#প্রণয়ের_ত্রিভুবন
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ০৪
চৌরাস্তার মোড়টায় প্যাডেল চলতে শুরু করে এহমার। ফটাফট সিএনজি চালকে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে নেমে পড়ে পিহু। তার পিছনে দৌড়াতে শুরু করে। সেদিকে ধ্যান নেই এহমারের। আনমনে সামনে এগিয়ে চলছে। পিহু দৌড়াতে দৌড়াতে তার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে যায়। একসময় এহমারের ঠিক কাছে এসে দাড়ায়। তড়িৎ বেগে এহমারের কাছে এসে পৌঁছুনোয় জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে সে। হুট করে তার দিকে এক পলক তাকিয়ে নেয় এহমার। এতে কিছুটা ভরকে যায় পিহু। সাথে সাথে তার মাথা অন্যদিকে নাড়িয়ে একটা শুষ্ক ঢোক গিলে। এহমার একবার তাকিয়েই আবার অন্যদিকে তাকিয়ে চলতে শুরু করে। এতে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে পিহু। তার শরীর কালো কাপড় দিয়ে জড়ানো ছিলো যার দরুন তাকে চিনতে পারেনি এহমার। এহমার একটা গলির কাছে গেলে তার একদম কাছে চলে যায় পিহু। সাথে সাথে এহমারের কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ লাগিয়ে পিছন থেকে তাকে সজোড়ে ধাক্কা দেয়। ফলস্বরূপ একটু দূরেই ছিটকে গিয়ে পড়ে এহমার। তার হাতে থাকা ফোনটা মাটিতে পড়ে যায়। ফোনটা চটজলদি তুলে নেয় পিহু। ফোনের স্ক্রিন খুলতেই দেখে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক্ সেট করা আছে। উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে এহমারের দিকে তাকায় সে। এহমারের কপোল বেয়ে রক্ত পড়ছে। চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে কোকাচ্ছে সে। পিহু ছুটে তার কাছে যেয়ে তার ডান হাতের একে একে সব কটি আঙ্গুল দিয়ে লক্ খোলবার চেষ্টা চালায়। তর্জনী আঙ্গুলটা ছোয়া দিলে মুহূর্তেই খুলে যায় লক্। ফটাফট এহমারের নম্বর নিজের মোবাইলে টুকে নেয় পিহু। এহমারের একটু কাছে যেয়ে তাকে দেখতে চেষ্টা করে জ্ঞান আছে কি-না। তার কাছে যেয়ে দেখতে পায় সে নড়াচড়া করছে। আর দেরী না করে একটা টিস্যু পেপার এহমারের কপালে চেপে ধরে। পিহুর মুখশ্রী চাদরটা দিয়ে আড়াল করা। হঠাৎ এহমার উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করে। তার বাহুদ্বয় ধরে উঠিয়ে দিয়েই এক ছুটে সেখান থেকে পালিয়ে যায় পিহু। সামনে একটা রিকশা ডেকে রিকশাওয়ালাকে বলে এহমারকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। আবার দৌড়ায় পিহু। এখন এই জায়গাটায় থাকাটাই সবচেয়ে বড় রিস্ক।
——————————-❀
সে তখন থেকে এ রুম থেকে ও রুমে পায়চারী করেই চলছে শুভ্রিলা। কপালে চিন্তার রেশ ফুটে রয়েছে। বারবার জল খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছে। পিহুর ফোনে ট্রাই করেও তাকে পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে বাইশ+ টেক্সট করে ফেলেছে তাকে। তবে, পিহু সিনই করে নি।৷ ম্লানমুখে বেডে বসে পড়ে শুভ্রিলা। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম চকচক করছে। দু’হাত ইচ্ছে মতো মচড়িয়ে চিন্তা করছে, খারাপ কিছু হলো না তো?’ আবার গলা শুকিয়ে যায়। ফটাফট আরেক গ্লাস জল খেয়ে নিজেকে সংযত করে। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে। হুড়মুড়িয়ে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে শুভ্রিলা। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে পিহুকে জিজ্ঞেস করে,
–‘এ__এই ফোন ধরছিলানা কেন? কতোগুলা টেক্সট করেছি জানো তুমি? ‘
–‘আরে রাখো টেক্সট ফোন, নাম্বার তো জোগাড় হয়েছে বাট একটা ব্যাড নিউজ আছে।’
–‘কী ব্যাড নিউজ? ‘
–‘ওই তোমার প্ল্যান মোতাবেক যখন এহমারকে ধাক্কা দিলাম তখন একটা খাম্বার সাথে মাথায় বাড়ি লাগে। কপালে বেশি লাগায় সেখান থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে!’ ভয়ে ভয়ে কথাগুলো উগলিয়ে দেয় পিহু। পিহুর কথা শুনে শুভ্রিলার হার্টবিটটা যেনো তড়িৎ বেগে বেড়ে যায়। নিজেকে সামাল দিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,
–‘তারপর কি করলা তুমি?’
–‘তারপর মানবতার খাতিরে একটা টিস্যু ধরিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে আসতে হলো। একটা রিকশা ডেকে দিয়েছিলাম। এখন যে কি অবস্থা কে-জানে!’
–‘ওর নাম্বারটা দাও তো!’ শক্ত হয়ে বলে শুভ্রিলা
–‘ আচ্ছা’
নম্বরটা নিয়ে আর দেরী না করে এহমারের নম্বরে ফোন লাগায় শুভ্রিলা। কি বলবে, সে নিজেও জানে না। তবে এই মুহূর্তে এহমারের খোঁজ নেওয়াটাই তার কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য। ফোনটা কানে লাগিয়ে পাথর হয়ে অধির আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করতে থাকে শুভ্রিলা। নাহ, নম্বরটা বন্ধ দেখাচ্ছে! এহমারের আরো কিছু হয় নি তো? ব্যাপারটা মাথায় আনতেই একরাশ বিষাদ জেঁকে ধরে তাকে। চোখের কার্নিশে নোনা জল এসে জড়ো হয়। তারই জন্য ছেলেটার..!
নিজেকে অপরাধী বোধ হয় শুভ্রিলার।
—————————–❀
হন্তদন্ত হয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে শুভ্রিলা। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে তার। পিহুকে ফোন করলেও ব্যস্ত পাচ্ছে বারবার। এহমারের প্রতিদিনের বসা বেঞ্চটার দিকে দৃষ্টি ক্ষেপ করেে সে। হলে শুভ্রিলা এবং আরো একটি মেয়ে রয়েছে। এক সময় শুভ্রিলার এমন রূপ দেখে মেয়েটা প্রশ্ন করেই ফেলে,
–‘এই যে! তুমি কি কোনো কারণে ডিপ্রেসড্ ? তোমার ফেইসের লুক এরকম কেনো? ‘
–‘না, না তেমন কিছুই না। ওই আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তো সে জন্য আরকি!’
বাধ্য হয়ে মিথ্যে বলে দিতে হয় শুভ্রিলাকে। আর এ ছাড়া উপায় ছিলো না তার কাছে। কথাটায় যে ভেজাল আছে তা শুভ্রিলার গলা শোনেই বোঝা যাচ্ছিলো। মেয়েটা হঠাৎ উঠে এসে তার কাছে বসে,
–‘কি হয়েছে সত্যি করে বলো তো! ‘
–‘আরেহ! আমার একটু জ্বর ছিলো, নাথিং এলস্।’ আবারও আড়ষ্টতার সঙ্গে বলে শুভ্রিলা। মুখে ম্লান একটা হাসি। খানিক বাদেই পিহু চলে আসে। শুভ্রিলার পাশে ব্যাগটা রেখে দেয়। তার মুখেও বিষন্নতা বিরাজিত।
পিহু শুভ্রিলার হাতে হাত রেখে বলে,
–‘এহমারের সাথে এরকম কিছু করা উচিত হয় নি। আমি জাস্ট তোমার কথা রাখতেই করেছি। নয়তো আমার দ্বারা এসব পসিবল হতো না!’
–‘এহমারের কি খুব লেগেছে? ‘ অসহায়ের কন্ঠে প্রশ্ন করে বসে শুভ্রিলা।
–‘কপাল ফেটে গিয়েছে মানে বুঝতেই পারছো!’
.
.
.
এক সময় তাদের অবাক করে দিয়ে হলে প্রবেশ করে এহমার। শুভ্রিলার চক্ষুজোড়া কপালে গিয়ে ঠেকে। সাথে পিহুরও। এহমারের কপালে সাদা ব্যান্ডেজ করা। কপালের ডান সাইডটায় লেগেছে। ফুলে যাওয়া দেখে বুঝতে পারে শুভ্রিলা। তবে, ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড খুশি সে। এহমার শুভ্রিলা আর পিহুর দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে। অতঃপর স্বাভাবিকভাবেই পেছনের দিকের বেঞ্চটায় যেয়ে বসে। এহমারকে দেখে কাঁপা কন্ঠে শুভ্রিলা জিজ্ঞেস করে,
–‘এহমার! আপনার কপালের ব্যাথা কমেছে? ‘
–‘কি হয়েছে সেইটেই তো জিজ্ঞেস করলেন না, মিস.শুভ্রিলা?’
–‘ওহ, হ্যা! কি হয়েছে আপনার কপালে? মনে হচ্ছে আঘাত পেয়েছেন খুব জোড়ে? ‘ নিজের বোকামি কথায় ফ্যাসাদে পড়ে যায় শুভ্রিলা।
–‘তা পেয়েছি।’ কথাটা বলার সময় একটু রেগে যায় এহমার৷ তা বুঝতে পারে শুভ্রিলা আর পিহু। আর কথা বাড়ায় না তারা। দু’জনেই নিজেদের মুখে চাওয়াচাওয়ি করে ।
—————————-❀
সব ক্লাস শেষে ভার্সিটির লাইব্রেরীতে ঢু মারতে যায় পিহু। শুভ্রিলা ইতোমধ্যে চলে গিয়েছে। প্রকান্ড লাইব্রেরীটায় সানন্দে ঢুকে পড়ে পিহু। বাহিরের থাকা পোস্টারে দেখেছিলো লাইব্রেরীর কালেকশানে প্রায় এক হাজার প্লাস বই আছে। বইয়ের তাকগুলোতে ঘুরে ঘুরে বই দেখতে থাকে পিহু। আরেক দিকে যাবে এমন সময় তার হাত ধরে তীব্রভাবে কেউ হেঁচকা টান দেয়। পিহু কিছু একটা বুঝে ওঠার আগেই এহমারের কাছে চলে যায়। এহমারকে দেখা মাত্রই তার হাত এহমারের হাত থেকে ছুটিয়ে নেয়। জোড় দিয়ে বলে,
–‘এরকম হাত ধরে টান দেওয়া কোন ধরনের অসভ্যতামি? আর এভাবে টানার মানেই বা কি?
পিহুর কথায় মুখে বাঁকা হাসি দেয় এহমার যেটা দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় পিহু। রীতিমতো ঘামতে শুরু করে সে। বুকের ভেতর এক ঝাক ভয়েরা আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। তাকে আরও এক ধাপ ভরকে দিয়ে এহমার বলে,
–‘চোরের মায়ের বড় গলা দেখছি! কাল আমাকে ওরকম ধাক্কা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিলে তারপর কি করলে? মোবাইল থেকে নাম্বার নিলে। আমি একটা মানুষ ওখানে কাতরাচ্ছিলাম মাথা ফেটে যাওয়ার যন্ত্রনায়, তোমার বিন্দুমাত্র মায়াদয়া হলো না? আর কি ভেবেছো তোমাকে দেখিনি? হে হে! তোমাকে পিছু নেওয়ার সময়ই দেখেছিলাম। হ্যা, আমি চাইলে সেদিনই তোমার নামে কেস করতে পারতাম। বাট আমি করিনি। কারণ, আমার মন চাচ্ছিলো তোমাকে নিজের হাতে শাস্তি দেই। এখন বলো কেনো এমন করলে? ‘
দাঁত কটমট করতে করতে বলে এহমার। প্রচন্ড রেগে গিয়ে চোয়াল শক্ত করে নেয়। এহমারের রক্তিম চোখ জোড়া দেখে ভয়ে কলিজার পানি শুখিয়ে যায় পিহুর। কোনো রকমে ঠোঁট ভিজিয়ে বল,
–‘কি বলছেন এহমার? আ__মি কেনো আপনার সা__থে এমন করতে যাবো?’
–‘এখনও নিজের দোষ স্বিকার করছো না? ওয়েট… (পকেট থেকে টিস্যু বেড় করে) এটা? এখন নিশ্চয়ই বলবে এটা আমার টিস্যু ছিলোই না? তাহলে এখানে তোমার পারফিউম এর স্মেল কেনো? ‘
–‘আ__আমি জানি না!’ ভয়ে ঠোঁট কাঁপছে পিহুর।
–‘তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি তো! তুৃমি এমনি এমনি স্বিকার করার বান্দা নও। বুঝে গেছি যা করার আমাকেই করতে হবে…
পুলিশের নম্বরে ফোন লাগাতে শুরু করে এহমার। ভয়ে কেঁদে ওঠে পিহু। এহমারের হাত ধরে বলে,
–‘প্লিজ! এরকম কিছু করবেন না।’
পিহুর কথায় জয়ীর হাসি দেয় এহমার। পিহু আবার বলতে শুরু করে,
–‘ হ্যা, আমিই করেছি আপনার সাথে এমন। কারণ…
–‘কারণ? ‘ পিহুর দিকে পরিপূর্ণ নজর দেয় এহমার।
চলবে,,,
( ১২৫০+ শব্দের পর্ব দিয়েছি। সবাই রেসপন্স করবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার্হ দৃষ্টিতে দেখবেন 💗)