#হবে-কি-আমার(2)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_8
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ শুধু মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, রাস্তা কাঁদা হয়ে কোথাও কোথাও জল জমাট বেঁধে আছে,এমন একটা কাঁদা রাস্তার কোনো তোয়াক্কা না করেই অরিন্দম ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে এগিয়ে চলেছে, ঘড়িতে এখন রাত এগারোটা। গ্রামে এটাই মধ্যে রাত।তমশা দেবী ও রাতের খাবার সবাইকে খাইয়ে সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু অরিন্দম চুপিসারে চাপি নিয়ে গেইট খুলে বেরিয়ে পড়েছে প্রিয়তমা কে দেখবে বলে।তার কিছুতেই মন শান্ত হচ্ছে না কেমন খাপছাড়া লাগছে নিজেকে, তার এই মুহূর্তে অনুকে দুচোখের সামনে একটি বারের জন্য চাই ই চাই। না হয় তার নিশ্বাস নেওয়া দায়সাদ্দ্ব হয়ে পড়বে। তাই নিজের মন কে শান্ত করতে সে বেরিয়ে পড়েছে অনুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে, মৃন্ময় কে দিয়ে তনুশ্রী কে বলেছে অনুকে যেনো পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও বাড়ির বাইরে পাঠায়। কিন্তু অরিন্দম তাদের উঠানের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে কিন্তু অনুর আসার কোনো নাম নেই। অরিন্দম ফোনটা পকেট থেকে বার করে মৃন্ময় কে কল করতে যাবে তার আগেই অনুকে দেখতে পায়। সে ঢুলতে ঢুলতে তার দিকে এগিয়ে আসছে তা দেখে অরিন্দমের ঠোঁটের কোনে সুপ্ত হাসি ফোটে।অনু বেচারি ঘুমিয়ে পড়েছিল কিন্তু তনুশ্রী তাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে তুলিয়েছে।মেয়েটা ঘুম প্রিয়শী। ঘুম তার আগে বাকি দুনিয়া পরে। তাই সে উঠবে না বলেছিল, কিন্তু তনুশ্রী তাকে বলেছে অরিন্দম কিছু আর্জেন্ট দরকার আছে ওর সাথে ওকে কিছু বলতে চায় সে সেই জন্য অনু না চাইতেও উঠেছে। অনু চোখ কচলে কচলে অরিন্দমের নিকট এসে দাঁড়িয়ে লম্বা একটা হাই তুলল অতঃপর কোনরকম ভনিতা বা লাজুকতা বা ভাব না দেখিয়ে বলল,
___বলুন কি বলবেন?
অরিন্দম স্তব্ধ হয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ তার বুকটা হঠাৎ করেই ধকধক করতে লাগল যেন তুলনামূলক বেশি অনুর ঘুমন্ত মুখপানে তাকিয়ে দেখে কেমন যেন দৃষ্টি সরছেই না তার!এই এলোমেলো চুল, ঘুম ঘুম চোখ, ঘুম ঘুম কেমন নেশালো গলা ,সব কিছু তাকে আকৃষ্ট করে তুলছে। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার অনুকে দেখে। মনে হচ্ছে তাকে আষ্টেপিষ্টে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে আর তাকে নিয়ে এখান থেকে বহুদূর পারি দিই যেখানে কেউ তাদের খুঁজে পাবে না।যেখানে থাকবে শুধু তারা দুজন।সে এসব অদ্ভুত ভাবনায় বিভর হয়ে পরে।
অনু তাকে এমন চুপ করে থাকতে দেখে অরিন্দমের সামনে ঝুঁকে ভ্রু কুঁচকে বলল,
___দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন নাকি?
অরিন্দম ভাবনার ছেদ ঘটল,সে যে কেমন উদ্ভট ভাবনা ভাবছিল তার জন্য নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত হলো অতঃপর সে গলা খাকিয়ে বলল,
___না ঘুমাইনি।
___কি জন্য এসেছেন?
___তোমাকে দেখতে।
অরিন্দমের নিঃসংকোচ উওরে অনুর ঘুম চট করে উড়ে গেল,সে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে থেকে হাসতে গিয়ে ও না হেসে সিরিয়াস হয়ে বলল,
___কেন মিস্টার?
অরিন্দম দমলো না নিজেকে দূরে রাখতে পারলো ও না সে।এগিয়ে গিয়ে অনুর গালে ডান হাত রাখে।অনু’র চোখ বড়বড় হয়ে যায় এই স্পর্শ পেয়ে।আর সে ভাবে এই ছেলের কি হলো এমন কেন করছে এর আগে তো তার ধারেকাছেও থাকতে চাইতো না আর আজ তার থেকে দূরে যেতে চাইছে না। তার ভাবনার মাঝেই অরিন্দম স্মিত হেসে বলল,
__তোমাকে একটি বার দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল। তাই এত রাতে তোমাকে বিরক্ত করলাম। তার জন্য স্যরি।
অনু বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
___আপনার শরীর ঠিক আছে তো?
অরিন্দম দুর্লভ হেসে দিল সে যে পুরোটাই অসুস্থ। অরিন্দম মোহিত কন্ঠে বলল,
___শরীর ঠিক আছে। মন ঠিক নেই টিয়াপাখি।সে বেহায়া হয়ে পড়ছে বারংবার!কুল পাচ্ছি না তাকে ঠিক করার। আচ্ছা বিরক্ত করলাম তোমাকে ঠিক আছে তুমি এবার যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো!
অনু চোখ ছোট ছোট করে বলল,
___ব্যাস এতটুকুই!
অরিন্দম এতটুকু বলতে আসেনি সে আরও অনেক কিছু জানতে এসেছে, মেয়েটাকে নিজের মনের কথা ও বলতে এসেছে কিন্তু সে পাচ্ছে না বলতে,ক্ষীন সময় চুপ থেকে অরিন্দম ইতস্তত হয়ে বলল,
___তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব সত্যি বলবে তো?
অনু মুচকি হেসে বলল,
___একটা কেন একশো টা জিজ্ঞেস করুন আমি সব উত্তর দিতে পারি, যদি মন চায়!
____অনুরাগকে তুমি কতদিন থেকে চেনো?
অনু সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
___কি ব্যাপার বলুন তো ওর কথা কেনো জিজ্ঞেস করছেন,বাই এনি চান্স আপনি কি ঘটকালি করছেন নাকি।এই আপনার কি কোনো বোন আছে যার জন্য রাগীর কথা বলছেন।বলুন বলুন?
অরিন্দম বিরক্ত মাখা মুখে অনুর দিকে তাকিয়ে রইল সে কি জানতে চাইলো সে কি বুঝে তাকে ঘটক বানিয়ে দিল।
___আমি জাস্ট জানতে চাইছিলাম, মনে হলো তোমাদের ফ্যামিলির খুব কাছের তাই আর কি।
___ছোটবেলা থেকেই আমরা একসাথে বড় হয়েছি,ও আমার থেকে একবছরের বড়ো এক ক্লাসের সিনিয়র ছিল। কিন্তু ও ওর মা মারা যাওয়ায় পড়াশোনা এক্সাম দিতে না পারায় পিছিয়ে যায় তাই এখন আমাদের সাথে ফার্স্ট ইয়ারের পড়ে।আর আমার মামি ওকে একটু বেশি ভালোবাসে কেন জানি না।পেলেন উওর।
____ আচ্ছা তুমি যে আমাকে ভালোবাসো দাবি করে বলো।তোমার মামী যদি রাজি না হন তখন তুমি কি করবে? উনার কথায় আমাকে ভুলে যাবে।
অনু কথাটা শুনে বেশকিছুক্ষণ চুপ থাকে অরিন্দম অধীর আগ্রহে অনুর মুখপানে উওরের আশায় তাকিয়ে আছে,সে খুব করে চাইছে অনু তার উওরে যেনো তাঁকেই চায়।
অনু অরিন্দমের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কপালে গালে হাত রেখে চেক করে বলল,
___আপনি কি নেশা করে এসেছে কি সব উদ্ভট কথাবার্তা বলছেন এখন!ঘুম নষ্ট করে আমার।
অরিন্দম হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করল সে সহজে কোনো কিছুর উওর পাবে না তাই সে বলল,
___যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
অনু আবার বলল,
____ব্যাস এতটুকুই?
অরিন্দম ভ্রু কুঁচকে বলল,
___আর কতক্ষণ মশার কামড় খাব বলো।যাও তুমি!
অনু দুহাত বুকে ভাঁজ করে বলল,
__আপনার চেরি ফলে ওই বজ্জাত মশা কামড়াইনি তো?ওখানে মশাদের বসতে দেবেন না!ওখানে কেবল আমি কামড়াবো।
কথাটা শুনে অরিন্দমের চোখ রসগোল্লার মতো বড়বড় হয়ে যায়।কি মেয়ে একটুও লজ্জা নেই। অরিন্দম ধমক দিয়ে বলল,
__যাও গিয়ে ঘুমাও….
অনু দুহাত কোমড়ে খুঁজে বলল,
__নিজে ডেকে নিজেই ধমক দিচ্ছেন কেন?
অরিন্দম বুঝলো সত্যি তো সে নিজেই মেয়েটাকে দেখতে চাইলো আর এখন সে মেয়েটাকে যেমভাবে বকাঝকা করছে সে আবার তার ওপর রেগে যাবে তাই অরিন্দম মিহি কন্ঠে বলল,
___বকছি না।রাত হয়েছে তাই বললাম যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।আর সেই দিনের কলি’র ব্যাপারটা জন্য স্যরি আসলে…
অনু তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলল,
___ওই ঘটনার জন্য আপনার এত সহজে সরি অ্যাকসেপ্ট করব না আমি!কিন্তু তাই বলে যে আপনার থেকে দূরে থাকব সেটা আপনি ভাববেন না বুঝেছেন! আপনি যেখানে আমি ও সেখানেই থাকব। আন্ডারস্ট্যান্ড বাবুটা।
অরিন্দম এটাই তো চায় যে মেয়েটা তার থাকুক। তার আশেপাশে থাকুক। তাকে ভালোবাসুক। ঠিক যেমন ও মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে তেমনি যেনো অনু ও তাকে চোখে হারাক এটাই চায় সে। অরিন্দম মাথা চুলকে সুন্দর করে হেসে বলল,
___আসছি!রাগটা না হয় পরে কমাব।
___আরে এইটুকুই?
___তোমাকে একটি বার দেখতে চেয়েছিলাম তাই এখন যাই।
অনু চোখমুখ কুঁচকে বলল,
___একটিবার দেখতে চেয়েছিলাম,একটিবার দেখতে চেয়েছিলাম,সেই থেকে এই কথা। আমি ভাবলাম এসেছেন দুটো প্রেমের কথা বলবেন, জড়িয়ে ধরবেন, দুষ্টুমি করবেন, আমি লজ্জা পেয়ে বলবো যান দুষ্টু কেউ দেখে ফেলবে, তবুও আপনি শুনবেন না যাওয়ার সময় পাপ্পি সাপ্পি দিয়ে যাবেন। কিন্তু না এ যে পুরোই সন্ন্যাসী। দূর ভাল্লাগে না!
#চলবে