তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-২৬
___________
লাবণ্যের সাথে দেখা করার কোনো রকম ইচ্ছে ছিলো না রুদ্রর।তবুও দেখা করেছে কৌতূহল থেকে। লাবণ্য কেনো দেখা করার জন্য এত তোড়জোড় চেষ্টা করছে?কী বলবে লাবণ্য? লাবণ্য দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রর সামনে। রুদ্র এক বার তাকালো।বুকের ভিতর হু হু করে ওঠলো কয়েক মুহূর্তের জন্য। লাবণ্য বলল, “চলো কোথায়ও গিয়ে বসি।”
– “হ্যাঁ সিওর।এভাবে দাঁড়িয়ে তো কথা বলা যাবে না।”
লাবণ্য আর রুদ্র পাশাপাশি হাঁটছে।দুই জনই নিশ্চুপ। লাবণ্য হাঁটতে হাঁটতে ডাকলো, “রুদ্র।”
রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ডান দিকে তাকালো লাবণ্যের দিকে, “বলো।”
লাবণ্য কিছু বললো না।বুঝা গেল দুই জনের মধ্যকার নীরবতা ভাঙ্গতে অকারণেই ডেকেছে। লাবণ্য কিছুক্ষণ পর রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি লাবণ্যের। রুদ্রর মেজাজ বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু বুঝতে ব্যর্থ হলো।মিনিট দশেক হেঁটে রুদ্র থামলো।বলল, “ওইদিক টায় চলো। নিরিবিলি আছে।”
লাবণ্যের কাছ থেকে হাত তিনেক দূরত্ব রেখে বসে রুদ্র।গাঢ় স্বরে বলল, “কী বলবে বলো? শুধু শুধু সময় নষ্ট করো না।কাজ আছে আমার।”
লাবণ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে সংকোচ ভরা গলায় বলে ওঠল, “আমরা সম্পর্ক’টা আবার শুরু করতে পারি না?”
কথা’টা বলে রুদ্রের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকায় লাবণ্য। রুদ্র স্বাভাবিক গলায় বলল, “এই কথা বলার জন্য ডেকেছো?”
রুদ্র হেসে আবার বলল, “আচ্ছা লাবণ্য তোমার কী মনে হয় তোমার প্রতি প্রেম-ভালোবাসা থেকে আমি এখানে দেখা করতে এসেছি? আমি কৌতূহল থেকে এসেছি। তুমি কীসের জন্য কিংবা কী বলার জন্য দেখা করতে চাচ্ছো,সে সব জানার এবং শোনার কৌতূহল। তোমার মত একটা পতিতা লেবেলের মেয়ের সাথে আমি আবার সম্পর্কে যাবো?”
উচ্চস্বরে হেসে ওঠে রুদ্র। দুর্ভেদ্য সে হাসি। এতসব কঠিন কথা কত সাবলীল আর সহজ ভঙ্গিতে বলে যাচ্ছে রুদ্র। লাবণ্যের চোখে মুখের দুরাবস্থা। অপমানে থমথমে লাবণ্যের মুখ।ধীরে ধীরে সেটা ক্রোধে পরিণত হয়। রোষপূর্ণ গলায় চেঁচিয়ে বলল, “রুদ্র মুখ সামলে কথা বলো।সীমা অতিক্রম করছো তুমি।”
রুদ্রর চেহেরায় দ্বিগুণ রোষ, “মুখ সামলে ভদ্র ভাবেই কথা বলছি।আমি যা বলেছি তা কী মিথ্যে?আর আদিল তোমায় কি বলেছে?বলেছে যে আমি তোমার জন্য এখনো কষ্ট পাই,তোমায় ভুলতে পারি নি,তোমায় এখনো ভালবাসি?”
রুদ্র একটু থেমে আবার বলে, “তোমায় ভুলতে পারি নি,তোমার জন্য কষ্ট পাই এর মানে তো এই না যে তোমার সাথে আবার সম্পর্ক জড়াবো। তুমি আমার জীবনের একটা যন্ত্রনাময় অধ্যায়।যে অধ্যায় মুছে ফেলতে পারছি না।আবার নতুন করে সূচনা করার কথাও ভাবতে পারছি না।তোমার মত জঘন্য একটা মেয়ের সাথে আবার…। আমি যে লাবণ্য কে ভুলতে পারছি না সে লাবণ্য তো তুমি নও।”
তারপর কিছুক্ষণ লাবণ্যের সাথে তর্কাতর্কি চলে। এক পর্যায়ে রুদ্র নিজের এতদিনের জমানো রাগ,ক্ষোভ,জিদ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। আচমকাই লাবণ্য গালে সজোরে কয়েকটা চড় মেরে বসে। রুদ্রের চোখ জোড়া ফার্নেসের চুল্লির মত ধিকধিক করে জ্বলছে।চড়ের আঘাতে লাবণ্যের গালে সমান্তরাল কালশিরা পড়ে যায়। লাবণ্য নিশ্চুপ,রুদ্রর চোখে-মুখের ভয়ংকর অবস্থা দেখে আর কিছু বলার সাহস পায় না। রুদ্র বসে না আর সেখানে। এলোমেলো ভাবে পা ফেলে চলে যায়। একদিকে ক্রোধ,অন্যদিকে যন্ত্রনা। সবকিছু অসহনীয় লাগছে রুদ্রর কাছে।
___________
অরূণী খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।আধ বোঁজা চোখ দু’টো পিটপিট করে জ্বলা দীপকের ন্যায়। কিছুক্ষণ পর পর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে বুক চিঁড়ে। ঝড়ো হাওয়ার মত তীব্র বেগে হু হু করে চাপিয়ে রাখা কান্না বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। না কাঁদার দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় ঠোঁট কামড়ে শুয়ে থাকে অরূণী। শুধু বুঝতে পারছে ওঁর হৃদয়ে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে ক্রমশ আঘাত করে যাচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে অরূণী।কষ্ট গুলো যত চাপিয়ে রাখতে চাচ্ছে ততই যেন প্রখর হচ্ছে। এই পর্যায়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকা কান্না গুলো অরূণীর বন্ধ চোখের কোটর বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। বালিশে শক্ত করে মুখ গুঁজে থাকে অরূণী।কান্নার বেগে শরীর’টা কাঁপছে।শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে বারংবার। রুদ্রর বিষয়’টা তো ভুলে থাকতে চেয়েছে এতদিন।তবুও রুদ্রর জন্য কেন কাঁদছে? রুদ্রর প্রেমিকা থাকতেই পারে।এটা স্বাভাবিক! নিজের মন’কে প্রবোধ দিচ্ছে অরূণী। কিন্তু মন যে বড্ড অবুঝ জিনিস।অরূণীর মনে হচ্ছে এই অসহনীয় যন্ত্রনায় ওঁর প্রাণ’টা এক্ষুণি বেড়িয়ে যাবে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।গোসল,খাওয়া-দাওয়া সব ভুলে রুম বন্ধ করে সারা দিন শুয়ে রইলো অরূণী। রুদ্র’কে ভুলতে না পারলে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। কিশোরী মনের ভালোবাসা একটু বাড়াবাড়ি রকমের হয়। তার উপর এত পাগলামি করেও ব্যর্থ হওয়া।বার বার অবহেলিত হওয়া। অরূণীর বিধ্বস্ত অবস্থা।
রাতে দেড়’টা পেরিয়ে গেছে।তবুও ঘুম আসছে না।কষ্ট গুলো অসহ্য লাগছে অরূণীর কাছে। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে অরূণীর।কান্নার ফলে ফুলে যাওয়া চোখ দুটো টেনে টেনে মেলে। এত রাতে কে ফোন দিবে?এটা ভাবতে ভাবতে অরূণী ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই অরূণীর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে।এ যে রুদ্রর গলা।অরূণী ক্ষীণ গলায় প্রশ্ন করে, “আপনি?আপনি এত রাতে কেন ফোন দিয়েছেন?”
অরূণীর গলা শুনে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কান্না চাপিয়ে কথা বলছে। রুদ্র বলে, “কয়েক দিন ধরে কী হয়েছে তোমার বলো তো?এত রাত পর্যন্ত তুমি সজাগ কেন?কাঁদছো কেন?”
অসহ্য লাগছে রুদ্রের কথা অরূণীর কাছে। তীব্র অসহ্য।অরূণী কঠিন স্বরে বলে, “তার আগে বলেন আপনি কেন আমার কাছে ফোন দিয়েছেন?আচ্ছা আপনি চাচ্ছেন’টা কী?সমস্যা কী আপনার?আপনি বুঝতে পারছেন না আমি নিজেকে শুধরে নিতে চাচ্ছি। খামখেয়ালির বশে করা যে পাগলামি গুলো আমার প্রতিনিয়ত কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেগুলো মুছে ফেলতে চাচ্ছি।”
এক শ্বাসে কথা গুলো বলে থামে অরূণী। রুদ্র নিচু গলায় বলল, “অরূণী কান্না থামাও।”
অরূণী ধৈর্যচ্যুত হয়ে চেঁচিয়ে বলে, “সহানুভূতি দেখাচ্ছেন?কীসের জন্য সহানুভূতি দেখাচ্ছেন?আমি তো এখন আপনায় কোনো রকম বিরক্ত করছি না।তবুও কী সমস্যা আপনার বলবেন একটু?”
অরূণীর হঠাৎ এই ধরণের মেজাজের কারণ বুঝতে পারছে না রুদ্র।অরূণী আগে কখনো এভাবে কথা বলে নি। রুদ্র শান্ত গলায় বলল, “এত রেগে আছো কেন তুমি?আর এত রাত পর্যন্ত সজাগ কেন তুমি? কাঁদছো কেন?”
অরূণী পাল্টা প্রশ্ন করে, “আপনি কেন এত রাতে ফোন দিয়েছেন? আমি তো বলেছি আমি আমার সমস্ত কাজের জন্য দুঃখিত।ক্ষমা চাচ্ছি আমি।”
অরূণীর গলায় তীব্র ক্ষোভ। অতিরিক্ত রাগে দিশেহারা হয়ে অরূণী ওঁর ফোন’টা দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে। ফোন’টা ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল।
রুদ্র হতভম্ব হয়ে থাকে।অরূণীর হঠাৎ এই আচরণের কারণ বুঝতে পারছে না।অরূণী কাঁদছে কেন? অদ্ভুত এক কারণে রুদ্রর মন’টা ছটফট করতে লাগলো।অরূণীর হঠাৎ এই পরিবর্তন ভালো লাগছে না রুদ্রর।এত কষ্ট পাচ্ছে কেন অরূণী? অন্যদিকে লাবণ্যের বিষয়’টাও না চাইতেও রুদ্রর মস্তিষ্কে সূক্ষ্ম চিন্তার সৃষ্টি করেছে। লাবণ্য নামক অধ্যায়’টা পুরোপুরি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।
____________
সকালে বিধ্বস্ত রূপে রুদ্রর সামনে যায় অরূণী। চুল গুলো উস্কো খুস্কো। চোখ দু’টো ফুলে লাল টকটকে হয়ে আছে। মুখ’টা একদম ফ্যাকাসে। দৃষ্টি রক্তশূন্য।অরূণীর দিকে তাকাতেই রুদ্রের দৃষ্টি থেমে যায়।কপাল ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে রুদ্র।অস্থির গলায় প্রশ্ন করে, “অরূণী কী হয়েছে তোমার?কালকে রাতে কী হয়েছিলো?”
অরূণী দুর্বল গলায় বলে, “আপনায় বলছি না আমায় পড়াতে আসবেন না।তবুও কেন এসেছেন?”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো চমকিত হয়ে।অরূণীর এই অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে রুদ্রর।মেয়ে’টাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে?এসব ভাবতে ভাবতে রুদ্র বলে, “আমার উপর এত রেগে আছো কেন? চেহারার এ কি হাল করেছো তুমি? রাতে ঘুমাও নি?”
অরূণী কোনো জবাব না দিলো না। রুদ্র অস্থির হয়ে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। রুদ্র আবার বলল, “এই অরূণী এদিকে তাকাও।কী হয়েছে বলো?”
অরূণী নোট খাতা’টা খুলে বলে, “কিছু হয় নি স্যার।এই অংক’টা বুঝিয়ে দেন।”
রুদ্র অরূণীর হাত থেকে খাতা’টা নিয়ে বুজিঁয়ে রাখলো। জোর গলায় বলল, “কী হয়েছে তোমার সেটা আগে বলো?”
অরূণী’কে নিরুত্তর দেখে রুদ্র আবার বলে, “তোমায় কিছু না বলে হারিয়ে গিয়েছিলাম। যোগাযোগ করিনি।এজন্য এত পাগলামি করছো? প্রতিদিন রাতে ফোন দিবো এখন থেকে। আর এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করবো না।”
রুদ্রর অবাক দৃষ্টি অরূণীর দিকে।আজ হঠাৎ উপলব্ধি করছে অরূণী’কে।এই মেয়ে’টা সামান্য কারণে এত কষ্ট কেন পাচ্ছে?অরূণী হালকা গলায় বলে, “আপনার সাথে আমি রাগ,অভিমান কেন করবো? অযৌক্তিক কথা কেন বলছেন?আপনি আমায় কেন ফোন দিবেন?”
অরূণী কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর বলে, “আপনায় প্রথম দেখেছিলাম বাস স্ট্যান্ডে। আপনার হাসি’টা দেখে ভালোলেগে ছিলো। আর সেই সামান্য ভালোলাগার জন্য শুরু করি পাগলামি।আপনায় ফলো করতে করতে গেলাম। আপনি যে বাসায় ঢুকেছেন সেই বাসা’টা চিনে রাখি। তারপর সেই বাসায় যাই। দারোয়ান ঢুকতে দিবে না। তারপর বাসার মালিক’কে নয় ছয় বুঝিয়ে বাসার ভিতর ঢুকি। কিন্তু আপনায় খুঁজে পাওয়া হলো না সেদিন। এর পরে আবার যাই সেখানে। কিরণ ভাইয়ের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বর নিই। সেটা বন্ধ থাকে। এরপর আর খোঁজ পাই না আপনার। হঠাৎ করে রেস্টুরেন্ট দেখা হয়ে যায় আপনার সাথে। আপনার কাছ থেকে টাকা ধার নিই। আমজাদ স্যারের বাসায় পাঠিয়ে বোকা বানাই আপনায়।এসব করে আমি আনন্দ পেতাম।এই খামখেয়ালি গুলো ধীরে ধীরে অদ্ভুত ভালোবাসায় পরিণত হয়।আপনি যে দোকানে চা খান সেই দোকানির কাছ থেকে আপনার নাম জানি। দারোয়ান কে ঘুষ দিয়ে চিঠি পাঠাতাম।আরো কত পাগলামি করেছি।ট্রেনে দেখা,নিম্মি আপার বিয়েতে দেখা সব স্বপ্নের মতো ছিলো। আপনি আমার আশেপাশে থাকলে কেমন এক অনুভূতিতে আমার চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আমি কখনো তেমন ভাবে জানতে চাই নি আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে কি-না? গার্লফ্রেন্ড থাকবে না এ কি করে হয়?যদি জানি কষ্ট পাবো।তাই জানার চেষ্টা করি নি। আপনি এমন একটা কঠিন মানুষ, নিরাবেগ!আমি বুঝে গেছি আপনি আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাই নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আবার এমনও হতে পারে আপনি খুব আবেগী,সহজ একজন মানুষ।হয়ত আমায় ভালোলাগে না আপনার তাই এভাবে অবজ্ঞা করেছেন।”
অরূণী থামে। রুদ্রের দিকে না তাকিয়েই আবার বলে, “এসব বলার কারণ কী জানেন?কারণ হলো আমি সব কিছুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।এই বিষয়’টা এখানেই শেষ হয়ে যাক।আপনি আমায় আর পড়াতে আসবেন না দয়া করে।আমি আর কখনো আপনার সামনে পড়তে চাই না।”
রুদ্র নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রুদ্র কিছু বলতে গেলে অরূণী থামিয়ে দেয়। বিষণ্ণ মুখে ম্লান হেসে বলে, “আসলেই আমার ভিতর পরিপক্কতা নেই,কমন সেন্স টুকুও নেই। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কী এমন নির্লজ্জ হয়?কি সব হাস্যকর পাগলামি করেছি!”
অরূণী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় হঠাৎ। দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।রুদ্রর নির্বুদ্ধি হয়ে যায়।অরূণীর বলা কথা গুলোতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে রুদ্র।অরূণীর বলা কথা গুলো তোলপাড় শুরু করে দিলো রুদ্রর বুকে।অরূণী কী রুমে গিয়ে আবার কাঁদছে?অরূণীর ম্লান,বিষণ্ণ মুখ’টা বার বার রুদ্রর চোখের সামনে ভেসে আসছে। রুদ্র অনুভব করলো অরূণীর এই বিষণ্ণতায় ওঁর যন্ত্রনা হচ্ছে।অরূণীর এই কান্নায় ওঁর কষ্ট হচ্ছে। রুদ্রের এই ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে সাহেদ আহমেদ রুমে ঢুকে বলল, “রুদ্র তোমার ছাত্রী কোথায়?”
রুদ্র অপ্রস্তত ভাবে তাকায়। বলে, “রুমে গেছে।”
– “তোমার কাছে বলে গেছে?”
– “হ্যাঁ।”
অনেকক্ষণ হয়ে গেল অরূণী আসছে না দেখে সাহেদ আহমেদ তীব্র মেজাজ নিয়ে অরূণীর রুমে গেল। গিয়ে দেখে অরূণীর বেহাল দশা।মেয়ের এই অবস্থা দেখে সাহেদ আহমেদের দৃষ্টি কোমল হয়ে গেল।অস্থির গলা সেলিনা আহমেদ আর সূর্য’কে ডাকলো।
এদিকে রুদ্র বসে বসে অরূণীর জন্য অপেক্ষা করছে। অনেক কিছু বলার আছে অরূণী’কে।আজ বলবে সব। রুদ্রর অপেক্ষার প্রহর কাটছে না যেন। রুদ্রর এই মুহুর্তে শুধু মনে হচ্ছে অরূণীর কষ্টে ওঁর কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।
সাহেদ আহমেদ এমন হন্তদন্ত হয়ে ডাকলে সেলিনা আহমেদ আর সূর্য ঘাবড়ে যায়।কি হলো হঠাৎ?কি হলো না হলো এই শঙ্কা নিয়ে অরূণীর রুমের দিকে যায়। সাহেদ আহমেদের ডাক রুদ্রের কানেও পৌঁছে। রুদ্র চমকে ওঠে।কী হলো অরূণীর? রুদ্র ভাবছে অরূণীর রুমে যাওয়া কী ঠিক হবে?
সেলিনা আহমেদ দেখে অরূণীর নিস্তেজ শরীর,ক্লান্তি চাহনি।মনে হচ্ছে কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগী। সূর্য হকচকিয়ে অরূণীর পাশে বসে বলল, “অরূ কী হয়েছে?”
একই প্রশ্ন কয়েক বার করলো সূর্য।অরূণী নিচু গলায় বলল, “শরীর খারাপ লাগছে দাদা।”
সাহেদ আহমেদ সেলিনা আহমেদের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে, “অরূণী কয় বেলা ধরে খাচ্ছে না?মেয়ের খেয়াল রাখো তুমি?”
সবার চেঁচামেচি শুনে রুদ্র সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে অরূণীর রুমের দিকে যায়।সবার অস্থির অবস্থা।সবার দৃষ্টি অগোচরে অরূণী এক বার তাকালো রুদ্রর দিকে। রুদ্রর সাথে চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। রুদ্র সবাই কে উপেক্ষা করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরূণীর দিকে। শুধু ভাবছে এই অদ্ভুত রকমের পাগলামী করা মানুষ’টা কে ভালোবাসা উচিত।
(চলবে)