সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ১২

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব:১২

#Tahmina_Akther

-ফুল আমাকে ঠিক কি কারণে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে বাবা? আমি তো জানি ও আমাকে কখনোই বিয়ে করতে রাজি হবে না। তাহলে হঠাৎ করেই কেন ও রাজি হলো?

অভিকের বাবা কিছু বলবেন তার আগেই হিয়ার ফুপি বলতে লাগলেন,

-আমার ছেলে নিঝুমের কি কোনো অংশে কম আছে বড় ভাইজান?আপনি কি ভাবে আমাদের দেয়া প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন আবার ছোট ভাইজানের ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করছেন। কি আছে অভিকের যার জন্য আমার ছেলেকে রিজেক্ট করলেন বড় ভাইজান?

-শালিনী, তুমি আমাদের আদরের ছোট বোন। তোমাদের কি আছে কি নেই আমি সবই জানি। এই যে আমেরিকা থাকছো স্বামী-ছেলে নিয়ে আমিই কিন্তু তোমাদের যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলাম। অতএব, তোমাদের কি কি আছে আমার সঙ্গে এইসবের আলাপ করো না।
আর রইলো অভিকের কাছে কেন হিয়াকে বিয়ে দিতে চাইছি এই কথা?
তাহলে জেনে রাখো, আমার মেয়ে একবার আহানকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমরা চাই হিয়ার জীবনেও কেউ আসুক যার সঙ্গ পেলে আমার হিয়া আবারও আগের মতো হয়ে যাবে। আর হিয়ার জন্য অভিকের চেয়ে ভালো পাত্র আর কেউ হতে পারে না এমনকি নিঝুমও না।
আশা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছো শালিনী।

-হুম, ভাইজান পেয়ে গেছি। আমরা নাহয় বলবো না কিন্তু সমাজের লোকেরা ঠিকই বলবে বয়সে তিন বছরের বড় মেয়েকে কিভাবে বিয়ে করালো পরিবারের সবাই মিলে? তখন কি জবাব দিবেন ভাইজান?
এই নোভা, নিঝুম চল আমাদের বাড়িতে এখানে আর একমুহূর্ত না।

-মা, আমি এখানে থাকবো। তোমার মন চাইলে তুমি
যাও আমাকে টানছো কেন? নোভা বললো।

মেয়েকে চোখ রাঙিয়ে ছেলেকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন হিয়ার ফুপি। হিয়ার মা বেশ কয়েকবার আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সফল হয়নি তাদের আটকে রাখার।

-সুফিয়া, ওরা যেতে চাইছে যেতে দাও। ওদের অন্তত প্রয়োজন নেই এই বিয়েতে। রোকন, কবে বিয়ের তারিখ ঠিক করবি?

-আসলে বড় ভাইজান, ছেলেমেয়েরা কথা বলে নিজেদের মধ্যে ঠিক করুক। তারপর নাহয়?

-আচ্ছা, বেশ তাহলে আমি উঠি। হিয়া অভিকের সাথে কথা বলে আমাদের জানাবি। আর তুইও অভিক।

ইসমাঈল জামানের কথায় হিয়া আর অভিক হালকা মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানালো।রুম থেকে চলে গেলো হিয়ার বাবা-মা, অভিকের মা, নোভা। রুমে শুধু উপস্থিত আছে অভিকের বাবা, হিয়া আর অভিক।

-হিয়া, তোরা কথা বল আমি আসছি। আর অভিক?

-জী, বাবা।

-তোমার কোনো অসুবিধা হলে তোমার মা’কে বা হিয়াকে বলো। আমার আজ বাড়িতে ফিরতে দেরি হবে; ঠিক আছে।

-জী, আব্বু। আল্লাহ হাফেজ।
ছেলেকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন অভিকের বাবা।

রুমে শুধুই এখন হিয়া আর অভিকের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ প্রতিধ্বনি হচ্ছে। অভিক আজ তার ফুলের মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন খোঁজার চেষ্টা করছে? কেন সে আমায় বিয়ে করতে রাজি হলো আমাকে জানতেই হবে? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে নয়তো আমার কথার জবাব বাবা দিলো না কেন?

-ফুল, আমাকে বলবে কি হয়েছে তোমার? হঠাৎ করে আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছো কেন?

অভিকের কণ্ঠ আজ যেন হিয়ার কাছে বিষের মতো লাগছে। রাগে ওর পুরো শরীর কিড়মিড় করছে। রাগ সামলাতে না পেরে হিয়া বেশ বড় গলায় বলেই ফেললো,

-কারণ, তোর বাবা আমার কাছে শর্ত রেখেছে আমার বাবার চিকিৎসার পিছনে যত টাকা খরচ হয়েছে সবটাকা যেন ফেরত দিয়ে দেই। আর যদি টাকা না দিতে পারি তাহলে যেন তোকে বিয়ে করি। তাহলে, সব টাকা মাফ করে দিবে তোর বাবা। এখন বুঝতে পারছিস কেন আমি তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি?

অভিক যেন আকাশ থেকে পড়লো। তার বাবা তার চাওয়া-পাওয়ার জন্য ফুলকে এভাবে জোর করতে পারে না। আর ফুলকে এভাবে ওর মতের বিরুদ্ধে যেয়ে বিয়ে করার কোনো মানেই হয় না। হায় আল্লাহ, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। অভিক ভিতরে ভিতরে আতর্নাদ করে উঠলো তার সৃষ্টিকর্তার নিকট।

-কে চাইবে তার চেয়ে বয়সে ছোট কাউকে বিয়ে করতে; আমিও চাই না। শুনলি না ফুপি কি বললো, সমাজ কখনোই মেনে নিবে না এই বিয়েটাকে। জাস্ট হাসির পাত্র হবো আমরা দু’জন। তুই এই বিয়েটা ভেঙে দে অভিক। আমি জানি তুই বললে হয়তো চাচ্চু মেনে নিবে।

-ফুল, দেখো তো ওয়্যারড্রোভের উপর সিগারেট আছে আমাকে দিয়ে চলে যাও এই রুম থেকে।আমি বাবার সঙ্গে কথা বলে তোমাকে জানাবো। আর, ভয় পেয়ে না আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।

হিয়া অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে অভিকের দিকে। মেনেছে তাহলে চাচ্চুকে এবার অভিকই বুঝাতে পারবে। মনে মনে শান্তির শ্বাস নিলো হিয়া। সিগারেটটি নিয়ে অভিকের হাতে দিয়ে বেরিয়ে পরলো রুম থেকে।হিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিগারেটে আগুন দিলো অভিক আর ভাবছে হসপিটালের বিলের কথা ।

—————

হিয়া রেস্টুরেন্টে বসে আছে প্রায় আধঘন্টা ধরে। ওর মোবাইলে মেসেজ এসেছে যেন এই রেস্টুরেন্টে দুপুরে চলে আসে হিয়া। হিয়ার মোবাইলে বেজে উঠলো ব্যাগ থেকে বের করে দেখলো, ওর চাচ্চু কল করেছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনা গেলো,

-হিয়া, এসেছিস?

-জী, আমি এসেছি প্রায় আধঘন্টা হবে।

এরই মাঝে কে যেন চেয়ার টেনে বসলো। হিয়া মোবাইল কান থেকে নামিয়ে দেখলো ওর চাচ্চু এসে বসেছে।

-তোকে এখানে আমি ডেকেছি কিছু কথা বলতে। শুনবি তো মা এই পচা বাবার কথাগুলো?

হিয়ার তার চাচ্চুর আদুরে কন্ঠের কথা শুনে খানিকটা অভিমানী সুরে বললো,

-তুমি আসলেই পঁচা বাবা চাচ্চু। আমি কিন্তু পঁচা না তাই তোমার সব কথাগুলো শুনব আমি। বলো কি বলবে?

হিয়ার কথা শুনে হালকা হেসে ফেললেন রোকন জামান। এইযে পাখির কন্ঠে কথা বলা অভিমানী মেয়েটিকে নিজেদের কাছে সবসময় রাখতে চায় রোকন জামান। তাই হয়তো বিধাতাও চাইছেন দূরে না যাক এই পাখিটি।

-অভিককে তোর কেমন লাগে হিয়া এজ এ হিউম্যান?

-এজ এ হিউম্যান অভিক ইজ এ গ্রেট বয়। এই যুগে ওর মতো কোনো ছেলেই হয় না।

-তাহলে অভিক অনেক ভালো তুই বলছিস?

হিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোধক জানালো।

-তাহলে, ওকে স্বামী হিসেবে চাইতে এত বিতৃষ্ণা কেন তোর?

হিয়া এবারের কথায় কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়লো। কি জবাব দিবে বুঝতে পারলো না। তবুও বললো,

– চাচ্চু, সত্যি কথা বলতে ওকে আমি সবসময় বন্ধুর মতো ভেবেছি।তাছাড়া ও আমার চেয়ে ছোট। তাহলে কিভাবে ওকে আমার স্বামী হিসেবে চাইতে পারি?

-বিয়ে নামক সম্পর্কের মাঝেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হয়। তা নাহলে পানসে লাগে সেই সব সম্পর্ক। আর রইলো বয়সের কথা এটা নিয়ে ভাবা বন্ধ করে দে। কে কি বলবে সেটা ভাবতে বসলে আমাদের জীবনে কারো প্রাপ্য জিনিস আমরা কেউই পাবো না ।
আমাদের নবীজি (স) স্ত্রী খাদিজাতুল কুবরা (র) কিন্তু নবীজির থেকে বয়সে বেশ বড় ছিলেন। তাই বলে কি উনাদের মাঝে ভালোবাসা কম ছিলো। উহু বরং উনাদের মাঝে ভালোবাসা ছিলো বহু গুন। খাদিজাতুল কুবরা (র) ইন্তেকালের পরও নবিজি উনার স্মৃতিতে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে পরতেন।
তাহলে ভেবে দেখ আমাদের নবী যদি বয়সে বড় নারী বিয়ে করতে পারে তাহলে তোরা কেন পারবি না?

-কিন্তু, চাচ্চু আমার কাছে বেশ লজ্জা লাগছে এই বিয়ের ব্যাপারে।
অভিককে বিয়ে করা আমার পক্ষে পসিবল না।

-আচ্ছা, এখন আমার কিছু কথা শোন। তারপর নাহয় তুই ভেবে বলিস এই বিয়ের ব্যাপারে।

-আচ্ছা, বলুন

-গতকাল, একবারও দেখা করিসনি অভিকের সঙ্গে?

-না চাচ্চু ;
মাথা নিচু করে বললো হিয়া।

-গতকাল, ডাক্তার আসার পর অভিকের ক্ষতের জায়গায় ড্রেসিং করে দেয়। তখনও, অভিক আমার সাথে একশব্দ কথা বলে নি। ডাক্তার যখন চলে গেলো তখন দেখছি অভিক একটু পর পর কেপে কেঁপে উঠছে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। দেখলাম ও কাদছে। ছেলে আমার কেন কাঁদছে এই ভেবে আমার মনটা কেমন যেন করছিলো জানিস না। ও কখনোই আমার কাছে কোনো জিনিস চায় না সবমসময় তোর চাচীকে দিয়ে বলিয়ে নিতো। অথচ সেদিন অভিক আমায় ডাক দিয়ে কি বলেছিলো জানিস?

-কি বলেছিলো চাচ্চু?

জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলেন রোকন জামান।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here