কাছে দূরে পর্ব ২৪

#কাছে_দূরে ♥️
#moumita_meher
#পর্ব___২৪

খাওয়া শেষে সাবাব বিল মেটাতে গেলে হীর আগেভাগে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। তার শরীরে আর কুলচ্ছে না। উদ্দেশ্যে এই গাড়িতেই ঘুমিয়ে রাত পার করা। ঘুমে নিমজ্জিত হয়ে থাকা তার মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে বাসায় ফিরতে ফিরতে তাদের ভোর হয়ে যাবে। সুতরাং গাড়িতে আরামসে রাতটা পার করা যাবে।

সাবাব বিল মেটালো। বাকি টাকা ফেরত না নিয়ে এক বোতল পানি কিনে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে আভিক এবং মাহদী এসে তার পাশে দাঁড়ালো। সাবাব পানির বোতল টা খুলে এক ঢোক পানি খেলো। দু’জনকে অপেক্ষা করতে ইশারা করে পানিটা গাড়ির জানালা দিয়ে ভেতরে রেখে পকেট থেকে ফোন বের করল। সময়ে ব্যস্ত নজর বুলিয়ে আভিক এবং মাহদীর উদ্দেশ্যে বলল,

—-‘ আগামীকাল একবার হীরের ভার্সিটিতে যাবে তোমরা। গিয়ে হীরের গাইড টিচারের কাছে ওর গত দু’বছরের রেকর্ড চাইবে।’

আভিক ভাবুক কন্ঠে বলল,

—-‘ মনোহর স্যার?’

—-‘ হ্যাঁ। উনাকেই তো ঠিক করা হয়েছিলো তাই না?’

মাহদী হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,

—-‘ জ্বী স্যার। উনি আমার চাচা। আমিই উনাকে ঠিক করে দিয়েছিলাম।’

—-‘ হুম। তাহলে তোমরা দু’জন নয়, মাহদী তুমি একাই যাবে ভার্সিটি। এবং তার থেকে হীরের দু’বছরের ভালো-মন্দ যত রেকর্ডস আছে সব কিছু জেনে আসবে এন্ড মোস্ট ইম্পরট্যান্ট থিংস ইজ উনাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘ ভার্সিটি যাওয়া-আসা কালীন সময়ে হীরের এমন কারো সাথে সম্পর্ক হয়েছে কিনা যেটা খুব ক্লোজ? বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে,এজ লাইক বয়ফ্রেন্ড! ওকে?’

সাবাবের কথায় অবাক চোখে তাকালো আভিক এবং মাহদী। আভিক উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,

—-‘ হীরের কি কারো সাথে রিলেশন হয়েছিলো স্যার?’

সাবাব শান্ত কন্ঠে বলল,

—-‘ না। কিন্তু এমন একজন আছে যে হীরকে পছন্দ করে। ইভেন ভালোওবাসে। কিন্তু ভয়ে সে কখনও হীরকে এই কথা বলতে পারেনি। মেইবি ঐ ভার্সিটিরই স্টুডেন্ট। এখন দেখা যাক খোঁজ নিলে কার মুখ সামনে আসে।’

—-‘ হীর জানেনা?’

মাহদীর প্রশ্ন। সাবাব না সূচক মাথা নেড়ে বলল,

—-‘ উঁহু। হীর তাকে খুব ভালো ফ্রেন্ড মনে করে। আর সেই কারনেই ছেলেটি এখনও ওকে ভালোবাসার কথা বলেনি। ছেলেটিকে সবার সামনে খুব কম দেখা যায়। আদ্র,এশা এবং মিলি ওরাও খুব কম দেখেছে তাকে। নামটা খুব সম্ভবত সিয়াম। মিলি এই ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছে। বাকিরাও জানেনা। ব্যাপার টা সন্দেহজনক। বিপদ বিপদ গন্ধ পাচ্ছি। ওর ব্যাপারে সব ডিটেইলস চাই আমার। কিন্তু তার আগে হীরের সাথে ওর চলাফেরা কেমন ছিলো সেটা জানতেই হীরের দু’বছরের রেকর্ড দরকার। আশাকরি, কোনো কিছুর ক্লু ওখান থেকেই পাওয়া যাবে।’

মাহদী উপর-নীচ করে মাথা নেড়ে সাবাবকে আস্বস্ত করে বলল,

—-‘ ওকে স্যার।’

—-‘ কাল সকাল দশটার মধ্যে আমার রিপোর্ট চাই।’

—-‘ সিওর স্যার।’

সাবাব স্মিত হেসে গাড়ির দরজা খুলতে নিলে আয়নার মধ্যে থেকে খেয়াল করল আভিক এবং মাহদী কিছু একটা নিয়ে ফিসফিস করছে। সাবাবের কপাল কুঁচকে এলো। চিন্তিত মুখ করে আবার ফিরে তাকালো দু’জনের দিকে। দু’জনের মুখেই যথেষ্ট চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। সাবাব তীক্ষ্ণ নজরে দু’জনকে পর্যবেক্ষন করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করল,

—-‘ এভরিথিং ইজ ফাইন?’

মাহদী কাঁচুমাচু করে আভিকের দিকে তাকালো! আভিকও মাহদীর ন্যায় মিনমিন করছে। সাবাব আশেপাশে নজর বুলিয়ে পুনরায় দু’জনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সতর্ক গলায় বলল,

—-‘ কিছু হয়েছে?’

আভিক ঢোক গিলল। আমতাআমতা করে বলল,

—-‘ স,,স্যার.. এক মেয়ে এ,,এসেছিলো!’

সাবাব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। শঙ্কিত মনে বলল,

—-‘ সন্দেহজনক? আর তুমি ঘামছো কেন? মেয়েটা কি কারোর গ্যাংয়ের সদস্য? ধরতে পেরেছো?’

মাহদী গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

—-‘ স্যার, এতোদিন জানতাম আপনার সামনে ভীতু এই একমাত্র আমিই! কিন্তু আজ জানলাম আমার থেকেও ভীতু এই ইডিয়ট।’

সাবাব চিন্তিত কন্ঠে বলল,

—-‘ কি হয়েছে বলোতো?’

—-‘ স্যার, শপিংমলে এক মেয়ের সাথে আভিকের পরিচয় হয়। মনে করেন এক্সিডেন্টলি হয়ে যায়। এর জন্য আগে থেকে দুজনের কেউই প্রস্তুত ছিলো না। কথা বলে আমরা যখন ফিরে আসছিলাম তখন খেয়াল করলাম মেয়েটা আভিককে দেখে বারবার মুচকি হাসছে। আর তখন থেকেই শুরু হয় তার ফলো করা। মেয়েটা আভিককে সর্বক্ষণ শুধু চোখে চোখে রেখেছে। আর এই কিছুক্ষন আগে এই যে (একটা কাগজ সামনে তুলে) এই নাম্বারটা দিয়ে গেলো। যেতে যেতে বলেছে, ‘বাসায় ফিরে যেন কল করা হয়!’

মাহদীর কথা শুনে সাবাব কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো আভিকের দিকে। আভিকের গলা শুঁকিয়ে কাঠে পরিনত হওয়ার জন্য সাবাবের এটুকু চাহনিই যথেষ্ট ছিলো। আভিক তটস্থ চোখে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

—-‘ গড প্রমিজ স্যার! আ,,আমি ঐ মেয়েকে কখনও ভুল করেও কল দিবোনা। আমি এই ন,,নাম্বার! নাম্বারও নিবোনা।’

সাবাব দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাহদীর দিকে তাকালো। কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করল,

—-‘ মেয়েটা দেখতে কেমন? আভিকের সঙ্গে মানাবে তো?’

মাহদী দাঁত কেলিয়ে হেসে জবাব দিলো,

—-‘ খুব মানাবে স্যার।’

—-‘ তাহলে খুব জলদিই ওর বিয়ের শানাই বাজাতে হয়, কি বলো?’

মাহদী হাসতে হাসতে বলল,

—-‘ একদম স্যার।’

আভিক বোবা চোখে তাকিয়ে আছে সাবাবের মুখের দিকে। সাবাবের কঠিন স্বরের পর সে যেন আর কিছু শুনতেই পায়নি। অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ আমি ওর সাথে কথা বলবো না স্যার।’

সাবাব ফিক করে হেসে দিয়ে মাহদীর উদ্দেশ্যে বলল,

—-‘ ও এখনও বুঝতে পারেনি। বাসায় ফিরতে ফিরতে ওকে সবটা ডিটেইলসে বুঝিয়ে দিও তো।’

মাহদী হেসে পড়ল সাবাবের ন্যায়। সাবাব গাড়ির দিকে পা বাড়ালো। মাহদী আভিকের কাঁধে হাত উঠিয়ে বলল,

—-‘ চল বাসায় যেতে যেতে বুঝিয়ে বলছি।’

________

গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসতেই সাবাবের চোখ আঁটকে গেলো ঘুমন্ত হীরের প্রতি। কেমন শান্ত লাগছে দেখতে। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোতে হীরর মুখের এক পাশ স্পষ্ট তো অন্যপাশ অস্পষ্ট। স্পষ্ট পাশটা আবার অর্ধেক ঢেকে এসেছে তার সিল্কি চুলগুলো দিয়ে। চোখ,নাক,গাল আর আকর্ষণীয় ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে পড়ে আছে চুলগুলো। ঘুমন্ত হীরকে এক অপরূপ মায়াবতী বলে আবিষ্কার করল সাবাব। বুকের ভেতর শীতল হাওয়া বয়ে গেলো তার। এক অনন্য ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো তার শরীর,মন। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে মিষ্টি হাসির ঢেউ খেলে যেতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো সাবাব। অল্প ভলিউমে সফ্ট মিউজিক ছেড়ে পাশে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে পরিচিত পথ ধরে বাড়ির ঠিকানায় ফিরল। সফ্ট মিউজিকের সঙ্গে সঙ্গে মনের কথা গুলোও যেন একই ভাবে প্রতিধ্বনি তুলছিলো, ‘ভালোলাগা, ভালোলাগা, এ এক অন্যরকম ভালোলাগা।’

বাড়ির গেটে গাড়ি পৌঁছাতেই গেট খুলে দিলো দারোয়ান। গাড়ি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সাবাব চারপাশটায় একবার ভালো করে নজর বুলালো। গার্ডরা সব নিজ নিজ জায়গায় অটল আছে। সাবাব গাড়ি দাঁড় করালো। দারোয়ান কে দিয়ে শপিং ব্যাগ গুলো বাড়ির ভেতর পাঠিয়ে দিলো। গাড়ির ডিঁকি বন্ধ করে সামনে এসে হীরকে ডাকতে নিলেই মনে হলো, ‘থাকনা, ঘুমটা ভাঙানোর কি দরকার?’

সাবাবের একদমই ইচ্ছে হলো না হীরের ঘুমটা ভাঙাতে। হীরের ঘুম ভাঙলে যে সে ঠিক এভাবেই শান্ত থাকবেনা। অশান্ত হয়ে উঠবে আর তার থেকে দূরত্ব বাড়ানোর তালে থাকবে। সাবাব হীরকে পাঁজা কোলে তোলার জন্য তার কাছে এগিয়ে আসতেই বুকের ভেতরের ঢিপঢিপ আওয়াজটা আচমকা বেড়ে গেলো। তারা যেন নিজেদের ছন্দের তালে তালে বাজছে। হীরের শরীরের সুমিষ্ট পারফিউমের গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল সাবাবের। মনে হলো যেন এই গন্ধে তার বহুবছর ধরে নেশা করা হয়না। হীরকে পাঁজা কোলে তুলে নিতেই হীরের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। সে আচমকাই চোখ মেলে তাকালো। সাবাব তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকানোর মাঝেই সে মাতাল হেসে সাবাবের গলা জড়িয়ে আবারও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। সাবাব যেন দম ছেড়ে বাঁচল। বুকের ভেতরের ঢিপঢিপ আওয়াজ গুলোর মুহুর্তেই ছন্দপতন ঘটে আবার মুহুর্তেই ঠিক হয়ে গেলো। তারা আবারও ছন্দের তালে তালে নাচতে আরম্ভ করল। সাবাব ধীরে ধীরে পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। কেউ জেগে নেই। বাসায় ফিরতেই সবার শরীর ভেঙে আসল ঘুমে। তাই যে যেভাবে পারল সেভাবেই কোনো মতে খেয়ে ঘুমাতো পালাল। বাড়িটা আপাতত নির্জন লাগছে। হীর এই মুহুর্তে জেগে থাকলে ভয়ে নিশ্চিত তার গা ছমছম করতো। কিন্তু সাবাবের ভয় হলো না। বা ভয়ে গা ছমছমও করলো না। সে হীরকে কোলে নিয়ে হীরের রুমে চলে গেলো। আরেকটু হলে হাত ছিঁড়ে পড়ত তার। ঘুমন্ত মানুষকে কোলে তুলে হাঁটা মুখের কথা নয়। একটু হলেও কষ্ট তার হবেই হবে। সাবাব হীরকে বিছানায় শুইয়ে দিতে গিয়ে নিজেও কিছুক্ষণ মুখ গুঁজে রইল হীরের কাঁধের পাশে। যখন মুখ তুলল তখন হীরের ঘাড়ে চোখ গেলো তার। বাঁধাহীন দৃষ্টি মস্তিষ্কের বারনকে অগ্রাহ্য করে আরও কিছুক্ষন চেয়ে রইলো হীরের গলার পাশটাতে। অতঃপর মস্তিষ্কের তুমুল বাঁধাতে তার হুঁশ ফিরতেই উঠতে নিলো সে। কিন্তু পড়ল আরেক বাঁকে। হীরের গলার লকেটটা তার জ্যাকেটের চেইনকে আঁকড়ে ধরল। সাবাব উঠতে চেয়েও অনিচ্ছাকৃত ভাবে হীরের মুখোমুখি এগিয়ে এলো কিছুটা। সাবাব নিঃশ্বাস আঁটকে ধরলো। হীরের খুব কাছে চলে আসাতে তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল। কিন্তু নিঃশ্বাস ফেললো না। ভেতরে চেপে রেখে কোনো মতে লকেট আর চেইনকে আলাদা করতে উঠে পরে লাগল সে। এভাবে হবেনা, মনে হচ্ছে জ্যাকেটটা খুলতে হবে। কিন্তু জ্যাকেট টা খুলতে গিয়েও তো মুশকিল হচ্ছে। খোলা সম্ভব হচ্ছে না। সাবাব ব্যার্থ হয়ে বিছানার উপর হাত ঠেকিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো। বেশিক্ষণ নিঃশ্বাস বন্ধ রাখলে মনে হয় এই বুঝি মরার সময় ঘনিয়ে আসছে। ট্রেনিং নেওয়া কালিন নিঃশ্বাস বন্ধ রাখার অবশ্য কম ট্রেনিং নেয়নি। কিন্তু আজ তো সিচুয়েশন ভিন্ন। ঐ ট্রেনিং ছিলো স্রেফ বিপদে পড়লে নিজেকে কিভাবে সেফ করা যাবে তার জন্য। কিন্তু এখানে যে বিপদই বিপদ। ভালোবাসার মানুষ টার এতোটা কাছে থাকলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাও যে অনেক কিছু।

সাবাব ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে আবারও কাজে লেগে পড়ল। কিন্তু ঘুমের ঘোরেই যে হীর এক কান্ড করে বসল। চিত হয়ে না থেকে সে পাশ ফিরে গেলো। যার দরুন সাবাবকেও তার সাথে ঘুরে যেতে হলো উল্টো পাশে। অস্থিরতায় ভেতরটা কাঁপছে সাবাবের। বেয়াদব লকেটটাও যে ছাড়ছেনা তাকে। সাবাব সিরিয়াস ভঙ্গিতে চেইন এবং লকেটকে আলাদা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আশেপাশে যা কিছু ঘটে যাক তাতে তার বিন্দু মাত্র মাথা ব্যাথা হবেনা। কিন্তু তার মাথা ব্যাথা হলো! এক সুক্ষ্ম জিনিস আকৃষ্ট করল তার নেশাক্ত চোখকে। মাদকীয় করে তুলল তার মনকে। প্রথমেই জড়তা হতে ঢোক গিলল সে। কিন্তু মনকে এবার বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা তার মস্তিষ্কেরও হলো না।

হীরের গলা বেয়ে চার আঙ্গুল নামলেই বাদামি রঙের ছোট্ট একটা তিলের সন্ধান মিলে। সাবাবের খুব পরিচিত এই তিলটি। বারো বছর পেরোতেও কিন্তু তার মন থেকে মুছেনি এই সুক্ষ্ম জিনিসটা। সাবাবের মনে বড্ড সাধ জাগল এই তিলটায় নিজের অধিকার খাটাতে। বড্ড সাধ জাগল একবার ছুঁয়ে দিতে। তার বুকের ভেতরটা ক্রমশই জোরে জোরে আওয়াজ দিতে লাগল। মন মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ ভাবে বোঝাতে লাগল, ‘হীরের প্রতি আমার অধিকার আছে। তাকে ছোঁয়ার অধিকার আছে। তাকে কাছে পাওয়ার অধিকার আছে। অধিকার আছে, অধিকার আছে।’

মুহুর্তের মাঝেই সাবাব অকল্পনীয় কাজটি করে ফেললো। কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে হীরের শার্টের কলার্টটা পাশে চাপিয়ে দিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো তিলটির উপর। হীর ঘুমের ঘোরেই কেঁপে উঠলো। সাবাবের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে তার ঘুম যেন হারাম হয়ে উঠলো। আচমকা ঘুম ভেঙে সাবাবকে নিজের এতোটা কাছাকাছি আবিষ্কার করতে তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠল যেন। বুকের মাঝে হাতুড়ির বাড়ি পড়তেই অতিষ্ঠ হয়ে গেলো সে। চেঁচাতে নিলেই সাবাবের শক্তি হাত খানা উঠে আসে তার মুখে। সাবাবের হাতের মাঝে হীরের নরম ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই সাবাব চমকে উঠলো। ঘোর কাটাতে গিয়ে আরও ঘোরের মাঝে আঁটকে গেলো সে। হীর আতংকে চাপা আওয়াজ করতে লাগল। সাবাব হীরের চোখে চোখ রাখল। নেশায় বুদ হয়ে আছে সাবাবের চোখ। ঠোঁটের কোনে তৃপ্তিময় হাসি। সিল্কি চুল গুলো কপাল ছেড়ে ঝুঁকে পড়েছে একজন আরেকজনকে আঁকড়ে। ভারী নিঃশ্বাস বারবার হীরের মুখে আঁচড়ে পড়তেই ভয়ার্ত চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো হীর। বার কয়েক ঢোক গিলে জোরপূর্বক নিজের মুখ থেকে সাবাবের হাতটা সরিয়ে দিলো। এতক্ষণ মুখে হাত চেপে থাকতে প্রায় অর্ধেক প্রান বেরিয়ে আসতে নিচ্ছিলো তার। বড় বড় দম ফেলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

—-‘ ত,,তুমি আমার রুমে কিক,,কি করছো?’

হীরের প্রশ্নে চেতনা ফিরল সাবাবের। আচমকা চমকে উঠলো সে। ফড়িংএর মতো ছিটকে পড়ল সে হীরের থেকে। ছিটকে পড়তেই হীরের গলার লকেট ছিঁড়ে তার জ্যাকেটের চেইনের সাথে পেঁচিয়ে গেলো। সে ফ্লোরে পড়ে যেতেই হীর ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। সাবাব মুখে হাত চেপে অসহায় চোখে হীরের দিকে তাকালো। আমতাআমতা করে উঠতে নিলে আবারও পড়ে গেলো। সাবাবের অবস্থা দেখে হীর না হেসে পারছে না। ফিক করে হেসে দিয়ে হীর বিছানা ছেড়ে নেমে এসে সাবাবের পাশে এসে দাঁড়ালো। সাবাবের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

—-‘ হাত ধরো।’

সাবাব নির্লিপ্ত চাহনি দিয়ে হীরের হাত টেনে ধরে উঠে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ আগে ঘটিয়ে ফেলা ঘটনাটি সাবাবের মনকে বারবার বিদ্ধ করছে। হীরের সামনে এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে থাকাও যেন লজ্জা। তাই কিছু না বলেই কোনো মতে চোরের মতো পালিয়ে গেলো সে। হীর তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ঢোক গিলল।

_________

সকাল ৮টা। ডাইনিং টেবিলে এক এক করে বাড়ির সবাই এসে উপস্থিত হলো। আজই শেষ দিন বাড়ির সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করার। বিয়ের আগ অব্দি আর এই সুযোগ আর হবেনা। কারন আজ থেকেই বাড়ি ভর্তি হয়ে উঠবে মেহমানদের আনাগোনায়।

আজিম সাহেব খাবার সামনে নিয়েও খবরের কাগজ ধরে বসে আছেন। শহরের আনাচকানাচে খুন,মারামারি, চুরি, ডাকাতি সবটাই যেন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশে এতো পুলিশ,সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা থাকার পরও এসবের কোনো সমাধান বের করতে পারছে না। বাইরের লোককে বলে কি হবে? তার ঘরেই তো একজন বিশিষ্ট লোক আছে। সেও বসে আছে বাকিরাও বসে আছে৷ কেউ কোনো কাজের নয়। এসব ভাবনা ভাবতেই বুক ভরে নিঃশ্বাস এলো তার। খবরের পাতাটা উল্টাতেই মনে হলো খবরের কাগজটা আর হাতের মাঝে নেই। কেউ সেটাকে একটানে নিয়ে গিয়েছে। মানুষটা আর কেউ না, স্বয়ং তার বউ! সেটাও সে খুব ভালো মতোই জানে। তাই আর টু-বাক্য উচ্চারণ না করে সামনে বেড়ে রাখা খাওবারের প্রতি মনোযোগী হলেন। তার দুই মেয়ে তার দু’পাশে বসে আছে। একবার মেয়েদের প্রতি নজর দিয়ে রুটি থেকে দু’টুকরো আলাদা করে আগে তাদের খাইয়ে অবশেষে নিজে খাওয়া শুরু করলেন।

#চলবে_ 🖤

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here