অপূর্ণতা পর্ব ৫৬ ও শেষ

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৭

অদ্রিতার কথাগুলো শুনে বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতে লাগলো। অনেক খারাপ লাগলো কথাগুলো শুনে।অদ্রিতা আমাকে এই কথাগুলো বলবে তা ভাবতেই পারিনি।কথাগুলো ও কত স্বাভাবিক ভাবে বললো কিন্তু প্রতিটি কথা আমার বুকে তীরের মতো বিঁধছে।নিজেকে শান্ত করতে পারছি না।চোখে পানি এসে পড়েছে, তবুও নিজেকে সামলিয়ে বললাম,”তুমি মনে করতে পারো তোমাকে বিয়ে করে আমি করুনা করেছি কিন্তু সত্যিটা তা নয়।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই তোমাকে বিয়ে করেছি ।আসলে তোমাকে নিজের করে নেওয়ায় লোভটা সামলাতে পারিনি।সত্যি বলতে কি আমি তোমার ভাগ্যে ছিলাম তাইতো এতকিছু হওয়ার পরেও আমি তোমাকে পেয়েছি।আমি জানি তোমার পক্ষে এখন হয়তো আমাকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।হয়তো আমাকে তুমি এখন নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না। আমি তোমাকে কখনো জোর করবো না, একদিন তুমি নিজের মন থেকে আমাকে তোমার স্বামী হিসেবে মেনে নিবে আমি ততোদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।জানো অপেক্ষা জিনিসটা করা অনেক বেদনাদায়ক। একদম অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করে না।তাই বলেকি এত বছর যখন তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করতে পেরেছি তখন তোমাকে এত কাছে পেয়েও কেন পারবো না।এখন তো তুমি শুধুই আমার। আমাকে নিজের করে নিতে তুমি যত খুশি সময় নিতে পারো। কিন্তু আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা কখনো ভাববে না।অনেক কষ্টের পর তোমাকে নিজের করে পেয়েছি, এখন তোমাকে আমি আর হারাতে পারবো না।তোমাকে আমি সবসময় আগলে রাখবো।কখনো নিজের থেকে বিন্দু পরিমাণ দূরে যেতে দিবো না।তার জন্য তুমি আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো। নিজের সুখের জন্য, ভালো থাকার জন্য না হয় আমি একটু স্বার্থপর হলাম।স্বামী – স্ত্রী হয়ে না থাকতে পারি একসাথে তো থাকতে পারবো।বন্ধু হয়ে তোমার পাশে সবসময় থাকবো এতেই আমি খুশি আমার আর কিছু চাই না।”

এইটুকু বলে নিলয় একটু থামে পরে আবার বলা শুরু করে,”আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি, তাই তোমাকে সরাসরিই কথা বলছি।তোমার অতীত, বর্তমান সবকিছু আমি জানি।তুমি কেমন তাও আমি জানি।আরিয়ানকে তুমি মন থেকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিলে তাই হয়তো তাকে ভুলা সম্ভব নয়।কিন্তু আরিয়ান কখনো তোমাকে ভালোবাসেনি, স্ত্রী হিসেবে সম্মান পর্যন্ত করতে পারেনি।তাই ওর সাথে তোমার ডিভোর্সটা হয়ে ভালো হয়েছে। আরিয়ান হয়তো তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই তাকে নিজের করে পাওনি।তোমার ভাগ্যে আমি ছিলাম তাই এতকিছুর পরেও আজ তুমি আমার আছো।আমরা এখন লিগ্যাল
হ্যাসবেন্ড- ওয়াইফ। তাই আমাকে নিজের হ্যাসবেন্ড হিসেবে মেনে নেওয়াই হয়তো তোমার জন্য বেস্ট ডিসিশন হবে।আমি আর কি বলবো তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি আর শিক্ষিত। তাই একটু ভালো করে আমার কথাগুলো ভেবে দেখো।”আর কিছু না বলে নিলয় চলে যায়

সারাটা রাত ওনার বলা কথাগুলো ভেবেছি। ওনার বলা কোন কথায় ভুল নেই।ওনী প্রতিটি কথা ঠিক বলেছেন।আমি সব জানি, বুঝি।কিন্তু সব জেনে- বুঝেও নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছি না।পারছি না ওনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে। সব কিছু কি মেনে নেওয়া এতটাই সহজ। হয়তো না,আমার সময়ের প্রয়োজন।

,,,,,,অন্যদিকে,,,,,ইন নিউইয়র্ক,,,,,,

প্রায় একমাস হয়ে গেছে রাইশার সাথে নিউইয়র্কে এসেছি।এই এক মাসে আমার জীবনটা নরক করে তুলেছে ও।ঐদিনের পর থেকে রাইশা আমার সাথে চাকরের মতো ব্যবহার করে।যখন তখন যেভাবে খুশি অপমান করে। একেক দিন একেক পুরুষের সাথে রাত কাটায়।মাঝে মাঝে তাদের বাড়িতেও নিয়ে আসে।আমি সব দেখেও কিছু বলতে পারি না।আমাকে মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করতে হয়। ভুলটা ওর না, ভুলটা তো ছিল আমার। ওকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করার ভুল।ওর কথা শুনে অদ্রিতাকে নিজের থেকে আলাদা করার ভুল।দিনের পর দিন তার ভালোবাসা, কেয়ারকে অবহেলা আর তুচ্ছ করার ভুল। তাকে অপমান,অত্যাচার করার ভুল। এইসবের শাস্তি তো আমাকে পেতেই হতো।সত্যিই তো রাইশা ঠিকই বলেছে আমার মতো মানুষ এইসবেরই যোগ্য।আমার সাথে যা হচ্ছে সব আমার পাপের ফল।এই এক মাসে আমি অনেক চেষ্টা করেছি এখান থেকে পালিয়ে যাবার কিন্তু পারিনি।কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি একদিন না একদিন আমি ঠিক এখান থেকে রেহায় পাবো।অদ্রিতার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো,আমার করা প্রতিটি অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইবো।তাকে আবার নিজের করে নিবো।আমার বিশ্বাস ও আমাকে ক্ষমা করে দিবে।

রাইশা কর্কশ কন্ঠে বলে,” সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছি,আমার লেট হচ্ছে তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে এসো। আমি তো তোমার মতো বসে বসে অন্ন ধ্বংস করি না, আমাকে কাজে যেতে হবে।”

আরিয়ান দ্রুত এসে রাইশাকে খাবার বেড়ে দেয়।রাইশা খাবার মুখে দিয়ে থু করে ফেলে দেয় আর খাবারের প্লেট ছুড়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলে ছিঃ এটা কোন রান্না হয়েছে,ভালো করে রান্নাও করতে পারো না।এখন এইসব কিছু তুমি পরিষ্কার করবে আর আজকে তোমার খাওয়া বন্ধ এই বলে বাকি যা খাবার ছিল ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

আরিয়ান একটু রেগে বলে,”তোমার যখন আমাকে নিয়ে এতোই পবলেম তবে আমাকে এখানে কেন আটকে রেখেছো?আমাকে চলে যেতে দাও।এখানে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

রাইশা হেসে বলে,”তোমাকে এখানেই থাকতে হবে আমার সাথে। তোমার কোন রেহাই নেই। আর শেষবারের মতো বলছি আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলবে না।তবে তো বুঝতেই পারছো এতদিনে আমি কি করতে পারি। ”
আর কিছু না বলে রাইশা চলে যায়। আরিয়ান ফ্লোরে বসে পরে।আর পারছে না সে আর এইসব সহ্য করতে। এর থেকে মৃত্যুও হয়তো অনেক ভালো,,,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,,
সময় বহমান তা কারো জন্য অপেক্ষা করে না।কেটে গেছে ৪ বছর।এই ৪ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। তার সাথে বদলে গেছি আমি নিজেও।আমার জীবন থেকে সব ধূসর রং সরে গিয়ে সেখানে ঠাই করে নিয়েছে ভালোবাসার রঙিন রং। নিলয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরেই বুঝেছি ভালোবাসার আসল মানে।শিখেছি জীবনে বেঁচে থাকার, ভালো থাকার উপায়।এই ৪ বছরে আমাদের সম্পর্কটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে যদিও আমরা স্বামী- স্ত্রীর মতো থাকি না, তবুও ওনার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করি।ধীরে ধীরে ওনার প্রতি আমার মায়া কাজ করা শুরু করলো।আসলে একসাথে থাকতে থাকতে ওনী আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।ওনার বলা কথা ওনী রেখেছেন, কখনো আমাকে জোর করেনি।কখনো স্বামীর অধিকার নিয়ে আমার কাছে আসেনি।মাঝে মাঝে আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে যেতো আবার নিজেই নিজেকে কন্টোল করে নিতো।আমি সব বুঝেও কিছু বলতাম না।ওনার সাথে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে উঠেছে। নিরদ্বিধায় মনের সব কথা ওনার সাথে শেয়ার করেছি আর ওনীও আমার সাথে সব কথা শেয়ার করতেন।মাঝে মাঝে নিজের পছন্দের শাড়ি কিনে এনে আমাকে দিতেন।আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া,মাঝরাতে হাতে হাত রেখে রাস্তায় ঘুরতে যাওয়া, আইসক্লিম খাওয়া,ফুল কিনে আমার খোপায় গেঁথে দেওয়া ওনী আমার মন ভালো করতে করতো। আমার কাছেও ওনার এই ছোট ছোট জিনিস অনেক ভালো লাগতো। আমিও ইনজয় করতাম এইগুলো তাই কিছু বলতাম না।মানুষ ঠিকি বলে কায়া দেখলে মায়া বাড়ে। আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি কিনা তা জানি না কিন্তু ওনার প্রতি মায়া প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।যদিও জানি মায়া জিনিসটা খুব খারাপ তবুও নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি।এখন আমি নিজেই ওনার থেকে দুরে যেতে পারবো না।পারবো না তাকে ছাড়া থাকতে।

মা কান্ত হয়ে বলে,” দেখ অদ্রিতা দাদুভাই আমার কোন কথা শুনছে না।এবার তুই তাকে বুঝা।সকাল থেকে কিছুই খাচ্ছে না। বলে নাকি খাবে না।আমি বুড়ি হয়েগেছি তার সাথে দৌঁড়াদৌড়ি করে কি আর পারি বল?”

মার কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হলাম।নীলের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,”নীল এইসব কি শুনছি, দাদিকে কেন এতো জ্বালাছো?ভালো ছেলের মতো খেয়ে নাও দেখি।”
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#অন্তিম_পর্ব(প্রথম অংশ)

মার কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হলাম।
নীলের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,”নীল এইসব কি শুনছি,দাদিকে কেন এতো জ্বালাছো?ভালো ছেলের মতো খেয়ে নাও দেখি।”

নীল বায়না করে বলে,”আমি খাবো না,তোমরা অনেত পঁচা। আমার কোন কথা শুনো না।”

অদ্রিতা রেগে বলে,”খেয়ে নাও বলছি,একটু পরে ফাংশনে যাবো তখন আইসক্লিম,চকলেট সব খেতে পারবে,আর জিদ করে না।চুপচাপ খেয়ে নাও।”

আমি খাবো না,আগে বলো আমাকে একটা বোন এনে দিবে তখন খাবো।নাহলে আমি খাবো না,খাবো না।

অদ্রিতা বিরক্ত হয়ে বলে,”দিনে দিনে তুমি অনেক জিদ্দি হয়ে উঠছো।বাবার আদরে বাদর তৈরি হচ্ছো আর একটা কথা বললে মার দিবো এখন কোন কথা না বলে খেয়ে নাও।”

নীল জিদ বজায় রেখে বলে,”আমি খাবো না।”

নীলের কথা শুনে অদ্রিতা রেগে তার গালে চর দিতে যায় তখনি নিলয় তার হাত ধরে ফেলে, একটু রেগেই বলে,”কি করছো কি,এত ছোট বাচ্চার গায়ে কেউ হাত তুলে?”পরে নীলকে নিজের কাছে এনে বলে,’কি হয়েছে আদ্র সোনার মার কথা কেন শুনছো না।খেয়ে নাও আমরা ফাংশনে গিয়ে অনেক মজা করবো।”

অদ্রিতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে রাগে বলে,”আপনার জন্যই ছেলেটা কোন কথা শুনে না।আজ আর বাঁধা দিবেন না।আমিও দেখবো কি করে না খায়?”

নিলয় রাগী দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে,”আমাকে খাবার দাও আমিও খাইয়ে দিচ্ছি। তুমি ফাংশনের জন্য রেডি হয়ে নেও।”পরে নীলকে নিয়ে উপরে চলে যায়।নিলয়ের কথা মতো নীল বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নেয়।

অদ্রিতার ছেলে হয়েছে।নাম আদ্র আহসান নীল।দেখতে পুরোই আরিয়ানের মতো হয়েছে। আর রাগটা হয়েছে আরিয়ানের মতো কিন্তু মন-মানসিকতা পুরো মায়ের মতো।নিলয় তাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসে।তাইতো নীলও সবার থেকে বেশি নিলয়ের কথা শুনে।

মা অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে বলে,”নিলয়কে বিয়ে করে তুই ঠিক করেছোস্।আরিয়ান কোন দিনই তোর যোগ্য ছিল না।দেখিস্ মায়ের অভিশাপ কোনদিন বিফলে যাবে না।ছেলেটা কোনদিন সুখী হবে না, ওর জীবনে কোন দিন পূর্ণতা আসবে না।যেভাবে তোকে কষ্ট দিয়েছে সে নিজেও সেভাবে কষ্ট পাবে।#অপূর্ণতা ওকে সারা জীবন ঘিরে থাকবে।”

অদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে,”মা এভাবে কথা বলে না।অনেক বছর তো হলো এখন ওনাকে ক্ষমা করে দাও।নিজের ছেলেকে এভাবে অভিশাপ দেওয়া ঠিক না।আমি অনেক আগেই ওনাকে মাফ করে দিছি।তুমি আর বাবাও ওনাকে মাফ করে দাও।দোয়া করো রাইশার সাথে যাতে ওনী সুখী হন।”

মা রেগে একটু গম্ভীর স্বরে বলে,”আমার ছেলে যদি কেউ হয় সেটা হলো নিলয়। ওইদিন যদি ও আমাদের পাশে না দাঁড়াতো তবে এতদিনে আমরা হয়তো রাস্তায় ভিক্ষা করতাম বা মরে পরে থাকতাম।যেই ছেলে একটা মেয়ের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, আমরা বেঁচে আছি কিনা মরে গেছি তা একটা বারেরও জন্যও খোঁজ নিয়ে দেখে নি, তার জন্য কিসের দোয়া করবো।রাগে চলে গেছে তা না হয় মানলাম, পরে তো পারতো আমাদের একটু খোঁজ খবর নিতে।এই চার বছরে কি আমাদের সাথে কথা বলার জন্য তার কাছে এক মিনিটও সময় হয়নি। কিন্তু সে তা করেনি।এখন সে আমাদের জন্য মৃত।”ওনী আর কিছু বললেন না কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন।

মার কথা শুনে আগের কথা ভাবতে লাগলাম,,,,
বিয়ের ১ বছর পরেই নিলয়ের বাবা মারা যান।ওনী আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন।হঠাৎ স্ট্রোক করেন, পরে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই ওখানে ওনাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।এরপরে নিলয় একদম একা হয়ে পরে।ওনার বাবাই ওনার জন্য সব ছিল।ছোট থেকেই তার বাবাকে অনেক ভালোবাসতো। তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিলো তার বাবা।আগে তারা এতটা ধনী ছিল না।সে যখন ছোট ছিল তখন তার মা টাকার জন্য তার বাবাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য একজন বড়লোকের সাথে চলে যান।তখন সে ওনার জন্য অনেক কেঁদেছিল।কিন্তু ধীরে ধীরে যখন সে বড় হয় আর বুঝতে পারে তখন থেকে সে তার মাকে ঘৃণা করা শুরু করে আর সাথে সাথে পুরো মেয়ে জাতিকেই ঘৃণা করতো।তাদের থেকে দূরে থাকতো কিন্তু আমাকে কি করে এত ভালোবাসলেন মাঝে মাঝে আমি তাই বুঝতে পারি না।তার মার চলে যাওয়ার পরে তার বাবা ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেনি।একা হাতে তাকে আর পুরো বিজনেস সামলিয়েছেন।সেই বাবার এভাবে চলে যাওয়া সে মেনে নিতে পারেনি।ভিতর থেকে তিনি একদম ভেঙে পরেন।তখন থেকে তিনি ঠিকমতো খাওয়া- দাওয়া করতেন না,কথাও বলতো না, একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। একদম ছন্নছাড়া জীবন যাপন করতে লাগলো। বিজনেসেও ঠিকমত সময় দিতেন না।ধীরে ধীরে বিজনেসেও লস হতে থাকে।তখন অনেক কষ্টে ওনাকে সামলিয়েছি। নরমাল লাইফে ফিরিয়ে আনতে অনেক দিন সময় লেগেছিল।ওনার বাবা মারা যাওয়ার প্রায় এক মাস পরে হঠাৎ একদিন ওনী আরিয়ানের বাবা- মাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন।আরিয়ানের সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরে ওনাদের সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি। কিন্তু ওনাদের এই অবস্থায় দেখবো তা কোন দিন কল্পনাও করিনি।ওনারা নোংরা আর ছেড়া কাপড় পরে আছেন।দেখে মনে হচ্ছে দু- তিন ধরে খান না।ওনাদের এই অবস্থায় দেখে আমার চোখে পানি এসে পরেছে। কান্না করতে করতে ওনাদের জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে?নিলয় আমাকে থামিয়ে ওনাদের রুমে দিয়ে আসলেন পরে এসে আমাকে যা বললেন আমি কখনো ভাবিও নি এমন হবে।

ওনী যা বললেন,,,,,,
আরিয়ান চলে যাওয়া পরে মা নাকি অনেক কান্না করতো। অনেক স্ট্রেস নিতেন আর একদিন তার জন্য ব্রেন স্ট্রোক করেন।ওনার ভাগ্য ভালো ছিল যে সময়মত বাবা দেখতে পান আর হসপিটালে নিয়ে যান।ওনার চিকিৎসা করতে অনেক টাকা খরচ হয়।ওনাদের ব্যাংক- ব্যালেন্স,জায়গা- জমি এমনকি থাকার জন্য বাড়িটাও বিক্রি করে দিতে হয়।এতে মা তো সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান কিন্তু তারা একেবারে পথে বসে যান।আর নিলয় ওনাদের রাস্তায় দেখে আজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।ওনারা প্রথমে আসতে চাননি কিন্তু পরে নিলয় ওনাদের অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।তখন থেকে ওনারা নিলয়কে নিজের ছেলে মনে করেন আর নিলয়ও ওনাদের নিজের মা-বাবার মতো সম্মান করেন।আরিয়ানের মায়ের মাধ্যমেই ওনী বুঝতে পারেন সব মা এক হয় না।মায়ের আদর- ভালোবাসা কি হয় তাও বুঝতে পারে।ঐদিনের পর থেকে নিলয়ের প্রতি আমার সম্মানটা বহু গুণে বেড়ে যায়।নিলয়ের সাথে আমি নরমাল ব্যবহার শুরু করি।

নিলয় অদ্রিতাকে অন্যমনস্ক্য হয়ে ভাবতে দেখে জিজ্ঞেস করে,” কি এমন ভাবছো সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছি কোন খবর নেই।আজ যে বিজনেস এওয়ার্ড ফাংশন তা কি ভুলে গেছো নাকি। আর আজ তো বেস্ট ডিজাইনার এনাউন্স করা হবে।তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নাও পরে দেরি হয়ে যাবে না হলে।”

ওনার কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হয়ে বলি,”হুমম যাচ্ছি তো।আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে ফ্রেস হয়ে ফাংশনে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম।এখন আয়নার সামনে বসে আছি।”

নিলয় রুমে ঢুকে অদ্রিতাকে দেখে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।নীল গ্রাউন সাথে ম্যাচিং হিজাব, মুখে হালকা মেকাপ, এই সামান্য সাজে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। দেখতে একদম মায়াবি লাগছে সে তো চোখই ফিরাতে পারছে না।

আয়নার সামনে থেকে উঠে পিছনে তাকাতেই দেখি নিলয় দাঁড়িয়ে আছে।ওনাকে দেখে বললাম,”আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন রেডি হবেন না।মার শরীর একটু খারাপ তাই ওনী যাবেন না আর বাবা মার সাথেই থাকবে। আমি রেডি হয়ে গেছি আর নীলকে আমি রেডি করিয়ে দিবো আপনি রেডি হয়ে নিন।”

নিলয় ছোট করে বলে,” হুমম,,,,”আর কিছু না বলে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নেয়।পরে সবাই গাড়িতে উঠে ফাংশনে যাওয়ার জন্য।ফাংশনের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে নিলয় বলে,”এখন সবাই নামো। আমরা চলে এসেছি।”

ফাংশনে এসেই আমি অবাক হয়ে সব কিছু দেখছি।আমি কখনো এমন জায়গায় আসিনি।চারিদিকে সাংবাদিক, বিভিন্ন রঙের লাইটের আলো আর অনেক মানুষ। আমি এমন পরিবেশে একদম অভ্যস্ত নই।কেমন জানি অস্বতি লাগছে নিজের মনের ভিতর। নিলয় আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরে আমার হাত ধরে বলে নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। আমার বিশ্বাস বেস্ট ডিজাইনারের প্রাইজটা তুমিই পাবে।আর এইসব দেখে ভয় পাবে না।আমি তো আছি তোমার পাশে।

,,,,,লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যানস্ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি বিজনেস এওয়ার্ড ফাংশনে। দেশের সব গন্যমান্য বিজনেসম্যানরা এসে পরেছেন।আমরা ফাংশনটা শুরু করতে যাচ্ছি।আপনাদের সবাইকে বসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

একে একে সব এওয়ার্ড দেওয়া শেষ। টপ বিজনেসম্যান অব দা ইয়ার এওয়ার্ড পেয়েছেন নিলয়।ওনার জন্য আমি অনেক খুশি। এখন বেস্ট ডিজাইনার অফ দা ইয়ার ঘোষণা করা হবে।আমার অস্থিরতা আরও বহুগুণে বেড়ে গেলো,,,,,,

,,,,,,এ বছরে টপ ডিজাইনার শীর্ষে যার নাম আছে তা শুনে অনেকেই অবাক হবেন।ডিজাইনার জগতে ওনী একদম নতুন। তার নামও আগে হয়তো অনেকেই শুনেন নি। প্লিজ ওয়েলকাম মিসেস অদ্রিতা চৌধুরী,,, ওয়াইফ অফ মি.নিলয় চৌধুরী। আপনাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করছি,,,,,,

নিলয় অদ্রিতাকে আশ্বস্ত করে বলে,” যাও,এতদিনের প্রতিক্ষার ফল আজ পেতে যাচ্ছো।এই দিনটার জন্যই তো এতদিন ধরে ওয়েট করেছো।গিয়ে তোমার মনের কথা সব বলবে।”

অদ্রিতা স্টেজে গিয়ে এওয়ার্ডটা হাতে নিয়ে নিলয়ের দিকে তাকালো।ওনার দিকে তাকাতেই ওনী ভরসা দিলেন আর ইশারায় কিছু বলার জন্য বললেন।আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করলাম,”আজকে আমি এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি তার পেছনে একটা মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি।আমাকে হয়তো কেউ চিনতোও না।আমার আলাদা পরিচয় গড়াও হয়তো কোনদিন সম্ভব হতো না।যেই এওয়ার্ডটা আজ আমার হাতে তা অর্জনের পিছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন আমার স্বামী মি. নিলয় চৌধুরী।আমি অনেক কালো তাই জন্য সবসময় আমাকে কথা শুনতে হতো।আমাকে তো মানুষ বলেই মনে করা হতো না।আমার গায়ের রঙের জন্য আমার প্রথম স্বামী আমাকে মেনে নিতে পারেনি।আমার ভালোবাসা, কেয়ার এইসব কিছুকে আমার গায়ের রঙের জন্য অবহেলা আর তুচ্ছ করতেন।ওনার স্ত্রী হিসেবে কখনো আমাকে সম্মান করেন নি, ভালোবাসা তো অনেক দূরের কথা। ওনার করা অপমান, অবহেলা, অত্যাচার সব কিছু মেনে নিয়েছিলাম।ওনার কাছে হয়তো আমার যোগ্যতা ওনার বাড়ির কাজের লোকের থেকে কম ছিল তাই একদিন অন্য একটি মেয়ের জন্য ওনী আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান।তখন আমি ভিতর থেকে অনেক ভেঙে পরি। মরার মতো করে শুধু বেঁচে ছিলাম তখন ওনী আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাকে ভরসা দিয়েছে জীবনে কিছু করার, অনুপ্রেরণা দিয়েছে লড়াই করে বড় হওয়ার। তাই আমি আপনাদের সবার সামনে ওনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।আমাদের মাঝে এমন আরও অনেক অদ্রিতা আছে আমরা যদি একটু তাদের পাশে দাঁড়াই তবে হয়তো তারাও জীবনে অনেক এগিয়ে যাবে।সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার কথা শেষ করছি।”

আমার কথা শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিলো।আমার কথা শুনে অনেকের চোখে পানি এসে পড়লো।আমি স্টেজ থেকে নেমে নিচে আসলাম।নিচে আসতেই একজনকে দেখে আমি থমকে গেলাম।রুক্ষভাবে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আপনি এখানে কেন?”
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#অন্তিম_পর্ব(শেষ অংশ)

আমার কথা শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিলো।আমার কথা শুনে অনেকের চোখে পানি এসে পড়লো।আমি স্টেজ থেকে নেমে নিচে আসলাম। নিচে আসতেই একজনকে দেখে আমি থমকে গেলাম।রুক্ষভাবে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আপনি এখানে কেন এসেছেন? আর আপনি একা কেন,রাইশা কোথায়?আপনার মনের ইচ্ছে তো পূরণ হয়েছে। রাইশার সাথে নিশ্চয়ই অনেক সুখে আছেন।”

আরিয়ান কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে অদ্রিতার হাত ধরে।অদ্রিতা সাথে সাথে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে বলে,” কোন সাহসে আমাকে স্পর্শ করেছেন। আমাকে স্পর্শ করার কোন অধিকার আপনার নাই।এত বছর পরে কেন এসেছেন?এটা দেখতে আমি বেঁচে আছি কি না মরে গেছি।দেখেন আপনার থেকে আলাদা হয়ে আমি অনেক ভালো আছি।”

আরিয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।জানি আমি যে ভুল করেছি তার হয়তো কোন ক্ষমা হয় না। তবুও আমি দুই হাত জোর করে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।”

অদ্রিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”কিসের ভুল, কিসের ক্ষমা।আপনি তো কোন ভুল করেন নি, তো কিসের ক্ষমা চাইছেন আপনি?ভুল তো আমার ছিল, আপনাকে বিয়ে করে ভুল তো আমি করেছিলাম যার শাস্তিও আমি পেয়েছি।”

আরিয়ান করুন স্বরে বলে,”প্লিজ অদ্রিতা এভাবে বলো না।কেউ যখন তার ভুল বুঝতে পারে তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। আমি হিরা ছেড়ে কাঁচের পিছনে ছুটেছি আর সেই কাঁচ আমার জীবনটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।জানো রাইশা আমাকে কোনদিন ভালোবাসেনি। ও তো শুধু আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছিল কিন্তু আমি এতোই বোকা হয়েছিলাম তার রুপের মোহে যে তার ছলনাটাও আমি বুঝতে পারিনি।ও শুধু আমাকে ব্যবহার করার জন্য আমার সাথে বিয়ের নাটক করেছিল। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল আমাকে ব্যবহার করা।আসলে তার একজন বিশ্বস্ত লোক দরকার ছিল। ওই দেশে তেমন কাউকে পায়নি আর এই দেশ থেকে অন্য কাউকে নিয়ে গেলেও তাকে মোটা অংকের বেতন দিতে হতো। আমার সম্পর্কে ও সব ভালো করেই জানতো, আমি তার প্রতি দুর্বল ছিলাম। তাই প্লেন করে আমাকে নিয়ে যায়।নিউইয়র্কে নিয়ে গিয়ে আমার জীবন নরক করে তুলে ও।আমাকে তার কাজের লোক বানিয়ে রেখেছিল। বন্ধি করে রেখেছিল সেখানে যাতে আমি সেখান থেকে পালাতে না পারি।আমার ভিসা,পার্সপোর্ট সব রাইশা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল তাই তো ওখান থেকে আমি আসতে পারিনি।”

এইটুকু বলে আরিয়ান একটু থামে পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বলা শুরু করে,”রাইশা সবসময় পার্টি, মডেলিং, ফ্রেন্ডস্ এইসব নিয়ে থাকতো।বিভিন্ন ছেলের সাথে রাত কাটাতো আর মাঝে মাঝে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসতো।আমি চেয়েও কখনো তার প্রতিবাদ করতে পারিনি।অনেক কষ্টে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি, শুধু তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তোমাকে আবার নিজের জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি সুন্দরের মোহে পরে নিজের হাতেই ধ্বংস করেছি নিজের সাজানো সংসারকে।তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।তুমি আমাকে ক্ষমা না করলে মা-বাবাও আমাকে ক্ষমা করবে না।তারা এখন কোথায় আছে তাও আমি জানি না। এখন তুমিই আমার শেষ ভরসা।”

অদ্রিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে আদ্র এসে বলে,মা তুমি এখানে। জানো আমি তোমাকে কত খুঁজেছি।পরে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে এই আঙ্কেল তা কে,আর ওনি কাঁদছে কেন?

অদ্রিতা স্মিত হেসে বলে,”ওনি কেউ হন না।আর ওনী জীবনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন তাই কাঁদছে। আর তুমি এখানে কি করছো?বাবার কাছে যাও।”

আচ্ছা মা,,,পরে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে আঙ্কেল কাঁদে না। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।আর কিছু না বলে দৌড়ে নিলয়ের কাছে চলে যায়।

আরিয়ান এতক্ষন অবাক হয়ে সব দেখেছে।নীলকে দেখে তার কেমন জানি আপন বলে মনে হয়েছে।কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে,ও কে?

অদ্রিতা কন্ঠে দূঢ়তা রেখে বলে,”ও আমার আর নিলয়ের সন্তান,নীল।”

আরিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে বলে,”তুমি বিয়ে করে নিয়েছো?”

অদ্রিতা গম্ভীর স্বরে বলে,”হুমম।তো কি ভেবেছেন সারা জীবন আমি আপনার কথা ভেবে কষ্ট পাবো।চোখের পানি ফেলবো।”

আরিয়ান করুন দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,” তবে নীলকে দেখে আমার এত আপন কেন মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে ও আমার অনেক কাছের কেউ।একদম আমার মতো দেখতে হয়েছে।ছোটবেলায় আমিও এমন দেখতে ছিলাম।তুমি মিথ্যা বলছো নীল আমার আর তোমার ছেলে, তাই না।সত্যি বলবে?”

অদ্রিতা কন্ঠে গম্ভীর্যতা রেখেই বলে,”জন্ম দিলেই কেউ পিতা হয়ে যায় না।এখন কেন ওকে নিজের সন্তান বলছেন?আপনি নিজেই বলেছেন আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আপনি অনেক বড় ভুল করেছেন। আর আপনার সেই ভুলের জন্যই নীল আমার গর্ভে এসেছে। আপনার জন্য ও ভুল হতে পারে কিন্তু আমার জন্য ও আমার জীবনের সবকিছু।”

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,”তুমি আগে ওর কথা আমাকে কেন বলো নি?এত বড় একটা বিষয় কেন তুমি আমার থেকে লুকিয়ে গেছো? তখন ওর কথা জানলে হয়তো আমাদের মাঝে আবার সব ঠিক হয়ে যেত।এটা তুমি একদম ঠিক করো নি।বাবার কাছে তার সন্তানের খবর গোপন করা তোমার একদম উচিত হয়নি।”

অদ্রিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,” আর আপনি যা করেছিলেন তা বুঝি ঠিক ছিল?আমার সন্তানকে কেউ করুণা করুক তা আমি চাই নি।কেউ বাধ্য হয়ে তাকে মেনে নিক, তাকে অবহেলা করুক যেমনটা আমাকে করেছে, তা আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারতাম না।
আপনি আমাকে ভালোবাসেননি তা আমি মেনে নিয়েছিলাম।আমি কালো বলে আপনার আমাকে পছন্দ ছিল না। আমি ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা দিয়ে একদিন আপনার মন জয় করে নিবো কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।আপনি অন্য একজনকে ভালোবাসে তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য আমাকে ডিভোর্স দিলেন।আপনি কখনো আমাকে মেনে নিতে পারেননি। আমাকে মেনে নিতে আপনার ইগোতে বেঁধেছে।কিন্তু এখন আমি আর আগের মতো নেই।আমি একসময় আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম কারণ তখন আপনি আমার স্বামী ছিলেন।তাই তো আপনার করা সকল অন্যায় -অত্যাচার সব মুখ বুঝে মেনে নিয়েছিলাম।কোন প্রতিবাদ করি নি। কিন্তু আজ আমার মনে আপনার জন্য কোন ভালোবাসা নেই কারণ আজ আপনি আমার কেউ নন।তাই আজ আমি এই কথাগুলো বলতে বাধ্য হলাম।”

আরিয়ান করুন দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি সবসময়ই ঠিক ছিলে,ভুল তো ছিলাম আমি।নিজের ইগোকে সবসময় বড় করতে গিয়ে নিজের সব কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলেছি আমি।আজ আমার স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা সবই থাকতো কিন্তু নিজের ভুলেই সবকিছু থাকতেও আজ আমার কিছু নেই। আমার সব কিছু এখন অন্য কারো। এখন একদম নিঃস্ব আমি।তুমি শুধু আমাকে ক্ষমা করে দাও তবেই হবে। জানি ভুলটা অনেক বড় ছিলো তার জন্য আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিয়েছে। আমি এখনো অপরাধ বোধে ভোগছি। প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।”

নিলয় রাগে কর্কশ কন্ঠে বলে, “আপনি যা করেছেন তার পরেও কি ক্ষমা পাওয়ার কোন যোগ্যতা আছে আপনার?আমি চাই না আপনার এই কালো ছায়া কখনো আমার ওয়াইফের উপরে পরুক। আপনি এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যান।” নিলয় দেখেছিল অদ্রিতা কারো সাথে কথা বলেছিল কিন্তু তা যে আরিয়ান হবে তা ভাবতে পারে নি। কিন্তু আরিয়ানকে দেখা মাএ নিলয় আর এক মুহূর্তও দেরি না করে সেখানে থেকে চলে আসে।

আরিয়ান করুন দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি শুধু একবার আমার কথার জবাব দাও আমি চলে যাবো।আর কখনো তোমার সামনে আসবো না।”

অদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে,”আমি কখনোই আপনার খারাপ চাইনি।আজ আপনার প্রতি আমার আর কোন অভিযোগ নেই।আমি আপনাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি।আপনি আপনার লাইফে ভালো থাকবেন।”

আরিয়ান কৃতজ্ঞতার কন্ঠে বলে, “তুমি আমাকে মাফ করে দিয়েছো এটাই আমার জন্য অনেক।তোমরা ভালো থেকো। আসলেই মানুষ যখন নিজের পাওনা থেকে বেশি কিছু পেয়ে ফেলে তখন তার মূল্য দিতে পারে না।তাই তো আমি তোমার মূল্য দিতে পারিনি।নিলয়ই তোমার যোগ্য। ওনাকে নিয়ে তুমি সুখে থেকো।আর কিছু না বলে সে সেখান থেকে চলে যায়।”

নিলয় আর কিছু না বলে অদ্রিতা আর নীলকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে।রাতে নীল তার দাদা-দাদির সাথে ঘুমাবে বলে বায়না করায় অদ্রিতা আর কিছু বলে না। নীল ওনাদের সাথে ঘুমিয়ে পরে।ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে একমনে সবকিছু ভাবছি এমন সময় হঠাৎ নিলয় এসে আমার হাত ধরে আমি কিছু না বলে কেঁদে দেই। ওনী আমার হাত ছেড়ে দিয়ে করুন স্বরে বলে,” সরি আসলে এভাবে তোমার হাত ধরা আমার ঠিক হয়নি। তুমি অপসেট ছিলে তাই,আর এমন হবে না।”আর কিছু না বলে সে চলে যেতে নেয় কিন্তু অদ্রিতা হাত ধরে ফেলে। অদ্রিতা তার হাত ধরায় নিলয় অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে কি হয়েছে,” অদ্রিতা নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বলে আমার আপনার থেকে একটা জিনিস চাই।”

আজ প্রথম অদ্রিতা নিলয়কে জড়িয়ে ধরেছে। নিলয় অনেকটা অবাক হয়ে বলে,”এই প্রথম নিজে থেকে আমার কাছে তুমি কিছু চাইছো,আমি তোমার চাওয়া অপূর্ণ রাখবো না।বলো কি চাও?”

অদ্রিতা নিলয়ের কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে, “আমি আদ্রের ইচ্ছেটা পূর্ণ করতে চাই। আমি আপনার থেকে একটা মেয়ে চাই।” বলে লজ্জায় নিলয়ের বুকে মুখ লুকায়।

নিলয় অদ্রিতার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়ে।কতক্ষন বিস্মিত দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে থেকে পরে বলে,”আমার কিন্তু টুইন বেবি চাই। চলো আজ থেকেই তাদের আনার ব্যবস্থা করি। “বলে অদ্রিতার দিকে এগিয়ে আসে।অদ্রিতা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলে,”অসভ্য, নিলজ্জ একটা।”

নিলয় মুচকি হেসে বলে, “কিছু তো করলামই না তার আগেই অসভ্য আর নিলজ্জ হয়ে গেলাম।বউের কাছে লজ্জা পেলে কি আর হয় বলো। তোমার কাছে না হয় একটু অসভ্য আর নিলজ্জই হলাম।” আর কিছু না বলে অদ্রিতাকে কোলে তুলে নেয়। অদ্রিতাও আজ বাঁধা দেয় না।সে নিজের থেকে আজ নিলয়ের কাছে এসেছে।আজ এত প্রতিক্ষার পর নিলয় আর অদ্রিতা এক হয়েছে।এত অপেক্ষার পর পূর্ণতা পেয়েছে নিলয়ের ভালোবাসা।পূর্ণতা পেয়েছে নিলয় আর অদ্রিতার স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক। তার দুই জনে হারিয়ে গেল ভালোবাসার অন্য এক জগতে,,,,,,,,,

৫ বছর পরে,,,,,,

অদ্রিতা কান্ত স্বরে বলে,” নীল কোথায় যাচ্ছ?”

নীল ইনোসেন্ট মুখ করে বলে,”আমি বাহিরে খেলতে যাচ্ছি। আমি সব হোম ওর্য়াক শেষ করে এসেছি।প্লিজ মা না করো না।”

আচ্ছা যাও,সন্ধ্যার আগে ফিরে আসবে।বোনরা কোথায়?

ঘুমাচ্ছে,বাবা সাথে আছে।আর কিছু না বলে দৌড়ে চলে যায়।

অদ্রিতা ব্যস্ত হয়ে উপরে রুমে ঢুকে।রুমে ঢুকেই দেখে নিলয় সুফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে।সে কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে বসে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওদের অনেক সুন্দর লাগছে।

নিলয় আর অদ্রিতার যমজ মেয়ে হয়েছে।একজনের নাম অহনা। সে দেখতে পুরোই নিলয়ের মতো হয়েছে।খুব চঞ্চল আর একটু জিদ্দি।একদম নিলয়ের মতো ফর্সা আর দেখতেও হয়েছে।আর অন্যজনের নাম অাদ্রিজা দেখতে অদ্রিতার মতো হয়েছে। একটু কালো তবে খুব শান্ত শিষ্ট আর ভদ্র।

“আমি ওদের দেখছি আর আগের কথা ভাবছি। সত্যি আমি অনেক ভাগ্যবতী নাহলে কি নিলয়ের মতো কাউকে নিজের জীবন সাথি হিসেবে পেতাম। আজ আমার জীবন পূর্ণতা পেয়েছে শুধু নিলয়ের জন্য।এইসব ভাবতেই আমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।কিন্তু এটা কষ্টের পানি না সুখের পানি।” হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় ভয়ে কেঁপে উঠলাম।পরে বুঝতে পারি এটা নিলয়।ওনী কিছু না বলে আমাকে ওনার দিকে ঘুরায়।আমাকে ওনার নিজের দিকে ঘুরাতেই ওনী আমার চোখে পানি দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,” কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন?”

আমি চোখের পানি মুছে বলি,এটা সুখের পানি।এখন আপনি আর আমার ছেলে – মেয়েরাই আমার জীবনের সব।ভালোবাসি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি বলে ওনাকে জড়িয়ে ধরি।

নিলয়ও অদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে আমিও খুব ভালোবাসি আমার এই ব্লাক কুইনকে। তুমি শুধু আমার কুইন, শুধুই আমার।সারাজীবন তোমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখবো।কখনো নিজের জীবন থেকে আলাদা হতে দিবো না।আমি যে খুব ভালোবাসি তোমাকে।আমার জীবন থেকে সব #অপূর্ণতা মুছে দিয়ে পূর্ণতায় আমার জীবনটাকে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অদ্রিতা স্মিত হেসে বলে,” উহু,আর কথা নয়।মেয়েরা উঠে যাবে।আর আপনাকেও ধন্যবাদ আমার জীবনকে আপনার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য। সারাজীবন আমাকে এত ভালোবাসবেন তো?”

নিলয় ঠোঁটের কোনায় হাসি রেখে বলে,” হুমম,যতদিন দিন আমার দেহে প্রাণ আছে আমার মনে শুধুই তুমি থাকবে।”

অদ্রিতা স্মিত হেসে বলে,” আর আমার মনেও শুধুই আপনি থাকবেন। ”

,,,,,,,,,,,,, সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here