অপূর্ণতা পর্ব ৪৯+৫০+৫১+৫২

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪৯_৫০

রোহিতের চিৎকারের শব্দ শুনে রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে আসলাম। এসেই দেখি মার হাত থেকে কিসের একটা পেপার নিচে পরে গেছে।আমি এসেই নিচ থেকে পেপারটা উঠিয়ে নিলাম।পেপার খোলেই দেখি এটা ডিভোর্স পেপার। আমি ভেবেছিলাম ওনী হয়তো ওনার ভুল বুঝতে পারবেন।আমাকে আবার ফিরিয়ে নিতে আসবেন। কিন্তু ওনী ডিভোর্স পেপারে সই করে পাঠিয়ে দিয়েছেন।ডিভোর্স পেপারে ওনার সই দেখেই আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। এত তাড়া ওনার ওই মেয়েকে বিয়ে করার তবে আমি আর কেন ওনার পথের কাঁটা হয়ে থাকবো?ওনী যা চান তাই হবে।আমি ডিভোর্স দিয়ে দিবো ওনাকে।আমি আর কিছু না ভেবে উকিলের কাছ থেকে কলম নিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলাম।উনী তো মুক্তি চেয়েছেন আমার কাছ থেকে আজ ওনার এই ইচ্ছাও পূরণ করে দিলাম। আর কোনদিন ওনাকে আমার এই মুখ দেখতে হবে না।ওনী এখন মুক্ত এই বাধ্য হয়ে করা বিয়েটা থেকে আর আমিও মুক্ত। ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে আমার হাত একবারের জন্যও কাপলো না।কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।সাইন করে আমি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে রুমে চলে আসলাম।এখন আমার একা থাকা অনেক প্রয়োজন।আমার নিজেকে সমলানোর জন্য সময়ের প্রয়োজন।রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে সব কিছু ভাবতে লাগলাম।কি থেকে কি হয়ে গেলো আমি এখনো বুঝছি না। সব কেমন অগোছালো মনে হচ্ছে এখন।নিজেকে অনেক একা একা লাগছে নিজের কাছে।জীবনের রং এত তাড়াতাড়ি কি করে বদলে গেলো তা ভাবছি, কাল পর্যন্ত আমি একজনের স্ত্রী ছিলাম আর আজ আমার পরিচয় আমি একজন ডিভোর্সী। ভাবতেই আমার খারাপ লাগছে।কোন ভাবে আমি কান্না থামাতে পারছে না।পারছি না নিয়তি ভেবে এইসব কিছু মেনে নিতে,,,,,

উকিল ডিভোর্স পেপার নিয়ে চলে গেল আর এক সপ্তাহ পরে কোর্টে উপস্থিত থাকতে বললেন।
অদ্রিতার মা কান্না করতে করতে দৌড়ে অদ্রিতার পিছনে যেতে নিলে তার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”ওকে এখন একা থাকতে দাও।আমার মেয়ে অনেক সাহসী ও কখনো নিজের কোন ক্ষতি করবে না ওর এখন নিজের জন্য সময়ের প্রয়োজন,যা হয়েছে তার থেকে বেরিয়ে আসতে এখন তার আমাদের সাহায্য প্রয়োজন।একটু পরে তুমি ওর কাছে যাবে,ওকে উৎসাহ দিবে নিজের জীবনকে আবার সুন্দর করে সাজাতে।আমাদের জন্যই তো মেয়েটা এতদিন এত কষ্ট পেয়েছে, এখন থেকে সে যেন আর কোন কষ্ট না পায় তার দায়িত্ব আমাদের।একজন মাই পারে তার মেয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে।তোমাকেই তাকে সাহস দিতে হবে।সেই তুমিই যদি এভাবে ভেঙে পরো তবে কিভাবে হবে?আগে তুমি নিজেকে সামলাও,কান্না থামাও।পরে অদ্রিতার কাছে গিয়ে তাকে বুঝাও।”অদ্রিতার মা আর কিছু বলে না শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি করে।

অন্যদিকে আজ আরিয়ান অফিস থেকে তাড়াতাড়িই বাড়িতে চলে আসে।কলিং বেল বাজাতেই তার মা দরজা খোলে দেয়।ভিতরে ঢুকতেই তার বাবা ঠাস করে তার গালে চর মারে।হাঠাৎই এমন হওয়ার আরিয়ান তাল সামলাতে না পেরে কিছুটা পিছিয়ে যায় সে অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”কি হয়েছে বাবা? তুমি আমাকে মারলে কেন?”সে তার বাবার দিকে তাকাতেই সাহস পাচ্ছে না।এমনেই তার বাবা অনেক রাগী। তার উপরে আজ মনে হচ্ছে তার বাবা প্রচন্ড রেগে আছে।রাগে তার বাবার চোখ- মুখ পুরো লাল হয়ে আছে।কিন্তু হঠাৎ করে এতটা রেগে থাকার কারণ সে বুঝতে পারছে না,সকালে তো সব ঠিকি ছিল তবে কি এমন হলো যার জন্য এতটা রেগে আছে।

আরিয়ানের বাবা রাগে কর্কশ স্বরে বলে,”তুই জানোস্ না কি হয়েছে?তুই এতটা নিচ,জগন্য হবি তা যদি আগে বুঝতে পারতাম তবে জন্মের সময়ই তোকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।”

আরিয়ান বিষন্ন স্বরে বলে,” তুমি এভাবে কেন বলছো বাবা। আজ পর্যন্ত আমি এমন কোন কাজ করিনি যার জন্য তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারো।আমি তো তোমাদের সব কথা শুনেছি।”

আরিয়ানের কথা শুনে তার মা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,তুই আমাদের সব কথা শুনিস!এই তোর আমাদের সব কথা শুনার নমুনা। তোর থেকে তো জানোয়ারও অনেক ভালো হয়।কোন পশুও যদি আমাদের সাথে কয়েকদিন থাকে তবে তার প্রতি আমাদের মায়া জন্ম নেয় আর একটা মানুষ তোর সাথে কয়েক মাস থাকলো তার প্রতি তোর বিন্দু পরিমাণ মায়া জন্মালো না। তুই কি করে পারলি একটা নির্দোষ মেয়েকে এতটা কষ্ট দিতে।আমার তো ভাবতেই লজ্জা লাগছে তুই আমার সন্তান।

আরিয়ান তার মার দিকে অশ্রুভরা চোখে তাকিয়ে বলে,তুমি আমাকে এভাবে কথা বলছো! কি করেছি আমি তা তো বলবে? তোমাদের কথার মানে আমি বুঝছি না।

তার বাবা রাগে চিল্লিয়ে বলে,আমাদের মান- সম্মান সব ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে এখন বলছিস আমি কি করেছি?কেন তুই জানোস্ না তুই কি করেছিস্?

আরিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে বলে আমি জানি না আমি কি করছি,তোমরা কোন বিষয়ের কথা বলছো?তোমাদের কি হয়েছে? আমি কি এমন করেছি তার জন্যে তোমরা এতটা রেগে আছো।প্লিজ আমাকে বলো,আমারও তো জানার অধিকার আছে।

আরিয়ানের মা কান্না করতে করতে বলে তোর জন্য অদ্রিতা এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। দিনের পর দিন তুই মেয়েটা উপর অত্যাচার করছিস্ আর মেয়েটা মুখ বুজে সব সহ্য করেছে।তার গায়ে হাত তোলার আগে একবারের জন্যও তোর হাত কাঁপলো না।আমি তো কখনো তোকে এমন শিক্ষা দেয়নি। এতটা কাপুরষ তুই কিভাবে হলি,মেয়েদেরকে সম্মান করতে পারিস্ না।

আরিয়ান কিছু বলছে না।সে চুপ করে আছে। সত্যিই তো সে কাজটা ঠিক করেনি কিন্তু এছাড়া তো তার হাতে অন্য কোন উপায়ও ছিলো না।সে অদ্রিতাকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারবে না। তার থেকে তো এটাই ভালো সে অদ্রিতাকে ছেড়ে দিছে। তাছাড়া রাইশাকে দেখে এখন তার অদ্রিতাকে একদমই সহ্য হচ্ছিলো না।সে জানে না রাইশার প্রতি তার যা আছে তা মোহ নাকি ভালোবাসা কিন্তু সে একটা কথাই জানে রাইশাকে তার চাই ই চাই। তার জন্য অদ্রিতাকে তার লাইফ থেকে দূরে চলে যেতেই হবে।অদ্রিতা তার লাইফ থেকে না গেলে সে রাইশাকে বিয়ে করতে পারবে না।তার থেকে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।আপদ তো বিদেয় হলো এই অনেক।এখন আমি নিজের মতোন করে থাকতে পারবো,,,,,

আরিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে তার মা চিল্লিয়েই আবার বললো,,,,,,,
.
..

চলবে,,,,,,

( ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত,,,,,, নেক্সট পার্ট বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো,,,,,,)
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫০

আরিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে তার মা আবার একটু চিল্লিয়েই বলে,,,,,,,,,
আমার তো এখন নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে কি করে তোর মতো একটা জানোয়ারকে পেটে ধরলাম।মেয়েটা একটু কালো বলে তুই তাকে এভাবে অপমান, অবহেলা আর অত্যাচার করতে পারলি।তোর কি বিবেকে একটুও বাঁধলো না।ওর মতো মেয়ে হয় না। এই কয়েক মাসে মেয়েটা আমাদের বুঝতেই দেয়নি ও এত কিছু সহ্য করেছে।হাসি মুখে তোর দেওয়া সকল কষ্ট ও অপমান সহ্য করেও আমাদের যত্ন নিয়েছে।নিজের জন্য না ভেবে আমাদের জন্য ভেবেছে।তোর যখন এক্সসিডেন্ট হলো মেয়েটা দিন-রাত এক করে তোর সেবা-যত্ন করে তোকে সুস্থ করেছে।এই সব কিছু কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি। তোকেও অদ্রিতা অনেক ভালোবাসে।আজ যখন ওর বাবা তোর নামে পুলিশ কমপ্লেন করতে বললো তখন মেয়েটা না করে দিয়েছে শুধু আমাদের আর তোর কথা ভেবে।আমাদের অপমানিত হতে হবে তাই।কতটা ভাগ্যবান হলে এমন একটা বউ পাওয়া যায় আর তুই কিনা মেয়েটার নিঃস্বার্থ ভালোবাসাটাও বুঝছিস্ না।এখনো সময় আছে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আন।

আরিয়ান তার মার দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে বলে,যে চলে গেছে তাকে নিয়ে আর ভেবো না।যে চলে গেছে তাকে যেতে দাও,তাকে ফিরিয়ে আনা আমার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব নয়।তাছাড়া আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে উকিলের মাধ্যমে অদ্রিতার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি আর অদ্রিতাও সাইন করে দিয়েছে।উকিল ফোন করে বলেছে আর ডিভোর্স পেপার কোর্টে সাবমিট করা হয়ে গেছে আর এক সপ্তাহ পরে আমি পুরোপুরি মুক্ত হবো এই বিয়ে নামক শিকল থেকে।তোমাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। অদ্রিতার থেকে অনেক ভালো আর সুন্দরী মেয়েকে আমি বিয়ে করবো।আমি রাইশাকে ভালোবাসি।অদ্রিতার সাথে ডিভোর্সটা হয়ে গেলে আমি রাইশাকে বিয়ে করে নিবো।রাইশা নিউইয়র্কে স্যাটেল সে আমাকে নিউইয়র্কে নিয়ে যাবে।আর ওইখানে সবকিছু গুছিয়ে পরে তোমাদেরও সেখানে নিয়ে যাবো।এখন ওই অদ্রিতার কথা বাদ দাও।আমি মাত্র অফিস থেকে আসলাম আগে আমাকে ফ্রেশ হতে দাও,বাকি কথা পরে বলবো।

আরিয়ান রুমে যেতে নিলেই তার বাবা তাকে থামিয়ে বলে,এখন তোর রুমে যাওয়া হবে না।তুই এখন বউমার কাছে যাবি। তার কাছে মাফ চাইবি, তাকে এই বাড়িতে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবি আর তা যদি না করতে পারোস্ তবে তুইও এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে চলে যাবি। মনে করবো আমরা নিঃসন্তান।

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,” কোথাকার কোন একটা মেয়ে আর তার জন্য তুমি আমাকে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতে পারলে। এই কয়েক মাসে ওই মেয়েটা তোমাদের কাছে আমার থেকে বেশি ইমপোর্টেন্ট হয়ে গেলো,কি করে?

আরিয়ানের মা বুঝতে পারে ছেলেকে এখন রাগ দেখিয়ে, বকা- ঝকা কিছু করানো সম্ভব নয়।ছেলে এখন বড় হয়েছে।তাই নিজেকে একটু শান্ত করে একটু ভালো করে বলে,”দেখ আরিয়ান তুই এখন বড় হয়েছিস্, কোনটা ঠিক কোনটা ভুল বঝতে শিখেসি্।তাই বলে তোর কোন ভুল হতে পারে না এমনটা নয়।আর তোর কোন ভুল হলে মা- বাবা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তোকে ঠিক পথে নিয়ে আসার, তোকে তোর ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার।ওই মেয়েকে বিয়ে করা তোর সবচেয়ে বড় ভুল হবে, ওই মেয়েটা তোর যোগ্য নয়।একটা মেয়ে হয়েও যে মেয়ে অন্য একটা মেয়ের সংসার ভাঙতে পারে সে কিছুতেই ভালো মেয়ে হতে পারে না।তোকে বিয়ে করার পিছনেও হয়তো ওই মেয়ের কোন উদ্দেশ্য আছে।আর বিয়েটা কোন ছেলেখেলা না।আজ একটা মেয়েকে বিয়ে করলি আর কাল ভালো লাগলো বলে তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য একজনকে করবি।এটা হয় না।বিয়ে হলো একটা পবিত্র সম্পর্ক।এটার মূল্য দিতে শিখ।তুই তো এমন ছিলি না।সময় থাকতে সব ঠিক করে নে নয়তো তুই সব হারিয়ে ফেলবি।যেই জন্য আজ তুই অদ্রিতাকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করছিস্ একদিন তাই তার কাল হবে।একদিন তুই নিঃস্ব হয়ে যাবি।তুই চাইলেও তখন পূর্ণতা খোঁজে পাবি না। অপূর্ণতা তোকে ঘিরে ধরবে।তখন বুঝবি #অপূর্ণতা কতটা বিষাদময় হয়।”

আরিয়ান শান্ত স্বরে বলে,” মা তুমি যাই বলো না কেন,আমার পক্ষে কিছুতেই আর অদ্রিতার সাথে থাকা সম্ভব নয়। আমি কিছুতেই অদ্রিতাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না। অনেক তোমাদের কথা শুনেছি।এখন তোমাদের কথা শুনে আমি আমার লাইফটাকে হেল করতে পারবো না। আমার লাইফ আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই। আমার ওয়াইফ কে হবে তা আমাকেই ঠিক করতে দাও। আমি নিজেই বুঝে নিতে পারবো সে আমার যোগ্য কি না।তোমাদের আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না।আমি ভালো করে জানি কার সাথে আমি ভালো থাকবো।”

আরিয়ানের বাবা কন্ঠে গম্ভীর্যতা রেখে শান্ত স্বরে বলে,”এই তোর শেষ কথা।”

আরিয়ান নিজের কথায় অনড় থেকে বলে,”হুমম,,,,এটাই আমার শেষ কথা। আমি রাইশাকে বিয়ে করে নিউইয়র্কে চলে যাবো আর এটাই ফাইনাল।তাতে তোমরা রাজি হও আর না হও আমার আর কিছু করার নেই।”

এটাই যদি তোর শেষ কথা হয়ে থাকে তবে আমারও শেষ কথা শুনে রাখ,,,এই মুহূর্তে তুই এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। জীবনে কখনো তোর এই মুখ যাতে আমরা আর না দেখি। তোর মতো জানোয়ারকে আমি কখনোই আমার সন্তান হিসেবে ভাবতে পারবো না।আজ থেকে মনে করবো আমাদের সন্তান মরে গেছে। আজ থেকে তুই আমাদের জন্য মৃত।তোর জীবনে কোন দিন পূর্ণতা আসবে না।অপূর্ণতা তোকে সারাজীবন কুরুে কুরুে খাবে।যেই অপমান,অত্যাচার আর কষ্ট তুই ওই মেয়েটাকে করেছিস্ তার থেকে বেশি কষ্ট তুই পাবি।আমার এই কথা মনে রাখিস।

আরিয়ান অশ্রুভেজা চোখে তাকিয়ে বিষন্ন কন্ঠে বলে,” বাবা তুমি বাইরের একটা মেয়ের জন্য নিজের ছেলেকে এভাবে বলতে পারলে?তোমার একটুও বাঁধলো না।”

আরিয়ানের কথা শুনে তার বাবা রেগে কর্কশ স্বরে বলে,”তোর এই মুখে আমাকে আর বাবা ডাকবি না। আমার ঘৃনা লাগছে তোর মুখে বাবা ডাক শুনে। আর সে কখন থেকে বাইরের মেয়ে বাইরের মেয়ে করছিস্ আজ থেকে অদ্রিতাই আমাদের নিজেদের মেয়ে।এখনি বেরিয়ে যা বলছি।”

আরিয়ানও রেগে বের হয়ে যায় শুধু যাওয়ার আগে একটা কথাই বলে, যদি কোন দিন তোমাদের রাগ কমে তবে আমাকে বলো আমি তেমাদের কাছে চলে আসবো। সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

তার মা কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পরেন।এই কি হলো?তাদের ছেলে এতটা স্বার্থপর কি করে হলো।শেষ পর্যন্ত কিনা নিজের মা- বাবাকে ছেড়ে চলে গেলো অন্য একটা মেয়েে জন্য। তার বাবা তাকে সামলিয়ে বলে,আজ থেকে তুমি ওর জন্য আর কাঁদবে না।যার কাছে আমাদের কোন মূল্য নেই,আমাদের কাছেও তার কোন মূল্য থাকতে পারে না।এই বলে সে উপরে রুমে চলে যায়।কিন্তু মায়ের মন কি আর এই সব কিছু মানে, না মানতে চায়। তিনি কান্না করতে থাকে..

অন্যদিকে নিলয় অফিসের কাজ শেষ করে অদ্রিতার বাড়িতে যায়। দুই-তিন বার কলিং বেল বাজাতেই তার মা দরজা খোলে দেয়।অদ্রিতার মা নিলয় দেখে চিনতে না পরে প্রশ্ন করে,আপনি কে?আপনাকে তো চিনলাম না?

আমি নিলয়,অদ্রিতার ফ্রেন্ড।অদ্রিতা কি বাড়িতে আছে?

অদ্রিতার মা বিষন্ন কন্ঠে বলে,” হুমমম।”

নিলয় ইস্তত করে বলে,”তাকে একটু ডেকে দেওয়া যাবে?আমার কথা একটু বললেই হবে, ও চিনবে আমাকে।”

মেয়েটার মনের অবস্থা ভালো নয়।তুমি কাল আসো।পরে না হয় তার সাথে কথা বলো,আজ সে আমাদের সাথেই কথা বলছে না। তোমার সাথে কথা বলবে বলে মনে হয় না।

অদ্রিতার মার কথা শুনে নিলয়ের অস্থিরতা আর বেড়ে যায়।তবে কি আমার যা মনে হয়েছে তাই কি সত্যি? অদ্রিতা কষ্টে আছে।নিলয় ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে অদ্রিতার কি হয়েছে আন্টি?প্লিজ আমাকে বলেন।অদ্রিতাকে একবার না দেখে আমি কিছুতেই এখন যেতে পারবো না।প্লিজ আন্টি আমাকে একটু সব খোলে বলেন,,,,,,,

নিলয়কে দেখে ওনার অনেক ভালো লাগলো। কেন জানি মনে হলো তাকে সব কিছু বলা যায়।নিজের কাছের লোক ভাবা যায়।কেন জানি ওনার মনে হচ্ছে অদ্রিতাকে এখন এই ছেলেটাই এই অবস্থা থেকে বের করতে পারবে।তিনি বেশি কিছু না ভেবে নিলয়কে সব কিছু খোলে বললেন।সব কিছু শুনার পরে নিলয়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।মনে মনে অদ্রিতার উপর রাগ করলো,সে কেন এত কিছু সহ্য করলো,কেন আগে তাকে কিছু বলে নি?আগে যদি তাকে সব কিছু বলতো তবে সে কিছুতেই আরিয়ানের সাথে তাকে থাকতে দিতো না।নিজের কাছে নিয়ে আসতো।এতটা কষ্ট তাকে সে কখনোই পেতে দিতো না।

অদ্রিতা রুম থেকে মার আর নিলয় ভাইয়ার সব কথা শুনতে পায়।ডয়িং রুমের পাশেই তার রুম তাই শুনতে কোন অসুবিধা হয়নি।নিলয় ভাইয়ার গলার আওয়াজ শুনেই সে তাকে চিনতে পারে।বেশি কিছু চিন্তা না করে আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসে,,,,,,,,
.
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫১

রুমের ভিতর থেকেই মা আর নিলয় ভাইয়ার সব কথা শুনতে পেলাম। ডয়িং রুমের পাশেই আমার রুম তাই শুনতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। নিলয় ভাইয়ার গলার আওয়াজ শুনেই আমি তাকে চিনতে পারলাম।বেশি কিছু না ভেবেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।রুম থেকে বের হতেই আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। চোখে যেন সবকিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম।হঠাৎই আমি মাথা ঘুরে পরে গেলাম।তার পরে কি হলো তার কিছুই আমার মনে নেই,,,,,,,

আন্টির সাথে কথা বলছি এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ শুনে সামনের দিকে তাকালাম।সামনে তাকাতেই আমি অবাক হলাম।অদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে,ওর সাথে কথা বলার জন্য আমি সামনে দিকে যাচ্ছি এমন সময় দেখি সে পরে যাচ্ছে।আমি দৌড়ে তাকে ধরে রুমে নিয়ে যাই।রুমে নিয়ে তাকে বিছানায় শুয়িয়ে ডাক্তারকে কল দেই।অদ্রিতার মুখের দিকে তাকিয়েই আমি অবাক হয়ে যাই।চোখ- মুখ পুরো লাল হয়ে আছে,মাথায় ব্যন্ডেজ করা,চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে।যেইদিন তাকে প্রথম দেখছিলাম আর আজকের এই অদ্রিতার মাঝে কোন মিল নেই,,,,

অতীত,,,,,,,,,

আজ কলেজের নবীন বরণ উৎসব চলছে।সবাই যার যার মতো ইনজয় করছে।সবাই সেজে এসেছে।আমি স্টেজে দাঁড়িয়ে ভাষন দিচ্ছে, যদিও আমার স্টেজে উঠে কথা বলার কোন ইচ্ছে ছিল না তবুও স্যারের অনুরোধে রাজি হলাম।ভাষন শেষ করে স্টেজ থেকে নামতে যাবো এমন সময় হঠাৎই একটি মেয়েরে দিকে চোখ পরে যায়।সে বোরকা পরে এসেছে সাথে কালো হিজাব।আমার মনে হলো সে এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছিল।তাকে প্রথম দেখেই কেন জানি আমার ভালো লেগে যায়। তার মুখটা অনেক মায়াবি, ওর মুখের দিকে তাকালেই হয়তো সব ভুলে থাকা যাবে।আর কিছু না ভেবে আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।সেদিন আর দেখা হয়নি তার সাথে,আসলে আমি নিজেই আর তার সামনে পরতে চাইনি।কিন্তু ধীরে ধীরে কি করে তাকে পছন্দ করে ফেললাম তা আমি নিজেই বুঝতে পারি নি,,,,,
,,,,,,,,

“এই অদ্রিতা, তোর কি হলো উঠ?অদ্রিতার বাবা তাড়াতাড়ি আসো দেখো মেয়ের কি হয়েছে?”কান্না করছে আর এগুলো বলছে অদ্রিতার মা।ওনার কথা শুনে বাড়ির সবাই রুমে এসে পড়লো,,,,,,

ওনার কান্নার আওয়াজ শুনে ভাবনা থেকে বাহির হয়ে বলি,”আন্টি চিন্তার কোন কারণ নাই হয়তো অতিরিক্ত টেনশন করার ফলে অজ্ঞান হয়ে গেছে।আমি ডাক্তারকে ডেকেছি এখনি হয়তো এসে পরবে।”

অদ্রিতার মা আহাজারি করে বলে,”সব আমাদের জন্য হয়েছে।আমরা যদি ওকে জোর করে বিয়েটে রাজি না করাতাম তবে এমনটা হতো না।সব দোষ আমাদেরই।আমাদের জন্যই মেয়েটাকে এতকিছু সহ্য করতে হয়েছে।”

নিলয় ভরশা দিয়ে বলে,”যা হয়েগেছে তা ভেবে কষ্ট পেয়ে তো কোন লাভ নেই।এখন নিজেকে সামলান, ইনশাআল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কিছুক্ষন পরেই ডাক্তার চলে আসে।অদ্রিতাকে চেক-আপ করে মুখ গম্ভীর করে বলে,”আপনারা এত কেয়ারলেস কেন?ওনার শরীররে এই অবস্থা তার উপরে দুই দিন ধরে না খাওয়া। ওনী মাথায় আঘাত কি করে পেলেন?”

ডাক্তারের প্রশ্ন শুনে ওনী বিপাকে পরে গেলেন।এখন কি বলবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। আমতা আমতা করে বলেন সকালে ওয়াশরুমে পরে গিয়ে মাথায় ব্যাথা পেয়েছে।ডাক্তার ওর কিছু হয়নি তো, ও ঠিক আছে তো?ওর মা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেন।

ডাক্তার স্মিত হেসে বলে,” ওনী এখন সুস্থ আছেন।ওনার জ্ঞান এখনি ফিরে আসবে।আপনাদের আরও যত্নশীল হতে হবে।এই অবস্থায় এতটা টেনশন করা উনার আর ওনার বেবি কারও জন্যও ঠিক না।আর ওনার খাওয়া- দাওয়ার দিকে আরও বেশি নজর দিবেন।জানি এই সময় খেতে একদমই মন চায় না তবুও জোর করে খাওয়াবেন।”

নিলয় হতভম্ব হয়,বিস্মিত হয়ে বলে,” আপনি কি সিউর যে ওনী প্রেগনেন্ট?”

ডাক্তার স্মিত হাসি দিয়ে বলে,”হুমম,আমার এত বছরের ডাক্তারির অভিজ্ঞতা। এটা ভুল হতে পারে না।সি ইজ প্রেগনেন্ট।কেন আপনারা খুশি নন?দেখে তো মনে হচ্ছে ওনী বিবাহিত।তবে কি কোন পবলেব আছে?”

নিলয় মুচকি হেসে বলে,” নো ডক্টর, এটা তো খুশির খবর।জাস্ট একটু সিউর হলাম।চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”

ডাক্তার সৌজন্যতা সূচক হেসে বলে,”দরকার নাই।আপনি এখন আপনার ওয়াইফের সাথে থাকুন। এখন ওনার আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, আমি আসছি।এই বলে ডক্টর চলে যায়।ডাক্তারের কথা শুনে নিলয় চুপ করে যায়,সে আর কিছু বলে না।”

অদ্রিতার মা পরিস্থিতি বুঝে বলে,”কিছু মনে করো না,ডক্টর তোমাকে দেখে হয়তো ভুল বুঝেছে।”

নিলয় ওনাকে আশ্বস্ত করে বলে,” ঠিক আছে আন্টি,আমি কিছু মনে করি নি।” মনে মনে বলে,এটা যদি সত্যি হতো তবে আমার থেকে খুশি কেউ হয়তো হতো না।আর ডাক্তারের এই কথাটা আমি সত্যি করবো তা আজ হউক বা কয়েক বছর পর।আমি আগের বারে যেই ভুল করেছি তা আর করবো না।

জ্ঞান ফিরতেই ডাক্তারের কথা শুনে মনটা খুশিতে ভরে গেল। আমার কানে অন্য কোন কথা আসলো না।আমার হাত আপনা আপনি পেটে চলে গেলো।
মা হওয়ার অনুভূতি সত্যিই অনেক সুখের যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।আমার চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো।এটা কোন কষ্টের পানি না,এটা সুখের পানি।এই একটা কথা শুনে আমি সব কিছু ভুলে গেলাম। এতটা সুখী হয়তো জীবনে আর কখনোই হয়নি।

অদ্রিতার মা চিন্তিত হয়ে বলে,” এখন কি করবি? আরিয়ানকে তো জানাতে হবে।সে বাবা হতে চলেছে আর তুই এখন প্রেগনেন্ট এই অবস্থায় কোর্ট তোর আর আরিয়ানের ডিভোর্স এপ্লাই কিছুতেই গ্রহন করবে না।তাই যদি আবারও একটু ভেবে দেখতি ডিভোর্সের বিষয়ে।তুই চাইলে এখনো তোর সংসারটা বাঁচাতে পারবি।”

মার কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হলাম।আবারও ভেবে দেখবো কথাটা শুনেই মুখে হাসি ফোঁটে উঠলো,,,কিন্তু তাচ্ছিল্যের হাসি।এই সন্তান আমার আর ওনার ভালোবাসার প্রতীক নয়। ওনী তো আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে পরে বলছেন এটা ওনী ঘোরের মাঝে করেছেন।এটা নাকি ওনার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। আমি চাই না আমার সন্তানকে কেউ ভুল বলে অবহেলা করুক। বাধ্য হয়ে তাকে মেনে নিক।আমি চাই না যতটা কষ্ট, অবহেলা আর অপমান আমি সহ্য করছি তার কিছু আমার সন্তান সহ্য করুক।আমিই তাকে মানুষ করার জন্য যথেষ্ট। এখানেই আমার পূর্ণতা।

নিলয় কন্ঠে কিছুটা গম্ভীর্যতা এনে বলে,” আন্টি আপনি এ কি বলছেন।যে আপনার মেয়েকে এতটা অপমান, অত্যাচার করেছে আপনি কি করে তাকে আবার তার কাছে ফিরে যেতে বলতে পারেন?”

অদ্রিতার মা করুন স্বরে বলে,”তুমি বুঝবে না বাবা এই সমাজে একা একটা মা কখনো তার সন্তানকে লালন- পালন করতে পারে না।সন্তানের দেখা- শুনার জন্য মা- বাবা দুইজনেরই প্রয়োজন।তাছাড়া মা-বাবার ডিভোর্স হলে সেই সন্তানকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না।সমাজের মানুষ নানা কথা বলবে।”পরে করুন দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই কিছু বল্ অদ্রিতা,আমি নিজে আরিয়ানের সাথে কথা বলবো।”

অদ্রিতা কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বলে,”আমি ওনার সাথে আর থাকবো না।এই সন্তান একা আমার এবং এই সন্তানের দেখা-শুনা করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট আমার কাউকে প্রয়োজন নেই। ”

অদ্রিতার মা অনুনয় করে বলে,”তবুও আর একবার ভেবে দেখতি।একটা সংসার ভাঙা অনেক সহজ আর গড়া অনেক কঠিন।নিজের কথা না ভেবে নিজের সন্তানের কথা ভেবে পরে সিদ্ধান্ত নে।”

অদ্রিতা কন্ঠে গম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলে,”আমার সন্তানের কথা চিন্তা করেই আমি এই কথা বলছি।আমি চাই না আমার সন্তান কারও অবহেলা, অপমান সহ্য করে বড়ো হউক।কেউ বাধ্য হয়ে ওকে মেনে নিক তা আমি চাই না।নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তো আর বেঁচে থাকা যায় না।অনেক চেষ্টা করেছি আরিয়ানের সাথে সম্পর্কটা ঠিক করার।ওনার মনের মতোন হওয়ার কিন্তু কোন কিছু কি আর একতরফা হয় বলো?ওপাশ থেকে কখনো পজিটিভ রেসপন্স পায়নি।যা পেয়েছি তা হলো অপমান,অবহেলা আর বিরক্তিকর মনোভাব। আমাকে তো ওনী সহ্যই করতে পারেন না।তবুও না হয় এই সব কিছু সহ্য করে থাকতাম কিন্তু বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ হলো বিশ্বাস। একদিন আমার বিশ্বাস ছিল ওনী হয়তো আমাকে মেনে নিবেন।আমি যেমন সেভাবেই আমাকে গ্রহন করবেন কিন্তু আমার এই বিশ্বাসও ভেঙে গেছে।ওনী অন্য কাউকে ভালোবাসেন আর আমি কারো পথের কাঁটা হতে পারবো না।জানো এই বিশ্বাস জিনিসটা অনেক নাজুক হয়।সম্পর্কে রাগ,অভিমান থাকাটা স্বাভাবিক এবং রাগ- অভিমান খুব সহজেই দূর করা যায় কিন্তু বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তা আর দ্বিতীয়বার করা যায় না।আর কোন সম্পর্কে একজন যদি বিশ্বাস ভেঙে ফেলে,সে যদি বিশ্বাসঘাটকতা করে তবে অপর জনের উচিত সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা।সারাজীবন কষ্ট বয়ে বেড়ানো থেকে এটাই ভালো হবে সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসা।আর আমি বেরিয়ে আসতে চাই এই সম্পর্ক থেকে।”

অদ্রিতার মা আবারও বলে,”তবুও যদি আর একটু ভেবে দেখতি,,,,,”
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫২

অদ্রিতার মা আবারও বলে,” তুই যা বলছিস্ তা সব কিছুই ঠিক বলছিস্। তোর কোন কথায় কোন ভুল নেই।তোর জায়গায় যদি অন্য কোন মেয়ে থাকতো তবে সেও হয়তো ঠিক এই কথাই বলতো।কিন্তু আমার কথাটাও আর একবার ভেবে দেখ।তোর মা হয়ে কি আমি তোর খারাপ চাইতে পারি বল্।এখন যদি ডিভোর্সটা হয় তবে ভেবে দেখেছিস্ কি হবে।সমাজ তোর সন্তানকে ভালো চোখে দেখবে না।তাকে নানা কথা শুনাবে আর তোকেও তো অনেক অপমানিত হতে হবে।সমাজ কখনো ডিভোর্সী মেয়েকে ভালো চোখে দেখে না।তখন তোর পথ চলা কতটা কঠিন হয়ে পরবে তা তুই এখন বুঝতে পারছিস না।একা একটা মেয়ে হয়ে তখন কিছুতেই তুই তোর সন্তানকে মানুষ করতে পারবি না।তখন বুঝবি এই সমাজে একা থাকাটা কতটা কঠিন।তাছাড়া তোর একটা ছোট বোন আছে, একবার তার কথাটা ভেবে দেখ।বড় বোন যদি ডিভোর্সী হয় তবে কি ছোট বোনের জন্য ভালো বিয়ের ঘর আসবে?আর একটা সম্পর্ক গড়তে হলে একজনকে না একজনকে একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।একটু সহ্য করতে হয়।তুই না হয় আর একটু সহ্য করলি আর আরিয়ান যদি জানে ও বাবা হতে চলেছে তবে নিশ্চয়ই ও তোকে মেনে নিবে।তুই কি তোর সম্পর্কটা রক্ষা করতে এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারবি না।নিজের সন্তানের কথা ভেবে আমার কথাটা আরেকবার একটু ভালো করে ভেবে দেখ।”

অদ্রিতা মায়ের কথা শুনে হতম্ভব হয়।কাঠিন্যতা ছেপে যায় সারা মুখশ্রীতে, কন্ঠে গম্ভীর্যতা এনে বলে,”মা আমি অনেক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর আমি কিছুতেই আমার সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হবো না।আমি এখন হয়তো তোমাদের গাড়ের বোঝা হয়ে উঠেছি,তবে তা বেশি সময়ের জন্য নয়। আমি কালই এখান থেকে চলে যাবো।সমাজ আমাকে যা বলবে তা আমি সহ্য করে নিবো কিন্তু আমি চাই না আমার জন্য তোমরা আরও কষ্ট পাও বা আমার জন্য আমার বোনের কোন পবলেম হউক।তাই আমাকে নিয়ে তোমাদের আর চিন্তা করতে হবে না।এখন আমি আমার নিজের জন্য বাঁচবো, নিজের সন্তানের ভালোর জন্য যা করার দরকার তা আমি একাই করতে পারবো।আমি একাই ওকে মানুষের মতোন মানুষ করে তুলবো।ও যাতে মানুষকে মানুষ বলে মূল্যায়ন করতে পারে তাকে আমি সেই শিক্ষা দিবো,ওইভাবেই তাকে আমি গড়ে তুলবো।আমি ওকে কখনো কারো অবহেলার পাত্র হতে দিবো না।অনেক অন্যের কথা ভেবেছি কিন্তু এখন আমি শুধু নিজের কথা ভাববো।আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল এখানে আসা আমার ঠিক হবে না।সবাই তোমাদের নানা কথা বলবে।কিন্তু তোমরা আর জাস্ট একটা রাত এইসব সহ্য করো, কাল ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথেই আমি এখান থেকে চলে যাবো।”

“এ তুই কি বলছিস্, আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম।আর তুই কি আরিয়ানকে এই সন্তানের বিষয়ে কিছু জানাবি না।”অদ্রিতার মা করুন স্বরে বলে কথাগুলো।

অদ্রিতার তার মার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,”যার কাছে আমারই কোন মূল্য নেই তার কাছে এই সন্তানের কি কোন মূল্য আছে,হয়তো নেই!তবে তাকে কেন জানাবো,ও শুধু আমার একার সন্তান। এই সন্তানের উপর শুধু আমার একার অধিকার থাকবে অন্য কারো নয়।পরে যদি অন্য কোথাও থেকে জেনে যায় তবে কিছু করার নেই কিন্তু আমি কখনোই এই সন্তানের বিষয়ে তাকে কিছু জানাবো না। আর না তোমরা কিছু জানাবে।আশা করি আমার এই কথাটা তোমরা রাখবে।”

অদ্রিতার মা করুন স্বরে বলে,”এটা কি ঠিক হবে? বাবার কাছে তার সান্তানের আসার খবর গোপন করা তো ঠিক না।তুই তাকে একবার জানাতে পারিস্। আমি তো খারাপ কিছু বলছি না।”

তিনি আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে অদ্রিতার মাথায় হাত দিয়ে বলে,”এইসব তুই কি বলছিস্ মা।তোর বাবা কি মরে গেছে নাকি যে তুই এখান থেকে চলি যাবি।আমি যতদিন বেঁচে আছি তুই এই বাড়িতেই থাকবি। তুই আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। আর নিজের সন্তান কি কখনো মা-বাবার মাথায় বোঝা হয় বল্?”

অদ্রিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি চাই না আমার জন্য তোমরা সমাজের মানুষের কাছে কথা শুনো,তাদের সামনে আমার জন্য তোমাদের মাথা নত হউক, তা আমি চাই না তার থেকে এখান থেকে চলে যাওয়াই আমার জন্য ঠিক হবে হবে।”
আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”তুই আর একটা কথাও বলবি না।তুই যতদিন না পর্যন্ত নিজের পায়ে দাঁড়াবি তার আগে একবারের জন্যও এই বাড়ি থেকে যাওয়ার নাম নিবি না তোকে আল্লাহ কসম।আর যদি যাস তবে সেদিন আমার শেষ দিন হবে।”

অদ্রিতা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় আর বলে,”তুমি কখনো মুখে আর এই কথা বলবে না তবে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
তিনিও অদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরেন আর কিছুক্ষন পর তাকে ছেড়ে দিয়ে তার মার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেন,”আমার মেয়েকে তুমি আর এই নিয়ে কিছু বলবে না।ও আরিয়ানকে কিছু জানাবে কি না তা একান্ত তার সিদ্ধান্ত হবে।ও না চাইলে আরিয়ানকে কেউ এই সন্তানের কথা বলবে না।এখন অদ্রিতা যা বলবে তাই হবে। ও যদি চায় তবে আরিয়ানের সাথে থাকবে আর যদি না চায় তবে থাকবে না।তুমি তাকে আরিয়ানের সাথে থাকার কথা আর দ্বিতীয়বার বলবে না।আমি চাই না আমার মেয়েটা আর কষ্ট পাক।ও যখন চাইছে আরিয়ানকে ডিভোর্স দিয়ে নিজের মতো থাকতে তবে তাই হবে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরিয়ানের সাথে আমি তার ডিভোর্সটা করিয়ে দিবো।যার কাছে আমার মেয়ের কোন মূল্য নেই তার কাছে আমি কখনোই আবার আমার মেয়েকে ফেরত পাঠাবো না।আমার মেয়েকে কেউ বিন্দু পরিমাণ অপমান, অবহেলা,অত্যাচার করবে আমি বেঁচে থাকতে তা কখনোই মেনে নিবো না।আর এমন কারো কাছে আমার মেয়েকে আমি পাঁঠাবো তা তুমি ভাবলে কি করে?”

অদ্রিতার মা করুন স্বরে বলে,” তুমিও আমাকে ভুল বুঝলে।আমি তো শুধু ওর ভালোর জন্য বলছিলাম।সমাজের মানুষের কথাগুলো কাঁটার মতো বিঁধবে তখন কি করে ও এই সব সহ্য করে নিজের সন্তানকে বড় করবে তা কি একবারও ভেবে দেখেছো?”

অদ্রিতার বাবা কন্ঠে গম্ভীর্যতা রেখে বলে,”আমি আছি আমার মেয়ের পাশে ও একা নয়। আর তোমাকে সমাজ নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না,মানুষ দুই-এক দিন কথা শুনাবে পরে তা ভুলে যাবে কিন্তু তার জন্য আমি কখনোই আমার মেয়েকে নরকের মধ্যে যেতে দিতে পারি না।আমি চাই না সারা জীবন আমার মেয়ে একই কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকুক।তার থেকে এর থেকে বেরিয়ে আসাই তার জন্য ঠিক হবে।আর এখন তুমি এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও আমার মেয়েকে একটু রেস্ট নিতে দাও।” একটু রেগে কথাগুলো বলে তিনি বেরিয়ে যান তার মাও ওনার পিছে পিছে বেরিয়ে যান।

রোহিত অদ্রিতা স্বান্তনা দিয়ে বলে,” আপু তুমি কোন টেনশন করো না আমি তোমার পাশে আছি। এখন তুমি রেস্ট নেও আমি আসছি, এই বলে সে চলে যায়।”

অদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে,” মাহিরা তুই গিয়ে নিলয় ভাইয়ার জন্য নাস্তা নিয়ে আয়।”

নিলয় স্বাভাবিক ভাবে বলে,আমার কিছু লাগবে না।আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। এই বলে সে মাহিরার দিকে তাকায়,মাহিরার দিকে তাকাতেই সে বলে,আপু আমি এখন আসছি।তোমরা কথা বলো আর কিছু না বলে সে চলে যায়। মাহিরা চলে যেতেই নিলয় রেগে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি এমন কেন করলে?আমার সাথে ওই দিন মিথ্যা কথা কেন বললে,কি করে তুমি আমাকে এতটা মিথ্যা কথা বলতে পারলে?আমি তো তোমাকে সব কিছু খোলে বলেছিলাম।সব সত্যিটা জানার পরেও তুমি কি করে পারলে আমাকে মিথ্যা কথা বলতে।কোনো তুমি এতদিন মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করেছো, কেন?”নিলয়ের কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান প্রকাশ পেয়েছে যা অদ্রিতার বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি।

অদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্ত স্বরে বলে,” তাছাড়া তখন আমার হাতে অন্য কোন উপায় ছিল না।আমি কি করে নিজের স্বামীকে অন্যের কাছে ছোট করতাম বলেন।তাছাড়া আমার পবলেমের কথা বলে অযথা আপনাকে বলে কেন বিরক্ত করবো বলেন।আমার ভাগ্যে যা লিখা ছিল তাই হয়েছে, এতে তো আর কারো কোন হাত নেই।আপনি আমাকে দেখতে এসেছেন এই অনেক।এখন আপনি চলে যান, আপনার হয়তো অনেক জরুরি কাজ পরে আছে।আমি চাই না আমার জন্য আপনার লাইফে কোন পবলেম হউক।আপনি আপনার জীবনে এগিয়ে যান।ভালো কোন মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিন আর নিজের লাইফে সুখী হন আর ভালো থাকেন।”

অদ্রিতার কথা শুনে নিলয় রাগে ভ্রু কুঁচকে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি করে পারলে আমাকে এই কথাগুলো বলতে?তুমি আমাকে এতটা স্বার্থপর কি করে ভাবতে পারলে।তুমি কি করে ভাবলে তোমার এমন একটা বিপদের দিনে আমি তোমাকে একা ফেলে চলে যাবো।আমি নিজের কথা ভাববো,,,,,,,
.
..

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here