সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব -০৮

#সত্যি_তোকে_অনেক_ভালোবাসি💖💖
#Part : 8
#ইসরাত_জাহান_প্রভা

প্রায় ১ টার দিকে কলিংবেল বেজে উঠলো।।সবাই ছাদে গল্প করছিলো।।শুধু মালিহা বসে বসে টিভি দেখছিলো।।মালিহা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই একটা অপরিচিত ছেলে তাকে জড়িয়ে ধরলো।।

: আপু,আপু,আপু আমি ভাসিটিতে টপ করেছি।।(খুশির আনন্দে )

মালিহা: এই ছেলে ছাড়ুন আমায়।।(ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে দিয়ে)

: ওহ সরি সরি।।মাফ করবেন আমায়।।আমি তো আমার মিরা আপুর কাছে এসেছি।।

মালিহা: সুন্দরী মেয়ে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তাই না?(প্রচন্ড রেগে)

: আপনি ভুল ভাবছেন।।আমি মোটেও বুঝে কাজটি করিনি।।(ক্ষমাপ্রাথী হয়ে)আমাকে মাফ করে দিবেন প্লিজ।।

মালিহা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না ছেলেটির কথা শুনে।।

মালিহা: আচ্ছা ঠিক আছে।।মন খারাপ করবেন না।।আপনি কে?(মৃদু ও আশ্চয স্বরে)

: আমি নিলয়।।মিরা আপু আমার নিজের বোন।।(খুশি হয়ে)

মালিহা: ওহ! ঐ মিরার ভাই আপনি?(আশ্চয হয়ে)

নিলয়: ঐ মিরা বলতে?

মালিহা: না কিছু না।।আচ্ছা আপনি এত খুশি কেনো??(প্রশ্ন করে)

নিলয়: আসলে আজকে ভাসিটির রেজাল্ট দিয়েছে।।পুরো ভাসিটিতে আমি প্রথম হয়েছি।।

মালিহা: বাহ!!খুব মেধা তো আপনার!!(আশ্চয হয়ে)

নিলয়: কী যে বলেন!!(লজ্জা পেয়ে)আপনি কে আপু?

মালিহা: ঐ আমি আপনার কোন দিক থেকে আপু লাগি?(প্রচন্ড রেগে)

নিলয়: ওহ!সরি আপু।।

মালিহা: ঐ আপনি আবার আমারে আপু ডাকতাছেন!!আমার নাম মালিহা।।

নিলয়: অনেক সুন্দর নাম আপনার মালিহা আপু।।(মিষ্টি হেসে)

মালিহা কিছুক্ষন নিলয়ের টোল পড়া হাসির দিকে তাকিয়ে থাকলো।।

মালিহা: (এত মিষ্টি হাসি ছেলেটার!!টোলটাও তো খুব কিউট)

নিলয়: আপু কী দেখছেন?(মালিহার কান্ড দেখে)

মালিহা: এ আপনি কী বলদ?আপু আপু ডাকছেন কেনো আমায়?আমার আর আপনার বয়স প্রায় কাছাকাছি।।So call me Maliha..got it?

নিলয়: আপনি ১ বছরের ছোট হলেও আপু আর ১ বছরের বড় হলেও আপু।।আমার জন্মের ১ দিন আগে হলেও আপু ১ দিন পরে হলে ছোট আপু।।খুব সুন্দর না বিষয় টা?(ফ্যালফ্যালে মালিহাকে প্রশ্ন করে)

মালিহা: সত্যি আপনি পারেন ও বটে।।(হাসতে হাসতে)

নিলয় এই প্রথম তার আপু কে ছাড়া এই মেয়েটাকে খুব ভালোভাবে দেখছে।।এত সুন্দর,এত মিষ্টি আর এত কিউট কেউ কীভাবে হয়??

মিরা: আরে ভাই!!কখন এলি?(নিচ থেকে নামতে নামতে)

চমকে গেলো মালিহা ও নিলয়।।

নিলয়: এই তো একটু আগেই আসলাম।(মিরার দিকে তাকিয়ে)

মালিহা তার রুমে যাওয়ার সময় ফিসফিসিয়ে মিরাকে বললো,তোমার ভাইকে সামলাও।যাকে তাকে জড়িয়ে ধরে কেনো?

মিরা নিলয়ের সামনে এসে নিলয়ের কানটা জোড়ে টেনে ধরলো।।

নিলয়: আপু লাগছে তো।।ছাড়।।(ব্যাথা কাকুতি মিনুতি করে)

মিরা: মালিহাকে জড়িয়ে ধরেছিলি কেনো??পড়াশোনা বাদে তোর সুন্দরী মেয়েদের প্রতি আগ্রহ জমলো কীভাবে??

নিলয়: আপু তুই ভুল ভাবছিস আমাকে।।ছেড়ে দে কানটা আপু।।(ব্যাথায়)

মিরা নিলয়ের কান ছেড়ে দিয়ে বললো,কী হয়েছে বল।।

নিলয়: আরে আজ ভাসিটির রেজাল্ট দিয়েছে।University top করেছি আমি ।তাই আমি তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।।বেল বাজতেই ঐ আপু টা কে বলে উঠলো।।আমি গলার আওয়াজ শুনে ভাবছিলাম তুই।।তাই তো দরজা খুলতেই জড়িয়ে ধরেছি।।ওনার কাছে তো ক্ষমাও চেয়েছি।।(হাত দিয়ে কানটা বোলাতে বোলাতে)

মিরা: তোর এই স্বভাব আর গেলোই না ভাই।।(মুচকি হেসে)

নিলয়: কী করবো বল ছোট বেলা থেকেই তো তুই আমার মা আর তুই আমার বাবা।।তোকে জড়িয়ে ধরবো না তো ঐ মালিহা আপুকে জড়িয়ে ধরবো??

মিরা: ওকেই তো জড়িয়ে ধরেছিস আজ।।(হাসতে হাসতে)

নিলয়: ও হ্যাঁ।।তাই তো।।আরে ওটা তো ভুলে ধরেছি।।

মিরা: যাইহোক।।মিষ্টি কৈ?(হাসি থামিয়ে)

নিলয়: এই যা!!তোকে জানানোর জন্য তাড়াহুড়া করতেই আনতে ভুলেই গেছি।।(মৃদু কন্ঠে)

মিরা: তাহলে তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় এখন।।

নিলয় মিষ্টি আনার জন্য বাহিরে গেলো।।মিরা ভেতরে যাবে ঠিক তখনি মালিহা তার সামনে এসে দাঁড়ালো।।

মালিহা: ওকে অতো জোড়ে কান মলা দিলা কেনো?(মায়ার সুরে)

মিরা: দোষ করেছে শাস্তি তো পেতেই হবে।।

মালিহা: ইচ্ছা করে তো করে নি।।

মিরা: তুমি তো বললে যাকে তাকে জড়িয়ে ধরে।।

মালিহা: আমাকে শুধু জড়িয়ে ধরেছিলো।।আর তো কেউ ছিল ন।।(মায়াতে)

মিরা: ওহ!মালিহা কী সব বলতেছো?একবার এটা বলছো তো আরেকবার ওটা।।কী এইসব?(বিরক্ত নিয়ে)

মালিহা: আমার মাথা বোধ হয় গেছে।।(মায়ার সুরে)

মালিহা চলে যেতে লাগলো।।মিরা চুপ করে বিষয়টা বুঝতে লাগলো।।কিন্তু কিছুই ভেবে পেলো না।।

….
বাসার সকলকে মিষ্টি খাওয়ালো নিলয়।।নিলয়ের রেজাল্টের উপলক্ষে অনু,শিলা,মিরা,পায়েল সুন্দর সুন্দর রান্না করতে লাগলো।।

নিশান অফিস থেকে ফিরে এসেছে।।নিলয়,শুভ আর নিশান গল্প করছে।।

…..
মালিহা: (শুভ আমার অনেক ভালো বন্ধু।।আমার ওকে ভালোলাগে।।কিন্তু আমার ভালোবাসা তো ও না।।আমার ভালোলাগা ও।।আর আমাকে তো ও ভালোবাসে না।।একপাক্ষিক ভালোবাসা তো বৃথা।।) ছাদে বসে এইসব কথা ভাবতেছিলো মালিহা।।

নিলয়: Hlw..মালিহা আপু।।কী করছেন?(মালিহার পাশে দাঁড়িয়ে)

মালিহা: এই আপনি প্লিজ আমাকে আপু বলবেন না।।আমি হাতজোড় করে বলছি।।(পেছনে ঘুরে হাতজোড় করে)

নিলয়: ছিঃ ছিঃ এমনটা করবেন না।।আচ্ছা এখন থেকে আর আপু বলবো না।।

মালিহা: ধন্যবাদ।।(মিষ্টি হেসে)

নিলয়: কিছু একটা বিষয় নিয়ে আপনি ভীষন চিন্তায় আছেন।।আপনার মিষ্টি হাসির পেছনে তা কেউ বুঝতে না পারলেও আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।।যদি সমস্যা না মনে করেন তাহলে শেয়ার করতে পারেন।।(হাসি মুখে)

মালিহা: আপনি এত্ত বোঝেন আমাকে?(রহস্যময়ী হাসি দিয়ে)

নিলয়: আমি তো আপনাকে আরো বুঝতে চাই….(বলেই থেমে গেলো)

মালিহা: আরোও বুঝতে চাই মানে??(ভ্রু কুঁচকে)

নিলয়: না মানে আপনার সমস্যার কথা জানতে চাই আর কি?(কপালের ঘাম মুছে একটু হেসে)

মালিহা: একি ঘামছেন কেনো এতো?(আশ্চয হয়ে)

নিলয়: ক..কৈ নাতো তো।।

মালিহা: আবার তোতলাইতেছেন কেনো??(আশ্চয হয়ে)

নিলয় একটা দীঘ দম ফেলে বললো,একটা কথা বলি??

মালিহা: হুম বলুন।।(আকাশের দিকে তাকিয়ে)

নিলয়: আমরা কী বন্ধু হতে পারি?(থেমে থেমে)

মালিহা: শুধু বন্ধু তো?(ভ্রু কুঁচকে)

নিলয়: ভালো বন্ধু।।(একটু হেসে)

মালিহা: না।।ভালো বন্ধু শুধু একজন হয়।।আর সেটা আছেই একজন।।সরি আমি আপনাকে ঐ জায়গা দিতে পারবো না।।(মুচকি হেসে)

নিলয়: ওহ আচ্ছা।।(মৃদু স্বরে মন খারাপ করে চলে যাওয়ার প্রস্তুতিতে)

মালিহা: তবে অন্য কিছুও হতে পারেন।।বা চির জীবনেরও কিছু একটা হতে পারেন যদি চান তো।।(লজ্জায় মুচকি হেসে)

নিলয়: কী সেটা?(আগ্রহ নিয়ে)

মালিহা: বুঝেন না?(আশ্চায হয়ে)

নিলয়: বুঝতেছি না তো।।(মাথা চুলকিয়ে)

মালিহা: ব ল দ আপনি একটা।।ধুর সব আমারি ভুল।।সরেন তো এখান থেকে।।(বিরক্ত নিয়ে)

নিলয় সরে গেলো।।মালিহা কী সব বকতে বকতে নিচে চলে গেলো।।নিলয় বোকার মতো দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো।।

নিলয়: সারাজীবনের জন্য কী হওয়া যায়?বন্ধুই তো হওয়া যায়।।ওহ বুঝেছি।।নিশ্চই সারা জীবনের জন্য বড় ভাই বা ছোট ভাই হতে বলছিলো আমায়।।(মুচকি মুচকি হেসে)এত বুঝি আমি??হাহাহাহাহাহাহাহাহা।।
…..
সন্ধ্যার দিকে নিলয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো।।শুভ আর নিশানকে বলতে গিয়ে নিলয় পড়লো বিপদে।।

নিলয়: ভাইয়ারা আমি তাহলে আসি।।(নিশান আর শুভর দিকে তাকিয়ে)

শুভ: কৈ যাচ্ছো?

নিলয়: হোস্টেলে।।

নিশান: ওখানে আর থাকতে হবে না তোমায় নিলয়।।(মুচকি হেসে)

নিলয়: মানে?(আশ্চায হয়ে)

শুভ: আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবো নিলয়।।(হেসে)

নিলয়: কিন্তু ভাইয়া….

মালিহা: থেকে যান তো।।আপনার কী বউ আছে যে কিন্তু কিন্তু করছেন?(শুভ আর নিশানের জন্য চা নিয়ে এসে)

শুভ আর নিশান মালিহার কথা শুনে হাসতে লাগলো।।

মিরা: এত হাসাহাসি কেনো?(শুভর জন্য গরম দুধ নিয়ে হাজির হয়ে)

শুভ সব খুলে বললো।।মিরা কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছিলো।।

মিরা: নিলয় সবাই থাকতে বলতেছে যেহেতু থেকে যা।।

নিলয়: ওকে আপু।।আমি তাহলে সব বই আর কাপড় চোপড় নিয়ে আসি।।

শুভ: আচ্ছা যাও।।রহিম চাচাকে বলে দিচ্ছি ওনার সাথে যাও।।

নিলয়: আচ্ছা।।

মালিহা: আমিও যাই?(নিলয় কে প্রশ্ন করে)

শুভ,মিরা,নিশান আর নিলয় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মালিহার দিকে।।

শুভ: ধুর পাগল হয়েছো নাকি?ওটা তো ছেলেদের হোস্টেল মালিহা।।

মিরা:মালিহা নিলয় তো আসছে।আসলেই তোকে শাস্তি দিও।

মালিহা: কী শাস্তির কথা বলছো মিরা?(অবাক হয়ে)

মিরা: বুঝবে এখন তুমি ধীরে ধীরে।।(মনে মনে হেসে)

নিলয়: আচ্ছা থাকো মালিহা।।আমি আসি।।(তাড়াহুড়া করে)

মালিহা স্পষ্ট শুনতে পেলো নিলয় তাকে তুমি বলেছে।।তাহলে আজ থেকে কী সে ও নিলয়কে তুমি বলবে??মালিহা ভাবতে লাগলো।।
….
রাতে মিরা শুভর খাবার নিয়ে শুভর রুমে এলো।।

মিরা: বাবু কৈ তুমি?(শুভকে ডাকতে লাগলো)

শুভ বেলকুনিতে বসে আকাশ দেখছে।।মিরা তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।।

মিরা: একা একা আকাশ দেখছো??(হালকা হেসে)

শুভ: মনটা খারাপ থাকলে একা একাই আকাশ দেখি।।(মৃদু স্বরে)

মিরা শুভকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি থাকতে আমার বাবুটার কেনো মন খারাপ??

শুভ মিরাকে ছেড়ে দিয়ে মিরার হাত ধরে বললো,তুমি কী জানো আমি ঐ দিন তোমার সাথে কেনো শারীরিক সম্পকে গিয়েছিলাম??

মিরা: শুভ থাক না ঐ সব।।(শক্ত করে শুভর হাত ধরে)

শুভ: না মিরা আজ তোমায় জানতেই হবে সবকিছু।।(মিরার থেকে একটু দূরে গিয়ে)

মিরা শান্ত হয়ে সবকিছু শোনার অপেক্ষায় রইলো।।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here