ক্রাশ পর্ব -০৭

#ক্রাশ
#পর্ব_০৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
সাগর আর মোহনার বিয়ের ডেট ফাইনাল হলো।
একমাস পরে তাদের বিয়ে।
কিন্তু সাগর জানালো একমাস পরে সে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হবে।
তখন এসব ঝামেলা সে মানতে পারবে না।
সাগর সবকিছু মেনে নিলেও পড়াশোনার ক্ষতি সে কিছুতেই মানতে পারবে না।

তখন সাগরের দাদু বললো,
তাহলে আজকেই বিয়ে হবে।
আর বিয়ের অনুষ্ঠান পরে ধুমধাম করে করা হবে।
যেহেতু সাগর চাইছে তার যাতে পড়াশোনার কোন ক্ষতি না হয় তাই আমার মনে হয় ওর বিএসসি টা কম্পিলিট হলেই অনুষ্ঠান করা হবে।

সাগরের বাবা সে কথা শুনে বললো এটাই ভালো হবে।
কি বলেন আপনি?(মোহনার বাবা কে উদ্দেশ্য করে)

তখন মোহনার বাবা বললো আমার কোন আপত্তি নাই।
পরে অনুষ্ঠান হলে মোহনার জন্যও সুবিধা হবে।
কারন ওর ও তো পড়াশোনা আছে।

সাগরের দাদু তখন বললো,
কারো পড়াশোনার কোন ক্ষতি হবে না।
এখন যেভাবে পড়াশোনা করছে তখনও সেইভাবেই পড়াশোনা করবে।।।

হঠাৎ সামিরা বললো তাহলে বিয়ে টাও পরেই হোক।
এখন তাহলে বিয়ে টা হচ্ছে কেনো?
আপাতত এনগেজড করে রাখো।

সাগরের দাদু বললো না।
আমি ওসব এনগেজড মানি না।
বিয়ে আজকেই হবে।
তোমরা আয়োজন শুরু করে দাও।

সাগর আর একটা কথাও বললো না।
সে সামিরার দিকে তাকালো।
তখন সামিরা সাগরের কাছে এসে বললো ভাইয়া আমার মনে হয় তুই বিয়ে তে রাজি আছিস।
তা না হলে তুই কিছু বলছিস না কেনো?
এই বিয়ে তে তোর পুরো মত আছে।
শুধু শুধু আমাকে বোকা বানালি?
আর আমিও তোর কথা বিশ্বাস করে বিয়ে ভাংগার জন্য চলে এলাম।
বিয়ে করবি ভালো কথা কিন্তু শুধু শুধু বিয়ে ভাংগার অভিনয় কেনো করলি আমার সাথে???

সাগর তখন বললো তুই নিজে কিছু করতে পারলি না এখন উলটো আমাকে দোষ দিচ্ছিস?
আমি তো তোকে বিশ্বাস করে নিজেই ফেঁসে গেলাম।
এখন কি করে দাদুকে বলবো যে এই বিয়ে টা আমি করতে পারবো না।
দাদুর তো এটা মানসম্মানের ব্যাপার।

সামিরা সেই কথা শুনে বললো থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না।
আর এতো অভিনয় ও করতে হবে না।
সবাই যখন চাচ্ছে আর তুই ও যখন কাউকে কিছু বলতে পারছিস না তাহলে চোখ বন্ধ করে বিয়ে টা করেই নে।
এই বলে সাগর মোহনার কাছে গেলো।
আর মোহনার হাত ধরে বললো আজ থেকে তাহলে তুমি আমার ভাবি হয়ে গেলে।
তা ভাবি বিয়ের কথা শুনে কেমন ফিল হচ্ছে?
তুমি খুশি তো?
মোহনা সে কথা শুনে একটা মুচকি হাসি দিলো।
আর সাগরের দিকে তাকালো।
সামিরা তখন বললো ভাই তুই কিছু বল?
তোর বউ তো হাসি দিয়েই বুঝিয়ে দিলো যে সে খুব খুশি।
সাগর কোন উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে সরে গেলো।

সামিরা তখন মোহনাকে বললো ভাবি তুমি সাগর ভাই কে নিয়ে চিন্তা করো না।
এখন দেখে এমন রাগ করে আছে দুইদিন পর তোমার পিছু পিছু ঘুরে বেড়াবে।
মোহনা তখন বললো ওনার কি সত্যি অন্য কোন মেয়ের সাথে রিলেশন আছে?
সামিরা তখন বললো দূর এমনি বলেছি তখন।
তোমার মন বোঝার চেষ্টা করলাম।
দেখতে চাইছিলাম যে তুমি এই কথা শুনে কেমন রিয়্যাক্ট করো।
তুমি তো দেখি বিশ্বাস করে ফেলছো?
মোহনা বললো না,না।
আমি এমনিতেই জানতে চাইলাম।

——————————-

সাগর আর মোহনার বিয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই হয়ে গেলো।
মোহনাকে নিয়ে সবাই বাড়ি চলে এলো।

বাড়িতে আসার সাথেই সাগর আর মোহনাকে দাদীর রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।
কারন দাদী বাড়িতে ছিলেন।
তিনি তো ভাবতেই পারছেন না যে সাগর বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে।
দাদী মোহনাকে দেখে অনেক খুশি হলেন।
আর সাগর কে বললেন,
আমাকে তো সারাক্ষণ বলতিস যে তুই বিয়ে করবি না।
এখন তো দেখছি পাত্রী দেখতে গিয়েই বিয়ে করে ফেললি?
সাগর সে কথা শুনে মোহনাকে রেখেই তার ঘরে চলে গেলো।
তখন দাদী মোহনার হাত ধরে বললো এই পাগল টাকে কিন্তু তোকেই ঠিক করতে হবে।
আসলে ও এখনি বিয়ে করতে চাইছিলো না।
কিন্তু তোদের দাদুর কথা আর এক মুহুর্ত দেরী নয়।
তাড়াতাড়ি তিনি নাতবউ এর মুখ দেখবেন।
সাগরের সেজন্য মনে হয় মন খারাপ।
ও হয় তো আজ একটু রেগেই থাকবে।
তুই কিছু মনে করিস না যেনো?
আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মোহনা সেই কথা শুনে মনে মনে ভাবলো এই ছেলের সাথে সে সারাজীবন কাটাবে কি করে?
সবাই শুধু বলছে ঠিক হয়ে যাবে ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু কি ঠিক হবে মোহনা সেটাই বুঝতে পারছে না।

হঠাৎ সামিরা মোহনার হাত ধরে বললো এ রুমে কি সারারাত থাকবে?
তোমার নিজের ঘর দেখবে না?
চলো তোমাকে রুমে নিয়ে যাই।
যদিও ঘর টা সাজানো নাই।
তবুও তোমার ভালো লাগবে।
কারন ভাই আমার সারাক্ষন বই হাতে নিয়ে থাকলেও খুবই পরিপাটি।
নিজের ঘর টা সবসময় সাজিয়েই রাখে।
এই বলে সামিরা মোহনাকে সাগরের রুমে নিয়ে গেলো।
কিন্তু রুমে তো তার ভাই নাই।
সে আবার কই গেলো?

এদিকে মোহনা সাগরের রুম দেখে হা করে তাকিয়ে থাকলো।
এটা রুম না কোন লাইব্রেরি?
কারন রুমের একপাশ্বে পুরো টা জায়গা জুড়ে একটা সেলফ।
সেখানে শুধু বই আর বই।
কিন্তু রুমের বারান্দা টা সুন্দর ছিলো।
নানারকম ফুলের টপ।
মোহনার ফুলের বাগান খুব ভালো লাগে।
সামিরা তখন বললো কি দেখছো এভাবে?
নিশ্চয় ভাইয়ার লাইব্রেরি দেখে অবাক হচ্ছো?
মোহনা সে কথা শুনে হেসে উঠলো।
সামিরা তখন বললো ভাই সবসময় হাতে বই নিয়ে বসে থাকে।
ও কিন্তু একটু অন্য টাইপের।
প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে একটু তোমার কষ্টই হবে।
মোহনা কোন উত্তর দিলো না।
সামিরা তখন মোহনাকে বললো তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
আর ড্রেস টাও চেঞ্জ করে নাও।
আমি আমার রুমে গেলাম।

মোহনা তখন সামিরার হাত ধরে বললো তুমি প্লিজ যেও না।
তোমার ভাই না আসা পর্যন্ত আমার সাথেই থাকো।
কারন আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
তোমার ভাইয়া যদি আমাকে এ রুমে দেখে রাগ করে?

সামিরা তখন বললো রাগ করবে কেনো?
এটা কি এখন শুধু ওর একার ঘর?
এই ঘর টা এখন তোমারও।
কিন্তু আজ একটু ও রাগ দেখাবেই।
তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম ওকে দাদু জোর করে বিয়ে তে রাজি করিয়েছে।
ওর সেজন্য আজ ভীষণ মন খারাপ।
সেইজন্যই তো রুমে নেই।
তবে তুমি চিন্তা করো না।
সব ঠিক হয়ে যাবে।
শুধু ওর কাজে কোন বাধা না দিলেই ও রাগ করবে না।
যেটা বলবে সেটাই শুনবে।
মোহনা বললো ঠিক আছে।
এই বলে সামিরা চলে গেলো।

সামিরা চলে গেলে মোহনা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
তারপর তার ড্রেস টাও চেঞ্জ করে নিলো।
কিন্তু সাগর এখনও রুমে আসে নি।
হয় তো রাগ করে অন্য কোথাও বসে আছে।

মোহনা সাগরের বুক সেলফ এর কাছে গেলো।
একটা বই হাতে নিলো।
বই টা হাতে নিতেই তার চোখ কপালে উঠলো।
সাগর শুধু পাঠ্যবই ই পড়ে না।
সে তো দেখি উপন্যাস ও পড়ে।
মোহনা যে বই টা হাতে নিয়ে আছে সেটা ছিলো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কপালকুণ্ডলা।
মোহনা আরেকটা বই হাতে নিলো।
এটা আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি ছিলো।
হঠাৎ মোহনা খেয়াল করলো উপরে বড় করে লেখা উপন্যাস।
তারমানে এই পাশ্বে সব উপন্যাসের বই।
মোহনা আরেকটা বই হাতে নিতেই সাগর বললো কি করছো ওখানে?
আমার বই ধরেছো কেনো?
উপরে কি লেখা আছে দেখো নি?
মোহনা লেখাটার দিকে তাকালো।
সেখানে বড় করে লেখা সাগরের পারমিশন ছাড়া কেউ কোন বই এ হাত দিবে না।
মোহনা লেখাটা দেখামাত্র তার হাতের বই টা জায়গা মতো রেখে দিলো।
তারপর বললো সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।
আর ধরবো না।
এই বলে মোহনা বুক সেলফ থেকে দূরে সরে গেলো।

সাগরের সাথে ওর মা ও ছিলো।
তিনি সাগরের উপর রেগে গেলেন।
এ কোন ধরনের আচরন তোর?
নতুন বউ এর সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
মেয়েটা কি ভাববে এখন?
সাগর তখন বললো যা ভাবার ভাবুক।
ওকে কে আমাকে বিয়ে করতে বলেছে?
সাগরের মা মোহনার মাথা বুলিয়ে বললো,
তুমি মন খারাপ করো না মা,
ওর একটু রাগ টা বেশি।
বিশেষ করে ওর বই কেউ ধরলে মাথা টা আরো বেশি গরম হয়।
তুমি একটু মানিয়ে নিও মা।
এই বলে সাগরের মা সাগর কে বললো মোহনার সাথে যদি আর কোন খারাপ ব্যবহার করিস তাহলে কিন্তু তোর বাবা আর দাদুকে বলে উচিত শিক্ষা দিয়ে নিবো।
সাগর তখন বললো আমি কি বিয়ে করতে চেয়েছি?
তোমরা জোর করে বিয়ে দিছো আমাকে।
এখন আমার যা মন চায় তাই বলবো।
সাগরের মা তখন বললো আবার সেই একই কথা?
মেয়েটা মন খারাপ করবে না?
সাগর কোন উত্তর না দিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো।

সাগরের মা তখন মোহনাকে বললো,
অনেক রাত হয়েছে।
তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
ওর রাগ কমে গেলেই ও চলে আসবে।
এই বলে সাগরের মা চলে গেলো।

সাগরের মা চলে গেলে মোহনাও বারান্দার দিকে গেলো।
গিয়ে দেখে সাগর এর কোলে একটা বিড়াল।
সাগর মোহনাকে দেখে বললো,
এই বিড়াল টা আমার অনেক প্রিয়।
একে কখনো তাড়িয়ে দেবে না।
আর কোন কষ্টও দেবে না।

মোহনা মাথা নাড়িয়ে বললো হুম।

সাগর তখন মোহনার দিকে তাকিয়ে বললো আমার সাথে থাকতে হলে অনেক কিছু মেনে চলতে হবে।
পারবে তো মানতে?

মোহনা তখন বললো আমি সব জানি।
আমাকে ওসব বলতে হবে না।
আপনাকে অযথা ডিস্টার্ব করা যাবে না।
আপনার বই ধরা যাবে না।
আপনি যখন পড়াশোনা করবেন তখন বিরক্ত করা যাবে না।
আপনি রাগ করলে আমাকে কথা বলা যাবে না।
আপনি যেহেতু নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেন নি তাই আমাকে আপনার প্রথম প্রথম অসহ্য লাগবে।
সেজন্য আপনার থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে।
আর যেনো কি কি?
মনে পড়ছে না।

সাগর কোন কথা না বলে চুপ করে মোহনার দিকে তাকিয়ে থাকলো।।।

মোহনা তখন বললো নিশ্চয় ভাবছেন আমি এসব কি করে জানলাম?
সবকিছু আপনার বোন সামিরা বলেছে।
তাছাড়া আমি নিজেও জানি যে আপনি একটা আনরোমান্টিক ছেলে।
আপনি কাউকে কোনদিন ভালোবাসতে পারবেন না।
আমি সবকিছু শুনেই আপনাকে বিয়ে করেছি।
কারন আমি আপনাকে সেই ক্লাস সিক্স থেকেই চিনি।
আপনাকে আমার প্রথম দেখাতেই,,,,,,,,
মোহনা পুরো কথা শেষ না করতেই সাগর বিড়াল টা নিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো।
মোহনা তখন বললো আপনি আমার পুরো কথা টা না শুনেই চলে এলেন?
আপনাকে আমার কথা আজ শুনতেই হবে।
আপনি আমার কথাগুলো শুনলে অনেক চমকে যাবেন।

সাগর তখন তার কোলের বিড়ালটাকে জিজ্ঞেস করলো,
মোহনা তুই কি শুনতে চাস এই মেয়েটার আবোলতাবোল কথা?
তুই যদি শুনতে চাস তাহলে শুনবো।
মোহনা বিড়াল টার নাম শুনে হেসে উঠলো।
আর সাগর কে জিজ্ঞেস করলো আপনার বিড়ালের নাম মোহনা?
সাগর তখন বললো কেনো কোনো প্রবলেম?
মোহনা বললো না সমস্যা হবে কেনো?
আমার নামও মোহনা।
আপনার বিড়ালের নামও মোহনা।
তাই অবাক হচ্ছি।

সাগর আর কোন কথা না বলে বিড়াল টিকে বারান্দায় রেখে এলো।
তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লো।
মোহনা একা একা দাঁড়িয়ে আছে।
তখন সাগর বললো বোকার মতো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
বিছানায় এসো?
মোহনা সেই কথা শুনে বিছানায় বসলো।
সাগর তখন বললো আজ কি বিছানায় বসে বসেই ঘুমাবে?
শুয়ে পড়ো।

মোহনা তখন বললো আমি যদি আপনার বিছানায় ঘুমাই তখন আপনার সমস্যা হবে না?
যেহেতু আপনি আমাকে পছন্দ করেন না।
আমাকে বিয়ে করতে চান নি?

হঠাৎ সাগর মোহনার হাত ধরে টেনে তার পাশে শুয়ে দিলো আর বললো,
আমি তোমাকে একবারের জন্য বলেছি যে তোমাকে আমার পছন্দ হয় নি?
তোমাকে আমি বিয়ে করবো না।
তখন মোহনা বললো আপনার বোন,মা, দাদী সবাই তো এই কথায় বলছে।
এই বাড়িতে আসার পর থেকে এটাই শুধু শুনছি।
সাগর তখন বললো হ্যাঁ ওদের কে বলেছি এসব কথা।
সেজন্য ওরা তোমাকে বলেছে।

কিন্তু আমি তো তোমাকে একবারের জন্যও এসব কথা বলি নি?
বলেছি????
মোহনা সাগরের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না।

চলবে,,,,,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here