ক্রাশ পর্ব -২৫

#ক্রাশ
#পর্ব_২৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
আমি আর এভাবে বাড়িতে বসে থাকতে চাই না।আমি চাকরিতে জয়েন করতে চাই।সেজন্য আজকেই আমাকে রওনা দিতে হবে।
সাগর কথা গুলো বলছে আর তার কাপড় ব্যাগে তুলছে।
সাগরের কথা শুনে তার বাবা প্রচন্ড রাগ হলেন।
তার ছেলে এসব কি বলছে?
তার কত ইচ্ছা সাগর একদিন অনেক বড় একজন ইঞ্জিনিয়ার হবে।
কিন্তু সাগর পড়াশোনা বাদ দিয়ে হঠাৎ চাকরিতে জয়েন করতে চাচ্ছে কেনো?
তখন সাগরের বাবা বললেন আর তো কিছুদিন পরেই তোর রেজাল্ট বের হবে।
তারপরেই তো বিএসসি তে ভর্তি হতে হবে।
কিন্তু তুই বিএসসি টা কম্পিলিট নাই করতেই এখনি কেনো চাকরি করতে চাচ্ছিস?
সাগর তখন বললো,
আমাকে আর এ বাড়িতে থাকতে ইচ্ছা করছে না।
সেজন্য ভাবছি এ বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।
কিন্তু নিজের চলাফেরার জন্য তো টাকা লাগবে।
সেজন্য চাকরি করতে চাচ্ছি।
আর পড়াশোনা করবো না।
যতটুকু পড়েছি ওটাই এনাফ।
সাগরের বাবা তখন বললো,

পাগল হইছিস?
শেষ মুহুর্তে এসে পড়াশোনা বাদ দিতে চাচ্ছিস?
তাছাড়া বিএসসি টা কম্পিলিট না করলে এই চার বছরের কোর্সের কোন দাম ই নাই।
সব বৃথা যাবে।
সাগর তখন বললো,
তোমরা তো এটাই চেয়েছো।
যাতে আমার পড়াশোনা নষ্ট হয়।
সেজন্য তোমরা আমাকে বিয়ে করালে।
আবার তোমরাই ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো।
আমার মনের উপর কত টা প্রেসার ফেলছো একবার ভেবে দেখেছো?

সাগরের বাবা তখন বললো,
কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
সাগর বললো কিছু না।
তাছাড়া আমার কথার কোন দাম আছে নাকি?
আমার কথা তুমি কবে শুনেছো?
যে বাড়িতে আমার কথা কেউ শোনে সে বাড়িতে থেকে কি হবে?
সাগরের বাবা তখন বললো,
কোন কথা শুনি নি আমি?
সাগর তখন বললো,
বাবা আমাদের পরিবার টা যে এলোমেলো হয়ে গেছে তুমি কি সেটা বুঝতে পারছো না?
আমি আবার আগের মতো পরিবার টাকে গোছালো দেখতে চাই।
সাগরের বাবা সে কথা শুনে বললো কিসের এলোমেলো?
সব তো ঠিকই আছে।
–না ঠিক নাই।

দাদী আর মা সামিরার জন্য দিনরাত কান্নাঁকাটি করে।
কিন্তু তারা সাহস করে তোমাকে কিছু বলতে পারে না।
তুমি কোনদিন সেটা খেয়াল করেছিলে?
কিন্তু এগুলো আমার চোখে পড়ে।
আমাকে সেজন্য অসহ্য লাগছে বাড়ি টা।
কেমন যেনো আর আগের মতো শান্তি নাই বাড়িতে।
সাগরের বাবা সে কথা শুনে বললো,
তুই সামিরার কথা বলতে পারলি?
যে আমাদের মানসম্মানের এতো বড় ক্ষতি করলো তাকে নিয়ে তুইও ভাবছিস?.
–শুধু আমি না।
আমরা সবাই চাই সামিরাকে মাফ করে দেওয়া হোক।
কারন ও আমাদের বাড়ির মেয়ে।
ওর কিছু হলে সবার আগে আমাদেরই খারাপ লাগবে।
সাগরের বাবা তখন বললো না আমি ওকে জীবনেও ক্ষমা করবো না।
আর ওর মুখ ও দেখবো না।
এই বলে তিনি সাগরের মা আর দাদীকে ডাকতে লাগলেন?
তারা দুইজনই দৌড়ে এলো।
আর বললো,
কি হয়েছে?
কি হয়েছে?

সাগরের বাবা তখন বললো তোমরা নাকি সামিরার জন্য কাঁদো?
সামিরাকে মেনে নিতে চাচ্ছো।
সাগরের বাবার কথা শুনেই সাগরের মা বললো না তো।
কখন কাঁদলাম।
তাছাড়া তুমি যেখানে চাও না সামিরা এ বাড়িতে আসুক সেখানে আমরা কি করে চাইতে পারি?
সাগরের বাবা তখন সাগর কে বললো,
শুনলি তোর মায়ের কথা?
কি বললেন উনি?
সাগরের বাবা তখন সাগরের দাদীকেও জিজ্ঞেস করলেন।
সাগরের দাদীও সেম উত্তর দিলো।

সাগর বুঝতে পারলো তার বাবা সহজে মাথা নত করবে না।
আর তার মা আর দাদী জীবনেও মুখ ফুটে কিছু বলবে না।
তাকে অন্যভাবে ট্রাই করতে হবে।
তাই সাগর তখন তার বাবাকে বললো,
তুমি ওকে ক্ষমা করবে কি করবে না সেটা তোমার ব্যাপার।
তবে আমি কিন্তু এ বাড়ি থেকে সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছি।
এই বলে সাগর বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
সাগরের বাবা মা সবাই অনেক বাঁধা দিলো তবুও সাগর কে আটকাতে পারলো না।

কিন্তু যখন বাড়ি থেকে সাগরের বাবা আর দাদু বের হলো ঠিক সেই মুহুর্তে সাগর আবার বাড়িতে এলো।
সে ডাইরেক্ট তার মার রুমে গেলো।।
সাগরের মা তো সেই খুশি সাগর কে দেখে।
সাগর তখন তার দাদীকেও সেই রুমে আনলো।

সাগর দুইজনকে একসাথে করে বললো, তোমরা তখন বাবার সামনে মিথ্যে কথা বললে কেনো?
তোমরা সত্যি চাও না সামিরা আর না আসুক এ বাড়িতে?
সাগরের মা তখন বললো কোন মা এটা চাইবে বল তো?
কিন্তু তোর বাবার সামনে এটা বলার সাহস আমাদের নাই।
উনি যেটা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই হবে।

সাগর তখন হঠাৎ করেই বললো, তোমাদের কি সামিরাকে দেখতে ইচ্ছে করছে?
তোমরা কি চাও সামিরা আবার আমাদের পরিবারে ফিরে আসুক?
তারা দুইজনই বললো, হ্যাঁ।
চাই।
সাগর তখন তাদের কে বললো,
তাহলে আমার কথামতো কাজ করতে হবে তোমাদের।

–কি কাজ?
–তোমরা দুইজনই যে যার বাবার বাড়ি চলে যাবে।
আর আসবে না।
বাবা আর দাদু যদি ফোন করে তবুও আসবে না।
এইভাবে একদিন যাবে দুইদিন যাবে তোমরা যখন বাবার বাড়ি থেকে আসবে না তখন বাবা আর দাদু ঠিক নিতে যাবে তোমাদের।
তখন তোমরা বলে দেবে সামিরাকে না মেনে নেওয়া পর্যন্ত তোমরা আর আসবে না।
বাবা আর দাদু বাধ্য হয়ে তোমাদের কথায় রাজি হয়ে যাবে।

সাগরের মা সেই কথা শুনে বললো,
না না।
এরকম কাজ আমি জীবনেও করতে পারবো না।
ওনার মুখের উপর আমি জীবনেও এভাবে বলতে পারবো না।।
উনি অনেক রেগে যাবেন।
আমার উপর প্রচন্ড মন খারাপ করবেন।
সাগর তখন তার মা কে বললো,
মা এভাবেই তো সারাজীবন কাটিয়ে দিলে?
নিজের শখ বা ইচ্ছার কথা জীবনেও মুখ ফুটে বললে না?
কখনো বাবাকে বলেছিলে চলো আজ কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসি?
আজ এইটা খেতে ইচ্ছে করছে।
কেনো বলো না বাবাকে?
নিজের ইচ্ছাগুলো কেনো প্রকাশ করো না?
সাগরের মা তখন বললো,
তোর বাবা রাগী মানুষ।।
ওনার মুখের উপর দিয়ে কথা বলার সাহস আমার নাই।
তুই যেটা ভাবছিস সেটা জীবনেও হবে না।
আমি যদি বলি সামিরাকে না মেনে নেওয়া পর্যন্ত আমি আর বাড়ি ফিরবো না উনি কিন্তু ডাইরেক্ট বলে দিবেন দরকার নেই আর আসার।
সাগর তখন বললো,
কিন্তু আমার এরকম কিছু মনে হচ্ছে না।
কারন বাবা যতই রাগ দেখাক,তোমার উপর জোরে জোরে কথা বলুক এগুলো ওনার বাহিরের রুপ।
কিন্তু মনে মনে তো অবশ্যই ভালোবাসে।
কারন ভালো না বাসলে এতোদিন ধরে তোমার সাথে সংসার করে আসতেন না।
সাগরের মা সে কথা শুনে হেসে উঠলেন।
আর বললেন,তুই এতো বেয়াদব কবে থেকে হলি?
কি সব ভালোবাসার কথা বলছিস?
বাদ দে তো এসব।
আমি এসব করতে পারবো না।
সাগর তখন তার মায়ের হাত ধরে বললো,
প্লিজ মা এই কাজটা তোমাকে করতেই হবে।
আমাদের পরিবার টা আবার আগের মতো করার জন্য তোমাকে এসব করতেই হবে।
সাগরের মা তখন বললো আচ্ছা ঠিক আছে।
তাহলে তোর বাবা বাড়ি আসলে এ নিয়ে কথা বলবো।
সাগর তখন বললো বাবাকে আবার বলবে কেনো?
বাবাকে না বলেই চলে যাবে নানুবাড়ি।
আর দাদী তুমিও।
তারপর বাকি কাজ আমি করবো।
সাগরের দাদী তখন বললো,
আমাকে এসবের মধ্যে জড়াস না।
এই বুড়ো বয়সে এসব করলে সবাই গালমন্দ করবে।
সাগর তখন বললো যে যাই বলুক না কেনো আমাদের তাতে কি?
আমাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য বাবা আর দাদুকে ঠিক করা।
কারন এ পরিবারে শুধু বাবা আর দাদুর সিদ্ধান্তই শেষ কথা না।
তোমাদের দুইজনের ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে।
সারাবছর তো মুখ বুঝে অনেক সহ্য করলে এবার অন্তত মুখ টা খুলতে শেখো।
প্লিজ মা।
প্লিজ দাদী।
সাগরের মা আর দাদী কিছু না করতেই ভয় পাচ্ছে।
কে জানে কি হবে এর পরিনতি?

সাগর তার মা আর দাদীকে এসব বুদ্ধি শিখে দিয়ে আবার বাড়ি থেকে বের হলো।
সাগরের মা বললো, তুই আবার কই যাচ্ছিস?
সাগর তখন বললো মা,তোমরা তোমাদের কাজ করো আর আমি আমার কাজ করতে গেলাম।
সাগরের মা সাগরের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলেন না।

এদিকে মোহনার কলেজ এখনো খোলে নি।
কিন্তু সে কলেজ খোলার আগেই মেসে উঠেছে।
সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাটায়,তার রুমমেট দের সাথে আনন্দ ফুর্তিতেই দিন পার করছে।
কিন্তু তবুও তার কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে।
একদম কিছু ভালো লাগছে না।
অথচ আগে এরকম কিছু মনে হয় নি।
তার বার বার সাগরের কথা মনে পড়ছে।
মোহনা ফোন টা বের করে সাগর কে ফোন দিতে ধরলো।
পরে আবার মনে হলো না, ফোন দেওয়া ঠিক হবে না।
যেহেতু মোহনা নিজেই শর্ত দিয়েছে ফোন দেওয়া,কথা বলা এমনকি দেখা করাও যাবে না।
যতদিন না তার ফ্যামিলির লোকজন ঠিক হচ্ছে।

হঠাৎ মোহনাকে কিছু না বলেই মেসে তার ভাবি আসলো।
মোহনা তার ভাবি কে দেখে একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেলো।
তার ভাবি রুমে ঢুকেই বললো রেডি হয়ে নে।
তোকে নিয়ে একটু বাহিরে যাবো।
মোহনা বললো মাত্র আসলে,
আর এসেই আবার কোন বাহিরে যাবে?
তখন তার ভাবি বললো বেশি প্রশ্ন করিস না তো?
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
মোহনা কিছুই বুঝতে পারলো না।
তার ভাবি মাত্র আসলো।
আর এসেই এরকম তাড়াহুড়ো কেনো করছেন?
তাকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগই দিলো না।

মোহনার হাত ধরে তার ভাবি বাহিরে চলে এলো।
তারপর একটা সিএনজি তে উঠে কই যেনো নিয়ে গেলো তাকে।
মোহনা শুধু বলছে কই যাচ্ছি আমরা?
তার ভাবি বললো কেনো ভয় করছে?

–না না ভয় করবে কেনো?
এভাবে হঠাৎ করে কই নিয়ে যাচ্ছো তাই জানতে ইচ্ছে করছিলো।
মোহনার ভাবি বললো এই তো সামনেই যাবো।

কিছুক্ষন পর তারা সিএনজি থেকে নামলো।
মোহনার ভাবি মোহনাকে নিয়ে একটা বাসায় নিয়ে গেলো।
মোহনা বুঝতে পারলো না কার বাসা এটা?
কিন্তু রুমের ভিতর ঢুকতেই দেখে অনেক সুন্দর করে সাজানো ঘর টা।
আর সেই সাজানো ঘরে সাগর বসে আছে।

মোহনা সাগর কে দেখামাত্র বললো তুমি?
তুমি এখানে কি করো?
আর ভাবি তুমি কেনো আমাকে এখানে নিয়ে এলে?
মোহনার ভাবি বললো,আজ থেকে তোরা এই বাসাতেই থাকবি।
তুই আর মেসে থাকতে পারবি না।
মোহনা তখন বললো,
ভাবি কি বলছো এসব?
মোহনার ভাবি মোহনার কান ধরে বললো,
এখনো বুঝিস নি?
সাগর কে কি কারনে এমন কষ্ট দিচ্ছিস?
বেচারার মুখ চোখের দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখেছিস?
তুই নাকি ওকে ভালোবাসিস?
এই তোর ভালোবাসা?
বেচারা একটা ভুল করেছে তার জন্য ও অনুতপ্ত।
তাই বলে তুই ওকে ক্ষমা করে দিবি না?
এভাবে ওকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিস কেনো?
ভালোবাসার মানুষ কে এভাবে কষ্ট দিতে নেই।
ওকে ক্ষমা করে দিয়ে দুইজনে আবার এক হয়ে যাও।

মোহনা তখন বললো ভাবি তুমি কিছু জানো না সেজন্য এভাবে বলছো।
মোহনার ভাবি বললো আমি সব জানি।
সাগর বলেছে আমাকে।
তুই ওর বাবা মার কথা ভাবছিস তো?
কোন চিন্তা করিস না।
ওনারা একদিন ঠিক তাদের ভুল বুঝতে পারবে।
আর তোকে আবার ঘরে তুলে নিবে।
মোহনা তখন বললো, আমি তো সাগরকে এটাই বলেছি।
যে ওনারা যেদিন আমাকে নিজে এসে নিয়ে যাবে সেদিন তার বাড়ি যাবো।
মোহনার ভাবি মোহনার মাথায় একটা চড় দিয়ে বললো যদি ওনারা এক দুই বছরেও ঠিক না হয় তাহলে কি তুই ও এক দুই বছর এভাবে ওর থেকে দূরে থাকবি?
তোদের নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক আগে ঠিক কর।
তারপর বাকিদের কথা ভাবিস।
মোহনা আর কোন তর্ক করলো না।
কারন তার ভাবির সাথে কথায় সে পেরে উঠতে পারবে না।
সাগর একবারের জন্যও মোহনাদের রুমে আসলো না।
এদিকে মোহনা আর ভাবি সেই থেকে গল্প করেই যাচ্ছে।

কিছুক্ষন পর ভাবি সাগর কে ডাক দিলো আর বললো তোমার বউ কে হাতে তুলে দিয়ে গেলাম।
আর যেনো কোন ঝামেলা না হয়।
সাগর তখন বললো সেটা আপনার ননদিনী কে বলে যান।
কারন ঝামেলা টা ও শুরু করেছে।
মোহনা বললো আমি শুরু করেছি না তুমি?
তুমি যদি আমার বিশ্বাস এভাবে না ভাংতে তাহলে এসবের কিছুই হতো না।
সাগর তখন বললো কেউ ই চায় না তার বোন কে অযোগ্য কোন পাত্রের হাতে তুলে দিতে?.

সেই কথা শুনে মোহনা রেগে গেলো।
তুমি অযোগ্য কাকে বললে?
রনির যে যোগ্যতা আছে তোমার তার একবিন্দুও নাই।
ও সামিরাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
আমি দেখেছি ওদের ভালোবাসা।
সামিরা যখন তোমাদের কথা মনে করে কাঁদছিলো রনি তখন কি সুন্দর করে ওর মাথা টা বুকের মধ্যে নিয়ে তাকে বুঝাচ্ছিলো যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাগর তখন বললো আমি তোমাকে ভালোবাসি না?
আমি এভাবে বুকের মধ্যে নিয়ে আদর করি নি?
–না করো নি?
মোহনার ভাবি হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলেন।
তিনি বললেন আমি যাওয়ার পর তোরা ঝগড়া করিস।
এখন অন্তত একটু শান্ত হ।
মোহনা তখন বললো তুমি দেখলেই তো কে আগে ঝগড়া শুরু করলো?
মোহনার ভাবি তখন বললো দুইজনই এক তোরা।
এই বলে মোহনার ভাবি চলে গেলেন।

ভাবি চলে যাওয়ার সাথে সাথে মোহনা সাগর কে বললো তুমি ভাবি কে কি কি বলেছো?
তুমি এতো নির্লজ্জ কেনো?
ভাবি এখন কি ভাববে?

–যা সত্যি তাই বলেছি।
তুমি আমাকে হাত পর্যন্ত ধরতে দিচ্ছো না।
কথা বলতে দিচ্ছো না।
এমন কি দেখাও করতেও বারন করে দিয়েছো।
সেজন্য ভাবি এই আইডিয়া টা দিয়েছে।

মোহনা তখন বললো একই বাসায় থাকবো তার মানে এটা ভেবো না সব ঠিক হয়ে গেছে।
সব আগের মতোই থাকবে।
সাগর তখন মোহনার কাছে গিয়ে বললো আরেকবার বলো কথা টা।
–কেনো?
সাগর মোহনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর মোহনা পিছিয়ে যাচ্ছে।
সাগর তখন মোহনার হাত ধরে দিলো এক টান।
তারপর তাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
একেবারে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো মোহনাকে।
মোহনা সেজন্য একটুও নড়তে পারছিলো না।
সাগর অনেকক্ষন মোহনাকে জড়িয়ে ধরে থাকলো।
মনে হলো দুনিয়ার সব শান্তি এখানেই আছে।
তার আর ইচ্ছা করছে না তাকে ছেড়ে দিতে।
তবুও সে মোহনাকে ছেড়ে দিলো।
কারন সে জোর করে তাকে পেতে চায় না।
জোর করে কিছু করার ইচ্ছা থাকলে অনেক আগেই করতো।
সাগর মোহনাকে ছেড়ে দিয়ে যখন চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি মোহনা দৌঁড়ে এসে তাকে আবার জড়িয়ে ধরলো।
আর সাগরের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে মাথা টা নিচু করে অনবরত কিস করতে লাগলো।
সাগর তা দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।
সে মোহনাকে থামিয়ে দিয়ে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে নিলো।
তারপর তাকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে গেলো।
দুইজন দুইজনার দিকে নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আছে।
মনে হলো অনেক বছর পর তাদের দেখা।
সাগর ঘরের বড় লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো।
এই ডিম লাইটে মোহনাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিলো।
সে মোহনার পুরো শরীরে আদর করতে লাগলো।
ঠিক সেই সময় সাগরের মা ফোন দিলো।

সাগর ফোন ধরলো না।
কারন ফোনের রিংটোন তার কানে এসে পৌঁছায় নি।
সাগরের মা বার বার দিতেই আছে।
তখন মোহনা বললো দেখ তো কে ফোন দিচ্ছে?
এই বলে মোহনা সাগর কে সরিয়ে দিয়ে ফোন টা হাতে নিলো।
সাগর তখন মোহনাকে আবার কাছে টেনে নিলো আর মোহনার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে রিসিভ করলো।

ও পাশ থেকে তার মা বললো,
বাবা তুই এসব কি বুদ্ধি দিলি?
তোর বাবা তো রেগে আগুন হয়ে আছে।
তোকে বললাম না উনি এরকম লোক নয়।
ওদিকে নাকি তোর দাদু বলে দিয়েছে আর যেনো বাড়ি না আসো।
গিয়েছো যখন ওখানেই থাকো।
সাগর তখন বললো মা কিছুই হবে না।
প্রথমদিন তো একটু রাগ দেখাবেই।
কালকের মধ্যেই দেখবে তোমার কথা মেনে নিয়ে তোমাকে বাড়ি নিয়ে আসবে।
সাগরের মা তখন বললো, আমি একা একা বাড়ি চলে গেলাম।
এসব ঝামেলার মধ্যে আমি নেই।
সাগর তখন বললো, তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?
–ভয় পাচ্ছি কি সাধে?
ওনারা খাবে কোথায়?
রান্না করবে কে?
ওনার হাই প্রেসার।
বেশি রাগ হলে যদি খারাপ কিছু হয়?
তার দায়ভার কে নেবে?

সাগর তখন বললো যা মন চায় করো।
এই বলে সে ফোন কেটে দিলো।

সাগরের মুড টায় নষ্ট হয়ে গেলো।
সে ভেবেছিলো বাবা যদি একবার সামিরাকে মাফ করে দিয়ে বাড়ি আনতো তখন মোহনাকেও মেনে নিতো।
কিন্তু তার মা আর দাদী কে দিয়ে এসব কিছুই হবে না।
সাগরের মন খারাপ দেখে মোহনা বললো কি হয়েছে?
সাগর মোহনাকে সব কথা খুলে বললো।
মোহনা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলো।
কারন মা আর দাদীকে দিয়ে যে এই কাজ হবে না সে ভালো করেই জানে।
তারা অনেক বেশি ভয় করে স্বামীকে দেখে।
চোখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারে না।
কি আর কথা বলবে?

পরের দিন সাগর বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য তার মাকে ফোন দিলো।
তার মা ফোন রিসিভ করতেই সাগর বললো,
মা কি খবর এখন?
বাবা কি আগের মতোই রেগে আছে?
না একটু শান্ত হয়েছে?.
কিন্তু সাগরের মা কোন উত্তর দিলো না।
সাগর ভেবেছে তার মা রেগে আছে তার উপর তাই সাগর তখন বললো,
মা আমার উপর এই রাগ টা না দেখিয়ে বাবার উপর দেখাও।
বাবার সাথে ভয়ে ভয়ে কথা না বলে একটু জোরে জোরে কথা বলবে।
যাতে বাবা বুঝতে পারে তুমি আর তাকে ভয় করো না।
শুধু বাবার কথামতোই এখন সব চলবে না,তোমার মতামতের ও একটা গুরুত্ব আছে।

তখন ওপাশ থেকে উত্তর এলো তুই তাহলে এদের লিডার?
আসল ইবলিশ।
তাই তো বলি তোর মা হঠাৎ করে এমন করতেছে কেনো?
বিয়ের এতোবছরেও যাকে একদিন মাথা উঁচু করে কথা বলতে দেখলাম না আজ সে কি করে এসব কথা বলার সাহস পেলো?
সাগর তার বাবার কন্ঠ শুনে বললো হ্যালো শোনা যাচ্ছে না।
হ্যালো মা।
সাগরের বাবা তখন বললো শোনা ঠিকই যাচ্ছে।
এখন ধরা পড়ে গিয়ে না শোনার ভান করছিস?
তুই শুধু একবার বাড়িতে আয়।

চলবে,,,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here