প্রণয়ের ত্রিভুবন পর্ব ৫

#প্রণয়ের_ত্রিভুবন
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ০৫
পুলিশের নম্বর ডায়াল করে ফোন লাগাতে শুরু করে এহমার। ভয়ে কেঁদে ওঠে পিহু। এহমারের হাত ধরে বলে,

–‘প্লিজ! এরকম কিছু করবেন না।’
পিহুর কথায় জয়ীর হাসি দেয় এহমার। পিহু আবার বলতে শুরু করে,
–‘ হ্যা, আমিই করেছি আপনার সাথে এমন। কারণ…

–‘কারণ? ‘ পিহুর দিকে পরিপূর্ণ নজর দেয় এহমার।
পিহু শুষ্ক ঢোক গিলে বলতে শুরু করে,

–‘ শুভ্রিলা! শুভ্রিলাই আমাকে ফোর্স করেছে আপনার সাথে এমন করতে…
পিহুর কথা শুনে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম হয় এহমারের। পিহুকে আরো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে,

–‘হোয়াট? শুভ্রিলা? ওই যে শুভ্রিলা তো ওই মেয়েটাই যে কিনা গত পরশু আমাকে সরি বললো?’
-‘হ্যা’
–‘ তো ওই মেয়েটা তোমাকে কি করতে ফোর্স করেছিলো? ‘ চোয়াল শক্ত করে বলে এহমার।
–‘ সেদিন আপনার কাছে নাম্বার চেয়েছিলো কিন্তু আপনি দেন নি। আপনি তাকে বিশেষ একটা পাত্তাও দিতেন না। আর এটাই ক্ষোভ ছিলো তার। রেগেমেগে আপনাকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর আপনি নাকি খুব বোকা সোকা ছেলে। কোনো কিছু বুঝতে পারবেন না তাই আমাকে বলেছিলো। আপনাকে ফলো করতে। এতে পড়ি কি মরি করে আমাকেও ছুটতে হলো। যার দরুন আজকে আমি চোখে কেবল শর্ষে ফুল দেখছি। আরম আপনি বললেন আপনাকে সেদিন এভাবে ফেলে রেখে কেনো চলে গিয়েছিলাম? সেটা ছাড়া আর কি উপায় ছিলো আমার কাছে আপনিই বলুন!’

কথাগুলো বলার এক পর্যায়ে পিহুর গলা ভারী হয়ে আসে। হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয় সে। ফ্যাসাদে পড়ে যায় এহমার। চারিদিকে লক্ষ্য করে কেউ তাদের দেখছে কি-না। নাহ, কেউ দেখছে না। পিহুকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে যায় সে। পিহুর দিকে টিস্যু পেপার এগিয়ে দিয়ে বলে,

-‘কান্না থামাও এবার। আর আমি বুঝছি না তোমাকে একজন এরকম কাজ করতে বললো, আর তুমি অনায়াসেই করে ফেললে? আই থিঙ্ক, এভাবে তোমার দ্বারা আরো বড় বড় ধরনের ক্রাইম করা সম্ভব। ‘
এহমারের কথায় পিহুর চোখ রসগোল্লার ন্যায় আকার ধারন করে। গর্জে ওঠে এহমারকে বলে,

–‘ না, না এসব উল্টা পাল্টা ভাববেন না। শুভ্রিলার মন আমি ভাঙতে চাইনি। আই প্রমিস, আমি কক্ষনো আর এমন করবো না ভাইয়া। আমি জানি আপনার খুব লেগেছে। তবে, আমার অবস্থাটাও একবার বুঝুন!’

কথার কোনো প্রতিত্তোর করে না এহমার। তার কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। কিছু একটা ভেবে চিন্তে পিহুর দিকে দৃষ্টি দেয়। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,

–‘আই ক্যান ফরগিভ ইউ বাট, আমারও একটা শর্ত আছে।’

–‘কী__কী শর্ত?’ ভাঙা কন্ঠে বলে পিহু।

–‘তুমি ওকে ওই শুভ্রিলাকে জানতে দিবে না যে, তুমি ধরা পড়ে গেছো। আজকের ব্যাপারেও কিছু বলবে না। কালকে আসুক ও তারপর উচিত মতো শায়েস্তা করবো। কিন্তু ক্লাস শেষে ও বাসায় ফিরে গেলে সব মাটি হয়ে যাবে। তাই তুমি তাকে নিয়ে লাইব্রেরীর ওই প্রান্তে থাকবে।’ এহমারের দেখানো দিকটায় দৃষ্টি আরোপ করে পিহু। থমথমে গলায় এহমারকে বলে,

–‘ শুভ্রিলাকে কি করবেন আপনি?’
বাঁকা হাসি দেয় এহমার। নিজেকে আস্বস্ত করে বলে,

–‘তুমি কি ভাবছো, আমার উদ্দেশ্য খারাপ হবে? হতেও পারে। বাট অতো স্ট্রেস ও নিও না। ও সেইফ থাকবে। আমি জাস্ট জবাবদিহিতা করাবো কেনো ও এরকম করলো!’
এহমারের ঠোঁটের কোণে এখনও বাঁকা হাসিটা ঝুলে রয়েছে। ভীতিকর চাহনি দিয়ে এক ছুটে সেখান থেকে কেটে পড়ে পিহু।

——————————-✰‍
প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষে ৫৬ নম্বর হলটার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো শুভ্রিলা। আজ মনটা খারাপ তার্। কেননা পিহু আজ ভার্সিটিতে আসেনি। যদিও অন্য সবার সঙ্গে মিশতে ভালোই লেগেছে তবুও পিহুকে ছাড়া কেন জানি একা একা ফিল আসছিলো। আর ক্লাসগুলোও কেমন বোরিং বোরিং কাটছিলো।
অবশেষে ছুটি হলে আর দেরী না করে বাসায় যেতে শুরু করে সে। যেতে যেতে ৫৬ নম্বর হলটার পাশে থাকা বিশাল লাইব্রেরীটার দিকে দৃষ্টি আটকে যায়। যদিও বা বই পড়ার দিকে তার তেমন একটা আগ্রহ নেই তাও ভাবলো একবার চোখ না বুলালেই নয়। অতএব, সেখানে যেতে শুরু করে শুভ্রিলা। সেখানে যেয়ে ভেতরে ঢুকে অর্পিতাকে দেখতে পায় সে। অর্পিতা রিডিং কর্নারটায় একটা টেবিলে বসে বই পড়ছে৷ তাকে দেখে ‘অর্পিতা’ বলে হালকা চেচিয়ে ওঠে শুভ্রিলা। অর্পিতা শুভ্রিলার দিকে দেখেই মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

–‘কিরে? এখানে তুই ও? যা একটা তুফানি থ্রিলার ওয়ালা বই নিয়ে আয়। আমিও পড়ছি বেশ লাগছে।’
সম্মতিসূচক মাথা হেলিয়ে বইয়ের তাকগুলোর দিকে যায় শুভ্রিলা। আজ একটু টাইম স্পেন্ড না করলেই নয়! মনে মনে ভাবে সে। তাকের কাছে যেয়ে থ্রিল সম্পর্কিত বইগুলো নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলো সে। ঠিক আার নম্বর তাকটার কাছে যেয়ে বইগুলো দেখবে এমন সময় পায়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে ধরে সে। শুভ্রিলা চোখদুটো খিঁচে বন্ধ করে নেয়। কিছু বাদেই তার মনে হলো, সে মাটিতে পড়েনি বরং শূন্যে ভাসছে। চোখ খুলতেই চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে যায় তার। একি সে এহমারের বাহুদ্বয়ে নিবদ্ধকৃত! সাথে সাথে এক রাশ লজ্জা আর অস্বস্তিতে ঘিরে ফেলে তাকে। এহমার তার দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দেয়। ওমনি যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে শুভ্রিলা। দু’হাতে ঝাটকা দিয়ে এহমারকে দূরে ঠেলে দেয়। দিয়ে হনহনিয়ে চলে যেতে শুরু করবে এমন সময় এহমার তার হাত ধরে টান দিয়ে তাকে সোজা দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। এহমারের স্পর্শে শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে যায় শুভ্রিলার। সাথে সাথে লোমগুলো দাড়িয়ে যায় তার। এই মুহূর্তে নড়াচড়ার ক্ষমতা আর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। মাথার নিউরনগুলো স্থির হয়ে গেছে রীতিমতো। একটা রোবটের মতো দাড়িয়ে আছে সে।
এক সময় অনেক কষ্টে গলা থেকে আওয়াজ বেড় করে, ‘ছা__ছাড়ুন’
আবারও বাঁকা হাসি দেয় এহমার। আজ হাসতে ভাল্লাগছে খুব! যেনো বাঘ তার শিকার হাতে পেয়ে গেছে।

–‘আমি নাকি ভীতু? আমি নাকি অনেক বোকা সোকা? তাহলে এখন কেনো ভয় পাচ্ছো মিস. শুভ্রিলা চৌধুরী? আমি নাম্বার দেই নি, তোমার দিকে দৃষ্টি দেইনি, তোমাকে পাত্তা দেইনি তাই বলে এতো জঘন্য উপায়ে নাম্বার ছিনিয়ে নিতে বলেছো? তাও আবার নিজের সো কলড্ ফ্রেন্ডকে দিয়ে? তুমি এতোটা ম্যানারলেস একটা মেয়ে তা জানা ছিলো না। শেইম অন ইউ! ‘

কথা শেষে চোখ রাঙায় এহমার। এহমারের কথায় কিছুটা ভরকে ও রেগে যায় শুভ্রিলা। উলটা সে গর্জিয়ে ওঠে,

–‘তো কি করতাম আমি হ্যা? সব দোষ আপনার বুঝছেন? না আপনি নম্বর দিতে বাহানা করতেন না আমি এরকম করতাম। আর আমাকে এ্যাভোয়িড করতে কে বলেছিলো হ্যা? ছেলেরা যেখানে পাত্তা পাওয়ার জন্য আমার আগে-পিছে ঘুরে বেড়ায়, সেখানে আমি আপনার পিছে ঘুরে বেড়িয়েছি তবে, হতচ্ছাড়া আপনি পাত্তাই দিলেন না!’ গড়গড় করে কথাগুলো উগলিয়ে দেয় শুভ্রিলা। এতে যেনো তজ্জব বনে যায় এহমার। এহমার চোখ পাকিয়ে ধীরে ধীরে শুভ্রিলার আরো কাছে আসতে শুরু করে। এতে খানিকটা ভরকে যায় শুভ্রিলা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here