#ক্রাশ
#পর্ব_২৭_শেষ_পর্ব
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
আমি আসলে কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না।
আর কিভাবে শুরু করবো সেটাই ভাবতেসি।
সাগর কথাগুলো তার বাবার সামনে ভয়ে ভয়ে বললো।
কারন এই প্রথমবার সে তার বাবার সামনে মনের কথা বলতে যাচ্ছে।
তখন তার বাবা বললো কি এমন কথা বলবি যে এতো ভাবতেছিস?
তোর মন যেটা চায় সেটাই বল।
আমি শুনতে চাই।
কারন আমার মনে হয় সবারই নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার অধিকার আছে।
যদিও আগে সেটা বুঝতে চাই নি, কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি।
সাগর তার বাবার কথা শুনে মনে অনেক সাহস পেলো।
সে নির্দ্বিধায় বললো,
বাবা,আমি মোহনাকে ডিভোর্স দিতে চাই না।
ওকেই বউ হিসেবে সারাজীবন আমার পাশে দেখতে চাই।
সারাজীবন ওর সাথেই থাকতে চাই।
কিন্তু এই কথা টা তোমাকে কখনোই বলতে পারি নি।
তুমি যখন মোহনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বললে তখন মনে হলো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
আমি চতুর্দিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।।
আমার এতো কষ্ট হচ্ছিলো যা বলে বোঝাতে পারবো না।
ডিভোর্স এর কথা শুনেই আমি মানসিক ভাবে যতটা ভেঙে পড়েছিলাম না জানি ডিভোর্স হলে কি হতো কে জানে?
কিন্তু আমি এই কথা গুলো তোমাকে কিছুতেই বলি নি।
কারন আমি কখনোই চাই নি তুমি আমার কথা শুনে কষ্ট পাও।
আমার কথায় মন খারাপ করো।
কথাগুলো বলে সাগর অনেক হালকা হলো।
এতোদিনে যে কথাগুলো সবার সামনে বলার সাহস পায় নি আজ সে তা সহজেই বলে দিলো।
সাগরের বাবা রাগ হওয়ার পরিবর্তে সাগরের সাথে সুন্দর করে কথা বললো।
তিনি বললেন,
আমি জানি তুই আমাকে কত ভালোবাসিস!!
আর আমার কথা কিছুতেই ফেলতে পারবি না।
কিন্তু তুই যে মোহনাকে এতো ভালোবাসিস সত্যি আমি বুঝতে পারি নি সেটা।
তোর মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টাই করি নি।
মুখে যা এসেছে তাই বলে দিয়েছি।
ঠিক আছে আর কখনোই এই রকম কথা বলবো না।
তোরা আবার আগের মতোই একসাথে থাকবি।
সাগর তার বাবার কথা শুনে অনেক খুশি হলো।
তার বাবা এতো চেঞ্জ হয়েছে সত্যি এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
কিন্তু তবুও সাগর মন খারাপ করে থাকলো।
কারন সে তার বাবাকে কি করে এখন বলে যে মোহনাকে তার বাবা নিজে না আনা পর্যন্ত সে আসবে না।
বাবাকে এই কথা টা বললে যদি তিনি আবার রাগ করেন?
যদি আবার এই হাসিখুশি মুখ টা মলিন হয়ে যায়?
এই ভেবে সাগর আর কিছু বললো না।
এদিকে রনির বাবা মা মেহমান দের আপ্যায়ন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সামিরার বাবা শুধু সামিরার দিকেই দেখছে।
ও কত খুশিতে আছে এখানে!!
আর তিনি বাবা হয়ে এই আনন্দ টা নষ্ট করতে চাইছিলেন।
রনির বাবা মার ব্যবহার দেখেও সাগরের বাবা অনেক খুশি হলো।
কিন্তু সাগর কে কেমন জেনো চিন্তিত দেখাচ্ছিলো।
সে কিছু খাচ্ছেও না।
তা দেখে সাগরের বাবা বললো,
কি ব্যাপার সাগর কি হয়েছে?
খাচ্ছিস না কেনো?
–এই তো খাচ্ছি।
এই বলে সাগর খাবার মুখে দিলো।
হঠাৎ তখন সামিরা বললো,
ভাইয়া মনে হয় ভাবীর জন্য মন খারাপ করছে।
সে আজ আমাদের সাথে থাকলে ভালো হতো।
সাগরের বাবা তখন বললো ওকে ফোন করে আসতে বল।।
তাহলেই তো হয়।
তখন সাগর এই সুযোগে বললো বাবা আমি আরো কিছু কথা বলতে চাই।
–বল?
এরকম তোতলাচ্ছিস কেনো?
সাগর তার বাবার কথা শুনে বললো,
বাবা মোহনা আর আমার সাথে থাকতে চায় না।
তুমি ওকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলেছো দেখে ও খুব কষ্ট পেয়েছে।
আর আমার আচরনে অনেক বেশি মন খারাপ করেছে।
–আমার উপর মন খারাপ করেছে সেটা বুঝলাম।
কিন্তু তোর উপর রেগে আছে কেনো?
সাগর তখন বললো,
তুমি যখন বলছিলে যে করেই হোক সামিরাকে খুঁজে বের করতে।
তাকে ধরে এনে তোমার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে তখন আমি মোহনাকে মিথ্যে কথা বলি যে আমি রনির সাথেই সামিরার বিয়ে দেবো।
সে আমাকে বিশ্বাস করে সামিরার কথা বলেছিলো। কিন্তু আমি মোহনাকে কথা দেওয়ার পর ও সামিরা কে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলাম।
সেজন্য মোহনা অনেক মন খারাপ করেছে।
মনে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে।
সে জন্য মোহনা এখনো আমাকে ক্ষমা করে নি।
এই কাজ টা করে আমি মোহনার চোখে অনেক খারাপ হয়ে গেছি
আমি জানি তুমি মোহনাকে পছন্দ করো না।
কিন্তু তবুও আজ বলতে চাই যে তুমি নিজে গিয়ে মোহনাকে আবার আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনো।
তাহলে ও নিশ্চয় আসবে।
আমি যতই ওকে আনতে যাই না কেনো ও কিছুতেই আসবে না।
সাগরের বাবা সাগরের কথা শুনে বললো ঠিক আছে।
আমি নিজে গিয়ে মোহনাকে নিয়ে আসবো।
কারন আমি যেহেতু নিজেই ওকে ডিভোর্স এর কথা বলেছিলাম,
সেই হিসেবে ভুলটা আমারই ছিলো।
আমি তখন ভেবেছিলাম মোহনা কাজটা ঠিক করে নি।
কিন্তু আজ মনে হচ্ছে মোহনা ঠিক কাজ করেছে।
আজ আমি অনেক কিছু বুঝতে পারছি।
আসলে আমি ভালোবাসার বিয়েকে সাপোর্ট করি না।
কারন আমি ভাবতাম ভদ্র ঘরের ছেলেমেয়ে কখনোই বিয়ের আগে অন্য ছেলের সাথে মেলামেশা করতেই পারে না।
যারা এসব প্রেম ভালোবাসা করে তারা অভদ্র ঘরের সন্তান।
কিন্তু যে মানুষ দুটি সারাজীবন একসাথে থাকবে তাদের নিজেদের যে একটা পছন্দ আছে সেটা কখনো ভেবেই দেখি নি।
সামিরা রনিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে বলে আমি সত্যি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।
কারন আমার ইচ্ছা ছিলো নিজে পছন্দ করে সেই ছেলের সাথে সামিরাকে বিয়ে দেবো।
কিন্তু আমার চয়েচ করা ছেলে যে সামিরার জন্য পারফেক্ট হবে তার কি মানে?
যতই আমি ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেই না কেনো সে যদি বিয়ের পর খারাপ হয়ে যায়?
সেজন্য আমার মনে হয় যে যার সাথে সারাজীবন কাটাতে চায় তাকে সে স্বাধীনতা টা দেওয়া উচিত।
কারন দুইজন মানুষের মনের মিলই আসল মিল।
সাগর সেকথা শুনে বললো,
তুমি হঠাৎ করে এতো চেঞ্জ হলে কেনো বাবা?
তুমি তো এই জিনিস টা কিছুতেই মানতে চাইতে না?
তখন তার বাবা বললো,
আমি এতোদিন অন্ধকারের মধ্যে ছিলাম।
সেজন্য বাস্তবতা বুঝতে পারি নি।
সামিরার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও রনিকে বিয়ে করে অনেক বেশি হ্যাপি হইছে।
কিন্তু সামিরা যদি আমার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতো তখন কিন্তু ওর মুখে এই হাসি টা দেখা যেতো না।
সেটা হতো আমার জীবনের অনেক বড় ভুল।
সেই হিসেবে মোহনাকে ধন্যবাদ দেওয়াই যায়।
সেদিন যদি মোহনা বিয়ে টা না আটকাতো তাহলে সামিরার জীবন টা আমরা নিজে হাতে শেষ করতাম।
হঠাৎ সাগরের বাবা সাগরের হাত ধরে বললো,
তুই আমাকে মাফ করে দিস বাবা।
কারন তোকে আমি নিজের পছন্দ করা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি।
তোর চয়েচ হয়েছে কিনা একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করি নি।
ভেবেছিলাম আমরা যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করবো সেই মেয়েই তোর জন্য পারফেক্ট হবে।
তোর ইচ্ছা ছিলো কি না সেটা জানার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করি নি।
সাগর তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো কি বলছো এসব?
তুমি আমার কাছে মাফ চাচ্ছো কেনো?
তাছাড়া তুমি তো খারাপ মেয়ে আমার জন্য চয়েচ করো নি?
সে আমার জন্য পারফেক্ট ই ছিলো।
সেই কথা শুনে সাগরের দাদু বললো, মোহনাকে কিন্তু আমি নিজে চয়েচ করেছি।
এই কৃতিত্ব টা শুধুমাত্র আমারই পাওয়ার কথা।
তখন সাগরের বাবা বললো, এই কৃতিত্ব শুধুমাত্র ঘটক সাহেবের পাওয়ার কথা।
ভাবছি ওকে কিছু পুরুষ্কার দিবো।
যেহেতু আমার ছেলে তার বউ কে নিয়ে সন্তুষ্টই আছে যদিও বিয়ে টা তাকে জোর করে করানো হয়েছে।
সেই কথা শুনে সাগর বললো,বাবা বাদ দাও তো এখন এসব।
ঘটকের কাজ ঘটক করেছে।
ওনাকে আবার ডাকতে হবে কেনো?
সাগরের বাবা বললো বাদ দিবো কেনো?
ওনাকে ডাকতেই হবে।
কারন মোহনা আর তোর তো এখনো বিয়ের অনুষ্ঠান হয় নি।
তাই ভাবছি দুই এক দিনের মধ্যেই অনুষ্ঠান টা সেরে ফেলবো।
অনেক ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করবো,যাতে করে কোন আত্নীয় যেনো বাদ না পড়ে।
হঠাৎ রনির মা বাবা বললো এটা মানতে পারলাম না বিয়াই।
আপনি শুধু ছেলের অনুষ্ঠান ধুমধামে করতে চাচ্ছেন?
আপনার মেয়ের অনুষ্ঠান ধুমধামে করবেন না?
সে কথা শুনে সাগরের বাবা আর দাদু দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।
হ্যাঁ ঠিকই তো।
তারা তো সামিরার কথা ভুলেই গেছে।
তখন সাগরের বাবা বললো একদম ঠিক বলেছেন।
শুধু সাগর আর মোহনারই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে না।
সাথে সামিরা আর রনির বিয়ের অনুষ্ঠান ও হবে।
সাগরের মা সেকথা শুনে বললো,
একসাথে দুইটা বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।
এটা কিন্তু ছোটখাটো ব্যাপার না।
এই কম সময়ের মধ্যে এতো বড় আয়োজন কি করে হবে?
সাগরের বাবা বললো আমাদের তো আর কিছু করতে হবে না।
সব আয়োজন কমিউনিটি সেন্টারের মালিক করবে।
কারন আমি ভেবে নিয়েছি বাড়িতে এতো বড় আয়োজন না করে কমিউনিটি সেন্টারে করবো।
সেই কথা শুনে সাগর বললো, বাবা আমার একটা চেনাজানা রিসোর্ট আছে।
ওখানে হলে মন্দ হবে না।
জায়গা টা অনেক সুন্দর।
তুমি চাইলে দেখে আসতে পারো।
সাগরের বাবা তখন বললো তুই কোন রিসোর্টের কথা বলছিস?
সাগর তখন বললো, আমার একটা চেনাজানা রিসোর্ট আছে।
ওই রিসোর্ট টা আমার খুব ফেভারিট।
তুমি যদি ওখানেই আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান টা করতে অনেক ভালো লাগতো।
সাগরের বাবা এই প্রথম বার সাগরের পরামর্শ মতো কাজ করলো।
তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ওই রিসোর্টেই হবে বলে তার বাবা জানিয়ে দিলেন।
সাগর মোহনাকে সব ঘটনা খুলে বললো।
মোহনা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারলো না।
তার বাবা কিভাবে এতো সহজে রাজি হয়ে গেলো।
সবকিছু কেমন জানি স্বপ্নের মতো লাগছিলো।
মোহনা আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।
সে রাজশাহী থেকে তার বাড়ি চলে এলো।
মোহনা বাড়িতে আসার পরের দিনই সাগর তার বাবা আর দাদুর সাথে মোহনার বাড়িতে গেলো।
যদিও মোহনা আগে থেকেই সব জানে তবুও না জানার ভান করে থাকলো।
মোহনা তার শশুড় আর দাদুকে সালাম করলো।
তখন সাগরের বাবা বললো,থাক মা সালাম করতে হবে না।
আমার ব্যবহারে যদি মন খারাপ করে থাকো পারলে মাফ করে দিও।।
মোহনা সে কথা শুনে বললো, বাবা কি বলছেন এসব?
ভুল তো আমি করেছিলাম।
আপনাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেছি।
আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সাগরের বাবা তখন বললো তুমি সেদিন যদি ঐ প্রতিবাদ টা না করতে তাহলে সবাই আজ এতো খুশি হতো না।
আজ সবার মুখে এতো হাসি দেখা যেতো না।
এদিকে মোহনার বাবা মা কিছুই বুঝতে পারলেন না।
তারা জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?
সেই কথা শুনে সাগর বললো কিছু না।
আর তার বাবাকে ইশারা করে বললো,
বাবা আসল কথা টা বলো না?
কি সব শুরু করলে তোমরা?
সাগরের বাবা তখন মোহনার বাবাকে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বললো।
মোহনার বাবা সে কথা শুনে অনেক খুশি হলো।
কারন তিনিও এটাই চাচ্ছিলেন।
হঠাৎ করে বিয়ে হওয়াই অনেকেই মন খারাপ করেছে।
তাই অনুষ্ঠান করে তিনিও সব আত্নীয় কে জানাতে চান।
সাগরের বাবা বললো তাহলে তো আর কোন সমস্যায় রইলো না।
সাগর এক রিসোর্ট পছন্দ করে রেখেছে।
তাই ভাবছি ওখানেই অনুষ্ঠান টা করবো।
সেই কথা শুনে মোহনার বাবা বললো, বাহিরের রিসোর্টে কেনো অনুষ্ঠান করতে হবে?
আমাদের রিসোর্ট টাই তো অনেক বেশি সুন্দর।
সাগর সেকথা শুনে বললো ঠিক আছে বাবা সেটাই হবে।
তখন সাগরের বাবা বললো কিন্তু তুই না বললি তোর পছন্দের এক রিসোর্ট আছে।
সাগর মনে মনে বলতে লাগলো কি করে এখন তোমাকে বোঝায়?
কারন সাগর নিজেও এই রিসোর্ট এর কথাই ভেবে দেখেছে।
কারন এই রিসোর্টেই সে ফাস্ট মোহনাকে দেখেছিলো।
আর তখন থেকেই মোহনার প্রতি তার ভালোলাগা শুরু হয়েছিলো।
সে হিসেবে এই রিসোর্ট টা তার কাছে একটু বেশিই স্পেশাল।
————–
————–
আজ সাগর আর মোহনা এবং রনি আর সামিরার বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
রিসোর্ট টা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
লাল নীল হলুদ কালারের ছোট ছোট বেলুন চারিদিকে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে।
চারিদিকে ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে।
সেগুলো থেকে লাল নীল আলো জ্বলছে।
সাগর আর মোহনা এবং রনি আর সামিরা গাড়ি থেকে নামতেই তাদের গায়ে ফুল ছিটে দেওয়া হলো।
মনে হচ্ছে ফুলের বৃষ্টি ঝড়ছে।
মোহনা তো সেই খুশি।
তার শশুড় এতো সুন্দর করে সব ব্যবস্থা করবে সত্যি সে ভাবতে পারে নি।
সবাই স্টেজে গিয়ে বসলো।
আজকের অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মোহনা আর সামিরা।
দুইজনকে পুতুলের মতো করে সাজানো হয়েছে।
যাদের কে দেখে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
লাজুক সাগর নিচ মুখ হয়ে আছে মনে হচ্ছে আজকে তার বিয়ে হচ্ছে।
কিন্তু বিয়ে তো তার অনেক আগেই হয়ে গেছে।
তবুও এতো মানুষের সামনে এভাবে বর সেজে বসে থাকতে তার একটু অসুবিধেই হচ্ছে।
মোহনা সাগর কে একটা চিমটি কেটে বললো,
মাথা উপরে তুলো।
তা না হলে ভিডিও সুন্দর হবে না।
সাগর সে কথা শুনে মাথা উপরে তুললো।
সবাই যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে সাগর লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মোহনা মানুষের মধ্যে কিছু বলতেও পারছে না।
দুই পক্ষের আত্নীয় স্বজন দিয়ে রিসোর্ট টা ভরে গেছে।
সবাই অনেক খুশি হয়েছে আজকের অনুষ্ঠানে আসতে পেরে।
আত্নীয় স্বজন বিদায় নিলে মুহুর্তের মধ্যে রিসোর্ট টা শান্ত হয়ে গেলো।
শুধু ফ্যামিলির লোকজনই রিসোর্টে থেকে গেলো।
সামিরা আর রনিকে একটা সুন্দর সাজানো করে রেখে আসলো সবাই।
কিন্তু সাগর আর মোহনাকে যখন ভাবি সেম সুন্দর সাজানো গোছানো ঘরে নিয়ে যেতে ধরলেন ঠিক তখনি
সাগরের বাবা বললো,দাঁড়াও তোমরা।
আগেই ঘরে ঢুকবে না।
সবাই চমকে গেলো।
মোহনা আর সাগর ও অবাক!!!
বাবা এভাবে বলছে কেনো?
তখন মোহনার ভাবি বললো কি হয়েছে?
সাগরের বাবা তখন একটা ডায়রি দেখিয়ে বললো এটা কার ডায়রি?
মোহনা তার ডায়রি টা দেখামাত্র ভয় পেয়ে গেলো।
কি সর্বনাশ হলো এটা?
বাবার হাতে তার ডায়রি গেলো কি করে?
সাগর তা দেখে মোহনাকে ফিসফিস করে বললো আজকের দিনে কি কারনে ডায়রি টা সাথে এনেছো?
এখন কি হবে?
তোমার ডায়রি তুমি কথা বলো।
আমি জানি না কিছু।
মোহনা তখন বললো আমি কেনো বলবো?
তুমি বলবে?
কারন পুরো ডায়রি জুড়ে শুধু তোমার নাম।
এক জায়গাতেও আমার নাম লেখা নাই।
সাগর সে কথা শুনে বললো এই মেয়ে তুমি আমাকে ইচ্ছে করে ফাঁসিয়ে দিয়েছো তাই না?
সাগরের বাবা ওদের দুইজনের ফিসফিস করে কথা বলে দেখে দিলো এক ধমক।
সবাই বললো কি এটা?
দেখি তো?
এই বলে সাগরের মা ডায়রি টা নিয়ে এক পাতা উল্টালো।
ডায়রির প্রথম পাতায় লেখা ছিলো ক্রাশ।
সাগরের মা বললো ক্রাশ আবার কি?
সাগরের বাবা সে কথা শুনে বললো সেটা তোমার ছেলেকেই বলো।
ডায়রি তে ওর নাম লেখা।
সাগর সে কথা শুনে বললো, আমি কিছু জানি না।
মোহনা জানে।
মোহনা তখন বললো আমিও কিছু জানি না।
যেহেতু তোমার নাম লেখা তাহলে তুমিই ভালো জানো।
মোহনার ভাবি তখন বললো, তোমরা সবাই একটু চুপ করবে??
কি হয়েছে?
কি লেখা ডায়রি তে?
এই বলে মোহনার ভাবি ডায়রি টা হাতে নিলো।
আর ডায়রি টা উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখে বললো এটা তো একটা গল্প।
সাগর নামের এক ছেলের গল্পের কাহিনী।
এক মেয়ে সাগর নামের এক ছেলেকে দেখে ক্রাশ খেয়ে যায়।
তাকে নিয়েই একটা ভালোবাসার গল্প।
সাগরের বাবা সে কথা শুনে বললো, আমি ভাবলাম এটা সত্যি কাহিনি।
অবশ্য এরকম কাহিনী হলে ভালোই হতো।
তাহলে আর আমার প্রতি কারো কোন অভিযোগ থাকতো না।
আর আমার নিজের প্রতিও কোন রাগ থাকতো না।
মেয়ে যেমন তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে ছেলেও তেমন তার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেছে?
সাগর বুঝতে পারলো তার বাবা ভাবির কথা কিছুতেই বিশ্বাস করে নি।
তিনি পুরো ডায়রি পড়েছেন।
সে জন্য সাগর আর কোন উপাই না দেখে তার বাবার পায়ে পড়লো,
আর ওনার পা জড়িয়ে ধরে বললো,
বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে।
আমি সত্যি টা তোমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম।
আমি তোমাকে ভয়ে বলতে পারি নি।
সাগরের বাবা এই মুহুর্তে কি করবে সত্যি বুঝতে পারছে না।
এটা কি তার দোষ?
না তার ছেলের দোষ?
তিনি সাগর কে পা থেকে উঠিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি একটুও রাগ করি নি।
যা হবার হয়ে গেছে।
মোহনার ভাবি তখন বললো আমাকেও মাফ করে দিন।
আসলে আমি ওদেরকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যে কথা টা বলেছি।
সাগরের বাবা তখন বললো এখানে কারো কোন দোষ নাই।
সব দোষ আমার।
আমি যদি ছেলের মনের কথা জানতে চাইতাম।
ও কাকে বিয়ে করলে ভালো থাকবে সেটা শুনতাম তাহলে আজ সে এভাবে লুকোচুরি করতো না।
ভাগ্যিস বিয়ে টা হয়েছে।
তা না হলে সামিরার মতো সাগরের জন্যও আফসোস হতো।
সাগর আর মোহনা সেকথা শুনে হেসে উঠলো।
তারা কি ভয় টাই না পেয়েছিলো।
সাগরের বাবার কথার শুনে সবাই অনেক খুশি হলো।
তখন সাগরের বাবা সাগর কে রুমে যেতে বললো।
আর তিনি নিজেও নিজের রুমে গেলেন।
সাগর রুমে গিয়েই মোহনার উপর বকাঝকা শুরু করে দিলো।।
মোহনাকে কেনো আজ ডায়রি টা আনতে হবে?
আর এনেছেই যখন ঠিক করে রাখলে কি হতো?
মোহনা সাগরের বকাঝকা শুনেও কোন কথাই বললো না।
কারন এবার ভুলটা সেই করেছে।
সাগর এর এমন রাগ দেখে মোহনা বললো,
সরি।
ভুল হয়েছে আমার।
আজকের অনুষ্ঠানে ডায়রি টা আনা মোটেও ঠিক হয় নি।
ভেবেছিলাম আজকের দিনের সব কথা সুন্দর করে লিখে রাখবো।।
কিন্তু কিভাবে যে ওটা বাবার হাতে চলে গেলো বুঝতে পারছি না।
সাগর মোহনার সাথে কোন কথা না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
মোহনা তা দেখে বললো তুমিও তো অনেক বড় অন্যায় করেছিলে তবুও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
কিন্তু আজ তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারছো না কেনো?
তুমি যদি এখন আমাকে ক্ষমা করে না দাও তাহলে আমিও আমার ক্ষমা ফেরত নিবো কিন্তু।
তখন সারাক্ষণ পিছু পিছু ঘুরলেও আর ক্ষমা পাবে না।
সাগর মোহনার এমন কথা শুনেও কিছুই বললো না।
তাই মোহনা বললো ঠিক আছে তুমিও তোমার অপরাধের ক্ষমা আর পেলে না।
এই বলে মোহনাও শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষন পর সাগর বললো,আচ্ছা ঠিক আছে ক্ষমা করে দিলাম।
তখন মোহনা বললো, তুমি ক্ষমা করেছো ভালো কথা কিন্তু আমি এখনি ক্ষমা করতে পারবো না।
সাগর সে কথা শুনে মোহনাকে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো সেটা তোমার ইচ্ছা।
যেদিন মন চায় সেদিন ক্ষমা করিও।
মোহনা তখন বললো তাহলে ধরতেছো কেনো আমাকে?
যেদিন ক্ষমা করবো সেদিন ধরবে।
সাগর মোহনার কথা শুনে বললো পাগল পাইছো আমাকে?
কিছু একটা হইলেই এই এক অজুহাত!!
আজাইরে ন্যাকামো বাদ দাও।
–মানে কি বলছো তুমি?
কিসের ন্যাকামো?
সাগর মোহনার কোন কথায় আজ শুনলো না।
সে মোহনাকে আদর করতে লাগলো।
মোহনা বাধা দিলেও কিছুক্ষনের মধ্যে তার বকবকানি বন্ধ হয়ে গেলো।
সমাপ্ত
শেষ হলো সাগর আর মোহনার ভালোবাসা,রাগ,অভিমানের গল্প।
আমার পরবর্তী গল্পের নাম ভালোবাসার ক্যানভাস।
এই গল্পটা একটু অন্য টাইপের হবে।
আর গল্পটাতে অনেকগুলো চরিত্র থাকবে।
ভালো রেসপন্স পেলে অবশ্যয় গল্প লেখা চালিয়ে যাবো।
আর ক্রাশ গল্প টা কেমন লেগেছে অবশ্যয় কমেন্ট করে জানাবে।
আল্লাহ হাফেজ❤️❤️❤️