#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৮
টানা কয়েকদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর আজকে রোদের আলো ধরনীর বুকে উঁকি দিচ্ছে। ঝলমলে আলোয় ঢাকা নামক ব্যস্ত শহরের স্নিগ্ধ বিকেলটা বেশ ফুরফুরে।
ব্যালকোনিতে থাকা সদ্য লাগানো ফুলের চারাগুলোয় একে একে পানি দিতে ব্যস্ত আনজানা। গাছগুলোয় আর কিছুদিন গেলেই কলি আসতে শুরু করবে। চন্দ্রমল্লিকা, নয়নতারা, টগর, নীলকন্ঠ ফুলের গাছ দিয়ে ব্যালকোনিটা মুখরিত। আনজানার মন খারাপ হলে এখানে এসে সময় কাটায়। আর কয়দিন বাদে যখন ফুল ফুটবে তখন হয়তো ব্যালকোনি থেকে নড়াটাই দায় হয়ে যাবে।
গাছে পানি দেওয়ার সময় তার খেয়াল হয় আদ্রর কথা। ছেলেটা কেমন আশ্চর্যজনক! রক্ত নেওয়ার পরে আর পাগলামো করেনি। এমনকি আনজানার খোঁজও নেয়নি।ইয়ানার মনে মনে ক্ষোভের জন্ম নেয়। আদ্র কি তাকে মিস করছে না? নাকি অন্য করাণ আছে? কপালে চিন্তার রেশ ফুটে ওঠে তার। হঠাৎ কাঁধের উপর উষ্ণ স্পর্শ পেতেই চট করে মাথা নাড়িয়ে দেখে। খানিক ভরকে গিয়েছিলো সে।ইয়ানা কাঁধে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে।
–‘আনজু তোমার কি হয়েছে বলো তো? সবসময় এরকম মনমরা থাকলে চলে? ‘ (ইয়ানা)
নিশ্চুপ থেকেই ম্লান মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে আনজানা।
–‘থাক থাক এভাবে কষ্ট করে হাসতে হবে না। আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলোতো তুমি কি সত্যিই আদ্রকে ভালোবাসো? না মানে তুমি তো সেদিন দেখেছিলে যে ছেলেটা কিভাবে মেয়েদের রাস্তাঘাটে হ্যারেজ করে!’
–‘জানিনা ভাবি!’ তপ্তশ্বাস ফেলে আনজানা বলে।
–‘তবে কি আমি এটা বুঝে নিবো, যে তোমার মনে তার প্রতি ফিলিংস তৈরি হচ্ছে? ‘
–‘ছেলেটাকে মোটেও পছন্দ করতাম না আমি পারতপক্ষে তাকে যতো পারতাম এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু দেখো আমি কয়দিন সিলেটে ছিলাম তো ছেলেটা কিভাবে কষ্ট পেয়েছে! আমাকে না পেয়ে নিজেকেই ক্ষতবিক্ষত করেছে। আমি সত্যি তার ভালোবাসা দেখে শিহরিত! তাকে না দেখলে হয়তো জানতেই পারতাম না এভাবে আমাকে পাগলের মতোও ভালেবাসার কেউ আছে! সেই ছেলে আর যাই করুক আমাকে হার্ট করার চিন্তা মাথায় আনতে পারবে না।’
আনজানার কথা শুনে ইয়ানার মুখে হাসির ঝলকানি দেখা দেয়। আনজানার গালে হাত রেখে বলে,
–‘ তোমার প্রখর চিন্তাধারার প্রশংসা করতে হয়। এখন যেহেতু এটা তোমার ফিউচার তাই আমি নাক গলাতে চাই না। তবে, যা করবে ভেবে চিন্তে করবে। এখনো সময় আছে। অবশ্য এ ব্যাপারে আনাজ বাবার সাথে কথা বলছেন। বাবা তো মানতেই চাইছেন না। এখন দেখো কি হয়। আর এ ব্যাপারে এখন কাউকে বলো না। কথা ফাইনাল না হওয়া পর্যন্ত। মানুষ তো তিলকে তাল বনাতে ছাড়ে না!’
মাথা নাড়ায় আনজানা। তার মানে আনাজ তার বাবাকে মানিয়ে নেয়াচ্ছে! সেটারই সম্মতি নেওয়ার জন্য হয়তো ইয়ানাকে পাঠানো হয়েছিলো। আনজানা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ভাবলো কি কথা হচ্ছে একটু শোনা দরকার। পা টিপে টিপে ড্রয়িং রুমের কাছে যেয়ে এক কোনে দাড়িয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখে শোনার চেষ্টা চালায়। বাবার গলা পাওয়া যাচ্ছে, তবে কি কথা হচ্ছে তা স্পষ্ট ভাবে শোনা যাচ্ছে না। হতাশ মুখে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয় আনজানা।
—————————
–‘এখন বল তোর সুপার্ব ভাইটার অসাধারণ কীর্তির জন্য কিসের ডিগনিটি দিবি? ‘
আনাজের শব্দ কানে বেজে উঠলেই সেদিকে তাকায় আনজানা। এতোক্ষণ অস্থির হয়ে নিজের রুমটাতে পায়চারী করছিলো সে।
–‘মানে? বাবা রাজি হয়েছে? ‘
–‘হেহ বললেই হলো?…..
আনাজ আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুখটা পাঁচের মতো কুচকে ফেলে আনজানা। আনাজ খানিক হেসে আবার বলতে শুরু করে,
-‘মানে বাবাকে বললাম আর রাজি হয়ে গেলো না? এতোক্ষণ ধরে বুঝলাম এদিক সেদিক ঘুরিয়ে তবেই বাবা রাজি হয়েছেন।’
-‘আহা! সত্যি ভাইয়া? ‘ আনজানার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।
–‘তো তোকে কে মিথ্যা বলবে? ‘ (বিরক্তিকর আওয়াজ করে)
–‘ইয়ে, গ্রেটফুল ফর ইউ মাই সুপার সনিক ব্রো!’
আনাজের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে দুবাহুর মাঝে আবদ্ধ করে নেয় আনজানা। আনাজ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে,
–‘তুই কতো বড় হয়ে গেলি রে! আর কয়দিন ছোট থাকলে কি হতো? এখন আমি কাকে আদর করবো? ‘
–‘সবই যদি আমি পাই তাহলে ভাবিকে ঘরে তুললে কেনো? ‘ (ব্যাঙ্গের সুরে আনজানা বলে)
–‘ধূর ছাই, সব কিছুর মূল মা’ (আনাজ)
–‘এহেম…’ ইয়ানা গলা খাঁকারি দিতেই সেদিকে তাকায় আনজানা আর আনাজ। আনাজ তাকাতেই ইয়ানা তার দিকে চোখ রাঙায়। ভরকে ঢোক গিলে আনাজ।
–‘কি বলা হচ্ছিলো যেনো ভাইবোনের মধ্যে? ‘
ইয়ানা প্রশ্নে হেসে গড়াগড়ি দেওয়া শুরু করে আনজানা। আনজানার দিকে চোখ গরম করে তাকায় আনাজ।
–‘ওই___আসলে… তোমার সম্পর্কে কিছু বলিনি সুইটহার্ট! ‘
ইয়ানার হালকা ধমকানিতে কাবু হয়ে যায় আনাজ। অন্যদিকে তাকিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যায়। নিশ্চিত রাতে বেলা ইয়ানা এর জন্য জেরা আর শাস্তি নামক বাঁশগুলা রেডি রাখছে!
.#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৯
আদ্রর সামনাসামনি আসতেই এক ছটাক লজ্জায় আর অস্বস্তিতে জবুথবু হয়ে যায় আনজানা। অবশেষে সকল বোঝাপড়া শেষে আনজানাকে দেখতে এসেছে আদ্র। পুলকিত হৃদয়ে এক অন্যরকম উত্তেজনার মাদল বেজেই চলছে।
মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন আনুজ। মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই। তিনিও মেয়ের বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজছিলেন, তবে আদ্রর মতো কোনো ছেলে যে তার জামাইয়ের রূপ নিবে তা তিনি চিন্তাতেও আনতে পারেননি। তবে, মেয়ের খুশিটাই বড়। এছাড়া কিছুই করার নেই! আনজানার দিকে মনোনিবেশ করেন তিনি৷ মেয়ে যেভাবে মুচকি মুচকি হাসছে তাতে বুঝতে বাকি রইলো না মেয়ে এক পায়ে রাজি হয়ে বিয়ে করছে।
তবে, সমস্যা বাঁধলো এই জায়গায় যে আদ্রর মা-বাবা কেউই পৃথিবীতে নেই। আদ্রর যখন পনেরো বছর তখনই তার বাবা দেহ রেখেছে। দুবছর আগেও মা বেঁচেই ছিলেন। বারবার আদ্রকে বলছিলেন বিয়ে করে নিতে কিন্তু আদ্র ছিলো আনজানার জন্য অপেক্ষাকৃত। এতো দিন একা থাকতে কষ্টও কম হয় নি তার, মানিয়ে নিয়েছে। তবে কষ্ট করে পড়ে সেও এক বড় সড় বিজনেসের অনার। কাছের মানুষ বলতে কেবল গুটি কয়েক বন্ধুকেই বুঝে। তবে, আজকে বেষ্ট ফ্রেন্ডের মতো একজনকে নিয়েই পাত্রী দেখতে এসেছে।
এতোক্ষণ আনাজের সাথেই গল্প করছিলো সে। তার গায়ের গড়ন, উচ্চতা আর শালীনতাবোধ দেখে যে কারোরই পছন্দ হতে বাধ্য। এমনই আকাশচুম্বী সৌন্দর্যে ঘেরা দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী। তাই চোখের পলকেই সবার পছন্দ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য সেদিন আদ্রর ড্রিংক করার ব্যাপারটা আনাজ-ইয়ানা-আনজানাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। আয়না বা আনুজের কানে গেলে এমন ছেলেকে কখনোই জামাই করার স্পর্ধা করতেন না।
চায়ের ট্রে-টা নিয়ে আনজানার আগমনে ভালোবাসার বাতাস এসে বাড়ি খায় আদ্রর গায়ে। লাল শাড়ীতে একদম অপরূপা লাগছে আনজানাকে সন্দেহ নেই। কপালের লাল টুকটুকে টিপ টা মুখে এক অন্যরকম মায়া একে দিয়েছে। আর রক্তবর্ণের লিপস্টিক দেয়া ঠোঁটে যেনো এ্যালকোহল মিশ্রিত রয়েছে, নেশাক্তময়। আনজানা একে একে সবার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে আদ্রর কাছে আসে। আনজানার নজরকাঁড়া রূপ থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছিলো। আনজানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টেরই পেলো না আনজানা চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। পরে নিজের বেলাল্লাপনার কথা উপলব্ধি করতে পেরে নিজের চিন্তার অজস্র থুথু ছিটিয়ে দিয়ে অন্যদিকে মন দেয়। ঠোঁটের কোণে এখনো মিষ্টি হাসি দৃশ্যমান। তাদের প্রথম দিনেই এমন কান্ড দেখৈ ঠোঁট টিপে চাপা হাসি দেয় আনাজ-ইয়ানা। মনে মনে খুশি আনাজও। ভাইয়ের কর্তব্য পালন করতে পেরেছে সে!
–‘তো পাত্র-পাত্রীর দেখা দেখি হয়ে গেলে বিয়ের দিনকাল ধার্য করা যাক? ‘ (আনাজ)
–‘জ্বি জ্বি অবশ্যই!’ (আদ্র)
–‘কিসের বিয়ের দিন তারিখ ধার্য? এটা তো শুধু রেজিস্ট্রির ব্যাপার!’
আনুজের প্রথম কথায় সবাই ভরকে গিয়েছিলো। গলাতেও সিরিয়াস ভাবটা ছিলো। তবে পরের কথায় আদ্র যেনো প্রাণপাখি ফিরে পায়!
–‘হ্যা বাবা, রেজিস্ট্রির কথাই বলছিলাম’ (আনাজ)
–‘ এক সপ্তাহ পর করলে কেমন হয়? ‘ (আনুজ)
–‘বেশি দেরী হয়ে যাচ্ছে না? ‘
এই মুহূর্তে আনুজ আর আনাজ ই কথা বলছে। বাকি সবাই নির্বাক শ্রোতা!
–‘আ..ঠিক আছে যেটা সবাই ভালো বুঝেন।’ (আদ্র)
–‘হুম। সামনে ২৯ তারিখে তোমাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন কম্পিলিট হবে, আর আনজানার পড়ালেখা শেষ হলেই ঘটা করে বিয়ে দেওয়া হবে’
আনুজের কথায় সবাই একত্রে সজোড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে। আনজানা আর আদ্রর চোখাচোখি হয়। আদ্র লক্ষ্য করে আনজানার মুখটা লজ্জায় রঙিন হয়ে আছে।
এরমধ্যে আনজানা আর আদ্রকে কথা বলার জন্য আলাদা রুমে পাঠাতে চাইলেও যেতে চায়নি আদ্র। কারণ তার মতে, সেখানে সবাই নিজেদের জানার জন্য নতুবা কথা বলার জন্য যায়। দুটোই আনজানা আর আদ্রর মাঝে পূর্বেই ঘটে গিয়েছে। আর যা পার্সনাল কথা বলার আছে সব বিয়ের পরেই বলবে। তাই আর নিজেদের মধ্যে টাইম স্পেন্ড করা হয়নি। দিনকাল ঠিক হতেই সবাই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন।
এসময় আনাজ আদ্রর সাথে প্রাইভেটভাবে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে। আদ্র কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই যায়। আনাজ তার রুমে যেয়ে আদ্রকে বেডে বসায় তার হাত জোড়া ধরে অনুরোধের সুরে বলে,
–‘দেখো আদ্র, তোমার এই ভালোবাসা দেখেই কিন্তু আমার একমাত্র বোনটাকে তোমার অধীনে ন্যস্ত করছি। খুব আহ্লাদী একটা মেয়ে। কথায় কথায় অভিমান করতে ভুলে না। তবে আমাদের সবার প্রাণভোমরা। আমার বোনটাকে পরম যত্নে রেখো, যত ভালোবাসা দেওয়া যায় তার কমতি রেখো না। তোমার কাছে বিশেষ এসপেক্টেসন থাকবে, প্লিজ কখনো যেনো কষ্ট দিও না। নাহলে আমি মরে যাবো। আর ওর মধ্যে তেমন জেদ নেই, তোমার ভালোবাসাতেই কিন্তু সন্তুষ্ট থাকবে। মাঝে মাঝে বেড়াতে নিয়ে যেয়ো। আর হ্যা, ও একটু একঘেয়ে স্বভাবের মেয়েও বটে! যদি কখনো ঘুরতে যেতে চায় তাহলে নিয়ে যেও। আমি জানি তুমি তাকে খুব ভালোবাসো, এসব পালনও করবে। এই ভাইটাকে হার্ট করো না?!’
–‘ইনশাআল্লাহ, আপনি দোয়া রাখবেন আমাদের জন্য। আনজানা ছাড়া আমার পৃথিবীটা শূন্য। তাকেই উজ্জ্বলতার নক্ষত্র হিসেবে আমার জিবনে দেখেছি। তাকে পেয়েছি খোদার দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া। তবে, আপনাকে কথা দিচ্ছি তাকে হারাতে দেবো না’
–‘আলহামদুলিল্লাহ’! হাসির দূত্যি ছড়িয়ে পরে আনাজের মুখে। এটারই আশাবাদী ছিলো সে…
.
.#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৪০
ভাদ্রমাসের এই বৃষ্টিসিক্ত দিনেই বিয়ে হচ্ছে আদ্র-আনজানার৷ আনাজের পরিবার খুশির অবলীলায় মেতে উঠেছে। বহিরাগত কিছু মেহমানদের নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করো সেরে ফেলা হবে আনজানা আর আদ্রর বিয়ে। আদ্র কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ডদের নিয়ে এসেছে। আনাজদের কিছু আত্মীয় আর ইয়ানার পরিবার। ব্যাস এরাই। ইয়ানারও বেশ লাগছে, এতোদিন পর বাসায় তার পরিবার এসেছে। তার ভাইবোনকে দেখে ভীষণভাবে খুশি হয়েছো।
আয়নার সামনে বসে আছে আনজানা। একটু পর ইয়ানা ভাবি এসে মেকওভার করে দিবে। মনে মনে লাড্ডু ফোটার মতো লাগছে তার। খানিক বাদেই ইয়ানা আসে তার সামনে। তাকে দেখে মুচকি হেসে শাড়ী পড়াতে শুরু করে। হালকা মেকআপ করিয়ে দিয়ে একটা স্মার্ট লুক এনে দেয়। বেশ টিপটাপ ব্রাইড লাগছে আনজানাকে। তেমন সাজগোজ নেই। হাতে চুড়ি আর গলায় গলায় একটা স্বর্ণের চেইন আছে। এটাই জাস্ট। আনজানাও গয়নাগাটিকে পছন্দ করে না। শাড়ীটাও একদম বেনারসি নয়। খুব সিম্পল কাজ করা আর্টিস্টিক প্যাটার্নের সিল্কের শাড়ী। এটাতেই কমফোর্ট ফিল করছে সে।
কপালে টিপ দেওয়ার পরে মাথার ঘোমটাটা টেনে দিয়ে আনজানার বাহুদ্বয় ধরে নিচে নিয়ে যায় ইয়ানা। নিচের বড় ড্রয়িংরুমটায় অতিথির সমাগমে মুখরিত। আনজানা শাড়ির কুচিগুলো ধরতে ধরতে নিচে নেমে আসে। সবার চাহনিবিদ্ধ হয় আনজানাতে। হালকা সাজেও অসাধারণ লাবণ্যময়ি লাগছে তাকে। সবাই তার কাছে এগিয়ে আসে। এসবে একটু লজ্জিত বোধ করছে আনজানা। মাথা খানিকটা নিচু করে যথা সম্ভব কথা বলছে। মাঝেমাঝে তার দুষ্টু মনটা আদ্রর খোঁজ করছে। তবে, এদিক ওদিক তাকিয়েও আদ্রর খোঁজ পায় না। রাগ ওঠে তার। ছেলেটা গেলো কই! সবার সাথে আলাপচারিতা শেষে বেলকনিতে ঢু মারতে যায়। সেখানেই আদ্রকে আবিষ্কার করে সে। আদ্র তাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। আজকে অন্যরকম হ্যান্ডসাম হাঙ্ক লাগছে আদ্রকে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি, চুলটা জেল দিয়ে সেট করা। আদ্র হেসে উঠতেই তার গজদাঁতটা আবার বেরিয়ে আসে। আনজানা কিছুক্ষণ গজদাঁতটার দিকে মোহময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর বুঝতে পারে সে কি করছিলো। এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে আদ্রর কাছে থাকলে সে আর নিজের মধ্যে থাকে না। হারিয়ে যায় এক কল্পনার রাজ্যে। যেটা শুধু ভালোবাসাময়।
–‘আমাকে খুঁজছিলে মনে হচ্ছে? ‘ (আদ্র)
–‘ক..কই না তো!’ (জড়তার সাথে আনজানা বলে)
–‘আমার আনজুপরিটা মিথ্যে বলা শিখেছে দেখছি? ‘
আদ্র রম্যের সুরে বললেও ব্যাপারটা ভালো লাগে নি আনজানার। কিছুটা রেগে গিয়ে আদ্রর পাঞ্জাবির গলা ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। আনজানার এমন কাজে হকচকিয়ে যায় আদ্র। মুখের মাঝে সল্প জায়গা অবশিষ্ট রেখে বলতে শুরু করে,
–‘আমার সাথে মশকরা হচ্ছে জি? বিয়ের পর মশকরার মাশুল কিন্তু গুণতে হবে’
ডেভিল হাসি দেয় আনজানা। মুখে হাসি রেখে ঢোক গিলে আদ্র। আনজানা হঠাৎ সিরিয়াস মুখভঙ্গি করে। হাসিটা মুখ থেকে নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়। অবাক হয়ে যায় আদ্র। আড়ষ্টভাব নিয়ে ‘কি হয়েছে’ বললেই উন্মাদের মতো আনজানা হেসে উঠে। বোকা বনে যায় আদ্র।
–‘ এই তোমার মুড সুইং এর রোগ আছে? ‘
–‘এমন বলছো কেনো? ‘ অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে অভিমান করে বসে আনজানা। আনজানার এমন বাচ্চামি দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে আদ্র হেসে দেয়। আনজানাও হাসতে শুরু করে। হাসতে হাসতে একসময় আদ্র আনজানা একে অপরের মাঝে হারিয়ে যায়।
তাদের হাসির শব্দ শুনে ইয়ানা দেখতে আসে। চুপিচুপি কোটর থেকে দেখতে পায় তাদের উন্মাদনা। হাসি দমিয়ে রাখতে পারে না ইয়ানা। একসময় সেও শব্দ করে হাসতে শুরু করে দেয়। হঠাৎ হাসি থামিয়ে চমকে যেয়ে ভাবির দিকে তাকায় আদ্র আর আনজানা। তাদের ভাবি এতোক্ষণ দেখছিলো ভেবে লজ্জা বোধ করে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে। ইয়ানা কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলে,
–‘আমি কিন্তু কিচ্ছুটি দেখিনি হুম! তো তোমরা যে এখনই হাসা হাসি , নাচানাচি করছো বিয়ে হলে তখন কি মুখ গোমড়া করে বসে থাকবে? ‘
আবার হাসতে শুরু করে ইয়ানা। তারপর তাদের কোনোরকম ডেকে ভেতরে চলে যায়। সেখানে এতোক্ষণ থাকলে নির্ঘাত হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যেতো!
————————– ❀
তিন কবুলের মাধ্যমে সবচেয়ে পবিত্র বন্ধন স্বামী-স্ত্রী তে রূপান্তরিত হয় আদ্র-আনজানা। রেজিস্ট্রার পেপারে সাইন করার সময় চোখ থেকে একফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়েছিলো আদ্রর। ব্যাপারটা উপস্থিত কারোই দৃষ্টিগোচর হয় নি। নিজের ভালোবাসার মানুষটা কাছে পাওয়ার মতো সুখটা অন্যরকম। এটা কথা দ্বারা বোঝানো আদৌ সম্ভব না। আনজানার সে মূহুর্তে ইচ্ছে হচ্ছিলো আদ্রকে জড়িয়ে ধরার। মানুষ থাকায় তা আর হয় নি। সবার সামনে আদ্রর হাতটা শক্ত করে ধরলো সে….
চলবে,,,
চলবে,,,
.
চলবে,,,