এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ২১+২২+২৩

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২১.
#WriterঃMousumi_Akter

জন্মদিন মানেই বিশেষ একটি দিন।সে দিন টা যদি আবার হয় প্রিয় জনের তাহলে সেই দিন টা বিশেষ এর থেকেও বিশেষ হয়।আজ রাত বারোটা বাজলেই বিহান ভাই এর জন্মদিন।কিন্তু উনি তো এলেন না।এই দিনে উনাকে সামনে থেকে উইশ করতে মন চাইছে আমার।কিন্তু কোথায় পাবো এখন উনাকে।সারাদিন ইউটিউব দেখে কেকে বানানো ভিডিও দেখেছি আর কেক ও বানিয়েছি।অত টা সুন্দর না হলেও খারাপ হয় নি।কেক এর উপর শুভ জন্মদিন বিহান ভাই লিখে রেখেছি।রুমময় পায়চারী করছি ফোন নিয়ে। উনাকে কি এখন ফোন দিবো।ফোন দিতেও ভয় লাগছে দেখা গেলো অনেক গুলা বকাঝকা শুরু করলো।

বিভোর ভাই,রিয়া,শুভ ভাইয়া,তিয়াস ভাইয়া,তোহা আপু সবাই মিলে প্লান করেছে বিহান ভাই এর জন্মদিন সেলিব্রেশন করবে পদ্মবিলে গিয়ে।নড়াইলের ইছামতি বিলে এ সময়ে প্রচন্ড পদ্ম ফুল ফোটে।প্রকৃতির এক মনোরম দৃশ্য শুধু দেখতেই ইচ্ছা করে।কেউ ফোন দিয়ে সে মানুষ টাকে পায় নি।কেউ তাকে বলে নি তার জন্মদিন বলে আসতে বলা হয়েছে সবাই চাইছিলো সে আসলে একটা সারপ্রাইজ দিবে মানে বিশাল আকারের সারপ্রাইজ।কিন্তু সে মানুষ বেপাত্তা।

মামি আমাকে বলছিলো দিয়া তুই একটু বলে দেখ না।তুই বললে আসতে পারে।অথচ এরা কেউ জানেই না সে আমাকে সব থেকে বেশী বকবে।সবাই তাকে ফোন দিলেও আমি ফোন দেই নি তাকে।ইচ্ছা করেই দেয় নি মন চাইছিলো সে নিজে থেকে আসুক।এত দিন হয়ে গিয়েছে তার আমাকে একবার ও দেখতে ইচ্ছা হয় নি।মনে মনে হাজার খানিক অভিমান জমা করে বসে রইলাম।

ঘড়িতে রাত বাজে এগারো টা ছাপ্পান্ন তার নাম্বার টা ডায়াল করলাম।দুইবার রিং হতেই ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো, ‘কি রে এত বার ফোন দিচ্ছিস কেনো?’কন্ঠে তার রাগ স্পষ্ট ছিলো।আচ্ছা মধ্যরাতে কারো প্রেমিকা ফোন দিলে এমন ব্যবহার করে কেউ।

‘উনার এমন কথা শুনে মন টা খারাপ হয়ে গেলো আমার।দুঃখি দুঃখি মন নিয়ে বললাম কোথায় আপনি?’

‘তোর বাবা আর শ্বশুরের আমার জন্য বরাদ্দ করা বিল্ডিং এ। ‘

‘মানে। ‘

‘মানে মাঝ রাতে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছিস কোথায় আমি?আমি কোথায় থাকার কথা জানিস না তুই।’

‘জানলেও কি মানুষ প্রশ্ন করে না।ফোন দিয়ে কি মানুষ জানতে চায় না কুশলাদী।’

‘আমি এখন আজাইরা প্যাচাল এর মুডে নেই দিয়া।আর ফোনে অযাযিত প্রশ্ন করা আমি পছন্দ করি না।আমার সময়ের অনেক দাম।সো যা বলার দ্রুত বল। আই এম সো ফেড আপ’

‘আজ আপনার জন্মদিন না তাই ফোন দিয়েছিলাম।’

‘হুম জন্মদিন তাতে কি হয়েছে।প্রতিটা মানুষের একটা জন্মের দিন থাকে। তাই আমার ও আছে।এটা নিয়ে বলার কি আছে। ‘

‘এখন কয়টা বাজে বিহান ভাই।’

‘দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ‘আমাকে বিরক্ত করতে ফোন দিয়েছিস এই মাঝ রাতে।তুই জানিস কত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছি আমি।এনি ওয়ে বারোটা বাজে এখন।’

‘শুভ জন্মদিন বিহান ভাই।বলেই ফোন টা রেখে দিলাম।’

মনের মাঝে একরাশ কষ্ট জমা হলো।কিন্তু অতটা সরিয়াসলি নিলাম না।আমি জানি উনি রেগে গেলে একমাত্র আমার সাথেই রাগ দেখান বেশী।আমার সাথে রাগ দেখাতে নাকি উনার ভালো লাগে।তাই এটাকে ভালবাসা বলেই গ্রহন করে নিয়েছি।এইরাগের পরেই উনি ভীষণ ঠান্ডা হয়ে যান।আমার অভিমান ভাঙাতে কত দুষ্টুমি করেন।

“প্রেমে পড়েছে এ মন
প্রেমে পড়েছে
অচেনা এক মানুষ আমায় ভালবেসেছে
সে যেনো আমায় ডাকে
দেখিনা কোথাও তাকে
ভালবাসায় জড়িয়ে সে আমায় নিয়েছে।”
দোলনায় দোল খেতে খেতে গান টা গাইছি আমি।

দুই সুপারি গাছে দড়ি বেঁধে বাচ্চারা দোল খাচ্ছে।বিশেষ করে দোলনা টা আয়রার জন্য ই বানানো।আয়রা কে উঠিয়ে দিয়ে দোলনায় দোল খাচ্ছি আমি।আর গুন গুন করে গান গাইছি।রিয়া পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে আমায়।দোল খেতে খেতে আনমনে তাকে ভাবছি।সেদিন এর সেই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার কথাটা।মন টা সেদিন সেই যে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে আর ফিরে আসে নি।আজ দুই মাস হয়ে গিয়েছে সেই মানুষ টার দেখা নেই।সেই যে দু’মাস আগে গিয়েছে আর কোনো খোজ নেই।

-আচ্ছা মানুষ টা এমন কেনো আমাকে ডিরেক্ট বলতে পারে না যে সে আমাকে ভালবাসে।তার আচরণে এটাই বোঝা যায় যে আমাকে ভালবাসে। কিন্তু মুখ ফুটে তো বলে না। আচ্ছা উনার কি ভাল লাগে আমাকে এই দো’টানায় রাখতে।এবার আসলে আমি নিজেই বলবো আমার মনের কথা।আজ যে তার জন্মদিন সেই খেয়াল কি তার আছে।কাল রাতে যা তা ভাবে আমাকে অপমান করেছেন।কি জানি ঢাকায় গিয়ে প্রেয়সী কে পেয়ে হয়তো আমাকে আর সহ্য করতে পারছে না।

-হঠাত দেখি রিয়ার কোনো সাড়াশব্দ নেই।আমি যে রিয়াকে ডেকেই যাচ্ছি কোনো পাত্তা নেই।হঠাত মনে হলো আমার কাঁধে কারো হাত।হাত টা রিয়ার বলে মনে হচ্ছে না।অথচ দোল দিয়েই যচ্ছে।পেছনে তাকিয়ে দেখেই চমকে গেলাম আমি।এ কি বিহান ভাই উনি।

-পরনে ব্লু জিন্স গায়ে এশ কালার শার্ট ঘাড়ে ব্যাগ ঝোলানো।উনি কি কেবল ই এসছেন।উনাকে দেখেই দৌড় মারার প্লান করলাম।এক নিমিষেই আমার কচি হাত উনার শক্ত হাত দিয়ে আটকে ফেললেন।ছড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম লাভ হলো না।উনার দিকে রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললাম ছাড়ুন আগে ছাড়ুন বলছি।আপনি কোন সাহসে আমার হাত ধরেছেন।আমার মুখে এমন কথা শুনে বিহান ভাই রিতীমত অবাক হয়ে গেলেন।”ভ্রু কুচকে বললেন,আয় হায় পুচকি বলে কি। তোর হাত ধরতে সাহসের প্রয়োজন হলো ঠিক কবে থেকে দিয়া।”

“আপনি আমার হাত ছাড়ুন আগে নইলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।”

“এই রাজাকারের বংশধর, আয়রা কে দোলনা থেকে নামিয়ে তুই দোল খাচ্ছিস কেনো?বাচ্চারা হলো ফুলের মতো তুই তাদের সাথে অন্যায় করছিস এগুলা ঠিক না।শুনেছি রাজাকার দের সাথে মিশে তোর দাদা অনেক শিশু অত্যাচার করেছে।”

“শিশু অত্যাচার করেছে মানে।”

“মানে তোর দাদী একটা পুচকি ছিলো তাকে বিয়ে করে জোর জবরদস্হী রোমান্স করতো তোর দাদা এটাও তো এক প্রকার অত্যাচার তাইনা?”

“তবুও আমার দাদা ভাল মানুষ ছিলো।মানুষের মতো রাক্ষস ছিলো না।”

“আমি যদি তোর দাদাকে ফলো করি তাহলে আমার শ্বশুরের মেয়ে আমাকে বলবে আমি আস্ত একটা চরিত্রহীন।”

“আপনার এসব আজেবাজে কথা শোনার মুড নেই।এসছেন বাড়ি যান এখানে কি?”

“তোদের বংশে দেখছি সব গুন ই আছে।জামাই এর উপর ও অত্যাচার করে।।না মানে এ বাড়িতে জামাই এলে কি তাড়িয়ে দেওয়া হয়।এই নিউজ আজ ফেসবুকে লাইভে গিয়ে ভাইরাল করবো যাতে এ রাজাকার বংশে কেউ বিয়েই না করে।”

“খবরদার বলে দিচ্ছি আর একবার ও বাংশ তুলে কথা বলবেন না আপনি।”

“-আরে শোন না দিয়া কাল কি হয়েছিলো,হুট করেই খুব মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।সারাদিন অপেক্ষা করেছি কেউ একজন ফোন দিয়ে আমায় ডাকুক আজ তোমার জন্মদিন তোমাকে দেখতে চাই।তুমি এসো।তোমাকে অনেক দিন দেখি না।কিন্তু সে আশা তো পূরণ ই হলো না।বাট হাজার টা কল এসছে আর সবাই জন্মদিন উইশ করেছে।সিরিয়াসলি বলছি দিয়া আমার একদম ই ভাল লাগছিলো না ওই নির্দিষ্ট একটা মানুষের কল ছাড়া।যত মানুষ কল দিয়েছে আমি বার বার ভেবেছি এই বুঝি তার ফোন কিন্ত তার ফোন ই আর আসে নি।অবশেষে ম্যাডামের কল পেয়েছিলাম সে সকালে ফোন দিতে পারতো তাহলে আমি গতকাল ই চলে আসতাম।কিন্তু সে দিন গড়িয়ে গিয়ে রাতে ফোন দিয়েছে।আমি তো আর রোবট না তখন ই চলে আসবো।তখন আসার জন্য ছটফট করছিলাম আসতে পারছিলাম না বলে আরো রাগ হচ্ছিলো। বুঝিস না ক্যান পুচকি।জানিস দিয়া নির্দিষ্ট কারো মায়ায় আটকে গেলে আর বের হওয়া যায় না।উফফ তার ওই পিচ্চি মুখে শুভ জন্মদিন শুনেই সব রাগ মাটি হয়ে গেছিলো।”

উনার মুখপানে তাকিয়ে ছিলাম আমি।যতবার আমাকে বকা দিয়েছে ততবার ই গভীর ভালবাসার উদাহরণ দেখিয়ে গিয়েছে।বিহান ভাই এর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি।যাওয়ার সময় আমার হাতে দিয়ে গেলেন এক প্যাকেট ডংডং চিপস।

প্রতিবছর ই কাজিন দের জন্মদিনে আমরা কয়েকজন কাজিন মিলেই সেলিব্রেশন করি।দুই একজন ফ্রেন্ড সার্কাল থাকে।

মামি বিরিয়ানি রান্না করছে,পায়েস রান্না করেছে,কয়েক রকমের পিঠা বানিয়েছে হাতে হাতে সাহায্য করছে বিভোর ভাই এর আম্মু।আমরা ছাদে অনেক গুলা বেলুন দিয়ে সাজিয়ে ফেললাম।আজ বিহান ভাই এর দেওয়া সেই শাড়ি চুড়ি গাজরা পরেছি।বিহান ভাই ও আজ ব্লু পাঞ্জাবী পরেছেন।উফফ উনাকে জাস্ট অসাধারণ লাগছে।

ছাদে শুরু হয়েছে আমাদের কাজিন দের আড্ডা।তোহা আপুর দৃষ্টি সোজা বিহান ভাই এর দিকে।কি জানি কত ভোল্টেজ এর ক্রাশ খাচ্ছে।মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার।তোহা আপু বিহান ভাই কে বলে উঠলো,বিহান ভাই কাল কতবার কল করলাম রিসিভ করেন কেনো?’

‘বিহান ভাই অবাক হয়ে বললেন কোন নাম্বার তোমার?তোহা আপু আরো আশ্চর্য বনে গিয়ে বললো,বিহান ভাই আমার নাম্বার সেভ করেন নি আপনি।বিহান ভাই এর কথায় স্পষ্ট ক্লিয়ার সে তোহা আপুর নাম্বার ই সেভ রাখে নি।এমন কি সে কোনো মেয়ের নাম্বার ই সেভ রাখে না।’

এমন সময় মেহু আপু বলে উঠলো, বিহান ভাই তোহা কিন্তু আপনার নাম্বার মাই ক্রাশ দিয়ে সেভ রেখেছে।

বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন ক্রাশ মানে ছেলেদের চোখ দিয়ে ধর্ষণ করা। ছিঃতোহা ছিঃ এই ছিলো তোমার মনে।আমার বউ জানলে তো মহা সমস্যা।

বিহান ভাই সব সময় এমন আধ্যাতিক কথায় বলে থাকেন।বিভোর ভাই বলে উঠলেন রিয়া আমার নাম্বার কি দিয়ে সেভ রেখেছো বাচপান কা পেয়ার।

রিয়া হেসে দিয়ে বললো বাচপান কা দুশমন।আপনি আর তিয়াশ ভাই আমার ইজ্জত রাখলেন না।ক্লাসের কাউকে প্রপোজ করতে বাদ দিয়েছেন শুনি।

বিহান ভাই বলে উঠলেন রিয়া তোমাদের ক্লাসের বাচ্চাদের ও এই বুইড়া খাটাস মফিজ রা প্রপোজ করে।এরা কিন্তু জীবনে দাঁত ব্রাশ করে না সাবধান।আমার যত বিবাহিত বান্ধবী সবাই কে এরা প্রপোজ করেছে।আমি ইজ্জতের ভয়ে বলি না যে তারা আমার ভাই হয়।প্রেজটিজ বলে কিছুই থাকবে না।তিয়াস ভাই বললো,বিহান ভাই তাহলে কি বলেন আমাদের কথা। বলি হবে কোনো নাপিত টাপিত কিছু।

রিয়া বলে উঠলো,ঠিক ই বলেছেন বিহান ভাই ব্রাশ করে না।আগের দিন বিভোর ভাই এর মুখের বিশ্রি গন্ধে আমি বাসে উনার গা ভরে বমি করে দিয়েছিলাম।

রিয়া আর বিহান ভাই এর কথায় সবাই হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছিলো।

“মেহু আপু বললো বিহান ভাই আমরা এতবার আসতে বললাম আসলেন।হুট করেই এলেন যে।।”

“আসতাম ই না তোমাদের ভাবি রাত বারোটায় ফোন দিয়ে বললো আমাকে অনেকদিন দেখে না।তার মুখের কথা কি আমি ফেলতে পারি।সে যখন ই ফোন দিয়েছে বিহানের মন এখানে হাজির।”

“তাহলে বিহান ভাই ভাবি কি নড়াইল এর ই।”

“সেটা বলা যাবে না।হতেও পারে।”

“আপনি ভাবির কথার এত গুরুত্ব দেন।তাহলে তো আপনি ভাবিকে মারাত্মক ভালবাসেন।আপনার শ্বশুর মনে করেন ভিলেন হয়ে দাঁড়ালো বললো অমুক চৌধুরীর মেয়ের যোগ্য না তুমি যেমন সিনেমায় রাজিব বলে।তখন কি করবেন?”

“সিনেমায় শুধু চৌধুরী না খাঁন ও থাকে।”

আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে বললেন,”সেই জন্যই তো ডাক্তারি পড়া আমার।বলবো শ্বশুর মশাই আপনার মেয়ের অবস্থা ভালো না। আই সি ইউ তে আছে আপনার জামাই কে ছাড়া বাঁচবে না।আমার হাতে তুলে দিন।”

উনার কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হলাম।এই মানুষ টার মাথায় এত সুন্দর সুন্দর আইডিয়া কিভাবে আসে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২২.
#WriterঃMousumi_Akter

আজ বিহান ভাই আর আমার মাঝে কোনো দূরত্ব নেই।মনে হচ্ছে মনের খুব কাছাকাছি চলে এসছি আমরা।ছাদে সবার আড্ডার মাঝে বার বার চোখাচোখি হচ্ছে আমাদের।কাজিন রা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করছিলাম আমরা।কিছুক্ষণ পরেই কেক কাটবো আমরা।নিচ থেকে বিভোর ভাই এর আম্মু ডাকলেন কারা যেনো এসছে বাড়িতে। বিহান ভাই আর আমি দো’তলার বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম।

হঠাত বাড়ির ভেতরে অচেনা কিছু মানুষের প্রবেশ হলো।দুইটা মেয়ে আর দুইটা ছেলে।তাদের মাঝে একটা মেয়েকে দেখে ভড়কে গেলাম আমি।খুব অবাক লাগলো আমার কাছে।রমিম ভাইয়া বললেন বিহান প্রেয়সী এসছে তোকে সারপ্রাইজ দিতে।বিহান ভাই অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে পড়লেন আমার দিকে,আমার হাসি খুশি মুখ টা সাথে সাথে মলিন হয়ে গেলো?আমার মুখশ্রী দেখেই বোঝা যাচ্ছে এক রাশ মলিনতা ভর করেছে।এই তাহলে সেই প্রেয়সী যার চিন্তা এতদিন কুড়ে কুড়ে আমাকে খেয়েছে।এই তাহলে সেই মেয়ে যে আমাকে ফুলের দোকানে এত গুলা বাজে কথা শুনিয়েছিলো।বিহান ভাই এর দৃষ্টি স্হির আমার দিকেই ছিলো।আমার চোখে পানি ছলছল করছে।বিহান ভাই আমার মুখ দেখেই বুঝতে পারলেন আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।

প্রেয়সী নামের মেয়েটি এসেই বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরতে গেলো শুভ জন্মদিন বলে।বিহান ভাই বিরক্ত হয়ে বললেন,স্টপ ইট প্রেয়সী এটা কি হচ্ছে।এটা কি বেড রূমে তোর হজবেন্ড কে পেয়েছিস আনমনে জড়িয়ে ধরছিস।এটা আমার বাড়ি এখানে আমার আব্বু আম্মু ভাই বোন সবাই আছে, এখানে কালচার এমন না।এখানের মেয়েরা ছেলেদের কাছাকাছি গেলেই নিজে থেকেই দূরত্ব বজায় রাখে কারণ তারা মনে করে একটা ছেলের সংস্পর্শে গেলে তাদের সম্মান নষ্ট হবে।

প্রেয়সী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,বিহান গ্রামে এসে কেমন একটা হয়ে যাচ্ছিস।একটা মেডিকেল এর স্টুডেন্ট দের মুখে এমন ষ্টুপিড কথা মানায় না।

হঠাত বিহান ভাই ওর মুড এর যে কি হলো এক রাশ বিরক্তি দেখা যাচ্ছে উনার মধ্য।তবুও অনিচ্ছাকৃত হাসি।

আমি হেসে দিয়ে বললাম,না না আপু আপনি জড়িয়ে ধরূন। জডিয়ে না ধরলে উইশ করা টা সসম্পূর্ণ হবে না।

প্রেয়সী আমাকে বললো,তুমি না দিয়া।সেই ফুলের দোকানের মেয়ে।

আমি বললাম,যাক ভোলেন নি তাহলে।

প্রেয়সী আপুর সাথে আরেক টা আপু এসছে সেই আপুটার নাম অবনী।অবনী আপু বললেন,এই কি সেইইইই বিহান।

বিহান ভাই কথা ঘুরিয়ে বললেন,,আচ্ছা তোরা আসবি আমাকে জাস্ট বলবি তো।আর বুঝলাম না হঠাত কি মনে করে।আমি তো জাস্ট এলাম ঢাকা থেকে।তোরা আসবি আমাকে জানাবি না।

বিহান ভাই এর দুজন বন্ধু বললো,ভেবেছিলাম ঢাকায় সেলিব্রেশন করবো।কিন্তু তুই তো চলে এলি।তোর জন্মদিন বলে কথা আমরা কি সেলিব্রেশন করতে পারি না ভাই।আর প্রথমবার তোদের বাড়িতে এলাম একটু খাতির যত্ন কর।

এমন সময় আমার দুই মামি এগিয়ে এলেন।বিহান ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন,
আম্মু আমার ফ্রেন্ডরা।

আমার দুই মামি স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলেন তোমরা এসছো আমরা খুব খুশি হয়েছি। তোমাদের যখন মন চাইবে তোমরা আসবে।

প্রেয়সী আপু বিহান ভাই এর আম্মুকে সালাম করে বললেন আপনি চাইলে আজীবন থাকবো আন্টি।মামি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,আচ্ছা মা থেকো। আর সালাম করছো কেনো?পায়স হাত দিয়ে আজ কাল সালাম করে না কেউ দেখি না তেমন।প্রেয়সী আপু এমন ভাবে সালাম করলেন যেনো উনি এ বাড়ির বউ তাই শ্বাশুড়ি কে সালাম করলেন।উপর থেকে বিভোর ভাই রা সবাই নেমে এলো।

মামি সবাই কে নাস্তা খেতে দিলেন আমি হাতে৷ এগিয়ে দিচ্ছি।প্রেয়সী আপু বলে উঠলেন,দিয়া তুমি না এ বাসার আত্মীয় তাহলে তুমি কাজ করছো কেনো?তুমিও বসো নাস্তা করো।বিহান ভাই বলে উঠলেন ও এ বাডির আত্মীয় না বউ এইজন্য আত্মীয়দের আপ্যায়ন করছে।আমি প্রেয়সী আপুকে বললাম,এটা আমার নিজের ই বাড়ি আপু।আগে কখনো আসেন নি তো তাই জানেন না।

বিভোর ভাই দের সাথে বিহান ভাই দের বন্ধুদের পরিচয় হলো।যাক জমিয়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছে আবার।আমার মনের মাঝে অদ্ভুত ভাবে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।প্রেয়সীর বিহান ভাই কে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি দেখে আমার খুব ই রাগ হচ্ছে।

বিভোর ভাই বলে উঠলেন,প্রেয়সি আপু আপনি যা করছেন বিহান এর গফ দেখলে কিন্তু বিহানের ব্রেকিং নিউজ আছে কপালে সিওর।এদিকে বিহান এর চোখে মুখে কি মারাত্মক বিরক্তি সেটা বলে প্রকাশের মতো নয়।

ঢাকা থেকে আসা বিহান ভাই এর আরেকজন বন্ধু বলে উঠলো,কিসের ব্রেকিং নিউজ বিহানের কোনো গফ ই নেই।ও সারাজীবন বলে ওর এক পিচ্চি আছে।ওর এক পিচ্চি আছে।সারাদিন তার নাম্ব গুনগান ই করে কিন্তু কই এখনো তো রিলেশন এ যায় নি।এইজন্য বিহানের গফ হিসাবে আমরা প্রেয়সীকেই সিলেক্ট করেছি।আর বিহন যে মেয়েটির কথা বলে সেটা মেবি রূপকথার কেউ।

বিহান ভাই বিরক্ত হয়ে বলেন চেঞ্জ দ্যা টপিক্স প্লিজ।বিষয় টা নিতে পারছি না।আর প্রেয়সী তোকে কতবার বলবো এগুলা বাদ দে। আমার খুব বিরক্ত লাগে এগুলা।আর তুই যা করছিস আমাকে নিয়ে আমার আম্মু কাকি মনি মামা ব্যাপার টা কোন চোখে দেখবেন।এখানে আমার একটা সম্মান আছে দয়া করে এগুলা থেকে বিরত থাক প্লিজ।

আর হ্যাঁ আমার গফ আছে এটা সত্য।সে সত্যি আছে।আর আমি তাকে ভীষণ ভালবাসি। তাই আমি তাকে কারো সামনে প্রেজেন্ট করি না।নিজেকেও তার সামনে প্রেজেন্ট করি না।

ঢাকা থেকে আসা বিহান ভাই এর এক বন্ধু বললো, বিহান তোর হাইট আর প্রেয়সীর হাইট এক ই রকম।দুজন ই মেডিকেল এর স্টুডেন্ট। প্রেয়সী দেখতে অনেক সুন্দর। তোদের যা মানায় না।আর তুই যে মেয়ের কথা বলিস সিরিয়াসলি বলছি তোর সাথে যায় না তাকে।এই দিয়া তুমি বলো প্রেয়সীর সাথে মানায় না ভালো বিহানের।

আমি অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললাম,হুম।

মেহু,তোহা,তিয়াস,বিভোর ভাইয়া সবাই বললো বিহান ভাই ইনিই তাহলে আপনার তিনি।বলেই সবাই প্রেয়সী আপুকে ভাবি ভাবি ডাকা শুরু করলেন।

বিহান ভাই বললেন,হাইট,গায়ের রং,যোগ্যতা,প্রফেশন,টাকা, স্কিন কালার এগুলা দিয়ে কখনো made for each other হওয়া যায় না।তখন ই হওয়া যায় যখন এগুলার উর্দ্ধে গিয়ে দুজন দুজন কে বুঝতে পারে, দুজনের না বলা কথা অনুভব করতে পারে।দুজন দুজন কে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে।

বিহান ভাই এর কথা শুনে উনার বন্ধুদের মুখ কালো হয়ে গেলো।

আমি ওখান থেকে উঠে নিচে চলে গেলাম মামির কাছে।মামির সাথে খাবার গোছাতে সাহায্য করছি।এমন সময়ে অবনি নামের মেয়েটি মামির কাছে এসে বললেন,আন্টি বিহান কে কেমন মেয়ে দেখে বিয়ে দিবেন।মামি হেসে দিয়ে বললো বিহানের যেমন পছন্দ তেমন মেয়ে দেখেই বিয়ে দিবো।অবনি আপু বললো আন্টি বিহানের কিন্তু প্রেয়সীর সাথে একটা রিলেশন আছে।হয়তো লজ্জায় বলতে পারে না।আপনি না হয় বিহানের সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যবস্থা করুন।মামি কাজের দিকেই মন দিয়ে বললেন,আমার ছেলের লেখাপড়া আগে শেষ হোক তারপর বিয়ে।তার আগে বিয়ে করলে আমি সেটা মেনে নিবো না।তাছাড়া আমার ছেলের বেষ্ট ফ্রেন্ড আমি কখনো আমাকে এমন কিছু বলে নি।যদি আমার ছেলে এমন কিছু বলে তখন না হয় ভাবা যাবে।।।

মামির থেকে খুব একটা পাত্তা না পেয়ে অবনি আপু আবার চলে গেলো।এখন কেক কাটার মুহুর্ত। ভেবেছিলাম আজ আমার বানানো কেক দিয়ে বিহান ভাই এর জন্মদিন পালন করবো আর উনাকে মনের কথা জানাবো।ছাদ টা যে এত সুন্দর করে সাজালাম উপভোগ করছে এসে অন্য কেউ।বিহান ভাই তার বন্ধুদের আনা কেক টায় কাটতে বাধ্য হলেন।নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ড রা বাড়ি বয়ে এসছে তাদের সাথে তো আর খারাপ ব্যাবহার করা যায় না।বিহান ভাই এর জায়গা থেকে উনি ঠিক ই আছেন।

আমি ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি।মনের মাঝে ভীষণ অশান্তি হচ্ছে। চাইলেই কাঁন্না করতে পারছি না।এমন সময়ে অবনি আর আরেক টা ছেলে আমার কাছে এসে বললো,শুনেছি তুমি নাকি বেশীর ভাগ এখানেই থাকো।নিজেদের বাড়ি ছেড়ে মামাবাড়ি এসে থাকো কেনো এত।তোমার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে প্রায়সীর জন্য তোমার মুড অফ।কিছু মনে করো না প্রেয়সীর হাইট,গায়ের রং শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনটায় তুমি ওর পায়ের ধুলার সমান ও না।বিহান তোমাকে নিয়ে মজা করবে ফান করবে কারণ তুমি ছোট।ছোট দের সাথে মজা করতে সবার ই ভাল লাগে।কিন্তু কেউ তাকে বিয়ে করতে চাই না।বিয়ের জন্য ম্যাচুরিটি সম্পূর্ণ মেয়ে লাগে।বিহানের একটু আধটু টান আছে তোমার প্রতি।তবে তুমি এটা সিরয়াসলি নিও না তাকিয়ে দেখো ওদের দিকে।আশা করি বুঝবে কি বলতে চাইছি।বিহানের পাশে প্রেয়সী কে যেমন মানায় কোনদিকেই তোমাকে মানাবে না।তোমাদের বয়স টাও কিন্তু এক নয়।

জীবনে এত বড় অপমান কেউ কখনো করে নি।আমার হাইট,যোগ্যতা,গায়ের রং নিয়ে এত বাজে ভাবে কেউ বলবে আমি সেটা ভাবতেও পারিনি।রেগে গিয়ে বললাম, আপনাদের বিহান কে নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।যা বলার গিয়ে বিহান কে বলুন। আমাকে বলছেন কেনো শুনি?আপনাদের সুন্দরী বান্ধবী আর সুন্দর বন্ধুকে আসলেই ভাল মানায় কিন্তু বিলিভ মি আই ডোন্ট কেয়ার।বিহান ভাই এর সাথে এত ভাল মানায় যখন আপনাদের চিন্তা কিসের।তাকিয়ে দেখি প্রেয়সী বিহান ভাই এর গালে কেক মাখিয়ে দিচ্ছে।দেখে নিজের ভেতর আরো ঘেন্না লাগছে,রাগ লাগছে,কাঁন্না পাচ্ছে।

এরই মাঝে বিহান ভাই বার বার আমাকে মেসেজ করছেন একটু নিচে চল প্লিজ।আমার সাথে কথা বলছিস না কেনো দিয়া?এত ইগনোর করছিস কেনো?
বিহান ভাই এত ভীড়ের মাঝে বার বার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি এড়িয়ে গিয়েছি।

হঠাত বিহান ভাই ভীষণ রেগে গিয়ে বললেন,প্রেয়সী তোকে আমি এলাউ করেছি তার মানে এটা না তুই যা তা করবি।এগুলা কি?ভাল ভাবেই জানিস এগুলা জাস্ট অসহ্য লাগে আমার।আশা করি এতদিনে জেনে গেছিস আমি কেমন।বিহান ভাই মুখের কেক টা মুছে আমার কাছে এগিয়ে এলেন।আমার গালে এক টুকরো কেক দিলেন।আমি কেক মুখ থেকে বের করে ছাদের নিচে ফেলে দিয়ে জোরে বলে উঠলাম এগুলা আমার এ পছন্দ নয়।একদম ই পছন্দ নয় বিহান ভাই।আপনার কাছে কি আমি কেক খেতে চেয়েছি।উনার বন্ধুদের সামনে যেনো উনি অবাক হয়ে গেলেন।

বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম বাড়িতে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৩.
#WriterঃMousumi_Akter

কাউকে ভীষণ ভালবেসে ফেলার পরে নিজের মন বোধ হয় আর নিজের কন্ট্রোলে থাকে না।নিজের অনিচ্ছায় মন অন্য কারো দখলে চলে যায়।মন একবার কারো দিকে ঘুরে গেলে তাকে আর ফেরানো যায় না।এই কিশোরী মন টা যে বিহান ভাই কেটে নিয়েছে শুধুই কি যাতনা দেওয়ার জন্য।কত স্বপ্ন নিয়ে ছিলাম আজ আমার বানানো কেক টা দিয়ে দিয়ে উনার জন্মদিন পালন করবো কিন্তু চাইলেই কি আর মানুষ তা পায়।মানুষ ভাবে এক হয় আরেক।প্রেয়সীর আনা কেকেই পালিত হয়ে গেলো বিহান ভাই এর জন্মদিন।

জীবনে সব কিছু সহ্য করতে পারি কিন্তু কারো করা ভীষণ অপমান সহ্য করতে পারি না।প্রেয়সী আমার থেকে বেটার ভালো কথা আমি তো কমপেয়ার করতে যায় নি তার সাথে নিজেকে।আর কোনদিন ওই নিষ্টুর বেঈমান বিহান নামক মানুষ টার কথা ভাববো না।কেনো ভাববো আমি?কি হই আমি উনার কিছুই তো না।অহেতুক কষ্ট ছাড়া কি পেলাম আমি।

রাত আটটার দিকে বাড়িতে প্রবেশ করলাম আমি।মুখে কোনো কথা নেই।আম্মু আমাকে দেখে বললো,’কিরে দিয়া এত সকালে চলে এলি যে।তোদের না আজ থেকে আসার কথা।’

‘আম্মুর কথার কোনো উত্তর দিলাম না আমি।কারণ আম্মুর কোনো কথা আমার কানে বাজছিলো না।আমার মন ধ্যান চিন্তা সব টায় ছিলো ও বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর।আম্মু এবার সন্দিহান ভাবে বললো,কিরে রিয়া কোথায়?আর কাউকে দেখছি না যে।তুই কি একা এসছিস দিয়া।’

‘হ্যাঁ আম্মু আমি একাই এসছি।।’

‘কিহ বললি?তুই একাই এসছিস।এত রাতে তুই অতদূর থেকে একা চলে আসলি।শহরে মদখোর গাজাখোর এর অভাব নেই যদি কেউ কিছু বলতো?..’

‘আমি এখন ছোট নেই আম্মু।এত টুক রাস্তা আমি একাই আসতে পারি।’

‘খুব সাহস বেড়েছে তাইনা তোর।নিজের খামখেয়ালি মতো চলাফেরা শিখে গিয়েছিস।দিন দিন এত অসভ্য হচ্ছিস তুই। তোর বাবা আসুক তুই কোন সাহসে একা একা এসেছিস সেটার কইফত দিতে হবে।কেনো শুভ কে বললে কি হতো।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার ভাবতেই আমার কেমন লাগছে একা চলে এসছিস।।।’

‘প্লিজ আম্মু এবার একটু থামো।সব সময় এত শাষন আমার ভাল লাগে না।তাছাড়া তোমার মেয়ে এতটা রূপসী নয় যে কোনো ছেলে নজর দিবে।তোমার মেয়ের হাইট এত টা মারাত্মক ভাল না যে ছেলেরা দেখে পাগল হয়ে যাবে।কতটা কুৎসিত মেয়ের জন্ম দিয়েছো তুমি জানোনা।জানোই তো কেমন বাজে চেহারার তোমার মেয়ে।জেনে বুঝে এগুলা আজগুবি কথা কেনো বলো?’

‘আম্মু আমার রিয়্যাক্ট দেখে অবাক হয়ে গেলো।কারণ আগে কখনো আম্মুর সাথে এমন ব্যাবহার আমি করি নি।খুব গতির সাথে নিজের রুমে গিয়ে দরজা খুব জোরে লাগিয়ে দিলাম আমি।’

ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা দিয়ে সুয়ে রইলাম আমি।চোখ দিয়ে অনবরত ঝরে যাচ্ছে চোখের পানি।

‘কিছুক্ষণ পরে মামি ফোন দিলেন আম্মুর কাছে।মামি আম্মুকে প্রশ্ন করলেন, দিয়া কি বাড়িতে গিয়েছে।’

‘বাড়িতে এসেছে ভাবি।কিন্তু তোমরা তো জানোই দিয়া ছেলে মানুষ। একটু দেখে শুনে রাখবে না।এত গুলা মানুষ থাকতে এত রাতে একা বাড়িতে চলে এসছে। ভাবি এই মেয়ে কবে একটা অঘটন ঘটিয়ে ছাড়বে।’

মামি ফোন টা কেটে দিয়ে বিহান ভাইকে ডাকলেন,অলরেডি আমাকে অনেক খোজাখুজি চলছিলো। বাড়ির কোথাও না পেয়েই আম্মুর কাছেই ফোন টা দেওয়া মামির।

________________________________

আমার ফোনে অসংখ্য বার বিহান ভাই এর ফোন। অনবরত মেসেজ করেই যাচ্ছেন কিন্তু আমি কোনো উত্তর দিলাম না।নাম্বার সহ ব্লক করে দিলাম।

রাত এগারো টা বাজে কি মনে করে ফোনের দিকে তাকালাম দেখি বিভোর ভাই এর ফোন।অনেক বার মেসেজ করছে বিভোর ভাই খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে নাকি।ছাদে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো।বিভোর ভাই এর অনুরোধ আমি ফেলতে পারলাম না।বিভোর ভাই রিকুয়েষ্ট করলেন কেউ যেনো না জানে যে,আমি ছাদে এসছি।বিভোর ভাই ঠিক কেনো আমাকে এইভাবে অনুরোধ করছেন জানিনা।আস্তে করে ছাদের দিকে গেলাম।ছাদে গিয়ে দেখি কেউ নেই। কিছুক্ষণ পরে দেখি মই বেয়ে কেউ একজন উঠে আসছে।বিহান ভাই কে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।উনি এখানে এখন।উনার বাড়িতে না উনার প্রিয়জন এসছে।তাছাড়া এখানে তো বিভোর ভাই এর আসার কথা উনি কেনো?উনাকে দেখে আমি পেছন দিক ঘুরে রওনা হতেই হাত ধরে টান দিলেন।প্রচন্ড রাগে আমার শরীর জ্বলছে।তার মানে বিভোর ভাই এর ফোন থেকেই উনি মেসেজ দিচ্ছিলেন।হাত খুব জোরে ঝাড়ি দিয়ে বললাম ছাড়ুন বলছি।

‘উনি হাত টা ধরে রেখে বললেন, এত রাগ।’

‘রাগের কি আছে ছাড়ুন আমার হাত।আমার একটুও পছন্দ হচ্ছে না ব্যাপার টা যে আপনি আমার হাত ধরে রেখেছেন।’

‘ক্যানো পিচ্চি।কি করেছি আমি।’

‘কিছুই করেন নি।আমার ঘেন্না লাগছে জাস্ট আপনার স্পর্শ। মিথ্যাবাদী মিথ্যুক মানুষ। ‘

‘এত ঘৃনা করিস আমায়।আমার পিচ্চি কখন এমন হয়ে গেলো।।।”

‘আমি একটুও পিচ্চি না বিহান ভাই।আর আপনার আপনার করছেন কেনো আমি কি আপনার সম্পত্তি নাকি।’

‘দিয়া মানেই বিহানের আকাশের রংধনু পিচ্চি।এত রাগ কি নিয়ে হয়েছে বল প্লিজ।’

‘আমার কেনো রাগ হবে? কোন অধিকারে রাগ হবে।আপনি আমার মামাতো ভাই আমি আপনার ফুফাতো বোন এর বেশী তো কিছুই না।এতে রাগের কি আছে।’

‘আমি কখনোই তোকে বোন বলে ভাবি না দিয়া।তুই মানেই আমার আকাশের রংধনু।তুই ছাড়া বিহানের আকাশে চাঁদ ওঠে না। এটা বুঝিস না।’

‘আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি বিহান ভাই।কেনো বার বার আমাকে ভাঙতে আসেন আর গড়তে আসেন।দয়া করে আমাকে মুক্তি দিন প্লিজ।’

‘ক্ষতি তো তুই আমার করেছিস পিচ্চি।আম্মুর এই জেদী ছেলেটাকে উইক করে ফেলেছিস।এই যে তোর রাগ কে আমি ভয় পাচ্ছি,তোর রাগ হলে আমার ভেতরে কষ্ট বাড়ছে এটা কি কম বড় ক্ষতি।’

‘আপনি এখান থেকে আপনার সুন্দরী বান্ধবীর কাছে যান।যে দেখতে সুন্দর, হাইট ভালো,ডাক্তার। সেখানে গিয়ে এগুলা বলেন বিহান ভাই।সে কোটিপতির মেয়ে।আপনার জন্য দামী গিফট আনতে পারে।আমার মতো অযোগ্য কালো,শর্ট,গরীব না।’

‘বুঝেছি রাগে মাথা ঠিক নেই।এত টুকু মাথায় এত রাগ থাকে বাবাহ।আচ্ছা রাগ টা পরে দেখাস প্লিজ।এত কষ্ট করে বানানো কেক টা কাটবি না। ‘

আমি রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম উনার দিকে।

“বিহান ভাই বললেন,ফ্রিজ খুলেছিলাম পানি বের করতে হঠাত কেক টা চোখে পড়লো।দেখেই বুঝেছিলাম এটা পিচ্চিই বানিয়েছে তার রাক্ষস ভাইয়ের জন্য।তাকে কোথাও খুজে না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।আম্মু আচ্ছা বকুনি দিলো।ভাবলো তার ছেলে ই তার বউমা কে কিছু বলেছে।আচ্ছা পুচকি এই যে রাগ দেখিয়ে চলে এলেন আপনি কি জানেন আপনার একটা ফোন কলে পাগলের মতো ছুটে এসছিলাম আমি।সেই আপনি আমাকে ইগনোর করলে এই জন্মদিনের মানেই হয় না।এগুলা নিয়ে মাতামাতি ভাল লাগে না।কিন্তু তার ফোন কলেই তো ছুটে আসা আমার।”

“কেক টা বিহান ভাই এর হাত থেকে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলাম আমি।কোনো কেক কাটবো না আমি।”

বিহান ভাই এর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।উনাকে বললাম, এক মিনিট দাঁড়ান বলেই উনার দেওয়া গিফট গুলো এক মিনিটের মাঝে রুম থেকে সব নিয়ে উনার মুখের উপর ছুড়ে ফেলে দিলাম।

“আজ আমি অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলাম আপনাকে নিয়ে।আমি জানি আপনি বকুনি দিতেন।তাও আমি রেডি ছিলাম।আপনাকে নিয়ে মনের মাঝে তৈরি হওয়া ফিলিংস গুলো একটু একটু করে দানা বাঁধছিলো আমার মনে।আপনাকে আমি ভালবেসেছিলাম বিহান ভাই।ভীষণ ভালবেসেছিলাম।কিন্তু আপনি আমার কিশোরী মন নিয়ে খেলা করেছেন।নিজের প্রেমিকা থাকতেও আমার সাথে প্রেমিকা সুলভ আচরণ করেছেন আপনার বন্ধুরা আমাকে যে অপমান করেছে আমি কোনদিন সেটা ভুলবো না।আজ থেকে আপনাকে আমি চিনি না।চলে যান এখান থেকে।”

সেদিন রাগে অভিমানে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।বিহান ভাই এর মুখ টা ছিলো ভীষণ মলিন।ছাদ থেকে চলে এসে উনাকে ব্লক করে দিলাম সব জায়গা থেকে।

প্রায় পনেরো দিন কেটে গিয়েছে,আর কোনো যোগাযোগ নেই কারো সাথে কারোর।বিহান ভাই আর একবারের জন্য ও আমার খোজ নেন নি।বা কারো সাথে যোগাযোগ করেন নি।আমিও নিজের মতো করেই রইলাম।বিহান ভাই কে বোধহয় প্রথমবার কেউ এত অপমান করেছে।যা ইচ্ছা করুক যা ইচ্ছা ভাবুক আমার কিছুই যায় আসে না।।
—————————————————

হঠাত দেখি ফোনে দশ টার মতো মিস কল।নাম্বার টা সম্পূর্ণ অচেনা। আগে কখনো দেখি নি।কারো দরকারী কল ভেবে কল ব্যাক করলাম।ফোন টা কেয়াতে দিয়ে কল ব্যাক করলো।ফোনের ওপাশ থেকে অচেনা একটা ছেলের কন্ঠ আমার নাম ধরে ডাক দিলো,”দিয়া”কিছটা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলাম তুমি ই দিয়া রাইট।

“জ্বী আমি দিয়া।”

“তোমার সাথে আমার একটু ইমারজেন্সি কথা ছিলো।”

“আপনাকে তো চিনলাম না ভাইয়া।”

“আমি বিহানের ফ্রেন্ড।সেদিন আমাকে দেখেছিলে বিহানের জন্মদিনে।আই এম সরি দিয়া।তোমার সাথে যেটা হয়েছে অনেক বড় অন্যায় হয়েছে।আমি আসলে জানতাম না অবনি আর নেহাল তোমার সাথে এতটা বাজে ব্যাবহার করেছে।আমি পরে জানতে পেরেছি ওরা তোমাকে কি কি বলেছে।!

“প্লিজ ভাইয়া এগুলা শুনতে ভাল লাগছে না।ফোনটা রাখছি।”

“বিহান আর ডাক্তারি পড়বে না দিয়া।”

কথাটা শুনেই বুকটা কেঁপে উঠলো আমার।বিহান ভাই আর পড়বেন না মানে।

কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলাম কেনো ভাইয়া কি হয়েছে।

“জানোই তো বিহান যা বলে তাই করে এক রোখা জেদি ছেলে।ওর সিদ্ধান্ত কেউ পাল্টাতে পারে না।একমাত্র তুমি পারবে আমি জানি।আজ থেকে প্রায় দশ দিন আগে ভার্সিটির মধ্য অবনি আর নেহাল তোমাকে কি বলেছিলো ওটা নিয়ে ফ্রেন্ড রা হাসাহাসি করছিলো।বিহান মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো অবনি প্রেয়সী নেহাল এর কথা।বিহান গম্ভীর হয়ে গেছিলো।আমি মেডিকেল কলেজে বিহানের বেষ্ট ফ্রেন্ড তাই আমি পুরাটা জানি।অনেক মানুষের মাঝে প্রেয়সী বিহান কে প্রপোজ করেছিলো। বিহান প্রেয়সীর দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরেছে প্রচন্ড রাগ নিয়ে। এবং বলেছে এতদিন আমাকে বিরক্ত করিস আমি কিছুই বলি নি।কিন্তু দিয়াকে হার্ট করার অধিকার আর সাহস কিভাবে পেয়েছিস।নেক্সট টাইম দিয়ার আশে পাশে গেলে অনেক খারাপ হবে সিসুয়েশন।”

এ ছাড়া বিহান আরো অনেক রিয়্যাক্ট করেছিলো।আমাদের মেডিকেল কলেজের সবার ক্রাশ ছিলো বিহান।এখন সবার মুখে একটা কথা কে এই দিয়া যার জন্য বিহান এতটা সিরিয়াস।তুমি বিহানের সাথে কথা বলো না এ কারনেই বিহান আর লেখাপড়া করবে না।প্রচন্ড জ্বর নিয়ে সকালে বাড়িতে গিয়েছে।প্লিজ দিয়া বিহান কে বোঝাও।রিকুয়েষ্ট ইউ দিয়া।

ফোনটা কেটে দিয়ে দীর্ঘঃনিশ্বাস নিলাম।মানুষ টা কঠিন কিন্তু ভেতরে ভেতরে কত যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে।
হঠাত দেখি মামির ফোন।ফোন টা রিসিভ করতেই বললো দিয়া একটু আসবি মা।বিহান অনেক অসুস্থ তাছাড়া ও নাকি আর লেখাপড়া করবে না।

এক ছুটে যা পরা ছিলো তাই পরেই চলে গেলাম মামাদের বাড়ি।

মামির কোলে মাথা দিয়ে প্রচন্ড জ্বরে জ্ঞানে নাকি অজ্ঞানে বলছেন জানিনা।

“আই নিড দিয়া আম্মু।আমি আর পারছি না আম্মু।দিয়াকে এনে দাও আম্মু।প্লিজ আম্মু দিয়া ছাড়া পৃথিবীর কিছুই ভাল লাগে না আমার’

দরজায় দাঁড়িয়ে দু’ফোটা চোখের পানি ছেড়ে দিলাম আমি।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here