অন্তরালে ভালবাসা পর্ব ১|রোমান্টিক থ্রিলার

একটু আগে আমার বিয়ে হয়ে গেলো আমার ভালবাসার মানুষের সাথে না। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সাথে।
অবাক হচ্ছেন তাই তো?
আসেন বুঝিয়ে বলি।
আমরা তিন বন্ধু। আমি আরিশা, বাকি দুজন অহিন,রাফিন।
আমি রাফিনকে ভালবাসি।আমাদের প্রেমের সম্পর্ক প্রায় ৩বছরের। অহিন আমাদের দুজনেরই খুব ভালো বন্ধু। প্রথমেই আমরা তিনজন খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। তারপর রাফিনকে কিভাবে যেন ভালবেসে ফেললাম বুঝতেই পারিনি।আমাদের খুব ভালোভাবে দিন যাচ্ছিলো।তারপর আমাদের বিয়ে ঠিক হলো। কিন্তু বিয়ের দিন রাফিন আসলো না।আসলো অহিন।

অহিন বড় লোক বাবার ছেলে।আমি মধ্যেভিত্ত ঘরের মেয়ে।আর রাফিন ও মধ্যেভিত্ত ঘরের ছেলে।অহিন বড় লোক ঘরের হলেও তার মাঝে কোন অহংকার ছিলো না।কখনো তার সাথে মিশে এটা মনে হয়নি যে অহিনের আর আমাদের মধ্য অনেকটা ব্যাবধান আছে।
কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।অহিন শুরু থেকেই জানতো আমাদের সম্পর্কের কথা। তারপর ও এটা কেন করলো অহিন!আর রাফিন সে কোথায়। আজ যাই হয়ে যাক তার তো উচিত ছিলো এখানে উপস্থিত হওয়া।

কারো পায়ের শব্দে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো।
কেউ একজন এগিয়ে আসছে আমার দিকে। হয়তো অহিন!আমি এখন অহিনের ঘরে বসে আছি।অহিনের ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে! আমার জন্য সাজানো হয়েছে!উঁহু আমাদের জন্য সাজানো হয়েছে
আজতো আমাদের বাসর রাত।বাসর!এইতো একদিন আগেও এই রাতটি নিয়ে রাফিনের সাথে কত কথা হয়েছে।কত স্বপ্ন দেখেছি আজকের দিনটি নিয়ে।

রাফিন বলেছিলো কাল,””””আমি যদি ভালবেসে তোমায় এক আকাশ শূন্যতা উপহার দেই,
তুমি কি আমায় গ্রহণ করবে?

আমি বলেছিলাম, কবুল, কবুল কবুল!

আর আজ সেই রাত ঠিকই এলো কিন্তু মানুষটি পাল্টে গেলো!

সব কান্না দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।এখনতো আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কেনো এমন হলো? এমন একটা সময় যে একটা মেয়ের জন্য কতটা যন্ত্রনাদায়ক তা শুধু একটা মেয়েই জানে।

একজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে অন্যজনের সাথে সংসার করাটা যে খুবই কষ্টের।
আমার মাথা ঘুরছে। কি হলো আর কেনই বা হলো!
অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে!
অহিন আমার সব জেনেও কেন আমাকে বিয়ে করলো!

অহিন এগিয়ে এসে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,আরিশা যা গিয়ে কাপড় চেঞ্জ কর।এতো ভারি শাড়ি নিয়ে তো ঘুমাতে পারবি না।
অহিনের কথা শুনে আরিশার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায়।এতোটা স্বাভাবিক কি করে আছে অহিন!

এই তোর কি সমস্যা হ্যাঁ এতো কিছুর পর তুই এতো স্বাভাবিক কি করে আছিস?আর কি বললি কাপড় চেঞ্জ করবো? কেন এই কাপড়ে তোর বাসর করতে সমস্যা হবে? তোর সাথে আমার বিয়ে আমি মানি না।তাহলে এসব বাসর আসছে কোথায় থেকে?

আমি কখন বললাম আমি বাসর করবো তোমার সাথে। এর মানে কি তুমি ইনডিরেক্টলি চাচ্ছো আমাদের বাসর হোক!বলেই অহিন শয়তানি মার্কা হাসি দেয়।

আরিসা এবার একটু দমে যায়।তোতলাতে তোতলাতে বলে,তুই আমাকে তুমি করে কেন বলতেছিস?
আমি তোর কি লাগি যে তুমি বলতে হবে?

অহিন বলে,আমার ঘরে বসে আছো।আমি তোমার সামনে আছি তাও তুমি বুঝতেছোনা আমি তোমার কি হই?নাকি আমার মুখ থেকে শুনতে চাইছো?

আরিশা এবার অহিনের কলার চেপে ধরে বলে,তুই একটা কুত্তা, হারামি,লাল বাদর হুনুমান! তোরে আমি মেরেই ফেলবো। তুই আমার জীবনটা শেষ করে দিলি।

অহিন বাধা না দিয়ে তাকিয়ে থাকে আরিশার দিকে।আরিশা বাচ্চাদের মত করে নানারকম কথা বলে অহিনকে।

কিছুটা সময় পর অহিন বলে,আরু সারাদিন অনেক ধকল গেছে এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
আরু নামটা শুনে কিছুটা থমকে যায় আরিশা।অহিন বন্ধুত্বের প্রথম দিকে আরিসাকে আরু বলে ডাকলেও রাফিনের সাথে সম্পর্কের পর থেকে বলতো না।

আরিশা কিছু না বলে চুপচাপ চেঞ্জ করে আসে ওয়াশরুম থেকে।অহিন তখনও বসে আছে সোফার উপর। আরিসা এতোক্ষন ভালো করে খেয়াল না করলেও এখন করলো। অহিনের পরনে মেহেরুন রঙের শেরোয়ানি।পরনে চুড়িদার। ঘন কালো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালের দিকে পড়ে আছে।মায়াবী মুখশ্রী! ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা। হলুদাভ ফর্সা ছেলেটাকে দেখতে খুবই মায়া লাগছে।চোখ বন্ধ করে থাকায় ঘন চোখের পল্লব যেন আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা যাচ্ছে।
চোখে মুখে সবসময় বুদ্ধিদীপ্ত ভাব।মেধাবী ছাত্র। বড় লোক বাবার ছেলে সব মিলিয়ে আরিশার চেয়ে অনেক ভালো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারতো অহিন।তবে কেন আরিশাকেই বিয়ে করলো? কি কারণ থাকতে পারে এখানে।সব খুজে বের করতেই হবে।

এসব ভাবনায় ছেদ পড়ে অহিনের কথা শুনে।
অহিন বলে,এভাবে কি দেখছো।আমি জানি আমি সুন্দর! এভাবে হেংলার মত চেয়ে না থাকলেও হবে।

আরিশা রেগে গিয়ে বলে,তোকে কে সুন্দর বলছে হুম? তুই যে দেখতে কতটা বাজে তুই নিজেও জানিস না।

অহিন এর উত্তর কিছুই দেয় না।শুধু হাসে।জ্ঞানীরা এমনই কারো নেগেটিভ কথার উত্তর তারা মুখে দেয় না।কাজে করে দেখায়।

অহিন টাওয়াল হাতে নিয়ে বলে,তুমি শুয়ে পড়ো।আমি চেঞ্জ করে আসছি।

আরিশা পেছন থেকে প্রশ্ন করে রাফিন কোথায় অহিন?

অহিন পেছনে ফিরে তাকায় মনে মনে ভাবে আমি নিজেও জানিনা রাফিন কোথায়!

আরিশা বলে কিরে কথা বলছিস না কেন?
অহিন বলে আমি জানি না।ঘুমিয়ে পড় আমি আসছি।

আরিশা স্পষ্ট বুঝতে পারে অহিন তাকে এড়িয়ে গেলো। আরিশার নানা চিন্তায় মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর তাকে কে দিবে!
তাকে নিয়ে কি কোন গভীর ষড়যন্ত্র চলছে?
নাকি এর পেছনে অন্যকিছু আছে যা তার জানা নেই!
আরিশা খুব রাগ হয়, খুব,ইচ্ছে করছে সব শেষ করে দিতে।সাইড টেবিলের উপর থাকা অহিনের ফটো ফ্রেমটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে।

অহিন এসে দেখে ফ্রেমের কাঁচে পুরো ঘর জুড়ে আছে।অহিনকে দেখে আরিশা একটু সামনে আসতে নিলেই আরিশার পায়ে কাঁচ ঢুকে যায়।যন্ত্রনায় চিৎকার করে আরিশা।
অহিন দৌড়ে এসে আরিশাকে ধরে খাটের উপর বসায়।আরিশা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে অহিন আরও বেশী শক্ত করে ধরে। খুব যত্ন করে কাচ খুলে ফেলে দেয়।তারপর ফাস্টএইড বক্স এনে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

আরিশা নিজেকে ছাড়াতে না পেরে রাগে দুঃখে কান্না করে দেয়।
অহিন সেদিকে একবার তাকিয়ে আরিশাকে ধরে শুইয়ে দেয়।আরিশা আবার কিছু বলতে গেলে।নিজের মধ্য আঙুল বসিয়ে দেয় আরিশার ঠোঁটের উপর। আরিশা আর কিছু বলতে পারেনা।

অহিন পুরো ঘর পরিস্কার করে, আরিশাকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে। পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আরিশা আলতো সুরে বলে,রাফিন কোথায় একবার বল অহিন প্লিজ অহিন।আরিশার করুনাময় গলা শুনে অহিনের কষ্ট হয়।তাও সেই কষ্ট চেপে রেখে বলে,আরু রাফিন কোথায় সত্যি আমি জানিনা। জানলে নিশ্চয়ই তোমাকে বলতাম।
আরিশা অহিনের হাত ধরে কান্না করে দেয়।অহিন কোন মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারে না।এভাবে কাঁদলে কেমন লাগে আরু।ঘুমিয়ে যাও প্লিজ।কান্না করো না!

আরিশা অনেক্ষণ ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুম চলে আসে।

আরিশা থেকে খুব সতর্কতার সাথে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অহিন।চলে যায় বারান্দায়। নিকোটিনের টানে নিজের মনের ব্যাথা দূর করতে চায়।জীবনের গোলকধাঁধা কাকে কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না! অহিন কাউকে কল দেয় বলে,কাজ হয়ে গেছে?
“জি বস হয়ে গেছে।ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর পেয়ে কল কেটে দেয় অহিন।

চলবে,,,,

#অন্তরালে_ভালবাসা

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here