#সত্যি_তোকে_অনেক_ভালোবাসি💖💖
#Part : 9
#ইসরাত_জাহান_প্রভা
রাতে মিরা শুভর খাবার নিয়ে শুভর রুমে এলো।।
মিরা: বাবু কৈ তুমি?(শুভকে ডাকতে লাগলো)
শুভ বেলকুনিতে বসে আকাশ দেখছে।।মিরা তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।।
মিরা: একা একা আকাশ দেখছো??(হালকা হেসে)
শুভ: মনটা খারাপ থাকলে একা একাই আকাশ দেখি।।(মৃদু স্বরে)
মিরা শুভকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি থাকতে আমার বাবুটার কেনো মন খারাপ??
শুভ মিরাকে ছেড়ে দিয়ে মিরার হাত ধরে বললো,তুমি কী জানো আমি ঐ দিন তোমার সাথে কেনো শারীরিক সম্পকে গিয়েছিলাম??
মিরা: শুভ থাক না ঐ সব।।(শক্ত করে শুভর হাত ধরে)
শুভ: না মিরা আজ তোমায় জানতেই হবে সবকিছু।।(মিরার থেকে একটু দূরে গিয়ে)
মিরা শান্ত হয়ে সবকিছু শোনার অপেক্ষায় রইলো।।
শুভ একটা দীঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো।।
শুভ: সেই ছোট বেলা থেকেই দেখছি মা বাবা সব সময় আলাদা আলাদা থাকতেন।।আমি কখনো মার কাছে থাকতাম আবার কখনও বাবার কাছে থাকতাম।।আবার পায়েল হওয়ার পরও বাবা মা সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকতেন।।আমাকে আর পায়েলকে রেখে দেশের বাইরে যেতেন কাজে।।
আমি নিজেকে সামলিয়ে তো নিয়েছিলাম কিন্তু আমার বোনটা সামলাতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।।ও সব সময় মা,মা,বাবা,বাবা বলে সারাবাড়ি ছুটে ছুটে বেড়াতো।।ঘরের প্রত্যেকটা কোণে খুঁজে খুঁজে বেড়াতো।।যখন পেতো না খুঁজে তখন ছুটে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বলতো,ভাইয়া আমি মায়ের কাছে যাবো।।বাবা কোথায় গিয়েছে ভাইয়া??আমি পায়েলের কান্না সহ্য করতে পারতাম না তাই ওকে থামাতে আমার অনেক বুঝতে হয়েছে।।আবার যখন মা,বাবা বাহিরে থেকে আসতো তখন তারা এতটাই ক্লান্ত হয়ে যেতেন যে আমাদের কী অবস্থা তারা দেখার সময় একদম পেতেন না।।কাদের চাচাই আমাকে আর আমার বোনকে মানুষ করেছে।।কিন্তু সেই কাদের চাচাই কয়েক বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে যান অনেক দূরে।।আমি তখন এতটাই ভেঙ্গে পড়ি যে আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।।ছোট বেলা নিশান আমার সাথে কয়েক বছর থেকে ওর চাচার কাছে চলে যায় বিদেশে।।সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসে আমাদের ব্যবসায় যোগ দেয়।।নিশান থাকতেও আমি একাকি বোধ করতাম না।।নিশান চলে গেলেও পায়েল আর কাদের চাচা ছিলো আমার সাথে।।কিন্তু কাদের চাচাও চলে গেলো না ফেরার দেশে পায়েল তার স্বপ্ন পূরনের জন্য দেশের বাহিরে গেলো।।আমি আবার একা হয়ে গেলাম।।মা বাবা দেশের বাহিরে একদম সেটেল হয়ে গেলো।।মাঝে মাঝে যেতাম।।আমায় ওখানে থাকতে বলেছিলো কিন্তু আমি আর থাকি নি।।আমার এখানে ছাড়া কোথাও ভালো লাগে না।।যখন তুমি এলে তখন আমার জীবন আবার স্বাভাবিকে ফিরে যায়।।কিন্তু আমার তোমাকে হারাবার খুব ভয় ছিলো।।আমি তোমার প্রেমেতে পুরোই পাগল মিরা।আমি বাধ্য হয়ে তোমাকে পেতে এমনটা করেছি মিরা।।আমি তোমাকে কখনও হারাতে চাই না মিরা।।আমাকে ক্ষমা করে দিও।।আর আমাকে কখনও ছেড়ে যেও না।।(হাঁটু গেড়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো)
মিরা দৌড়ে এসে শুভকে তুলে তার বুকে আগলে নিলো।।
মিরা: আমার বাবুটা এভাবে কাঁদছে কেনো??আমি তো আছি তোমার সাথে শুভ।।কথাদিলাম তোমাকে মৃত্যুর আগ পযন্ত তোমার সাথে থাকবো।।কেঁদো না প্লিজ।।(শুভকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে)
শুভ কেঁদেই যাচ্ছে।।মিরা বুঝেছে যে কতটা ভেঙ্গে পড়েছে শুভ।।এভাবে শুভকে কাঁদতে দিলো মিরা।।যাতে সে তার ভুলটা বুঝতে পারে আর এটা বিশ্বাস করে যে তার মিরা তার সাথে শেষ নিঃশ্বাস পযন্ত আছে।।
…..
নিলয়ের রুমে মালিহা প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেলো।।চারদিকে শুধু বই আর বই।।
মালিহা: তোমার এত্তগুলা বই?(অবাক চোখে)
নিলয়: হুম।।বই তো আমার সব কিছু।।একে নিয়েই তো আমি বেঁচে আছি।।(পেছনে ফিরে মালিহাকে জবাব দিয়ে)
মালিহা: তা বলি বিয়ে টাও কী এইসব বই কেই করবে?(বিরক্ত নিয়ে)
নিলয়: বাহ!ভালো বলেছো তো।।এটা তো কখনও ইমাজিন করি নি।।ভাবতে হবে।।
মাহিলা কপালে হাত দিয়ে বললো,তুমি এতটা বোকা কেমনে হতে পারো??একদম বিরক্তিকর।।(হতাশা আর বিরক্ত নিয়ে)
নিলয়: এই মিরা আপুও এই কথা বলে।।তোমায় কী শিখিয়ে দিয়েছে নাকি?(অবাক হয়ে)
মালিহা: চুপ কর।।(ধমক দিয়ে)
নিলয় চুপ হয়ে গেলো আর বই গোছাতে লাগলো।।
মালিহা: আচ্ছা একটা কথা বলি?(মায়া নিয়ে)
নিলয়: বলো।।
মালিহা: তোমার কী বই ছাড়া আর চিন্তা নেই??আর কিছু নিয়ে ভাবনা নেই??
নিলয়: আছে তো।।(হাসি মুখে)
মালিহা: কী সেটা?(আকাঙ্কা নিয়ে)
নিলয়: কীভাবে এই সব বই পড়ে শেষ করা যায়,কীভাবে ভালো রেজাল্ট করা যায়,আপুকে দেখে রাখা যায় এই সব ভাবনা আছে।।দারুন না?(মালিহাকে প্রশ্ন করে)
মালিহার রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।।মালিহা রাগে বলে উঠলো,তুই একটা বলদা।।তুই থাক তোর বই নিয়া।।
এসব বলে রাগে হনহন করে বেরিয়ে গেলো মালিহা।।নিলয় হা করে মালিহার চলে যাওয়া দেখতে লাগলো।।
নিলয়:এই মেয়েটা এমন কেনো?আমি তো আমার ভাবনা বা পরিকল্পনাটাই বললাম।এমন করলো কেনো মেয়েটা?যাই হোক অনেক কিউট কিন্তু।।ধুর কী যে ভাবছি আমি।।(হাত দিয়ে মাথার পেছনে টালা দিয়ে)
…..
পায়েল: কী রে আপু!রাগে ফুলে আছিস কেনো??(মালিহার দিকে তাকিয়ে)
মালিহা: কোথায় থেকে এই সব বলদ গুলা আসে রে?(রাগে)
পায়েল: কার কথা বলছিস?(আশ্চায হয়ে)
মালিহা: ঐ যে নিলয়ের বাচ্চার কথা বলছি।।(প্রচন্ড রাগে)
পায়েল: ভাইয়া কী বিয়ে করেছে?(মজা নিয়ে)
মালিহা: খুন করে ফেলবো যদি বিয়ে করে তো।।(প্রচন্ড রাগে)
পায়েল: কী রে আপু ভাইয়ার প্রেমে টেমে পড়ছিস নাকি?(রহস্য হাসি নিয়ে)
মালিহা: আ…আ..আ..রে..কী..ব..ব…
পায়েল: থাক আর তোতলাইতে হবে না।।সব বুঝে গেছি আমি।।(হাসি মুখে)
মালিহা: কী বুঝেছিস?
পায়েল: তুই ভাইয়ার প্রেমে পড়েছিস।।(গানের সুরে)
মালিহা: ধ্যাত!!(লজ্জা নিয়ে)
পায়েল: ইস!কী লজ্জা পাচ্ছে দেখো তো!!
মালিহা: পায়েল কাউকে কিছু বলিস না প্লিজ।।(পায়েলের হাত ধরে)
পায়েল: আসো বাবু লাইনে আসো।।ট্রিট দিতে হবে তাহলে।।(ভাব মেরে)
মালিহা: আগে ওর কাছে থেকে প্রোপোজাল পাই।।কখন নিস বইন??(মায়া নিয়ে)
পায়েল: আচ্ছা ঠিক আছে।।তবে ভাইয়া কী তোকে ভালোবাসে??
মালিহা: আরে ওভাবে একদিনে ভালোবাসা হয় নাকি??
পায়েল: তাহলে তুই কীভাবে একদিনে ভালোবেসে ফেললি??
মালিহা: ওর হাসি,ওর কথা,ওর সরলতা আর ওর জড়িয়ে ধরা আমাকে তো পাগল করতেছে Just..(আবেগ নিয়ে)
পায়েল: কীহ!!কথা,হাসি,সরলতা বুঝলাম।।কিন্তু জড়িয়ে ধরা মানে??
মালিহা পায়েল কে সব খুলে বললো।।
পায়েল: কিন্তু সে তো পড়া নিয়েই ব্যস্ত।।তাকে নিজের করে নিতে পারবি?
মালিহা: হেল্প কর প্লিজ বোইন।।(মায়া নিয়ে)
পায়েল: হুম করবো।।আমার ভাইয়ের মাথা থেকে নেমেছিস তাই ভালো।।(খুশি হয়ে)
মালিহা: কীহ!!(রাগে)
পায়েল: আরে কিছু না।।ঘুমিয়ে পড় এখন(বিছানায় শুতে শুতে)
মালিহা: তোর ও যখন প্রেম হবে তখন দেখা যাবে!!
পায়েল: আসুক আগে।।তখন না হয় দেখা যাবে।।😁😁
…..
মিরা: শুভ এভাবেই কী কোলে শুয়ে থাকবে??রাত তো ১২ টা বাজে।।চলো খেয়ে নেমে।ঔষধ খেতে হবে তো!!!
শুভ: আর একটু থাকি?
মিরা: না একদম না।।চলো ওঠো।।(শুভকে ঠেলে তুলতে তুলতে)..
চলবে,,,,