#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২৭
অস্বস্তিকর অবস্থায় পরেছে জেরিন।স্পর্শ নিজেও খানিকটা অপ্রস্তুত।মহিনি মেহরাব স্তির চাহনিতে জেরিন কে দেখে যাচ্ছে।জেরিন আধশোয়া অবস্থায় মাথা নিচু করে আছে।বেডের পাশেই চেয়ার টেনে বসেছেন মহিনি মেহরাব।স্পর্শ অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
—-“মা ও জেরিন।”
মহিনি মেহরাব ছেলের দিকে না তাকিয়েই গম্ভীর স্বরে বলেন,
—-“তুমি আমাদের জন্য কফি নিয়ে এসো।আমি ওর সাথে একটু গল্প করি।”
স্পর্শের দিকে ভিতু চাহনিতে তাকায় জেরিন।স্পর্শ না করতে পারলো না।ভদ্র ছেলের মতো সম্মতি জানিয়ে বাইরে চলে গেলো।স্পর্শ যেতেই জেরিনের কলিজা শুকিয়ে যায়।মাথা তুলে তাকাতেও পারছে না।মহিনি মেহরাব জেরিনের হাতের উপর নিজের বাম হাত রাখেন।জেরিন খানিক চমকে উঠে।মহিনি মেহরাব স্তির চোখে তাকিয়ে একটু নরম কন্ঠে বলেন,
—-“তুমি কী নার্ভাস ফিল করছো?”
জেরিন নিচুস্বরে অস্ফুটে বলে,
—-“কিছুটা!”
মহিনি মেহরাব হাল্কা হাসেন এবার।মৃদু কন্ঠে বলেন,
—-“কেনো?আমাকে ভয় পাচ্ছো নাকি?দেখো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।”
জেরিন এবার খানিকটা মাথা তুলে তাকায়।গায়ে বেশ দামি জামদানি শাড়ি তার।হাতে মোটা সোনার বালা দুটো।চুল গুলো খোপা করা। গলায় বেশ হাল্কা গহনা।একদম আভিজাত্য মাখা সব কিছুতে।মুখে মাধুর্য মাখানো।জেরিন খেয়াল করে দেখলো স্পর্শ তার মায়ের মতো হয়েছে দেখতে।ফর্সা আর মায়াবি চেহারা।চোখ দুটো জেনো বিষণ মায়াভরা।জেরিন কিছু সময়ের জন্য ভুলেই গেছে এটা মহিনি মেহরাব।সে স্পর্শের মিল খুজতে ব্যস্ত হয়ে যায়।মহিনি মেহরাব খানি হেসে বলেন,
—-“কী দেখছো এভাবে?স্পর্শের মিল খুজে পাচ্ছো?”
জেরিন বেশ লজ্জায় পরে যায়।চোখ নামিয়ে লজ্জিত হয়ে বলে,
—-“দুঃখিত ম্যাডাম!”
মহিনি মেহরাব জেরিনের গালে হাত রেখে বলেন,
—-“আমি তোমাকে আগেই দেখেছি।স্পর্শের সাথে রিকশায় যেদিন ঘুরছিলে।তোমাকে আমার বেশ পছন্দ।এভাবে দুঃখিত বলার প্রয়োজন নেই।”
জেরিন অবাক হয়ে তাকায়।ভদ্র মহিলার ছোঁয়া তে বেশ মায়ের স্নেহ পাচ্ছে সে।হঠাৎ চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।মহিনি মেহরাব ব্যস্ত হয়ে বলেন,
—-“সে কী,কাঁদছ কেনো তুমি?শরীর খারাপ করছে?”
জেরিন হুট করে জড়িয়ে ধরে মহিনি মেহরাব কে।কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারেন নি তিনি।জেরিন নিঃশব্দে কাঁদছে। মহিনি মেহরাব জেরিনের মাথায় বুলাতে বুলাতে অনুভব করলেন, জেরিনের কান্নায় সে বেশ মায়া খুজে পেলো।জেরিন কে ছাড়িয়ে তিনি বলেন,
—-“বোকা মেয়ে কাঁদছ কেনো?আমি কী বোকেছি শুনি?”
জেরিন মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানায়।ধরা গলায় বলে,
—-“জানি না হঠাৎ কী হলো।”
মহিনি মেহরাব কিছু সময় চুপ থেকে জেরিনের কপালে চুমু খেলেন।স্পর্শ কেবিনে এসে এমন দৃশ্য দেখে খুশি হলো। হাত থেকে একটা চুড়ি খুলে জেরিনের হাতে পরিয়ে দিলেন।জেরিন অবাক হয়ে তাকায়।বিস্মিত হয়ে বলে,
—-“কী করছেন ম্যাডাম?”
—-“আমার মেয়েকে বরণ করছি।খুব দ্রুত মেহরাব ম্যানশনে এই মেয়ের হাসির শব্দ শুনতে চাই আমি।আর ম্যাডাম কী হ্যা?মা ডাকবে আমাকে। কী বললাম, মনে থাকবে?”
জেরিন অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে সম্মতি দিলো।স্পর্শ কফির ফ্লাক্স সাইড টেবিলে রেখে বলে,
—-“তোমাদের তো দেখছি ভাব হয়ে গেছে বেশ।”
মহিনি মেহরাব কাট কাট গলায় বলেন,
—-“হবে না কেনো?স্পর্শ মেহরাব রিকশায় ঘুরতে পারলে আমি ভাব করতে পারবো না?”
কথাটা শুনেই স্পর্শ বিষম খেলো।অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকায়।তিনি কীভাবে জানলেন সেটা?জেরিন তো অবশ্যই বলবে না, তবে?মহিনি মেহরাব হেসে বলেন,
—-“এতো ভাবিস না তুই।আমি রাস্তায় দেখেছি আগেই তোদের।এখন এদিকে আয় মেয়েটাকে দেখ।”
স্পর্শ কিছুটা লজ্জায় মাথা নুইয়ে হাসে।মহিনি মেহরাব কেক সাথে করেই আনে।কিছু সময়ের মাঝে আশরাফ মেহরাব আর শুভ চলে আসে।শুভর বউ বাবার বাড়িতে গেছে তাই আসতে পারেনি।সবাই কেক কেটে বেশ আড্ডা দিলো।মনেই হচ্ছে না জেরিন নতুন কেউ তাদের কাছে।
____________________________
আজ বাসায় এনেছে জেরিন কে।পাচ দিন পর নিজের রুমে এসে নিশ্বাস নিলো সে।স্পর্শ বিছানায় হেলান দিয়ে জেরিন কে বসায়।সবাই ব্যস্ত কী খাওয়াবে,কী করবে জেরিনের জন্য।কিন্তু জেরিনের মুখ গম্ভীর।স্পর্শ জুসের গ্লাস মুখে ধরে বলে,
—-“কী হয়েছে তোমার?”
জেরিন গম্ভীর মুখে বলে,
—-“এখন আর মা বাবা আসবে না আমাকে দেখতে।তুমি ও আগের মতো সারাদিন পাশে থাকবে না তাই না?”
স্পর্শ মৃদু হেসে জেরিনের গাল টেনে বলে,
—-“পাগলি আমি কোথায় যাবো শুনি?এখনো আগের মতোই পাশে থাকবো।হ্যা, বাবা মা এখানে আসতে পারবে না তবে তুমি যেতে পারবে তাদের কাছের।”
জেরিন কিছু বলল না।স্পর্শ জুস খাবিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।এসে দেখে জেরিন বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।স্পর্শ হাল্কা হেসে সুন্দর করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।এক সময় নিজেও জেরিনের পাশে শুয়ে পরে।স্পর্শের মতে অনেক বছর হয়ে গেছে জেরিনের পাশে সে ঘুমায় না।
সেলিনা মাগরিবের নামাজ পড়ে জেরিনের রুম থেকে ফিরে আসেন।দরজা খোলা থাকায় তিনি ভিতরে যেয়ে দেখেন স্পর্শ জেরিনকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে।লজ্জায় তিনি চলে আসেন।সবার জন্য চা বানিয়ে বসার ঘরে যান।জসীম সাহেব মসজিদ থেকে মাত্র ফিরলেন।রিয়া চায়ের কাপ হাতে তুলে বলে,
—-“কাকি, ভাইয়া আর জেরিন খাবে না?”
সেলিনা মুচকি হাসি দিলেন।রিয়া সন্দিহান চোখে তাকায়।নাজমুন বেগম ভ্রু কুঁচকে বলেন,
—-“কী হয়েছে হাসছিস কেনো?”
সেলিনা হেসে বলেন,
—-“রুমের দরজা খোলা ছিল তাই ভিতরে যাই।দেখি স্পর্শ জেরিন কে ধরে ঘুমিয়ে আছে।”
রিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে,
—-“আগে বলবেন না? আমি এখনি ছবি তুলে আনি।”
রিয়াকে আর কে পায়?দিলো ছুট সেই রুমে।একটু পর হেসে ফোন হাতে বসার ঘরে আসে।ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
—-“এতো যত্ন বাবা!”
নাজমুন বেগম মৃদু জোর গলায় বলেন,
—-“রিয়া এসব কী?স্পর্শ জানলে মাইন্ড করবে।”
রিয়া কথার মাঝেই বলে,
—-“ফুপি আপনার তো স্পর্শ ভাইয়ার মাইন্ড নিয়ে কিছুই যায় আসে না তাই না?”
#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২৮
রিয়ার কথার পিঠে উত্তর দেওয়ার মতো কিছুই খুজে পেলো না নাজমুন বেগম।সেলিনা নাজমুন বেগমের উত্তরহীন মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
—-“আমি বলি, এবার ছেলেটকে মেনে নে।দেখ,হাসান আর স্পর্শের মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান। হসপিটালে দেখলি তো কে কতদূর গেলো?”
নাজমুন বেগম ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলল।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,
—-“সবই বুঝলাম কিন্তু আরো কিছুটা আমাদের দেখা উচিত।”
নাজমুল দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল।বসার ঘরে পা বাড়িয়ে মৃদু জোর গলায় বলেন,
—-“কী ব্যপার, মেইন দরজা দেখি খোলা।”
সেলিনা মনে পড়েছে ভঙিমা করে বলেন,
—-“ওহ একদম ভুলে গেছি আমি।জসীম ভাই নামাজ পড়ে এসে হয়তো দরজা দেয়নি।”
নাজমুল সোফায় বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
—-“তাই বলেন ভাবি।দিন কাল তো ভালো না একটু সাবধানে চলা ফেরা করা দরকার।তা জেরিন এখন কেমন আছে?”
—-“ভালো আছে মামা।”
চোখে মুখে পানি দিয়ে সবে উঠে এলো স্পর্শ। নাজমুলের প্রশ্নে এদিকেই এগিয়ে এসে উত্তর দিলো সে।নাজমুল বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলেন,
—-“আরে স্পর্শ যে,কেমন আছো তুমি?”
স্পর্শ স্মিল হেসে বলে,
—-“এই ক’দিন আর ভালো ছিলাম কই?বলতে পারেন এখন ভালো আছি।”
সেলিনা স্পর্শ কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
—-“চা খাবে তুমি?”
স্পর্শ মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।নাজমুন বেগম একবার ছেলেটাকে দেখে কেমন খুশি হলেন।কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে তিনি বলেন,
—-“জেরিন কী করছে?”
স্পর্শ নম্র কন্ঠে বলে,
—-“মেয়েটা খুব ক্লান্ত।বাকিশে শুইয়ে এলাম সবে।”
নাজমুন বেগম আগের মতো বলেন,
—-“কিছু লাগলে জানাবে।”
—-“আপাতত আমার বউটা সুস্থ হোক এটাই চাই।”
নাজমুল শব্দ করে হেসে দিলো।স্পর্শ উদ্বগি কন্ঠে বলে,
—-“মামা এবার তো আপনার বিয়ে করতে হবে।আর কতদিন এভাবে শুনি?”
নাজমুল হতাশ কন্ঠে বলেন,
—-“আমার আর বিয়ে! বাড়ি থেকে তো কেউ কোনো উদ্বেগ নিচ্ছে না।তাহলে তো বছর দু’এক আগেই সেরে ফেলতাম।”
স্পর্শ একটু ভ্রু কুঁচকে ভাবলো। ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
—-“এই দায়িত্ব যদি আমি আর জেরিন নেই?”
নাজমুল হেসে দিয়ে বলে,
—-“তোমরা যদি যাও তাহলে আমার সমস্যা নেই।”
সেলিনা কে উদ্দেশ্য করে স্পর্শ উৎসাহিত কন্ঠে বলে,
—-“মামি তাহলে আমরা মেয়ে দেখা শুরু করছি।আপনারা কিন্তু চেপে ধরে সাহায্য করতে আমাকে।মেয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আমার নেই।”
নাজমুন বেগম কথার পিঠে বলেন,
—-“তাহলে জেরিন কে কীভাবে পেলে শুনি?”
স্পর্শ শান্ত ভাবে হেসে বলে,
—-“কিছু কিছু চাওয়া মনের অজান্তেই হয়দ যায়।জেরিন তো একটা পরী।হুট করে এসে আমাকে ছুঁয়ে দিলো।আমিও তার বসে চলে যাই।”
রুম থেকে জেরিনের কন্ঠ ভেসে আসে।স্পর্শ কেই সে ডাকছে।স্পর্শ দ্রুত চায়ের কাপ রেখে রুমে গেলো।জেরিন বিছানার এক পাশে মাথা চেপে বসে আছে।স্পর্শ ব্যস্ত হয়ে জেরিনের পাশে বসে।অস্থির হয়ে বলে,
—-“কী হয়েছে তোমার?”
জেরিন কাতর কন্ঠে বলে,
—-“উঠে বসতেই মাথা ব্যথা করে উঠছে।খুব কষ্ট হচ্ছে।”
স্পর্শ জেরিনের মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরলো।আহত কন্ঠে বলে,
—-“আমি সরি জেরিন।এভাবে একা রেখে যাওয়া উচিত হয়নি আমার।”
জেরিন মৃদু আর্তনাদ জানিয়ে স্পর্শের বুকে শুয়ে পরে।স্পর্শ ভালবাসার পরশ মাখা হাতে মাথা টিপে দিতে থাকে।এক সময় জেরিন এভাবেই ঘুমিয়ে পরে।নাজমুন বেগম, সেলিনা,নাজমুল একটু ব্যস্ত হয়েই রুমে আসে।জেরিনের দিকে দৃষ্টি রেখে প্রশ্ন করে,
—-“কী হয়েছে ওর?”
সেলিনার কথায় স্পর্শ আহত কন্ঠে বলে,
—-“আমি চলে যাওয়াতে ঘুম থেকে উঠে যায়।যার জন্য মাথা ব্যথা করছে খুব।”
নাজমুন বেগম মৃদু অস্থির হয়ে বলেন,
—-“ডাক্তারের সাথে কথা বল দরকার না?”
স্পর্শ শান্ত গলায় বলে,
—-“আঘাত পাওয়ার কারণে একটু ব্যথা করছে।বেশি করে ঘুম আর খেয়াল রাখতে হবে।”
নাজমুল দুহাত বুকের উপর ভাজ করে চিন্তিত হয়ে বলেন,
—-“তোমার তো প্রতি প্রহর থাকতে হবে ওর সাথে।একা তো ছাড়া যাবে না মেয়েটাকে।”
স্পর্শ জেরিনকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“আমি কখনো একা ছাড়বো না। ”
_________________________
বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে পা সোজা করে বসে আছে জেরিন।তার মুখে হাসি।পূর্ণ দৃষ্টি তার ব্যস্ত হয়ে আলমারি থেকে একের পর এক ড্রেস, শাড়ি বেড় করা স্পর্শের উপর।স্পর্শের কপালে বিরক্তির ছাপ।জেরিনের জন্য সুন্দর কিছুই খুজে পাচ্ছে না বলেই তার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। আকাশি রঙা টি- শার্ট হাল্কা ভিজে গেছে ঘামে।জানালা দিয়ে মৃদু শিতল বাতাসে স্পর্শের অসম্ভব সুন্দর চুল গুলো উড়ছে।ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে বিরক্তে।জেরিন তা দেখে ঠোঁট টিপে হাসছে।আলমারি খুলে রুমের মাঝে দুহাত কোমরে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শ। তার এই মুহুর্তে আলমারি ভেঙে আগুন লাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।শুভ্র সাদা রঙের ব্যান্ডেজ কপালে হাল্কা হাত বুলিয়ে জেরিন মৃদু কন্ঠে বলে,
—-“কী হয়েছে স্পর্শ স্যার?এতো রাগ-বিরক্তি কেনো তার চোখে মুখে?”
কথাটা বলতেই পুরো রুম কেপে উঠলো স্পর্শের বিরক্তি প্রকাশে।জেরিন নিজেও অবাক তবে, মুগ্ধ ও হচ্ছে।
—-“কী হয়নি বলো! একটা ড্রেস আর শাড়িও তোমাকে আজ মানাচ্ছে না।এইসব কী হ্যা? তোমাকে সব থেকে সুন্দর করে সাজাবো আমি।”
উচ্চস্বরে স্পর্শ কথা গুলো বলেই বেশ কয়েকটা শাড়ি বিছানায় ছুড়ে মারে।সেলিনা, রিয়া,নাজমুন বেগম সজ্জিত হয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে জেরিনের রুমে প্রবেশ করেন।জেরিনকে বিছানায় আর স্পর্শ কে এমন বিরক্তি আর রাগ মাখা অবস্থায় দেখে সবাই অবাক।বিছানায় তার উপর শাড়ি।স্পর্শ বিরক্তি নিয়ে আলমারির সামিনে দাঁড়িয়ে আছে।সেলিনা অবাক হয়ে বলেন,
—-“কী হয়েছে বাবা, এমন করছো কেনো?”
নাজমুন বেগম জেরিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—-“তোর সাথে চিৎকার করছে?”
জেরিন কিছু বলার আগেই স্পর্শ বিরক্তি নিয়ে বলে,
—-“কী করবো আমি এখন?একটা শাড়ি আর ড্রেস জেরিনকে মানাচ্ছে না।আজ প্রলয় আর হিমুর হলুদের অনুষ্ঠান। সবার থেকে সুন্দর আমার বউকে লাগবে।এইসব কী শাড়ি মামি?ইচ্ছে করছে আলমারিতে আগুন লাগিয়ে দেই।আর দেখুন,বিছানায় বসে ও হাসছে।”
সেলিনা কিছু সময় অবাক হয়ে ফিক করে হেসে দেন।নাজমুন বেগম জেনো অবাকের শেষ পথে।রিয়া মুচকি হেসে বলে,
—-“ভাইয়া ও যা পরবে তাতেই সুন্দর লাগবে।সাথে যদি আপনি দাড়ান তাহলে তো কথাই নেই।”
স্পর্শ এবার আহত কন্ঠে বলে,
—-“হাসবে না রিয়া!আমি জেরিন কে পুতুলের মতো সাজাবো বুঝলে।যেমন তেমন ভাবে নিবো নাকি সেখানে?তুমি এটা কী পরেছো হ্যা?মশারি নাকি?”
রিয়া অপ্রস্তুত হয়ে জেরিনের দিকে তাকায়।জেরিন হাসি চেপে সবাইকে বলে,
—-“কেউ কিছু মনে করো না প্লিজ।মেহরাব সাহেব এখন হুশে নেই।”
স্পর্শ করুণ চোখে জেরিনের দিকে তাকায়।জেরিন এবার শান্ত হয়ে বলে,
—-“আচ্ছা আলমারির সেকেন্ড পার্টে দেখুন তো একটা ড্রেস আছে।হলুদের জন্য অনেক আগেই কিনেছি।”
স্পর্শ বিরক্তি নিয়ে জেরিনের কথা মতো চেক করে।সাথে সাথে একটা প্যাকেট হাতে পেলো।সেটা নিয়ে খুলে দেখে, হলুদ আর গোলাপি রঙের সিল্কের স্কার্ট আর টপস।স্পর্শ কিছু সময় চিন্তিত ভাবে সেটা দেখে বলে,
—-“কেমন জেনো লাগছে এটা।”
জেরিন ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
—-“আগে পরতে দিন এটা।”
স্পর্শ একটু শান্ত হয়ে সম্মতি দিলো।সবাই রুম থেকে চলে যায়।বাসায় আসার এই চার দিন স্পর্শ জেরিন কে নিয়ে বেশি সিরিয়াস হয়ে যায়।আজ প্রলয় আর হিমু হলুদের অনুষ্ঠান। ঘরোয়া ভাবে বিয়ের কাজ শেষ করে এখন আয়োজন করছে।জেরিন জামা পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালে স্পর্শ মোহিত চোখে তাকায়।চোখ বড় করে বলে,
—-“মাশাল্লাহ! ”
জেরিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—-“এতো তোলপাড় না করে আমার কথা শুনলেই হতো।”
স্পর্শ মাথা নিচু করে হেসে দিলো।জেরিনকে বিছানায় বসিয়ে নিজের হাতে সাজাতে লাগে।চুলে সুন্দর করে এক পাশে বেনি করে তার মাঝে ছোট ছোট গোলাপ ফুলের কলি বসিয়ে দেয়।হাতে হলুদ চুড়ি আর মিহিনি মেহরাবের বালা পরিয়ে দেয়।কপালে সাদা পাথরের টিপ।স্পর্শ একবার মন দিয়ে দেখে নিলো জেরিন কে।
চলবে
চলবে
(