একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব ৬+৭

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
||পর্বঃ ০৬||

–‘এই ইয়ানা, ঘুম থেকে ওঠ জলদি। আজকে তোর না বিয়ে?’

মিসেস.শাহিনা চৌধুরীর ডাকে বিরক্ত হয়ে যায় ঘুমন্ত ইয়ানা।

—‘উফফফ মা, তোমাদের জ্বালায় শান্তির বাতিটা টুপ করে নিভে গেছে। ঘুমাতে দাও না। আমার রাজকুমার আমাকে নিতে আসছে ঘোড়ার পিঠে চেপে ইশশশ কি দুর্দান্ত মূহুর্ত!’
ঘুম কাতুরে কন্ঠে ইয়ানা বলে। চোখ এখনো বুজেই রয়েছে সে।

—‘দেখ এতোদিন সহ্য করেছি, আজকে তুই শ্বশুর বাড়ি যাবি উঠ জলদি। আমার তো এই তোকে নিয়েই চিন্তে হয় স্বামির বাড়িতে কেমনে সামাল দিবি!’
মুখে চিন্তার রেশ ফুটে ওঠে মিসেস.শাহিনার।
এদিকে ইয়ানা শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
ইয়ানার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ইয়ানার মা শাহিনা। ইয়ানাকে একদম পুতুলের মতো লাগছে। ছোট থেকে তিনি অনেক আদর করে ইয়ানাকে মানুষ করেছেন। কত-শত মায়া, স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বুকের গহীনে। আজ তার মেয়ে অন্যকারো হয়ে চলে যাবে। ভাবতেই কষ্ট লাগছে তার। আর মেয়েটা বাসায় চিল্লিয়ে ঝড় তুলবে না, আর না তার দুষ্টুমি শয়তানি দেখা যাবে। ভাবতে ভাবতেই কখন যে চোখে পানি চলে এলো কেজানে! মুখ আঁচল দিয়ে ঢেকে নেন তিনি।
এদিকে ইয়ানা ঘুমাতে ঘুমাতে চেচিয়ে ওঠে,

—‘ওহ মাই সো কল্ড প্রিন্স,
আ’ম এগারলি ওয়েটিং ফর ইউ, মাই ড্রিম বয়…’

ইয়ানার কথা কানে আসতেই আবার হেসে দেন তিনি। মাথায় আলতো করে অধরের পরশ একে দেন।

——————

বিয়ের আসনে বসে আছে ইয়ানা-আনাজ ইয়ানা আনাজের দিকে তেমন একটা লক্ষ্য করছে না। এক বারই জাস্ট দেখেছে সে। দেখে যা বুঝলো আনাজ কে শেরওয়ানিতে হ্যান্ডসাম হান্ক লাগছে। লাল রঙের শেরওয়ানিটায় সুক্ষ সোনালি কাজ রয়েছে। এদিকে একজন ফটোগ্রাফার ইয়ানা – আনাজের ফটোসেশান করেই চলছে। এতে বারবার বিরক্ত হচ্ছে ইয়ানা। তবে অতিরিক্ত মানুষ থাকায় কিচু বলতে পারছে না। এবার যখন ফটোগ্রাফার তাকে দেখে বলে,

—‘আপু ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে দাঁত বের করে একটা ইউনিক পোজ দেন…’
ওমনি ফটোগ্রাফারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইয়ানা। যেন তাকে এখনই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। তা দেখে ফটোগ্রাফার বুঝতে পারে সে লিমিট ক্রস করে ফেলছিল।
.
.
ইয়ানা চারিদিকে তাকিয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিতকে খুঁজছে। কোথায় সে?
বারবার এদিক ওদিক তাকিয়ে এক জন সাদা পাঞ্জাবি ওয়ালার উপর চোখ আঁটকে যায় তার। তার মানে নিলয় এসেছে..
খুশিতে আটখানা হয়ে পড়ে সে। নিলয় এসে ভিজিটরদের সিটগুলোয় হেলান দিয়ে বসে পড়লো। সেন্টারটিতে বড় বড় কয়েকটা এসি থাকা শর্তেও বারবার টিস্যু দিয়ে কপাল মুছছে নিলয়। যা ইয়ানার লক্ষ্যমান হয়। ইয়ানা আনাজকে একসাথে দেখে কোনোভাবে হজম করেছে সে। তবে, তাদের দিকে তাকাচ্ছে না মোটেও।
.
.
এক সময় তিন কবুলের মাধ্যমে একে অপরকে আবদ্ধ করে নেয় নেয় ইয়ানা আনাজ। তারা এক নতুন প্রণয়ের অধ্যায়ে আবদ্ধ হয়। কবুল বলার সময় ইয়ানার গলা কাঁপছিল। একবার আড়চোখে নিলয়কে পরখ করে নিতেই সে দেখে নিলয় অনেক আগ্রহের সাথে ব্যাপারটা হজম করছে। বারবার শুকনো ঢোক গিলছে আর শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট গুলো ভিজিয়ে নিচ্ছে। মুখে মিথ্যের নিশানায় মলিন হাসি ফুটে রয়েছে। কিন্তু ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে তার!
বিয়ে শেষ হতেই সবাই জোরে করে আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে। সবাই তাদের নবজীবনের সার্বিক উন্নয়ন আর মঙ্গলসূচক দোআ করতে ব্যস্ত।
…..

বিয়ের সকল ধাপ মোটামুটি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। এখন ইয়ানাকে তার নতুন জীবনের সূচনা করার পালা।
ইয়ানাকে নিয়ে এখন সবাইকে বিদায় জানাবে আনাজ পরিবার। আনাজ উঠতেই দেখে তার জুতো জোড়া গায়েব হয়ে গেছে। বুঝতে আর বাকি থাকলো না এসব যমজ শালা-শালি ছাড়া কারো কাজ নয়। ডা. আনাজ কি করবে বুঝতে পারছে না। এমন সময় তার কাছে সুহানা এসে বলে,

—‘কি জিজু জুতো জোড়া খুঁজছেন নিশ্চই? চিন্তে নেই তা এখন আমাদের জিম্মায়। তাই আপনার অতি দামি জুতো গুলো পেতে হলে পাঁচ হাজার টাকা হাকাতে হবে, নয়তো খালি পায়ে যেতে পারেন। উই নেভার মাইন্ড।’
সুহানা দুষ্টুমি হাসি হেসে ওঠে। এক পর্যায়ে সবার সাথে হাসিতে যোগ দেন আনাজ। তারপর তার শেরওয়ানির নিচে থাকা প্যান্ট থেকে হাজার পাঁচেক টাকা বের করে সুহানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,

—‘খুশি তোমরা? ‘

—‘থ্যাংক ইউ জিজু, তবে আপনার একটু খোজা উচিত ছিলো, আপনার সোফার নিচেই!
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সবাই। ডা. আনাজ খানিকটা ভয়াবাচেকা খেয়ে যান এতে।
নিচের পানে চেয়ে দেখেন আসলেই তো কি বুদ্ধ গিরিটাই না তিনি করলেন!

গাড়িতে করে নতুন বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে ইয়ানা। তার মুখটা বিরক্তিতে ছেয়ে আছে। নাজনি লোকটা তার কি অবস্থা করবে, তার জিবনটা তিলে তিলে শেষ করে দিবে যত্তসব। বিয়ের সময় এর জন্য একটুকুও অশ্রু বিসর্জন দেয়নি সে। সে মনে করে ‘এই ফাউল ধান্দাবাজটার জনয় অযথা কেঁদে কেটে একাকার হওয়ার কোনো মানে হয় না!’ তবে বিদায় প্রহরে সবার কান্না দেখে মনটা ভার হয়ে আসছিলো তার, ইশশ, সবাইকে ছেড়ে থাকতে কি কষ্টটাই না হবে!
গাড়ির মাঝখানে বসেছে সে। এক দিকে ডাক্টার আনাজ আর অপজিটে আনাজের ছোট বোন আনজানা। গাড়ি আপনবেগে ছুটে চলছে৷ আনাজের পাশে বসতে এককথায় অসহ্য লাগছে ইয়ানার। গাড়ির উপরে থাকা লুকিং গ্লাসে তাকাতেই দেখে ডা.আনাজ বারবার তার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। ব্যাস মেয়েটার মাথা খারাপ হতে দু মিনিটও লাগলো না!
চেচিয়ে বলে,
—‘আপনি তো দেখছি মারাত্মক পরিমাণের লুচ্চা লোক।মেয়ে মানুষ দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, চোদ্দবার গাড়ির মধ্যে টাংকি মারছেন। সাধে কি আর ধান্দাবাজ বলি? ব্লাডি বিচচচ!’
ইয়ানার কথায় আনজানা ভ্যাবাচেকা খেয়ে হেসে দেয়। ডা.আনাজও কিছুটা বেকুব বনে যায়। তারই ভুল ছিলো ওই ঘ্যাড়তাড়া মেয়েটার দিকে তাকানো।
আনজানা আমতা আমতা করে ফিচেল কন্ঠে বলে,

—‘ওওওই ভাবি আসলে না ভাইয়া ঐ ওরকমি।বারবার তোমাকে দেখছিলো যে তুমি ঠিক আছো কিনা!

ইয়ানা আবার বলে,
—‘তোমার ভাইয়াকে একটু ম্যানার্স দিও। শুধু ধান্দাবাজি পারে হুহ।’

আনজানা কিছু বলতে নিলেই তাকে পাচ আঙ্গুল দেকিয়ে কোনোভাবে তাকে থামায় দেয় আনাজ। অপপাত এই মেয়েটার সাথে কথা বলা বোকামি।

————–
ফুল দিয়ে সুসজ্জিত রুমে বধূবেশে বসে আছে ইয়ানা। রাত বারোটা বাজছে তাও ধান্দাবাজটার কোনো কবর নেই। মনে মনে ভাবছে সে। সারাদিন শরীরের উপর দিয়ে বিরাট ধকল গেছে তার। যার দরুন প্রচুর টায়ার্ড হয়ে ঘুৃ আসছে তার। আর ভারি গয়না গাটি, শাড়ি পড়েও অসহ্য লাগছে প্রচুর। কিন্তু সবাই মানে মা-খালা-চাচিরা নির্দেশ দিয়েছে। স্বামি আসার আগে যেনো কিছুতেই না ঘুমায়। ক্ষুধাও পেয়েছে তার। পাশে থাকা দুধের গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পান করে সে। তারপর গ্লাসটা রাখতে যাবে ওমনি দরজায় আওয়াজ হয়। ভেতরে প্রবেশ করে আনাজ। ইয়ানা ফট করে গ্লাস টা রেখে দিয়ে হাত পা গুটিয়ে নেয়। মনে মনে আনাজকে শ-খানেক গাল দিয়ে বলে,
—‘এই ধান্দাবাজ ব্যাটাকে এখনই আসতে হলো?’
ইয়ানা ধরা খেয়ে গেচে দেকে খানিকটা হেসে দেন আনাজ। তার চোখে থাকা গোল চশমাটা জ্বলজ্বল করছে রাতের টিমটিমে আলোয়। মুখে হাসি এনে বলেন,
—‘ভিজে বেড়ালের মতো ভয় পাওয়ার দরকার নেই। এখন এটা তোমারও বাড়ি তুমি নিজের বাড়ি মনে করে থাকবে কেমন? ‘
ডা.আনাজের কথা শোনা মাত্রই ইয়ানা,
—‘ওহ আচ্ছা’ বলেই ওয়াশরুমের দিকে গটগট করে পা ফেলে চলে যায়।
এতে খানিকটা বেকুব বনে যান আনাজ। তার মুখে চিন্তার রেশ দেখা দেয়। খানিক বাদেই সে বিড়িয়ে আসে। তার শাড়ি চেঞ্জ করা আর সব মেক-আপ ধুয়ে ফেলা্। ভেজা চুলে দৃষ্টিকাড়া এক অনন্যরূপে দাড়িয়ে আছে ইয়ানা।

—‘কি হলো, যান চেঞ্জ করে এসে আমাকে ঘুমাতে দেন।’
বলে চুল মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইয়ানা। এক পর্যায়ে সে দেখে ডা. আনাজ ধিরে ধিরে কাছে এগিয়ে আসছে তার। খানিকটা ভয় পেয়ে যায় সে। আনাজ আরো কাছে এগিয়ে আসলে সেও পিছিয়ে যায় বারবার। এক পর্যায়ে আনাজ আরো কাছে এগিয়ে আসলে দেওয়ালের সাথে মিশে যায় সে। খিঁচে তার চোখ দুটো বন্ধ করে থাকে। একসময় কোনো রেসপন্স না পেয়ে আস্তে করে চোখ খুলতেই দেখে আনাজ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ফিচেল কন্ঠে বলে,
–‘এখন তো তুমিই শাওয়ার নিতে বললে তাহলে দরজা আটকাচ্ছো কেনো? ‘
আনাজের কথায় খানিকটা বোকা বনে যায় ইয়ানা। লজ্জায় মুক লাল বর্ণ ধারণ করে তার। সে কি কি ভেবে বসেছিলো মাই গড!
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
।। পর্বঃ ০৭।।

🌷🌷🌷

রৌদ্রজ্বল সকালে সূর্যের সোনালি রোদ ইয়ানাকে গায়ে ছুঁইয়ে দিতেই ঘুম ভেঙে যায়। বরাবরেরই মতো সে চিল্লাতে থাকে,

-‘উফফ মা কই তুমি, পর্দাটা ফেলে দাও না? অনেকক্ষণ ডাকার পর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে মুখে এক ঝাক বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে সে। ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে চোখ মেলে দিতেই নিজেকে আনাজের কাছে আবিষ্কার করে। বুঝতে বাকি থাকলো না ঘুমের মাঝেই এতো কাছে চলে এসেছে। জদিও কালকে তারা মাঝখানে আকাশ- পাতাল সমান তফাৎ রেখে ঘুমিয়ে ছিলো.. এতো কাছাকাছি দেখে খানিকটা ভড়কে যায় সে। চটজলদি নিজেকে সরিয়ে নেয় আনাজের কাছ থেকে। তার আগে একবার আনাজকে পরখ করে নেয়। ভাগ্যিস লোকটা উঠেনি। নাহলে কি মনে করতো ইয়ানা নিজেও জানে না।
ইয়ানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র সাতটা বাজে। এতো সকালে কি কেউ উঠেছে? কাউকে ডাক দেওয়া বোকামি হবে না তো? এসব ভেবে আনাজের দিকে তাকায় সে। কি নিষ্পাপ লাগছে আনাজকে তার মায়াভরা মুখে! কে বলবে, এই লোক একটা ধান্দাবাজ?
তার মনে পড়ে কালকে তার মামি-চাচিরা শিখিয়ে দিয়েছে পরের দিন সকাল সকাল শাওয়ার নিবি। মনে করতেই তার লাগেজের কাছে চলে যায় সে। লাগেজ থেকে কাপড় বের করছে এমন সময় তার হাত লেগে একটা ছবি উলটে পড়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে ছবিটা তুলতেই লক্ষ্যমান হয় নিলয়ের ছবি। যেখানে নিলয় হাস্যজ্জ্বল মুখে নদীর ধারে বসে আছে। তার ছবিটা দেখেই মুখ খানিকটা ভার হয়ে আসে ইয়ানার। তার কাছে থাকা ফোনটার কাচে ছুটে যায় নিলয় কোনো ম্যাসেজ দিয়েছে কিনা তা চেইক করতে। ফোনটা হাতে নিয়ে মুখটা ভার হয়ে যায় তার। নাহ, নিলয়ের কোনো ম্যাসেজ নেই। ছোট করে নিঃশ্বাস নেয় সে।
লাগেজ থেকে কালো রঙের শাড়িটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় সে। উদ্দেশ্য শাওয়ার নেওয়া।
কতক্ষণ পরে শাওয়ার নিয়ে বের হয় সে। আনাজ উঠে গিয়েছে। তার কোলের কাছে ল্যাপটপটা নিয়ে টাইপিং এ ব্যাস্ত সে। ইয়ানার শব্দ পেয়ে তার দিকে দৃষ্টি দেয় আনাজ। ইয়ানাকে শাওয়ার নিতে দেখে খানিকটা সন্দিহান দৃষ্টিতে চক্ষুজোড়াকে আবদ্ধ করে সে। তারপর কিছু একটা বুঝে আবার ল্যাপটপের দিকে চোখ দেয়।

–‘আপনি তো একটা ফালতুর ফালতু! নিজের বউকে গুড মর্নিং উইশটাও করলেন না?!’
ইয়ানার কথায় ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টি দিয়েই আনাজ বলে,

–‘সরি, আমার একটু প্রয়োজনীয় ডিল চলছে তো। গুড মর্নিং। ‘

-‘হেহ গুড মর্নিং না ছাই। সকাল সকাল উঠেই এই ধান্দাবাজটার মুখ দেখতে হলো। না জানি আজকে সারাদিন কেমন যাবে। যত্তসব’
কথাগুলো বিড়বিড়িয়ে বললেও তা ভালো করেই শুনতে পায় আনাজ। চশমাটা ঠেলে পড়ে, ইয়ানার দিকে চাহনি দিয়ে বলে,

–‘কালকে রাতে আমায় কতো জ্বালিয়েছো তার হিসেব রেখেছো?’

–‘কই কি__কি করেছি আমি? ‘
ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলে ইয়ানা।

–‘শুনতে চাও? কাল সারারাত ধান্দাবাজ ধান্দাবাজ করে বকবক করেছো। তোমার মনে আমি ধান্দাবাজ ক্যারেক্টারলেস লোক তাইতো?’
স্মিত হেসে আনাজ বলে।

–‘না না কখনোই না। আপনি ধান্দাবাজ লোকের কাতারেই পড়েন না!’
ঠোঁট উল্টিয়ে বলে ইয়ানা। সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে। ওই ধান্দাবাজ লোকটার সাথে থাকলে তাকে আর কি কি জিনিসের সম্মুখীন হতে হবে কে জানে?!
কি করবে বুঝতে না পেরে কিচেনের দিকে যায় সে। যেয়েই দেখে তার শ্বাশুড়ি মা উঠে গেছে। সাথে একটা মেয়েও কাজ করছে। ইয়ানাকে দেখে তার শ্বাশুড়ি মা সহাস্যে বলেন,

–‘ইয়ানা উঠে গেছো? এদিকে এসো মা’

–‘জ্বি আম্মু। কি করতে হবে বলুন’

–‘দেখো মা তুমি নতুন বউ। এখনই তোমাকে কোনো কাজ করতে হবে না। আগে এখানকার পরিবেশের সাথে এডজাস্ট হও। তারপর আমাকে হেল্প করবে।’

–‘উহু, মাকে হেল্প করার জন্য তো তার মেয়ে এসে গেছে। এখন আমাকে আর কষ্ট করে মানিয়ে নিতে হবে না। আপনারাও তো সবাই আমার আপনজন তাই না,?
ঠোঁটের কণায় হাসি বজায় রেখে বলে ইয়ানা।

–‘ঠিক আছে মা, তুমি এই ওমলেটটা করে দিতে পারবে? ‘

–‘খুব ভালো করেই পারবো মা।

ইয়ানা তার নতুন মায়ের সাথে কাজ করছে। মনটা একরাশ আনন্দে ছেয়ে যাচ্ছে বারবার।

আনজানা মা বলে ডাক দিতেই ইয়ানাকে পরোটা ভাজতে দিয়ে মেয়ের কাছে যান মিসেস.আয়না খান। ইয়ানা আনমনে পরোটা গুলো ভেজে যাচ্ছে।
এমন সময় তাদের কাজের বুয়া ইয়ানাকে জিজ্ঞেস করে,
-‘আমারে চিনতে পারছেন? এইহানে কাজ করার লেইগা আইছি।’

-‘জ্বি আপা আপনাকে চিনেছি’ (ইয়ানা)

-‘তো কাল রাতে ঠিকঠাক মতো শুইতে পারছেন?’

-‘হ্যা’ (ইয়ানা)

-‘এতো বড় একটা পোলার লগে বিয়া হইছে, আপনি তো সোনায় সোহাগা। ব্যাটারে বিয়া করার লেইগা দ্বারে দ্বারে মাইয়াগোর পালা লাগছে। কিন্তু সে আপনারেই বিয়া করলো!’

ইয়ানার মনে খটকা লাগে। আসলেই তো এতো বড় একটা জেরিয়াট্রিশান তাকেই কেনো বিয়ে করলো? এতো ভালো ভালো মেয়ে থাকতেও?
—————————

সবাই টেবিলে একসাথে নাস্তা করতে বসেছে সাথে ডা.আনাজও। একজন ডক্টরের ফুল গেট আপ এ সে। প্রতিদিন আনাজের মা খাবার পরিবেশন করলেও আজকে ইয়ানা রেনডমলি পরিবেশন করছে। মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আনাজের মা।

–‘বাবা, বিয়ের পরের দিন একটা তো ছুটি করতেই পারিস তাই না? সদ্য বিবাহিত তোরা। নিজেদের একটু টাইম দিবি না? ‘
মুখ ফুলিয়ে বলেন মিসেস.আয়না।

আনাজ নাবোধক মাথা নড়িয়ে খেতে খেতে বলে,
-‘কোন শাস্ত্রে লেখা আছে মা, বিয়ের পরের দিন ছুটি করতে হয়? ভুলে যেও না তোমার ছেলে একজন ডক্টর। আজকে না গেলে একটা পেশেন্ট বিনা চিকিৎসায় প্রাণে মারাও যেতে পারে। যদিও সেখানে আরো ডক্টর আছে। বাট সবার হেড আমি।

মিসেস.আয়না কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ ফুলিয়ে খেতে থাকেন। আনাজও খাচ্ছিলো্। হঠাৎ হকচকিয়ে ওঠে কাশতে শুরু করে সে। ইয়ানা তার কাছে যেয়ে পানি এগিয়ে দিতেই আনাজ সাথে সাথে কিচেনে চলে যায়। কিছু বুঝে না ওঠে ইয়ানাও তাকে ফলো করতে করতে কিচেন রুমে আনাজ গেলে খপ করে ধরে নেয় তাকে। এতে ইয়ানা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আনাজ বলে

–‘শাড়ি পড়তে কে বলেছে তোমায় হুম? ধ্যান কই থাকে তোমার? শাড়িটা যে নিশ্চিতে খুলে পড়ছে সেদিকে খেয়াল আছে? ‘

আনাজের কথায় শাড়ির দিকে তাকাতেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় ইয়ানা। আসলেই তো তার শাড়িটা খুলে পড়ছে! ইয়ানা অন্যখানে যেয়ে চটজলদি ঠিক করে নিয়ে আনাজের সামনে এসে বলে,

–‘পাঁজি লোক, আপনি যে কি কি লক্ষ্য করেন গড নোস!

–‘দেখো আমি বলেছি ফর দ্যা সেইক অব ইউ। এখন তো দেখছি ভুলই হয়েছে। নাহ, এবার আর শাড়ি খুলে পড়ে গড়াগড়ি খেলেও মুখ খুলবো না ঠিক আছে? ‘

আনাজের লাগামহীন কথায় কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে ইয়ানা। আমতা আমতা করে মুখে জড়তা নিয়ে বলে,
–‘না মানে সেটা মিন ক__করে আমি বলিনি। আপনি শুধু উল্টাপাল্টা ভাবেন যত্তসব! ‘

শেষের কথাটায় ঝাঁঝ মিশিয়ে বলে, চলে গেলো ইয়ানা। ডা.আনাজের মুখে হাসির আভাস। মেয়েটা পাগলামির জন্য সেরা প্রাইজটা ডিজার্ভ করে!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here