সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ১০+১১

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব:১০

#Tahmina_Akther

আরও কিছু বলতে চাইছিলো অভিক কিন্তু মূহুর্তের মাঝে ওর গালে সপাটে চড় মেরে দিলো হিয়া। অভিক শুধু চেয়ে থাকলো হিয়ার দিকে যেন সে জানতো ওর অব্যক্ত অনূভুতির কথা যেদিন হিয়া জানতে পারবে সেদিন ঠিক এইভাবে আচরণ করবে তার সাথে।

-আমি কখনো ভাবতে পারিনি তুই এরকম একটা জঘন্য কাজ করবি?আমি তোর বড় হওয়া সত্তেও তুই আমাকে ফুল বলে সম্বোধন করেছিস মানা করিনি হয়তো আদর করে ডাকিস এই ভেবে।আমি তোকে সবসময় আমার ভালো বন্ধু হিসেবে আমার পাশে চাইতাম আর সেই তুই কি করলি? আমার এখন তোকে দেখতেও ঘৃনা লাগছে।

আজ যেন হিয়ার কোনো কথার প্রতিউত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না অভিকের। সে শুধু তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে আর মুখে লেগে আছে এক অমলিন হাসি।

দরজার করাঘাতে এবার হিয়ার টনক নড়লো।সে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।কিন্তু, কে যেন হাওয়ার বেগে এসে অভিককে বেধমভাবে মারা শুরু করলো?
অভিকের মা চিৎকার করে উঠে বললেন,

-নিঝুম এটা তুমি কি করলে?অভিকের কোনো দোষ নেই। ওকে আর মেরো না। আমার ছেলেটা মরে যাবে নিঝুম ছাড়ো ওকে।বুবু আপনার ছেলেকে বলুন না আমার অভিককে ছেড়ে দিতে।

হিয়া যেন বাকরূদ্ধ হয়ে পড়লো,ও তো এরকমটা চায়নি তাহলে, কেন ওর জীবনে এত অশান্তির সৃষ্টি? ও এগিয়ে যেতে চাইলেও ওর মা’কে আটকে ফেললো।

-আম্মু, ছাড়ো আমাকে। অভিকের কোনো দোষ নেই ওকে কেন মারছে নিঝুম ভাইয়া? আমার হাত ছাড়ো।

-ও তোকে একা রুমে পেয়ে নিশ্চয়ই উলটাপালটা আচরণ করেছিলো তাই না এজন্যই তুই চিৎকার করেছিলি? আমরা এতবার দরজা ধাক্কা দিলাম তাও দরজা খুলিস নি কেন?

-আম্মু তোমরা যা ভাবছো আসলে তার কিছুই হয়নি। আমি তোমাদের পরে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে ছাড়ো আম্মু।

-নিঝুমমম,
বেশ জোরেই ডাক দিলেন অভিকের বাবা। নিঝুম অভিককে ছেড়ে দিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর ছোট মামা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। নিঝুম ভয়ে বারকয়েক ঢোক গিললো, কারণ, তার দুই মামার মাঝে ছোট মামা বড্ড রাগি, একগুয়ে মানুষ।

অভিকের কাছে এসে বসলো ওর বাবা। দেখছে ছেলের ঠোঁটের একপাশ কেটে রক্ত বের হচ্ছে আর মুখের বেশ কয়েক জায়গা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেকে টেনে তুলে খাটের উপর শুইয়ে দিলেন। এরপর মোবাইল বের করে কল করলেন ডাক্তারের কাছে।

————–

ড্রইংরুমে সবাই বসে আছে শুধু অভিক বাদে। সোফায় বসে আছে অভিকের বাবা, হিয়ার বাবা, নিঝুমের মা।একপাশে দাড়িয়ে আছে হিয়ার মা ও অভিকের মা। নিঝুম ওর মায়ের পাশেই দাড়িয়ে আছে। আর হিয়া সবার মধ্যমনি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খানিক সময় পরপর হিয়া ওর চোখের পানি মুছছে।

-হিয়া, কান্না বন্ধ করো। অভিক মরে যায়নি যে এভাবে কাঁদছো। বাড়ির সবাই যা বলছে তা কি সঠিক? অভিক তোমার সঙ্গে খারাপ কিছু?
আর বাকি কথাটুকু বের করতে পারলেন না অভিকের বাবা রোকন জামান।

-না, চাচ্চু সবাই যা ভাবছে আসলে এমন কিছুই ঘটেনি।

-তাহলে, তুমি চিৎকার করছিলে কেন? আর যখন সবাই রুমের দরজা ধাক্কা দিচ্ছিলো তখন কেন দরজা খুললে না? এমন কি ঘটেছে ওই বদ্ধ রুমটির ভিতরে? আমাকে বলো হিয়া।

-আসলে, চাচ্চু অভিক একটু রেগে গিয়েছিলো তাই।

-কথা ঘুরানো যাবে না হিয়া সত্যি করে বলো। বেশ ধমক দিয়ে কথাটি বললেন অভিকের বাবা।

-ও নাকি আমাকে ভালোবাসে। আমি যেন নিঝুম ভাইয়াকে বিয়ে না করি? আমি ওর কথাগুলো সহ্য করতে পারিনি তাই ওকে থাপ্পড় মেরেছিলাম চাচ্চু। আর আমি চিৎকার করেছিলাম এই জন্যই কারণ যখন আমি অভিককে বলেছি যে আমি নিঝুম ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি ঠিক তখনি ও দেয়ালে ঘুসি মেরে বসলো। আমি তখন ভয়েই চিৎকার করি আর বাড়ির সবাই উল্টাপাল্টা ভেবে বসে আছে চাচ্চু।
চোখ বন্ধ করেই কথাগুলো দুইশ্বাসে শেষ করলো হিয়া।

উপস্থিত সকলে যেন হিয়ার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে বোবা বনে গেলো। এবার মুখ খুললেন হিয়ার ফুপি,

-ছোট ভাইজান, আমি আরো আগে থেকে ভাবিকে বলেছিলাম যেন ছেলেকে হাতের মুঠোয় রাখে। যখন ও হিয়াকে ফুল বলে ডাকা শুরু করলো তখনই আমি বুঝেছি এর ভিতর নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে। আজ সকালে অভিককে বলেছিলাম, কেন ও হিয়াকে ফুল বলে ডাকে? সে আমাকে কি উত্তর দিয়েছে জানেন? সে বলেছে আমাদের হাজারটা সমস্যা এতে নাকি ওর কোনো কেয়ারই নেই।
এখন অভিকের বিচারটা নাহয় আপনি করবেন কারণ, সে আমার হবু পুত্রবধুর সঙ্গে খারাপ বিহেব করেছে, ভাইজান।

-শালিনী, তোর কথা শেষ হয়েছে? তাহলে এবার আমি কি বলি শোন? এইযে বললি তুই তোর ভাবিকে বলেছিস,ছেলেকে হাতের মুঠোয় রাখতে। তুই পেরেছিস তোর ছেলে নিঝুমকে হাতের মুঠোয় রাখতে। তোরা আমেরিকায় থাকলে কি হবে? আমরা বাংলাদেশে বসেই সকল খবরাখবর পাই। তোর ছেলের যে চরিত্রে সমস্যা আছে এটা আমি আরো দুবছর আগে থেকেই জানি। তুই এখানে কাউকে জ্ঞানের পট্টি বেঁধে দিস না।

-আর ভাইজান,আপনি আমার সাথে একটু রুমে আসুন। আপনার সঙ্গে আমার একান্তে কিছু কথা আছে। হিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন অভিকের বাবা।

হিয়ার বাবা উঠে চলে গেলেন অভিকের বাবার সঙ্গে। ওনাদের দুজনের কি এমন কথা ছিলো যে আর কারো সামনে বলতে পারবে না।

———

সময়টা তখন রাত ১০.০০টা। হিয়ার বাবা আর এখানে উপস্থিত হননি। তিনি কিছু হালকা খাবার খেয়ে ঘুমোতে চলে গেলেন। এখন শুধু অভিক, হিয়ার বাবা এবং সাদাফ-অরিন ছাড়া সবাই উপস্থিত।

-হিয়া তুমি কত তারিখে বাংলাদেশে এসেছিলে?

-এইতো চাচ্চু মার্চের ১৩ তারিখে। হঠাৎ কেন এই প্রশ্ন চাচ্চু?

-কারণ আছে, বড় ভাইজান অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হয় ৭মার্চ।তাকে হসপিটালে রেখে হার্টের চিকিৎসা করাতে যেয়ে আমার বেশ অনেক টাকা খরচ করতে হয়। প্রায় ১০লক্ষ টাকার মতোন আর অনেক হিসাবই আছে তবে এখন আমি সেগুলোর হিসাব খুলতে চাচ্ছি না।

-হঠাৎ, কেন এসবের হিসাব করছেন চাচ্চু?
হিয়া তার চাচ্চুকে থামিয়ে দিয়ে বললো।

-কারণ, তো অবশ্যই আছে। তাহলে মেইন পয়েন্টে আসি। তোমার বাবার পিছনে আমি যতটাকা খরচ করেছি আমার এখন সেই টাকাগুলো চাই। আশা করছি তোমরা আমার টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দিবে।

– কিন্তু, এখন কোত্থেকে দিবো রোকন? তুই তো জানিস তোর ভাই আজ চারবছর ধরে রিটায়ার্ড হয়ে ঘরে বসে আছে;হিয়ার মা বললেন।

-টাকা তোমাদের এখনই দিতে হবে,ভাবি। আর যদি না দাও তাহলে আমার কাছে অন্য অপশন আছে।

-কি সেই অপশন চাচ্চু?

-বেশি কিছু না শুধু অভিককে তোর বিয়ে করতে হবে। তাহলে আমার সাথে তোদের যত দেনা আছে আমি সব মাফ করে দেবো। আর যদি তুই রাজি না থাকিস তাহলে আমার টাকা দেবার ব্যবস্থা কর।

-ছোট ভাইজান, আপনি কিভাবে এই কথাগুলো বলছেন? হিয়া অভিকের থেকেও বয়সে তিনবছরের বড়। তাহলে ওদের বিয়ে কিভাবে সম্ভব? হিয়ার ফুপি বললেন।

-ঠিক সেভাবে সম্ভব যেভাবে হযরত খাদিজা (র.) এর সাথে আমাদের হযরত মুহাম্মাদ (স.) বিয়ে হয়েছে। ঠিক সেভাবে সম্ভব যেভাবে হযরত ইউসুফ (আ.) এর সাথে জুলেখা (র) বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এই দুজন নারী কি তাদের স্বামীদের থেকে বয়সে বড় ছিলেন না? তাহলে, কি ভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে? যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার মর্জি আছে বয়সে নারী বড় বিয়ে করার সেখানে ওরা দুজন বিয়ে করলে কি সমস্যা হবে?

-কিন্তু, ছোট মামা আমিও তো হিয়াকে পছন্দ করি।
এতক্ষণে মুখ খুললো নিঝুম।

-তুমি শুধুমাত্র হিয়াকে পছন্দ করো আর আমার অভিক হিয়াকে ভালোবাসে। তাহলে, কি সবার আগে পছন্দকে প্রাধান্য দেয়া উচিত নাকি ভালোবাসাকে?
হিয়া আজ সারারাত ভেবে আমাকে কাল সকালে তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে। আশা করছি তুমি তোমার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিবে।

বলেই উঠে চলে গেলেন অভিকের বাবা।এরপর, চলে গেলো নিঝুম ও তার মা। শুধু ড্রইংরুমে রয়ে গেলেন হিয়া আর ওর আম্মু।

হিয়ার কাধে হাত রাখলো ওর মা। হিয়া ঘুরে ওর মা’কে জড়িয়ে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলো।
আজ আর মেয়েকে কোনোপ্রকার সান্ত্বনা দিচ্ছে না। কেদে হালকা হোক তার মেয়ের হৃদয় এরপর জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটা নাহয় নিজেই নিবে।
#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_১১

#Tahmina_Akther

রোকন জামান পেশায় একজন এসআই পুলিশ। চাকরির প্রতি তিনি অনেক নিষ্ঠাবান।স্ত্রী রেহনুমা জামান।তাদের দুটি সন্তান;এক ছেলে অভিক আর এক মেয়ে অরিন। ছেলেটা বড্ড ভয় পায় বাবাকে কখনো যদি কোনো জিনিস ওর প্রয়োজন হতো সে নিজে কখনো মুখ ফুটে বলতো না। তার মা’কে তার প্রয়োজনের কথা বলতো। আর তার মা রেহনুমা বলতো রোকনকে।

তবুও তিনি তার ছেলেকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। অপেক্ষায় ছিলেন কোনো একদিন ছেলে তার কিছু না কিছু তো অবশ্যই চাইবে। কিন্তু, সেইদিন যে এত ভয়াবহ হবে সেটা তিনি ভাবতেও পারেন নি। গতকাল, অফিসিয়াল এক গুরত্বপূর্ণ ফাইল ভুল করে রেখে চলে যাওয়ায় বাড়িতে পূনরায় আসেন ফাইল নিতে। কিন্তু, বাড়িতে ঢুকতেই হিয়ার চিৎকার ভেসে আসে রোকন জামানের কানে।তড়িঘড়ি করে উপরে চলে আসেন। অভিকের রুম থেকে বেশ শোরগোল শুনতে পেয়ে রুমের দরজা সামনে দাড়াতেই উনার পা দু’টো যেন স্থীর হয়ে গেলো।অভিককে নিঝুম যেভাবে মারছিলো আরেকটু হলে হয়তো অভিক মরে যেতো। সবাই শুধু চেয়ে দেখছে নিঝুমকে থামাবার চেষ্টা মাত্র নেই কারো কাছে।রেহনুমা শুধু নিঝুমকে থামতে বলছিলো।

রোকন জামানের রাগ জমে গেলো পরিবারের সকলের উপর, নিঝুমকে ডাক দিয়ে থামিয়ে দিলেন এরপর এগিয়ে গিয়ে দেখলেন বুকের মানিক অভিককে বেশ মেরেছে ঠোঁটের একপাশে কেটে রক্ত বের হচ্ছে।

ভাবনাগুলো আবারও চোখের সামনে দৃশ্যমান হতেই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো রোকন জামানের। তিনি চোখের পানি পাঞ্জাবির হাতায় মুছলেন। রুমে ঢুকতেই স্বামীকে চোখ মুছতে দেখে স্বামীর পাশে গিয়ে দাড়ালেন রেহনুমা জামান।পাশে নিজের স্ত্রীর উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন,

-রেহনুমা, তুমি কি জানতে অভিক হিয়াকে ভালোবাসে? আর যদি জেনে থাকো তাহলে আমাকে বলোনি কেন?

-হু জানতাম। কিন্তু, ওদের বয়সের দিক দিয়ে খেয়াল করলেই এই বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করতো না তোমার সঙ্গে।

-তুমি তো সবসময়ই বলতে আমি নাকি অভিককে যতটা ভালোবাসি তুমি নাকি এরচেয়েও বেশি ভালোবাসো। তাহলে কোথায় গেলো তোমার ছেলের প্রতি ভালোবাসা। আমার ছেলেটা প্রতিটা রাত হয়তো গুমরে মরেছে আর আমি বাবা হয়ে জানতে পারলাম না।আমার সাথে অভিকের কেন এত দূরত্ব আমি আজ বুঝলাম না হয়তো বাবা হিসেবে আমি ব্যর্থ। কিন্তু আর না আমার ছেলের জীবনের সিদ্ধান্ত এবার আমি নিব।আশা করি আমার নেয়া সিদ্ধান্তে তোমার কোনো আপত্তি নেই,রেহনুমা?

-তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝেছো?আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এই সম্পর্কটা মেনে নিবে না। তাই আমি বহুবার অভিককে মানা করেছিলাম কিন্তু ও আমার কোনো কথাই মানে নি। যেহেতু এখন তুমি সব জেনেছ এবং রাজি হয়েছো তাহলে আমার আর আপত্তি কিসের? শুধু আমার একটাই চাওয়া আমার অভিক যেন সুখে থাকে।

-অভিকের কাছে গিয়েছিলে তুমি? কি করছে সে?

-ঘুমাচ্ছে ; আচ্ছা, তুমি কেন এভাবে চাপ প্রয়োগ করছো হিয়ার উপর? তাছাড়া তুমি তো ভাইয়াকে এক টাকাও দাওনি তাহলে মিথ্যে বললে কেন ওদের সাথে?

– কেন বলেছি আস্তে আস্তে জানতে পারবে। শুধু এটুকু জেনে রেখো আমি যেই মিথ্যা কথা বলেছি সেটা আমাকে বড় ভাইজান বলতে বলেছে হিয়ার কাছে।

-তার মানে বড় ভাইজান রাজি আছে। তুমি,আর ভাইজান মিলে এই সব করছো!

————–

চারদিক জুড়ে নিস্তব্ধতায় বিদীর্ণ;রাত বেশ গভীর কেউ জেগে নেই।ফ্যানের বাতাসের শো শো শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘড়ির সেকেন্ড কাটা টিক টিক শব্দের প্রতিধ্বনি তুলছে। এত নিস্তব্ধতার মাঝে জেগে আছে এক বিষন্নতায় ঘেরা নারী। চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে বালিশের মাঝে। একপাশ হয়তো ভিজেও গেছে তবুও হেলদোল নেই হিয়ার। তার যেন আজ চোখের পানি ফুরোচ্ছে না। ঠিক কোন অপরাধে তার জীবন এত দুঃখে জর্জড়িত? আহানকে ভালোবেসে ভেবেছিলো হয়তো এই তো জীবনের সকল পূর্ণতা বুঝি পেয়েই গেলো। কিন্তু, না পূর্ণতা পেলো না তার আর আহানের ভালোবাসা। চলে গেলে আহান তাকে একলা করে এই ধরনী থেকে।

আবার সব ভুলে যখন নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইলো তখন এলো নিঝুম নামক ঝড় যার তান্ডবে ভেঙে গুড়িয়ে গেলো অভিক।
না না এ আমি কি বলছি? অভিক ভেঙে গুড়িয়ে যায় নি বরং সে আমাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। আমি কি এমন অপরাধ করেছি যার খেসারত আমাকে অভিককে বিয়ে করে দিতে হবে?

-চাচ্চু, তুমি কি ভাবে পারলে ওমন করে কথাগুলো বলতে?একটিবারও বুক কাপলো না তোমার। অভিক আমি তোকে কখনোই মাফ করবো না;কখনোই না।
বলেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো হিয়া।

এতসব হয়ে গেলো কিছুটির খবর ঘূর্ণাক্ষরে পেলো না অভিক।অভিকের কি এমন অপরাধে সে আজ অপরাধী হিয়ার কাছে? শুধুই কি হিয়াকে ভালোবেসেছে বলে?

—————

কারো মৃদু কন্ঠের ডাকে ঘুম থেকে জাগ্রত হলো অভিক। বহুকষ্টে চোখ খুলতেই দেখতে পেলো ওর মা ওকে ডাকছে।জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখতে পেলো সকাল হয়ে গেছে।
এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো তাই হয়তো ব্যাথা অনূভুত হয়নি কিন্তু এখন যেন সারা গায়ে ব্যাথাদের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।

বহুকষ্টে উঠে বসলো অভিক এবার খেয়াল করলো তার মা ছাড়াও এই রুমে আরো অনেকেই আছে,যেমনঃচাচ্চু(হিয়ার বাবা),চাচী (হিয়ার মা),ফুপি আর নিঝুম যে কিনা রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। অভিক বুঝতে পারলো না এত সকালে সবাই কেন তার এসে উপস্থিত হলো। তাই ওর মা’কে বহুকষ্টে জিজ্ঞেস করলো,

-মা,সবাই আমার রুমে কিছু কি হয়েছে?

-না , অভিক কিছুই হয়নি। আসলে হিয়া আমাদের কিছু কথা বলবে তাই আমাদের সঙ্গে তুমিও ওর কথাগুলো শুনবে।কই হিয়া রুমে আয়?

বলেই রুমের ভিতর প্রবেশ করলেন অভিকের বাবা। আর উনার পিছু পিছু হিয়া এসে রুমে দাড়ালো।

অভিক একনজর তাকালো হিয়ার দিকে। আশ্চর্য,এই মেয়ের আবার কি হলো? কান্না করে চোখমুখ ফুলিয়ে রেখেছে আবার কি এমন কথা বলবে যে সবাইকে নিয়ে আমার রুমে এসে হাজির!

-হিয়া বলো তাহলে তোমার কি সিদ্ধান্ত এই বিয়ের ব্যাপারে?

-কিসের বিয়ের ব্যাপার চাচ্চু আমি বলেছি না ফুল নিঝুম ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবে না মানে পারবে না। তাহলে আজ আবার এই কথা কেন?
অভিক বেশ রেগে কথাগুলো গড়গড়িয়ে বলে ফেললো।

-আহ, অভিক একটু চুপ থাকো। হিয়া কি বলে আগে সেটা শুনো তারপর তোমার যা ইচ্ছা তাই বলো;
অভিকের মা বললেন।

-আসলে, চাচ্চু আমি রাজি অভিককে বিয়ে করতে।

-আলহামদুলিল্লাহ
সবাই বলে উঠলো শুধু নিঝুম আর ও মা বাদে।
আর অভিক সে ভাবছে আমি কি কোনো ভুলভাল শুনছি কানে, অভিককে বিয়ে করতে রাজি মানে? আমার সাথে ওর বিয়ে কিভাবে সম্ভব?

-অভিক, তোর কি মতামত? তুই হিয়াকে বিয়ে করতে রাজি আছিস?

-মানে, আমি বুঝতে পারছি না কি বলছো তোমরা?

-মানে হচ্ছে তোর সঙ্গে হিয়ার বিয়ে ঠিক করেছে বড়মামা আর ছোটমামা। হিয়া রাজি হয়েছে তোকে বিয়ে করতে এখন তুই কি রাজি আছিস হিয়াকে বিয়ে করতে এইটাই জিজ্ঞেস করছে ছোটমামা?
কথাগুলো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নোভা।

অভিকের মস্তিষ্কের নিউরনে যখন কথাগুলো পৌঁছালো ঠিক তখনই সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। পরক্ষনেই কি যেন ভাবতেই ওর খুশি মূহুর্তের মাঝে মিলিয়ে গেলো।
তারপর, চোখমুখ কঠিন রুপ করে বললো,

-ফুল আমাকে ঠিক কি কারণে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে বাবা? আমি তো জানি ও আমাকে কখনোই বিয়ে করতে রাজি হবে না। তাহলে হঠাৎ করেই কেন ও রাজি হলো?

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here