ভিনদেশী পর্ব ৩৩+৩৪+৩৫

#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩৩

জ্যাক হাঁটু মুড়ে বসে শ্রুতির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় দখল করে নিল।

–তুমি মিথ্যা কথা বললে কেন শ্রুতি? তুমি নাকি অসুস্থ? আমি তো দেখলাম তুমি পড়ছিলে, তাহলে মিথ্যা বললে কেন?

জ্যাকের প্রশ্ন শুনে শ্রুতি অবাক হলো। কী বলবে বুঝতে পারছে না? ওটা তো অজুহাত ছিল,যাতে লুসির সাথে পার্টিতে যেতে না হয়। জ্যাকের মুখোমুখি হতে না হয়৷
শ্রুতি নিজের ঠোঁট টা ভিজিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। কী বলবে বুঝতে পারছে না?
শ্রুতিকে এরকম চুপ থাকতে দেখে জ্যাক শ্রুতির হাত ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে এক ধমক দিয়ে বলল,,

–কী হলো চুপ আছো কেন, বলো?

জ্যাকের ধমক শুনে শ্রুতি কেঁপে উঠলো। শ্রুতি একটা ঢোক গিলে বলল,

–ইয়ে মানে,

জ্যাক এবার রেগে গেল। শ্রুতির কাধ ধরে বললো,

–কী ইয়ে মানে মানে করছো? তুমি মিথ্যা কথা বলেছো, তা তোমার মুখের হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

শ্রুতি কোনো কথা বললো না। জ্যাক তো সত্যি কথাই বলেছে। সে আর কী বলবে!

–শ্রুতি তোমাকে অনেক দিন ধরে দেখছি তুমি আমাকে ইগনোর করছো? একটু কথা পর্যন্ত বলো না। সবসময় এড়িয়ে চলো। কেন এরকম করো! আমি যে তোমাকে ভালোবাসি তা বুঝো না?

জ্যাক শান্ত স্বরে কথা গুলো বলল। তার কথায় রয়েছে একরাশ হা হা কার ও অভিমান।
জ্যাকের চোখ দিয়ে অশ্রু জড়ছে। গাল দুটো ভিজে যাচ্ছে। শ্রুতি জ্যাকের চোখের জল দেখে বুকটা মোচড়ে উঠল।
জ্যাক তার দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে। কিন্তু শ্রুতি কী উত্তর দিবে?তার তো গলা থেকে কিছু বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কন্ঠনালি কেউ রোধ করে রেখেছে।
শ্রুতি নিজেকে শান্ত করে বলল,

–জ্যাক কাঁধ থেকে হাত সরাও ।

জ্যাক শ্রুতির কথা শুনে অবাক হলো। সে ভেবেছিল তার কথায় শ্রুতির মনটা গলবে। সব কিছু তার সাথে সবকিছু শেয়ার করবে। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে সেই শ্রুতি শান্ত।

জ্যাক হাত না সরিয়ে আবার বললো,

–শ্রুতি তোমার কী হয়েছে বলো? এরকম বিহেভ করছো কেন?

শ্রুতি শান্ত স্বরে আবার বললো,

–জ্যাক হাত সরাও।

–,,,,,

শ্রুতি এবার রেগে গেলো। জেসিকার করা অপমান গুলো তার চোখে সামনে ভেসে উঠলো।মানুষের কাছে তার আত্মমর্যাদা টা সব থেকে বেশি উচিত। আর যার আত্মমর্যাদা নেই তার ভিতর মনুষ্যত্বও নেই। শ্রুতি নিজের আত্মমর্যাদার কারণেই জ্যাকের জীবন থেকে সরে গেল। এতো অপমান সহ্য করে কীভাবে একজনার জীবনে থাকবে সে!সব কিছু বাদ দিল সে। কিন্তু বড় কথা হলো সে তো একজনার বাগদত্তা।

জ্যাক আবার,

–শ্রুতি

বলে এগিয়ে আসতে নিলে, শ্রুতি এক হাত দিয়ে থামিয়ে বললো,

–কাছে আসার দরকার নেই। ওখানে দাড়িয়ে থেকেই বলো। আমার কান আছে আমি শুনতে পারি।

জ্যাক শ্রুতির এই রকম আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। শ্রুতি এরকম করছে কেন সে বুঝছে না।
জ্যাক সেখানে দাড়িয়েই আকুতির স্বরে বলল,

–শ্রুতি এই রকম করছো কেন?আমি তোমাকে ভালোবাসি!

ভালোবাসি কথাটা শুনে শ্রুতির কেন যেন খুব হাসি পেল।আগে মনে করতো ভালোবাসি কথাটায় কতো আবেগ মেশানো,দুটো হৃদয়ের বাধন। কিন্তু এখন কেন যেন তার শব্দটা শুনলে হাসি। এই একটা শব্দ মানুষকে যেমন গঠন করতে পারে, তেমনি জীবনটা ধ্বংস করে দিতেও পারে৷ শ্রুতি আর হাসি আটকিয়ে না রাখতে পেরে উচ্চস্বরে হেসে দিল। হাসতে হাসতে বললো,

–ভালোবাসা, ভালোবাসা নামক পবিত্র শব্দটা তোমাদের মতো ছেলেদের মুখে মানায় না জ্যাক। তুমি অন্যের বাগদত্তা হওয়া সত্যেও কীভাবে আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলো?তোমাদের মতো ছেলেদের কী মেয়েদের খেলার পুতুল মনে হয়?যখন যা ইচ্ছা করবে আর আমরা কিছুই বুঝবো না।

কথাগুলো বলতে গিয়ে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার হচ্ছে ভালোবাসার অত্যাচার। এই অত্যাচারের কথা কাউকে বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।

এদিকে জ্যাক শ্রুতির হাসি, কান্না দেখে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে৷ আবার শ্রুতির বলা কথাগুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সে আর না পেরে বলেই দিল।

–শ্রুতি তুমি কিসের কথা বলছো? কে আমার বাগদত্তা? আর কবেই বা আমার এনগেজমেন্ট হলো?

জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

–ওহহ! এখন আবার নাটক করা হচ্ছে। তোমার মতো ছেলেদের আমি ভালো করে চিনে গেছি। একবার ঠকে গিয়ে তোমাকে আবার বিশ্বাস করাই আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমার মতো ছেলেরা মেয়েদের সাথে লুতুপুতু করা ছাড়া আর কিছুই বোঝো না৷ আর এখন ভালো সাজতে এসেছো৷ বলছো নিজের বাগদত্তাকেই চেনো না। জেসিকা তোমার বাগদত্তা তা তুমি জানো না বলো? শ্রুতি আরও হাজারটা কথা বলতে লাগলো৷

জ্যাক আর সহ্য করতে পারলো না। সে কিছু না করেই এতো কথা সহ্য করবে কেন? রাগে চোটে হাতের পাশে থাকা ফুলদানিটা ছুড়ে মারলো। দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বললো,

–স্টপ শ্রুতি, স্টপ৷ অনেক বেশি বলে ফেলেছো তুমি?না জেনে এতো কথা বলা ভালো না৷ জেসিকা আমার ফ্রেন্ড ছাড়া আর কিছুই না। আর তুমি বাগদত্তায় নিয়ে গিয়েছো।আমি জীবনে অনেক মেয়েদের সাথে চলাফেরা করেছি, অনেক মেয়েদের সাথে ফূর্তি করেছি,আমার যে কতো গার্লফ্রেন্ড ছিলো তার হিসাব নেই ৷ বাট তোমাকে ভালোবাসার পর আমি সব কিছু বাদ দিয়েছি৷ভালোবাসা কী তা বুঝতে শেখেছি।কিন্তু তুমি বুঝলে, বুঝলে না!

বলতে বলতে জ্যাক পিছু হটতে হটতে লাগলো। অতঃপর ব্যালকনি দিয়ে চলে গেলো।

শ্রুতি জ্যাকের যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সে হিসাব মিলাতে ব্যস্ত। জ্যাক বললো, সে জেসিকা ফ্রেন্ড ছাড়া আর কিছুই ভাবে না।কিন্তু জেসিকা যে বললো, তাদের নাকি এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে? কে সত্য বললো জেসিকা না জ্যাক?

শ্রুতি ধপ করে নিচে বসে পরলো। দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তার।

———

এদিকে জ্যাক যতো দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালিয়ে নিজের বাসায় আসলো। পার্টি আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে৷ওর ফ্রেন্ডরাও সব চলে গিয়েছে। কাছাকাছির অল্প সংখ্যক কিছু মানুষ ছিল৷ জ্যাক বাসার ভিতরে ডুকতে ডুকতে উচ্চস্বরে মম, মম বলে ডাকতে লাগলো। মিসেস এলিজাবেথ, জ্যাকের ড্যাড, জেসিকা, জেসিকার মা ড্রইংরুমেই ছিলেন। মিসেস এলিজাবেথ নিজের ছেলেকে এইরকম ডাকতে দেখে তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে গেলেন। কিন্তু এই ছেলের বেহাল দশা দেখে তিনি সহ ড্রইংরুমে উপস্হিত সকলে অবাক। জ্যাকের ড্যাড মিস্টার আব্রাহাম এগিয়ে এলেন।তিনি বললেন,

–জ্যাক তুমি পার্টি ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে? কেকটা কেটেই উধাও৷তোমার কারণে আমাকে কত বড় অপমানের স্বীকার হতে হতো তুমি ভাবতে পারছো?

মিসেস এলিজাবেথ মিস্টার আব্রাহামের কথা তোয়াক্কা করলেন না৷ তিনি অস্হির হয়ে নিজের ছেলেকে বললেন,

–জ্যাক তোমার এই অবস্হা কেন?কোথায় ছিলে তুমি? জানো আমরা কতো টেনশনে ছিলাম ।

জ্যাক শান্ত কন্ঠে বলল,

–মা, আমার কী এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে?

জ্যাকের এমন প্রশ্ন শুনে মিসেস এলিজাবেথ, মিস্টার আব্রাহাম থতমত খেয়ে গেলেন। জেসিকা, জেসিকার মা অবাক হলেন৷ জেসিকার মা এগিয়ে এসে বলল,

–নিজের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে আর তুমি তাই জানো না।হাউ ফানি!

কথাটা শুনে জ্যাক শিউরে উঠলো। জ্যাক জেসিকার মায়ের কথা শুনে তার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। তার মানে সত্যিই তার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। শ্রুতি ভুল কিছু বলেনি।জ্যাক নিজের মম,ড্যাড এর দিকে তাকিয়ে বলল,

–কার সাথে আমার এনগেইজমেন্ট হয়েছে?

জেসিকার মা হাত তালি দিতে দিতে বললেন,

–নিজের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে তা জানো না? কার সাথে হয়েছে তা জানো না? জ্যাক তুমি কী আমাদের সাথে মজা করছো?

জ্যাক স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল,

–জি না। আমি মজা করছি না।

জেসিকা জ্যাকের কাছে গিয়ে উৎফুল্ল হয়ে বলল,

–আমার সাথে হয়েছে জ্যাক। আমার সাথে। আমি তোমার বাগদত্তা।

জ্যাক জেসিকার দিকে একনজর তাকিয়ে নিজের মম,ড্যাড এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল,

–কী হলো তোমরা কথা বলছো না কেন? জেসিকা যা বলেছে তা সত্যিই।

মিসেস এলিজাবেথ নিজের জ্যাকের তাকিয়ে বলবেন,

–জ্যাক আমাদের কথাটা শোন।

জ্যাক পাশে থাকা টেবিলটায় পা দিয়ে জোরে লাথি মারলো। টেবিলটা উল্টে পরে গেল। ড্রইংরুমে থাকা প্রত্যেকেই কেঁপে উঠল।
জ্যাক ক্রুর দৃষ্টিতে নিজের মম, ড্যাড এর দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বললো,

–কী শুনবো তোমাদের কথা হ্যাঁ? এখন আমার বয়স প্রায় ২২ বছর। আর আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে আর আমি জানি না।কী বলবে তোমরা হ্যাঁ?

জেসিকা বলল,

–জ্যাক তোমার হয়তো মনে নেই। আমাদের যখন ১৩ বছর বয়স তখনই আমাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। আংকেল, আন্টির হয়তো মনে নেই তোমাকে বলতে।

জ্যাক জেসিকাকে একধমক দিয়ে বলল,

–তুমি চুপ থাকো? বেশি বেড়ে গেছো তুমি।আমার পারসোনাল লাইফে নাক গলানোর তোমার কোনো অধিকার নেই৷

জ্যাক নিজের বাবা, মা এর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–এই এনগেজমেন্ট আমি মানি না। তখন আমি ছোট ছিলাম। কিছুই বুঝতাম না। তাই এই এনগেজমেন্ট এর কোনো মানে নেই৷ আর আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। আমি বিয়ে করলে তাকেই করবো।

বলেই হন হন করে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

ড্রইংরুমে যে সংখ্যক মানুষ ছিলেন তাদের মধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়ে গেছে৷ কেউ কেউ আবার অপমান করে চলে যাচ্ছে৷
জেসিকার মা মিসেস এলিজাবেথ আর মিস্টার আব্রাহাম
কে বললেন,

–এসব কী মিস্টার আব্রাহাম? আপনাদের সাথে আমাদের এতে বছরের সম্পর্ক৷ আর আমাদের পার্টিতে নিয়ে এসে আপনার ছেলে এতো বড় অপমান করলো৷ নিজের বাগদত্তাকে অস্বীকার করলো।এগুলো কোন ধরণের ম্যানার। এরকম আরও আজেবাজে কথা বলে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন৷

জ্যাকের মা, বাবা মাথা নিচু করে সব কথা শুনলেন। কোনো কথা বললেন না৷ অনেক বড় ভুল করেছে তারা। নিজের ছেলের থেকে এনগেজমেন্ট এর কথাটা লুকিয়ে। আসলে জ্যাক যখন ছোট ছিলো তখন জেসিকার বাবার সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক ছিলো। জেসিকার বাবার কোম্পানির সাথে অনেক ডিল করেছে৷ ফলে দু জনার মধ্যে বন্ধুত্ব বেশ গভীর ছিল তাই তারা চেয়েছিল বন্ধুত্বটাকে স্হায়ী রুপ দিতে। তাই জ্যাক আর জেসিকার একসাথে বিয়ে দিবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু ১৮ বছর না হলে তো আর বিয়ে হয় না। তাই এনগেজমেন্টটা করিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু পরে জ্যাককে তা বলা হয়নি। তারা ভেবেছিল জ্যাক হয়তো বিয়েতে রাজী থাকবে। তারা জানতো না যে, জ্যাক কাউকে ভালোবাসে। জ্যাক ও তাদের কখনো কোনো মেয়ের কথা বলেনি।

জ্যাকের বাবা, মা কী শ্রুতিকে মেনে নিবে না? নাকি জেসিকার সাথেই জোর করে জ্যাকের বিয়ে দিয়ে দিবে?
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩৪

উক্ত ঘটনার পর ২ দিন পেরিয়ে গেল। শ্রুতি ওই ঘটনার পর ভার্সিটিতে যায়নি। তার শরীরটা ভালো ছিল না। ঠিক ভাবে দাড়াতেই পারছিল না৷ প্রচুর মাথা ব্যথা ছিল৷ এর কারণটা অবশ্য শ্রুতি জানে। অতিরিক্ত টেনশনের কারণে এরকম হয়েছে। মনটাও ছিল তার বিষন্নতার মেঘে আছন্ন।

শ্রুতি যখন জানতে পারলো, যে জ্যাক জেসিকার সাথে এনগেজমেন্টের ব্যাপারে কিছুই জানতো না।তখন শ্রুতির নিজেরই প্রচুর খারাপ লেগেছে জ্যাকের সাথে সেদিন রাতে রাগের মাথায় কতো রুড বিহেভ করেছে ৷গভীরভাবে অনুতপ্ত সে। এই ২দিন জ্যাককে অনেকবার কল করেছে। সরি বলার জন্য। জ্যাক ১টা কল ও রিসিভ করে নি। পরে জ্যাক মোবাইল ই বন্ধ করে রেখেছে৷নিজের অজান্তেই জ্যাককে অনেক মিস করেছে।আগেরবার যখন অসুস্থ হয়েছিল জ্যাক তাকে দেখতে এসেছিল। কত কেয়ার করেছিল। আর এবার কথা পর্যন্ত বলে নি।

আজকে শ্রুতির শরীরটা একটু ভালো। তাই ভার্সিটিতে যাচ্ছে। সকালের ব্রেকফাস্ট করেই লুসির সাথেই ভার্সিটিতে রওয়ানা দিল। তাড়াতাড়ি যাচ্ছে আজকে। জ্যাকের সাথে কথা বলতে হবে তার। নাহলে নিজের মনের উপর থেকে ভার টা কমবে না।

জ্যাক ও তার ফ্রেন্ড প্রতিদিনের নেয় আগের জায়গায়ই বসে ছিল। শ্রুতি আর লুসি সেই দিকে গেলো।হঠাৎ জ্যাক চোখ তুলে তাদের দিকে তাকালো। ফলে শ্রুতির সাথে তার চোখাচোখি হলো।শ্রুতি মুচকি হাসি দিয়ে হাত উঠিয়ে হাই বলল।কিন্তু জ্যাক উত্তর না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। শ্রুতির মুখটা মলিন হয়ে গেলো৷ সে লুসির দিকে তাকালো। লুসি একদৃষ্টিতে মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে কী যেন করছে!ততক্ষণাত্ লুসি ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

–শ্রুতি আমার একটু কাজ আছে।আরিচের সাথে শপিং করতে যাবো। তুমি নিজের ক্লাসে ঠিক সময়ে যেও।

বলেই লুসি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে চলে গেল।

এখন শ্রুতি পরে গেলো বিপাকে। জ্যাকদের ওখানে যেতে কেমন যেনো অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। অনেকদিন ওদের সাথে কথা হয় না। শ্রুতি কী করবে বুঝতে পারছিল না কিন্তু ততক্ষণাত্ কারো ডাক শুনতে পেল। হাতের ইশারায় এলিশা তাকে ডাকছে। শ্রুতি ওদের অনেক কাছাকাছি ছিল। ডাক শুনে এদিকে ওদিক তাকাতে তাকাতে ওদের কাছে গেলো।

–তুমি নাকি অসুস্থ ছিলা শ্রুতি, এখন ঠিক আছো?

শ্রুতি মাথা নাড়ালো।জ্যাকের দিকে একপলক তাকিয়ে দেখলো সে একদৃষ্টিতে গাছের দিকে তাকিয়ে আছে।

–অনেকদিন হলো আমাদের সাথে তো কথা বলো না৷ এখানে বসো আড্ডা দি।

বলেই শ্রুতির হাত টেনে পাশে বসালো। শ্রুতি দ্বিমত করলো না। কিন্তু শ্রুতি বসার সাথে সাথে জ্যাক কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেল।

শ্রুতি জ্যাককে চলে যেতে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল৷ জ্যাক যে তার দিকে তাকাচ্ছেও না। শ্রুতি জ্যাকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আনমনেই বলল,

–আমার কারণেই জ্যাক চলে গেল।

— তোমার কারণে যাবে কেন শ্রুতি? ওর মনটা ভালো না এই ২দিন ধরে। আমাদের সাথেও ঠিক ভাবে কথা বলে না। চুপচাপ এক জায়গায় গিয়ে বসে থাকে।

এলিশার কথায় শ্রুতির ঘোর কাটল৷ নিজেকে একটা গালি দিল৷ একটু আগে কী বলল সে৷ কিন্তু এলিশার কথা শুনে শ্রুতির সন্দেহ হলো৷ জ্যাক কী সব বলেছে ওদের সেদিন রাতে যে তাদের মধ্যে যে কথার কাটাকাটি হয়েছে। শ্রুতি একটা ঢোক গিলে বলল,

–জ্যাকের মন ভালো না কেন? কী হয়েছে?

এলিশা কতগুলো পাতা হাতে নিয়ে ছিড়তে ছিড়তে শ্রুতিকে বলল,

–তুমি জানো না কী হয়েছে? লুসি তোমাকে কিছু বলেনি?

শ্রুতি না জানার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো।

লিও পাশ থেকে বলল,

–ও জানবে কীভাবে? ওহহ তো সেদিন বার্থডেপার্টিতে যায়নি।

লিও একটু থেমে আবার বললো,

–শোনো জ্যাকের যে জেসিকার সাথে এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে তা আমরা কেউ জানতাম না।জ্যাকের ও নাকি তা মনে নেই। এ বিষয় জ্যাক জানতে পেরে বার্থডে পার্টিতে নিজের মা, বাবা এর সাথে মিস বিহেভ করে। আর নিজের মা, বাবার প্রতিও রেগে আছে এই কারণে এই এনগেজমেন্ট এর কথা তারা তাকে বলল না কেন!এই কারণে ওর মন খারাপ। বাসায় ও ঠিক মতো যাচ্ছে না। শ্রুতি প্লিজ তুমি কিছু করো।

এলিশা পাশে থেকে বলল,

–আমি জ্যাকের এনগেজমেন্ট এর জানতাম৷ শ্রুতিকেও তো বলেছিলাম।

লিও বলল,

–তুমিও ঠিক মতো জানতে না। জানলে আমাদের আগে বললা না কেন?

–আমি অতোটা ভালোভাবে জানতাম না । অনেক আগে বাবা, মা একদিন এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল আমি তখন ফাঁক থেকে শুনেছিলাম।

জ্যাক যে বাসায় জামেলা করেছে তা শ্রুতি লুসির কাছ থেকে কালকে শুনেছে। কিন্তু ওদের কথা শুনে মনে হলো, শ্রুতির সাথে রাতে যা হয়েছে তা জ্যাক ওদের কিছু বলেনি নি। এখন সে ভাবছে কী করে জ্যাকের সাথে কথা বলবে?

কয়েকটা ক্লাস করে শ্রুতি নিজের সাহস সঞ্চয় করে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে জ্যাকদের হলের দিকে গেল। উদ্দেশ্য জ্যাককে সরি বলা।
শ্রুতি হলের দ্বিতীয় তলায় উঠলো৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু স্টুডেন্ট বাহিরে হাটাহাটি করছে। ক্লাসে চিত্কার চেচামেচি। হয়তো ক্লাসে শিক্ষক নেই৷ শ্রুতি এই সুযোগটাই কাজে লাগানোর কথা ভাবলো।

তবে শ্রুতিকে জ্যাকের ক্লাসরুমে ডুকতে হলো না। জ্যাক একা করিডর এর শেষ মাথায় দাড়িয়ে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি জ্যাককে দেখে হাসলো। জ্যাকের কাছে গিয়ে জ্যাকের কাধে হাত রাখতে নিলেই কেউ একজন শ্রুতির আর হাত টেনে বলল,

–হাই শুতি কেমন আছো?তোমাকে ২দিন ধরে দেখছি না? কোথায় ছিলে তুমি?

শ্রুতি ঘাড়ঘুড়িয়ে তাকালো। ক্লেভ তার হাত ধরে আছে। শ্রুতি জ্যাকের দিকে তাকালো। জ্যাক দুজনার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে৷ শ্রুতি দ্রুত নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

–এমনি আসিনি কিছু কাজ ছিল।

ক্লেভ হালকা হেসে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে বলল,

–শ্রুতি সেদিন তো একসাথে কফি খেয়েছিলাম চলো আজকে লং ড্রাইভে যাই।

শ্রুতি ক্লেভ এর কথা শুনে অবাক। এই ছেলেটাকে তার সহ্য হয়না । আবার কয়েকদিন ধরে তাকে বিরক্ত করছে।কয়েকদিন আগে জোর করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেছে আর আজকে বলছে লং ড্রাইভে যাওয়ার কথা,হাত ধরেছে তার! কত বড় সাহস। ফালতু ছেলে,মনে মনে শ্রুতি কথাটা বলল।
শ্রুতি কিছু বলতে নিবে তার আগেই জ্যাক তাদের পাশ কাটিয়ে হন হন করে চলে গেল।
শ্রুতির এবার ক্লেভ এর উপর রাগ উঠলো। যার কারণে এই খানে আসলো সেই চলে গেলো। শ্রুতি দাঁতে দাঁত চেপে ক্লেভ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

–আমার কাজ আছে আজকে।যেতে পারবো না।

বলে সেও দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো। আর কথা বলা হলো না তার জ্যাকের সাথে।

________

জেসিকা তার বাবার পাশে বসে কাঁদছে।মাঝে মাঝে পাশে থাকা সার্ভেন্ট এর হাত থেকে টিস্যু নিয়ে নাক মুছছে। মিস্টার জর্জ নিজের মেয়ের এই ছিদকাদুনি স্বভাবে তিনি অপ্রসন্ন। বারবার বলছে জ্যাককে তার কাছে এনে দিবে তবুও শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। মিস্টার জর্জ বিরক্ত স্বরে বললেন,

–এতো কাঁদছো কেন? বললাম তো জ্যাকের সাথেই তোমার বিয়ে হবে।

জেসিকা নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,

–জ্যাক আমি পাই বা না পাই ওই মেয়েকে আমি এই দুনিয়ায় রাখবো না।

মিস্টার জর্জ অবাক হয়ে বললেন,

–কোন মেয়ের কথা বলছো তুমি?
জেসিকার বাকা হেসে বললো,

–যে মেয়েটার জন্য জ্যাক আমাকে, আমার মাকে অপমান করেছে , আমাকে বিয়ে করবে না বলেছে, আমাকে থাপ্পড় মেরেছে। সেই মেয়েকে।

মিস্টার জর্জ মেয়ের কথা শুনে হাসলেন।

–এই কারণে তুমি কাঁদছো। আমার মেয়ের চোখের পানি তো এতো তুচ্ছ না। যে মেয়ের কথা বলছো তার পুরো ডিটেইলস আমাকে পাঠিয়ে দিও।আমি ব্যবস্থা করছি৷
জেসিকা নিজের বাবার কথা শুনে হাসলো। জড়িয়ে ধরে বললো,

–Thank you Daddy.

মনে মনে জেসিকা বললো,

–শুতি আর কয়েকটা দিন ইনজয় করো তারপর তুমি ফিনিস।

_______

শ্রুতি নিজের টেবিলে বসে পড়তেছে আর কিছুক্ষণ পর পর জ্যাককে কল করছে। জ্যাকের ফোনটা খোলা কিন্তু কল ধরছে না। রাত তখন ১২ টা ছুঁইছুঁই। শ্রুতি এবার হাল ছেড়ে কল দেয়া বন্ধ করল।
কিছু মুহূর্ত পেরিয়ে গেল,
হঠাৎ শ্রুতির ফোনটা বেজে উঠলো। শ্রুতি চমকে উঠল। সেই সাথে খুশি হলো এই ভেবে যে জ্যাক হয়তো কল করেছে। শ্রুতি হাসিমুখে ফোনটা হাতে নিল। কিন্তু স্কিনে তাকিয়ে অবাক। এতো রাতে,, কেন কল করেছে?

কে হতে পারে?
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩৫

শ্রুতি অবাক হয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছে,

–এতো রাতে লিও কেন কল দিচ্ছে? ও তো কখনো কল দেয়া না? আর নাম্বার বা পেলো কোথায়?
এভাবে অজস্র কথা ভাবতে ভাবতে কলটি কখন কেটে গেলো শ্রুতি বুঝতেই পারলো না। সে আজব আজব সব ভাবনায় বিভোর হয়ে ছিল। আবার কল আসতেই শ্রুতির টনক নরল।

–আগে কল রিসিভ করি। তারপর না হয় দেখা যাবে। কোনো বিপদ ও তো হতে পারে।

শ্রুতি কল টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে লিও হন্তদন্ত হয়ে বলল,

–শ্রুতি তোমাকে এতক্ষণ ধরে কল করছি বারবার শুধু বিজি দেখাচ্ছে কার সাথে কথা বলছিলা? আর লুসিকে কল করেছি ওর ফোন ও বন্ধ।

শ্রুতি ফোনের ওপাশ থেকে গানের শব্দ শুনতে পেলো।মনে মনে ভাবলো,
–লিও এখন কোথায়? আর গানের শব্দই বা আসছে কোথা থেকে?

ওপাশ থেকে লিও শ্রুতির কোনো সারাশব্দ না পেয়ে বলল,

–শ্রুতি, তুমি শুনতে পাচ্ছো।

–হ্যাঁ, আমি শুনছি৷ তুমি কোথায়? আর এতো রাতে আমাকে কল করেছো কেন?

–শ্রুতি তুমি বোর্ডওয়ে নাইট ক্লাবে আসো।আরিচ তেমার বাসার সামনে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ।

শ্রুতি নাইটক্লাব এর নাম শুনে চমকে উঠল। লিও এমন কথা বলবে সে ভাবতে পারে নি৷ এখন তার মনে হচ্ছে কল রিসিভ করাই ভুল হয়েছে। এমনি এক টেনশন তার মধ্যে আর একটা। সে রাগান্বিত স্বরে বলল,

–এতো রাতে আমি নাইট ক্লাবে যাবো? অসম্ভব। তুমি আমাকে কী মেয়ে মনে করো লিও?

ওপাশ থেকে লিও করুণ কন্ঠে বলল,

–প্লিজ শ্রুতি আসো। জ্যাকের অবস্হা খুব খারাপ। অনেক ক্ষণ ধরে ড্রিংক করছে।আমরা আটকানোর চেষ্টা করলে মারামারি করছে৷ এতো ড্রিংকস করলে ও অসুস্হ হয়ে পরবে। আমি, আরিচ কেউ থামাতে পারছি না। বারবার তোমার কথা বলছে।তোমাকে এনে দিতে বলছে৷ আমি জানি তুমি থামাতে পারবে। প্লিজ আসো।

বলেই লিও খট করে কলটা কেটে দিলো। শ্রুতি ফোনটা কানে ধরেই থম মেরে দাড়িয়ে রইল৷ লিওর কথাগুলো তার কানে বাজছে। বুকের ভিতর চিন চিন করে ব্যথা করছে। জ্যাক অত্যধিক ড্রিংকস করছে। শ্রুতি বুঝতে পারছে না কী করবে? যাবে কী যাবে না? যদি জ্যাকের কিছু হয়?
শ্রুতি মনে মনে আওড়াতে থাকলো,
না, না জ্যাকের কিছুই হবে না।

শ্রুতি দ্রুত নিজের রুম থেকে ফোনটা নিয়ে বের হলো। সিড়ির কাছে আসতেই ভাবলো,

–লুসিকে নিয়ে যাই। ভালো হবে৷ এতো রাতে একটা মেয়ে এভাবে বাহিরে যাওয়া ঠিক হবে না।

শ্রুতি উল্টো ঘুরে লুসির রুমের দিকে গেলো।
দরজায় হালকা করে কয়েকবার টোকা দিলো সাথে আস্তে করে লুসি লুসি বলে ডাকলো। কিন্তু লুসির কোনো সারাশব্দ নেই।

–এই মেয়ে মরার মতো ঘুমায়। এতো সহজে কী জাগবে? কুম্ভকর্ণ।

শ্রুতি আবার টোকা দিতে নিবে এরমধ্যেই ফোনে কল আসলো শ্রুতি রিসিভ করে বলল,

–আমি আসছি। আরিচ দাড়াও।

শ্রুতি আর লুসিকে আর না ডেকে তাড়াতাড়ি বাড়ির বাহিরে এসে আরিচের আনা গাড়িতে চড়লো।

________

শ্রুতি আরিচের সাথে ক্লাবের ভিতরে ঢুকল।শ্রুতি আরিচের পিছন পিছন যাচ্ছে। মানুষে পরিপূর্ণ পুরো ক্লাব৷ এতো জোরে কান বাজছে আশেপাশের আর কোনো শব্দই শোনা যাচ্ছে না। শ্রুতি ভিতরে ঢুকেই নাক ছিটকালো।মেয়েরা কী ছোট ছোট ড্রেস পড়েছে।আর কত ছেলেদের সাথে গানের তালে তালে ঘনিষ্ঠভাবে ডান্স করছে। শ্রুতির নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে এরকম একটা জায়গায় এসে৷জায়গাটা জগন্য৷ মনে মনে ভাবছে,

–ছিহ, জ্যাক এইরকম জায়গায় আসে।

আগের বার লুসির সাথে যখন ক্লাবে গেছিলো ওদের ফ্রেন্ডদের পার্টি উপলক্ষে সেখানে এতো খারাপ পরিবেশ ছিল না।

আরও কিছুটা সামনে এগোতেই দৃশ্যমান হলো জ্যাক।এক কর্ণারে বসে ড্রিংকস করছে। টেবিলের উপরে হুইস্কি, ওয়াইনসহ আরও অনেক ধরনের অ্যালকোহল। কিন্তু সব সাবার করা হয়ে গেছে। জ্যাক মাতাল অবস্হায় লিওর সাথে একটা হুইস্কির বোতল নিয়ে টানাটানি করছে। লিও দিতে চাচ্ছে না তবুও।
জ্যাক মাতাল কন্ঠে ঠোঁট উলঠিয়ে বলছে,

–শ্রুতি আমাকে একটুও ভালোবাসে না। জানো লিও ও কী করেছে? আমাকে না বলে ওই, ওই ক্লেভ এর সাথে কফি খেয়েছে। আর আমাকে বলে নি। আমিও খাবো এখন ওকে বলবো না৷ দাও বলছি আমাকে দেও।

বলে জ্যাকের সাথে বোতলটা নিয়ে টানাটানি করছে। লিও দিতে চাচ্ছে না তবুও।

এসব দেখে শ্রুতি চোখে পানি টলমল করেছে।চোখের নেত্রকোন থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। ওর কারণে আজকে জ্যাকের এই অবস্হা।

টানাটানির এক পর্যায়ে জ্যাক হুস্কির বোতলটা নিতে সক্ষম হলো। লিও অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
জ্যাক বোতলের মুখটা খুলে মুখে দিতে যাবে শ্রুতি গিয়ে দ্রুত হাত থেকে বোতলটা নিয়ে নিল।

জ্যাক ত্রুর দৃষ্টিতে তাকালো শ্রুতির দিকে। অতঃপর রাগান্বিত কন্ঠে বলল,

–এই মেয়ে আমার হুইস্কির বোতল দেও৷ আমার জিনিস ধরার সাহস কী করে হয় তোমার? তুমি জানো আমি কে?

শ্রুতি জ্যাকের কথা হা হয়ে গেলো। জ্যাক তাকে চিনতে পারছে না।
পাশ থেকে লিও বলল,

–জ্যাক ও শ্রুতি।

জ্যাক শ্রুতির দিকে না তাকিয়ে টেবিলের উপরের রাখা গ্লাসগুলোর দিকে তাকিয়ে ঠাট্টা স্বরে বললো,

–আমার শ্রুতিকে আমি চিনবো না? মজা করছো লিও। আর শ্রুতি আমার মতো না যে নাইটক্লাবে ও আসবে। ওকে আমার হুইস্কি দিতে বলো। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।

শ্রুতি হাতের বোতলটা টেবিলে রেখে জ্যাকের দুগালে হাত রেখে বললো,

–জ্যাক আমার দিকে তাকাও। দেখো একবার৷ আমিই তোমার শ্রুতি।

জ্যাক নিভু নিভু চোখে শ্রুতির দিকে তাকালো।

শ্রুতি জ্যাকের গাল থেকে হাত সরিয়ে জ্যাককে ধীরে ধীরে দাড় করালো৷শ্রুতি জ্যাকের এক পাশ ধরলো লিও জ্যাকের আর একপাশ।
অতঃপর আস্তে আস্তে জ্যাককে ক্লাব থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসলো।
গাড়ি বসতেই জ্যাক শ্রুতিকে জাপটে ধরে বলল,

–শ্রুতি আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে কেঁদেই দিলো৷ কতটা ভালোবাসে তাকে?আর সে ছেলটাকে কতদিন ধরে ইগনোর করছে, খারাপ ব্যবহার করছে। শ্রুতি নিজের প্রতি ধিক্কার করলো। এতোটা নিষ্ঠুর সে কীভাবে হলো কারো কথায়! কাউকে ভালোবাসাটা কী খারাপ! আজকে জ্যাকের এই অবস্থায় তার জন্য। তবুও জ্যাক তাকে না ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছে।
শ্রুতি আর দ্বিরুক্তি না করে বলল,

–না কখনো ছেড়ে যাবো না।

কথাটা জ্যাক শুনতে পেলো কিনা তা শ্রুতি জানে না তবুও জ্যাক শ্রুতিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
জ্যাকের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস শ্রুতির ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে।জ্যাকের শ্বাস -প্রশ্বাসের ধ্বনি শ্রুতি কানে এসে বার বার ধাক্কা মারছে। শ্রুতি মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে। সে হালকা ভাবে জ্যাককে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু জ্যাক ছাড়ছেই না। শ্রুতি আর সরানোর চেষ্টা না করে এক হাত দিয়ে আগলে নিল।

জ্যাক আহ্লাদী স্বরে বলল,

–শ্রুতি তুমি আমাকে ভালোবাসো না?

শ্রুতি জ্যাকের প্রশ্নটা শুনে হৃদস্পনন্দন থেমে গেল।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
জ্যাক পুনরায় একইভাবে বললো,

–কী হলো বলো, আমাকে ভালোবাসো না?

শ্রুতি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

–হ্যাঁ,খুব ভালোবাসি।

উত্তরটা হয়তো জ্যাক শুনেছে।

–ভালোবাসো। তাহলে ক্লেভ এর কাছে যাবে না। ও ভালো ছেলে না তোমার ক্ষতি করবে।

জ্যাকের কথা গুলো খুব আস্তে বলেছিল। তবুও শ্রুতি জ্যাকের শেষের কথা শুনতে পেলো।কানের কাছে একটা শব্দ বাজতে লাগলো,ক্লেভ ভালো না তোমার ক্ষতি করবে।
শ্রুতির কথাটা হেলায় না ফেলে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে লাগলো।
–ক্লেভ খারাপ ছেলে। আচ্ছা জ্যাক ক্লেভকে দেখতে পারে না কেন? এলিশা তো বলেছিল ওদের ভিতর ভালো সম্পর্ক ছিলো৷ হঠাৎ কি হলো তাহলে যে জ্যাক ক্লেভকে সহ্যই করতে পারে না? আর জ্যাক আমাকে দূরে থাকতে বলছে এই খারাপ ছেলে বলেই?

শ্রুতি মাথায় প্রশ্নের জট জমা হলো। এর উত্তর জ্যাকই দিতে পারবে। শ্রুতি জ্যাককে প্রশ্ন করল,

–জ্যাক ক্লেভ খারাপ ছেলে কেন?

শ্রুতি কোনো উত্তর পেলো না। উত্তরের বদলে শুনতে পেলো জ্যাকের নিঃশ্বাসের ভারী শব্দ।
শ্রুতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

–ঘুমিয়ে গেছে।

জ্যাককে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে ভালোভাবে সিটে বসিয়ে দিলো। আর মাথাটা নিজের কাঁধে রাখল। রাতের শহর দেখতে দেখতে জ্যাকের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলো।

,,জেসিকা শ্রুতির ক্ষতি করার জন্য ওত পেতে আছে? ক্লেভ ও তাই চাই? জ্যাক আর ক্লেভ এর ভিতর কী হয়েছিল যে জ্যাক ক্লেভকে সহ্য করতে পারে না,তাদের জীবনে কী কোনো অতীত ছিল যা শ্রুতি জানে না?

,,( চলবে)
(,,, চলবে)

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here