেই দোষ আর সান যখন বলে তখন?
ইশফা মুচকি হেসে বলল…….
—কোথায় সান আর কোথায় আপনি?আর সান সুইটহার্ট কেন কলিজা,গিলা, ফেফসা যাই বলুক না কেন তার বলার অধিকার আছে দেখেই বলে।
এলি রাগি গলায় বলল……
—তুমি তো খুব লোভি মেয়ে সানকে সান এর টাকার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই হাত করে ফেলেছে।ভালো ভালোয় বলছি আমার সান এর জীবন থেকে চলে যাও।
ইশফাঃও তাই নাকি।সান কে যে আমি হাত করে নিয়েছি এটা জানানোর জন্য ধন্যবাদ।একটা ছোট্ট প্রশ্ন ছিলো,আমি না হয় সানকে টাকার জন্য হাত করেছি আপনি কেন সান এর পিছনে পরে আছেন বলুন তো?আপনিও কি টাকার জন্য……?
এলি চেচিয়ে বলল…..
—ইউ স্টুপিট মেয়ে লজ্জা করে না পর পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করতে?কান খুলে শুনে রাখ সান এর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।আর খুব তাড়াতাড়িই আমরা বিয়ে করছি।
ইশফাঃও তাই নাকি।এই যে মিষ্টার বর মাশাই আপনার বিয়ের খবর আপনার এই বান্দনী আই মিন বান্ধবীকে দিন নি?কাজটা কিন্তু ঠিক করেননি অন্তত্য একটা ট্রিটও দিলে দিতে পারতেন।
ইশফা সামনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল।ইশফার তাকানো অনুসরণ করে এলিরা সবাই ঘুড়ে দাড়াতেই সানকে বুকে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো।
💦💦💦💦💦💦
ইশরা,লিপি রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়া দাওয়া করে বের হতেই রাস্তার অপর পাশে হাওয়াই মিঠাই দেখে ইশরা খুশি হয়ে বলল……
—লিপি রে অনেক দিন পর হাওয়াই মিঠাই দেখলাম।তুই দাড়া আমি গিয়ে কিনে নিয়ে আসছি।
লিপি বাধা দিয়ে বলল…….
—না তোর যেতে হবে না স্যারকে মিল মিটিয়ে আসতে দে।স্যার এনে দিবে।
—ধুর এইটুকুর জন্য ভাইয়াকে বলতে হবে না।তুই দাড়া আমি গিয়ে ছু মন্তর করে নিয়ে আসতাছি।
ইশরা লিপির কথা না শুনে রোডের অপর পাশে চলে গেলো।হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসার সময় ইশরা, লিপির সাথে জিদানকে ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে ভয়ে অসাবধানতাবশত রোড পার হতে নিলে একটা গাড়ি এসে ইশরাকে ধাক্কা দিল।ইশরা গাড়ির ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পরলো।ইশরাকে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পরতে দেখে লিপি ইরু বলে সাথে সাথে চেচিয়ে উঠল।জিদান কিছু না বলে মূর্তির মত ফ্যালফ্যাল নয়নে রোডের মধ্যে পরে থাকা ইশরার দিকে তাকিয়ে রইল।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_39
রাস্তার মধ্যে রক্তাত্ব অবস্থায় পরে আছে ইশরা।আশেপাশের লোকেরা দূর থেকে ইশরার নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।লিপি দৌড়ে সেখানে গিয়ে ইশরার মাথা নিজের কোলে নিয়ে কান্না করছে আর ইশরাকে ডাকছে।লিপি ইশরার গালে হালকা চাপড় মেরে কান্না করতে করতে বলল…….
—ইরু চোখ খোল। কথা বলছিস না কেন?ইরু আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?ইরু চোখ খোল। কথা বল। কথা বলছিস না কেন তুই?কথা বল?
লিপি ইশরা গালে হালকা চাপড় মেরে ইশরাকে ডাকছে আর কান্না করছে।
দুই একজন করে সামনে এসে দাড়াতে দাড়াতেই মুহূর্তের মধ্যে ইশরাকে ঘিরে ভিড় হয়ে গেলো।
জিদান এখনো ঘোরের মধ্যে রয়েছে।সে ফ্যালফ্যাল নয়নে সামনের দিকে ইশরার নিথর দেহটার দিকে তাকিয়েই রয়েছে।মানুষ জনের ভিড় বেধে যাওয়ায় যখন ইশরাকে জিদান আর দেখতে পেল না তখন জিদান এক পা দু’পা করে সেদিকে চলে গেল। ভিড় ঠেলে ইশরার সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসল।লিপি জিদানকে দেখে কান্না মাখা কন্ঠে বলল…….
—স্যার ইরুকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।তাড়াতাড়ি গাড়ির ব্যবস্থা করুন।
জিদান লিপির কথা কানে না তুলে ইশরার গালে হাত রেখে নরম গলায় বলল…….
—ফাজিল মেয়ে দিন দিন বড় হচ্ছিস আর বেয়াদব হচ্ছিস না।এতো বড় মেয়ে হয়ে রাস্তায় শুয়ে রয়েছিস কেন?থাপ্পড় খেতে না চাইলে তাড়াতাড়ি উঠ।না হলে কিন্তু আমি রাস্তার মধ্যেই তোকে মাইর লাগাবো।
জিদানের কথা শুনে লিপি কান্নারত অবস্থায় অবাক চোখে জিদান এর দিকে তাকিয়ে বলল……
—স্যার ইরু এক্সিডেন্ট করেছে।ওকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।প্লিজ কেউ একটা গাড়ির ব্যবস্থা করুন প্লিজ।(শেষের কথাটা আশেপাশে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল)
জিদান লিপির কথা এবারো কানে না তুলে বলল……
—দেখ ইশু সহ্যের একটা সিমা আছে। তাড়াতাড়ি উঠ নয়তো তোকে এখানেই ফেলে চলে যাব।লিপি উঠতো ওকে এখানেই রেখে চলো আমরা চলে যাই।
লিপি বুঝতে পারলো জিদান এখন তার মধ্যে নেই।লিপি এক হাত দিয়ে জিদানের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলল…….
—স্যার নিজেকে সামলাম।একটু বোঝার চেষ্টা করুন ইরু এক্সিডেন্ট করেছে।ওকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
লিপির ঝাকানোতে জিদান তার হুসে ফিরলো।এতোক্ষন মনে হচ্ছিল কেউ তাকে সম্মহিত করে রেখেছে।এর মধ্যে একজন গাড়ি নিয়ে আসতেই জিদান ছো মেরে ইশরাকে কোলে তুলে গাড়ির দিকে ছুটল।
💦💦💦💦💦
ওটির সামনে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে জিদান।ইশরাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মিনিট খানেক হবে ইশরাকে ওটিতে ঢুকানো হয়েছে।জিদানকে দেখে কেউ বুঝতে পারবে না তার মনের ভিতরে কি চলছে।কেননা কান্না করলে, আহাজারী করলে সবাই সেটা দেখে।কিন্তু মনের খবর কেউ জানতে যায় না।ভিতরে ভিতরে যদি দুমরে মুচরেও যাও তারপরেও সে দিকে কেউ নজর দেয় না।জিদানের চোখে না আছে পানি আর নাই বা মুখে কিছু বলছে সে।তার মনের মধ্যে যে কোন ঝড় বইছে তা একমাত্র সেই জানে।
লিপির কল পেয়ে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ছুটে হাসপাতালে চলে এসেছে ইশফা।ইশফা হাপাতে হাপাতে হাসপাতালে পৌচ্ছে জিদানকে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জিদানের কাছে দৌড়ে গিয়ে বলল……
—ভাইয়া ইরু কোথায়?কি হয়েছে ওর?লিপি বলল এক্সিডেন্ট করেছে? ও ঠিক আছে তো?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?তোমার শার্টে রক্ত কেন?কোথাও ব্যাথা পেয়েছো?কথা বলছো না কেন?চুপ করে না থেকে কথা বল।কি হয়েছে ইরুর?ভাইয়া চুপ করে না থেকে কিছু তো বল।
ইশফা একের পর এক গরগর করে জিদানকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।জিদান কিছু না বলে ইশফার দিকে সান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।কিছু বলার পরিস্থিতিতে সে নেই।জিদান মুখে কিছু না বললেও ইশফা তার চোখের ভাষা কিছুটা বুঝতে পেরে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল……
—আ-আমার ক-কলিজার কিছু হবে না তো ভাইয়া?
জিদান কিছু না বলে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাথে সাথে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরল নোনা জল।
লিপি একটু দূরে বসে মুখে হাত চেপে কান্না করছিলো।ইশফাকে দেখে কাপাকাপা পায়ে ইশফার সামনে এসে গলা জড়ানো কন্ঠে বলল…….
—ইফু আপু…….।
ইশফা লিপির দিকে কান্নারত অবস্থায় তাকাতেই লিপি ফুপিয়ে বলে উঠল……
—আপু ইরু……।
লিপি আর কিছু বলতে পারলো না মুখে হাত চেপে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।ইশফা লিপির দিকে এগিয়ে এসে কাপাকাপা হাত লিপির হাতের উপর রেখে কান্নামাখা কন্ঠে বলল……
—তুমি কান্না কেন করছো?ইরু ঠিক আছে তো। দেখবে একটু পর ওটির থেকে বের হয়ে আমাদের সাথে মজা করা শুরু করে দিবে।কান্না করো না।
ইশফার কথা শুনে লিপি পারছে না চিৎকার করে কান্না করতে।লিপি ইশরাকে কি সান্তনা দিবে সে তো নিজেই নিজেকে ঠিক করতে পারছে না চোখের সামনে বার বার ইশরার রক্তমাথা মুখটা ভেসে উঠছে।
সান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে জিদান এর সামনে গিয়ে জিদান এর কাধে হাত রাখতেই জিদান চোখ মেলে সান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।সান নরম গলায় বলল……
—ভাইয়া…..।
জিদান চোখ বন্ধ রেখেই বলল……
—বুচিকে সামলাও ভাই।বুচিকে সামলাও।
💦💦💦💦💦💦
খবর পেয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই হাসপাতালে চলে এসেছে।মিসেস খান এক পাশে বসে কান্না করছে আর আল্লাহ্কে স্বরন করছে।ইশিতা বেগম পাশে বসে যতটুকু পারছে তাকে সান্তনা দিচ্ছে।ইশফা কান্না করতে করতে জ্ঞান হারানোর ফলে তাকে পাশের এক কেবিনে রাখা হয়েছে।
মিঃখান ওটির দরজার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে।এই অবস্থায় জিদানকে এখানে দেখেও কেউ কোন প্রশ্ন করে নি।
ঘন্টাখানেক পর একজন নার্স ওটির থেকে বের হয়ে আসতেই জিদান দ্রুত তার কাছে গিয়ে বলল…….
—পেশেন্ট কেমন আছে?
নার্স মুখটা মলিন করে বলল……
—আল্লাহ্ কে ডাকুন।পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না।পেশেন্টের গার্জিয়ান কে আছে?কিছু ফরমালিটি পূরন করে একটা বর্ন সাইন করতে হবে।আপনাদের থেকে একজন আসুন আমার সাথে।
জিদান কাপাকাপা গলায় বলল……
—পেশেন্ট ঠিক হয়ে যাবে তো?
নার্স ছোট করে বলল……
—আল্লাহ্ কে ডাকুন।
কথাটা বলেই নার্স চলে গেলো।
সান সবার দিকে একবার তাকিয়ে ইশান কে ইশারা করে নার্স এর পিছু পিছু গেল।
নার্সটার কথা শুনে সবার মাথায় যেন বাজ পরল।জিদান পরে যেতে নিলেই ইশান সাথে সাথে জিদানকে ধরে ফেলল।জিদান নিজেকে কিছুটা শক্ত করে হেলতে দুলতে মিঃখান এর সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে মোলায়েম গলায় বলল…….
—চা-চাচ্চু……।
মিঃখান জিদানের দিকে তাকাতেই জিদান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হাত জোড় করে কাপাকাপা গলায় বলল…….
—চাচ্চু আমাকে মাফ করে দাও। আমি পারিনি তোমার পরিকে দেখে রাখতে।আমাকে মাফ করে দাও চাচ্চু আমাকে মাফ করে দাও।
মিঃখান মুখে কিছু না বলে নিজের হাত জিদানের হাতের উপর রেখে তাকে আসস্থ করল।
একটু পর একজন নার্স হাতে একটা পেপার নিয়ে এসে বলল…..
—পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছে।এই পেপারে একটা সাইন করে দিন।
নার্স এর কথা শুনে মিঃখান নার্স এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই জিদান চোখের পানি মুছে নার্স এর সামনে গিয়ে বলল…….
—কোথায় সাইন করতে হবে?
নার্সঃ আপনি পেশেন্টের কি হন?
জিদান মিঃখান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল…….
—আমি পেশেন্টের হাজব্যান্ড।
কথাটা শোনা মাত্রই সবাই অবাক চোখে জিদানের দিকে তাকালো।
ইশিতা বেগম এর হাজব্যান্ড জিদানের দিকে এগিয়ে এসে ওর কাধে হাত রেখে বলল…….
—দেখ বাবা তুমি এখনো ওর হাজব্যান্ড হওনি।তাই এই পেপারে সাইন করার……
তাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে জিদান বলল…….
—ইশু আমার বিয়ে করা লিগেল বউ।তাই এখন চাচ্চুর থেকে ওর ভালো মন্দ সব কিছু দেখার অধিকার আমার আঙ্কেল। তাই প্লিজ আমার কাজে বাধা দিবেন না।
কথাটা বলে নার্স এর হাত থেকে পেপারটা নিয়ে সাইন করে দিল।নার্স চলে যেতেই আবার দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইল।
জিদানের কথা সুনে সবাই যেন ৪৪০ভোল্ড এর ঝাটকা খেল।সবাই অবাক চোখে জিদানকে দেখছে।সবার কানে শুধু জিদান এর কথাই ঘুরপাক করছে।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_40
অপেক্ষার প্রহর যেন সহজে কাটে না।অপেক্ষার প্রহরের এক একটা মিনিট যেন এক দিনের চাইতেও বেশি লম্বা হয়।
সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে দীর্ঘ সময় পর ওটির থেকে ডাঃ বের হয়ে আসলো।জিদান তড়িঘড়ি ডাঃ এর সামনে গিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল……
—স্যার পেশেন্ট এর অবস্থা কেমন?ও ঠিক আছে তো?তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তো?
ডাঃ কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।
সান সামনে এসে জিদানের কাধে হাত রেখে জিদানকে আসস্থ করে ডাঃ এর উদ্দেশ্যে বলল…….
—স্যার পেশেন্ট……?
ডাঃ একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…….
—পেশেন্ট শরীরের তেমন আঘাত না পেলেও মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে।আমরা আমাদের বেষ্টটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।জ্ঞান ফেরার আগে কিছু বলতে পারছি।২৪ঘন্টার আগে জ্ঞান না ফিরলে….।বাকিটা আল্লাহ্ হাতে।আপনারা আল্লাহ্কে ডাকুন।
সবার চোখ-মুখে আশার যে একটু আলোর রশ্নি ফুটে উঠেছিলো ডাঃ এর কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে তা নিভে অন্ধকারে ঢেকে গেলো।তাদের এই অন্ধকার মুখে আলোর রশ্নি ফিরে আসবে কিনা কারো জানা নেই।
💦💦💦💦💦💦
আওলাদ খান এর সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়েছে হাফসা বেগম।আওলাদ খান চেয়ারের মধ্যে পায়ের উপর পা তুলে আয়েস করে চা হাতে বসে আছেন।হাতের চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল……..
—ছেলে সাথে যোগাযোগ হয়?
হাফসা বেগম নিচু গলায় বলল……
—দুদিন আগে কথা হয়েছে।
আওলাদ খান রাগি গলায় বলল…..
—তোমাকে না কালকে বলেছি আজকে ছেলেরে বাসায় আসতে। বলো নাই কেন?
হাফসা বেগম কাপাকাপা গলায় বলল…….
—রাতে ফোন করেছিলাম।বিজি ছিলো তাই কথা বলতে পারেনি।একটু আগেও কল করেছি অনেক বার। ফোন বন্ধ।
আওলাদ খান চেচিয়ে বলল…..
—কি এমন রাজ কাজ করে ও যে বাপ,মায়ের সাথে কথা বলার সময় পায় না।আসুক একবার বাড়িতে দরকার পরলে পা ভেঙে ওকে এবার বাড়িতে বসিয়ে রাখবো।
হাফসা বেগম কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।
আওলাদ খান একটু চুপ করে থেকে কিছু একটা ভেবে বলল……
—একটু পর রেডি হয়ে নিও। ছেলে নাই তো কি হয়েছে ছেলের হয়ে আমরাই মেয়েকে আংটি পরিয়ে আসবো।
হাফসা বেগম অবাক হয়ে বলল……
—আংটি পরাবেন মানে?কাকে আংটি পরাবেন?
আওলাদ খান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল…..
—ওহ্ তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি।পাশের গ্রামের মেম্বরের মেয়ের জন্য জিদানের কথা মেম্বর নিজে এসেই বলছে আমাকে।বিয়েতে তারা সোনা-গয়না হতে শুরু করে ঘড় পুরা সাজিয়ে দিবে।সাথে কিছু জমিনও লিখে দিবে।এমন সুযোগ হাত ছাড়া কে করে। তাই আমিও রাজি হয়ে গেছি।আজকে গিয়ে মেয়েকে আংটি পরিয়ে আসবো আর পাকাকথা দিয়া আসবো।তাই তো ছেলেকে আসতে বলেছিলাম।
আওলাদ খান এর কথা সুনে হাফসা বেগম কিছুটা সাহস করে বলল……
—আপনি জিদান এর সাথে কথা না বলেই বিয়ে ঠিক করে ফেললেন?একবারো ওর মতামত জানার চেষ্টা করলেন না?আর তাছাড়া আব্বা জান তো অনেক আগেই ইশরার সাথে জিদানের বিয়……
কথাটা শেষ করার আগেই আওলাদ খান হাতের চায়ের কাপ ছুড়ে ফেলে দিয়ে হুংকার দিয়ে বলল…….
—এই বাড়িতে আমি যেই সিদ্ধান্ত নিব তাই হইবো।কারো মতামত জানার আমার দরকার নাই।আর একটা কথা শুনে রাখ ঐ মাইয়া জীবনেও আমার বাড়ির বউ হইতে পারবো না।আমি যাকে পছন্দ করবো তাকেই তোর পোলার বিয়া করতে হইবো।
কথাটা বলে আওলাদ খান সামনের একটা চেয়ারে লাঠি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
হাফসা বেগম মুখে আচল চেপে কান্না করতে করতে অস্পষ্ট ভাবে বলল…….
—আর কত নিচে নামবেন আপনি?এখন টাকার লোভে পরে ইশরার মত মেয়েকে রেখে অমন একটা মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন?আমরা সহ্য করলেও আল্লাহ্ আপনার এই লোভ সহ্য করবো না।কিছুতেই সহ্য করবো না।
💦💦💦💦💦💦
—ইরু….ইরু আমাকে ছেড়ে যাস না ইশু।তুই না আমার ভালো বোন। প্লিজ ফিরে আয়।দেখ আমি প্রমিজ করছি তুই যত দুষ্টুমিই করিস না কেন আমি তোকে বকবো না।সত্যি বলছি তুই যা বলবি তাই শুনবো একটুও বকবো না।প্লিজ ফিরে আয়।তুই তো আমার ভালো বোন।আমার সব কথা শুনিস। যাস না প্লিজ। আমাকে একা রেখে যাস না ইশু।ফিরে আয় ইরু ফিরে আয়।
ইশফা ঘুমের মধ্যে কথাগুলো বলছে আর ছটফট করছে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে তার নোনা জল।সান ইশফার পাশে এক টুলে বসা ছিল।ঘুমের ঘরে ইশফাকে ছটফট করতে দেখে টুল থেকে উঠে ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে ইশফাকে আস্তে আস্তে ডাক দিতে লাগলো।একটু পর ইশফা পিটপিট করে চোখ খুলল।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের অবস্থান বুঝে নিল।সান ইশফাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে নরম গলায় বলল……
—এখন কেমন ফিল করছো?
ইশফা সান এর কথার কোন উওর না দিয়ে ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে উওেজিত হয়ে বলল……
—ইরু কোথায়?ও ঠিক আছে তো?
সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে চুপ করে রইল।ইশফা সানকে চুপ থাকতে দেখে চেচিয়ে বলল…..
—কথা বলছেন না কেন?ইরু ঠিক আছে তো?আমি ইরুর কাছে যাবো?আমাকে ইরুর কাছে নিয়ে যান।
কথাগুলো বলতে বলতে ইশফা বেড থেকে নামতে চাইলে সান ইশফাকে বাধা দিল।ইশফা সান এর বাধা উপেক্ষা করে বেড থেকে নামার চেষ্টা করে বলল……
—আমাকে ইরুর কাছে যেতে দিন।ও আমাকে রেখে চলে যেতে চাচ্ছে।ওকে আটকাটে হবে।ও আমার সাথে রাগ করেছে।ছাড়ুন আমায় আমি ইরুর কাছে যাব।
মুহূর্তের মধ্যে ইশফা পাগলামি শুরু করে দিল।তার এক কথাই সে ইশরার কাছে যাবে। সান তাকে নানান ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কোন ভাবেই সে ইশফাকে থামাতে পারলো না।সে তার পাগলামি করেই যাচ্ছে।সান তাকে জোর করে আটকে রাখায় নিজের এক হাতের নখ দিয়ে অপর হাতে খামছি কাটছে।সান ইশফাকে এমন পাগলামো করতে দেখে ইশফাকে শান্ত করতে না পেরে দিল এক রাম ধমক।ইশফা সান এর ধমক খেয়ে সান এর দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।কান্না মাখা কন্ঠে বলল…….
—আ-আমার ইরু আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে।ওকে বলুন না আমাকে ছেড়ে যেন না যায়।ও চলে গেলে আমি একা হয়ে যাব।ওকে আটকান।
কথাগুলো বলে দু’হাতে মুখ চেপে কান্না করতে লাগল।
সান ইশফাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অপর হাতে ইশফার মাথার হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল।
যেখানে ইশরা, ইশফার কলিজা।ইশরার সামান্য কিছু হলেই ইশফা তান্ডব শুরু করে দেয়।ইশরা সামান্য একটু ব্যাথা পেলেও ইশফা অস্থির হয়ে যায়।মনে হয় চোট ইশরার না ইশফার শরীরে লেগেছে।সেখানে সেই আদুরে ছোট বোনের এটো বড় একটা এক্সিডেন্ট এ কিভাবেই বা ইশফা নিজেকে ঠিক রাখবে।
💦💦💦💦💦💦
হাসপাতালের পাশের এক মসজিদে নামাজ পরে মোনাজাত নিয়ে আল্লাহ্ এর দরবারে চোখের পানি ফেলছে জিদান আর মিঃখান।মিঃখান জিদানকে তার সাথে এখানে নিয়ে এসেছে।জিদান এর কান্নার কারনে হিচকি উঠে গেছে বার বার তার শরীর কেপে কেপে উঠছে।আল্লাহ্ এর দরবারে বেশ কিছুক্ষন কান্নাকাটি করে মোনাজাত শেষ করে সেখানেই থ মেরে বসে রইল জিদান।মিঃখান মোনাজাত শেষ করে জিদানকে থ’মেরে বসে থাকতে দেখে জিদানের কাধে হাত রাখলো।জিদান কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে গলা জড়ানো কন্ঠে বলল…….
—চাচ্চু……আমার ইশু ঠিক হয়ে যাবে তো?আমি যে পারছিনা ওকে ঐ ভাবে পরে থাকতে দেখতে।ও কখন উঠবে?কখন আবার আগের মত বায়না করবে?কখন আমার সাথে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে?ওকে ঐ সাদা কাপড়ে মোড়ানো বেডে শুয়ে থাকতে দেখে আমার যে ভিষন কষ্ট হচ্ছে চাচ্চু।তুমি তোমার পাগলিটাকে একটু বলো না ও যেন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যায়?আমি পারছিনা চাচ্চু ওকে ঐ ভাবে বেডে পরে থাকতে দেখতে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে চাচ্চু খুব কষ্ট হচ্ছে।
মিঃখান জিদান এর কথা শুনে থ’হয়ে গেলো।কি বলে সে জিদানকে সান্ত্বনা দিবে সেই ভাষাই হাড়িয়ে ফেলল।
💦💦💦💦💦💦
ICU এর রুমের দরজার সামনে বসে রয়েছে সবাই।সবাই মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।২৪ঘন্টা পার হতে অল্প কিছু সময় এখনো বাকি আছে। কিন্তু এখনো ইশরার জ্ঞান ফেরেনি।ডাঃদের কিছু জিগ্যেস করলে তারাও ভালো মন্দ কিছু বলছে না।তাদের যাই জিগ্যেস করছে না কেন তারা এক কথাই বলছে,আল্লাহ্ কে ডাকুন।মিসেস খান হাসপাতালে নামাজে জন্য যেই জায়গা রাখা হয়েছে সেখানে বসে নামাজ পরে মোনাজাত নিয়ে আল্লাহ্ এর দরবারে দোয়া করছে।মিঃখান পুরো তব্দ হয়ে বসে রয়েছে।ইশফার পাগলামি বেড়ে যাওয়ায় তাকে ঘুমের ইনজেকশনের দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে।জিদান ICUএর দরজার সামনে দাড়িয়ে পায়চারি করছে।সবাইকে টেনশনে রেখে এদিকে ICU রুমের ভিতরে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে ইশরা।মুখে অক্সিজেন মাক্স,হাতে ক্যানুলা এই সবে কোন সমস্যাই যেন হচ্ছে না তার।সে তো এই সব নিয়েই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ইশরা এই ঘুম থেকে কখনো উঠবে কি না তা একমাএ আল্লাহ্ই ভালো জানে।
#চলবে,