অপূর্ণতা পর্ব ৫৩+৫৪+৫৫+৫৬

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৩

অদ্রিতার কথা শুনে নিলয় রাগে ভ্রু কুচকে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি করে পারলে আমাকে এই কথাগুলো বলতে। তুমি আমাকে এতটা স্বার্থপর কি করে ভাবতে পারলে?তুমি কি করে ভাবলে তোমার এমন একটা বিপদের দিনে আমি তোমাকে একা ফেলে চলে যাবো। নিজের কথা ভাববো।নিজের লাইফে স্যাটেল হওয়ার কথা চিন্তা করবো।এত দিনে তুমি আমাকে এই চিনলে।আমাকে কি এখনো একটুও বিশ্বাস করা যায় না।আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমাকে তুমি নিজের বন্ধুও ভাবতে পারছো না।”আরিয়ান কথায় অদ্রিতার প্রতি রাগের থেকে অভিমান বেশি প্রকাশ পেয়েছে।

নিলয়ের কথা শুনে অদ্রিতা চুপ করে থাকে। নিলয়ের কোন প্রশ্নেরই উত্তর তার কাছে নেই।সে এখন এমন এক জায়গায় আটকে পরেছে যার থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় তা তার জানা নেই।কিছুক্ষন চুপ থেকে সে আনমনেই বলে উঠলো, “আমার জীবনটা একটা কালো রাতের মতো যেখানে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোথাও ভোরের আলো ফোঁটার বিন্দু পরিমাণ আভাশ নেই।চারিদিকে শুধু নিস্তব্দতা৷ আমার কোন চাওয়াই পূর্ণতা পায় না। আমার পুরো জীবনই কেন #অপূর্ণতা দিয়ে ঘেরা বলতে পারবেন?আমি তো জীবন থেকে কখনো বেশি কিছু চাইনি তবে আমার এই ছোট ছোট চাওয়াগুলোও কেন পূর্ণ হয় না?”

নিলয় ভরসার কন্ঠে বলে,”যে কোন পরিস্থিতিতে হাল ছাড়তে নেই।অন্ধকার যত গভীর হয় ভোরের আলো ফোঁটার সময় ততোই এগিয়ে আসে।এক সময় সেই অন্ধকার ভেদ করে পূর্ব আকাশে সূর্য উঁকি দেয় আর চারিদিক থেকে অন্ধকার সরে গিয়ে নতুনভাবে সবকিছু আলোকিত হয়।সবাইকে জীবনে কোন না কোন সময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।তাই বলে কখনো সেই পরিস্থিতির কাছে হার মানতে নেই।তুমি এখন অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য আছো আর হয়তো ভাবছো কোনভাবেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।কিন্তু এটা ভুল ভাবনা।এখন তোমার উচিত এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রেখে নিজের উপর বিশ্বাস আর ভরশা নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করা।জানি বলা যতটা সহজ করা ততোটা সহজ না। কিন্তু তাই বলে সব কিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলেও চলে না।নিজেকেও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে হয়।নিজেকে সব পরিস্থিতিতে কি করে শক্ত রাখতে হয় তা শিখতে হয়।কখনো কোন কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে দুর্বল হলে চলবে না।এখন যদি তুমি দুর্বল হয়ে পরো তবে কোনভাবেই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।জীবন কখনো কোন একজনের জন্য থেমে থাকে না।সে তার আপন গতিতে চলতে থাকে। এখন তোমার উচিত যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। জানি কোন কিছু ভুলা এত সহজ নয় কিন্তু সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক সময় এই কঠিন কাজটা করতে হয়।আমার বিশ্বাস একদিন তুমিও এই কঠিন পরিস্থিতির থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।আর আমি তোমাকে সাহায্য করবো এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে। তুমি যেকোন পরিস্থিতিতে সবসময় আমাকে তোমার পাশে পাবে।”

মনোযোগ দিয়ে নিলয় ভাইয়ার কথা শুনেছি।এখন ওনার মুখের দিকে তাকালাম।ওনার বলা প্রতিটি কথা ঠিক।ওনার কোন কথায় কোন ভুল নেই।সত্যিই তো যা হয়েগেছে তা কোন ভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যা হবে তা হয়তো পরিবর্তন করা সম্ভব। আমি যদি এখন চাই তবে হয়তো আমার সামনের দিনগুলো ভালো করে কাটাতে পারবো।আমার নিজের জন্য না হলেও আমার সন্তানের জন্য আমাকে এই সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।নিজেকে শক্ত করতে হবে।নিজেকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে সবাই আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। তখন কেউ যেন আমার গায়ের রঙের জন্য আমাকে কথা শুনাতে না পারে।

নিলয় শান্ত স্বরে বলে,” কি এতো ভাবছো তুমি?এখন এইসব কিছু বাদ দাও আর ডয়িং রুমে চলো খাবে এখন।”

আমি এখন খাবো না,আপনি খেয়ে নিন?

নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে,” তুমি আজ সারাদিন খাওনি আর এখন যদি আর একবার খাবো না বলেছো তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।দ্রুত ফ্রেস হয়ে আসো। তোমাকে মাত্র ৫ মিনিট টাইম দিলাম এর মধ্যে তুমি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে আসবে,আমি অন্য কোন কথা শুনতে চাই না।”

নিলয় ভাইয়ার মুখের দিকে তাকাতেই দেখি রাগে ওনার চোখদুটো একদম লাল হয়ে গেছে। এইটুকু বিষয়ে এত রাগ করার কি আছে বুঝি না।ওনার দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না দ্রুত ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলে চলে এলাম।মা রান্নাঘরেই ছিল আমি মাকে ডাক দিতেই মা বাহিরে বেরিয়ে আসে। আমি আর নিলয় ভাইয়া চেয়ারে বসে আছি, মা ব্যস্ত হয়ে আমাদের খাবার বেড়ে দিল।এভাবে নিলয় ভাইয়ার সামনে খেতে কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে তবুও ওনার রাগ দেখে আর কিছু বলার সাহস পায়নি।চুপচাপ যা প্লেটে ছিল খেয়ে নিয়েছি।আমার খাওয়া শেষ হতেই নিলয় ভাইয়া বাড়ির সবাই বলে চলে গেলেন আর যাওয়ার আগে আমাকে বারবার করে বলে গেছেন নিজের যত্ন নিতে আমি শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানিয়েছি।

অন্যদিকে আরিয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা রাইশার হোটেলে চলে যায়।রাইশার রুমে সামনে গিয়ে দুই- তিন বার কলিং বেল বাজাতেই রাইশা রুমের দরজা খোলে আরিয়ানকে দেখতে পায়।আরিয়ানকে দেখে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,”এত রাতে তুমি এখানে কি করছো,বাড়িতে যাওনি?”

আরিয়ান বিষন্ন স্বরে বলে,” আগে তো রুমে আসতে দিবে নাকি এখান থেকে চলে যাবো।”

হুমম,ভিতরে আসো।এত রাগার কি আছে?

আরিয়ান ভিতরে ঢুকতেই রাইশা দরজা অফ করে আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করে,”এখন বলো কি হয়েছে,চোখ-মুখের এই অবস্থা কেন?”

আরিয়ান রাইশাকে সব কিছু খোলে বলে।আরিয়ানের কথা শুনে রাইশা মনে মনে হাসে কিন্তু মুখে তাকে সান্তনা দিতে দিতে বলে,”চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।মা-বাবার অবাধ্য হলে তারা একটু রাগ করেই কিন্তু যখন তারা দেখবে তুমি কোন ভুল করো নি। তুমি অনেক ভালো আছো তবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।একদিন তারা আবার তোমাকে কাছে টেনে নিবে শুধু তাদের একটু সময় দাও।”

আরিয়ান আর কিছু বলে না,শুধু রাইশাকে একবার জরিয়ে ধরে পরে সুফায় ঘুমিয়ে পরে।

~~~পরেরদিন সকালে,,,,,,,

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা গিয়ে দরজা খোলে দেন।দরজা খোলে যাদের দেখলেন তাদের দেখার জন্য মা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।ওনাদের দেখে মুহূর্তের মার মুখের রং পালতে যায়।মুখ গম্ভীর করে বলে আপনারা এখানে কোন সাহসে এসেছেন? আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে আপনাদের শান্তি হয়নি, এখন কি চান আমার মেয়ে মরে যাক?

আপনার রাগ করাটা স্বাভাবিক । আপনার জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে হয়তো এটাই বলতো কিন্তু আমাদের কথাও তো একবার শুনুন।কথা দিচ্ছি একবার অদ্রিতার সাথে দেখা করেই আমরা চলে যাবো আর সে যদি না চায় তবে আর কোন দিন তার সাথে আর দেখা করবো না।একবার তার কাছে আমাদের ক্ষমা চাইতে দিন।

আপনাদের কোন ক্ষমা চাইতে হবে না এখন আসতে পারেন।আমার মেয়েকে তার অবস্থায়ই ছেড়ে দিন।

রুমের ভিতর থেকেই বাইরে থেকে কথা বলার শব্দ শুনতে পেলাম।গলার আওয়াজ শুনে মনে হলো ওনারা আমার চেনা তাই বাহিরে বেরিয়ে আসলাম।
ওনাদের দেখেই আমার মুখে হাসি ফোঁটে উঠলো। দৌঁড়ে ওনাদের কাছে গেলাম,মা-বাবা আপনারা এত সকালে এখানে সবকিছু ঠিক আছে তো।মা আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন আমার সামনে হাত জোড় করে মা বলতে লাগলেন, “আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। আমার ছেলেটা দিনের পর দিন তোর উপর অত্যাচার করেছে। তোকে অবহেলা করেছে আর একবাড়িতে থেকেও আমরা কিছু জানতে পারিনি।আজ তোর এই অবস্থার জন্য হয়তো আমরা দায়ি।আরিয়ানের সাথে তোর বিয়েটা দিয়ে আমরা ঠিক করিনি। আজ যদি আমরা আরিয়ানকে জোর করে বিয়েটে রাজি না করাতাম তবে তোকে এত কিছু সহ্য করতে হতো না।”

মা- বাবা আপনাদের কোন দোষ নেই আমার ভাগ্যে যা ছিল তা হয়েছে।তাই এর জন্য কখনো নিজেদেরকে দোষারুপ করবেনা।মা-বাবা সবসময় সন্তানের কল্যানের জন্য দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। তাদের হাত কখনো সন্তানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য জড়ো হয় না।আপনার এখানে আমাকে দেখতে এসেছেন তাতেই আমি অনেক খুশি।আর কখনো যা হয়েছে তা ভেবে নিজেরা কষ্ট পাবেন না।

আরিয়ানের বাবা শান্ত স্বরে বলে,”আমার ছেলেটা সত্যিই অনেক অভাগা।না হলে কি তোর মতো এমন একজন মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েও বুঝলো না।কিন্তু একদিন সে ঠিকই বুঝবে সে কি হারিয়েছে। তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।তুমি ভালো থেকো মা আমরা এখন আসছি।”

আপনারা এখন কোথাও যাচ্ছেন না। আপনাদের দেখেই মনে হচ্ছে কাল থেকে কিছু খাননি। এখন সকালের নাস্তা খেয়ে পরে যাবেন।মা তুমি ওনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো।অদ্রিতার মা আর কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে যায়।অদ্রিতা তার শ্বশুর -শ্বাশুড়িকে নিয়ে নিজের রুমে যায়।পরে ওনারা ফ্রেস হয়ে আসলে ডয়িং রুমে সবাই একসাথে খেয়ে নেয়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

নির্দিষ্ট ডেটে কোর্টে উপস্থিত হয় অদ্রিতা।তার সাথে নিলয় আর তার বাবাও গিয়েছে। অদ্রিতা কোর্টে ঢুকেই দেখে আরিয়ান আর রাইশা আগেই কোর্টে বসে আছে।
জর্জ আসলেই ডিভোর্সের কাজ শুরু করা হয়।দুইজনের সম্মতিতে ডিভোর্সটা হয়ে যায়,,,,,,,,,
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৪

নির্দিষ্ট ডেটে কোর্টে উপস্থিত হয় অদ্রিতা তার সাথে নিলয় আর তার বাবাও গিয়েছে। অদ্রিতা কোর্টে ঢুকেই দেখে আরিয়ান আর রাইশা আগেই কোর্টে বসে আছে।
জর্জ আসলেই ডিভোর্সের কাজ শুরু করা হয়।দুইজনের সম্মতিতে ডিভোর্সটা হয়ে যায়,,,,,

ডিভোর্সের সব ফর্মালিটি শেষ করে কোর্ট থেকে বের হতেই আমার পা চলা থেমে গেলো। না চাওয়া সত্ত্বেও চোখে পানি চলে এলো।যতোই সবার সামনে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করি না কেন ভিতরে ভিতরে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমিও তো মানুষ আমারও তো অনুভূতি আছে। এতদিন যাকে নিজের বলে ভেবেছি, যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসেছি, যাকে পাশে নিয়ে সারা জীবন কাটানোর চিন্তা করেছি এত তাড়াতাড়ি সব কিছু কি করে ভুলে যাই।বিয়ের এই কয়েক মাসে যে মানুষ আমার সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলেনি হাতে হাত ধরে হাতা তো অনেক দূরের কথা। সে এখন অন্য একজনের হাতে হাত রেখে গল্প করতে করতে যাচ্ছে। আমি নিজের চোখে এটা দেখে কি করে নিজেকে স্থির রাখবো, কি করে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য একজনের সাথে দেখে মেনে নিবো?কি করে সহ্য করবো এইসব কিছু। না চাইতেও চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। মাত্রই তো ডিভোর্সটা হয়েছে আর সাথে সাথেই অন্য মেয়ের সাথে ঘুরছে তবুও আমার সামনে একটু সময়ের জন্য তো ওয়েট করতে পারতেন।ওনী তাও পারলেন না।ভালোই হলো ডিভোর্সটা হয়ে এখন আপনি আপনার মতো থাকবেন আর আমি আমার মতোন।আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে বিয়ে করে সুখী হন।আর আমিও এখন থেকে সুখে থাকবো কারো জন্য আর চোখের পানি ফেলবো না।

আরিয়ান একবার পিছুনে তাকিয়ে দেখে অদ্রিতা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কেন জানি এখন তার নিজের মাঝে অনুশোচনা কাজ করছে? সে সাথে সাথে রাইশার হাত ছেড়ে দেয়।আরিয়ান হাত ছাড়তেই রাইশা আবার তার হাত ধরে বলে,কি হলো?হাত ছাড়লে যে?

আরিয়ান ইসস্তত করে বলে,” এমনি, কিছু হয় নি।”

রাইশা উৎফুল্ল চিত্ত বলে,” হুমম,এখন চলো আমরা বিয়েটা করে ফেলি।”

আরিয়ান কিছুটা ইসস্তত করে বলে,” এখন, এইভাবে বিয়ে করা কি ঠিক হবে? এত তাড়াতাড়ি কি করে সম্ভব? ”

রাইশা কন্ঠে দূঢ়তা রেখে বলে,” হুমম,ঠিক হবে।আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি আর এখন থেকে যা হবে সব ঠিক হবে।বিয়ের সব কিছু আমি আগে থেকে রেডি করে রেখেছি। কাজি অফিসে যেয়ে এখন শুধু রেজিষ্টি পেপারে সই করে বিয়ে করে নিবো।এখন চলো তাড়াতাড়ি কাজি অফিসে যাই।”

আরিয়ান বিষন্ন কন্ঠে বলে,” হুমম,চলো।” আর কিছু না বলে তারা কাজি অফিসে চলে যায়। সেখানে আরও দুই তিন জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে আরিয়ান ও রাইশার বিয়েটা হয়ে যায়।যদিও সাক্ষী হিসেবে যারা ছিল তাদের কাউকেই আরিয়ান চিনে না তারা সবাই রাইশার ফ্রেন্ড।

রাইশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,” I am so happy now.অবশেষ এত কিছুর পরে আমাদের বিয়েটা হলো। আমার এতদিনের অপেক্ষা সার্থক হলো। এতটা খুশি আমি জীবনে আর কখনো হয়নি” আর কিছু না বলে সে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।

আমার এতদিনের ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেলো। অবশেষে রাইশাকে আমি নিজের করে পেলাম। রাইশা তো এখন আমার সাথেই আছে তবুও কেন জানি আমার খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এমন মনে হচ্ছে আমার সবচেয়ে মূল্যবান কিছু আমি হারিয়ে ফেলেছি। মনের ভিতরে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। রাইশাকে বিয়ে করেও আমি মন থেকে খুশি হতে পারছি না কিন্তু কেন? এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না, এখন তো আমার সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা।কেন বার বার অদ্রিতার অশ্রুমাখা মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠছে। মা-বাবার বলা কথাগুলো আমার কানে ভাজছে। সত্যিই কি আমি রাইশাকে পেতে গিয়ে সবকিছু হারিয়ে ফেললাম? এতদিনে আমার মনের আশা পূরণ হলো। অদ্রিতাকে আমি বাধ্য করেছি আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। ফাইনালি আজ যখন আমি তার থেকে মুক্ত হয়ে নিজের মনের মতো অন্য একজনকে বিয়ে করে নিয়েছি তবে এখন তার চলে যাওয়াতে আমার খারাপ কেন লাগছে?নিজের মনেই কথাগুলো ভেবে চলেছে আরিয়ান, হঠাৎই রাইশার কথায় ভাবনা থেকে বের হয়।

তোমার কি হয়েছে।এত অন্যমনস্ক হয়ে কি এমন ভাবছো?

আরিয়ান বিষন্নতা ভরা কন্ঠে বলে,” মা-বাবা এই সবকিছু কোনভাবেই মেনে নিবে না। ভাবছি এখন কোথায় যাবো?”

তোমাকে এত টেনশন করতে হবে না আমরা আজ রাতের ফ্লাইটেই নিউইয়র্ক চলে যাবো।আমি সব ডকুমেন্টস আগেই কমপ্লিট করে রেখেছি। তোমার মা-বাবার কথা ভেবে আর মন খারাপ করো না, দেখবে ওনারাও একদিন সবকিছু মেনে নিবেন।নিজের একমাত্র ছেলেকে আর কয় দিনই বা নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন বলো?আমরা নিউইয়র্ক গিয়ে সবকিছু ঠিক করে তোমার মা-বাবাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো।এবার খুশি তো,পরে তারা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,

নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে,” তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? বাড়িতে যাবে না?”

অদ্রিতা পিছনে ফিরলেই নিলয় তার চোখে পানি দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে,” তুমি কাঁদছো কেন?”

অদ্রিতার নিজের চোখের পানি মুছে বলে কই কাঁদছি না তো, চোখে হয়তো ময়লা গিয়েছিল তাই পানি পরছে।

নিলয় ভরশা দিয়ে বলে,”এখন থেকে তোমার কান্না করার দিন শেষ। আর পিছনে ফিরে তাকাবে না।অতীত ভেবে আর কখনো নিজে কষ্ট পাবে না।এখন থেকে নিজের জন্য বাঁচতে শিখো।নিজের মনকে শক্ত করে সামনে এগিয়ে যাও। তোমার স্বপ্ন পূরণ করো। যা আগে মাঝ পথে এসে ছেড়ে দিয়েছো আবারও তা নতুন করে শুরু করো। আমি তোমার সাথে আছি।”

অদ্রিতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে, “আমি কি পারবো তা আবার নতুন করে শুরু করতে।আমি তো তা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি, কি করে আবার নতুন করে তা শুরু করবো?আমি পারবো না।”

নিলয় কন্ঠে দূঢ়তা এনে বলে,”তোমাকে পারতেই হবে। তোমার নিজের জন্য না হলেও তোমার সন্তানের জন্য। একজন বড়ো ডিজাইনার হওয়া তোমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল। তুমি অনেক ভালো ডিজাইন করো আর আমার বিশ্বাস তুমি পারবেই।শুধু মনে সাহস আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজটা শুরু করো ইনশাআল্লাহ একদিন তুমি সফল হবে।আল্লাহর উপর ভরসা করে এগিয়ে যাও।”

নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে মনে অনেকটা ভরসা পেলাম।অনেক তো হলো অন্যকে ভালো রাখার চেষ্টা করা, এখন থেকে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো।আমার স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। একজন বড় ডিজাইনার হওয়ার আমার ছোটবেলার স্বপ্ন আর তা আমি পূরণ করবোই।আমাকে তো পারতেই হবে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ইন নিউইয়র্ক,,,,,,,,,,

কেটেগেছে এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে পাল্টে গেছে অনেক কিছু।এই এক সপ্তাহ রাইশার সাথে আরিয়ান অনেক ভালো ছিল।রাইশাকে নিজের করে পেয়ে বাকি সব কিছু সে ভুলে গেছে।নিউইয়র্কে এখন প্রায় মাঝ রাত।আরিয়ান রাইশার জন্য অপেক্ষা করছে। তার এখন রাইশার জন্য টেনশন হচ্ছে। এই এক সপ্তাহে রাইশা কখনো এতটা রাত করে বাড়িতে ফিরেনি। কলিংবেলের শব্দ শুনে সে স্বত্বি পেল। সাথে সাথেই সে দরজা খোলে দিল।কিন্তু দরজা খোলে সে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।তা দেখে রাগে তার চোখ-মুখ পুরো লাল হয়ে গেলো।কিছু না ভেবেই সে জোরে রাইশার গালে একটা চর বসালো।

কি থেকে কি হয়ে গেলো রাইশা এখনো বুঝতে পারছে না।কয়েক সেকেন্ড সে ওইভাবে দাঁড়িয়ে রইলো,পরে সে যা করলো তা আরিয়ান কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি।সে কোন দিন ভাবতেই পারেনি রাইশা তার সাথে এমনটা করবে,,,,,,,,,,
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৫

কি থেকে কি হলো রাইশা এখনো বুঝতে পারছে না।কয়েক সেকেন্ড সে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো৷
পরে সে যা করলো তা আরিয়ান কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি।সে কোনদিন ভাবতেই পারেনি রাইশা তার সাথে এমনটা করবে।

সে আরিয়ানের গালে চর মেরে রাগে কর্কশ কন্ঠে বলে,” তোর সাহস তো কম না, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস্।আমাকে ভুলেও তোর ঐ টিপিকাল ওয়াইফ অদ্রিতার মতো ভাববি না।ভুলেও এটা ভাবতে যাবি না যে তুই যা বলবি আমি তাই মেনে নিবো।আজকের পর থেকে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করবি,গট ইট।”

আরিয়ান রাগে ভ্রু কুঁচকে বলে,”তুমি আমার সাহসের কি দেখেছো?সাহস তো তোমার বেশি হয়ে গেছে নইলে তো এই মাঝ রাতে পরপুরুষের কাঁধে হাত রেখে ডিংক করে বাড়িতে আসতে না।আর আমাকে চর মেরেছো কোন সাহসে? আজ প্রথমবার তাই কিছু বললাম না এরপর আর কোনদিন যদি এমন করেছো তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।এখন রুমে যাও তোমাকে কিছু বলা এখন বৃথা, কাল সকালে তোমার সাথে কথা বলবো।”পরে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে,”And hey you, just get lost from here.”

লোকটি আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”Who the hell are you to telling me this, demit.”

আরিয়ান কর্কশ স্বরে বলে,” I am her husband and now you just leave from here.”

লোকটি রাইশার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে,”Baby you tell him something. you know that i love you so much.”

রাইশা রাগে চিল্লিয়ে লোকটিকে বলে,”Just go from here”

Baby,,,,,,,লোকটি আরও কিছু বলতে যাবে তার আগে রাইশা আবারও বলে, “I said just go.”

লোকটি কিছু না বলে রেগে সেখান থেকে চলে যায়।লোকটি চলে যেতেই রাইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলার তোমার কোন অধিকার নেই।আর নেক্সট টাইম আমার গায়ে হাত তোলার আগে হাজারবার ভাববে।ভুলে যেও না এখন তুমি আমার বাড়িতে আসো। আমি এখন তোমার সাথে যা খুশি করতে পারি শয়তানি হাসি দিয়ে।”

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,”কিসের পারসোনাল লাইফ? আমি তোমার স্বামী আর নিজের স্বামীর সামনে পরপুরুষের কাঁধে হাত রেখে আসতে তোমার লজ্জা করলো না।আজ থেকে রাতে তোমার পার্টি করা, বাহিরে ঘুরাঘুরি করা বন্ধ তোমার।”

রাইশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, “তুমি আমার স্বামী।
তোমার কোন যোগ্যতা আছে নাকি আমার মতো কারো স্বামী হওয়ার। নিজেকে দেখো কোথায় আমি আর তুমি কোথায়।তুমি তো আমার চাকর হওয়ারও যোগ্যতা রাখো না আবার এসেছো আমার স্বামী হতে,মাই ফুট।”

রাইশার কথা শুনে আরিয়ান আবারও রাইশার গালে চর দেওয়ার জন্য হাত উঠায় কিন্তু রাইশা সাথে সাথে হাত ধরে ফেলে বলে,” একদম আমার গায়ে হাত তুলতে আসবে না।আগেই বলেছি আমাকে অদ্রিতা ভাবার ভুল করবে না।এখন অনেক ভালো আছো পরে কিন্তু তাও থাকতে পারবে না।আর হে তুমি আমার স্বামী এই ভুল ধারণাটা নিজের মন থেকে মুছে ফেল।এই রাইশার স্বামী হওয়ার মতো কোন যোগ্যতাই তোমার নেই।আমাদের বিয়েটা নকল ছিলো।”

আরিয়ান বিস্মিত হয়ে বলে,” মানে কি বলছো এইসব?”

রাইশা কিছু না বলে রুমে চলে যায় কিছুক্ষন পরে রুম থেকে বের হয়ে কিছু কাগজ আরিয়ানের মুখে ছোড়ে মেরে বলে,”এই কাগজগুলো ভালো করে দেখো।এগুলো আসল রেজিস্টি পেপার না, এগুলো নকল।তবে তো আমাদের বিয়েটাও নকলই হয়,তাই না?তুমি এত শিক্ষিত তবুও এটা ধরতে পারলে না পেপার গুলো আসল ছিলো না,নকল ছিলো?How fool you are!বলে তাচ্ছিল্য হাসে।”

আরিয়ান রাগে কর্কশ স্বরে বলে,”তুমি আমার সাথে এমনটা কেন করলে?আমি তো শুধু তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম, তার প্রতিদান তুমি আমাকে এভাবে দিবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি কালই এখান থেকে চলে যাবো। মা-বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো। অদ্রিতার পায়ে পরে থাকবো ও নিশ্চয়ই আমাকে মাফ করে দিবে।”

রাইশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,” তোমার পার্সপোর্ট,ভিসা সব আমার কাছে। তুমি আমার অনুমতি ছাড়া এই বাড়ি থেকেও বের হতে পারবে না,সেখানে দেশ থেকে চলে যাওয়ার কথা তো কল্পনাতেও এনো না।আর আমি এমন কেন করছি,তোমার মতো মানুষ এমনটারই যোগ্য। আর তুমি আমাকে ভালোবাসো কথাটা শুনে হাসি পেলো।তুমি আমাকে নয় আমার রুপকে ভালোবেসেছো তাই তো আমার রুপের মোহে পরে এইসব করেছো।তোমার মতো মানুষকে এভাবেই কন্ট্রোল করতে হয়।এখন হয়তো ভাবছো পুলিশের কাছে গিয়ে বলবে আমি তোমার পার্সপোর্ট, ভিসা সব ছিনিয়ে নিয়ে তোমাকে এখানে আটকে রেখেছি।ভুলেও এটা করতে যাবে না তবে এর পরিণতি আরও খারাপ হবে।”

আরিয়ান সামান্য হেসে বলে,” এর থেকে খারাপ আর কি হতে পারে?”

রাইশা জোড়ে হেসে বলে,” এটা তো কিছুই না, এর থেকে আরও অনেক খারাপ কিছু তোমার সাথে হবে যদি আমি এটা বলি তুমি আমাকে রেপ করেছো। তবে ভেবে দেখো পুলিশ তোমার কি অবস্থা করবে।যদি চাও এইসব কিছু তোমার সাথে না হউক তবে আজ থেকে আমি যেভাবে বলবো সেভাবে চলবে।আমার চাকর হয়ে এই বাড়িতে থাকবে।আমার কখন কি প্রয়োজন বলার আগেই তা যেন সামনে পাই।”আর কিছু না বলে রাইশা রুমের ভিতরে চলে গেল,,,,,

রাইশা চলে যেতেই আরিয়ান ফ্লোরে বসে পরে। এই প্রথম তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।এখন বুঝতে পেরেছে সে কত বড় ভুল করেছে। সে এতদিন মিথ্যা রুপের মোহে পরে হিরা ছেড়ে কাঁচের পিছনে ছোঁটেছে।নিজের হাতেই ধ্বংস করেছে নিজের সাজানো সংসার।জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছে রাইশার মতো কারো জন্য অদ্রিতাকে ছেড়ে দিয়ে। আসলে আগে সে ভালোবাসার মর্ম বুঝেনি।ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা শত কষ্ট, শত সাধনা করেও পাওয়া যায় না আবার অনেকে বিনা কষ্টে সেই ভালোবাসা পেয়েও তার মর্ম বুঝে না। অদ্রিতার উপস্থিতি তার কাছে অসহ্য লাগলেও সে অদ্রিতাকে ভালোবেসে ফেলে ছিলো কিন্তু আগে সে তা বুঝতে পারেনি।রাইশা মোহে পরে সে সবকিছু ভুলে গেছিলো।এখন সে অদ্রিতার অনুপস্থিতিতে হারে হারে টের পাচ্ছে সে অদ্রিতাকে ভালোবাসে।যে মেয়েটা তার সামান্য একটু অসুবিধা হলে, সে সামান্য একটু অসুস্থ হলে সারারাত তার পাশে বসে তার সেবা করতো। তার করা এত অবহেলা, অপমান, অত্যাচার করার পরেও বিন্দু পরিমাণ অভিযোগ করেনি সব সময় শুধু তাকে ভালোবেসে গেছে,তার কথা ভেবেছে সে কি করে তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারে।কিন্তু আগে সেটা বুঝতে পারেনি।আমি তার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করেছি, তার গায়ে হাত তুলেছি এখন আমার নিজেকে মানুষ ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। I am so inferior. I just hate myself,,,,,, মা-বাবা ঠিকই বলেছিল রাইশা আমার যোগ্য না। তার সাথে আমি জীবনে কখনো পূর্ণতা পাবো না।এখন বুঝতে পারছি তাদের কথা সম্পূর্ণ ঠিক ছিল। এখন বুঝতে পারছি নিঃসঙ্গতা কতটা বিষাদময় হয়।কটতা বিষাদময় হয় জীবনে #অপূর্ণতা নামক শব্দটি।এইগুলো ভেবে এখন তার অনুশোচনায় মরে যেতে মন চাইছে। সে যে শেষবারের মতো অদ্রিতার কাছে ক্ষমা চাইবে তারও কোন সুযোগ নেই,,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,ইন বাংলাদেশ,,,,

এই এক সপ্তাহে অদ্রিতা নিজেকে অনেকটা সামলিয়ে নিয়েছে। এখন সে আর আগের কথা ভেবে চোখের পানি ফেলে না। নিজেকে অনেক শক্ত করে ফেলেছে সে।সব কিছু ভুলে সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য যা করার প্রয়োজন এখন সে তাই করছে। ডিজাইনের উপরে এখন সে ৬ মাসের কোর্স করছে।নিজের জীবনকে অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছে আর এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে শুধু নিলয়ের জন্য। নিলয় সবসময় অদ্রিতার পাশে ছিল। তাকে এইসব কিছু থেকে বের করে আনার জন্য তার যা যা করা প্রয়োজন তার সবকিছুই সে করেছে।এখন প্রায় ৭ টা বাজে, কলিং বেলের শব্দ শুনে অদ্রিতার মা দরজা খুলে দেন।নিলয়কে দেখে তিনি বিন্দু পরিমাণ অবাক হলেন না।এই কয়েক দিনে এটা রুটিন হয়ে গেছে দিনে কাজের জন্য নিলয় যদি নাও আসতে পারে তবুও রাতে হলেও একবার এসে অদ্রিতার খোঁজ নিয়ে যাবে।নিলয় ভিতরে ঢুকলে তার মা দরজা বন্ধ করে দেন পরে নিলয়কে ডেকে বলেন,”তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই কিন্তু কথা গুলো তোমাকে কি করে বলবো তা বুঝতে পারছি না?”

নিলয় প্রথমে একটু অবাক হয় পরে বলে,”আপনি আমার মায়ের মতোন।তাই আপনার যা বলার তা নিরদ্বিধায় বলতে পারেন।আমার থেকে অনুমতি নেওয়ার বা এত সংকোচ করার কোন দরকার
নাই।”
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৬

নিলয় কিছুটা অবাক হয়ে বলে,”আপনি আমার মায়ের মতোন,তাই আপনার যা বলার তা নিরদ্বিধায় বলতে পারেন।আমার থেকে অনুমতি নেওয়ার বা এত সংকোচ করার কোন দরকার নেই।”

অদ্রিতার মা ইসস্তত করে বলে,”জানি না এই কথাটা তোমাকে বলা আমার ঠিক হবে কি না। তুমি হয়তো আমাকে স্বার্থপর ভাববে। যদি স্বার্থপর ভাবো তবুও আমি কিছু মনে করবো না,নিজের মেয়ের ভালোর জন্য না হয় একটু স্বার্থপর হবো। আজকাল তোমার মতো ছেলে পাওয়া যায় না যারা এভাবে অন্যের বিপদের হেল্প করে, তাদের পাশে থাকে। তুমি আমার মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়েছো বলেই আমার মেয়েটা এত দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে নিতে পেরেছে।তার জন্য আমরা তোমার কাছে ঋণী। আমরা তোমার মতো ধনী নই।আমরা মধ্যবিত্ত, আমাদের সমাজ নিয়ে চলতে হয়। আমাদের টাকা না থাকতে পারে আমাদের কাছে মানসম্মান আছে।আমি জানি তুমি অদ্রিতার ভালো চাও তাই তার খোঁজ খবর নিতে ছোঁটে আসো।কিন্তু এভাবে যখন তখন আমাদের বাড়িতে তোমার আসা লোকে ভালো চোখে দেখবে না।লোকে অদ্রিতাকে খারাপ ভাববে।এই কয়দিনে তোমার আমাদের বাড়িতে আসা নিয়েই লোকে নানা বাজে কথা বলা শুরু করে দিছে।অনেকে তো তার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা পর্যন্ত বলেছে।তাই তুমি যদি সারাজীবনের জন্য আমার মেয়েটা দায়িত্ব নিতে তবে তোমার এবাড়িতে আসা নিয়ে আর কোন কথা হতো না।আমার কথাটা হয়তো অনেকটা স্বার্থপরদের কথার মতো শুনাচ্ছে কিন্তু আমি বাধ্য হয়ে তোমাকে এই কথাটা বলেছি।আমি যে নিরুপাই। ”

নিলয় ওনার কথা সম্পূর্ণ বুঝতে না পেরে কিছুটা বিস্মিত হয়। পরে শান্ত স্বরে বলে,”আমি সারাজীবনের জন্য অদ্রিতার পাশে থাকবো একজন ভালো বন্ধু হয়ে যেমনটা আজ আছি।কিন্তু আপনার বলা কথাটির মানে বুঝছি না।আর লোকের কথা ভাবার কোন দরকার নাই।মানুষের কাজই হলো অন্যের সমালোচনা করা আর যারা এমন করে আমাদের উচিত সাথে সাথেই তাদের কথার প্রতিবাদ করা তবে দ্বিতীয়বার তারা সাহস পাবে না কিছু বলার। ”

অদ্রিতার মা শান্ত স্বরে বলে,” তুমি যা বলছো তা হয়তো ঠিক।কিন্তু প্রতিবাদ করে কয়জনের মুখই বা বন্ধ করা যাবে।আমি কোন ভনিতা না করে সহজ ভাষায় বলছি, তুমি কি অদ্রিতাকে বিয়ে করতে পারবে,পারবে সারা জীবনের জন্য তার ভালো থাকার দায়িত্ব নিতে?তুমি অদ্রিতার সম্পর্কে সব কিছু জানো। আমি তোমাকে জোর করছি না। ”

নিলয় সহজ হয়ে বলে,” অদ্রিতা কি রাজি হবে আমাকে বিয়ে করতে?এতসব কিছু হওয়ার পরে সে কখনো আবার বিয়ে করতে চাইবে না।বিয়ে মতো পবিত্র সম্পর্ক থেকে হয়তো তার বিশ্বাসটাই উঠে গেছে তাই সে যদি রাজি থাকে তবে আমার কোন আপত্তি নেই।আমি রাজি এই বিয়েটে।”

অদ্রিতার মা গম্ভীর স্বরে বলে,”যদি নিজের মন থেকে তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারো তবেই হ্যাঁ বলো।আমি চাই না একবার মেয়েটা যে কষ্ট পেয়েছে আবার সেই একই কষ্ট পাক।তাই হ্যাঁ বলার আগে আর একবার ভেবে দেখো।”

নিলয় ভরসা দিয়ে বলে,” আমি অনেক ভেবেই হ্যাঁ বলেছি।আমি আগে থেকেই অদ্রিতাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি তার ভিতরের নিষ্পাপ মনকে। আমি কখনো এইকথা আপনাকে বলতাম না কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হলাম, নাহলে হয়তো আপনার মনের সংসয় কাটতো না।তবুও অদ্রিতার মতামতটা এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সে যদি রাজি থাকে তবেই এই বিয়েটা হবে। না হলে এখন যে-ভাবে আছি সেভাবেই আমি তার পাশে থাকবো।”

অদ্রিতার মা খুশি হয়ে বলে,”হুমম,তাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।”

নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে,”আপনি তাকে জোর করবেন না।”

অদ্রিতার মা ছোট করে বলে,”হুমম,তুমি এখানে বসো আমি আসছি।”আর কিছু না বলে তিনি অদ্রিতার রুমের দিকে যায়,গিয়ে দরজার নক করতেই অদ্রিতা দরজা খুলে দিয়ে বলে মা তুমি,ভিতরে আসো।ওনী ভিতরে ঢুকেই বলে,”তোকে আমার কিছু বলার আছে।”

অদ্রিতা স্বাভাবিক স্বরে বলে,”হুমম,বলো।”

অদ্রিতার মা কিছুটা ইসস্তত করে বলে,” আমি জানি এখন আমি যা বলবো তার জন্য তুই আমায় ভুল বুঝবি কিন্তু বিশ্বাস কর,আমি যা বলবো তোর ভালোর জন্যই বলবো।”

অদ্রিতা তার মার দিকে ভরসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,” আমি জানি তুমি আমার ভালো চাও আর কোন মাই তার সন্তানের খারাপ চাইতে পারে না।এখন বলো।”

অদ্রিতার মা কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে,”আগে কথা দে আমি যা বলবো তুই রাখবি,তবে বলবো?নাহলে থাক বলবো না।”আমি জানি এখন তুই আমায় ভুল বুঝবি কিন্তু একদিন ঠিকি বুঝবি আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছি।

অদ্রিতা তার মার হাত ধরে ভরসা দিয়ে বলে,” আচ্ছা রাখবো,আমি তো তোমাদের সব কথা শুনেছি এটাও শুনবো।”

অদ্রিতার মা ইসস্তত করে বলে,”নিলয় অনেক ভালো ছেলে। তোকে অনেক ভালোবাসে। তুই ওকে বিয়ে করে নে,বল তুই আমার এই কথাটা রাখবি?”

অদ্রিতা গম্ভীর স্বরে বলে,” তা হয় না।আমার পক্ষে এখন কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।কারো জীবনের সাথে আমি আর আমার নিজের জীবন জড়াতে চাই না।আমাকে মাফ করো আমি বিয়েটা করতে পারবো না।”

অদ্রিতার মা কন্ঠে দূঢ়তা এনে বলে,”তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস্ আমি যা বলবো তুই তা করবি।এখন যদি কথার খেলাপ করোস্ তবে আমার এই মুখ আর কখনো দেখতে পারবি না।এখন ভেবে দেখ কি করবি?”

অদ্রিতা কন্ঠে গম্ভীরর্যতা রেখেই বলে,” মা তুমি এ কি বলছো?”

অদ্রিতার মা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “আমি অন্য কিছু শুনতে চাই না,এখন বল রাজি কি না?”

অদ্রিতা রাগে গম্ভীর স্বরে বলে,” আমার সিদ্ধান্তের সত্যিই কি কোন মূল্য আছে এখানে?তুমি যা ভালো মনে করবে তাই করো।”

অদ্রিতার মা করুন দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”এমন করে কেন বলছিস্?”

অদ্রিতা কন্ঠে গম্ভীরর্যতা রেখেই বলে,”আমি আর কিছু বলতে চাই না আমাকে একা ছেড়ে দাও,প্লিজ।”

আমি জানি আমার এই সিদ্ধান্তে তুই এখন কষ্ট পাচ্ছিস, আমাকে ভুল বুঝছিস্। যে ছেলে তোর জীবনের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে সারা জীবন এভাবে তোর পাশে থাকবে তা আমার বিশ্বাস। নিলয়ের সাথে তুই অনেক সুখী হবি, তোর সুখের জন্য এইটুকু তো আমি করতেই পারি।আমাকে ক্ষমা করে দিস্ মনে মনে এই কথাগুলো বলে তিনি একবার করুণ দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে চলে যান।

কিছুদিন পরে,,,,,,,,,,

নিজের অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও বউ সেজে বাসরঘরে বসে আছি আমি।কিন্তু আমার মনে তা নিয়ে কোন অনুভূতি নেই। আমার সব অনুভূতি মরে গেছে।বিয়েটা খুব সাদাসিধা ভাবেই হয়েছে। কিছু আত্মীয়-স্বজন আর পাড়াপ্রতিবেশিদের বলা হয়েছিল।বিয়েটা যারা এসেছে বেশির ভাগই আমাকে কথা শুনিয়েছে,তাদের বলা কথা গুলো এখনো আমার কানে বাজছে,,,,,,

,,,,,,,,, কিছুক্ষন আগে,,,,,,

বউ সেজে রুমে বসে আছি,বর এসেছে শুনে আমাকে একা রেখেই সবাই বর দেখতে চলে গেছে,তখনি কতগুলো মহিলা এসে বলা শুরু করে।

,,,এমনেতেই যেই কালো তার উপর ডিভোর্সী এমন মেয়ে কি করে এমন ধনী আর সুন্দর বর পেলো তাই ভাবছি।সত্যিই মেয়েটার ভাগ্য অনেক ভালো বলতে হয়।

,,,, অন্য একজন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,”হুমম,ভাগ্য ভালো না হলে কি এমন বর পায়।গিয়ে দেখো কোন ভাবে হয়তো ছেলেটাকে ফাঁসিয়েছে।বাধ্য করেছে বিয়ে করতে নয়তো যে রুপ,এরুপে তো এমন ছেলের চাকর হওয়ার ও যোগ্যতা রাখে না।”

,,,,,হুমম,একদম ঠিক বলছেন। কালো হলে কি হবে বড়লোক ছেলেদের কি করে বস হয় তা ভালো করেই জানে,,,,,

,,,,শুনেছি আগের স্বামীও নাকি অনেক সুন্দর আর ধনী ছিল,কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারেনি। ডিভোর্স হয়ে গেছে,,,,

,,,,,পারবে কি করে এইসব মেয়েদের কাজই তো এটা বড়লোক ছেলে দেখে ফাঁসানো।এদের চরিত্র আছে নাকি?

ওনাদের সবার কথাগুলো আমার বুকে তীরের মতো বিঁধছে।এইজন্যই আমি কাউকে বিয়ে করতে চাইনি।আগে অনেক বাজে কথা শুনেছি এখন ছলনাময়ী আর চরিত্রহীনা উপাধিও পেয়ে গেছি।আমি আর শুনতে পারছি না।

আপনাদের এখানে ইনবাইট করা হয়েছে আমার আপুর জন্য দোয়া করার জন্য। সে ভবিষ্যতে যেন ভালো থাকে এই দোয়া করবেন আর তা যদি না পারেন তবে চুপচাপ খেয়ে চলে যাবেন। কোন বাজে কথা বলবেন না।নিজেদের মতো সবাইকে মনে করবেন না।কি মনে করেন আপনাদের খবর জানি না,আপনার মেয়ে কয়দিন আগে একজন ছেলে নিয়ে পালিয়েছে।মহিলাটির মাথা নিচু হয়ে গেছে।আর হে আপনি, আমার আপুর অনেক সুন্দর একটা মন আছে আর সেই মনকে ভালোবেসেই নিলয় চৌধুরী তাকে বিয়ে করেছে।কাউকে ফাঁসানোর আমার আপুর কোন প্রয়োজন নেই তা তো আপনার সুন্দরী বউমাই ভালো পারে নয়তো একটা ছেলে রেখে কি করে একটা মা নিজের ছেলের টিচারের সাথে পালাতে পারে।আমার তো ভাবতেই লজ্জা লাগছে।মাথা নিচু করে মহিলাটি চলে গেলো।কি বললে আমার আপু ডিভোর্সি, হ্যাঁ ডিভোর্সি কিন্তু চরিত্রহীনা নয় আপনাদের সুন্দরী মেয়ে আর বউমাদের মতো। এখন এখান থেকে চলে যান কিছু খেয়ে বিদায় হন।আপুর রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছি, ওনাদের কথা গুলো শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না।রাগে আমার সারা শরীর রিরি করছে এখনো। কথাগুলোর প্রতিবাদ বলতে পেরেছি তাই একটু শান্তি পাচ্ছি।

অদ্রিতা ধমক দিয়ে বলে,”রোহিত চুপ কর।গুরুজনদের সাথে এভাবে কথা বলতে হয় না।”

,,,,ছোট হয়ে বড়দের মুখে মুখে কথা বলছে।এখনো ভদ্রতা শিখেনি।মা- বাবার আদরে বেয়াদব তৈরি হয়েছে।পাশ থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো।

রোহিত গম্ভীর স্বরে বলে,” আপনারা সবাই মিলে যখন একটা মেয়েকে অপমান করছেন, বাজে কথা বলছেন তা কিছু না।আমি প্রতিবাদ করছি বলে আমি বেয়াদব হয়ে গেলাম।উচিত কথা বললে যদি বেয়াদব হতে হয় তবে তাতে আমি রাজি আছি,এখন আপনারা আসতে পারেন।”

ওনারা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেলেন,,,,

কি দরকার ছিলো এইসব বলার।আমি এইসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি,,,

রোহিত অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,” দরকার ছিলো আপু।”

দরজা খোলার আওয়াজে ভাবনা থেকে বের হলাম। নিলয় ভাইয়াকে আসতে দেখেই আমার অস্বস্তি হচ্ছে। মনে মনে ওনার উপরে অনেক রাগ হচ্ছে। ওনী এসেই আমার সামনে বসে,ধীরে ধীরে আমার হাত ধরলেন। আমি ওনার হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলাম,”আমি এই বিয়েটা মানি না।আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।আমি কখনো মন থেকে আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।
আমার থেকে আপনি কিছু আশা করবেন না।আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো পরে আপনি আপনার মতোন করে নিজের জীবন কাঁটাতে পারবেন।
আপনার যোগ্য কাউকে বিয়ে করে সুখে থাকবেন।
আমি আর কিছু বলতে চাই না।”

অদ্রিতার কথাগুলো শুনে বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব হতে লাগলো।অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।অদ্রিতা আমাকে এই কথাগুলো বলবে তা আমি ভাবতেই পারিনি,,,,,
.
..

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here