ক্রাশ পর্ব -২৬

#ক্রাশ
#পর্ব_২৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
সাগর মোহনার সাথে রোমান্টিক সময় কাটাবে বলে আলাদা বাসা নিয়েছে।
কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে তার মন থেকে রোমাঞ্চ নামক শব্দ টা উঠে গেলো।
সে তার বাবার ভয়ে কোন কাজেই মন বসাতে পারছিলো না।
সে যে এভাবে ধরা পড়ে যাবে ভাবতেও পারে নি।
তার মাকে সে এতো করে বোঝালো দুই তিন দিন একটু নানুর বাড়ি গিয়ে থাকতে।
কিন্তু তিনি একদিন থেকেই বাড়ি চলে এসেছেন।
সাগর তো আর জানতো না যে তার মা এখন বাড়িতে।
তার বাবা যে এখন কি করবে তাকে, ভাবতেই তার ভীষণ ভয় লাগছে।

মোহনা সাগর কে এরকম চুপচাপ থাকা দেখে বললো তোমার হয়েছে টা কি?
আমার সাথে ঠিক করে কথাও বলছো না।
হঠাৎ করে কি হলো তোমার?
তোমার প্রেম ভালোবাসা হঠাৎ করে কোথায় উধাও হয়ে গেলো?
এই তো কিছুক্ষন আগেই পাগলামি শুরু করে দিয়েছিলে?

সাগর তখন মোহনাকে বললো রাখো তোমার প্রেম ভালোবাসা।
আমি ভাবছি আর বেঁচে থাকতে পারবো কিনা?
যদি বেঁচে থাকি তখন ওসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভেবে দেখবো।
মোহনা তখন বললো কি হয়েছে?
তুমি এভাবে বলছো কেনো?
আর কি সব আজেবাজে কথা বলছো?

সাগর তখন মোহনাকে সব বলে দিলো যে সে কিভাবে তার বাবার কাছে ধরা খেয়েছে।

মোহনা সেই কথা শুনে বললো পাগল তুমি?
কার সাথে কথা বলছো সেটা নাই শুনতেই নিজের বকবকানি শুরু করে দিয়েছো?

–আমি জানতাম নাকি মা বাড়ি এসেছে।
আর বাবা নিজেই যে মার ফোন টা রিসিভ করেছে সেটা ভাবতেই পারি নি।
মোহনা তখন বললো এভাবে সারাবছর ভয় করে চললে হবে নাকি?
মনে একটু সাহস আনো।
তোমার মাকে আবার ফোন করো।
আর তাকে জিজ্ঞেস করো এখন তোমার বাবা কেমন মুডে আছে?
তোমার উপর সত্যি সত্যি রাগ করে আছে নাকি?

সাগর সে কথা শুনে তার মাকে আবার ফোন দিলো।।
আর তার মা সাথে সাথেই রিসিভ করলেন।
সাগর বললো মা তুমি এটা কি করেছো?
তোমাকে তো বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছি।
তবুও এসেছো কেনো?

সাগরের মা তখন বললো আমি বাড়িতে আসি নি তো?
তোর বাবা নিজেই তোর নানুবাড়ি এসেছে।
ভাবলাম তোকে এই কথা টা বলার জন্য ফোন করবো।
কিন্তু তুই তো তার আগেই ধরা খেলি।

সাগর সেই কথা শুনে বললো,
আচ্ছা ওসব বাদ দাও।
এখন বলো তুমি কি কি বললে বাবাকে?
তখন তার মা বললো,
এ নিয়ে আমরা পরে কথা বলছি।
রাখি এখন।
ব্যস্ত আছি।
সাগর তখন বললো আগেই রাখো না ফোনটা।
আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
তুমি ঠিক করে বলেছো তো যে সামিরাকে না মেনে নেওয়া পর্যন্ত তুমি আর বাড়ি যাবে না?

ওপাশ থেকে উত্তর এলো না এখনো বলে নি।
এই মাত্র তোর থেকে শুনলাম।
বাবা!!!
বাবা তুমি?
সাগরের বাবা কে দেখেই সাগরের মা ফোন রাখতে চাইলো।
কিন্তু সাগর সেটা না শুনে আবার সেই একই কথা বলতে লাগলো।
সে এবারও যখন ধরা খেলো তখন বললো,
তুমি আবার মায়ের ফোন ধরেছো?
কেনো বাবা?
কেনো?
বার বার আমার সাথে কেনো এমন হচ্ছে?
সাগরের বাবা তখন বললো,
তোর মা কে কি সব কূটনামি শিখাচ্ছিস?
সাগর সে কথা শুনে বললো,আচ্ছা বাবা রাখি।
পরে কথা বলবো।

তখন তার বাবা বললো এই খবরদার ফোন রাখবি না।
ফোন রাখলে তোর কপালে আরো খারাপ কিছু হবে।
তুই আগে বল হঠাৎ করে তুই সামিরার পিছনে পড়ে আছিস কেনো?
তুই নিজেই সামিরাকে রনির কাছ থেকে ধরে নিয়ে এলি।
নিজেই অন্যখানে ওর বিয়ের ব্যবস্থা করলি।
কিন্তু আজ হঠাৎ সামিরার পক্ষ নিচ্ছিস কেনো?
হঠাৎ করে তোর কি হলো?
সাগর চুপচাপ থাকলো।
কারন সে কি উত্তর দেবে বুঝতে পারলো না।
এদিকে তার বাবা হ্যালো হ্যালো করতেই আছে।

মোহনা তখন সাগর কে বললো এভাবে চুপ করে আছো কেনো?
তোমার বাবাকে সত্যি কথা টা বলে দাও।
যা হবার হবে।
এতো ভয় পেলে কোনদিনও তুমি সত্য কথা বলতে পারবে না।

সাগর তখন বললো,
বাবা সত্যি কথা টা শুনলে ভীষণ রেগে যাবে।
এমনিতেই উনি আমার উপর রেগে আছেন।
মোহনা সাগরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
আর মাথা নেড়ে ইশারা করলো তাড়াতাড়ি বলো।
সাগর মোহনার কথা শুনে বললো,

বাবা আমি সামিরার বিয়ে তে গিয়েছিলাম।
আমি চাই তুমিও ওদের মেনে নাও।

–কি বললি তুই?
আবার বল দেখি।
–না কিছু না।
এই বলে সাগর ফোন কেটে দিলো।

তখন মোহনা নিজেই আবার ফোন দিলো।
আর সাগরের হাতে ফোন দিয়ে বললো,
আজ তোমাকে বলতেই হবে।
সাগর তখন ভয়ে ভয়ে বললো,

বাবা আমি সামিরার বিয়ে তে গিয়েছিলাম।
ওর শশুড়বাড়ির লোকজনের ব্যবহার দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি।
সেজন্য আমার মনে হলো সামিরা কোন ভুল করে নি।
ওরা সবাই সামিরাকে অনেক ভালোবাসে।
সামিরা অনেক সুখে আছে।
এখন আমাদের উচিত ওদের সম্পর্ক টাকে মেনে নেওয়া।

সাগরের কথা শুনে তার বাবা আর একটা কথাও বললেন না।
তিনি নিজেই এবার ফোন রেখে দিলেন।

সাগর তখন মোহনাকে বললো,
এখন কি হবে?
বাবা মনে হয় ভীষণ রেগে গেছে।
রাগ করে ফোনটাই কেটে দিলো।
মোহনা তখন বললো,
রাগ করুক।
কিন্তু উনি তো সত্য কথা টা জানতে পারলেন।
এখন দেখি কি করে উনি?
সাগর বুঝতে পারলো এখন অনেক কিছু হবে।
বাবা নিশ্চয় রাগে পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছে।

সাগরের বাবা রাগে একটা কথাও বলতে পারছেন না।
তিনি চিৎকার চেঁচামেচি ও করতে পারছেন না।
কারন তিনি এখন তার শশুড় বাড়িতে আছেন।
কিন্তু হঠাৎ সাগরের মা সাগরের বাবার হাত ধরে বললেন,

আমি জীবনেও আপনার মুখের উপর দিয়ে কোন কথা বলি নি।
কিন্তু আজ বলতে হচ্ছে।
জানি আপনি অনেক রেগে যাবেন।
কিন্তু আজ কেনো জানি বলতে ইচ্ছে করছে।
আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো দয়া করে উত্তর দিবেন?

সাগরের বাবা সাগরের মায়ের এমন কথা শুনে অনেক আশ্চর্য হলেন।
কি কথা বলতে চাচ্ছেন সাগরের মা?
আর এভাবেই বা বলছেন কেনো?

সাগরের মা তখন বললেন,
আমরা দুইজন কি একে অপরের থেকে আলাদা থাকতে পারবো?
সাগরের বাবা তখন বললো কি বলতে চাচ্ছো?
ক্লিয়ার করে বলো।
এসব ন্যাকামো আমার ভালো লাগে না।

সেই কথা শুনে সাগরের মা বললেন,
আমরা আগেকার মানুষ সেজন্য ছেলেমেয়েদের প্রেম ভালোবাসার কথা শুনলেই মনে হয় এরা নষ্ট হয়ে গেছে।
এদের চরিত্র খারাপ হয়ে গেছে।
কিন্তু আসলে ভালোবাসা জিনিস টা মোটেও খারাপ কিছু না।
এই যে আমরা দুইজন সংসার করছি তা কিন্তু দুইজন দুইজনার প্রতি ভালোবাসার কারনেই করছি।
এখন যতো কিছুই হোক না কেনো আমরা আলাদাভাবে থাকতে পারবো না।
তেমনি সামিরাও রনিকে সেইরকম ভালোবাসে।
সেজন্য ও তাকে ছেড়ে আমাদের কাছে আসতে পারে নি।
কিন্তু তাই বলে যে আমাদের ভালোবাসে না সেটা কিন্তু নয়।
সামিরা আমাদের ও ভালোবাসে।
আমরা অনেক বড় ভুল করেছি।
কিন্তু এখন আমাদের উচিত এই ভুল টা শুধরে নেওয়া।

সাগরের বাবা তখন বললো,
এসব কথা তোমাকে কে বলেছে?
তুমি হঠাৎ করে ভালোবাসা নিয়ে এতো কিছু বলছো কেনো?

সাগরের মা তখন বললো, যেই বলুক না কেনো? কথাগুলো সত্যি কিনা?
সাগরের বাবা কোন উত্তর দিলেন না।
তখন সাগরের মা বললেন আমি নিজেও আগে এতো গভীরভাবে চিন্তা করি নি।
আমিও ভাবতাম সামিরা ভুল করেছে।
কিন্তু সে কোন ভুলই করে নি।
সে তার ভালোবাসার মানুষ কে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না দেখে এই কাজ টা করেছে।
এসব কথা শুনে তো সাগরের বাবার রাগ হওয়ার কথা।
চিৎকার চেঁচামেচি করার কথা।
কিন্তু তিনি কোন রিয়েক্টই করলেন না।
হয় তো তিনিও কিছু টা বুঝতে পেরেছেন।

পরের দিন সাগরের মা সাগর কে ফোন দিলেন।
সাগর তার মায়ের ফোন করা দেখে বুঝতে পারলো নিশ্চয় মারাত্মক কিছু হয়েছে।
বাবা হয় তো রাগ করে তুমুল ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।

সাগরের মা সাগর কে ফোন করে বললো,
তুই যেখানে আসিস সেখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে আয়।
এক মুহুর্ত ও দেরী করিস না।

–কেনো কি হয়েছে মা?
বাবা ঠিক আছে তো?
তোমার কিছু হয় নি তো?

সাগরের মা তখন বললো, না কারো কিছু হয় নি।
অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটেছে।

–কিসের অবিশ্বাস্য ঘটনা?
প্লিজ মা একটু ক্লিয়ার করে বলো।

সাগরের মা তখন হাসতে হাসতে বললো,বরফ গলে পানি হয়েছে।
তোর কথা গুলো অনেক কাজে লেগেছে।
তোর বাবা ভালোবাসার বিস্তারিত কথা শুনে একেবারে নরম হয়ে গেছে।
তিনি কাল থেকে কোন রিয়েক্ট ই করছেন না।

সাগর তখন বললো হয় তো বেশি রাগের কারনেই এমন নিরব হয়ে আছেন।
তুমি আর কিছু বলো না মা।
পরে আবার উলটো কিছু হয়ে যাবে।

–না,না।
তেমন কিছুই হবে না।
বুঝতে পারছি উনি ওনার ভুল বুঝতে পারছেন।
তুই এক কাজ কর,সামিরাকে ফোন দিয়ে বল তোর বাবার কাছে যেনো এখনি একটু ফোন দেয়।

–তুমি পাগল হয়ে গেছো মা?
এই সময়ে সামিরার গলা শুনলে বাবা অনেক রাগ হবে।
এমনিতে কাল থেকে উনি অনেক বেশি রেগে আছেন।

সাগরের মা তখন বললো বলেই দেখ না?
আমি তো ওনাকে চিনি।
মনে হচ্ছে না উনি রেগে আছেন।

সাগর তার মায়ের কথা শুনে সামিরাকে ফোন দিলো।
আর তাকে সব খুলে বললো।
সামিরা সাগরের কথা শোনামাত্র তার বাবাকে ফোন দিলো।

–হ্যালো বাবা।
কেমন আছো?
–কে?
–বাবা আমাকে ভুলে গেছো?
কন্ঠ শুনেও চিনতে পারছো না?
–তুই কোন শাসনে ফোন দিয়েছিস?
তোর সাহস তো কম না?
–বাবাকে ফোন দিতে আবার সাহস লাগে নাকি?
–চুপ কর।
তোর মুখে বাবা ডাক শুনতে চাই না।
–তুমি না শুনতে চাইলেও যে এই বন্ধন মিথ্যে হয়ে যাবে না বাবা।
আমি ভুল করেছি।
কিন্তু এর কি কোন ক্ষমা নেই?
আমি তোমাদের ছাড়া ভালো থাকতে পারছি না।
–মিথ্যে কথা।
তুই আমাদের মোটেও ভালোবাসিস না।
ভালোবাসলে অচেনা এক ছেলের সাথে এভাবে চলে যেতি না।
–এখন কি করে বোঝাবো তোমাদের এটা?
আমি তোমাদের কত টা ভালোবাসি।
মা কি তোমাকে বিয়ের আগে চিনতো?
তিনিও তো অচেনা কোন ছেলেকে বিয়ে করেছেন।
–চুপ কর।
বেয়াদব মেয়ে।
–আজ আমি চুপ করবো না।
আজ তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে।
আমি আমার শশুড় বাড়িতে অনেক সুখে আছি।
কিন্তু তবুও আমি শান্তি পাচ্ছি না।
একটি বার আমি একটু তোমাদের দেখতে চাই।
তুমি প্লিজ একবার একটু আসবে আমার শশুড়বাড়ি?
–কি বললি তুই?
তোর সাহস দেখি অনেক বেশি হয়ে গেছে।
–প্লিজ বাবা শুধু একবার আমাকে এসে দেখে যাও।
প্লিজ।।।
এই বলে সামিরা ফোন রেখে দিলো।

সামিরার বাবা মেয়ের সাথে কথা বলে কেমন জানি এক শান্তি অনুভব করলেন।
তিনি সাগরের মা কে ডাকতে লাগলেন।
সাগরের মা দৌঁড়ে এলো।
আর বললো কি হয়েছে?
তখন সাগরের বাবা বললেন,
আজ কেমন জানি আনন্দ অনুভব হচ্ছে।
বুঝতে পারছি না কেনো এমন হচ্ছে।
সাগরের মা বললেন কেনো?
কি হয়েছে?
–সামিরা ফোন দিয়েছিলো।
অনেক দিন পর ওর মুখে বাবা ডাক শুনে ওর প্রতি সব রাগ নিমিষেই চলে গেলো।
বুঝতে পারলাম না কিছু।
কেনো এমন হলো?
ওর উপর তো আমার রাগ করার কথা।
ওকে ধমক দেওয়ার কথা।
কিন্তু সেরকম কিছুই করলাম না।
তখন সাগরের মা বললেন,
সামিরা যত ভুল ই করে না কেনো ও কিন্তু তোমারই মেয়ে।
সেজন্য ওর প্রতি তুমি যতই রাগ দেখাও না কেনো সে রাগ বেশিক্ষন থাকতেই পারে না।
সাগরের বাবা কোন কিছু না বলে চুপ করে থাকলেন।

হঠাৎ তখন সাগরের মা বললেন সামিরা কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
চলো তো একটু দেখে আসি।
সাগরের বাবা বললো,
কি বলছো তুমি?
তোমার সাহস দেখি আজকাল অনেক বেশি হয়েছে।

–এখানে সাহসের কি আছে?
আমি আমার মনের কথা তোমাকে বললাম।
এখন সেটা পূরন করা তোমার দায়িত্ব।
–মানে কি?
কি বলছো এসব?
–স্বামী স্ত্রীর মাঝের সম্পর্ক এই রকম হওয়া উচিত।
কিন্তু আমি সেটা আগে বুঝি নি।
এখন আমার চোখ খুলে গেছে।
সেজন্য এখন আমার মন যেটা চাইবে আমি সেটাই বলবো।
সাগরের বাবা তখন বললো, তুমিও বেয়াদব হয়ে গেছো।
এতোদিন জানতাম সন্তানেরা তাদের বাবা মার থেকে আদব কায়দা শেখে।
কিন্তু আজ দেখছি তোমার সন্তানের থেকে তুমি বেয়াদবি শিখছো।।
–এগুলোকে বেয়াদবি বলে না।
এটা হলো একটা শিক্ষা।
এতোদিন আমার চোখ বন্ধ ছিলো।
আজ সেটা খুলে গিয়েছে।
এতোদিন মনের কথা প্রকাশ করতে ভয় পাইতাম।
কিন্তু আজ কেনো জানি সব কথা প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে।।
আমার সাগর যে এতো কথা জানে সত্যি আমার জানা ছিলো না।
ও আমাকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে।
শুধু যে তোমার সিদ্ধান্তেই সব কথা হবে তা না আজ থেকে আমার মতামতেরও গুরুত্ব দিতে হবে।
–যদি না দেয়?
–সেটা তোমার ব্যাপার।
আমার যেটা মন চাইবে আমি সেটাই করবো।
আমার এখন ইচ্ছা করছে মেয়ের শশুড় বাড়ি যেতে।
আমি তাই এখন সেখানেই যাবো।

হঠাৎ তখন সাগরের বাবা বললো,
এই দাঁড়াও?
এইভাবে খালি হাতে কই যাচ্ছো?
প্রথমবার মেয়ে জামাই এর বাড়ি যাচ্ছো,
মেয়ে আর মেয়ের জামাই এর জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে না?
সাগরের মা তখন হেসে বললো হ্যাঁ তা তো কিনতেই হবে।
আমি যাওয়ার সময় কিনে নিয়ে যাবো।
সেই কথা শুনে সাগরের বাবা বললো,
তুমি ওসব একা একা কিনতে পারবে না।
চলো আমি কিনে দিচ্ছি।
সাগরের মা সেই কথা শুনে সাগরের বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো।

–কি দেখছো ওভাবে?
আমি কিন্তু যাচ্ছি না।
তাছাড়া আমাদের পরিবারের তো একটা সম্মান আছে।
আজেবাজে জিনিস নিয়ে গেলে বদনাম হবে না?
সেজন্য কেনাকাটায় হেল্প করছি।

সাগরের বাবা নিজেই সব কেনাকাটা করলেন।
তারপর তিনি সাগরের মা কে যেতে বললেন।

তখন সাগরের মা বললো,
এভাবে একা একা যাওয়া যায় নাকি?
তুমি যেহেতু যাবে না তাহলে মাকে নিয়ে যাই আমি।
এই বলে সাগরের মা তার শাশুড়ী কে ফোন দিলেন।

তা দেখে সাগরের বাবা বললো,
শুধু মাকে ফোন করলে?
বাবাকেও করো।
দুইজনই তাহলে যাক।
সাগরের মা তখন বললো তোমার বাবাকে নিয়ে তুমি যেও।
আমি শুধুমাত্র আমার শাশুড়ী কেই নিয়ে যাবো।
এই বলে সাগরের মা যেতে ধরলেন।
সাগরের বাবা বললো না না তা হবে না।
দাঁড়াও আমি বাবাকে ফোন দেই।
এই বলে সাগরের বাবা সাগরের দাদুকে ফোন দিলো।

কিছুক্ষন পর সাগরের দাদী আর দাদু আসলো।
সাগরের মা তাদের কে নিয়ে চলে যেতে ধরলো।

তখন সাগরের বাবা বললো তোমরা একা একা এসব মালপত্র নিয়ে কিভাবে যাবে?
চলো বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
আমি কিন্তু বাড়ির ভিতর যাবো না।
সাগরের মা তখন বললো আচ্ছা ঠিক আছে।
বাড়ি পর্যন্ত গেলেই হবে।
কারন এগুলো বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।

তখন সাগরের দাদু আর দাদী বললো আমরা যাচ্ছি কোথায়?
সেটা তো আগে বলবে?
সাগরের মা বললো বাবা একটু ধৈর্য্য ধরুন।
গেলেই বুঝতে পারবেন।

সবাই একসাথে সামিরার বাড়ি গেলো।
কিন্তু সামিরার বাবা ভিতরে যেতে চাইছিলেন না।
হঠাৎ সামিরা বাড়ির ভিতর থেকে দৌড়ে এসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
মুহুর্তের মধ্যে সামিরার বাবার সব রাগ অভিমান দূর হয়ে গেলো।
দুইজনের চোখেই পানি।
পিছনে রনি দাঁড়িয়ে আছে।
সে সামিরার বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে ধরলো।
কিন্তু সামিরার বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
কিছুক্ষনের মধ্যে পরিবেশ টা ভালোবাসায় ভরে গেলো।

সামিরা তার বাবার হাত ধরে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেলো।
এদিকে সামিরার দাদী আর দাদু দুইজন দুইজনার দিকে দেখতে লাগলো।
কারন তারা স্বপ্নেও ভাবে নি সবাই মিলে সামিরার বাড়িতেই যাচ্ছে।

বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখে সাগরও এসেছে সেখানে।
সাগর কে একা দেখে তার মা বললো,তুই একাই যে?
মোহনা কোথায়?
সাগর তখন বললো ও আসে নি।
সেই কথা শুনে সাগরের বাবা বললো তুমি মোহনার কথা বলছো কেনো?
তাছাড়া সাগরের সাথে তো মোহনার ডিভোর্স হওয়ার কথা।
আর তুমি না বলেছিলে লিমার সাথে সাগরের আবার বিয়ে দেবে?
তাহলে মোহনার কথা জিজ্ঞেস করছো কেনো?

তখন সাগরের মা বললো, মোহনার সাথে তো এখনো ডিভোর্স হয় নি।
যখন হবে তখন লিমার সাথে বিয়ে দেবো।
তাই না সাগর?
সাগর কোন উত্তর দিলো না।

তখন সাগরের মা সাগরের কান ধরে টেনে বললো এখনো নিজের মুখে কিছুই বলবি না?
এখনও চুপ করেই থাকবি?
এরকম সুযোগ কিন্তু আর পাবি না।
আজ তোর মন যা চাইবে তাই বলবি।
অনেক লুকোচুরি করেছিস।

সাগরের বাবা তখন বললো তোমরা কিসের কথা বলছো?
আমি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না।
তখন সামিরা বললো আসলে বাবা ভাইয়া আর ভাবি,,,,,,
সামিরা কথা টা বলতেই তার মা তাকে থামিয়ে দিলো।
তুই চুপ কর।
তুই বলছিস কেনো?
যা বলার আজ সাগর নিজের মুখেই বলবে।

চলবে,,,,,
কেমন লাগলো আজকের পর্ব তা অবশ্যয় জানাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here