#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৮.
#WriterঃMousumi_Akter
ওয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি আমি আমার হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান। উনার মুখশ্রির অদলে বেশ পরিবর্তন সেই রাগি ভাবটা আর নেই।আমি উনার থেকে নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করছি।নিঃসন্দেহে বিহান ভাই একজন শক্ত পক্ত শক্তিশালী মানুষ উনার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা যে বৃথা চেষ্টা তাতে কোনো সন্দেহ নেই।রাগে ফুঁশ ফুঁশ করছি আমি।আমার দিকে খানিক টা ঝুঁকে রয়েছেন উনি।
“আমি রাগি রাগি ভাবে বলেই যাচ্ছি ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন আগে আমাকে।অসভ্য কোথাকার একটা মেয়েকে এভাবে চেপে ধরে রেখেছেন কেনো?”
“ছাড়ার জন্য তো ধরি নি।আর জীবনেও ছাড়বো ও নো বুঝলি পিচ্চি।”
“কেনো ধরবেন আমাকে আপনি?আমি কি আপনার বউ না প্রেমিকা।”
“আচ্ছা আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাইনা?আজ যা খুশী বলতে পারিস আমি রাগ করবো না।”
“রাগ করলে আমার কি যায় আসে।আপনি আম্মুকে আলিপ ভাইয়া কে নিয়ে মিথ্যা বলেছেন কেনো? যে আলিপ ভাইয়া আমাকে লাইক করে।”
“যা বলার ঠিক ই বলেছি।আমার জাস্ট আলিপ কে সহ্য হয় না।ভাবতেই শরীর আগুন হয়ে যাচ্ছিলো যে তুই ওর দেওয়া কিছু ইউজ করছিস।আমি যদি আলিপ কে আর কখনো তোর ত্রী সীমানায় দেখি তাহলে এর চেয়ে খারাপ কিছু করবো বলে দিলাম।কি সাহস আমার জিনিসে নজর দেয়।”
“সব কিছু কি আপনার ইচ্ছামতো হবে নাকি।যখন ইচ্ছা বকবেন আবার যখন ইচ্ছা মিষ্টি কথা বলবেন।”
“হ্যাঁ সব আমার ইচ্ছাতেই হবে।”
“দেখুন বিহান ভাই আমি আপনার বউ ও না গফ ও না তাই দয়াকরে আমাকে টর্চার করা অফ করুণ।আপনাকে সাতশ টাকা ফেরত দিলাম তার পরিবর্তে এক হাজার টাকা দিয়েছেন কেনো?”
!আবার ফেরত দিলে আবার ও ডাবল দিবো।
কারন তুই আমাকে ভাই ভাবলেও আমি কখনো তোকে বোনের নজরে দেখি না।এটা বুঝিস না তুই।”
এমন সময় আয়রা টা এসে আমাদের এভাবে দেখে নিয়ে মুখে হাত দিয়ে মুখ চেপে হেসে বললো,কি মজা বিহান ভাইয়া আর দিয়াপু প্রেম করছে।
কথা টা শুনেই বিহান ভাই কয়েক হাত ছিটকে গিয়ে পড়লো।আমি চোখ বড় বড় করে আয়রার দিকে তাকিয়ে বললাম কিরে আয়রা খুব পেকেছিস তাইনা প্রেম মানে কি হ্যাঁ।এই বয়সে তুই প্রেম কি সেটাও বুঝিস।আয়রা টা হেসে দিয়ে বললো হ্যাঁ আব্বু আম্মুকে দেখেছিলাম৷ এভাবে জড়িয়ে ধরে প্রেম করে।আমি চোখ আরো বড় বড় করে বললাম তা উনি৷ কি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন নাকি মিথ্যা বললে থাপ্পড় দিবো ধরে।আয়রা টা বললো ওরকম ই মনে হলো।বিহান ভাই খানিক টা দূরে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে রইলেন।ইস রে বিহান ভাই এর মান ইজ্জত সব এবার ই শেষ।এই আয়রা টা জনে জনে সবাই কে বলে বেড়াবে।
বিহান ভাই কে বললাম,ভদ্রলোকের মতো আমার উপন্যাস টা দিন।আমি এখন যাবো।
বিহান ভাই কপাল কুচকে তাকিয়ে বলেন,কিসের উপন্যাস।আর এসব উপন্যাস পড়ে পড়ে তো দেবদাসি হয়ে যাচ্ছিস। এই উপন্যাসে দেখলাম দিয়া নামের মেয়েটি মারা গিয়েছে।তা এসব ট্রাজেডি উপন্যাস পড়েই তো তোর এই অবস্থা। তোর থেকে আয়রার বুদ্ধি আছে ভালো। আয়রা ও ভালো বোঝে কোনটা প্রেম আর কোনটা অন্য কিছু।
খানিক টা রাগ দেখিয়ে চলে এলাম বাড়িতে।
প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। বিহান ভাই ও ঢাকায় ফিরে গিয়েছেন।আবার সব স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।মান অভিমান কিছুটা কমেছে।
_______________________________
খুলনা যেতে হবে বাসার সবার দাওয়াত।বিভা আপুর শ্বশুর বাড়ির থেকে দাওয়াত এসছে। সেখানে বিভা আপু আর তার বর আরিফ কে নিয়ে একটা অনুষ্টান এর আয়োজন করা হয়েছে।সবাই যাবে কিন্তু আমি বলে দিয়েছি যে আমি যাবো না মানে আমি যাবোই না।কারণ বিহান ভাই আজ ঢাকা থেকে আসছেন উনিও যাবেন।আর সারাক্ষণ দুনিয়ার বাজে কথা বলবেন আমাকে।মামা বাড়ির যে কোনো অনুষ্টানেই আমার কাজিন রা নিমন্ত্রিত থাকে।মামা প্রাইভেট কার ঠিক করতে চেয়েছে কিন্তু বিভোর ভাই বলে দিয়েছেন বাসে চড়ে মজা করতে করতে যাবেন।মামাবাড়িতে ঘরোয়া মিটিং বসেছে সেখানে কিভাবে যাওয়া হবে সেই নিয়ে আলোচনা চলছে।আমার যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু আম্মুর দাঁত ঝাকিতে যেতে বাধ্য হলাম।বাড়ির মুরব্বিরা সবাই বিভোর ভাই দের ফ্ল্যাটে প্লান করছে যাওয়ার সময় কি নিয়ে যাবে না যাবে সে বিষয় নিয়ে।আমরা কাজিনেরা সবাই ছাদে পাটি বিছিয়ে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি।ইচ্ছা করেই বিভোর ভাই দের ছাদে আড্ডা দিচ্ছি।কারণ জানি এখানে বিহান ভাই এর আসার চান্স নেই।বিভোর ভাই আড্ডা দেওয়ার সময় আমাদের কাজিনদের সবাই কে ফোন দিয়ে ডেকে আনেন।
ছাদে প্রেম নিয়ে ভীষণ গবেষণা চলছে।এমন সময় দ্যা গ্রেট বিহান ভাই গম্ভীর মুডে হাজির হলেন। গায়ে কফি কালারের টি-শার্ট পরণে ব্লাক জিন্স।জিন্সের পকেটে হাত গুজে ছাদের রেলিং ঘেষে এসে দাঁড়ালেন।এখানে যারা আছে সবাই বিহান ভাই ভক্ত শুধু আমি বাদে।মেহু আপু বিহান ভাই কে ডাকলো,”বিহান ভাই এখানে আসুন না আমাদের পাশে বসবেন”।তোহা আপু ও ডাকলো, “বিহান ভাই আসুন না প্লিজ আমার পাশে বসবেন।”বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে এসে আমার পাশে এসেই বসলেন।এমন সময় বিভোর ভাই তার প্রস্তাব টা রাখলেন যে আমরা বাসে করেই যাবো অনেক মজা হবে তাতে।ছেলেরা সবাই রাজি অন্য কারো কোনো আপত্তি না থাকলেও আমি ভীষণ আপত্তি জানালাম।জোরে বলে উঠলাম, আমার আপত্তি আছে আমি বাসে যেতে পারবো না।সবার সব উৎসাহে পানি ঢেলে গেলো।সবাই এক সাথে বলে উঠলো কেনো?আমি বললাম বাসে উঠলে আমার বমি পায় খুব।আমি কিছুতেই বাসে যেতে পারবো না।
কারো কোনো আপত্তি না থাকলেও বিহান ভাই তার গা জ্বলানো কথা শুরু করলো।
“মেয়ে মানুষ মানেই সমস্যা।শুধু সমস্যা বললে ভুল হবে মহা সমস্যা।মেয়ে মানুষের জন্যই পৃথিবীতে এত সমস্যা।তার উপর যদি এমন ভয়ানক মহিলা হয় তাহলে তো আর সমস্যার শেষ নেই।এই মহিলা মানে আরো বেশী সমস্যা।”
“কথাটা পড়তেই রাগের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলাম।কি ব্যাপার সবাই কে মেয়ে বলছেন আর আমাকে মহিলা বলছেন কেনো?”
“শুধু মহিলা নয় ভয়ানক মহিলা তুই।কারো কোনো সমস্যা নেই সব সমস্যা তোর।দুনিয়ার সব সমস্যা নিয়েই জন্ম হয়েছে তোর।”
“আমি যাবোই না।”
“তুই না তোর ঘাড়ে যাবে।আর বাসে চড়েই যেতে হবে তোর।”
আলিপ ভাইয়া বলে উঠলেন,”বিহান ভাই দিয়া কে বকছেন আপনার গফ যদি বাসে চড়তে না পারে তখন কি করবেন।”
“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,,আমার গফ নিয়ে গবেষনা আর কত চালাবি তোরা”
আলিপ ভাইয়া বললেন,”আমার গফ বাসে চড়তে না পারলে তার হাত ধরে হেঁটে তেপান্তর পাড়ি দিবো।”
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলএন,”সিওর আলিপ।”
“ইয়েস ভাইয়া।”
“ওকে কাল দিয়ার সাথে হেঁটে খুলনা যাবে।”
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,”জ্বী না আমি মোটেও হাঁটতে পারি না।”
বিহান ভাই বলে উঠলেন,”বাসে চড়তে পারবি না হাঁটতে পারবি না তাহলে কি প্যারাসুট এ যাবি।”
“আপনার সাথে আমি কথা বলছি না ওকে।”
বিহান ভাই আবার শুরু করলেন,”তাহলে আলিপ কাল তোমার ভালবাসার পরীক্ষা হবে।তেপান্তর নয় জাস্ট খুলনা হেঁটে যাবা।”
তিয়াস ভাই বললঅ,”ও হেঁটে যেতে যেতে আমরা বাড়ি ফিরে আসবো।”
বিহান ভাই বললেন,”আগে গিয়েই বুঝুক।মুখে বলে মেয়েদের ইমপ্রেস করাটা খুব ইজি ব্যাপার কাজে করে দেখানো মোটেও ইজি নয়।”
তিয়াস ভাইয়া বললো,”বিহান ভাই মানুষ কাউকে ভালবাসলে তার জন্য সব করতে পারে অসম্ভব কিছু নয়।”
“সিরিয়াসলি!তোদের মতো গফের জন্য হাত কাটতে পারবো না,গফের কথায় উঠতে বসতে পারবো না,রেগুলার গফ নিয়ে স্যাডনেস স্টাটাস দিতে পারবো না।”
আমি বললাম, “তাহলে ভালবাসবেন কিভাবে?”
“সোজা বিয়ে করে।বিয়ে করে তাকে আমার মতো করে সাজিয়ে নিবো।মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম।বোঝে কম চিল্লায় বেশী ওদের মতো হবো কেনো?পুরুষ জাতির একটা সম্মান আছে না।তাদের কে আমাদের মতো করে তৈরি করবো।”
“আমি বললাম,শুনুন মোটেও বাজে কথা বলবেন না।মেয়ে মানুষ বোঝে কম চিল্লায় বেশী।বুদ্ধি কম।”
“ক্যানো দিয়া তাতে কোনো সন্দেহ আছে?”
“অবশ্যই বিহান ভাই আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
“আমার শ্বশুরের মেয়েকে দেখে বোঝ, তার জামাই যে তার মেয়ের পিছে ছুটছে সে বুঝতেই চাইছে না।তাহলে কি মেয়ে মানুষের কোনো বুদ্ধি আছে বল।থাকলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারতো।তাই আমি আমার কথা উইথড্র করলাম না।”
মেহু আপু বললো,”আরে বিহান ভাই আপনার ও গফ আছে?এটা কি শুনালেন?কে সেই মহোয়সী নারী।আমি সিওর নিশ্চয় ভীষণ ম্যাচুরিটি সম্পূর্ণ কোনো মেয়ে।”
রিয়া বললো,”নিশ্চয়ই ডাক্তারি পড়ে তাইনা বিহান ভাই।”
তোহা আপু বললো, “নিশ্চয় ঢাকা শহরের সেরা সুন্দরী কোনো মেয়ে।কারণ বিহান ভাই প্রপোজ করলে ফিরিয়ে দিবে এমন কোনো মেয়েই নেই।”
রিয়া বললো, “বিহান প্রেম করলে তো আর যার তার সাথে প্রেম করবে না সব দিকে পরিপূর্ণ শিক্ষিত কম কথা বলে এমন মেয়ে।”
সাডেন বিভোর ভাই জোরে পড়া শুরু করলো, “বিহান জানো অনেক মিস করছি তোমায়।ফ্রি হয়ে কল দাও।”
ইয়াহু পেয়ে গিয়েছি বিহানের গফের মেসেজ।প্রেয়সী দিয়ে সেভ রাখা।বিহান তলে তলে এত দূর।ভালবেসে আবার প্রেয়সী দিয়ে সেভ রাখা।
বিহান ভাই এবার বললেন,সবার বকবক শেষ হলে এবার বলি গাইস।তার আগে বিভোর আমার ফোন দে।পারসোনাল জিনিস দেখা ঠিক না মোটেও।
আমার গফ তোদের কারো বর্ণনার সাথে মেলে নি।তবে সে সত্যি খুব সুন্দর। প্রেমে পড়ার মতোই।ম্যাচুরিটির “ম” ও নেই তার মাঝে।এই রেগে যচ্ছে এই রাগ কমছে।এই বেত লাফাচ্ছে, এই কার্টুন দেখছে। ভীষণ অবুঝ আর রাগের ডিব্বা একটা।তার সাথে রোজ কথা হয় না।দু’এক মাস পর পর দেখা হয়।সে জানেই না তাকে আমি ভালবাসি।জানলেও বলবে মজা করছি।না হলে রিজেক্ট করবে।কারণ তাকে বিরক্তি করি এটা সে মেনে নিতেই পারে না।এখন যদি সে জানে এগুলা তার নামেই বলছি না জানি কত কি ভাববে।
বিভোর ভাই বললেন,ইস কত নারীর যে কপাল পুড়লো সো স্যাড।
_________________________________
পরের দিন সকাল দশ টায় আমরা রওনা হলাম খুলনার উদ্দেশ্য। বাসে যে যার মতো সিট নিয়ে বসে পড়লাম।রিয়া আর বিভোর ভাই পাশাপাশি সিটেই বসেছে।আমি আর মেহু আপু এক সিটেই বসেছে।বিহান ভাই আর শুভ ভাইয়া এক সিটেই বসেছে।মুরব্বিরা আমাদের আগের সিট গুলাতে বসেছে।শুভ ভাইয়া বিহান ভাই কে রিকুয়েষ্ট করলো সে মেহু আপুর সিটে বসবে।বিহন ভাই বাধ্য হয়ে উঠে এলেন মেহু আপুকে বললো মেহু সামনের সিটে যাও।মেহু আপু খুশি মনে উঠে চলে গেলো।আমার পাশে রাক্ষস মানব এসে বসলেন।পাশের সিটের এক গাদা মেয়ে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে আছেন। বোঝায় যাচ্ছে তারা বিহান ভাই এর প্রতি ক্রাশড।মেয়ে গুলার হাসি দেখে গা জ্বলছে আমার।
রিয়া হুড় হুড় করে বিভোএ ভাই এর গা ভরে বমি করে ভাষিয়ে দিলো।বিভোর ভাই এর যা অবস্থা দেখার মতো না।এইদিকে মেয়ে গুলো এসে বিহান ভাই এর নাম্বার চাইছে।বিহান ভাই কিছু বলার আগেই আমি উনার নাম্বার টা বলে দিলাম।বিহান ভাই রেগে একবার তাকালেন আমার দিকে।এমন সময় আমার ও বমি পাচ্ছিলো।বিহান ভাই দ্রুত একটা পলিথিন ধরলেন আমার সামনে।বমি শেষে বললেন,সামান্য রাস্তা জার্নি পারিস না।বমি করে ক্লান্ত হয়ে বিহান ভাই এর কাঁধে মাথা রাখলাম।বিহান ভাই আমার মুখের দিকে একবার তাকালেন মাত্র।কাকে যেনো ফোন দিলেন,
রমিম আমার বাইক টা নিয়ে আয় তো দ্রুত।চাবি আছে বাসায় এলিনা আন্টি আছে উনার কাছে চাইলেই দিবে।পিচ্চি বাসে চড়তে পারছে না।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৯.
#WriterঃMousumi_Akter
বাসের মধ্য বিহান ভাই এর কাঁধে মাথা দিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছি আমি।চোখ মেলে চাইতেই পারছি না।মাথা টা ঝিম ঝিম করছে আমার।বিহান ভাই মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।একটা গ্যাসের ট্যাবলেট আর সাথে একটা বমির ওষুধ খাইয়ে দিলেন।বিহান ভাই এর বুকে গিয়ে মাথা ঠেকে গেলো।
অপরদিকে বিভোর ভাই এর যে কি অবস্থা। বিভোর ভাই এর শরীর রিয়ার বমিতে একাকার অবস্থা। শুভ ভাইয়া বললো বিভোর প্রেমের অমৃত খেয়ে ফেলতে পারিস ভাই।বিভোর ভাই শুভ ভাইয়ার কথা শুনে রেগে কি একটা অবস্হা।বাস ভর্তি মানুষ এর মাঝে শার্ট খুলে ফেললেন।গায়ে সেন্ডো গেঞ্জি পরে শার্ট জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন।রিয়াকে ফিস ফিস করে বলছে এখন তোমার জামা আমাকে দাও।বাস ভর্তি মানুষ আমার ইজ্জত দেখছে।রিয়া হেসে দিয়ে বললো ওকে দিলাম তাইলে নেন।বিভোর ভাই বললেন,আরে না না ভুলেও না।এইজন্য ই তো নিব্বি বলি। নিব্বি না হলে কেউ এই বাসের মধ্য নিজের ড্রেস খুলতে চায়।
–আম্মু এসে আমাকে খানিক টা বকা দিলো।এখনো বাসে চড়া অভ্যাস করতে পারলাম না।ঢাকা লেখাপড়ার জন্য কি করবো আমি।এই মেয়ে দিয়ে কিচ্ছু হবে না কত কিছু।শুভ ভাইয়া বললো আম্মু,দিয়া ছোট মানুষ ওকে বকা দিও নাতো।আস্তে আস্তে সব পারবে।আলিপ ভাইয়া এসে বললো দিয়া কেমন লাগছে এখন।বিহান ভাই বিরক্তি নিয়ে বললেন, ওকে দেখে বুঝছো না কেমন লাগছে ওর।উফফ বুঝিনা সব সমস্যা গুলো সব সময় আমার সামনেই আসে ক্যান।মাইয়া মানুষ মানেই সমস্যা।সেখানে যাবে সমস্যার সৃষ্টি করবে।আবার তাদের আশ পাশের প্রেমিক গুলার ন্যাকামি জাস্ট অসহ্য।আলিপ ভাইয়া বললো কে কি করেছে ভাইয়া।বিহান ভাই বললেন,প্লিজ গো টু ইওর সিট নাও।
বিহান ভাই ড্রাইভার কে বাস থামাতে বললেন,ড্রাইভার বাস থামিয়ে দিলেন।পাশের সিটের মেয়েটা বললো,নেমে যাচ্ছেন নাম্বার টা।বিহান ভাই বিরক্ত হয়ে বললেন আমাকে নেটওয়ার্ক এর মধ্য খুজে পাবেন না।এই পিচ্চিকে দেখছেন আপনার ফোন ই আস্ত রাখবে না।সো এগুলা চিন্তা বাদ দিন।
রমিম ভাইয়া বাইক নিয়ে চলে এলো।বিহান ভাই আম্মুকে বললো,ফুপ্পি আমি দিয়াকে নিয়ে বাইকে যাচ্ছি।আম্মু বললো সাবধানে যাস বাবা।রমিম ভাইয়া বিভোর ভাই এর জন্য ও শার্ট নিয়ে এলেন।বাস থেকে ক্লান্তি নিয়ে নামলাম।বাস টা আবার ছেড়ে দিলো।রমিম ভাইয়া আমাকে দেখে বললো,কি ব্যাপার দিয়া এত ক্লান্ত হয়ে পড়েছো যে।আগে বাসে চড়ো নি।ক্লান্তি নিয়ে বললাম বাসে চড়তে পারি না আমি।
–রমিম ভাইয়া বললো বিহান প্রেয়সী বার বার কল দিচ্ছে।তুই নাকি মেসেজ সিন করছিস না,সে না খেয়ে হাত কেটে ফেলছে।বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন বিহান ভাই যেনো এমন একটা মুহুর্তের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।আমি কপাল কুচকে তাকালাম উনার দিকে।
–বিহান ভাই রমিম এর দিকে তাকিয়ে বললেন,,কেনো প্রেয়সীর সমস্যা কি?স্যাকা খেয়েছে নাকি?স্যাকা খেয়ে হাত ফাত কাটলে আমি সান্তনা দিতে যাবো না।এগুলা সাইকো মার্কা মানুষ জাস্ট বিরক্তিকর।
–না তুই মেসেজ সিন করছিস না তাই।
–মেসেজ আনসিন এর জন্য হাত কাটলে ব্লক ডান বলে দিস।ইউ এন্ড শি নো ভেরি ওয়েল হু আই এ্যাম।সো ওর জায়গা ব্লক লিস্টেই থাকবে।
–থাক ভাই পাগলামি করিস না।ফোন টা রিসিভ করিস। বুঝিস না ভার্সিটির সেরা সুন্দরী, ডাক্তার বাবার মেয়ে।তুই বলতে পাগল।
–আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রমিম ভাইয়ার কথা শুনছি বিহান ভাই এর কিঞ্চিত দৃষ্টি আমার দিকে।আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যে আমি কি ভাবছি।বিহান ভাই এর দিকে চোখ পড়তেই অনিচ্ছাকৃত হাসি দিলাম আমি।
–বিহান ভাই রমিম ভাইয়া কে বললো,বাহ ভাই নাইস।বিশাল উপকার করলি।কোন টাইমে যে কি বললি।অনেক বড় উপকার হলো আমার। শালা ডাফার কি বাঁশ যে দিয়ে দিলি।
–অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললাম, ইয়ে রমিম ভাইয়া আমাদের ভাবি বুঝি খুব সুন্দরী।
–রমিম ভাইয়া হেসে দিয়ে বললো অনেক সুন্দর দিয়া।দেখলে চোখ ফেরাতে পারবা না।বিহানের সাথে খুব মানায় তাকে।
–ভাই আর ভাবির রিলেশন কবে থেকে।
–ভার্সিটির প্রথম থেকেই এই গুঞ্জন শোনা যায়।
–বিহান ভাই রমিম ভাইয়ার দিকে রেগে গিয়ে বলেন শালা প্রেয়সী তোর ক্রাশ আমার কিছুই হয় না।হুদাই আমাকে বিরক্ত করে। আমার জাস্ট অসহ্য লাগে।আর তুই কার সামনে কি বলছিস। এমনি ওর মাথায় সমস্যা উলটা পালটা বুঝবে সিওর।অটো এসছে এইবার বিদায় হ শালা।
একটা অটো করে রমিম ভাইয়া চলে গেলো…..
————————– ————————-
একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা।ওই জায়গা টায় এত সুন্দর। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে অনেক দূর পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়া গাছের ছড়াছড়ি।প্রকৃতির এক লাল পরিবেশ চারদিকে তেমন কোলাহল নেই।আমি পায়ের জুতা খুলে পিজ ঢালা রাস্তায় খালি পায়ে ফুলের উপর দিয়ে হাঁটছি।মনে হচ্ছে ফুলের রাজ্য প্রবেশ করেছি।বিহান ভাই বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।প্রকৃতির এত সুন্দর পরিবেশ আগে দেখি নি আমি।মন চাইছে ডানা মেলে উড়ি।ফুলের বিছানায় ঘুমোতে মন চাইছে আমার।এভাবে খালি পায়ে বেশ কিছু সময় হাঁটলাম আমি।
কিছুক্ষণের মাঝে একটা ইজি বাইক দেখলাম আর দাঁড় করালাম।
কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করতে বললাম খুলনা যাবো।ভাড়া ঠিক ঠাক করে ইজি বাইকে উঠে পড়লাম আমি।
বিহান ভাই রতীমত অবাক আমি ইজি বাইকে খুলনা যাবো।তাও আবার খালি পায়ে।আর ইজি বাইকে যাওয়ার কারণ ই বা কি?
“আমাকে ইজি বাইকে উঠতে দেখে বিহান ভাই দ্রুত এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে ইজি বাইক থেকে হ্যাচকা টানে নামিয়ে বলেন হোয়াট দ্যা কোথায় যাচ্ছিস? ”
“উনার দিকে মুড নিয়ে তাকিয়ে বললাম আমি খুলনা যাচ্ছি। ”
“ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন খুলনা এই ইজিবাইকে।”
“হুম তো আপনার বুঝি তাতেও আপত্তি আছে।”
“অফ কোর্স আপত্তি আছে।এক্ষুণি নাম ইজি বাইক থেকে।”
“না নামবো না।ভাই আপনি চলেন।”
“বিহান ভাই বলেন ওয়েট ওয়েট ওনাকে নামিয়ে দিন ভাই ইজি বাইকে থেকে।”
“আমি নামাবো কেনো ভাই?আমাকে রিজার্ভ করেছেন উনি বারোশ টাকা দিবেন।সারাদিন এ এই একটায় ভালো টিপ পেয়েছি।!
“আমি বললাম,আরে ভাই আপনি উনার সাথে বকবক করছেন কেনো?আমি বলছি যেতে আপনি চলুন।আমি আপনার গাড়ি ভাড়া করেছি”
“বিহান ভাই বললেন,উনাকে নামিয়ে দিন ভাই।বলে দিন আপনি যাবেন না।”
“আমাকে উনার ঠিক করা হয়ে গিয়েছে।উনার জন্য অন্য যাত্রী ছেড়ে দিয়েছি।তাই না গেলেও আমাকে টাকা দিতেই হবে।”
“আপনি যেতে চাইলে যান। কিন্তু আপনার ভালোর জন্যই বলছি।উনি দীর্ঘ আট মাস পাবনা ছিলো।মেন্টাল সমস্যা আছে উনার।যান খানিক সময় পরে পেছন থেকে গলা কামড়ে ধরবে।উনার দিকে তাকিয়ে দেখুন।খালি পায়ে কেউ খুলনা যায়।একা একটা মেয়ে আপনার কি অবাক লাগছে না।আমাদের বাসার কাজের বুয়া উনি”
“অটো চালক ভয় পেয়ে গেলেন,,এই যে আপা নামুন। নামুন বলছি।আপনার জন্য ৩০০ টাকার যাত্রী ছেড়ে দিলাম।”
“বিহান ভাই বললেন,,কিছু মনে করবেন না এই নিন আমি ভাল বেসে ই দিচ্ছি ৩০০ টাকা রাখুন।”
“লোকটা ৩০০ টাকা নিয়ে চলে গেলো আর বিহান ভাই কে বলে গেলো আপনি অনেক বড় মনের মানুষ ভাই। ভাগ্যিস এই পাগলের হাত থেকে বাঁচালেন আমাকে।”
“রাগে সমস্ত শরীর রিরি করছে আমার।আমার মতো সুস্থ মানুষকে পাগল বানিয়ে ছাড়লো।আর আমি কাজের বুয়া এই ভাবেন আমাকে উনি।আমি যে উনার সাথে যাবো না বলেই অটোতে করে যাওয়ার প্লান করলাম সব প্লান জল ঢেলে ছাড়লো।উনার দিকে ক্ষীপ্ত নয়নে তাকিয়ে দেখি থুতনি তে এক হাত বাধিয়ে মিটি মিটি করে হাসছেন।
ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলেন কিরে ক্ষেপি রাগি বেহুদা ক্ষেপে গেলি কেনো?আর হঠাত অটো চড়ে খুলনা যাওয়ার প্লান কেনো?”
“আমি আপনার সাথে যাবো না ব্যাস।তার আগে বলুন আমাকে কাজের বুয়া বললেন কেনো?”
“বিহান ভাই এর হাতে দেখি আমার জুতা। উনি একটু ধমক দিয়ে বললেন নে ধর জুতা পায়ে পর। গাধী একটা পা কেটে যাবে কোথায় কি থাকবে।কাজের বুয়া না বলে ঘরের বউ বললে কি মেনে নিতে পারতি।আরো রেগে যেতি।”
“কাটুক তাতে আপনার কি?”
“হ্যাঁ আমার শ্বশুরের মেয়ের পা কাটলে কষ্ট তো তার জামাই এর ই।বউ এর কষ্ট কি সহ্য করা যায়।তাছাড়া শ্বশুর যে রাজাকার বাবাহ আমাকে গুলি করে দিবে।সমাজ থেকে একজন অনেস্ট ফিউচার ডাক্তার হারিয়ে যাবে।এটা দেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর ব্যাপার।সো তোর পা কাটলে অনেক লস।নে জুতা পর।।।”
“পরবো না আমি।”
“বিহান ভাই নিচু হয়ে বসে উনার হাত দিয়ে পা চেপে ধরে জুতা পরিয়ে দিলেন।ওহ মাই গড সুরসুড়ি তে লাফিয়ে উঠলাম।এমনি তে পায়ের তালুতে প্রচুর সুরসুরি।বিহান ভাই আমাকে লাফাতে দেখে বলেন,কি সমস্যা তোর এভাবে ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস ক্যানো?”
“উহু ছাড়েন তো!ছাড়ুউউউউউউন।সুরসুড়ি লাগে।”
“ডিজগাস্টিং! সুরসুড়ি আবার কি।”
“বুঝেন না তাইনা?”
“নাতো।”
“ওয়েট আমি আপনাকে দিচ্ছি।”
“ওকে ট্রাই কর।”
“জুতা খুলেন।”
“এই রাস্তায় মানুষ পাগল ভাববে।”
“ভুল কি আমি তো পাবনা থেকেই এসছি।খুলুন আগে।”
“আমার জোরাজুরিতে জুতা খুলতে বাধ্য হলো উনি।পায়ের নিচে এত সুরসুড়ি দেয় কিছুই ফিল হয় না উনার।একদম ই রোবট।ক্লান্ত হয়ে ফেইল গেলাম এ বিষয়ে।
উনি ভ্রু বাকিয়ে বললেন আমি কি মহিলা যে লাফাবো।বাস এত সময় অনেক দূরে চলে গিয়েছে।বাইকে ওঠ।”
“আপনার বাইকে ওঠার ইচ্ছা আমার নেই। ”
“পিচ্চি মানুষ এত রাগ আসে কিভাবে শুনি।আর রাগের কারণ টাই বা কি?”
“কোনো কারণ নেই।যান না গিয়ে প্রেয়সী কে বাইকে উঠান আমার তাতে কি।আমি মরে গেলেও আপনার বাইকে উঠবো না।”
“আচ্ছা এই ব্যাপার।সামথিং সামথিং মনে হচ্ছে দিয়া।’
“মোটেও না নাথিং।”
“লাভ ইউ মাই ডারলিং।লাভ ডু সামথিং সামথিং।”
“এখন কি গান গাইতে মন চাইছে আপনার।”
“হ্যাঁ!তোর জেলাসি দেখে।প্রেয়সী কে নিয়ে এত জেলাস তুই হুয়াই দিয়া।কথাটা মুখের উপর ঝুঁকে এসে বললেন উনি।”
“জেলাসির কি আছে শুনি।”
“বুঝি তো প্রেমে ট্রেমে পড়েছিস হয়তো লজ্জায় বলতে পারছিস না তাইনা দিয়া।”
“একদম বাজে কথা বলবেন না আপনি।”
“চুপচাপ বাইকে ওঠ নইলে বুঝবো আমার প্রেমে পড়েছিস।”
“বাধ্য হয়েই উনার বাইকে উঠলাম।মানুষ যে এত অসহ্য ভাবে বাইক চালাতে পারে আগে জানতাম না।এটা কি বিশ্রি ভাবে চালানো।এক্ষুণি পড়ে যাবো এমন একটা ভাব।দ্রুত উনার শার্ট খামচে ধরে বললাম আস্তে চালান বলছি।”
“বাইক থেকে তিন ফিট দূরে বসলে এমন হবেই। পারলে কোমর জরিয়ে বস।”
“বাধ্য হয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে বসলাম।আমাকে এইভাবে বসাবে বলে শয়তানি করে এত কিছু করেছে।ইস কি লজ্জা উনাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি”
উনি আমার দিকে ঘুরতেই ঠোঁটে একটা কামড় দিয়ে বললাম পাবনা থেকে এসছি গো।পাগল নিয়ে বাইক চালালে কামর তো খেতেই হবে।
বিহান ভাই উহ সাউন্ড করে বললেন দিয়া এটা কি তুই।লিপ কিস করতে মন চাইছিলো বলেলেই পারতি।এই নিষ্পাপ ঠোঁটে প্রথম কোনো নারীর স্পর্শ। শরীরের অনুভূতি অন্য দিকে চলে গিয়েছে।বাইক চালানো আর সম্ভব নয়।
দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসাতে আমি এটা কি করে ফেললাম।এখন তো নিজের ই লজ্জা লাগছে।ছিঃউনি কি ভাবছেন।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২০.
#WriterঃMousumi_Akter
পূবালি হাওয়াতে চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে, কখনো নিজের চোখে মুখে তো কখনো বিহান ভাই এর চোখে মুখে।মনের মাঝে ভীষণ ভালো এক অনুভুতি কাজ করছে। এই মুহুর্তে একটাই গান মনে পড়ছে এই পথ যদি না শেষ না তবে কেমন হতো তুমি বলোতো।কিন্তু উনাকে বলা যাবে না।উনার মনে এক মুখে আরেক।আমি কখনোই আর উনাকে কিছুই বলবো না।
বাইকে বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেলো আমার তবুও পথ ফুরাচ্ছিলো না।এত স্লো কোনো মানুষ বাইক চালায়৷ বাবাহ!এর চেয়ে হেঁটে গেলে আরো অনেক আগেই যেতে পারতাম।খুবই বিরক্তি শুরু হয়ে গেলো আমার।এমনি তে সব কিছুতে ধৈর্য কম আমার।
সামনে দিয়ে যাওয়া একটা লোককে ডেকে বললাম,”এই যে কাকু আপনার সাইকেলে আমাকে একটু লিফট দিবেন।”
লোকটি উত্তর দিলো,,” কেনো দিদি আপনি তো বাইকে যাচ্ছেন কোনো অসুবিধা হয়েছে নাকি।”
“হ্যাঁ আমাকে একটু দ্রুত যেতে হবে তাই আপনার কাছে লিফট চাইছি দিবেন।”
“লোকটি যেনো আশ্চর্য বনে গিয়ে বললো বাইক ছেড়ে কেউ বাই সাইকেলে দ্রুত যাওয়ার জন্য লিফট চায়।আগে তো দেখি নি এই প্রথম দেখলাম।”
“বিহান হুট করেই বাইক দাঁড় করিয়ে বললেন,ভাই আপনি যান শি ইজ ড্যামন ম্যাড মানে রিসেন্টলি পাবনা ফেরতে।তার কথায় কান দিলে আপনি ও পাগল হয়ে যাবেন।”
“লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,কি বলেন দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না।খুব অবাক লাগছে।”
বিহান ভাই বলেন,আমার ও খুব অবাক লাগছে কেউ কাকু ডাকলে তাকে কেউ দিদি ডাকে।লোকটা বোধহয় লজ্জা পেয়ে গিয়েছে রে।
বিহান ভাই উনাকে যেতে বলে আমার দিকে তাকালেন। আমার চোখ মুখের সাথে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে কানের সাথে গুজে দিলেন।আমি ফুঁসে উঠে বললাম,’আমাকে আবার পাগল বললেন।’
‘ উনি হেলমেট টা খুলে চুল একটু হাত দিয়ে ঠিক করে মাথা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন,পাগলি ছাড়া কি তুই।তুই এমনি পাগলি এই পাগলি পাগলি স্বভাব গুলা দিয়ে মানুষ কে পাগল বানিয়ে ফেলতে পারিস।ছেলেদের হার্ট এ ইনফেকশন করতে পারিস।রাস্তা ফুরিয়ে যাবে তাই আস্তে ধীরে চাল্লাচ্ছি। ‘
উনার এই কঠিন কথা বুঝবো না জানি।চুল গুলো উড়ছিলো বলে খোপা করতে গেলাম। বিহান ভাই বললেন,খোলা চুল ই থাক।বাইকের আয়নাতে খোলা চুলে তোকে আরো সুন্দর লাগছে। এলো কেশে ঝড়ের বেশে হার্ট এট্যাক এর লক্ষণ আছে পিচ্চি।
উনি আবার বাইক চালানো শুরু করলেন।খুলনা শহরে ঢুকতেই একটা ফুলের গলি দেখলাম। যেখানে শুধু ফুল আর ফুল।এক ভাবে তাকিয়ে রইলাম বেলি ফুলের মালার দিকে।যা আমার প্রাণ কাড়ে সব সময়।সাদা ফুল মানেই আমার কাছে মুগ্ধ করার মতো কিছু।ইস আম্মু বা শুভ ভাইয়া থাকলে আমি বলতে পারলাম একটা ফুলের মালা কিনে দাও।দুঃখী দুঃখী মন নিয়ে বাইকে বসে রইলাম।হঠাত দেখি বিহান ভাই বেলি ফুলের দোকানের কাছে গিয়ে বাইক টা দাঁড় করালেন খুব অবাক হলাম আমি উনি এখানে বাইক দাঁড় করালেন কেনো?
আমি কিছু না বলে চুপ হয়ে বসে রইলাম।দেখি উনি করেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
“দোকানদার কে প্রশ্ন করলেন ফুলের মালা গুলোর প্রাইজ কত?”
“দোকান দার বললো ২০০ করে?”
“বিহান ভাই বললেন মাত্র ২০০”
“দোকান দার আবার উত্তর দিলেন এটা তাই কেউ দিতে চায় না।”
“বিহান ভাই বললেন ‘এই ফুলের দাম অমূল্য হওয়া উচিত ছিলো। কেননা এই ফুল পছন্দকারিনী মহিলা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর মহিলা।এই ফুলের মালা যার গলায় যাবে সেই গলা অমূল্য দামী।এই ফুলের গাজরা যার চুলে যাবে সেই চুলের মোহে আকৃষ্ট আমি।”
“দোকানদার বললো,আজ ই বাসায় গিয়ে বউ কে একটা ফুলের মালা দিয়ে বলবো? ”
“বিহান ভাই বললেন কি বলবেন?”
“ওই যে আপনি যা বললেন তাই।”
পাশ থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো,তোমার মতো কিপ্টার সাথে বিয়ে হয়ে জীবনে কিছুই পেলাম না।বাবা বিদেশী টাকাওয়ালা দেখে বিয়ে দিয়েছে এমন বুইড়া তুমি না আছে কোনো রোমান্টিকতা।দেখো ওই ভাই টা তার বউ কে কত ভালবাসে।বউ টা বাইকে চুপ হয়ে বসে আছে আর উনার হজবেন্ড কি সুন্দর উনার বর্ণনা দিচ্ছেন।
আমি মহিলাটির দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিলাম।মানুষ কত টা ভালবাসার পাগল তাইনা।?বিহান ভাই কি তাহলে পারফেক্ট মানুষ দের মাঝেই পড়েন।আমি যেখানে অসহ্য মানুষ বলে ভাবি সেখানে কেউ উনার মতো মানুষ পাওয়ার জন্য আফসোস করছে।
বিহান ভাই আমার মুখের কাছে মুখ এনে বললেন, দেখ উনি তোকে আমার বউ ভাবছে।তুই রেগে গেলি না যে।
আমি বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম,ওই মহিলাকে উনি বলছেন কেনো?এটা আমি আপনাকে বলি।এই উনি ডাক টা শুধুই আমার।একান্ত ব্যাক্তিগত আমার কাছে।
বিহান ভাই এর চোখে মুখে রাগের কোনো চিহ্ন নেই।বেলি ফুলের মালা নিজেই আমার গলায় পরিয়ে দিলেন।সাথে সুন্দর একটা গাজরা ও দিলেন।গাজরা পরানোর সময় উনার হাতের আলতো স্পর্শ ঘাড়ে লাগতেই শিউরে উঠলাম আমি।এমন শিহরণ আগে কখনো অনুভব হয় নি।বিহান ভাই কে বললাম,, আমি মনে মনে এটা চাইছিলাম কিভাবে বুঝলেন।বিহান ভাই নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বললেন,,বাইকের আয়নায় দেখছিলাম তোর নজর কোনদিকে।এখান চুপটি মেরে দাঁড়া কোথাও যাবি না কিন্তু।দেখা গেলো পুচকি মানুষ আবাফ হারিয়ে যাবি।একদম ই কোথাও যাবি না।দোকানদার কে আমাকে দেখিয়ে বললো,ভাই এই পিচ্চি টাকে একটু দেখে রাখবেন তো।আমি জাস্ট ২ মিনিটে আসছি।আমি কি এতই ছোট একটা লোক কে পর্যন্ত দেখিয়ে গেলো আমি যেনো হারিয়ে না যায়।এগুলা মেনে নেওয়া যায়।
আমার হঠাত খেয়াল হলো একটা মেয়ে আমার দিকে ভয়ানক অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ কি?কিছুই বুঝলাম না।কে এই মেয়ে ফুলের দোকানে ফুলের অর্ডার করতে এসছে।মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর কিন্তু তার চোখে মুখে ভীষণ রাগ।মনে হচ্ছে এক্ষুণি আমাকে গিলে ফেলবে।মেয়েটির চাহনি তে বেশ ভয় ই লাগছে আমার।মেয়েটির তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার দিকে। কি অদ্ভুত ব্যাপার।আমার সন্দেহ ঠিক হলো।
“আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করলো এই মেয়ে নাম কি তোমার?”
“জ্বী দিয়া।”
“তোমার মাথায় ফুল পরিয়ে দিচ্ছিলো ছেলেটা কে?”
“জ্বী উনি মানে?”
“কি ব্যাপার এত উনি উনি করছো কেনো?”
“আমি তো উনাকে উনি ই ডাকি।”
“নেক্সট থেকে আর উনি ডকবা না।মেয়েরা উনি ডাকে তার ভালবাসার মানুষ কে।লজ্জায় নাম বলতে পারে না তাই।নেক্সট আর উনি ডাকবা না।কে হয় উনি তোমার?”
“আমার মামাতো ভাই?”
“সম্পর্ক টা ভাই বোনের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখো সেটাই উত্তম হবে।”
“আপনি কে বলুন তো এমন উদ্ভট কথা বলছেন।আর উনাকে নিয়ে আপনার এত মাথাব্যাথা কেনো?”
“তুমিই সেই দিয়া তাইনা?বিহানের পিচ্চি।তোমাকে দেখার অনেক শখ ছিলো। ”
“সরি! বুঝলাম না আপনার কথা।”
“এরই মাঝে বিহান ভাই উপস্হিত।বিহান ভাই কে দেখে বিহান ভাই এর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।উঁকি দিয়ে বললাম দেখুন না বিহান ভাই উনি কেমন করছেন। কে উনি?”
“বিহান ভাই মেয়েটির দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললেন,, হোয়াট দ্যা হেল।ভুলেও পিচ্চির সাথে বাজে বিহ্যাভ এর ট্রাই করবি না।পিচ্চি টা মনে হয় ভয় পেয়েছে।”
“আমি বিহান ভাই কে বললাম,কে উনি?আর ওই মেয়ে আমার সাথে এমন ব্যবহার কেনো করলো।এর কইফত দিতেই হবে।”
“বিহান ভাই আমাকে জোরপূর্বক বাইকে উঠিয়ে বলেন,,মেয়েটি পাবনা থেকে এসছে।কোনো মেন্টাল হবে হয়তো।আর তুই পুচকি মানুষ এত কিছু সিরিয়াস নিস ক্যানো?কোথায় রাস্তায় কে কি বললো সেটা নিয়ে পড়ে আছিস।”
“বিহান ভাই কে বললাম,আজ কয়জন কে পাগল বানালেন বিহান ভাই।”
“একদম চুপ হয়ে বসে থাক তো।এত কথা বললে,গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে।এমনি তোর জন্য ২ লিটার তেল বেশী খরচ হচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে তেলের টাকা আর ভাড়ার টাকা দিবি।”
“আমি কি সেধে আপনার বাইকে উঠছি যে ভাড়ার টাকা দিবো।”
“এগুলা তো দিবিই সাথে আমার লিপের যে বারোটা বাজাইছিস তার সুধ আসল দিবি।”
“কিভাবে দিবো শুনি?”
“সেটা আমি আদায় করে নিতে পারবো?তুই কি ভেবেছিস আমি ভুলে গিয়েছি দেখ না কি করি তোকে।”
এই পড়লাম আবার চিন্তায় আবার কি করবেন উনি। কিন্তু মেয়েটা কে ছিলো। মেয়েটা তো বিহান ভাই কে চিনে।বিহান ভাই এড়িয়ে গেলো কেনো?মেয়েটা বিহান ভাই এর পরিচিত।কি লুকালেন উনি বুঝলাম নাতো।উনার কাছে জানতে চাইলেও বলবে না আমাকে।
বিভা আপুদের বাসায় পৌছে গেলাম।আম্মু রা আগেই পৌছে গিয়েছে।আপু সব খাবারের আয়োজন করছে সবাই খেলেও বিহান ভাই খেতে পারছে না কারণ কেউ জানে না।খাবে কিভাবে আমাকে পাগল বলাতে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছি।।
বিহান ভাই বিভোর ভাই কে বললেন,হোয়াট অজ ইওর ফিলিংস বিভোর।বাসে তো একবার খেয়েছিস এখন আবার খাচ্ছিস বাহ ভাই বাহ।
বিভোর ভাই মুখে কথা না বলেই উনার বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
বিভা আপু বিহান ভাই খাবার না খাওয়ায় আস্ক করলে বললো তার ঠোঁটে কামড় লেগেছে।সবার খাওয়া হলে নাকি বলবে কিভাবে কামড় লেগেছে।আমার দিকে তাকিয়ে বললো দিয়া বলবো নাকি।
“ওহ মাই গড! মান সম্মান যা আছে সব শেষ।উনার দ্বারা কিছুই সম্ভব নয়। সবাইকে বলেও দিতে পারে।”
“উনার ফোনে মেসেজ করলাম না প্লিজ বিহান ভাই।কাউকে বইলেন না কিছু।”
“না বলবো না বাট আমার শর্ত আছে মেনে নিলে রাজি আছি।”
“এক বাক্য মেনে নিলাম উনার শর্ত।”
বাইক নিয়ে সবার আগে পৌছে গেলাম আমি আর বিহান ভাই।মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে ধরনীতে।সূর্য মামা কেবল ই ডুব দিয়েছে পশ্চিম আকাশে।সূর্যের ললাট রূপ এখনো আকাশে ছড়িয়ে আছে।খুব বেশী মেঘ নেই তবে এই অসময়ে মনে হচ্ছে এক্ষুণি বৃষ্টি নামবে।ভাবতে ভাবতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু।যে বৃষ্টিতে প্রচুর ভিজলাম আমি।কারণ আমি যে প্রচুর বৃষ্টিবিলাসী।বৃষ্টি দেখলে আমার পাগলামি ভীষণ ভাবে বেড়ে যায় এটা বিহান ভাই ও জানেন।বিহান ভাই দের বাড়িতে পৌছে ভরা সন্ধ্যায় এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পেলাম।ছাদে গিয়ে আকাশে দু’হাত মেলে দিয়ে নিজের মন মতো ভিজলাম। বৃষ্টি হলেই ময়ূরের মতো পেখম মেলে নাচতে ইচ্ছা করে আমার।যেটা আমি সব সময় করে থাকি।ভিজতে ভিজতে দেখি বিহান ভাই ছাদে এসে দাঁড়ালেন।
বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কি হয়েছে বিহান ভাই বকবেন ভিজেছি বলে। ”
“উহু আমিও ভিজবো।তুই সব সময় ভিজতে ভালবাসিস ভাবছি এখন থেকে আমিও অভ্যাস করবো”
বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে প্রচুর হাসছিলাম আমি।আমি বুঝে গেছিলাম আজ কিছুতেই বকবেন না আমায়।
বিহান ভাই ধীরে ধীরে আমার কাছে চলে আসেন।উনাকে আজ অনেক চেঞ্জ লাগছে।সেই রাগি রাগি ভাব মোটেও নেই।
“কি কিছু বলবেন বিহান ভাই!
“হুম বলবো।”
“কি বলবেন।”
“তুই বুঝিস না কি বলতে চাই আমি।”
“না নাতো”
“তখন যেটা করেছিস সেইম কাজ টা আমিও করলে বুঝবি পিচ্চি।একজন হার্টের ডাক্তার কে হার্টের রুগি বানিয়ে ফেলেছো তুমি।”
বিহান ভাই আমার কাছে এসে এক হাত আমার ডান গালে আরেক হাত মাথার পেছনে দিয়ে অন্য রকম চাওনি তে আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন।
অজান্তে লজ্জায় চোখ বন্ধ হয়ে গেলো আমার।উনি আলতো পরশে ওষ্টর সাথে ওষ্ট মেলালেন।জাস্ট স্পর্শ করেই ছেড়ে দিলেন।সেটা এক সেকেন্ড থেকে দুই সেকেন্ড হবে।
মনে হলো সমস্ত শরীরে বিদ্যুত চমকে উঠলো।আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম উনার দিকে।
উনি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলেন,বোঝে না সে বোঝে না পিচ্চি কে বুঝাতে আমার এত আয়োজন।পিচ্চি তাও বোঝে না কিছু।
উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,তখনের শোধ নিলেন তাইনা।কিন্তু আমি তো ব্যাথা দিয়েছিলাম।কামড়ে ব্যাথা পেয়েছিলেন আমাকে ব্যাথা দিলেন না ক্যানো?
উনি হালকা হেসে বললেন,কারন হলো…
বলেই গান শুরু করলেন,,,
Dua bhi lage na mujhe
Dawa bhi lage na mujhe
Jabse dil ko mere tu laga hai
Neend raaton ki meri
Chaahat baaton ki mari
Chain ko mere toone yun thaga hai
Jab saansein baroon main band
Aankhein karun main
Nazar tu yaar aaya kar
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara
Har roz puchhein yeh hawayein
Hum to bata ke haare
Kyun zikar tera karte hain
Humse taare
Har roz poochhein yeh hawayein
Hum to bata ke haare
Kyun zikra tera karte hain
Humse taare
Ab is se hain tere in
Hothon pe mere izhaar aaya yaara
Dil ko karar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara…
(