#ভালবাসার_রংধনু
#পর্ব_৪
#Baishakhi_Fariba
আমান স্যারকে শার্ট খুলতে দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।মনে মনে হাজারটা গালি দিতে থাকলাম।চোখ বন্ধ করেই বলতে শুরু করলাম..
আমিঃ স্যার দেখুন..
আমানঃ দেখাও…
তার এই কথা শুনে আমি চোখ মেলে তাকালাম।দেখলাম শুধু বোতাম গুলো খুলে দাঁড়িয়ে আছে।ছিঃ,সরম লজ্জা কিছুই নেই উনার।এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।উনাকে এইভাবে দেখে খুব লজ্জা লাগছে আমার।উনি আমার আরো কাছে এসে দাঁড়ালেন।উনাকে এইভাবে আমার এতো কাছে দেখে বুকটা ধুক ধুক করছিলো।
আমিঃ আপনার কি লজ্জা বলতে কিছুই নেই?
আমানঃ না নেই।আমি তো আর বাইরের মেয়ের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি না।নিজের বিয়ে করা বউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
লজ্জায় উনার দিকে তাকাতেও পারছি না।উনি পুরো শার্ট খুলতে গেলেন। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌঁড়ে নিচে চলে এলাম।অসভ্য লোক একটা।মেয়ে দেখলেই বডি দেখাতে মন চায়।পিহুর কাছে চলে গেলাম।ওর সাথে বসে কথা বলছি তখন স্যার আসলো।
আমানঃ নিহু আমার সাথে এসো।কিছু কথা বলবো তোমায়।
আমি ভাবতে লাগলাম কি কথা বলবেন উনি?ভাবতে ভাবতে উপরে চলে গেলাম।
উপরে এসে দেখলাম স্যার অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছেন।উনার রেডিও স্টেশন ছাড়াও অনেক বড় ব্যবসা আছে।উনাকে দেখে বললাম,
আমিঃ কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।কি এমন কথা বলবেন যে নিচ থেকে ডেকে উপরে নিয়ে আসলেন।শুধু শুধু সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসলাম।নিচে বললে কি হতো আপনার?
আমানঃ উফফ তুমি একটু কম কথা বলতে পারো না।এটা তোমার রেডিও স্টেশন নয় যে সারাক্ষণ বকবক করতে থাকবে।
আমিঃ কি বললেন আপনি?আমি বেশি কথা বলি।এটা আমার রেডিও স্টেশন নয় সেটা আমিও জানি। আর আমার ভালবাসার রংধনু সো এর কারণে আপনার রেডিও স্টেশন এতো ফেমাস।আমি বকবক না করলে তখন আর এতো ফেমাস হতো না।কথাটা মনে রাখবেন।
আমানঃ আমি জানি যে তোমার কারণেই আমার রেডিও স্টেশন ফেমাস।তোমাকে যে কথা বলার জন্য ডেকেছিলাম সেটা হলো তোমার আর আমার বিয়ের কথা অফিসের আই মিন রেডিও স্টেশনের কেউ জানবে না।এখনই কাউকে কিছু বলবো না।
এতো মেঘ না চাইতেই জল।আমিও তো চাই কেউ না জানুক।
আমিঃ সেটা আমাকে কেন বলছেন?আমি কি অফিসে যাবো নাকি যে বলবো?আর গেলেও আমি বলতাম না।
আমানঃ তুমি যাবে অফিসে আর ভালবাসার রংধনু সো টা তুমিই করবে।
আমিঃ আপনি মজা করছেন নাকি?
আমানঃ না নিহুপাখি।
আমি আবার সো টা করতে পারবো শুনে খুব খুশি হলাম।এটা আমার পছন্দের একটা সো।কিন্তু উনি আমাদের বিয়েটা জানাতে চান না কেন?আমাকে নাকি ভালবাসেন।তাহলে জানালে সমস্যা কি?এসব কথা ভাবছিলাম তখন আমান স্যার বললেন,
আমানঃ তোমার ছোটো মাথায় এতো প্রেসার দিও না।আমার বাবা আর ফুফু দেশে আসার পর তোমাকে আবার বিয়ে করবো আর তখন সবাইকে জানাবো।
আমিঃ আপনার বাবা আর ফুফু কি জানে তাদের ছেলে একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করেছে?
আমানঃ আমার বাবা আর ফুফু সবাই জানে যে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।আমার বাবাও অনুমতি দিয়েছে।বাবা তোমাকে খুব পছন্দ করেছে।
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি।আমি ভেবেছিলাম উনার বাবাকে বলে কোনোভাবে এই বিয়ে থেকে মুক্তি পাবো।এখন দেখি সেটাও সম্ভব না।
আমিঃ আচ্ছা আপনার বাবাকে দেখান তো?
আমানঃ এখন না।পরে একদিন।
আমিঃ পরে একদিন কেন? উনাকে দেখলে সমস্যা কি?
আমানঃ কিছুনা।এতো কথা বলো কেন?কেন যে একটা আর.জে. কে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম।সারাক্ষণ এফএম চালু করে রাখে।
আমিঃ ঠিক করে কথা বলুন।(রেগে বললাম)
আমানঃ নিরুপাখি আমি এখন অফিসে যাচ্ছি।আটটায় ফিরে আসবো।তুমি আর পিহু সাবধানে থেকো।আর বাড়ির বাইরে পা রাখবে না।
কথাটি বলে আমার কপালে কিস দিয়ে চলে গেলো।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।অসভ্য লোক একটা। হুটহাট করে কিস করে।কাছে না আসতে বললেও কাছে আসে।
আমানের অফিসে মন টিকছে না।নিহুর কথা মনে পরছে বার বার।
রাতের বেলা_____
বারান্দায় বসে আছি।বারান্দা থেকে দেখলাম উনার গাড়িটা।বুঝলাম উনি এসেছেন।কিন্তু উনার সাথে আরেকজন কেউ আছে।এখান থেকে ভালো বুঝা যাচ্ছে না।
আমান রুমে এসে দেখে নিহু বারান্দায় বসে আছে।আমান গিয়ে নিহুকে ডাক দেয়।
আমানঃ নিহুপাখি।
আমিঃ হুম।
আমানঃ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
আমিঃ কি সারপ্রাইজ?
আমানঃ নিচে চলো। নিচে গিয়েই দেখতে পাবে।
আমি নিচে গিয়ে দেখলাম মামা এসেছে। আমি দৌঁড়ে গিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমিঃ কেমন আছো মামা?
মামাঃ ভালো আছিরে মা।তুই কেমন আছিস?
আমিঃ আমিও ভালো আছি।
মামাঃ আমান আমাকে সব বলেছে।ও আমাকে আসার সময় এখানে নিয়ে এসেছে তোর সাথে দেখা করানোর জন্য। ছেলেটা অনেক ভালো রে।তুই খুব সুখী হবি।
আমিঃ আমি কিভাবে সুখী হবো মামা? আমি যে আরাফকে ভালবাসি।
আমার এই কথা শুনে আমান স্যার অনেক রেগে গেলেন।রেগে উনি উপরে চলে গেলেন।
আমিঃ মামা ওইখানের কি অবস্থা?
মামাঃ বিয়ে পড়ানোর সময় তোকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।আমি ভেবেছিলাম তুই পালিয়ে গিয়েছিস।আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।তোর মামি তোকে পাগলের মতো খুঁজেছে।তোর যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিল তোর মামি।পরে তো বিয়েটা হয় না।তোর মামি অনেক রেগে আছে।বলছিল আমি নাকি তোকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি।
আমিঃ এখন সব ঠিক আছে তো?
মামাঃ হুম।
পিহু মামাকে দেখে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।আমি মামা আর পিহু কথা বলতে থাকলাম।
এদিকে আমান অনেক রেগে ঘরে এসে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেছে।ঝর্ণা ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।আমান জোরে দেওয়ালে নিজের হাত বারি দেয়,
“নিহুপাখি তুমি শুধু আমার।তুমি আমি বাদে আর কাউকে ভালবাসতে পারো না।তুমি শুধু আমাকে ভালবাসবে।আরাফকে আমি তোমার মন থেকে মুছে দেবো।”
আমান বের হয়ে এসে চেঞ্জ করে নেয়।তখন আমানের ফোনে কল আসে।আমানের বাবা কল দেয়।
আমানঃ হ্যালো বাবা।কেমন আছো?
আমানের বাবাঃ আমি ভালো আছি।নিহু কেমন আছে?
আমানঃ ভালো আছে বাবা।
আমানের বাবাঃ আমান তুমি যা করছো তা কি ঠিক করছো? আরাফকে কি তুমি মুছতে পারবে নিহুর মন থেকে?
আমানঃ আমি যা করছি ঠিক করছি বাবা।আরাফের কোনো যোগ্যতা নেই নিহুর ভালবাসা পাওয়ার।
আমানের বাবাঃ যা ভালো বুঝো করো।
আমানঃ বাবা রাখি।
আমানের বাবাঃ ঠিক আছে।ভালো থেকো।
আমান ফোনে কথা বলে পিছনে তাকিয়ে দেখে নিহু দাঁড়িয়ে আছে।আমান ভয় পেয়ে যায়। নিহু সব শুনে নিল না তো?
আমি ঘরে গিয়ে দেখি উনি ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছেন।
আমিঃ কার সাথে কথা বললেন?
আমানঃ তুমি না এখানেই ছিলে।শুনোনি?
আমিঃ না।আমি মাত্র আসলাম।
আমানঃ বাবার সাথে কথা বলছিলাম।
আমিঃওহ।নিচে আসুন। মামা ডাকছে আপনাকে।
আমি চলে আসতে নিলে আমান স্যার আমার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।
আমিঃ কি করেছেন কি স্যার?ছাড়ুন আমাকে।
আমানঃ ছাড়ার জন্য তো ধরিনি নিহুপাখি।
আমিঃ স্যার ছাড়ুন আমাকে।
আমানঃ তুমি আমাকে এখন থেকে আর স্যার বলে ডাকবে না।
আমিঃ কেন? আমি আপনাকে স্যার বলেই ডাকবো।
আমানঃ তাহলে আমিও তোমাকে ছাড়বো না।
আমিঃ (ধুর কি ঝামেলায় পরলাম।এখন কি করি?) আচ্ছা ডাকবো না। এবার তো ছাড়ুন।
আমানঃ ওইদিকে দেখো।
আমি উনার দেখানো দিকে তাকাতেই উনি আমার গালে কিস দিয়ে চলে গেলেন।অসভ্য লোক।
চলবে….