#কাছে_দূরে💐
#moumita_meher
#পর্ব___৩৩
সাবাব তার পুরো টিকমে তার বাসায় আসার আদেশ দিল। অতঃপর কফিটা নিয়ে নিজের রুমের দিকে হেঁটে গেলো। আজ এর একটা এসপার নয় উসপার করতেই হবে। সাবাব সিঁড়ি বেয়ে খুব সাবধানতার সহিত উঠতে লাগলো। পেছন থেকে তিনজোড়া চোখ তাকে দেখে চলেছে। এক জোড়া চোখ নিশ্চিন্ত চাহনিতে তাকিয়ে আছে, আরেক জোড়া চোখ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে নিয়ে তাকিয়ে আছে আর অন্য জোড়া তাকিয়ে আছে আতংকিত চাহনিতে। আজ যে তার আর বাঁচার পথ নেই তা সে খুব ভালো করেই আন্দাজ করতে পারছে। ভেতর ভেতর শিলা ছটফটিয়ে মরছে। এমন সময় মনিকাকেও আশেপাশে দেখছেনা সে। কেমন করে সাবাবকে আটকাবে বুঝতে পারছেনা। তবুও বুকে বল নিয়ে সাবাবের পেছন পেছন ছুটলো সে। সব মিলিয়ে হয়েছে মহা মুশকিল! কফিটা এমন ভাবে চাইতে হবে যেন সাবাবের সন্দেহ না হয়। যদি কোনো ভাবে সন্দেহ হয়েও থাকে তবে নির্দিধায় তার প্রাননাশ ঘটিয়ে ছাড়বে সাবাব নিজেই।
এমন সময় দ্রুত পায়ে সিঁড়ি থেকে নেমে আসতে লাগল মনিকা। সাবাবের হাতের সাথে ইচ্ছে করেই নিজের হাতে ধাক্কা দিয়ে নিচে পড়ে যাওয়ার প্রশংসনীয় নাটক করল সে। সাবাব আকস্মিক ঘটনায় ভড়কে গেলেও কফিটাকে ধরে রাখার প্রানপন চেষ্টা করলো। কিন্তু শেষ অব্দি কোনোটাই রক্ষা হলোনা। সে নিজেও পায়ে স্লিপ কেটে দুই সিঁড়ি ডিঙিয়ে নীচে পড়ে গেলো। উপর থেকে নীচে পড়ে যাওয়ায় সে আর নিজের ব্যালেন্স কন্ট্রোল করতে পারলো না। তার পেছনে থাকা শিলা সাবাবকে পড়ে যেতে দেখে সরে গেলো। সে নিজের মতোই নাটক চালিয়ে মনিকাকে ধরলো। অবশেষে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে, শিলা মনিকাকে বাঁচাতে গিয়ে সাবাবকে বাঁচাতে পারলোনা। সাবাব নিচে পড়ে ডান পায়ে আর বাঁ হাতে ভালোই ব্যাথা পেলো। ব্যাথায় বেচারা গুটিয়ে গিয়ে অন্য হাতের সাহায্যে ব্যাথা হাত আর পা চেপে ধরে কুকিয়ে উঠলো।
হঠাৎ সিঁড়িতে কারোর পড়ার শব্দ পেতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো বাড়িঘর। উপস্থিত সবার মাঝেই নিরবতা বিরাজ করলো কয়েক সেকেন্ডের জন্য। সবাই চমকে উঠে সিঁড়ির দিকে দৌড়ে যেতেই দেখল সাবাব নীচে পড়ে আছে। যা দেখেই সবার চেতনা হারিয়ে গেলো। মনিকা সাবাব বলে চেঁচিয়ে উঠে তৎক্ষনাৎ তাকে ধরল। হীর, সানিয়া, এশা,মিলি, তরী এক এক করে সবাই গিয়ে ধরলো সাবাবকে। হীরের মনটা কেঁপে উঠল বারবার। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কি হয়ে গেলো!
বাইরে চেঁচামেচি শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন নাজমা বেগম। ততক্ষণে সবাই মিলে সাবাবকে দাঁড় করালো। কিন্তু সাবাব দাঁড়াতে পারছেনা। দাঁড়াতে গিয়েও পা ভেঙে বসে পড়তে হচ্ছে। অসহ্য রকমের ব্যাথা আর রাগে তার পুরো মুখে রক্তমুখো হয়ে উঠেছে। তরী রাগে ফুঁসতে লাগল ভেতর ভেতর। মনিকা আর শিলাকে সাবাবের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইলো না এখানে ঠিক কি হয়েছে। কারোর সন্দেহ না হোক এমন ভান করেই মনিকা সাবাবকে বারবার প্রটেক্ট করার চেষ্টা করছে।
নাজমা বেগম ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বারবার সবার মুখপানে তাকাতে লাগল। ছেলের এই দশা দেখে শুঁকনো মুখে শুধু তার নাম নিয়ে একবার ডেকে উঠলেন। মায়ের উপস্থিতি সাবাবের রাগ গলে গিয়ে চোখে মুখে ভর করলো অসহায়ত্বের ছাপ। তার এমন দশায় তার থেকেও বেশি কষ্ট যেন এই মানুষ টা পাচ্ছেন।
—-‘ আরে তোমরা সবাই চাপো। ওকে ঐপাশটাতে নিয়ে গিয়ে বসাতে হবে।’
সবার মাঝেই বলে উঠলো মনিকা। সাবাব তার দিকে চোখ তুলে দেখলো। অতঃপর তরীর দিকে তাকাতেই বোধগম্য হলো তরী এবার আর চুপ থাকবে না। সে এক্ষনি কিছু বলে উঠবে তাকে। হয়তো রহস্য ফাঁস করে দিবে। সাবাবের মনটা কু-ডাকল। তরীকে আটকাতে হবে। মনিকার কথা মতো সবার মাঝে একা হীর এগিয়ে আসল। যতই রাগ অভিমান থাক, দুঃখের সময় প্রিয় মানুষটাকে অবশ্যই সাহায্য করতে হবে। করা উচিৎ। হীর সাবাবকে ধরতে নিলেই সাবাব হাত বাড়িয়ে তরীর হাতটা শক্ত করে ধরল। যাতে তরীর দৃষ্টি সরে গেলো মনিকার উপর থেকে। সে সাবাবের দিকে তাকাতেই সাবাব বলে উঠলো,
—-‘ তরী আমাকে একটু হেল্প করো প্লিজ।’
সাবাবের কথায় আহত দৃষ্টিতে তাকালো হীর। সে তো তার সামনেই দাঁড়িয়ে। আর তরী? খানিক দূরে! তাহলে তাকে কেন চোখে পড়ল না সাবাবের? তার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তরীকেই তার চোখে পড়ল? হীর নিরবে প্রস্থান করলো। সাবাব বুঝতেও পারলো না হীরের মনের ক্ষতটা ঠিক কতখানি বাড়লো। সাবাবের কথায় তরী শান্ত হলো। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সাবাবকে ধরে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো। ঐপাশ থেকে শিলাও সাহায্য করল তাকে। সাবাবকে কোনো রকম বসিয়ে শিলা দৌড়ে গেলো বরফ আনতে। নাজমা বেগম ছলছল চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। সে জানেন তার ছেলে অল্পতে কষ্ট পায়না। অনেক বড় আঘাতেই তার কষ্ট হয়। ছেলের মুখ বলছে তার আঘাতটা ভয়াবহ আকারে লেগেছে। শিলা হাতে করে বরফ নিয়ে এলো। সানিয়া শিলার থেকে বরফ গুলো নিয়ে সাবাবের পায়ের কাছে বসে পড়ল। সাবাবের ব্যাথার অনুসন্ধান চালিয়ে অসহায় কন্ঠে বলতে লাগল,
—-‘ কোথায় কোথায় লেগেছে দেখা আমায়! আমি বরফ লাগিয়ে দিচ্ছি।’
সাবাব অসহায় চোখে তাকালো বোনের দিকে। তার সামান্য ব্যাথায় বাড়িসুদ্ধ সবাই অহেতুক হয়রান হয়ে যাচ্ছে। যা দেখে মনেমনে উল্লাস করছে মনিকা আর শিলা।
নাজমা বেগম ভরাট কন্ঠে বলে উঠলেন,
—-‘ সব সময় বলি একটু দেখে চলাফেরা কর। চারপাশ ভালো করে দেখে শুনে হাঁটবি। তা না তোর ছটফট করার স্বভাবটা আর গেলোনা।’
—-‘ মা, তুমি আমার এইটুকু ব্যাথায় এতো কষ্ট পাচ্ছো? এগুলো তো আমার জন্য কিছুই নয়। মা আমি এর থেকে ভয়ংকর ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়েছি ট্রেনিংএ। তখন তো কখনও এমনও ঘটেছে যে মনে হয়েছে এই বুঝি আমি মরে গেলাম। এই বুঝি মৃত্যু ঘটলো আমার। তবুও দেখো কিছুক্ষণের মধ্যেই একদম ঠিক হয়ে উঠেছি আমি। আর এখন এই একটু সামান্য ব্যাথা মা। তুমি প্লীজ….’
নাজমা বেগম ক্ষেপা স্বরে বলে উঠলেন,
—-‘ কোথায় কবে তুই কি কি করেছিস জানতে চেয়েছি আমি? দেখে শুনে হাঁটবে না আবার মাকে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। তাড়াতাড়ি পা দেখা কোথায় লেগেছে। এই সানি, মারে? ভালো করে দেখে বরফ লাগিয়ে দে-তো?’
সানিয়া মায়ের আদেশে মাথা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। পেছন থেকে মনিকা বলে উঠলো,
—-‘ আম সো সরি বেটা। আমার আসলে পায়ে স্লিপ কেটে গিয়েছিলো। আমি বুঝতে পারিনি বাবা। সো সরি!’
সাবাব মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টানলো। তরী শক্ত চোয়ালে মনিকার দিকে তাকাতেই সাবাব তরীর হাতের উপর আলতো করে হাত রাখল। মনিকার উদ্দেশ্যে বলল,
—-‘ ইট’স ওকে মনি। এক্চুয়েলি আমি নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হয়তো এভাবে পড়ে যেতে হতো না।’
তরী গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো। মনিকা মুখে মেকি হাসি জুড়ে বলল,
—-‘ আমার জন্যই হলো এসব। প্লীজ ফর্গিভ মি!’
মনিকাকে ক্ষমা চাইতে দেখে নাজমা বেগম বলে উঠলেন,
—-‘ আহা মনি! হয়েছে বাবা। ছেলের কাছে এতো সরি বলতে হবেনা। হয়তো তুমিও বুঝতে পারোনি আর আমার ছেলেটাও বুঝতে পারেনি। ভুল করে হয়ে গেছে। তাতে এতোবার ক্ষমা চাইতে নেই বোন।’
মনিকা মাথা নীচু করে হাসল। শিলার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে আবারও কথা জুড়লেন নাজমা বেগমের সাথে। সাবাব এবং তরী তার দৃষ্টি অনুসরণ করে শিলার দিকে দেখতেই বোধগম্য হলো শিলা কফিটাকে পরিস্কার করতে গিয়েছে। এখন যে ঐ কফির এক ফোঁটাও অবশিষ্ট থাকবেনা সিঁড়িতে। পুরো প্রমানই লোপাট করে দিবে তারা। তরী অধৈর্য্যে দৃষ্টিতে তাকালো সাবাবের দিকে। সাবাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে একহাতে মাথা চেপে ধরলো। নিজেকে আপাতত অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে। মনি যে এবারও হাত ফস্কে বেরিয়ে গেলো। তরী সবার চোখের আড়ালেই সাবাবকে সান্ত্বনা দিতে সাবাবের কাঁধে হাত রাখল। আস্তে করে বলল, ‘ রিলাক্স ইয়ার। এবারের প্ল্যান ফ্লপ করেছে সো হোয়াট? নেক্সটের প্ল্যানে আমাদের হাতে কোনো না কোনো ক্লু মাস্ট বি আসবে। আসতেই হবে।’
হীর সবার থেকে বেশ খানিক দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। মন শক্ত করে বসে আছে এই ভেবে যে সে কিছুতেই দেখবে না সাবাবের দিকে। কিন্তু সে না পেরে যখনই দেখে সাবাবকে ঠিক তখনই তরী আর সাবাবের কোনো না কোনো মুহুর্তের সাক্ষী তাকেই হতে হচ্ছে। যেমন এখন। তরী সাবাবের কাঁধে হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। হীরের মনটা বিষাক্ত হয়ে উঠলে অজানা কষ্টে। ইচ্ছে করছে মরে যেতে। বারবার তরী আর সাবাবের এমন মুহুর্ত দেখার চেয়ে মরনই যে ঢের ভালো।
_________________
সাবাব বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। হাতে মোটা একখানা বই। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বইয়েই নিবদ্ধ। আদ্র তার সামনে দাঁড়িয়ে। মিনিট পাঁচেক পরপর পায়চারী করে যাচ্ছে। মনটা ক্রমশই অস্থির হয়ে উঠছে তার। মনের মধ্যে শুধু একটাই প্রশ্ন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, ‘সুন্দরী তরী আপু কি চলে গেছে?’ প্রশ্ন আছে। কিন্তু উত্তর নেই৷ উত্তর দেওয়ার মতো আশেপাশে লোকজনও তেমন নেই। সবাই আছে সংগীতের অনুষ্ঠানে। নাচগান করে হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত। তার তিন কামিনী বন্ধুরাও সেখানেই নেচেগেয়ে বেড়াচ্ছে। আর এদিকে সাবাবকে জিজ্ঞেস করবে যে তারও উপায় নেই। সাবাবের সাথে তার সম্পর্ক যতই গভীর হোক তরীর ব্যাপারে তার কাছে জিজ্ঞেস করতে ভয়েই তার কলিজার পানি শুঁকিয়ে যাচ্ছে। সাবাব যদি রেগে গিয়ে তার মাথায় বন্দুক তাক করে বলে,
—-‘ তরীর খবর জেনে তোমার কি লাভ?’
তখন উত্তরে সে কি বলবে?
—-‘ ভাইয়া ভাইয়া আমি না তোমার ফ্রেন্ড তরী আপুর প্রেমে পড়েছি। আম অলসো ক্রাশড্ অন হার ভাইয়া।’
ক্রাশ খেয়েছি আবার প্রেমেও পড়েছি। সব মিলিয়ে জগা খিচুড়ি বানিয়ে আবার আপুও বলছি। ছিঃ এই কথা সাবাব ভাইয়া শোনার আগেই তো আমায় গুলি করে দিবে। তাহলে আর কি উপায়?
—-‘ আদ্র। কি হয়েছে তোমার? বারবার বাইরে উঁকি দিচ্ছো কেন? কারোর আসার অপেক্ষা করছো?’
সাবাবের গম্ভীর স্বরে থমকে গেলো আদ্রর পা। সে চমকে উঠে বুকে হাত চেপে আঁড়চোখে সাবাবের মুখ দেখার চেষ্টা করলো। কিন্তু সফল হলো না। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ নাআআ। না। কিছুনা ভাইয়া।’
সাবাব ভ্রু কুঁচকে মুখ তুললো। আদ্রর দিকে পূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
—-‘ তুমি ভয় পেয়ে আছো মনে হচ্ছে। কেন বলোতো? কি হয়েছে?’
—-‘ না। না। ক,,কিছু না।’
—-‘ সত্যিই তো কিছুনা? নাকি কিছু লুকোচ্ছো? কিছু হলে বলো আমায়?’
আদ্র ঢোক গিলল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
—-‘ সত্যি কিছুনা ভাইয়া।’
সাবাব মাথা নেড়ে বলল,
—-‘ আচ্ছা। হ্যাঁ, শোনো। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। তুমি মাকে গিয়ে একটু বলবে আমাকে কিছু খাবার দিতে?’
সাবাবের কথায় মনে লাড্ডু ফুটে উঠলো আদ্রর। খুশিতে আটখানা হয়ে বলে উঠলো,
—-‘ এই এক্ষনি যাচ্ছি ভাইয়া।’
কথাটা কোনো মতে বলেই এক দৌড়ে চলে গেলো আদ্র। সাবাব তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে স্মিত হাসল। সে মনে মনে কি যেন ভাবলো। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দীর্ঘ রেখেই আবারও মননিবেশ করলো বইয়ে।
আধঘন্টার মাথায় রুমের দরজায় কেউ নক করল। সাবাবের মনোযোগ ঘেঁটে গেলো পড়ার লাইন থেকে। বেডে বসে নড়াচড়াও সম্ভব নয়। যার দরুন দেখা গেলো না দরজায় দাঁড়িয়ে কে এতো ফর্মালিটি মেইনটেইন করছে।
—-‘ ভেতরে এসো।’
সাবাব গলা উঁচিয়ে ডাকল। আগন্তুক অনুমতির অপেক্ষা করছিলো। অনুমতি পেতেই গুটিগুটি পায়ে হাতে সাজানো খাবারের ট্রে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। পারপেল রঙের চুরিদার পরিহিত আগুন্তক। খোলা চুল,কানে গোল ঝুমকো, হাত ভর্তি পারপেল রঙের রেশমী চুড়ি,চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে? টকটকে লাল লিপস্টিক। হঠাৎ এতো লিপস্টিক কেন লাগালো? যাকে দেখাবে সে তো পা ভেঙে ঘরে বন্ধি!তবে কি বাইরের ছেলেদের দেখিয়ে মাথা খারাপ করে দেওয়ার ফন্দি হচ্ছে? বেশ সাহস বেড়েছে তো! এর একটা বিহিত করা দরকার।
হীর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে খাবার সাজানো ট্রের ভার নিয়ে এগিয়ে এলো সাবাবের দিকে। সাবাবের বেডের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটা ড্রয়ার। হীর ট্রে-টা কোনোরকমে ড্রয়ারের উপর রেখে হাফ ছেড়ে বাঁচল। চুড়িতে ঝনঝন আওয়াজ তুলে কোমর সোজা করে দাঁড়ালো সে। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে সাবাবের দিকে তাকালো। সাবাব রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাবাবের চাহনির বিশেষ পাত্তা না দিয়ে সে বলে উঠলো,
—-‘ বড় মা ব্যস্ত। রুবি বাসায় নেই। আর বাকি কেউ খাবার নিয়ে আসতে পারবে না। তাই আমিই নিয়ে এলাম। এখানে পানিও আছে। আস্তেধীরে খেয়ে নাও।’
—-‘ এতো সেজেছিস কেন?’
—-‘ অ্যা!’
—-‘ এতো সেজেগুজে কাকে দেখাচ্ছিস শুনি?’
হীরের ভ্রু কুঁচকে এলো। নিজেকে একবার দেখে নিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
—-‘ সাজলাম কোথায়? এটাকে সাজা বলে নাকি? ঠিক করে তো কাজলটাও দেইনি।’
সাবাব চটে গিয়ে বলল,
—-‘ গাদা গাদা মেকআপ লাগিয়ে বলছিস সাজলাম কোথায়? ফাজলামো হচ্ছে?’
—-‘ আশ্চর্য! তুমি এভাবে চটছো কেন? আর আমি গাদা গাদা মেকআপ করলাম কখন?’
—-‘ নীচে কে কে?’
—-‘ কে কে থাকবে? সবাই আছে।’
—-‘ কোন কোন ছেলেরা আছে।’
—-‘ অনেক ছেলে আছে। সবার নাম জানিনা। অনেকে এসে পরিচিত হয়েছে। তুমি বললে এখন গিয়ে সবার নাম জিজ্ঞেস করে এসে তোমাকে জানাচ্ছি।’
—-‘ একটা চড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিবো।'(ধমক দিয়)
সাবাবের ধমকে চমকে উঠলো হীর। মনে হলো যেন সাবাব সত্যি সত্যি চড় লাগিয়েছে তাকে। দুই গালে হাত চেপে ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সাবাবের দিকে। সাবাব পূনরায় রাগান্বীত স্বরে বলে উঠলো,
—-‘ লিপস্টিক মোছ।’
—-‘ লিপস্টিক মুছবো। কিন্তু কেন?'(ঠোঁট ফুলিয়ে)
—-‘ যা বলছি কর।’ (ধমকের সুরে)
হীর চমকে উঠে হাতের উল্টো পিঠ চেপে ধরলো নিজের ঠোঁটে। সাবাবের রক্তলাল চোখ দেখার চেয়ে ঢের ভালো লিপস্টিক না পড়া। তাই চটজলদি লিপস্টিক মুছতে আরম্ভ করল।
হীরকে লিপস্টিক মুছতে দেখে সাবাবের রাগ কমলো না। তাই আবারও বলে উঠলো,
—-‘ টিপ তোল আর কানের ঝুমকো খোল।’
সাবাবের কথায় অসহায় চোখে তাকালো হীর। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
—-‘ তুমি এমন কেন করছো?’
—-‘ চড় খাবি নয়তো এগুলো খুলবি?’
—-‘ খুলছি!’
#চলবে_
বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]