#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_৪
#নন্দিনী_চৌধুরী
৪.
আদ্রিয়ানের সামনে বিছানায় শুয়ে আছে রোদেলা।অজ্ঞান হয়ে পরে আছে সে।রোদেলার মাথায় আঘাত পাওয়া যেখানে।সেখানে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া।এখন সোফায় বসে আছে সে।আদ্রিয়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।হয়তো কেদেঁছে সে।আদ্রিয়ান রোদেলার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আদ্রিয়ান রোদেলার কপালে একটা গভীর চুমু একেঁ দিলো।তারপর বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে আদ্রিয়ান।আদ্রিয়ানকে বেরিয়ে আসতে দেখে আরাভ ওর কাছে আসলো।
আরাভঃবেরিয়ে আসলি যে?
আদ্রিয়ানঃঘুমাচ্ছে আর তাছাড়া ওর বান্ধুবিরা তো অপেক্ষা করছে ওর কাছে আসার জন্য।আমার এখন এখানে না থাকাই বেটার।
আরাভঃহুম বুজতে পারছি।তুই তাহলে বাসায় চলে যা।আমি এখানে আছি।
আদ্রিয়ানঃনা আমি বাসায় যেতে পারবোনা।আমার রোদেলাময় এখানে যতক্ষন আছে আমি নিজেকে শান্ত রাখতে পারবোনা।তুই বরং ওর বান্ধুবিদের ওর কাছে যেতে দে।তারপর ওদের বাসায় পাঠিয়ে দিবো।
আরাভঃআচ্ছা।
আদ্রিয়ানের কথা মতো আরাভ ওয়েটিং রুমে বসে থাকা রুবা,মুন,কাশফিয়ার কাছে গেলো।রুবা,মুন,কাশফিয়া বসে আছে ওয়েটিং রুমে।সবার চোখে পানি।রোদেলার জন্য চিন্তায় তিনজনেই শেষ।আরাভ রুমে এসে ওদের ডাক দিলো।তারপর তিনজনকে নিয়ে রোদেলা কেবিনে গেলো।মুন,রুবা,কাশফিয়া তিনজন রোদেলাকে এভাবে থেকে খুব কস্ট পেলো।দেখা শেষ করে আরাভ ওদের বাসায় যেতে বলে।ওরা প্রথমে রাজী না হলেও পরে আরাভ হাসপাতালের রুলস এটা রাত ১টার পর কেউ থাকতে পারবেনা।বাধ্য হয়ে ওদের তিনজনকে চলে আসতে হলো।ওরা তিনজন চলে যাওয়ার পর আদ্রিয়ান আবার রোদেলার রুমে আসলো।আদ্রিয়ান রোদেলার পাশে চেয়ার টেনে বসে ওর এক হাত নিজের হাতের মাঝে নিলো।আদ্রিয়ান বিড়বিড় করে বললো,
আদ্রিয়ানঃসরি জান আমি তোমাকে সুরক্ষিত রাখতে পারলাম না।আমি আজকে ঠিক সময় আসলে তুমি এই বিপদে পরতে না।আমাকে মাফ করে দেও জান।
আজকে দুপুরের ঘটনা,,,,
রোদেলা,মুন,রুবা,কাশফিয়া ক্লাস করে বেরিয়েছে আজকে ফুসকা খাবে তাই।কলেজের অপর সাইডে হচ্ছে ফুসকার দোকান।মুন,রুবা,কাশফিয়া,রোদেলা রাস্তা পার ফুসকা খেতে গেলো।ফুসকা খেয়ে চারজনে এখন হোস্টেলে ফিরবে।রোদেলা রাস্তায় দাঁড়ানো তখন পিছন থেকে কেউ ওকে ধাক্কা মারে রুবা,মুন,আর কাশফিয়া ওর থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়েছিলো।রোদেলাকে ধাক্কা মারার রোদেলা ছিটকে পরে যায় আর পাশে থাকা লোহার সাথে খুব জোরে ওর মাথায় আঘাত পায়।রোদেলা চিৎকার করতেই মুন,রুবা,কাশফিয়া সেদিকে তাকায় আর দেখে রোদেলার মাথা ফেঁটে রক্ত ঝরছে রোদেলার।ওরা তিনজন জলদি করে রোদেলার কাছে এগিয়ে গেলো।তখন সেখানে আসে আদ্রিয়ান।মূলোত সে এসেছিলো রোদেলাকে দেখতে।রাস্তায় এতো ভীড় দেখে আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে বেরিয়ে ভিড় ঠেলে সেদিকে যায়।আর গিয়ে রোদেলাকে ওই অবস্থায় দেখে পা থমকে যায় আদ্রিয়ানের।কেমন জানি নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলছে এমন লাগছিলো তার।আদ্রিয়ান তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে তাড়াতাড়ি রোদেলাকে সবার মাঝ থেকে কোলে তুলে নেয় আর গাড়িতে তোলে আর ওদের তিনজনকে বলে গাড়িতে এসে বসতে।আদ্রিয়ানের হাত কাঁপছে ড্রাইভিং করতে।তবুও খুব তাড়াতাড়ি ড্রাইভিং করে সে রোদেলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।এখানে আদ্রিয়ানের এক ক্লোজ ফ্রেন্ড আরাভ আহমেদ আছে।পেশায় সে ডাক্তার।আদ্রিয়ান রোদেলাকে কোলে করে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে আসে।নার্সরা রোদেলার এই অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি স্ট্রেচার নিয়ে আসে।এর মাঝে আরাভও চলে আসে।আরাভ রোদেলাকে দেখে চিনতে অসুবিধা হয়নি।এযে তার এই পাগল বন্ধুর রোদেলাময়।আরাভ জলদি করে রোদেলাকে ওটিতে নিয়ে যায়।প্রায় ২ঘন্টা পর ওটি থেকে বের হয় আরাভ আর জানায় ভয়ের কিছু নেই।রোদেলা ঠিক আছে।এরপর রোদেলাকে কেভিনে দিয়ে আসা হয়।মুন,রুবা,কাশফিয়া রোদেলার চিন্তায় আদ্রিয়ানের দিকে খেয়ালই করেনি তেমন।
এখন,,,,
আদ্রিয়ান রোদেলার হাতটা নিজের হাতের মাঝে রেখেই বলতে থাকে,
আদ্রিয়ানঃযে তোমাকে এভাবে আঘাত করতে চেয়েছে। আমি তাদের ছাড়বোনা। তাদের আমি আমার টুইংকেল আর টাইগারের ডিনার বানাবো।
আদ্রিয়ান রোদেলার হাতের পিঠে চুমু দিয়ে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,
“জ্ঞানীলোকেরা ঠিকই বলে,মেয়েরা ঘুমন্ত অবস্থায় যেই সর্গীয় সুন্দর্যের অধিকারী জেগে থাকলে অতোটা সুন্দর লাগেনা।”
“তোমার মাঝে আসলেই একটা নেশা আছে নেশামই।কিযে নেশা তা আমি জানিনা।আচ্ছা এই নেশাকি শুধু ভালোবাসার নেশা।নাহ ভালোবাসার না এটা তোমাকে নিজের করে পাবার।তোমাকে নিজের কাছে রাখার।তোমাটে ডুবে যাওয়ার নেশা।”
“আমি এমন ভাবে তোমাতে আসক্ত। যে মানুষ নেশায় এতোটা আসক্ত হয়না।মাদকের আসক্তির থেকেও ভয়াবহ আসক্তি তুমি আমার।প্রেমের এমন এক অজানা আসক্তি তুমি আমার।যে নেশা ধরে যায় তোমার মাঝে থাকলে।তুমি আমার এমন এক “প্রেমময়_আসক্তি”💜🌸
এদিকে,,,
রুবা জানালার কাছে বসে আছে।আজকে দুপুরে আবার পরশুর লোকটার সাথে দেখা হলো হাসপাতালে।সে যে ডাক্তার রুবা তা জানতোনা।আর জানবেই বা কেমন করে প্রথম দেখায় যেই ভাবে বকা দিয়েছে বুজার কোনো উপায় ছিলোনা সে ডাক্তার না টিচার।সেদিন রুবাকে বাচিয়ে কত গুলো কথাইনা শুনালো বেচারিকে আরাভ।ভয়ে লজ্জায় রুবা কিছুই বলেনি সেদিন।আর আজকে আবার লোকটাকে দেখে বেশ চমকে গেছিলো রুবা।মুন ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়াল বিছানায় রাখতে রাখতে রুবার দিকে তাকিয়ে দেখে ও কি জানি চিন্তায় বিভোর।মুন এসে রুবার কাধে হাত দিয়ে বললো,
মুনঃকিরে কি চিন্তা করছিস?
রুবা মুনের কথায় ঘোর কাটে রুবা বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
রুবাঃকিছুনারে।ভাবছি রোদেলা কি অবস্থা।
মুনঃরোদু এখন ভালো আছে।ডাক্তার তো বললো।আর কালকে সকালেই আমরা ওর কাছে যাবো।
রুবাঃহুম আচ্ছা।আরে শোন আজকে যে লোকটা রোদেলাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলো তাকেতো আর দেখলাম না।লোকটাকে ধন্যনাদ দেওয়া দরকার ছিলো
মুনঃহ্যা ঠিক বলেছিস।আমারতো খেয়াল ছিলোনা।ইসসস লোকটা আমাদের উপকার করলো আর তাকে ধন্যবাদ ও দিলাম না।
রুবাঃহুম।কাশু কই?
মুনঃঘুমিয়ে গেছে এসেই।সারাদিন অনেক ক্লান্তি গেছেনা।
রুবাঃওহ হ্যা চল আমরাও শুয়ে পরি।
এরপর ওরা দুইজনেও ঘুমিয়ে পরলো।
সকালের দিকে আরাভ রোদেলাকে দেখতে ওর কেভিনে আসে।কেভিনে এসে দেখে আদ্রিয়ান রোদেলার একটা হাত নিজের মাঝে নিয়েই ঘুমিয়ে আছে মাথা বেডে দিয়ে।আরাভ সেটা দেখে নিজ নিজ মনে বলে,
আরাভঃকতটা পাগল তুই ওর জন্য আদ্রু।যে আদ্রু কোনো মেয়েকে পাত্তা দিতোনা।আজ সে একটা মেয়ের জন্য এতোটা পাগল।এতোটা ভালোবাসে একটা মেয়েকে।উপরওয়ালার কাছে একটাই দোয়া তোকে আর রোদেলাকে যেনো সে আলাদা না করে।তাহলে যে তুই মরে যাবি।
আরাভ আসতে করে এসে আদ্রিয়ানকে কয়েকবার ডাক দেয়।আদ্রিয়ান ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলে তাকায়।আরাভ আদ্রিয়ানকে বলে
আরাভঃআদ্রিয়ান উঠে পর।তোর এখন যাওয়া লাগবে।একটু পর রোদেলার বান্ধুবিরা চলে আসবে।ওঠ তাড়াতাড়ি।
আদ্রিয়ান আরাভের কথা শুনে উঠে পরে।উঠে রোদেলার দিকে তাকায় একবার।
আরাভঃকিছুক্ষনের মাঝে ওর জ্ঞান ফিরবে।
আদ্রিয়ানঃহুম আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাচ্ছি।
আদ্রিয়ান চলে যেতে নিলে আরাভ বলে,
আরাভঃআদ্রু শোন।
আদ্রিয়ানঃহ্যা বল।
আরাভ আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
আরাভঃতুই জানতিসতো তুই বিডিতে আসলে তোর শত্রুরা তা না জেনে থাকবেনা।আর জানার পর হাত পা গুটিয়ে তারা বসে থাকবেনা।তারা তো জানে তোর দুর্বলতা রোদেলা।সেখানেই তারা আঘাত করেছে।তুই সব জেনেও ওকে কেন তোর কাছে নিচ্ছিস না।
আদ্রিয়ানঃআমি সবই জানি।যখন সময় আসবে তখন আমি ওকে ঠিক আমার কাছে নিয়ে আসবো।আর রোদেলা যখন সিলেট ছিলো তখন আমার ভয় কিছুটা হলেও কম ছিলো।কারন ওর বাবা আর ভাই ছিলো ওর পাশে।এখন ও ঢাকায় আসছে তাই আমি বিডি চলে এসেছি।আর আমি এখন থেকে আরো ওর সেফটি বাড়িয়ে দেবো।আর যে এই কাজটা করেছে তাকেও আমি ধরবো।
আদ্রিয়ান কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেলো আর আদ্রিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়লো আরাভ।
আদ্রিয়ান যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই রুবা,মুন, কাশফিয়া আসে।সাথে করে রোদেলার জন্য স্যুপ নিয়ে এসেছে।রোদেলার জ্ঞান ফিরবে কিছুক্ষন পরেই বলে জানিয়েছে আরাভ।আরাভ গতকাল খেয়াল করেনি রুবাকে।তবে আজকে সকালে খেয়াল করেছে সে রুবাকে।রুবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।সে আরাভের দিকে তাকায়নি একবার ও।কেমন লজ্জা লাগছে তার।আরাভ সেটা দেখে মুচকি হাসে।
আদ্রিয়ান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে চলে আসে সুইমিংপুলে ওর টুইংকেল আর টাইগারের কাছে।আদ্রিয়ান সুইমিংপুলের টাইসে এসে বসেছে তাকে দেখে টুইংকেল আর টাইগার ওর কাছে উঠে আসে।আদ্রিয়ান ওদের আদর করে দিচ্ছে।আর ওরা চুপ করে আদর নিচ্চে।পাশে দাঁড়িয়ে সায়মন তা দেখছে।তার কুমিড় গুলোকে দেখলেই ভয় লাগে।সেখানে আদ্রিয়ান তাদের সাথে বসে।আদ্রিয়ান ওদের আদর করার মাঝে সায়মনকে বলে,
আদ্রিয়ানঃসায়মন কিছু জানতে পারলে কে এমন করেছে?
সায়মনঃহ্যা স্যার।কোভরা গ্যাং এর লোক।
আদ্রিয়ানঃতাহলে বসে আছো কার জন্য। তুলে নিয়ে এসো।
সায়মনঃজ্বী স্যার।
আদ্রিয়ান ওদের আদর করে উঠে চলে আসে।এখন তার অনেক কাজ আছে।তার রোদেলাময়কে সেফ রাখা সব থেকে বড় কাজ এখন তার জন্য।
#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_৫
#নন্দিনী_চৌধুরী
৫.
বাটিতে করে রোদেলাকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে মুন।তার পাশে বসা রুবা আর কাশফিয়া।রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে অনেক সময় হয়েছে।জ্ঞান ফিরে প্রথমে সে বুজতে পারছিলোনা সে এখানে কেনো।পরে মুন তাকে সব খুলে বলে।যে অইদিন রাস্তায় কিভাবে সে পরেগেছিলো তার মাথায় আঘাত পেয়েছিলো।রোদেলা সব শুনে একটু চমকে যায়।একটা অচেনা লোক তাকে এভাবে সাহায্য করেছে যে ভাবতে পারেনি।রোদেলা স্যুপ খেতে খেতে মুনকে বললো,
রোদেলা:মুন ভাইয়া কি ফোন দিছিলো।কিছু জানাসনিতো আবার।
মুন:না তোর আমার পাগল মনে হয়।রাফসান ফোন দিছিলো কিন্তু আমি বলছি যে তুই ঘুমিয়ে আছিস সারাদিন অনেক ক্লান্ত ছিলি তাই এখন ঘুমাচ্ছিস।কাল সকালে ফোন দেয় যেনো।
রোদেলা:ভালো করছিস।ভাইয়া জানলে অহেতুক চিন্তা করতো বাবাও চিন্তা করতো।আমাকে বাসায় যেতে দিবে কবে?
মুন:ডাক্তার সেই বিষয়ে কিছু বলেনি।
রুবা:কিরে তুই রাফসান ভাইরে রাফসান ভাই না বলে নাম ধরে ডাকস কেন হুম্মম।
মুন:কোনোদিন শুনছস জামাইকে ভাই ডাকতে।এখন জামাইকে ভাই ডাকলে পরে কি তাকে জামাইভাইয়া ডাকবো।তাই এখন থেকে নাম ধরেই ডাকবো।
কাশফিয়া:জামাইভাইয়া নামটা জোস কিন্তু।এক দিকে ভাই ও পাবি একদিকে জামাই ও পাবি।সেই হবে কিন্তু মুন।
রোদেলা:আসলেই তোর তো ভাই নাই।তুই একদিকে জামাই পাবি আবার ভাইও পাবি।দুইটার শখ তোর পূরন হইবো।
মু:দূর।ভাল্লাগেনা তোরা সব সময় এমন করস।
মুনের গাল ফোলানো দেখে তিনজনে হেসে দিলো।ওদের হাঁসির মাঝে আরাভ কেভিনে আসলো।আরাভকে দেখে রুবা চুপ হয়ে যায়।আরাভ কেভিনে এসে রোদেলার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলে,
আরাভ:কি অবস্থা ভাবি, বলেই আরাভ জিহ্বায় কামড় দিলো।আর নিজে নিজেকে বললো,
আরাভ এইটা কি বললি তুই।এখন এই মেয়েটা কি মনে করবে।
রোদেলা আরাভের মুখে ভাবি ডাক শুনে বললো,
রোদেলা:ভাবি?
আরাভ মেকি হেসে বলে,
আরাভ:সরি আসলে মাত্র ভাবির সাথে ফোনে কথা বলে আসলামতো তাই আপনাকে ভাবি ডেকে ফেলছি।এনিওয়ে আপনার এখন কেমন লাগছে?
রোদেলা:আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আচ্ছা ডাক্তার ভাইয়া আমি বাসায় কবে যেতে পারবো?
আরাভ:আজকের দিনটা থাকতে হবে।কিছু টেস্ট করিয়ে দেখবো সব ঠিক আছে কিনা।আগামীকাল চলে যেতে পারবেন সমস্যা নেই।
রোদেলা:অহ আচ্ছা ঠিক আছে।
আরাভ একবার রুবার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো।এই সকালে তার মেয়েটার সাথে কি একটা কান্ডই না হলো ভাবতেই আরাভ মুচকি হাসলো।
সকালে কিছু ঘন্টা আগে,,,,
মুন আর কাশফিয়া রোদেলার কেভিনে অপেক্ষা করছিলো। আর রুবা কেভিনের থেকে বাহিরে এসেছে পানি নিতে।রুবা পানি নিয়ে হেটে হেটে যাচ্ছিলো। তখন আবার স্লিপ করে পরে যেতে নেয়। আর ওকে কেউ আবার ধরে ফেলে।রুবা তাকিয়ে দেখে আরাভ তাকে ধরে আছে।আরাভ রুবাকে সোজা করে দাড় করিয়ে বলে,
আরাভ:এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি হ্যা।দেখে শুনে হাঁটতে পারোনা নাকি।যখনি দেখি আকাশে তাকিয়ে হাঁটো।
রুবা আরাভের কথা শুনে মাথা নিচু করে বলে,
রুবা:স.সরি আসলে খেয়াল করিনি।স্লিপ করে পরে যেতে নিচ্ছিলাম।ধন্যবাদ আমাকে আবার ধরার জন্য।
রুবা কথাটা বলে চলে আসতে নিলে আরাভ পিছন থেকে বলে,
আরাভ:চেইন খোলা!
আরাভের কথা শুনে রুবা দাঁড়িয়ে যায়। আর অবাক চোখে আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,
রুবা:কি?
আরাভ আবার বলে,
আরাভ:চেইন খোলা।
রুবা:চেইন খোলা মানে কিসের চেইন খোলা?
আরাভ এবার রুবার কাছে এগিয়ে এসে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
আরাভ:তোমার জামার পিছনে চেইন অর্ধেক খোলা।
আরাভের কথা শুনে রুবা লজ্জা আর অবাকের সাথে পিছনে হাত দিয়ে দেখে আসলেই জামার চেইন খোলা।রুবা লজ্জায় শেষ।রুবা আরাভের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছেনা।আরাভ জিনিশটা বুজতে পেরে একজন নার্সকে ডাকে আর বলে রুবার ব্যাপারটা।নার্স রুবার চেইনটা আটকে দিলো।রুবা এক দৌড়ে চলে যায় কেভিনে।আর আরাভ রুবার এই অবস্থা দেখে হেঁসে দেয়।
সকালের ঘটনা মনে করে রুবাও এখনো লজ্জা পাচ্ছে।এই শয়তান চেইনটার খোলা দরকার কি ছিলো তাও আবার ওই ডাক্তারের সামনে।মুন রোদেলার কাছে থেকে গেছে আর রুবা কাশফিয়াকে কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছে।রুবা আর কাশফিয়া কলেজে এসে ক্লাস করে নিলো।রুবা কিছু জিনিশ কিনার জন্য পাশের ক্যান্টিনে গেলো।আর কাশফিয়া কলেজের ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে।তখন ওর চোখ যায় গেট দিয়ে আসা কাউসারের দিকে।কাউসার একটা নীল কালারের ক্রিকেট গেঞ্জি পরা।চুল গুলো ঘামে ভিজে আছে।কাশফিয়া হা করে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কাউসার সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওর বন্ধুদের কাছে চলে যায়।কাশফিয়া নিজ মনে মনে বলে,
কাশফিয়া:বাপরে এই কাউয়াতো সেই।নাম কাউয়া হলে মেলা ইস্টাইলিস।
রুবা জিনিশ কিনে কাশফিয়াকে নিয়ে হোস্টেলে গেলো ওরা রান্না করে নিয়ে যাবে মুন আর রোদেলার জন্য।
এদিকে,,,,,
আদ্রিয়ান বসে আছে ওর অফিসের কেভিনে।কোভরা গ্যাং এর লিডারের ব্যাপারে এখনো ও কিছু জানতে পারেনি।কে সে?কোথায় আছে।কিছুই জানতে পারেনি।আদ্রিয়ান সকালে আরাভকে কল দিয়ে রোদেলার খবর নিয়েছে।রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে শুনে আদ্রিয়ান অনেক খুশি হয়েছে।আদ্রিয়ান উঠে গিয়ে জানালার সামনে দাঁড়ালো।
“নেশামই তোমার এই একদিনের চুপথাকাটা আমাকে অনেক পুড়িয়েছিলো।ভাবতেই পারিনা তোমাকে এভাবে।আমার নেশামই সব সময় প্রানবন্ত থাকবে।তার সেই হাঁসি দুস্টুমি কথা বলা আমাকে বার বার তার নেশায় ফেলবে।নেশামই তোমাকে নিজের করে পাওয়ার নেশাটা বোড্ডো বেড়েগেছে।খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে আমাদের নেশামই।ভালোবাসি নেশামই।”
রোদেলারের বাড়িতে,,,
রোদেলার বাবা আর মা সোফায় বসা।রোদেলার বাবা অনেকক্ষন ধরে কিছু ভাবছে দেখে রোদেলার মা তাকে বললেন,
রোদেলা মা:কি ভাবছো তুমি তখন থেকে?
রোদেলার বাবা:ভাবছি মেয়েটাকে ঢাকা পাঠালাম একা একা সামলাতে পারবেতো।
রোদেলার মা:আরে ওর সাথে মুন,রুবা,কাশু আছে ওরা চারজন এক সাথে থাকলে কেউ ওদের কিছু করতে পারে নাকি।
রোদেলার বাবা:হে সেটাও কথা।আমি একটা কথা ভাবছিলাম।
রোদেলার মা:কি?
রোদেলার বাবা:এভার রাফসানের বিয়েটা দিয়ে দেই।ওর নিজের কম্পানি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।এখন ওকে বিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে।
রোদেলার মা:আমিও তাই ভাবছিলাম।তাহলেতো মেয়ে দেখতে হয়।
রোদেলার বাবা:মেয়ে দেখতে হবেনা মেয়ে আমার পছন্দ আছে।
রোদেলার মা:কিন্তু রাফসানকে একবার জিজ্ঞেশ করা উচিত না ওর কোনো পছন্দ আছে কিনা।হাজার হোক এই যুগের ছেলে থাকতেও তো পারে তাইনা।
রোদেলার বাবা:হ্যা তুমি ওকে আসলে জিজ্ঞেস করে আমাকে জানিও।
রোদেলার মা:আচ্ছা।
হাসপাতালে রুবা আর কাশু খাবার নিয়ে এসেছে।মুন প্রথমে রোদেলাকে খাইয়ে দিয়েছে।তারপর ও নিজে খেয়েছে।রোদেলাকে নার্স এসে মেডিসিন দিয়ে গেছে।মেডিসিন খেয়ে রোদেলার ঘুমিয়ে গেছে।রোদেলা ঘুমানোর পর আরাভ এসে ওদের তিনজনকে নিয়ে গেছে।ওরা তিনজন ওয়েটিং রুমে বসে ছিলো।ওদের ওয়েটিং রুমে দিয়ে আরাভ আদ্রিয়ানকে ম্যাসেজ দেয়। আদ্রিয়ান ম্যাসেজ পেয়ে মাস্ক আর টুপি পরে নেয় যেনো ওকে কেউ না চিনতে পারে।আদ্রিয়ান ওদের চোখের আড়ালে রোদেলার কেভিনে গেলো।রোদেলা ঘুমে থাকায় আদ্রিয়ানকে তো দেখতে পাচ্ছেনা।কিন্তু আদ্রিয়ান তার নেশামইকে দেখার পিপাসা মেটাচ্ছে।আদ্রিয়ান রোদেলার কাছে এগিয়ে ওর পাশে বসলো।আদ্রিয়ানের কাছে এখন রোদেলাকে বাচ্চা লাগছে।যে বাচ্চা কাচুমাচু হয়ে ঘুমিয়ে আছে।আদ্রিয়ান হালকা হেসে ওর কপালে একটা ছোঁয়া দিলো।
আদ্রিয়ান যেদিন প্রথম রোদেলাকে দেখেছিলো সেদিন তাকে একটা বাচ্চা লাগছিলো।একটা বাচ্চা মেয়ে একটা স্কার্ট ট্পস পরে দুই পাশে দুইটা ঝুটি করে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে।সেই সময়টাতেও আদ্রিয়ানের রোদেলাকে একটা বাচ্চা নেয়ে মনে হয়েছে।আদ্রিয়ান সেই প্রথম দেখায় কোনো মেয়েকে এতো নিখুঁত ভাবে চেয়ে দেখেছে।সেদিনের পর থেকেই আদ্রিয়ানের জীবনে তার নেশামই তার আসক্তি হয়ে গেছে।তার একমাত্র প্রেমময় আসক্তি।
আদ্রিয়ান রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,
“প্রথম দেখায় কেউ কাউকে এতোটা আসক্ত করতে পারে তা তোমাকে না দেখলে জানতাম না।জানো নেশামই অনেকে বলে মেয়েদের সাজে লাগে সুন্দর। কিন্তু আমি বলি একটা মেয়েকে হাঁসলে যতটা সুন্দর লাগে তার থেকে সুন্দর লাগতে পারেনা সাজলে।তোমার হাসির প্রেমে বহুবার পড়েছি।তোমার সব কিছুর প্রেমেই নতুন ভাবে নতুন করে পরি।”
#চলবে
ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।🙅♀️🙏
#চলবে